১৬. রাজসূয় যজ্ঞ প্রসঙ্গ

তবে রাজা যুধিষ্ঠির হৈয়ে হৃষ্টমন।
সহদেবে ডাকি আজ্ঞা করেন তখন।।
ধৌম্য-পুরোহিত-স্থানে জিজ্ঞাসহ আগে।
রাজসূয়-যজ্ঞেতে যতেক দ্রব্য লাগে।।
যা কিছু কহেন ধৌম্য কর সমাবেশ।
দ্বিগুণ করিয়া দ্রব্য করহ বিশেষ।।
পৃথিবীতে আছেন যতেক রাজগণ।
সবান্ধবে সকলে করহ নিমন্ত্রণ।।
দ্বিজ ক্ষত্র বৈশ্য শূদ্র এই চারি জাতি।
নিমন্ত্রিতে দূতগণ যাউক ঝটিতে।।
ইন্দ্রসেন বিশোক ও অর্জ্জুনে-সারথি।
তিন জন সংগ্রহ করহ ভক্ষ্য-বিধি।।
ব্রাহ্মণগণের প্রিয়কার্য্য সাধিবারে।
আন ভাল ভাল বস্তু কাতারে কাতারে।।
চর্ব্ব চূষ্য লেহ্য পেয় কর বহুতর।
রস গন্ধ আগি যত জন-মনোহর।।
যখন যে ‍চাহে, তাহা না করিবা আন।
শীঘ্রগতি নিয়োজন কর স্থানে স্থান।।
দ্বিজগণে নিমন্ত্রিতে সত্যবতী-সুত।
রাজ্যে রাজ্যে প্রেরণ করুন নিজ দূত।।
সহদেবে অনুজ্ঞা দিলেন নরপতি।
পুনরপি কৃষ্ণে আনি জিজ্ঞাসে যুকতি।।
আপনি বুঝিয়া আজ্ঞা কর নারায়ণ।
কোন্ কোন্ জনেরে করিব নিমন্ত্রণ।।
শ্রীকৃষ্ণ বলেন, হরিশ্চন্দ্রের যে যাগ।
তথা হৈতে বিশেষ করহ মহাভাগ।।
তাঁর যজ্ঞে আসে যে পৃথিবীর রাজন।
ত্রিভুবন লোক তুমি কর নিমন্ত্রণ।।
যম-ইন্দ্র-বরুণ-কুবের-আদি সুরে।
আর যত দেবগণ বৈসে সুরপুরে।।
পাতালেতে নাগরাজ শেষ বিষধর।
পৃথিবীতে বৈসে যত রাজ-রাজেশ্বর।।
যুধিষ্ঠির বলে, দেব কর অবধান।
কোন্ দূত নিমন্ত্রিতে যাবে ‍কোন্ স্থান।।
করিতে দেবেন্দ্র-আদি দেবে নিমন্ত্রণ।
স্বর্গেতে যাইতে শক্ত হৈবে কোন্ জন।।
গোবিন্দ বলেন, নাই অন্যের শকতি।
দেব নিমন্ত্রিতে যাবে ‍পার্থ মহারথী।।
অগ্নি-দত্ত রথ সেই কপিধ্বজ নাম।
শ্বেত চারি অশ্ব যার লোকে অনুপাম।।
সে রথের অগম্য নাহিক ত্রিভুবনে।
তিন লোক ভ্রমিবারে পারে এক দিনে।।
সেই রথে চড়ি পার্থ করহ গমন।
উত্তর দিকেতে গিয়া কর নিমন্ত্রণ।।
পর্ব্বতে যে আছে রাজা কানন-ভিতরে।
মনুষ্যের কি সাধ্য, যাইতে পক্ষী নারে।।
সে সকল রাজগণে করি নিমন্ত্রণ।
কৈলাস-পর্ব্বতে যাবে যথা বৈশ্রবণ।।
তাঁরে নিমন্ত্রিয়া তথা উপদেশ লবে।
মনুষ্য-অগম্য স্বর্গ কেমনেতে যাবে।।
ইন্দ্রসহ ইন্দ্রপুরে যত দেবগণ।
দেব-‌ ঋষি ব্রহ্ম-ঋষি বৈসে যত জন।।
সবে নিমন্ত্রিয়া যাহ বরুণের পুরী।
তথা হৈতে যাহ যথা মৃত্যু-অধিকারী।।
তব ধর্ম্মে আসিবেক ত্রৈলোক্য-মণ্ডল।
বিশেষে তোমারে স্নেহ করে আখণ্ডল।।
শ্রুতিমাত্র যজ্ঞে করিবেন আগমন।
ইন্দ্র আইলে, না আসে নাহি হেন জন।।
দেবতা গন্ধর্ব্ব দৈত্য স্দ্ধি সাধ্য ঋষি।
পর্ব্বত সমুদ্র যত অন্তরীক্ষবাসী।।
যারে দেখ তাহারে করিবা নিমন্ত্রণ।
লঙ্কা গিয়া বিভীষণে করিবা বরণ।।
পরম বৈষ্ণব হয় রাক্ষসের পতি।
মম ভক্ত অনুরক্ত ধার্ম্মিক সুমতি।।
বার্ত্তা পেয়ে সেইক্ষণে পাঠাইবে চর।
দূতমুখে নিমন্ত্রিলে আসিবে সত্বর।।
তথাপি যাইবে তুমি, অন্যে নাহি কাজ।
ইন্দ্রের সদৃশ গণি রাক্ষসের রাজ।।
নিমন্ত্রিয়া তাঁরে তুমি আইস সত্বর।
আর যত দুষ্টপনা করে নৃপবর।।
নিমন্ত্রণ পেয়ে যে না আসিবে হেথায়।
বন্ধন করিয়া শীঘ্র আনিবে তাহায়।।
আর তিন দিকেতে যাউক দূতগণ।
মহীপালগণেরে করুক নিমন্ত্রণ।।
এতেক বলিল যদি দেব দামোদর।
শীঘ্রগামী দূতগণে ডাকেন সত্বর।।
রাজগণে লিখিলেন যজ্ঞ-বিবরণ।
দ্বিজ ক্ষত্র বৈশ্য শূদ্র আছে যত জন।।
নিজ নিজ রাজ্য হৈতে সকলে আসিবে।
রাজসূয়-যজ্ঞে আসি উৎসব দেখিবে।।
এইরূপে তিন দিকে পাঠাইয়া দূত।
উত্তরে করেন যাত্রা নিজে ইন্দ্রসুত।।
মহাভারতের কথা সুধার সমান।
কাশীরাম দাস কহে, শুন পুণ্যবান।।