৩ . রাহুল

৩ . রাহুল

সেইদিন রাহুলকে তিতলি খোলখুলি জিগ্যেস করেছিল। পা থেকে জুতো দুটো খুলে নিয়ে দূরে ছুঁড়ে দিয়ে বেরুনোর জন্য প্রস্তুত রাহুলকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরে তিতলি বলেছিল—’জুতো থাক। বোসো। আজ যেতে হবে। না। প্লিজ বোসো। একটা কথা আছে। খুব জরুরি কথা! মোস্ট আর্জেন্ট। প্লিজ রাহুল। স্টে হোম।’

রাহুল অবাক হয়ে বলল—’কাজে যাচ্ছি—যেতে হবে না মানে?’

‘মানে সিক লিভ নাও। সত্যি সত্যিই তো তোমার শরীর-মন সুস্থ নেই। সত্যি সত্যিই তো তোমার বিশ্রাম চাই। আর তোমার মনিব তো তুমি নিজেই।’

‘কী আবার হয়েছে আমার? কীসের বিশ্রাম?’ তিতলির কথাটা উড়িয়েই দিয়েছিল রাহুল।

‘বোসো, রাহুল। বেরিও না। আজ আমাকে একটা কথা বলতেই হবে। অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করে আছি। কবে তোমাকে ধরতে পারব। আজকে ধরেছি। প্লিজ , নিজের জন্যে আমার জন্যে—আজ সিক রিপোর্ট করো।’ রাহুলের দু-হাত জড়িয়ে ধরেছিল তিতলি।

আর রাহুল খুব বিরক্ত হয়ে হাত ছড়িয়ে নিয়েছিল। সেই হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার মধ্যেই উত্তরটা পেয়ে গিয়েছিল তিতলি। তবুও বলেছিল, যেটা বলবে বলে স্থির করে রেখেছিল সেদিন।

‘তুমি ওই সম্পর্কের মধ্যে গিয়ে কী খুঁজছিলে, রাহুল, কী চাইছিলে ওখানে, যেটা আমাদের সম্পর্কের মধ্যে পাচ্ছিলে না?’

‘থাক না! ওসব পার্ট তো চুকেবুকে গেছে—’

‘না, থাকবে না। জেনির সঙ্গে সম্পর্ক শেষ মানেই কিন্তু ওসব পাট চুকেবুকে যাওয়া নয়। ওর শেকড়টা তো থেকেই যাবে। রাহুল আমাদের ভাবতেই হবে এটা হল কেন? আমাকে বলো, তুমি কেন জেনির কাছে গেলে? কীসের আশায়? কী পাওনি বলে? কেবল লাক্সারির জন্যে? ভালোবাসা যথেষ্ট না।’

তিতলি বসে পড়েছে মেঝেয়। সাদা ভালুকের লোমশ চামড়ার নরম কার্পেটটার ওপরে। রাহুলের দুই হাঁটুতে তিতলির দুটো হাত। রাহুল পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করল। প্যাকেট খুলে একটা সিগারেট বের করল। অন্য পকেট থেকে লাইটার—রাহুলের দীর্ঘ পেশিবহুল শরীর কঠিন হয়ে আছে। একটুও রিল্যাক্সড নয়।

রাহুল কথা বলে না। প্যাকেটের ওপরে সিগারেটটা আস্তে আস্তে ঠুকতে থাকে। ঠুক…ঠুক…ঠুক…

মৃদু সেই শব্দটুকু তিতলির স্নায়ুকেন্দ্র বিপুল আঘাত দেয়। তিতলি ওকে সিগারেট ছাড়াতে চেষ্টা করছে। এটা স্পষ্টতই সেই প্রয়াসের বিরোধিতা ঘোষণা।

রাহুল সোজাসুজি কথা কওয়ার মানুষই নয়। স্বল্পভাষী। তিতলির বিপরীত স্বভাব তার।

‘টেল মি, রাহুল, হোয়াট ওয়েন্ট রং?’

