০৩. অর্জ্জুন-যুধিষ্ঠির সংবাদ

সঞ্জয় কহিল রাজা কর অবধান।
ব্যূহ-কথা শুনিলেন ধর্ম্মের নন্দন।।
অর্জ্জুনে ডাকিয়া রাজা বলেন বচন।
সাবধানে কর ভাই উপস্থিত রণ।।
অল্প সৈন্য আমার অনেক কুরুকুল।
প্রকার করিয়া কর আপনে বহুল।।
ধৃষ্টকেতু ভীমসেন বিরাট প্রভৃতি।
জয়সেন সাত্যকি দ্রুপদ মহামতি।।
ধৃষ্টদ্যুম্ন জয়ৎসেন সত্যজিত বীর।
অভিমন্যু চেকিতান আদি মহাধীর।।
সহদেব সুদেব নকুল নরপতি।
কারস্কর ভোজবংশ আদি মহামতি।।
এই সব বীর আছে বীরের প্রধান।
আপনি বুঝহ ভাই করিয়া বিধান।।
এত শুনি হাসিয়া বলেন ধনঞ্জয়।
বহু সৈন্য বহু গুণ নহে মহাশয়।।
এই কৃষ্ণ দেবরাজ কর অবধান।
অনেক সঙ্কট হৈতে হৈবে পরিত্রাণ।।
হেন নর-নারায়ণ তোমার সহায়।
ইহাতে সংহার কুরু হইবে নিশ্চয়।।
অনাদি-নিদান এই প্রভু নারায়ণ।
আমার সারথি হৈল বিজয় কারণ।।
যথা ধর্ম্ম তথা কৃষ্ণ তথায় বিজয়।
বেদের বচন ইথে নাহিক সংশয়।।
অর্জ্জুন বচন শুনি ধর্ম্ম নরপতি।
চিত্তেতে প্রবোধ পেয়ে কহেন ভারতী।।
যে কহিলে ধনঞ্জয় নাহিক সংশয়।
সংসার ঈশ্বর এই প্রভু দয়াময়।।
যাহাতে জনম স্থিতি যাহাতে প্রলয়।
তাহার প্রসাদে মোরা হইব বিজয়।।
তথাপিহ ভ্রম ভাই হয় মোর মনে।
সেনাপতি কুরুকুলে গঙ্গার নন্দনে।।
ভুবনে দুর্জ্জয় বীর ভুবনে বিজয়।
কিরূপে তাহার রণে হবে পরাজয়।।
ভুবনে বিজয়ী দ্রোণ কর্ণ মহামতি।
অশ্বত্থামা কৃপাচার্য্য বাহ্লিক প্রভৃতি।।
এসব থাকিতে নাহি দুর্য্যোধন-ক্ষয়।
এই হেতু চিত্তে মোর বড়ই বিস্ময়।।
এত শুনি হাসি পুনঃ বলে ধনঞ্জয়।
এই হেতু চিন্তা কেন কর মহাশয়।।
পূর্ব্বের বৃত্তান্ত কথা পাসরিলে কেনে।
ধৃষ্টদ্যুন্ন জন্মিয়াছে দ্রোণ-বিনাশনে।।
শিখণ্ডীর পূর্ব্বকথা জানহ আপনে।
ভীষ্মের নিধনহেতু জানে জগজ্জনে।।
পূর্ব্বের প্রতিজ্ঞা মোর শুনহ রাজন।
সূতপুত্র মোর হাতে ত্যজিবে জীবন।।
বৃকোদর মারিবেক গান্ধারী-তনয়।
সাত্যকির হাতেতে মরিবে রাজচয়।।
কুরুকুলে অমঙ্গল দেখি অতিশয়।
নিশ্চয় জানিহ কৌরবের পরাজয়।।
বিনা মেঘে বিদ্যুৎ আকাশে প্রকাশয়।
উল্কাপাত নির্ঘাত যে দেখি শব্দময়।।
মেদিনী কম্পিত ঘন প্রভাতের ভানু।
বিনা মেঘে শব্দ শুনি কাঁপে অঙ্গ তনু।।
বহু অলক্ষণ দেখি দুর্য্যোধন-দলে।
চিত্ত স্থির নরপতি কর মোর বোলে।।