০৮৬. কৃতবীর্য্য-চরিত ও ভৃগুপুত্র ঔর্ব্বের বৃত্তান্ত

পূর্ব্বের বৃত্তান্ত কহি তোমার গোচর।
কৃতবীর্য্য নামে ছিল এক নরবর।।
ভৃগুবংশে ব্রাহ্মণ তাহার পুরোহিত।
নানা যজ্ঞ-ক্রিয়া রাজা কৈল অপ্রমিত।।
সর্ব্বধন দিয়া রাজা গেল স্বর্গবাসে।
ধনহীন হৈল, যেই রাজা হৈল দেশে।।
ভৃগুবংশে দ্বিজগণে আনিল ধরিয়া।
মাগিল যতেক ধন দেহ ফিরাইয়া।।
ভয়ে তবে বিপ্রগণ বলিল বচন।
যার গৃহে যত আছে, দিব সব ধন।।
এত শুনি ছাড়ি দিল সর্ব্ব দ্বিজগণে।
গৃহে আসি বিচার করিল সর্ব্বজনে।।
রাজভয়ে কোন দ্বিজ সর্ব্বধন দিল।
কেহ কেহ কত ধন পুতিয়া রাখিল।।
কত ধন দিল লৈয়া রাজার গোচর।
অল্প ধন দেখিয়া রুষিল নরবর।।
চর হইতে সন্ধান পাইল রাজন।
পুতিল ঘরের ভিতরেতে কত ধন।।
সসৈন্যেতে ঘর সব বেড়িল যে গিয়া।
বাহির করিল রেখেছিল যা পুতিয়া।।
ধন দেখি ক্রোধ কৈল যত ক্ষত্রগণ।
ব্রাহ্মণ মারিতে আজ্ঞা করিল রাজন।।
হাতে খড়্গ করিয়া যতেক রাজবল।
যতেক ব্রাহ্মণগণে কাটিল সকল।।
বাল বৃদ্ধ যুবা সর্ব্ব যতেক আছিল।
দুগ্ধপোষ্য বালকাদি সকলি মারিল।।
গভীবতী স্ত্রীগণের চিরিয়া উদর।
মারিল অনেক দ্বিজ দুষ্ট নরবর।।
মহা কলরব হৈল ব্রাহ্মণ-নগরে।
প্রাণ লইয়া স্ত্রীগণ যায় দেশান্তরে।।
এক ভৃগুপত্নী যে আছিল গর্ভবতী।
স্বামীগর্ভ রক্ষা হেতু বিচারিল সতী।।
উদর হইতে গর্ভ ঊরুতে থুইয়া।
ক্ষত্রগণ ভয়েতে যায়েন পলাইয়া।।
যতেক ক্ষত্রিয়গণ বেড়িল তাহারে।
যাইতে নহিল শক্তি পূর্ণ গর্ভ-ভরে।।
মহাভয়ে প্রসব হইল সেই খানে।
শত সূর্য্য প্রায় তেজ ধরয়ে নন্দনে।।
দৃষ্টিমাত্র ক্ষত্রগণ সব অন্ধ হৈল।
কত কত ক্ষত্রগণ ভস্ম হৈয়া গেল।।
যোড়হাতে স্তুতি বহু বিনয় বচন।।
পুত্রে কহি ব্রাহ্মণী সবারে চক্ষু দিল।
প্রাণ লৈয়া ক্ষত্রগণ পলাইয়া গেল।।
পিতৃপিতামহ সর্ব্ব হইল সংহার।
মহাক্রুদ্ধ হৈল শুনি ভৃগুর কুমার।।
মহাদুষ্ট ক্ষত্রগণ কৈল অবিচার।
অনাথের প্রায় দ্বিজ করিল সংহার।।
বিধাতার দৃষ্ট কর্ম্ম জানিনু এখন।
এই হেতু বিনাশ করিব ত্রিভুবন।।
এত চিন্তি তপস্যা যে করে মুনিবর।
অনাহারে তপ ষষ্টি হাজার বৎসর।।
তাঁর তপে তাপিত হইল ত্রিভুবন।
হাহাকার কলরব সবে সর্ব্বজন।।
দেবগণ মিলি যুক্তি করিল তখন।
নিবারণ হেতু পাঠাইল পিতৃগণ।।
ঔর্ব্ব প্রতি পিতৃগণ বলিল বচন।
এত ক্রোধ কর বাপু কিসের কারণ।।
আমা সবা হেতু দুঃখ ভাবহ অন্তরে।
আমা সবা মারিবারে কার শক্তি পারে।।
কাল উপস্থিত হৈল কর্ম্মের লিখন।
সে কারণে ক্ষত্র করে হইল মরণ।।
