১১. ভীমের দিগ্বিজয়

পূর্ব্বদিকে বৃকোদর বহু সৈন্য লৈয়া।
পাঞ্চাল-নগরে উত্তরিলেন যাইয়া।।
দ্রুপদ-নৃপতি হৃদে পাইয়া সন্তোষ।
যুধিষ্ঠির-রাজা হেতু দিল বহু কোষ।।
তথা হৈতে চলিলেন কুন্তীর কুমার।
বিদেহ-নগরে যান গণ্ডকীর পার।।
সে দেশ জিনিয়া যান দশার্ণ-প্রদেশে।
সুধর্ম্মা নৃপতি আসি পূজিল বিশেষে।।
তাঁহারে পাইয়া প্রীত বর বৃকোদর।
সেনাপতি করিলেন সৈন্যের উপর।।
অশ্বমেধেশ্বর মহারাজ রোচমানে।
পরাজয় করিলেন সমর-প্রাঙ্গণে।।
রোচমানে পরাজয় করিয়া ত্বরিতে।
পূর্ব্বদেশ অধিকার লাগিল করিতে।।
পুলিন্দের নরপতি সুমিত্রাকে জিনি।
চেদি-রাজ্যে প্রবেশিল পাণ্ডব-বাহিনী।।
যুধিষ্ঠির-আজ্ঞা আছে আসিবার কালে।
সম্প্রীতে মিলিও ভাই রাজা শিশুপালে।।
সেই হেতু সাম্যরূপে যান বৃকোদর।
বার্ত্তা শুনি শিশুপাল আইল সত্বর।।
আলিঙ্গন করিয়া কুশল জিজ্ঞাসিল।
দোঁহে দোঁহাকার নিজ বারতা কহিল।।
গৃহে লৈয়া শিশুপাল বহুমান্য করি।
ত্রিদশ-দিবস রাখিলেন নিজ পুরী।।
রাজকর মহানন্দে দেন শিশুপাল।
তথা হৈতে গেলেন সে উত্তর-কোশল।।
অযোধ্যা-নগরে রাজা দীর্ঘশৃঙ্গ নাম।
তাহার সহিত বড় হইল সংগ্রাম।।
একদিন সংগ্রামেতে সে রাজে জিনিয়ে।
কোশল রাজ্যেতে যান ধন-রত্ন লৈয়ে।।
তথা বৃহদ্বল রাজা জিনি কুন্তীসুত।
মল্লদেশে নিল কর পাঠাইয়া দূত।।
ভল্লাটের চতুর্দ্দিকে শুক্তিমান্ গিরি।
সুবাহু নামেতে যেই কাশী-অধিকারী।।
সুপার্শ্ব নিকট রাজপতি ক্রথ-আদি।
একে একে সবা জিনি নিল রত্ননিধি।।
মৎস্যদেশ-ভূপতিরে জিনি বৃকোদর।
গেলেন উত্তরমুখে নিষাদ-নগর।।
শর্ম্মক-বর্ম্মকগণে জিনি মহাবীর।
জনক মিথিলা-পতি মণিমন্ত ধীর।।
হেলায় জিনিয়া ক্রমে এতেক নৃপতি।
গিরিব্রজে শীঘ্র গেলা ভীম মহামতি।।
সহদেব নৃতি লইয়া বহুধন।
পূজা কৈল বৃকোদরে করিয়া স্তবন।।
পুণ্ড্রাধিপ বাসুদেব কৌশিকীর কূলে।
তথাকারে গেল বীর চতুরঙ্গ-দলে।।
তাহারে জিনিয়া রত্ন পাইল বহুত।
বঙ্গেতে সমুদ্রসেনে জিননে কুন্তীসুত।।
চন্দ্রসেন-রাজারে জিনিয়া মহাবীর।
আর যত রাজা বৈসে সমুদ্রের তীর।।
দিগন্ত পর্য্যন্ত ভীম জিনি রাজগণ।
পুনঃ গেল ইন্দ্রপ্রস্থে লৈয়া বহু ধন।।
অগুরু চন্দন ভোট-কম্বল বসন।
লক্ষ লক্ষ লইল মাতঙ্গ-বাজিগণ।।
কনক রজত মুক্তা মাণিক্য প্রবাল।
নানা জাতি পশু সঙ্গে যায় পালে পাল।।
সব নিবেদিল গিয়া ধর্ম্ম-নৃপবরে।
প্রণমিয়া সকল কহিল যোড়করে।।
আনন্দিত ধর্ম্মসুত করি আলিঙ্গন।
ভাণ্ডার রাখিতে কহিলেন সব ধন।।
বৃকোদর চলিলেন আপনার বাস।
ভীম-দিগ্বিজয় বিরচিল কাশীদাস।।