২০. হস্তিনা যাইতে পথে প্রজাগণ কর্ত্তৃক শ্রীকৃষ্ণের স্তব

সুসজ্জ হইয়া হরি,           রথে আরোহণ করি,
হস্তিনায় করেন গমন।
নানাবিধ বাদ্য বাজে,           কেহ অশ্বে কেহ গজে,
সঙ্গ চতুরঙ্গ সৈন্যগণ।।
বিরাট নগর হরি,           তরিলা সে কান্তিপুরী,
বামে করি মগধের দেশ।
কাঞ্চন নগর দিয়া,           কাশীরাজ্য এড়াইয়া,
বৃকদেশে আসে হৃষীকেশ।।
অবসান হৈল বেলা,           বনমালী উত্তরিলা,
বিশ্রাম করেন কতক্ষণ।
শুনি কৃষ্ণ আগমন,           বৃকবাসী প্রজাগণ,
ভেটিতে আসিল সর্ব্বজন।।
নানা ভক্ষ্য উপহার,           দিয়া নারা অলঙ্কার,
শকটে পূরিয়া রত্ন ধন।
দণ্ডবৎ প্রণতি করি,           ষড়ঙ্গে পূজিয়া হরি,
নানাবিধ করিল স্তবন।।
নমো নমো জয় জয়,           নমস্তে করুণাময়,
পূর্ণব্রহ্মা আদি গদাধর।
নমো হয়গ্রীব কায়,           নমো বেদ উদ্ধারায়,
নমো নমো মীন- কলেবর।।
নমো কুর্ম্মরূপধারী,           সমুদ্র মথনকারী,
জয় জয় নমস্তে শ্রীধর।
নমস্তে বামনরূপ,           মোহহারী বলি ভূপ,
নমো নমো দেব দামোদর।।
নমস্তে বরাহকায়,           হিরণ্যাক্ষ বিনাশায়,
নমস্তে মোহিনী কলেবর।
দেবাসুর মোহ যায়,           রুদ্র তত্ত্ব নাহি পায়,
নমো নমো অখিল ঈশ্বর।।
নমো নমো নারায়ণ,           মহাদৈত্য বিনাশন,
নমস্তে নৃসিংহ রূপধারী।
নমো রাম ভৃগুকায়,           ক্ষত্রবংশ বিনাশায়,
জয় জয় নমস্তে মুরারি।।
নমো রবিবংশধারী,           নমস্তে বামন-হরি,
দুষ্ট শিশুপাল বিনাশন।
নমো রামকৃষ্ণতনু,           বসুদেব অঙ্গজনু,
জয় প্রভু জয় নারায়ণ।।
জয় জয় জনার্দ্দন,           কেশী কংস বিনাশন,
নমো ব্রজগোপীর মোহন।
অঘ বক তৃণাবর্ত্ত,           দৈত্যবংশ করি অন্ত,
জয় জয় ব্রহ্মা সনাতন।।
তুমি আদি, তুমি অন্ত,           তুমি সূক্ষ্ম স্থূলতন্ত্র,
আত্মরূপে সর্ব্বত্র বিহারী।
কীট পক্ষী মৎস্য আদি,           জীবজন্তু নিরবধি,
কেহ ভিন্ন না হয়ে তোমারি।।
তোমার চরণ সেবি,           নারদাদি মহাকবি,
মৃত্যুঞ্জয় কৈল মৃত্যু জয়।
সেবিয়া তোমার পায়,           ব্রহ্মা ব্রহ্মপদ পায়,
ব্রহ্মপদ দেহ মহাশয়।।
নমো বুদ্ধদেহধর,           ভবিষ্যতি কলেবর,
নমো কল্কি ম্লেচ্ছ বিনাশায়।
নাহি তার কোন ভয়,           সদা সে নির্ভয় হয়,
তব গুণকথ যেই গায়।।
মোরা সব অল্পমতি,           কি জানি তোমার স্তুতি,
না জানেন ব্রহ্মা মহেশ্বর।
পাণ্ডবেরা ইন্দ্রপ্রস্থে,           চিরকাল মনঃস্বাস্থ্যে,
বাস কৈল নির্ভয় অন্তর।।
দুর্য্যোধন কুরুমণি,           পাশায় সর্ব্বস্ব জিনি,
সবারে পাঠায় বনবাসে।
দেখি দুষ্ট দুরাচার,           মানি সবে পরিহার,
নিবাস করিনু এই দেশে।।
চিরকাল আছি আশে,           পাণ্ডব আসিবে দেশে,
পুনরপি যাইব তথায়।
হা হা ধর্ম্ম যুধিষ্ঠির,           ভীম পার্থ ধীর স্থির,
না দেখিয়া তোমা সবাকায়।।
তোমা বিনা সব কায়, দেখিবারে না যুয়ায়,
পুত্রবৎ করিতে পালন।
স্মরি পাণ্ডুপুত্রগণ,           বৃকবাসী প্রজাগণ,
মহাশোকে হৈল অচেতন।।
তুষ্ট হয়ে নারায়ণ,           আশ্বাসিয়া প্রজাগণ,
কহিতে লাগিলেন তখন।
শোক না করিহ আর,           যাহ সবে নিজাগার,
শীঘ্র হবে পাণ্ডব দর্শন।।
হইয়া পাণ্ডবদূত,           বুঝাইতে কুরুসুত,
যাই আমি হস্তিতা ভবনে।
পাণ্ডবের রাজ্য বাড়ী,           যদি নাহি দেয় ছাড়ি,
দুর্য্যোধন আমার বচনে।।
রুষিবে পাণ্ডবগণ,           বলে লবে রাজ্য ধন,
কুরুবংশ করিয়া বিনাশ।
এত বলি নারায়ণ,           আশ্বাসিয়া প্রজাগণ,
সেই দিন তথা করে বাস।।
বিচিত্র ভারত কথা,           ব্যাস বিরচিত গাথা,
শুনিলে অধর্ম্ম হয় নাশ।
কমলাকান্তের সুত,           হেতু সুজনের প্রীত,
বিরচিল কাশীরাম দাস।।