১১. দ্রৌপদীকে দেখিয়া পুরজনের ভয়

বন্ধন হইতে মুক্ত কৈল বৃকোদর।
স্নানান্তে দ্রৌপদী যান আপনার ঘর।।
চতুর্দ্দিকে আছিল যতেক লোকজন।
কৃষ্ণারে দেখিয়া ভয়ে পলায় তখন।।
সিংহে দেখি যথা অজা ধায় দড়বড়ি।
একের উপরে ভয়ে কেহ যায় পড়ি।।
প্রাচীন অথর্ব্ব লোক যাইতে নারিল।
অধোমুখে ভুমি ধরি বস্ত্রে আচ্ছাদিল।।
সবে বলে, কেহ নাহি চাও উহা পানে।
এখনি গন্ধর্ব্ব-হাতে মরিবে পরাণে।।
এত বলি সব লোক করে কানাকানি।
হেথায় রন্ধনগৃহে গেল ‍যাজ্ঞসেনী।।
দাণ্ডাইয়া ছিল তথা বীর বৃকোদর।
প্রণাম করিল দেবী যুড়ি দুই কর।।
গন্ধর্ব্ব রাজার পায়ে মম নমস্কার।
যে মোরে সঙ্কট হৈতে করিল নিস্তার।।
ভীম বলে, যেই জন আশ্রিত যাহার।
অবশ্য করয়ে লোক তার প্রতিকার।।
তথা হৈতে নৃত্যশালা করিল গমন।
সৈরন্ধ্রীরে নিরখিয়া বলে কন্যাগণ।।
ভাল হৈল সবান্ধব মরিল দুর্ম্মতি।
যে তোমার করিলেক এতেক দুর্গতি।।
পার্থ বলিলেন, কহ অদ্ভুত কথন।
কিমতে গন্ধর্ব্ব কৈল কীচকে নিধন।।
কৃষ্ণা বলে, কি জানিবে ওহে বৃহন্নলা।
অহর্নিশি কন্যাগণ লয়ে কর খেলা।।
কিমতে জানিবে দুঃখ যতেক আমার।
হাসি হাসি জিজ্ঞাসিছ, কি বলিব আর।।
তথা হতে গেল সুদেষ্ণার অন্তঃপুরী।
কৃষ্ণারে দেখিয়া সব পলাইল নারী।।
দ্বারেতে কপাট কেহ দিল মহাভয়ে।
দেখিয়া দ্রৌপদী দেবী ডুবিল বিস্ময়ে।।
সহসা সুদেষ্ণা আসি নৃপ-পাটরাণী।
বিনয়পূর্ব্বক সৈরন্ধ্রীরে বলে বাণী।।
হেথা হৈতে বাছা তুমি করহ গমন।
যথা আছে গন্ধর্ব্বেরা তব পতিগণ।।
নৃপতির বড় ভয় হইল তোমারে।
কালরূপী জানি তোমা সর্ব্বলোকে ডরে।।
সর্ব্বনাশ হৈল মোর তোমার কারণ।
তোমা রাখি হত্যা কৈনু সহোদরগণ।।
এখন ক্ষমহ মোরে, করি পরিহার।
যথা ইচ্ছা তথাকারে কর আগুসার।।
দ্রৌপদী বলিল, দেবী কর অবধান।
তের দিন পরে আমি যাব জিন স্থান।।
তোমাতে গন্ধর্ব্বগণ বড় প্রীত হবে।
তের দিন উপরান্তে মোরে লবে যাবে।।
আমা হৈতে যত কষ্ট হইল তোমার।
ততেক সন্তোষ আমি করিব অপার।।
মরিল আপন দোষে কীচক দুর্ম্মতি।
বিনাদোষে কাহার না হিংসে মোর পতি।।
দেব-দ্বিজগণ প্রিয়, ভকতবৎসল।
নাহি করে তারা ধার্ম্মিকের অমঙ্গল।।
এখানে দেখিবে সেই মোর স্বামিগণে।
দেব দ্বিজগণ ভক্ত, বড় প্রিয় রণে।।
সুদেষ্ণা বলিল, দেখ দেখিয়া তোমারে।
নারী দূরে থাক, পুরুষ পলায় ডরে।।
তের দিন তুমি যদি থাকিবে হেথায়।
সত্য করি এক কথা কহ গো আমায়।।
স্বামী পুত্র ডরে মোর, রহিল বাহিরে।
অভয় করিলে সবে আসিবেক ঘরে।।
সবান্ধবে লইলাম তোমার শরণ।
গন্ধর্ব্বের ভয়ে তুমি করহ রক্ষণ।।
অভয় করিল কৃষ্ণা সৃদেষ্ণার বোলে।
এইমতে তথা কৃষ্ণা বঞ্চে কুতূহলে।।
মহাভারতের কথা অমৃত-লহরী।
কাহার শকতি তাহা বর্ণিবারে পারি।।
রহস্য বিরাটপর্ব্ব কীচকের বধে।
কাশীদাস কহে দ্বিজ চরণ-প্রসাদে।।