০৫. সুদেষ্ণার নিকট দ্রৌপদীর নিয়ম কথন ও সুদেষ্ণার দ্রৌপদীকে আশ্রয় প্রদান

রাণী বলে, শুন সতি তব রূপ দেখি।
স্ত্রীজাতি হইয়া পালটিতে নারি আঁখি।।
নৃপতি দেখিয়া লোভ করিবে তোমারে।
না হইবে মম শক্তি নিবারিতে তাঁরে।।
তোমা দেখি আদর না করিবেন মোরে।
আমি উদাসীনা হব তোমা রাখি ঘরে।।
আপনার দ্বারে কাঁটা রোপিব আপনে।
কর্কটীর গর্ভ যথা মৃত্যুর লক্ষণে।।
রাজ-বাসে রহে কত আত্ম-পরিজন।
সৎ অসৎ আছে তার মধ্যে কত জন।।
তোমায় প্রদানি আমি হেথায় আশ্রয়।
কেমনে রক্ষিব তোমা এই জাগে ভয়।।
এত শুনি কৃষ্ণা তবে বলে সুদেষ্ণায়।
দুষ্টা নারী সম রাজ্ঞী না ভাব আমায়।।
যেবা হৌক, মোর প্রতি যদি কোন জন।
পাপচক্ষে চাহিলে না জীবে কদাচন।।
পঞ্চ গন্ধর্ব্বের আমি করি যে সেবন।
অনুক্ষণ রাখে মোরে সেই পঞ্চ জন।।
থাকুক স্পর্শন, যদি দেখে পাপচক্ষে।
দেবতা হলেও মৃত্যু যেন তার পক্ষে।।
দুঃখানলে দগ্ধ সদা মম স্বামিগণ।
না বাঁচিবে আমারে যে করিবে চালন।।
দয়া করি মোরে যদি রাখ গুণবতী।
পশ্চাতে জানিবে তুমি আমার প্রকৃতি।।
না লব উচ্ছিষ্ট আর না ছোঁব চরণ।
পুরুষের কাছে নাহি পাঠাবে কখন।।
সুদেষ্ণা বাক্য শুনি কৃষ্ণা হৃষ্টমনে।
এমতে রহিলা দেবী বিরাট ভবনে।।
সেবায় হইল বশ বিরাটের রাণী।
সুশীলে করিলা বশ যতেক রমণী।।
বিরাটের সভাপতি ধর্ম্মের নন্দন।
ধর্ম্ম ন্যায়ে বশ করিলেন সভাজন।।
সপুত্রেতে আনন্দিত মৎস্য-অধিকারী।
অনুক্ষণ ধর্ম্ম সহ খেলে পাশাসারি।।
পাশায় জিনিয়া ধর্ম্ম অনেক রতন।
দীন দরিদ্রেরে সব করে বিতরণ।।
ভীমের রন্ধনে তুষ্ট হলেন রাজন।
বশ হৈল, যত জন করিল ভোজন।।
মল্লযুদ্ধে বড় তুষ্ট হইয়া রাজন।
অর্পণ করেন ভীমে কনক রতন।।
অর্জ্জুনের দেখি নৃত্য গীত বাদ্যরস।
অন্তঃপুরে নারীগণ সবে হৈল বশ।।
বহুকাল অশ্বগণ দুষ্টমন ছিল।
নকুলের করস্পর্শে সবে শান্ত হৈল।।
গবীগণ বৃদ্ধি পায়, যথা ক্ষীরবতী।
সহদেব গুণে বশ হন মৎস্যপতি।।
পাণ্ডবের গুণে মৎস্যদেশ বশ হৈল।
এইরূপে চারিমাস ক্রমেতে কাটিল।।
সুধার সমান মহাভারতের কথা।
ভক্তিতে শুনিলে ঘুচে যায় ভবক্ষুধা।।