আপনার মনে জানি ক্ষমা করি মনে।
হীনকর্ম্মে হীনতাপী নহে কোন জনে।।
শম তপ ক্ষমা এই ব্রাহ্মণের ধর্ম্ম।
আমা সবা না রুচে তোমার ক্রোধ-কর্ম্ম।।
পিতৃগণ-বচন শুনিয়া ঔর্ব্বমুনি।
কহেন, কহিলা যত আমি সব জানি।।
পূর্ব্বে আমি ক্রোধে করিলাম অঙ্গীকার।
তপস্যা করিয়া সৃষ্টি করিব সংহার।।
বিশেষ ক্ষত্রিয়গণ কৈল দুরাচার।
দুষ্টে শাস্তি না করিলে মজিবে সংসার।।
দুষ্ট লোকে সম শাস্তি যদি নাহি পায়।
সংসারে যতেক লোক সেই পথে যায়।।
অপ্রমিত কুকর্ম্ম করিল ক্ষত্রগণ।
অল্পদোষে বিনাশিল অনেক ব্রাহ্মণ।।
যখন ছিলাম আমি জননী-উদরে।
ক্ষত্রভয়ে মোর মাতা এড়িলেন ঊরে।।
আর যত ব্রাহ্মণী পাইয়া গর্ভবতী।
উদর চিরিয়া মারিলেক দুষ্টমতি।।
অনাথের প্রায় করি মারিল সবারে।
সে সব স্মরিয়া মম হৃদয় বিদরে।।
হেন দুষ্টমনে যদি শাস্তি না হইবে।
এইমত দুষ্টাচার ত্যাগ কে করিবে।।
শক্তি আছে, শাস্তি নাহি দেয় যেই জন।
কাপুরুষ বলি তারে সংসারে ঘোষণ।।
এই হেতু ক্রোধ মম হইল অপার।
নিবৃত্ত না হবে ক্রোধ না করি সংহার।।
ঔর্ব্ব প্রতি পুনরপি বলে পিতৃগণ।
নিবৃত্ত করহ ক্রোধ, শান্ত কর মন।।
ক্রোধ-তুল্য মহাপাপ নাহিক সংসারে।
তপ জপ জ্ঞান সব ক্রোধেতে সংহারে।।
বিশেষ যতির ক্রোধ চণ্ডাল গণন।
এ সব গণিয়া বাপু কর সম্বরণ।।
আমরা তোমার পিতৃগণ গুরুজন।
আমা সবাকার বাক্য না কর লঙ্ঘন।।
নিবৃত্ত করিতে যদি নাহিক শকতি।
উপায় কহি যে এক, শুন মহামতি।।
ত্রৈলোক্য-জনের প্রাণ জলের ভিতরে।
জল বিনা মুহূর্ত্তেকে না বাঁচে সংসারে।।
সে কারণে জলমধ্যে এড় ক্রোধানল।
জলেরে হিংসিলে হিংসা পাইবে সকল।।
ঔর্ব্ব বলে, না লঙ্ঘিব সবার বচন।
সমুদ্রে থুইল ক্রোধ ভৃগুর নন্দন।।
অদ্যাপি মুনির ক্রোধ-অনলের তেজে।
দ্বাদশ যোজন নিতি পোড়ে সিন্ধুমাঝে।।
বশিষ্ঠ বলেন, তাত পূর্ব্বের কাহিনী।
এত অপরাধ ক্ষমা কৈল ঔর্ব্ব মুনি।।
এত শুনি পরাশর ক্রোধে শান্ত হৈল।
রাক্ষসে মারিব বলি অঙ্গীকার কৈল।।
রাক্ষস আমার তাতে করিল ভক্ষণ।
পিতৃবৈরী নিশাচরে করিব নিধন।।
রাক্ষস বলিয়া না থুইব পৃথিবীতে।
পরাশর-মুনি এত দৃঢ় কৈল চিতে।।
বশিষ্ঠের শক্তিতে না হইল বারণ।
রাক্ষস-বধের যজ্ঞ কৈল আরম্ভণ।।
পরাশর-যজ্ঞ-কথা-অদ্ভুত কথন।
যে যজ্ঞে হইল সব রাক্ষস নিধন।।
রাক্ষসের দুষ্টাচার জানিয়া সকল।
পরাশর মুনি হৈল জ্বলন্ত অনল।।
বেদমন্ত্রে অগ্নি জ্বালি কৈল অঙ্গীকার।
সঙ্কল্প করিল সব রাক্ষস-সংহার।।
যজ্ঞের অনল গিয়া উঠিল আকাশে।
