১০. অর্জ্জুন কর্ত্তৃক শ্রীকৃষ্ণাদির ঔর্দ্ধদেহিক কার্য্য সম্পাদন

কৃষ্ণের শরীর পার্থ কোলেতে করিয়া।
বিলাপ করেন বহু কান্দিয়া কান্দিয়া।।
কৃষ্ণ প্রাণ, কৃষ্ণ নাথ, কৃষ্ণ ধন জন।
কৃষ্ণ বিনা পাণ্ডবের আছে কোন জন।।
এত দিনে পাণ্ডবেরে বঞ্চিলেন বিধি।
কোন্ দোষে হারাইনু কৃষ্ণ গুণনিধি।।
এই দ্বারাবতী আমি পূর্ব্বে আসিতাম।
আমারে পাইলাম কত পাইতে আরাম।।
সখা সখা বলি মোরে করি সম্বোধন।
ভুজ প্রসারিয়া আসি দিতে আলিঙ্গন।।
পূর্ব্বেতে কহিলে তুমি সবার ভিতর।
কৃষ্ণার্জ্জুন এক তনু নহে ভিন্ন পর।।
পাণ্ডুপুত্রগণ মোর প্রাণের সমান।
পাণ্ডবের কার্য্যেতে বিক্রীত মম প্রাণ।।
সারথিত্ব করিয়া সঙ্কটে কৈলে পার।
দুর্য্যোধন-ভয় হৈতে করিলে উদ্ধার।।
আমি তব সখা, প্রাণসখী যাজ্ঞসেনী।
পরম বান্ধবরূপে রাখিলে আপনি।।
পাখা যেন রক্ষা করে পক্ষীর জীবন।
সলিল রক্ষিত যেন মৎস্য আদি গণ।।
সেইরূপ পাণ্ডব রক্ষিত নারায়ণ।
তোমা বিনা কোন মতে রহিবে জীবন।।
দয়াময় কৃষ্ণ নীরব কিবা কারণে।
কোন্ দোষে দোষী হৈনু তোমার চরণে।।
তব প্রিয়সখা আমি সেই ধনঞ্জয়।
সখারে বিমুখ কেন হৈলে দয়াময়।।
একবার চাহ প্রভু মেলিয়া নয়ন।
সখা বলি বারেক করহ সম্বোধন।।
বারেক দেখাও চাঁদমুখের সুহাস।
বারেক বদনচাঁদে কহ সুধাভাষ।।
রত্ন-সিংহাসন ত্যজি ভূমিতে শয়নে।
চাঁদমুখ শুখাইল রবির কিরণে।।
কোন্ মুখে যাব আমি হস্তিনা নগরে।
কি বলিব গিয়া আমি রাজা যুধিষ্ঠিরে।।
ভাইগণে কি বলিব দ্রৌপদীর তরে।
কেমনে ধরিবে প্রাণ ধর্ম্ম নৃপবরে।।
হায় বিধি এত দিনে করিলে বিনাশ।
কোন্ দোষে হারাইনু বন্ধু শ্রীনিবাস।।
বিস্মরিলে সব কথা স্বীকার করিয়া।
সঙ্গে নিলে নিজ জনে পাণ্ডবে ত্যজিয়া।।
ভাগ্যবন্ত যদুকুল নাহি পুণ্য সীমা।
ইহলোকে পরলোকে পাইলেন তোমা।।
আমা সম হতভাগ্য পাপিষ্ঠ দুর্ম্মতি।
কোন্ গুণে পাব সেই কৃষ্ণপদে মতি।।
হা কৃষ্ণ কমলাকান্ত করুণানিদান।
তোমা বিনা রহে মম হৃদয় পাষাণ।।
কি বুদ্ধি করিব আমি, কোথাকারে যাব।
আর কোথা সে চাঁদবদন দেখা পাব।।
শিরেতে হানিয়া ঘাত কান্দিয়া অধীর।
ভূমে গড়াগড়ি যান পার্থ মহাবীর।।
দারুক সারথি বোধ করায় অর্জ্জুনে।
স্থির হও ধনঞ্জয়, শোক ত্যজ মনে।।
অকারণে শোক কৈলে কি হইবে আর।
আমি যাহা কহি, তাহা শুন সারোদ্ধার।।
বিধি নীতি আছে যেই ক্ষত্রিয়ের ধর্ম্ম।
আপনি সবার শীঘ্র কর প্রেতকর্ম্ম।।
পূর্ব্বেতে আমারে কহিলেন গদাধর।
সবা হৈতে বড় প্রিয় পার্থ ধনুর্দ্ধর।।
যোগ আচরিয়া পিছে পাইবে আমারে।
এই কথা দারুক কহিবে পাণ্ডবেরে।।
সে কারণে এই কর্ম্ম হয়ত বিহিত।
সবার সৎকার কর্ম্ম করিতে উচিত।।
এমত সান্ত্বনা করে দারুক অর্জ্জুনে।
সৎকার করিতে পার্থ চিন্তিলেন মনে।।
চন্দনের কাষ্ঠ তথা আনি রাশি রাশি।
জ্বালিলেন চিতা-অগ্নি গগন পরশি।।
দেবকী রোহিণী বসুদেবের সহিত।
অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করিলা হরষিত।।
রেবতী রামের সঙ্গে পশে হুতাশন।
অগ্নিকার্য্য সবাকার করেন অর্জ্জুন।।
সবাকার অগ্নিকার্য্য করি সমাপন।
বিধিমতে করিলেন শ্রাদ্ধাদি তর্পণ।।
কৃষ্ণলীলা কেবা বুঝে মহিমা অপার।
কাশী বলে, শুন জীব, হবে ভব পার।।