১৯. কৌরবগণের অর্জ্জুন বিষয়ক পরস্পর তর্ক বিতর্ক

রথ চালালেন তবে ধীমান অর্জ্জুন।
শমীবৃক্ষ যথা আছে অস্ত্র ধনুর্গুণ।।
উত্তরেরে রথে লয়ে করেন গমন।
দেখিয়া হাসিয়া বলে কর্ণ দুর্য্যোধন।।
হে গুরু, হে কৃপাচার্য্য, কোথা ধনঞ্জয়।
স্বপ্নেতে তোমরা দেখ পাণ্ডুর তনয়।।
গুরু বলি সঙ্কোচে না কহি কোন কথা।
আমার শত্রুর গুণ গাও যথা তথা।।
দুর্য্যোধন-বাক্য গুরু না শুনিল কাণে।
ভীষ্ম প্রতি চাহি তবে কহেন সেক্ষণে।।
বিপরীত অকুশল দেখ হেথা আজি।
নিরুৎসাহ সর্ব্বসৈন্য কান্দে গজ বাজী।।
রক্তবৃষ্টি হইতেছে, বহে তপ্ত বাত।
অন্ধকার দশদিক, সঘনে নির্ঘাত।।
বিনা মেঘে রক্তবৃষ্টি মহাকলবর।
বহু প্রাণী বিনাশের লক্ষণ এ সব।।
যত সৈন্য সবে থাক সংগ্রামের সাজে।
সবে মেলি রক্ষা কর দুর্য্যোধন রাজে।।
গবী হেতু সঙ্কটেতে পড়িলাম সবে।
বহুকাল জীব, আজি রক্ষা পাই তবে।।
এত বলি ভীষ্মে চাহি বলেন বচন।
চিনিলে কি অঙ্গনায় গঙ্গার নন্দন।।
লঙ্কার ঈশ্বর বনরিপু যায় ধ্বজ।
নগনামে নাম যার নগারি অঙ্গজ।।
অঙ্গনার বেশধারী দুষ্টনাশকারী।
গোধন লইবে আজি কুরুসৈন্য মারি।।
সঙ্কেতে এতেক গুরু বলেন বচন।
উত্তর করেন শুনি শান্তনু-নন্দন।।
কি হেতু সঙ্কেতে কথা বল আর গুরু।
প্রকাশ করিয়া বলে শুনুক সে কুরু।।
সভাস্থলে পূর্ব্বে ধর্ম্ম সে কৈল নির্ণয়।
গেল দিন পরিপূর্ণ হইল সময়।।
সে ভয় ত্যজিয়া কহ, শুনুক সকলে।
শুনি দুর্য্যোধনে চাহি গুরুদেব বলে।।
বলিলে তুমি তো রাজা বচন না শুন।
তথাপি নিলর্জ্জ হয়ে কহি পুনঃ পুনঃ।।
এই যে ক্লীবের বেশে গেল মহাশূর।
সর্ব্বসৈন্য-অন্তকারী খ্যাত তিন পুর।।
ধনঞ্জয় নারম যার কুরুকুলবর।
প্রতিজ্ঞা তাহার যত তোমাতে ‍গোচর।।
যথা যায়, জয় নাহি করিয়া বাহুড়ে।
সুরাসুর যার নামে নিজস্থানে ছাড়ে।।
মম শিষ্য বলি তুমি না করিহ মনে।
ইন্দ্র শিব আদি দেব দিল অস্ত্রগণে।।
বহুবিদ্যা পাইয়াছে অমর-ভুবনে।
অতি ক্রোধে আসিতেছে, লয় মম মনে।।
পার্থ সহ কে যুঝিবে তব রথী মাঝ।
একজন নয়নে না দেখি মহারাজ।।
এত শুনি বলে তবে কর্ণ মহাবীর।
প্রশংসা করহ তুমি সদা গাণ্ডীবীর।।
দুর্য্যোধন তার সহ যুদ্ধে যোগ্য নয়।
অনুক্ষণ কহ তুমি, প্রাণে কত সয়।।
যদি এই জন হবে পাণ্ডুর কুমার।
তবে ত মানস পূর্ণ হইল আমার।।
দুর্য্যোধন বলে, যদি ধনঞ্জয় এই।
কামনা হইল পূর্ণ, আমি যাহা চাই।।
যার হেতু চর মোর খুঁজিল সংসার।
হেন জনে পাইলে কি চাহি তবে আর।।
ত্রয়োদশ বৎসর অজ্ঞাত ‍বাস আদি।
পূর্ণ না হইতে পার্থ দেখা দিল যদি।।
কহ গুরু কেমনে না যাবে পুনঃ বন।
সবে জান, যুধিষ্ঠির করিল যে পণ।।
অর্জ্জুন না হয় যদি, অন্য জন হবে।
এখনি মারিব তারে যেন ক্ষুদ্র জীবে।।
কর্ণের বচন শুনি দ্রোণ বলে বাণী।
যত বড় যেই জন সব আমি জানি।।
অর্জ্জুন যেমত, তাহা ত্রিলোকে বিখ্যাত।
খাণ্ডব দাহনে সেই জিনে সুরনাথ।।
অপ্রমেয় পরাক্রম যদুবলে জিনি।
হরিয়া আনিল বলরামের ভগিনী।।
বাহুযুদ্ধে পরাজয় কৈল পশুপতি।
এক রথে জয় করে সগাগরা ক্ষিতি।।
নিবাতকবচগণে করে নিপাতন।
দশ রাবণের তেজ এক এক জন।।
বহুকাল কালকেয় ইন্দ্রের বিবাদী।
সবে মারি নিষ্কণ্টক করে জম্ভভেদী।।
চিত্রসেনে জিনি দুর্য্যোধনে মুক্ত কৈল।
সহজে কহিতে তোর অঙ্গে না সহিল।।
এখনি সাক্ষাতে আজি দেখিবে নয়নে।
কোন্ জন যুঝিবেক অর্জ্জুনের সনে।।
মহাভারতের কথা ক্ষীরোদ লহরী।
পুণ্য ধর্ম্মকথা সুধা স্নাত পূতবারি।।
নরলোকের যে পাপ তাপ ব্যথাহারী।
কাশীরাম কহে কিবা বর্ণিবারে পারি।।