০৭. হরিণের মৃত্যু-বিবরণ

ব্যাসের বচন শুনি ধর্ম্ম নরপতি।
নিঃশব্দে রহিল যুধিষ্ঠির মহামতি।।
কৃষ্ণকে কহিল তবে বীর ধনঞ্জয়।
যত দুঃখ পাইল তাহা কহনে না যায়।।
জ্ঞাতিশোকে সন্তপ্ত নৃপতি যুধিষ্ঠির।
বিশেষে পুত্রের শোকে দহিছে শরীর।।
কোনমতে শান্ত হবে কহ ভগবান।
রাজার সন্তাপ শোক কর সমাধান।।
অর্জ্জুনের বাক্য শুনি উঠি নারায়ণে।
উক্তি করি নৃপস্থানে চলিলা আপনে।।
নৃপতির হাতে ধরি বলে নারায়ণ।
শোক পরিহর রাজা ধর্ম্মে দেহ মন।।
শোক পরিহর রাজা বৈসহ সন্তোষে।
অকারণে শরীরেতে কেন দেহ ক্লেশে।।
যতেক পড়িল রণে জ্ঞাতি-বন্ধুগণ।
তার লাগি শোক তুমি কর অকারণ।।
সম্মুখ সমরে তারা গেল স্বর্গবাস।
প্রজা পাল ধর্ম্মরাজ শোক কর নাশ।।
দিব্য রথে চড়ি সবে স্বর্গপুরে যায়।
তার হেতু শোক তব নাহিক যুয়ায়।।
ভরত-আখ্যান রাজা শুনিলে শ্রবণে।
শুনিলে অধর্ম্ম খণ্ডে ব্যাসের বচনে।।
কৃষ্ণের অনন্ত কথা নারদ কহিল।
ব্যাস যে কহিল তাহা সাক্ষাতে শুনিল।।
তবে জন্মেজয় বলে, শুন তপোধন।
উত্তানপাদের কথা করিনু শ্রবণ।।
মরণ সময় দেখ যেই ধ্যান করে।
সেইমত জন্মে সেই ভ্রময়ে সংসারে।।
ঈশ্বর আরাধি মৈলে দিব্য গতি হয়।
পৃথিবীতে আসি সেই মহা সুখ পায়।।
বিবরিয়া কহ গোসাঞি করি নিবেদন।
হরিণ কিসের হেতু হইল ব্রাহ্মণ।।
ব্রাহ্মণ-ঘরেতে কেন জনম হইল।
শুনিয়া রাজার বাক্য ঋষিরাজ বৈল।।
কুরঙ্গ ভাবিয়া মৈল হইল কুরঙ্গ।
শুন রাজা বলি তবে তাহার প্রসঙ্গ।।
কুরঙ্গ চিন্তিয়া মৈল মরণ-সময়।
হরিণীর গর্ভে জন্ম তেকারণে হয়।।
জাতিস্মর হৈয়া রাজা ভ্রমে বনে বন।
মরণ-সময় রাজা ভাবিল তখন।।
বন ছাড়ি নগরেতে করিল প্রবেশ।
হরিণ দেখিয়া লোক ধায়ত বিশেষ।।
তবেত হরিণ তথা ভাবে মনে মন।
মরণ নিকট দেখি স্মরে নারায়ণ।।
পিছু পিছু লোক সব ধাইয়া চলিল।
যমুনার জলে গিয়া হরিণ পড়িল।।
জলে পড়ি নিজ প্রাণ তেজিল তখন।
তার পরে তুলি আনে নগরিয়াগণ।।
শুনিয়া এসব কথা শোক পরিহর।
ব্যাসদেব বৈল তবে এইত উত্তর।।
তার পরে ব্যাসদেব বলে বার বার।
শোক পরিহর রাজা ধর্ম্মের কুমার।।
অধর্ম্ম করিলে হয় সর্ব্ব নিপাতন।
তার কথা কহি আমি শুনহ রাজন।।
তবে রাম অযোধ্যা হইতে বনে গেল।
নানামত দুঃখ পায়্যা অনেক ভ্রমিল।।
তার পর রাবণে হরিয়া নিল সীতা।
তার হেতু সুগ্রীবের করিলেন মিতা।।
বালি মারি সুগ্রীবের দিলা রাজ্যভার।
তদন্তরে সিন্ধু বান্ধি হইলেন পার।।
ক্রমে ক্রমে মারিলেন নিশাচরগণ।
লঙ্কায় নাহিক বীর বিনা দশানন।।
হেনকালে মন্দোদরী বলে লঙ্কেশ্বরে।
মহী পুত্র আছে তব পাতাল ভিতরে।।
তাহারে স্মরহ তুমি শুনহ রাজন।
মহী আইলে দুঃখ সব হৈবে বিমোচন।।
তার সম বীর নাহি এ তিন ভুবনে।
সর্ব্বকার্য্য সিদ্ধ হবে তাহার গমনে।।
তবেত রাবণ তারে করিল স্মরণ।
রাবণ স্মরণে নড়ে মহির আসন।।
ধ্যান করি জানে মহী সব সমাচার।
জানিল মনেতে লঙ্কা হয়েছে সংহার।।
রাম-লক্ষ্মণ আসিয়াছে সঙ্গে কপিগণ।
সকল রাক্ষস-বংশ হয়েছে নিধন।।
তেকারণে পিতা মোরে করিল স্মরণ।
অবশ্য পিতার বাক্য করিব পালন।।
যাইব লঙ্কাতে আমি নাহিক বিলম্ব।
মারিব শ্রীরাম লক্ষ্মণ করিয়া প্রবন্ধ।।
যাত্রা কৈল মহীবীর নাকে দিয়া হাত।
স্মরিয়া শঙ্কর-পদ দেব বিশ্বনাথ।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান।।