০৪. সোমতীর্থ প্রস্তাবে কার্ত্তিকের জন্মকথা

কহেন বৈশম্পায়ন শুন একমনে।
সোমতীর্থে রাম চলিলেন পর্য্যটনে।।
তথা গিয়া স্নানদান করে বহুতর।
বসন কাঞ্চন গাভী দিলেন বিস্তর।।
জিজ্ঞাসেন জন্মেজয় কহ তপোধন।
সোমতীর্থ নাম হৈল কিসের কারণ।।
মুনি বলে কহিব পুরাণ ইতিহাস।
একমনে শুন রাজা করিয়া বিশ্বাস।।
পূর্ব্বকালে শিবদুর্গা কৈলাস শিখরে।
অত্যন্ত আকুল-চিত্ত শয়ন-মন্দিরে।।
বহুকাল দুইজনে হয় রতিরঙ্গ।
বিপরীত প্রেম বাড়ে নাহি হয় ভঙ্গ।।
মহেশের বীর্য্য যে পড়িল হেনকালে।
অসহ্য দেখিয়া গৌরী ফেলে গঙ্গাজলে।।
সহিতে নারিল গঙ্গা শিববীর্য্য তাপ।
অকস্মাৎ তাহার হৃদয়ে হৈল কাঁপ।।
গঙ্গা ভাসাইয়া লয়ে শরমুলে ফেলে।
ষড়্মুখ কুমার তাহে জন্মিল সুকালে।।
রোহিণী প্রভৃতি যে চন্দ্রের ছয় নারী।
উত্তম কুমার দেখি নিল কোরে করি।।
সমান ধারাতে স্তন দিল ছয় মুখে।
কার্ত্তিক বলিয়া নাম রাখিলেন সুখে।।
কৃত্তিকা তাহারে অগ্রে কোলে করেছিল।
এই হেতু কার্ত্তিক তাহার নাম হৈল।।
হমাবলবান শিশু শিবের কুমার।
দেবগণ আসিলেন তাঁরে দেখিবার।।
দেখিয়া সন্তুষ্ট হৈল যত দেবগণ।
হেনকালে শিবে কহে সহস্রলোচন।।
দেবসেনা কন্যা আছে পরমা সুন্দরী।
কার্ত্তিকে বিবাহ দিব কহ ত্রিপুরারি।।
দেবসেনাপতি নাম হইবে ইহার।
তারকাদি অসুরেরে করিনে সংহার।।
অনুমতি দেন হয় হ’য়ে হৃষ্টমনা।
কার্ত্তিকের অধীন হইল দেবসনা।।
দেবসেনাপতি করি করিল বরণ।
নানা অস্ত্র আনি তারে দিল দেবগণ।।
কার্ত্তিক হইল যদি দেব সেনাপতি।
হইলেন দেবগণ আনন্দিত মতি।।
তারকের যুদ্ধে ইন্দ্র হারিয়া আপনি।
কার্ত্তিকের শরণাগত হৈল বজ্রপাণি।।
কার্ত্তিকে বিনয়ে কহে দেব সহস্রাক্ষ।
আপনি নিধন কর দৈত্য তারকাখ্য।।
ইন্দ্রবাক্যে কার্ত্তিক করেন অঙ্গীকার।
সমরে তারকা আমি করিব সংহার।।
এতেক কহিল যদি দেব ষড়ানন।
তার পরাক্রম সব জানি দেবগণ।।
সবে মেলি অস্ত্র আনি দিল কার্ত্তিকেরে।
সহস্রলোচন বজ্র দিল তার করে।।
শঙ্কর দিলেন শূল বিষ্ণু চক্রবাণ।
যাহার প্রতাপে দৈত্য নাহি ধরে টান।।
উৎক্রান্তি শক্তি দান করিল শমন।
বরুণ দিলেন পাশ লোকে অনুপম।।
সর্ব্ব বলে যুক্ত হৈয়া যত দেবগণ।
কার্ত্তিকের সঙ্গে রণে করেন গমন।।
নানাবাদ্য বাজাইছে যত দেবগণ।
শুনিয়া তারকাসুর কোপাবিষ্ট মন।।
আপনার সেনাগণে সাজন করিয়া।
যুদ্ধ করিবার হেতু আইল ধাইয়া।।
মহা কোলাহল হৈল নাহিক অবধি।
দেবতাগণের হৈল অসুর বিবাদী।।
যুঝেন কার্ত্তিক একা মনে নাহি ভয়।
চারিদিকে দৈত্যগণ নিঃশঙ্কহৃদয়।।
আগে বাকযুদ্ধ শেষে করে অস্ত্রাঘাত।
সংগ্রামে তারকাসুর যুঝে দৈত্যনাথ।।
অস্ত্রে অস্ত্রে নিবারয়ে যার যত শিক্ষা।
গুরুস্থানে যত অস্ত্র পাইলেন দীক্ষা।।
কার্ত্তিকের বাণে কার নাহিক নিস্তার।
দৈত্যের সকল সৈন্য করিল সংহার।।
মন্ত্রপত করি শক্তি লইলেন হাতে।
কার্ত্তিক মারেন তাহা তারকের মাথে।।
শক্তির আঘাতে দৈত্য চূর্ণ হৈল কায়।
শেষ সেনাপতি যত সকলে পলায়।।
বাণ নামে সেনাপতি তারকার ছিল।
ভয়ে পলাইয়া ক্রৌঞ্চ পর্ব্বতে রহিল।।
বাণ না মরিল দেবতাগণের হুতাশ।
অঞ্জলি করিয়া কহে কার্ত্তিকের পাশ।।
বাণ যদি না মরিল নহে ভাল কার্য্য।
কোন দিনে দেবে মারি লবে দেবরাজ্য।।
এতেক কহিল যদি সব দেবগণ।
বাণেরে মারিতে চলিলেন ষড়ানন।।
বাণ ছিল ক্রৌঞ্চ গিরিগহবরে পশিয়া।
শরে শক্তিধর গিরি ফেলেন ভেদিয়া।।
ব্রক্ষ্মার বচনে সেই স্থান তীর্থ হয়।
স্নানদানে সেখানে অসংখ্য পাপক্ষয়।।
মুনি বলে শুনিয়া কার্ত্তিক জন্মকথা।
হলধর হইলেন উপনীত তথা।।
স্নান যজ্ঞ করিলেন দান বহুতর।
ব্রাক্ষ্মন ভোজন করাইলেন বিস্তর।।
দধীচির তীর্থে তবে গেলেন লাঙ্গলী।
স্নানদান করিলেন হয়ে কুতূহলী।।
শুনিয়া জন্মেজয় বলে তপোধন।
দধীচি তীর্থের কথা কহ বিবরণ।।
ভারতের পুন্যকথা সমান পীযূষ।
যাহার শ্রবণে হয় নর নিষ্কলুষ।।