‘স্টপ ইট, তিতলি। আই কান্ট স্ট্যান্ড দিস ”নৌটংকি” এনি লংগার। অ্যান্ড আই মাস্ট গো টু ওয়ার্ক। লেট মি গো।’

‘রাহুল! আই ওয়ান্ট টু নো। আই ওয়ান্ট টু আন্ডারস্ট্যান্ড—সো দ্যাট ইট ডাজ নট হ্যাপেন আগেইন! নেভার আগেইন।’

রাহুল এবারে সিগারেটটা ধরাল। একটি দীর্ঘ টান মেরে, ধীরেসুস্থে ধোঁয়া উড়িয়ে বলল, ‘ইউ উইল নেভার আন্ডারস্ট্যান্ড। লেট মি গো নাউ।’

আস্তে তিতলির হাতটা হাঁটু থেকে সরিয়ে দিয়ে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াল সে। আস্তে হলেও স্পর্শের মধ্যে মায়া ছিল না রাহুলের। ছিল বিরক্তি। স্পর্শের ভাষাই তিতলিকে বলল, ‘ইট উইল হ্যাপেন আগেইন, অ্যান্ড আগেইন। অ্যান্ড আগেইন।

তিতলি সরে এসে শূন্য সোফাতে মুখ গুঁজল।

দরজা বন্ধ হবার শব্দ। রাহুল বেরিয়ে গেছে।

.

এমি বলল, ‘এভাবে চলে না। তোমরা দুজনে একসঙ্গে একই বাসাতে বসবাস করছ, যে যার মতো চলছ, কথা কইছ না কেউ কারুর সঙ্গে—একজন অপরাধ বোধে ভুগছে, আরেকজন রাগে-দু:খে নীরব—এভাবে কোনও সম্পর্ক টেকে না। হয় ছিঁড়ে ফেলো বাঁধন, দুজনে মুক্ত হয়ে নতুন পার্টনার খুঁজে নাও—নয়তো কথা বলো। স্পষ্ট করে জেনে বুঝে নাও কী হয়েছিল, কোন ছিদ্র বুজিয়ে ফেলতে হবে।’

এমির কাজই কাউন্সেলিং যদিও সে তিতলির কাউন্সেলর নয়। প্রতিবেশিনী, শুভার্থিনী। ঠিক ‘বান্ধবী’ বলা যায় কিনা তিতলি বোঝে না। এমি বয়সে অনেক বড়। প্রায় ওর মা হতে পারত। এমি চেষ্টা করেছে, কিন্তু রাহুল কথা বলবার পাত্র নয়। অতএব এমি বলছে, তিতলি নিজেই কথা বলুক।

‘শোনো তিতলি। সম্পর্ক ভাঙা-জোড়া হামেশাই হচ্ছে—কতগুলো ভাঙা সহজেই জোড়া লাগানো যায়। একটা অ্যাফেয়ার বরং ভালোই। কষ্টি পাথরে যাচাই হয়ে যায় সম্পর্কটা। তারপরে যখন আবার জোড়া লাগে, তখন একেবারে এয়ারটাইট কমপার্টমেন্ট—পুরোপুরি সিকিওর রিলেশনশিপ। তেমনিই কিন্তু কতগুলো ভাঙন কিছুতেই জোড়া লাগে না। এবার জুড়লে তো, তারপর আবার আর একটা অ্যাফেয়ার হবে। আবার হয় তো টেনেটুনে ধরে আনা গেল। আবার জোড়া লাগালে—কিন্তু না:। আবার পালাবে। সেসব ক্ষেত্রে ইট ইজ বেটার টু পার্ট।—বিকজ দেয়ার ইজ নো রিলেশনশিপ বিটুইন দ্য ট্যু।’

তিতলি শুনছিল মন দিয়ে। তার হাতে ছিল এমির মায়ের উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া কাটগ্লাসের গেলাসে চিলড হোয়াইট ওয়াইন। হাতের গেলাস ছাড়াও এমির লম্বা আঙুলে ছিল লম্বাটে একটি সিগারেট।

‘নো এমি! নো সিগারেটস—হোয়েন উই টক! ইটস অ্যান অ্যান্টিসোশ্যাল অ্যাক্ট, ইউ নো।’

এমি সঙ্গে সঙ্গে লজ্জিত হয়ে সিগারেটটা গুঁজে দিল অ্যাশট্রেতে। কিন্তু মুখে বলল—’ইটস ভেরি লাইট,—লাইট মিন্ট ফ্লেভারড।’

‘হ্যাভ আ রিয়াল মিন্ট ইনস্টেড’—তিতলি ব্যাগ খুলে এক প্যাকেট ‘লাইফসেভার’ বের করে।

‘নো ক্যানডিজ ফর মি—থ্যাংক ইউ সুইটহার্ট—বাট থিংক ওভার ইট, তিতলি। স্পিক টু রাহুল। দিজ ইজ নো লাইফ টুগেদার। হোয়েন ইউ আর বোথ ফ্রি, সিট ডাউন ফর আ টক।’

.

