১৪. অর্জ্জুনের প্রতি শ্রীকৃষ্ণ ও ব্যাসের সান্ত্বনা বাক্য

অর্জ্জুন বলেন কৃষ্ণ করি নিবেদন।
অভিমন্যু বিনা আর না রহে জীবন।।
অভিমন্যু সম নাহি দেখি ত্রিভুবনে।
কন্দর্প সমান বীর পূর্ণ রূপে গুণে।।
শ্রীকৃষ্ণ বলেন সখে শুনহ বচন।
স্বর্গে গেল যেই, তার না কর শোচন।।
সম্মূখ সংগ্রাম করি গেল স্বর্গলোক।
বড় কার্য্য কৈল সেই, পরিহর শোক।।
অনিত্য সংসার দেখ নিত্য কিছু নয়।
কহিনু স্বরূপ এই জানিহ নিশ্চয়।।
যতেক দেখহ সব পুত্র পরিবার।
কেহ কার নয় শুন কুন্তীর কুমার।।
এক কথা কহি তাহা শুন সাবধানে।
দেখিয়াছ বৃক্ষোপরে থাকে পক্ষিগণে।।
নিশাকালে থাকে সব বৃক্ষের উপর।
প্রভাতে উঠিয়া যায় দিগ্ দিগন্তর।।
তত্তুল্য সংসার এই দেখ ধনঞ্জয়।
কুহকের প্রায় যেন কিছুসত্য নয়।।

এইমত সান্ত্বনা করেন নারায়ণ।
হেনকালে আইলেন ব্যাস তপোধন।।
বসিবারে আসন দিলেন সেইক্ষণ।
উঠিয়া প্রণাম করিলেন সর্ব্বজন।।
পার্থ বলিলেন মুনি কর অবধান।
অভিমন্যু পুত্র বিনা স্থির নহে প্রাণ।।
ব্যাস বলিলেন ইহা শুন সর্ব্বজন।
জীবন অসার, সার কেবল মরণ।।
সৃজন করিলা ‍প্রভু এ তিন ভুবন।
পরিপূর্ণ হৈল পাপী না হয় পতন।।
পৃথিবী না সহে ভার টলমল করে।
এত দেখি নারায়ণ চিন্তিল অন্তরে।।
নিশ্বাস ছাড়েন প্রভু করি হুহুঙ্কার।
নাসাপথে কন্যা এক হৈল অবতার।।
প্রভুর নিকটে কন্যা দাণ্ডাইয়া কয়।
কি কার্য্য করিব আজ্ঞা কর মহাশয়।।
প্রভু বলিলেন তুমি মৃত্যুরূপা হও।
চতুর্দ্দশ পুরে গিয়া ভ্রমিয়া বেড়াও।।
মৃত্যুরূপে প্রাণীর সংহার কাল পেয়ে।
প্রভুর আদেশে কন্যা হরষিতা হয়ে।।
কালপ্রাপ্ত জনেরে যে মৃত্যুরূপে হরে।
অনিত্য সংসার এই জানাই তোমারে।।
এত বলি ব্যাসদেব করেন গমন।
সবে মেলি করে তাঁর চরণ বন্দন।।