মন্ত্রে আকর্ষিয়া যত আনয়ে রাক্ষসে।।
গিরীন্দ্র নগর হৈতে কাননাদি গ্রাম।
দ্বীপ দ্বীপান্তরে যথা রাক্ষসের ধাম।।
লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি অর্ব্বুদ অর্ব্বুদে।
হাহাকার কলরব করিয়া শবদে।।
পুঞ্জ পুঞ্জ হৈয়া পড়ে অগ্নির ভিতরে।
ব্যাকুল হইয়া কেহ কান্দে উচ্চৈঃস্বরে।।
মহাতেজ মহাকায় মহা ভয়ঙ্কর।
কারো সপ্ত মুণ্ড, কারো অষ্টাদশ কর।।
বিকট দশন, রক্ত-লোমাবলি দেহ।
কূপ-সম চক্ষুতে বহয়ে ঘন লোহ।।
পর্ব্বত আকার কেহ জিহ্বা লহ লহ।
বিপুল উদর কারো দেখি শুঙ্ক দেহ।।
কেহ কেহ প্রবেশিল পর্ব্বত কোটরে।
প্রাণে ব্যগ্র কোনজন বৃক্ষ চাপি ধরে।।
কেহ প্রবেশয়ে গিয়া সমুদ্র-ভিতরে।
পাতালে প্রবেশে কেহ, যায় দিগন্তরে।।
কর্কট সিংহেতে যেন সলিল বরিষে।
লিখন না যায় কত অনলে প্রবেশে।।
দশদিকে কলবর হৈল হাহাকার।
প্রলয়-কালেতে যেন মজয়ে সংসার।।
আকুল হইয়া কেহ শরীর আছাড়ি।
ভয়েতে কম্পয়ে তনু, যায় গড়াগড়ি।।
কোনখানে রাক্ষসের না হয় রক্ষণ।
যজ্ঞে লৈয়া আসে মন্ত্রে করিয়া বন্ধন।।
পরাশর-যজ্ঞে কৈল রাক্ষস সংহার।
পুলস্ত্য পাইলে এ সকল সমাচার।।
পুলস্ত্য নামেতে তথা ব্রহ্মার নন্দন।
যাঁর সৃষ্টি হৈল যত নিশাচরগণ।।
সৃষ্টিনাশ হৈল, চিন্তিত মুনিবর।
যথা যজ্ঞ করে মুনি চলিল সত্বর।।
পুলস্ত্যেরে দেখিয়া উঠিল মুনিগণ।
বসিবারে দিল দিব্য কনক-আসন।।
চিত্তে ক্রোধ করিয়া বসিল মুনিবর।
পরাশবে চাহি মুনি করিলা উত্তর।।
বড় যশ উপার্জ্জিল শক্তির নন্দন।
অনেক রাক্ষসগণে করিলা নিধন।।
বেদশাস্ত্র জ্ঞাত হৈয়া কর হেন কর্ম্ম।
কোন্ বেদশাস্ত্রে আছে পরহিংষা ধর্ম্ম।।
পৃথিবীতে দ্বিজ নাহি তোমার বিচারে।
আর কোন দ্বিজ কেহ নাহি তপ করে।।
তোমার বিচারে শক্তি ছিল হীন জন।
সে কারণে কৈল তারে রাক্ষসে ভক্ষণ।।
মৃত্যু বলি সংসারে বড়ই আছে ব্যাধি।
ত্রৈলোক্যে না পাই বাপু ইহার ঔষধি।।
শত বৎসরেতে কেহ সহস্র বৎসরে।
শরীর ধরিলে লোক অবশ্য যে মরে।।
ব্যাঘ্র-হস্তী-হস্তে-কিম্বা জলে ডুবি মনে।
শত শত ব্যাধি আরো আছয়ে সংসারে।।
যথায় যাহার মৃত্যু কর্ম্ম-নিবন্ধন।
কার আছে শক্তি তাহা করয়ে খণ্ডন।।
সকল জানহ তুমি শাস্ত্র-অনুসারে।
জানিয়া এমন কর্ম্ম কর অবিচারে।।
বিশেষ আপন দোষে শক্তির নিধন।
মহাক্রোধ হৈল অল্প দোষের কারণ।।
আপনার মৃত্যু তবে আপনি সৃজিল।
নৃপতিরে শাপ দিয়া রাক্ষস করিল।।
অল্পদোষে মহাক্রোধ দ্বিজে অনুচিত।
সেই পাপে মৃত্যু তার কর্ম্ম নিবর্ত্তিত।।
রাক্ষসের কোন্ দোষ বুঝিলা আপনে।
