১৫. শ্রীকৃষ্ণ কর্ত্তৃক ধনঞ্জয়ের মূর্চ্ছা অপনোদন

তবে কুরু-পাণ্ডুগণ,                দেখাদেখি দুইজন,
সিংহনাদ করয়ে গর্জ্জন।
রথী রথী মহারণ,                করে বাণ বরিষণ,
ধানুকী ধানুকী করে হান।।
মল্লে মল্লে ঘোর রণ,                পত্তি পত্তি জনে জন,
তবকি তবকি মহারণ।
গদাধারী জনে জন,                করে মহাঘোর রণ,
জনে জনে আশোয়ারগণ।।
শেল শক্তি শূল জাঠি,                মুষল মুদগর পট্টি,
নারাচ ভৈরব আদি শর।
অর্দ্ধচন্দ্র কর্ণিকার,                ব্রহ্মজাল মহাশর,
অজমুখ পরিঘ তোমর।।
শিলীমুখ সুচীমুখ,                অঙ্কু কঙ্কু পাশ যূথ,
রুদ্রজাল আদি নাদপাশ।
দুই দলে অস্ত্র পড়ে,                যেন শেল বৃষ্টি করে,
দেবগণে লাগিল তরাস।।
যথা রাম-রাবণেতে,                বলিদৈত্য-সুরানাথে,
পূর্ব্বেতে হইল যেন রণ।
তেন কুরু-পাণ্ডুগণ,                দুই দলে মহারণ,
বর্ণিতে না পারে কোনজন।।
অতিরথী, মহারথী,                অগণিত মত্তহাতী,
দুই দলে হইল নিধন।
তবে কুরু-বংশপতি,                সংগ্রামে নির্ভয় মতি,
হাতাতে লইল শরাসন।।
আকর্ণ পূরিয়া ধনু,                টঙ্কারিয়া দেয় গুণ,
করে নানা অস্ত্র বরিষণ।
আষাঢ়-শ্রাবণে যেন,                বরিষয়ে ঘোর ঘন,
সেইরূপ পড়ে অস্ত্রগণ।।
নিমিষেক শরক্ষেপে,                যেন সূর্য্য ঢাকে মেঘে,
মুহূর্ত্তেকে ছাইল গগন।
ভীষ্মের বিক্রম দেখি,                পালটিতে নারি আঁখি,
ত্রাসিত পাণ্ডব সৈন্যগণ।।
সহিতে না পারি রণ,                ভঙ্গ দিল পাণ্ডুগণ,
জগৎকর্ত্তা দেবকী নন্দন।
নিকটে দেখিয়া পার্থ,                গঙ্গাপুত্র মহারথ,
হাতেতে লইয়া শরাসন।।
সমাগম-ভীষ্মার্জ্জুন,                হৈল দোঁহে মহারণ,
পূর্ব্বে যেন বলি-দেবেশ্বর।
দিব্যশিক্ষা দুইজন,                করে অস্ত্র বরিষণ,
শরজালে ছাইল অম্বর।।
দোঁহে মহাবিচক্ষণ,                কেহ নহে বলে ঊন,
দিব্য অস্ত্র করিল সাধন।
দোঁহে দোঁহাকার বাণ,                কাটি করে খান খান,
মহাবাতে ভাঙ্গে ঘোর ঘন।।
তবে ক্রোধে কুরুবীর,                লৈয়া বাণ দিব্যশর,
এড়িলেক পার্থের উপর।
আকাশে উঠিল বাণ,                পার্থ কৈল খান খান,
অর্দ্ধচন্দ্র নামে এড়ে শর।।
আকাশে উঠিল অস্ত্র,                দেখি ভীষ্ম হৈল এস্ত,
রুদ্রবাণে কাটিলেক বাণ।
দিব্য অস্ত্র পূরি তুঙ্গে,                বিন্ধিল ভীষ্মের অঙ্গে,
পুনরপি ইন্দ্রের নন্দন।।
সর্ব্বাঙ্গে রুধির বহে,                তথাপি ভ্রুক্ষেপ নহে,
মহাবীর গঙ্গার কুমার।
নিমিষেকে আর ধনু,                লইল গঙ্গার জনু,
দিব্য শর এড়ে নৃপবর।।
বশিষ্ঠের দত্ত বাণ,                কালরুদ্রচক্র নাম’
শীঘ্রগতি এড় ততক্ষণে।
দুই বাণে বিচক্ষণ,                আকাশে হৈল রাণ,
ভীষ্মবাণ কাটে পার্থ বাণে।।
অর্দ্ধখান কাটা শর, ঘোর শব্দে অতঃপর,
ফুটিল পার্থের কলেবর।
নির্ভয়ে বাজিল শর,                মোহ গেল পার্থবর,
এস্ত হৈলা দেব দামোদর।।
কড়িয়ালি পায়ে করি,                বিশ্বম্ভরমূর্ত্তি ধরি,
ধরিয়া তুলিলা ধনঞ্জয়।
অঙ্গ হৈতে অস্ত্র কাড়ি,                ব্রহ্মবীজমন্ত্র পড়ি,
পদ্মহস্ত অঙ্গেতে বুলায়।।
স্পর্শমাত্র হৈল লুপ্ত,                শরীরের অস্ত্র-ক্ষত,
মূর্চ্ছা ভাঙ্গি উঠিল অর্জ্জুন।
পুনরপি সিংহবত,                ধনঞ্জয় মহাসত্ত্ব,
হাতেতে লইল শরাসন।।
পার্থ কিছু না জানিল,                বিশ্বরূপ সম্বরিল,
নিজরূপ হৈল নারায়ণ।
ভীষ্ম পাইয়া অবসর,                বর্ষে নানা অস্ত্রবর,
বহু সৈন্য করিল নিধন।।
তবে ত ভীষ্ম -অর্জ্জুন,                হৈল দোঁহে মহারণ,
পরাজয় কেহ নহে রণে।
ক্রোধ করি দোঁহাপুর,                বর্ষে দোঁহে অস্ত্রবর,
সংগ্রামে সোসর দুইজনে।।
ভারতের পুণ্যকথা,                শ্রবণে নাশয়ে ব্যথা,
শ্রবণেতে পুণ্যের উদয়।
কাশীরাম দাস ভণে,                একমনে যেই শুনে,
তাহার সর্ব্বত্র হয় জয়।।