০৩. ধর্ম্মরাজ কর্ত্তৃক ছলনা

মুনি বলে শুনহ নৃপতি জন্মেজয়।
উত্তরমুখেতে যান পাণ্ডুর তনয়।।
যুধিষ্ঠির প্রভৃতি আইসে স্বর্গপথে।
সমাচার জানি ধর্ম্ম আসিল ছলিতে।।
জলচর পক্ষী হৈয়া রন সরোবরে।
বসিলেন যুধিষ্ঠির পর্ব্বত উপরে।।
পথশ্রমেতৃষ্ণাযুক্ত রাজা যুধিষ্ঠির।
জল হেতু চলিলেন বৃকোদর বীর।।
আজ্ঞা পেয়ে সরোবরে গেল বৃকোদর।
দেখিয়া ডাকিয়া বলে পক্ষী জলচর।।
কিবা বার্ত্তা কি আশ্চর্য্য কিবা সারপথ।
কেবা সদা সুখে থাকে কহ চারি মত।।

পক্ষীর বচন ভীম না শুনিল কাণে।
শিলারূপ হইলেন জল পরশনে।।
এইরূপে অর্জ্জুন নকুল সহদেবে।
প্রশ্ন না কহিতে পারি শিলা হয় সবে।।
অবশেষে আপনি চলেন ধর্ম্ম ভূপ।
তারে ধর্ম্ম জিজ্ঞাসেন মায়া পক্ষীরূপ।।
কি বার্ত্তা আশ্চর্য্য পথ কেবা সদা সুখী।
জল খাবে পাছে অগ্রে কহ শুনি দেখি।।

ধর্ম্ম বলিলেন এই বার্ত্তা আমি জানি।
মাস বর্ষ রূপে কাল পাক করে প্রাণী।।
দিনে দিনে যমালয়ে যায় জীবগণ।
শেষের জীবন আশা আশ্চর্য্য লক্ষণ।।
শ্রুতি স্মৃতি আগম অশেষ ধর্ম্মপথ।
সেই পথ সার যেই সজ্জনের মত।।
ফল মূল শাক যেই খায় দিবাশেষে।
অপ্রবাসী অঋণী সে সদা সুখে বৈসে।।
এই সত্য চারি আমি জানি মহাশয়।
শুনিয়া সন্তুষ্ট ধর্ম্ম দেন পরিচয়।।
চমৎকার হৈয়া রাজা পড়িলেন পায়।
ভ্রাতৃগণে উদ্ধারিয়া আনন্দিত কায়।।
আশীর্ব্বাদ করি ধর্ম্ম বলিলেন তবে।
সর্ব্ব ধর্ম্ম শ্রেষ্ঠ তুমি একা স্বর্গে যাবে।।
আর সব জন পথে পড়িবে নিশ্চয়।
এত বলি ধর্ম্ম চলিলেন নিজালয়।।
মহাভারতের কথা স্বরগ-সোপান।
পাপিগণ শ্রবণেতে লভে ভবে ত্রাণ।।