অসংখ্য রাক্ষস ভস্ম কৈলা অকারণে।।
যে কর্ম্ম করিলা তুমি দ্বিজের এ নয়।
দ্বিজ-ক্রোধ হৈলে ক্ষণে হইবে প্রলয়।।
ক্রোধ করি দ্বিজ যদি সংসার নাশিবে।
কাহার শকতি তবে পৃথিবী রাখিবে।।
ক্রোধ শান্ত কর বাপু আমার বচনে।
হুতশেষ যেই আছে করহ রক্ষণে।।
আমার বচন যদি মনোরম্য নহে।
জিজ্ঞাসহ বশিষ্ঠে তোমার পিতামহে।।
বশিষ্ঠ কহেন, সত্য কহিলেন মুনি।
পূর্ব্বেই কহিনু বাপু এ সব কাহিনী।।
অকারণে হিংসা-কর্ম্মে উপজিল পাপ।
এ সব করিলে কিবা পুনঃ পাবে বাপ।।
ক্রোধ ত্যাগ কর, ছাড় লোকের হিংসন।
পুলস্ত্য-মুনির বাক্য করহ পালন।।
এত শুনি পরাশর কৈল সমাধান।
বহুযত্নে কৈল যজ্ঞঅগ্নির নির্ব্বাণ।।
নিবৃত্ত না হৈল অগ্নি পূর্ব্ব-অঙ্গীকারে।
সংকল্প করিল সর্ব্ব রাক্ষস-সংহারে।।
আহুতি না পেয়ে অগ্নি প্রবেশিল বনে।
অদ্যাপি অনল উঠে কানন-দাহনে।।
গন্ধর্ব্ব বলিল, শুন পাণ্ডুর নন্দন।
কহিলাম এ সকল কথা পুরাতন।।
বশিষ্ঠের ক্ষমা সম নাহিক সংসারে।
বিশ্বামিত্র সংহারিল শতেক কুমারে।।
তথাপিহ তারে ক্রোধ না করিল মুনি।
যম হৈতে লৈতে পারে, তথাপি না আনি।।
কারণ বুঝিবা মুনি অতি ক্ষমাবান।
নৃপতি কল্মাষপাদে দিল পুত্র-দান।।
যে রাজা হইল হেতু শত পুত্র-নাশে।
তারে পুত্রবান্ কৈল আপন ঔরসে।।
অর্জ্জুন বলেন, কহ ইহার কারণ।
কি কারণে হেন কর্ম্ম কৈল তপোধন।।
একে ত পরের দারা দ্বিতীয়ে অগম্য।
কি কারণে বশিষ্ঠ করিল হেন কর্ম্ম।।
গন্ধর্ব্ব বলিল, শুন তার বিবরণ।
শক্তি-শাপে নিশাচর হইল রাজন।।
ক্ষুধায় তৃষ্ণায় যে আকুল কলেবর।
ভক্ষ্য-অনুসারে ফিরে অরণ্য-ভিতর।।
হেনকালে দেখে পথে ব্রাহ্মণী ব্রাহ্মণ।
রাজারে দেখিয়া পলাইল দুইজন।।
দেখিয়া ব্রাহ্মণে গিয়া ধরিল নৃপতি।
ভয়েতে বিলাপ করে ব্রাহ্মণ-যুবতী।।
কাতর হইয়া বলে বিনয় বচন।
পৃথিবীর রাজা তুমি সৌদাস-নন্দন।।
তোমার বংশেতে সব দ্বিজের কিঙ্কর।
ব্রাহ্মণেরে বধ না করিহ নরবর।।
আজি মোর প্রথম হইয়াছে ঋতু-স্নান।
বংশ-রক্ষা হেতু মোরে স্বামী দেহ দান।।
অতিশয় ক্ষুধার্ত্ত হৈয়াছ যদি তুমি।
আমারে ভক্ষণ কর ছাড় মোর স্বামী।।
এতেক কাতরে যদি ব্রাহ্মণী বলিল।
সহজে অজ্ঞান রাজা শুনি না শুনিল।।
ব্যাঘ্র যেন পশু ধরি করয়ে ভক্ষণ।
ঘাড় ভাঙ্গি রক্তপান কৈল ততক্ষণ।।
ব্রাহ্মণের মৃত্যু দেখি ব্রাহ্মণী বিকল।
আনিয়া বনের কাষ্ঠ জ্বালিল অনল।।
অগ্নি প্রদক্ষিণ করি ডাকি বলে নৃপে।
ওরে দুষ্ট দুরাচার শুন মোর শাপে।।
মোর ঋতু ভুঞ্জিতে না পাইলেন স্বামী।
