০৩. লোমশ মুনির উপাখ্যান

তবে জন্মেজয় বলে, শুন তপোধন।
তদন্তরে কি হইল কহত এখন।।
ব্যাস বলে, শুন এবে ধর্ম্মের নন্দন।
মৃত্যু হইতে তরিবারে নহে কোন জন।।
আর কথা কহি শুন রাজা যুধিষ্ঠির।
আমার বচনে তুমি চিত্ত কর স্থির।।
পূর্ব্বে দেব যে কালে আমরা নির্ম্মাইল।
বিশ্বকর্মা যত খাটে মনে না লইল।।
প্রতিদিন গড়ে বিশাই প্রতিদিন ভাঙ্গে।
যত তত গড়ে বিশাই করি নানা রঙ্গে।।
ইন্দ্র-মনে নাহি লয় সদা মন্দ বলে।
সহিতে না পারি বিশাই গেল বিষ্ণু স্থলে।।
গোবিন্দের আগে বিশাই কহিল তখন।
সহিতে না পারে বিশাই ইন্দ্রের বচন।।
তবে হরি কহিলেন বিশাইর তরে।
করিব তোমার কার্য্য যাহ তুমি ঘরে।।
আর দিন গেলা হরি দেবের সভাতে।
হরি দেখি সর্ব্ব দেব বন্দে যোড়হাথে।।
ইন্দ্র বলে, বৈস প্রভু আসন উপরে।
কৃষ্ণ বলে, যাইব লোমশ দেখিবারে।।
ইন্দ্র বলে, চল আমি যাব তব সাথে।
দেখিব লোমশ মুনি আছয়ে কিমতে।।
তবে ইন্দ্র গোবিন্দের সঙ্গেতে চলিলা।
মুনির নিকটে তবে দুই জন গেলা।।
মুনিরে প্রণাম কৈল ইন্দ্র আর হরি।
সর্ব্ব অঙ্গে মুনির আছয়ে লোম ভরি।।
তাহার মধ্যেতে আছে একখানি টাক।
দেখিয়া ইন্দ্রের মনে হইল বিপাক।।
মুনিরে পুছেন ইন্দ্র করি নমস্কার।
টাকখানি দেখি কেন বুকের মাঝার।।
মুনি বলে,শুন ইন্দ্র ইহা না কহিব।
তোমাকে কহিয়া ইহা অনর্থ করিব।।
ইন্দ্র বলে, ইহা মোরে কহ মুনিবর।
অবশ্য করিবে তুমি ইহার উত্তর।।
তবে মুনি কহিলেন শুন দেবরাজ।
যে কারণে টাক মোর হৈল বুকমাঝ।।
এক ইন্দ্র মৈলে মোর এক লোমপাত।
এই মত টাক পড়ে শুন দেবনাথ।।
লোম যত আছে মোর তত ইন্দ্র হবে।
তবে সে আমার লোম সকল খসিবে।।
তবে সে আমার শুন হইবে মরণ।
তবে ইন্দ্র বলে শুন আমার বচন।।
তবে কেন তালপত্র-তলে থাক তুমি।
মুনি বলে, কতকাল জীব আর আমি।।
ইহা শুনি দেবরাজে মহাভয় হৈল।
আমা হেন কত ইন্দ্র লুপ্ত হৈয়া গেল।।
তবে তথা হৈতে হরি করিলা গমন।
সুরনাথ মুনিবরে বন্দিলা চরণ।।
অমরাবতীতে গেল ইন্দ্র দেবরাজ।
ইন্দ্র বলে, বিশাই পুরীতে নাহি কাজ।।
এইমত কহিল লোমশ-উপাখ্যান।
যাহার শ্রবণ হৈতে জন্ম দিব্য জ্ঞান।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান।।