দুজনেই ফ্রি, এরকম সময় ঈশ্বর তাদের সপ্তাহের মধ্যে দেবেন না। দুজনে শুধু উইক এন্ডে ফ্রি থাকে। কিন্তু জেনির ঘটনার পর থেকে রাহুল আর তিতলির মধ্যে অবশ্য প্রয়োজনীয় বাক্যবিনিময় ছাড়া কোনও কথাবার্তাই হয় না। প্রচণ্ড গুমোট চলছে বাড়িতে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। এমি ঠিকই বলেছে। এটা দুজনের কোনও দ্বৈত জীবন নয়।

*

রাহুলের সঙ্গে তিতলির বিয়ে হয়নি, কেন না ওদের বিবাহে রুচি নেই। রাহুলও সৎপাত্র, তিতলিও সৎপাত্রী। তিতলি সারা সপ্তাহ পাগলের মতো ব্যস্ত থাকে ল্যাব নিয়ে। আর রাহুল ব্যস্ত তাদের ব্যাবসা নিয়ে। তার বাবা-মা, দিদি-জামাইবাবু এদেশেই সকলে থাকেন। সিন্ধি পরিবার। রাহুলদের একটা পারিবারিক ইলেকট্রিক্যাল গুডসের কোম্পানি আছে। আর আছে একটা চেন অফ মোটেলস। সুদর্শন সুস্বাস্থ্য সচ্চরিত্র ছেলে। হঠাৎ কী যে হল! জেনি এসে ওদের সাড়ে চার বছরের সংসার যেন ধসিয়ে দিয়ে গেল। জেনি এসেছিল কানাডা থেকে, ফিরেও গেছে স্বস্থানে, স্বামী-পুত্রের কাছে। শুধু রাহুল আর তিতলির জীবনটা আর একরকম রইল না। নাইন-ইলেভেনের পর যেমন নিউইয়র্ক।

.

রাহুলের চোখে যেন মায়াকাজল পরিয়ে দিয়েছিল জেনি। সে এসেছিল ‘সাউথ’ থেকে ‘মেটিরিয়্যাল’ সংগ্রহ করতে—কানাডায় ফিরে গিয়ে উপন্যাস লিখবে। উপন্যাস লিখে নাকি কোটি টাকা উপার্জন করে সে, যদিও তার নাম খুব বেশি লোকে জানে না। জেনি লেখে রোমান্স। তার স্বামীপুত্র তার উপরেই নির্ভরশীল। স্বামী-পুত্র তো এসেছিল, জেনির ফিরে যাবার ঠিক মুখে। স্বামীটি যেন সেক্রেটারি-কাম-আয়া-কাম-বাটলার-কাম-কুক-কাম-ড্রাইভার—কম্বাইন্ড হ্যান্ড স্ত্রী দেখতে যদিও সাধারণত জনগণ অভ্যস্ত, কিন্তু এমন কম্বাইন্ড হ্যান্ড স্বমী চট করে চোখে পড়ে না। রাহুল তাকে দেখে জেনির বিষয়ে কিছু বুঝেছিল কিনা কে জানে।

.

এমির কথামতো তিতলি চেষ্টা করেছিল। কথা বলবার চেষ্টা করেছিল রাহুলের সঙ্গে। কিছুতেই হয়ে ওঠেনি। রাহুল সুযোগ দেয়নি সহজ হবার। কথাটা পাড়বার মতো আবহাওয়া গড়ে ওঠেনি। শেষ পর্যন্ত যেটা করা উচিত ছিল না, ঠিক সেটাই ঘটিয়ে ফেলল তিতলি।

মরিয়া হয়ে। ডেসপারেটলি রাহুলকে আটকাল একটা সন্ধ্যাবেলায়। সে বেরুচ্ছিল কাজে। সেজেগুজে তৈরি হয়ে জুতোর ফিতে বাঁধছে, তিতলি জুতো দুটো পা থেকে টেনে নিয়ে দূরে ছুড়ে ফেলে দিল।

.