এইমত নিরাশ হইবা দুষ্ট তুমি।।
স্ত্রী-স্পর্শ করিলে তোর অবশ্য মরণ।
এ শাপ দিলাম তোরে নহিবে খণ্ডন।।
সূর্য্যবংশ কারণ জানাই উপদেশে।
বংশরক্ষা হবে তোর ব্রাহ্মণ-ঔরসে।।
এত বলি ব্রাহ্মণী পড়িল অগ্নিমাঝ।
দ্বাদশ বৎসর বনে ফিরে মহারাজ।।
বশিষ্ঠ হইতে মুক্ত হইয়া রাজন।
সচেতন হৈয়া দেশে করিল গমন।।
স্নান দান জপ হোম করিল নৃপতি।
শয়ন করিতে গেল যথা মদয়ন্তী।।
মদয়ন্তী বলে, রাজা নাহিক স্মরণ।
ব্রাহ্মণী দিলেন শাপ দারুণ বচন।।
স্ত্রী-স্পর্শ করিলে তব হইবে মরণ।
সে কারণে মোর অঙ্গ না ছোঁও রাজন।।
রাণীর বচনে নিবর্ত্তিল নরপতি।
বংশরক্ষা কারণ চিন্তিত মহামতি।।
বশিষ্ঠে রাখিবে বংশ শুনি লোকমুখে।
ভার্য্যা-নিয়োজন কৈল বশিষ্ঠ মুনিকে।।
বশিষ্ঠ-ঔরসে অশ্মক নামে হৈল পুত্র।
সুর্য্যবংশ রাখিল বশিষ্ঠ দেবমূর্ত্ত।।
এত শুনি অর্জ্জুন হইল হৃষ্টমন।
গন্ধর্ব্বেরে বলিলেন বিনয় বচন।।
এ সব শুনিয়া মম ব্যগ্র হৈল মন।
পুরোহিত-যোগ্য কোথা পাইব ব্রাহ্মণ।।
রাজগণ পূর্ব্বে পুরোহিতের সুতেজে।
বহু সঙ্কটেতে রক্ষা পায় ক্ষিতিমাঝে।।
গন্ধর্ব্ব বলিল, যদি পুরোহিতে মন।
দেবল-ঋষির ভ্রাতা ধৌম্য তপোধন।।
পুরোহিত করি তাঁরে করহ রবণ।
এত শুনি পার্থ হয় প্রসন্ন বদন।।
যত অস্ত্র দিয়াছিল, গন্ধর্ব্ব রাজনে।
পার্থ বলিলেন, ইহা থাকুক এখানে।।
কার্য্যকালে অস্ত্র সব মাগিব তোমারে।
তখনি এ অস্ত্র-প্রাপ্তি হইবে আমারে।।
এত শুনি গন্ধর্ব্ব হইল হৃষ্টমন।
একে একে পঞ্চ ভাই কৈল আলিঙ্গন।।
বিদায় হইয়া গেল আপন আলয়।
উৎকোচক-তীর্থে গেল কুন্তীর তনয়।।
পুরোহিত করি ধৌম্যে করিল বরণ।
উল্লাসেতে কৈল ধৌম্য আশিস্-বচন।।
ধৌম্য সহ পঞ্চ ভাই পাঞ্চালে চলিল।
পথেতে যাইতে বহু ব্রাহ্মণ দেখিল।।
দ্বিজগণ বলে, কে তোমরা পঞ্চজন।
কোথা হৈতে আসিতেছ কোথায় গমন।।
যুধিষ্ঠির বলিলেন, একচক্রা হৈতে।
পঞ্চ ভাই যাইতেছি জননী সহিতে।।
দ্বিজগণ বলে, চল মোদের সংহতি।
কন্যা-স্বংন্বর করে পাঞ্চালেন পতি।।
বহুদিন হৈতে তথা আসে দ্বিজগণ।
বহুধন দিতেছেন বিজয়-কারণ।।
স্বয়ম্বর দেখিব, পাইব বহু ধন।
আমা লবা সংহতি চলহ পঞ্চজন।।
তোমা পঞ্চজনে যদি পাঞ্চালী দেখিবে।
মনে হেন লয়, তোমা অবশ্য বরিবে।।
তোমা পঞ্চজনে কৃষ্ণা বরিবে কাহারে।
দেখিয়া বিস্ময় তার জন্মিবে অন্তরে।।
এত বলি দ্বিজগণ চলিল সহিত।
পাঞ্চাল-নগরে সবে হৈল উপনীত।।
আদিপর্ব্বে উত্তম বশিষ্ঠ-উপাখ্যান।
কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান।।