১৯. ভূরিশ্রবা বধ

মুনি বলে আশ্চর্য্য শুনহ জন্মেজয়।
শিব বরে সাত্যকি পাইল পরাজয়।।
ভূরিশ্রবা হস্ত যদি কাটেন অর্জ্জুন।
ভূমেতে পড়িয়া হইলেক অচেতন।।
পুনরপি বসিয়া উঠিল রণস্থলে।
নিন্দা করি ভূরিশ্রবা অর্জ্জুনেরে বলে।।
ধিক্ ধনঞ্জয় তোর থাকুক্ বীরত্ব।
অন্যায় করিয়া মম কাট তুমি হস্ত।।
সাত্যকি সহিত রণ আছিল আমার।
কাটিলে আমার হস্ত তুমি কুলাঙ্গার।।
সম্মূখ সংগ্রামে পড়ি স্বর্গে যাই আমি।
এই পাপে ধনঞ্জয় হবে অধোগামী।।

এতেক শুনিয়া পার্থ হইল লজ্জিত।
শ্রীকৃষ্ণ বলেন তুমি কেন হও ভীত।।
কৃষ্ণ ডাকি বলিলেন ভূরিশ্রবা প্রতি।
একা অভিমন্যুরে বেড়িল সপ্তরথী।।
কোন ন্যায় যুদ্ধে অভিমন্যুরে মারিলা।
এবে বুঝি সে সকল কথা পাসরিলা।।
মৃত্যুকালে ধর্ম্মবুদ্ধি হইল তোমার।
অর্জ্জুনের নিন্দা কর তুমি কুলাঙ্গার।।
কটুবাক্য শুনি ভূরিশ্রবা নরপতি।
নিন্দা করি কহিতে লাগিল কৃষ্ণ প্রতি।।
ভূরিশ্রবা বলে কৃষ্ণ কহিলা প্রমাণ।
তোমা হৈতে এত সব হৈল অপমান।।
কি কারণে নিন্দা আমি করি অর্জ্জুনেরে।
তোমা সম দুষ্ট নাহি পৃথিবী ভিতরে।।
তোমার কুবুদ্ধে হৈল সকল সংহার।
নির্লজ্জ তোমারে আমি কি বলিব আর।।

এত বলি ভূরিশ্রবা হইল বিমন।
কি কর্ম্ম করিনু আমি নিন্দি নারায়ণ।।
আপনার কর্ম্মভোগ করি যে আপনে।
তবে কেন বড় হয়ে নিন্দি নারায়ণে।।
অন্তকালে যে জন স্মরয়ে নারায়ণ।
চতুর্ভূজরূপে যায় বৈকুণ্ঠ ভুবন।।
এতেক বলিয়া ভূরিশ্রবা নরপতি।
বিধিমতে গোবিন্দেরে করিলেন স্তুতি।।
ডাকিয়া বলিল কৃষ্ণ তোমারে নিন্দিয়া।
কি গতি আমার হবে না পাই ভাবিয়া।।
অধম দেখিয়া মোরে হও কৃপাবান।
নরক হইতে মোরে কর পরিত্রাণ।।
তোমা বিনা গতি মম নাহি নারায়ণ।
কায়মনোবাক্যে আমি নিলাম শরণ।।
সর্ব্বকাল তোমা বিনা নাহি জানি আমি।
মৃত্যুকালে তোমা নিন্দি হই অধোগামী।।
আপনার গুণে কর আমারে উদ্ধার।
নরক হইতে ত্রাণ করহ আমার।।
এত বলি ভূরিশ্রবা মৌনেতে রহিল।
হৃদয় পঙ্কজে পদ ভাবিতে লাগিল।।
শ্রীকৃষ্ণ বলেন তুমি ত্যজ দুঃখমন।
স্বচ্ছন্দে চলিয়া যাহ বৈকুণ্ঠ ভুবন।।
সিদ্ধ ঋষি যোগী সেই স্থান নাহি পায়।
তথাকারে যাহ তুমি আমার আজ্ঞায়।।
বৈকুণ্ঠেতে আগে তুমি করহ গমন।
তথা গিয়া তোমা সঙ্গে করিব মিলন।।
ভূরিশ্রবা শ্রীকৃষ্ণেতে এই কথা হয়।
কৃষ্ণধ্যান করি ভূরিশ্রবা মৌনে রয়।।

হেনকালে সাত্যকি উঠিয়া ভূমি হৈতে।
খড়গ লয়ে যায় ভূরিশ্রবারে কাটিতে।।
হাতে চুল জড়াইয়া খড়গ লয়ে করে।
খণ্ড খণ্ড করি বীর কাটিল তাহারে।।
এতেক দেখিয়া কৌরবের সেনাগণ।
সাত্যকি উপরে করে বাণ বরিষণ।।
এক লাফে সাত্যকি উঠিল গিয়া রথে।
ধনুর্গুণ টঙ্কারিয়া অস্ত্র নিল হাতে।।
নিমিষেকে মারে লক্ষ লক্ষ সেনাগণ।
বাণবৃষ্টি করে বীর মহাকোপ মন।।
দ্রোণপর্ব্ব পুণ্যকথা জয়দ্রথ বধে।
কাশীরাম দাস কহে গোবিন্দের পদে।।