সব শুনে এমির মুখটা খুব দু:খী দু:খী হয়ে গেল। অনেকক্ষণ কোনও কথা বলতে পারল না এমি। তারপরে বলল—’জানো তিতলি অনেক সময়ে হয় কী, প্রেম যদি সত্য হয় তাহলে এই একটা বাইরের ধাক্কা লেগে সেটা আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে। ভিত্তিটা সত্যের ওপর দাঁড়ায়। ছেলেরা, অনেক সময়ে মেয়েরাও, চোখের সামনে যেটা রয়েছে, তা দেখেও দেখতে পায় না। হয় তাদের দৃষ্টির দুর্বলতা, নয় তাদের মনোযোগ নেই, বা দেখবার ইচ্ছে নেই, কিংবা চিনে নেবার শক্তি নেই। বোঝে না, অথবা হৃদয়াবেগের মূল্য বোঝে না। আবার কেউ কেউ ঠিক হৃদয়াবেগকে ভয় পায়। তাদের মন:সংযম বা আত্মবীক্ষণের অভাব আছে, যে জন্য তারা সমস্যাগুলোর সামনে যেতেই ভয় পায়, সমস্যাগুলোকে বিশ্লেষণ করতেই সাহস পায় না, ফলে সমাধানও হয় না কোনওদিনই। এমন দম্পতিরা হামেশাই একত্র থাকে—একসঙ্গে থাকলেও তারা বিচ্ছিন্নই। এক সংসারে থেকেও দুজনেই একা। আবার এমনও দেখেছি, কখনও দুজন দুজনের সঙ্গে কোনওদিনই কোনওভাবেই জোড়ে মেলেনি, অথচ দিব্যি একসঙ্গে ছিল, হঠাৎ একটা বাইরের প্রণয় ঝড়ের মতো এসে, সব ওলটপালট করে দিয়ে তাদের সত্যের সামনাসামনি দাঁড় করিয়ে দেয়। তারপর তারা হয় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, নইলে নতুন করে চেষ্টা করবে শুরু করতে, পুনরারম্ভ। তখন দুজন দুজনের কাছে যথাসাধ্য সত্যি কথা বলবে, দুজনে দুজনের কাছে স্পষ্ট, স্বচ্ছ, নিরভিমান হবার চেষ্টা করবে—ফলে যে সম্পর্কটি তৈরি হবে সেটি গভীর, সৎ অমূল্য। সেটিই টেকসই। প্রকৃত প্রণয় গ্রন্থিবাঁধা হবে এবারে। আর যদি তা না হয়, যদি সম্পর্কটা ভেঙেই যায় তো যাক না। সেটাই ভালো। দুজনের হয় তো দু-দিকে যাত্রাপথ সরে গেছে। একই গন্তব্য আর নেই তাদের—সেক্ষেত্রে তো আলাদা আলাদা যাত্রা করাই মঙ্গল। তাই না?’ এমি মিষ্টি হেসে চিজ-ডিপ আর গাজরের টুকরোগুলো এগিয়ে দেয়। অন্যমনে তুলে নেয় তিতলিও।

‘আরেকটু ওয়াইন দিই?’ তিতলি বাধ্য মেয়ের মতো গেলাস এগিয়ে দেয়। এটুকু এমির বিলাস। অত্যন্ত পরিশ্রমের জীবন তার। প্রিজনের কাউন্সেলিং করে সে। তারই মধ্যে সন্ধেবেলা একটু ভালো ওয়াইন নিয়ে বসে গল্পগাছা—তিতলির সঙ্গে। মাঝে মাঝে ফ্রান্সিসও যোগ দেয়। ওপাশের বাড়ির ছোকরা কালো ছেলেটি। এমি যেন এদের সবার গার্জেন হয়ে বসেছে নিজে নিজেই। ফ্রান্সিসও তিতলির কলেজে পড়াচ্ছে, তার বিষয় মিউজিক। সবাই একই হাউজিংয়ে থাকে।

.

