০৪. শ্রীকৃষ্ণকে আনয়নার্থ যুধিষ্ঠিরের দূত প্রেরণ

মুনিমুখে বার্ত্তা শুনি,                  তবে ধর্ম্ম নৃপমণি,
মনে মনে করেন চিন্তন।
অন্য নাহি লয় মনে,                  কহিলেন ভ্রাতৃগণে,
কি করিব বলহ এক্ষণ।।
নারদ বলেন যত,                  পিতৃ-আজ্ঞা যেই মত,
শুনি হন পুলকিত মন।
এ যজ্ঞ কর্ত্তব্য কিনা,                  ভেবে দেখ সর্ব্বজনা,
কিসে হয় পূর্ণ আকিঞ্চন।।
শুনি যত মন্ত্রিগণ,                  কহে তবে সর্ব্বজন,
কেন বৃথা চিন্তিত রাজন।
চিন্তা কর কোন হেতু,                  কর রাজসূয় ক্রতু,
তুমি হও সর্ব্ব গুণবাণ।।
কি কার্য্য অসাধ্যআছে,                  কেবা বিরোধিবে পাছে,
নাহি হেরি আছে ত্রিভুবনে।
মন্ত্রিগণ-বাক্য শুনি,                  বিচারেন নৃপমণি,
কি কার্য্য করিব এইক্ষণে।।
যে কর্ম্ম যাহে না শোভে,                  সে কর্ম্ম করিলে তবে,
সভামাঝে হইবে নিন্দন।
পাছে হয় বিড়ম্বনা,                  অযশ যোষে সর্ব্বজনা,
চিন্তাতে হয়েন নিমগণ।।
বিশেষে বিষম যজ্ঞ,                  সব লোক নহে যোগ্য,
কিরূপেতে হইবে সাধন।
ইহা আগেনা প্রকাশি,                  গোবিন্দে অগ্রে জিজ্ঞাসি,
কি কহেন শুনি জনার্দ্দন।।
কর্ত্তব্য কি অকর্ত্তব্য,                  হরির হইলে শ্রব্য,
করিব এ ব্রত আচরণ।
যদি দেন অনুমতি,                  এ যজ্ঞে হইব ব্রতী,
নতুবা এ বৃথা আকিঞ্চন।।
ইহা চিন্তি নরপতে,                  তবে ইন্দ্রসেন দূতে,
প্রেরিলেন কৃষ্ণ সন্নিধান।
সে দূত সত্বর হয়ে,                  দ্বারকা প্রবেশে গিয়ে,
দাঁড়াইল বন্দিয়া চরণ।।
কৃষ্ণে করি নমস্কার,                  কহে ধর্ম্ম-সমাচার,
জানাইল হরিষে তখন।
কয় সে বিনয় করি,                  চল তথা তুমি হরি,
তোমা লাগি চিন্তিত রাজন।।
তোমার দর্শন বিনে,                  কুন্তী-পুত্র দুঃখী মনে,
রহিয়াছে বিরস বদন।
এ কথা শুনিবামাত্র,                  শ্রীকৃষ্ণ তোলেন গাত্র,
যাইবারে করেন মনন।।
বৈনতেয় আরোহণে,                  যান ইন্দ্রসেন সনে,
ধর্ম্মপুত্রে দিতে দরশন।
দিবাকর যায় অস্তে,                  উপনীত ইন্দ্রপ্রস্থে,
হইলেন দেব নারায়ণ।।
কৃষ্ণ আইলেন পুরে,                  শুনি হর্ষ নৃপবরে,
আগুবাড়ি লইতে তখন।
ভ্রাতৃ মন্ত্রী পাঠাইল,                  অগ্র হৈয়া কৃষ্ণে নিল,
মহাসুখে ভাসে সর্ব্বজন।।
ধর্ম্মে নমস্কার করি,                  সম্ভাষেন তবে হরি,
মিষ্ট ভাষে তুষি ভগবান।
ধর্ম্ম-নরপতি তবে,                  কৃষ্ণে পূজে ভক্তিভাবে,
বসিবারে দিল সিংহাসন।।
বসিলেন সবে তথা,                  চন্দ্রের মণ্ডলী যথা,
সে রূপের না হয় তুলন।
শ্রীহরি-চরণদ্বয়,                  যে ভাবে সদা হৃদয়ে,
দুঃখ নাহি পায় সেই জন।।