এমি বলছিল—’রাহুল যদি নিজে এগিয়ে আসত, ও যদি নিজে থেকে ব্যাপারটা স্বচ্ছ করে নিতে চাইত, ব্যাখ্যা খুঁজত, সহজ করে নিতে চাইত, সেটাই শ্রেষ্ঠ হত। কিন্তু সেটা করতে হলে যতটা মনোবল চাই, সেটা ওর নেই। কিন্তু কথার চেয়ে কাজের ভাষাটাই বেশি জোরালো। রাহুল তো ফিরে এসেছে। সেই ভাষাটাই আমরা পড়ব।’

‘ফিরে কি এসেছে? সেটাই তো বুঝতে পারছি না। অন্য একটি নারীর কাছে যে সে চলে গিয়েছিল, সেটাই তো একটা ভাষা এমি—সেই ভাষাটাই পড়তে পেরেছি—বাড়িতে এসে থাকা মানেই আমার কাছে ফেরা নয়। আমার কাছে সে ফেরেনি এমি। আই ওয়ান্ট আ ক্লিন ব্রেক। হি শুড মুভ আউট।’

এমি চুপ করে থাকে, তারপর বলে,—’জেনি ওয়াজ আ ভেরি স্পেশাল কেস। সে তো সাধারণ মেয়ে নয়, ক্রিয়েটিভ রাইটার, তার একটা আলাদা গ্ল্যামার ছিল। তার সাজপোশাক অন্য, ডিজাইনার ক্লোদস পরত, তার হাঁটাচলা অন্য রকম—রাহুল তো সমাজের ওই স্তরের মেয়েদের সঙ্গে মেশেনি কখনও। জেনিও রাহুলকে পেয়ে অত সুপুরুষ, ‘টল-ডার্ক-হ্যান্ডসাম’ প্রিন্স অব ইন্ডিয়াটিকে হাতে পেয়ে যা খুশি তাই করেছে—দে ওয়্যার লিভিং আ ড্রিম টুগেদার। দে ক্যান নেভার বি হ্যাপি টুগেদার ইন রিয়্যাল লাইফ, তিতলি।’

‘আমি ওসব জানি না এমি, আমি কেবল খাঁটি কথা জেনে গেছি, রাহুল আর কোনওদিন আমাকে নিয়ে সুখী হবে না। সারাক্ষণ আমাকে ও তুলনা করছে জেনির সঙ্গে। জেনির হাতের অর্থ হিসেবহীন, তার যা খুশি সে তাই করতে পারে—আজ রাহুলকে নিয়ে লাসভেগাস উড়ে যাচ্ছে, দিনভর রাতভর যত খুশি জুয়া খেলছে, কাল উড়ে যাচ্ছে নিউ অরলিন্সে, সারারাত জ্যাজ শুনছে—পুঁতির মালা ছুড়ে দিচ্ছে দলবদ্ধ কিশোরীদের—যারা তাদের বক্ষ অনাবৃত করছে এক লহমার জন্য—এটা নিউ অরলিন্সের একটি প্রিয় খেলা—যা ওর স্বপ্ন ছিল, জেনি সব পূরণ করেছে। রাহুলের ন্যাচারালি এখন আমাকে বোরিং লাগছে। ভালোবাসলে এমন হয় না। হতেই পারত না। হি হ্যাজ নো লাভ লেফট ফর মি।’

‘টু ব্যাড! আই ফিল স্যরি ফর রাহুল। হি বিকেম আ টয়-বয় ফর হার। জাস্ট আপ্লে-থিং। অ্যান্ড লস্ট হিজ ট্রু লাভ। কিন্তু তুমি উঠে পড়ো, তুমি উঠে দাঁড়াও, তোমার জীবনযাত্রার পথে এটা কোনও বাধা নয়—বরং একটা মোড় ঘোরবার সুযোগ, স্টার্ট আফ্রেশ। ডোন্ট ড্র্যাগ ইট অন—ইটস ফিনিশড। ইটস ওভার।’

কিন্তু ফ্রান্সিস বলল—’ইউ ক্যান নেভার টেল। জেনির কাছে রাহুল তো কোনও পুরুষ নয়, ও শুধু একটা আইডিয়া। জেনি রোমান্স লেখে। মেটিরিয়্যাল কালেক্ট করতে এসেছিল, রাহুল ওর সেই মেটিরিয়্যাল। ব্যস, আর দ্বিতীয়বার সে ফিরে তাকাবে না রাহুলের দিকে। প্রত্যেক সামারেই নিশ্চয় ও কাউকে-না-কাউকে জোগাড় করে। দেখলে না, স্বামী সঙ্গে আসে না, একদম শেষে এসে নিয়ে যায়? সবই বিজনেসের ব্যাপার—বেচারা রাহুল ওর টোপ গিলল, পুয়োর রাহুল। কয়েকটা মাস যাক, মায়ার জালটা কাটুক, ওর পা বাস্তবের মাটিতে পড়ুক—রাহুল ফিরবে। সবটাই জেনির হাতেগড়া ব্যাপার ছিল।’

তিতলি কিন্তু ফ্রান্সিসের সঙ্গে একমত হতে পারল না।

‘না ফ্রান্সিস। লোভটা তো রাহুলের মধ্যেই ছিল। জেনি না হলে ওটা হত জুডি, জুডি না হলে জিল। জেনে রেখো, জেনির জন্যে একটা সিট খালি ছিল ওর জীবনে, নইলে সে এসে বসত কোথায়? আমার জীবনে তো কেউ ঢুকতে পারেনি এখনও?’

‘বাট জেনি ওয়াজ হিজ ফেয়ারি গডমাদার, তিতলি, শি ফুলফিলড হিজ এভরি উইশ।—এভরি ড্রিম।’

‘অ্যান্ড দেন শি ফ্লু আওয়ে।’

এমি বলে ওঠে’ ‘সেলফিশ ওম্যান—আমি বলছি, এ সবই ওর নেক্সট বইয়ের মধ্যে ঢুকবে। আয়্যাম টেলিং ইউ, শি ইউজড হিম।’

‘কিন্তু তিতলি। তুমি তো রিয়্যাল, তুমি তো বাস্তব, জেনি স্বপ্ন, জেনি ক্ষণস্থায়ী। জেনি মুছে যাবে। গিভ হিম টাইম—তুমি দ্যাখো, হি উইল কাম হোম টু ইউ।’—ফ্রন্সিস কিন্তু হাল ছাড়ে না।

তিতলি একটু হাসে।

—’থ্যাংকস, ফ্রান্সিস, ইউ টু আর আ ড্রিমার। তুমিও স্বপ্ন দ্যাখো, তুমি শিল্পী, তোমার তো এরকম মনে হবেই। বাট আয়্যাম নট অ্যান আর্টিস্ট। আমি মনে করছি রাহুলের সঙ্গে একত্রে বাস করা আমার পক্ষে অস্বাস্থ্যকর। এতে মন অন্ধকার হয়ে থাকে। ইটস ডিপ্রেসিং। ইটস আন-হেলথি। আই ওয়ান্ট সাম লাইট ইন মাই লাইফ। আমি ভাবছি দেশে ফিরে যাব।’&&

‘দেশে? ইন্ডিয়ায়? চাকরি ছেড়ে?’

‘না:। আজকের দিনে টেনিওর্ড পাওয়া পাকা চাকরি কেউ ছাড়ে? ভাবছি ছুটি নিয়ে যাব এক সেমেস্টারের জন্যে। ওখানে মা আছেন। মা’র জন্যে একটা ফ্ল্যাট কিনে দিতে চাই। মাকে ওল্ড এজ হোম থেকে তুলে এনে বাড়িতে রাখতে চাই। তখন প্রথম ক’টা মাস মা’র সঙ্গে কাটিয়ে এলে মা’রও ভালো লাগবে, আমারও। দ্যাটস মাই প্ল্যান।’

‘গুড আইডিয়া।’ এমি মহা উৎসাহিত হয়ে ওঠে, ‘ভেরি গুড আইডিয়া ইন ফ্যাক্ট। গেট অ্যাওয়ে ফ্রম হিয়ার, গেট অ্যাওয়ে ফ্রম রাহুল। ফিরে আসবে যখন, তখন নতুন করে শুরু করবে সব। নো রাহুল, নো জেনি। জাস্ট তিতলি! অ্যান্ড হার নিউ লাইফ।’

‘অ্যান্ড এমি? অ্যান্ড ফ্রান্সিস?’ ফ্রান্সিস হাসতে হাসতে তিতলিকে কোলে তুলে এক পাক ঘুরিয়ে নামিয়ে দেয়। ‘আমাদেরও যেন ঠেলে ফেলে দিও না বাপু। পুরোনো স্মৃতির সঙ্গে আমরা হব সেই সেতু—বিটুইন দি ওল্ড অ্যান্ড দ্য নিউ তিতলি।’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *