অ্যাপিনের গবেষণা
আগস্ট মাসের অর্ধেক পেরিয়ে গেল। এসময়ে শিকার করবার মতো একটি পাখিও কোথাও মেলে না। ব্লেমলি প্রাসাদের দুই ডজন অতিথির হাতে করবার মতো কোনো কাজই নেই।
বিকালের দিকে বৃষ্টিও হয়ে গেল এক পশলা। ঠান্ডাও পড়েছে বেশ। এধার-ওধার একটু যে বেড়ানো যাবে দল বেঁধে, তারও উপায় নেই। অগত্যা চায়ের টেবিলেই এসে জমে গিয়েছেন সবাই।
এ মজলিশে আকর্ষণের বস্তু যে একেবারেই নেই, তা কিন্তু নয়। কর্নেলিয়াস অ্যাপিন নামে একটি লোক রয়েছেন। এতদিন তিনি ছিলেন হংসমধ্যে বকো যথা। প্রায় অজ্ঞাতকুলশীল বললেই হয়। কোনো এক বন্ধুর বন্ধু সুপারিশ করেছিলেন গুণী লোক বলে। আজকের এই আসরে ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রোমহোদয়েরা সবাই মিলে আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন— গুণী লোকটার গুণপনা ঠিক কোন জাতীয়।
অ্যাপিন এসেছেন অন্য অতিথিদের কয়েক দিন আগেই; কিন্তু এ যাবৎ এতখানি মনোযোগ আর কোনোদিন তাঁর দিকে কেউ দেননি। বাড়ির মালিকেরাও না, বাড়িতে সমাগত অতিথিরাও না। অনেকটা একঘরে গোছেরই ছিলেন তিনি। আর তারই দরুন তাঁর গবেষণা এগিয়ে যেতে পেরেছে এতখানি। আজ, সেই এগিয়ে যাওয়ার দরুনই আজ তিনি বকমধ্যে হংস।
হ্যাঁ, গবেষণাই বটে। আজ বলে নয়, অ্যাপিন নাকি গবেষণা করছেন আজ বিশ বছর। ব্লেমলি হাউসে আতিথ্যগ্রহণ করার আগেও তিনি নাকি কিছু কিঞ্চিৎ সাফল্য অর্জন করেছিলেন সে গবেষণায়। কিন্তু এখানে আসবার পরে ইদানীং এই কয়েক দিনে সে-সাফল্য একেবারে পরিপূর্ণতার কোঠায় গিয়ে পৌঁছেছে।
‘কী? কী? ব্যাপারখানা কী?’ জিজ্ঞাসা করে সবাই, ‘কী নিয়ে গবেষণা?’
‘ইতর প্রাণীদের মুখ দিয়েও মানুষের ভাষায় কথা কওয়ানো যায় কিনা, গবেষণাটা সেই বিষয়ে।’ উত্তর দেন অ্যাপিন।
এরকম একটা আজগুবি উত্তরের জন্য কেউই তৈরি ছিল না। কেউ অট্টহাস্য করে উঠলেন সব শালীনতা চারদিকের হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে, কেউ-বা গুম মেরে গিয়ে হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন অ্যাপিনের মুখের দিকে।
এটাও কি একটা গবেষণার বিষয় না কি? এতে যদি অ্যাপিন সাফল্যলাভ করে থাকেন, তবে বুঝতে হবে যে, গবেষণা নয়— জাদুর চর্চা করেছেন তিনি এতদিন!
প্রশ্ন করলেন স্বয়ং গৃহস্বামী, স্যার উইলফ্রিড ব্লেমলি, ‘গবেষণাই হোক, আর জাদুই হোক, আপনি বলতে চাইছেন যে আপনার এতদিনকার চেষ্টা আমাদের এখানে আসবার পরেই পরিপূর্ণ সাফল্যে মণ্ডিত হয়েছে?’
‘তা হয়েছে।’ পরিতৃপ্তির হাসি হেসে জবাব দিলেন অ্যাপিন।
স্যার উইলফ্রিডের মুখে আর কথা জোগাচ্ছে না দেখে তরুণ অতিথি ক্লোভিস করল দ্বিতীয় প্রশ্ন, ‘এখানকার কোন ইতর প্রাণীর মুখ দিয়ে মানুষের ভাষা আপনি বার করলেন, তা আমাদের বলতে বোধ হয় আপনার আপত্তি হবে না?’
‘আপত্তি?’ অ্যাপিন উত্তেজিত হয়ে ওঠেন, ‘নিউটন কি মাধ্যাকর্ষণের তত্ত্ব লোকসমাজে প্রচার করতে আপত্তি করেছিলেন? না বাষ্পের শক্তি আবিষ্কার করবার পরে জেমস ওয়ট সেটা লুকিয়ে রেখেছিলেন নিজের মাথায়? আমি মানুষের ভাষা ব্যবহার করতে শিখিয়েছি আপনাদেরই প্রিয় বেড়াল ওই টোবার মোরিকে।’
‘টো-বা-র-মোরিকে?’ বিভিন্ন সুরে নানা বিচিত্র ঝংকারে কথাটা উচ্চারিত হল দুই ডজন কণ্ঠ থেকে।
‘হ্যাঁ, লেডি ব্লেমলির পোষা ওই হুলো বেড়ালটাকে প্রথম দিন দেখবার পরেই আমি ধারণা করে নিয়েছিলাম যে, ওটি সাধারণ বেড়াল নয়; বেড়াল জাতের মধ্যে অতিবেড়াল। খানিকটা বাজিয়ে দেখতেই ওর প্রতিভা সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হলাম আমি। সেই থেকে যত্ন করে ওকে শিক্ষা দিচ্ছি, আর আশ্চর্য ফল পেয়েছি ওকে শিক্ষা দিতে গিয়ে। টোবার মোরি এখন কথা কইতে পারে যেকোনো শিক্ষিত ভদ্রলোকের মতো।’
অবাক! নির্বাক! হতবাক সবাই। এ যদি সত্য হয়, তবে— তবে আর দুনিয়ায় কোনো কিছু জিনিসকে অসম্ভব বলে উড়িয়ে দেওয়া চলবে না। টোবার মোরি কথা কইতে পারে মানুষের মতো?
টোবার মোরির যিনি মালিক, সেই লেডি ব্লেমলি চারিদিকে একবার তাকিয়ে নিলেন। কোথাও টোবার মোরির পাত্তা না-পেয়ে স্বামীর দিকে চেয়ে মন্তব্য করলেন, ‘ওকে তা হলে একবার ডাকাই যাক-না কেন?’
‘অন্যদিন তো চায়ের টেবিলে থাকে সে! আজ বা নেই কেন?’ বলতে বলতে স্যার উইলফ্রিড নিজেই বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে।
চাকরবাকর দিয়েও ডাকানো চলত টোবার মোরিকে। কিন্তু আজ আর তা ডাকালেন না স্যার উইলফ্রিড। তিনি নিজেই খুঁজে বার করবেন এবং দেখা হলেই ওকে পরীক্ষা করে দেখবেন— সত্যিসত্যিই অ্যাপিনের দাবির কোনো ভিত্তি আছে কি না। যদি অ্যাপিনের অসাক্ষাতে বেড়ালটা কথা কইতে সক্ষম হয়, তা হলেই নিঃসংশয়ে মেনে নেওয়া চলবে যে অ্যাপিনের কথা সত্যি।
কিন্তু সে পরীক্ষার সুযোগ যদি আগেভাগে না পাওয়া যায়, তবে এই ঘরে আসবার পরে টোবার মোরি যে-কথা কইবে, তা টোবার মোরিরই কথা বলে মেনে নেওয়া নিরাপদ হবে না। ভেনট্রিলোকুইজম বলে জিনিস আছে একটা। যার অর্থ স্বরবিক্ষেপ। অ্যাপিনের থেকে বিশ ফুট দূরে টোবার মোরি থাকুক, অ্যাপিন এমনভাবে কথা কইবে যে মনে হবে বিশ ফুট দূরবর্তী টোবার মোরির গলা থেকে সে কথা বেরিয়েছে।
যেখানে অ্যাপিন থাকবে না, সেখানে ভেনট্রিলোকুইজমেরও কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। দেখা যাক তা হলে—
অ্যাপিনের এই অভিনব গবেষণার সম্বন্ধেই এলোমেলো কথা চলছে সব অতিথির মধ্যে। এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে ফিরে এলেন স্যার উইলফ্রিড। একেবারে হাঁইফাঁই করতে করতে। এসেই চেয়ারে ধপাস করে বসে পড়ে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘অন্যের মুখ থেকে শুনলে বিশ্বাস করা কঠিন হত। কিন্তু আমি যে নিজের কানে শুনে এলাম! এ আর অবিশ্বাস করি কেমন করে?’
‘কী? কী? কী শুনে এলে?’ লেডি ব্লেমলির প্রশ্নে অসীম উত্তেজনা।
‘ওকে আমি পেলাম গিয়ে আমার পড়ার ঘরে। ডাকলাম, ‘টোবা মোরি, চা খাবি নে? আয়—’
‘ও বলল ”সময় হলেই যাব। আমি যখন-তখন খাইনে চা”—’
‘অ্যাঁ? অ্যাঁ? অ্যাঁ?’ অব্যয়টা যেন সা-রে-গা-মায় বাজতে লাগল অতিথিমণ্ডলীর কণ্ঠে কণ্ঠে।
‘এই কথা সত্যিই বলল টোবার মোরি?’ একটা দিশেহারা ভাব লেডি ব্লেমলির কথায়। স্বামীর নিজের কানে শোনা কথা, অবিশ্বাস কেমন করে করবেন? কিন্তু বিশ্বাস করতে যে সংস্কারে বাঁধছে।
স্যার উইলফ্রিডকে আর কষ্ট করে সন্দেহভঞ্জন করতে হল না স্ত্রীর। স্বয়ং টোবার মোরি ঘরে এসে ঢুকল হেলে-দুলে।
তার জন্য একখানা টুল বরাবরই আলাদা করা থাকে খাবারের টেবিলে। সে ধীর পদক্ষেপে সেই টুলে গিয়ে উঠল এবং বসল। ভ্রূক্ষেপও করল না দুই ডজন অতিথির দিকে, যারা ভিড় করে বসে আছে টেবিলের দুই দিকে।
ভারি বিব্রত সবাই। যে ব্যাপার ঘটে গিয়েছে, তাতে টোবার মোরিকে আর স্রেফ বেড়াল বলে তুচ্ছ করা যায় না। যে মানুষের মতো কথা কইছে, সে তো মানুষই! তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে দস্তুরমতো বাঁধে। আবার তার চেয়েও বেশি বাঁধে, পোষা বেড়ালটার সঙ্গে সমকক্ষের মতো কথা কইতে।
‘একটু দুধ খাবে টোবার মোরি?’ খুব সমীহ করেই আলাপ শুরু হল লেডি ব্লেমলির।
‘তা খেলে আর দোষ কী’ পরম ঔদাস্যে জবাব দিল টোবার মোরি।
লেডি ব্লেমলি দুধ ঢালতে গেলেন একটা বাটিতে, হাত কেঁপে বেশ খানিকটা দুধ পড়েই গেল। ‘এ-হে-হে, ফেলে দিলাম যে?’ আপশোস করে বলেন গৃহকর্ত্রী।
‘হয়েছে কী তাতে?’ সান্ত্বনা দিল টোবার মোরি, ‘দুধ না-হলে যে আমি মারা পড়ব, তা তো আর নয়!’
আবার সব কয়েক মুহূর্ত স্তম্ভিত, হতবাক। তারপর অতিথিদের মধ্যে সবচেয়ে যিনি বেশি বাচাল, সেই কুমারী রেস্কার নামলেন জেরা করতে, ‘তুমি তো আমাদের মানুষের ভাষাটা বেশ আয়ত্ত করে ফেলেছ দেখছি। শিখতে খুব কষ্ট হল না কি?’
টোবার মোরি দুই চোখ বিস্ফারিত করে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইল রেস্কারের দিকে। তারপর দৃষ্টিটা ঘুরিয়ে দিল খোলা জানালার পানে। ভাবখানা স্পষ্টতই এইরকম— ‘বাজে প্রশ্ন কোরো না, ওসবের জবাব দিতে ভালো লাগে না আমার।’
এবার পালা কুমারী মেভিসের। তিনি আর কোনো জুতসই প্রশ্ন হাতের নাগালে না-পেয়ে বলে বসলেন, ‘মানুষের বুদ্ধিশুদ্ধি সম্বন্ধে তোমার ধারণা কী?’
টোবার মোরির স্বর একেবারে বরফের মতো নিরুত্তাপ, ‘কোনো একজন বিশেষ মানুষের নাম যদি করেন, তবে তার বুদ্ধিশুদ্ধি সম্বন্ধে মন্তব্য করা সহজ হয়—’
অতিকষ্টে একটুখানি কাষ্ঠহাসি হেসে মেভিস বললেন, ‘আমার কথাই ধরো-না কেন!’
‘ভারি মুশকিলে ফেললেন তাহলে।’ বলল টোবার মোরি। বলল বটে মুশকিলের কথা, কিন্তু তার কথার সুরে বা মুখের ভঙ্গিতে মুশকিলের আভাস তিলমাত্র পাওয়া গেল না। ‘ভারি মুশকিলে ফেললেন আমায়। এই বাড়িতে এই যে আপনারা সবাই নিমন্ত্রিত হয়ে এসেছেন আজ, এ নিমন্ত্রণ থেকে আপনি তো প্রায় বাদ পড়েই গিয়েছিলেন। স্যার উইলফ্রিড বলেছিলেন, ”ও মেয়েটার মগজে বুদ্ধি বলে কোনো বস্তুই নেই। ওকে এনে কী হবে?” তা ধরুন, আমার মালিকের যা মত আপনার সম্বন্ধে, আমারও তাই-ই।’
টেবিলসুদ্ধ লোক বিব্রত আড়ষ্ট। কেউ কারও মুখের দিকে চাইতে পারছে না, পাছে মুখ দিয়ে হাসি বেরিয়ে যায়। এক্ষেত্রে হাসা তো রীতিমতো অসভ্যতাই হবে।
অবশেষে মেভিসই কথা কইল আবার, রীতিমতো ঝগড়ার সুরেই কথা কইল, ‘বলি, ওইরকমই যদি কর্তার মত থাকবে আমার সম্বন্ধে, তবে আমার নিমন্ত্রণটা হল কেমন করে? কেমন করে হল?’
‘ওই বুদ্ধির অভাবের জন্যই হল’— নির্বিকারভাবে জবাব দিল টোবার মোরি। ‘লেডি ব্লেমলি বললেন, বোকা-ছোকা মানুষ দুই-একজন দরকার আমাদের। ওই ভাঙা গাড়িটা গছাবার জন্য। বাজারে ওর খদ্দের জুটবে না। মেভিসকে পটাতে পারলে প্রায় নতুনের দামই আদায় করা যাবে তার কাছ থেকে।’
লেডি ব্লেমলি হয়তো এসব অপবাদ ঝেড়েই অস্বীকার করতেন। কিন্তু ভেবে দেখলেন, তা আর করার উপায় নেই, কারণ সেদিনই সকালে তিনি কথাপ্রসঙ্গে মেভিসকে বলেছেন, ‘তোমার ও পাড়াগাঁয়ে, আমারই ছোটো গাড়িখানার মতো একখানা গাড়ি যদি রাখো, দেখবে কী চমৎকার কাজ পাও।’
টেবিলের হাওয়া গরম হয়ে উঠছে দেখে আধাবয়সি মেজর বারফিল্ড এগিয়ে এলেন কথার মোড় ঘুরিয়ে দেবার জন্য। নিজেকে তিনি রসিক লোক বলে মনে করেন। রসিকতারই চেষ্টা করে বললেন, ‘আস্তাবলে যে ডোরাকাটা মেনিটি আছে, শুনলাম তুমি তাকে বিয়ে করতে চাইছ। কত দূর এগুলো ব্যাপারটা?’
টোবার মোরি গম্ভীর হয়ে বলল, ‘এরকম সব আলোচনার জায়গা প্রকাশ্য মজলিশ নয়। আপনি এ বাড়িতে এসে অবধি কোন কুমারীর কতখানি নেকনজর লাভে ধন্য হয়েছেন, সে প্রশ্ন তুললে আপনি কি বেশ স্বচ্ছন্দবোধ করবেন, বলতে চান?’
মেজরসাহেব অধোবদন, একটা চাপা হাসির গুঞ্জন সারা টেবিলে। কিন্তু হাসির বহর যার যতখানি, বুকের ভিতর ধুকধুকুনিও তার ততখানি। অতিথিদের ঘরগুলি সবই পুবের মহলে। পিছন দিকে সারি সারি জানালা। জানালার পিছনে একফালি টানা বারান্দা। কোমর-সমান উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। সে দেয়ালের মাথাটা যে টোবার মোরির বেড়াবার জায়গা, তা অতিথিরা সবাই লক্ষ করেছেন। কার ঘরের ভিতর কী হচ্ছে, কিছুই অজানা নেই পাজি বেড়ালটার।
কথা আর কারও মুখ দিয়ে বেরুতে চাইছে না। কেবল মাঝে মাঝে হাসির উচ্ছ্বাস একটু একটু। বুকের ধুকধুকুনি যাতে পাশের লোকটি টের না-পায়, তারই জন্য চেষ্টা করে করে হাসছে এক একজন।
চায়ের টেবিলের আসর এ অবস্থায় ভেঙে দেওয়াই সংগত মনে করছেন লেডি ব্লেমলি। প্রস্তাবটা জিভের ডগায় এসেছে সবে, এমন সময়ে টোবার মোরি এক লাফে টুল থেকে জানালায় গিয়ে পড়ল। নীচের বাগানে আস্তাবলের ডোরাকাটা পুষির লেজটা দেখা যায় যেন। টোবার মোরি যা একখানা লাফ দিল, একেবারে দোতলা থেকে নীচে।
আসর ভাঙার আর প্রয়োজন মনে করল না কেউ। উৎপাত আপাতত বিদায় হয়েছে। স্যার উইলফ্রিডই কথা কইলেন, ‘ওকে নিয়ে এখন কী করা যায়?’
বাচাল ক্লোভিস প্রস্তাব করল, ‘স্ট্রিকনিন খাইয়ে মেরে ফেলুন।’
লেডি ব্লেমলি বিষণ্ণ, অ্যাপিন মর্মাহত। কিন্তু স্যার উইলফ্রিডও যখন সায় দিলেন ক্লোভিসের কথায়, তখন অ্যাপিন আর কী করবে?
অ্যাপিন বিদায় হয়ে গেল, তার সার্থক শিষ্য টোবার মোরির অপঘাত মৃত্যু সে আর নিজের চোখে দেখবে না।
অনেকেরই ইচ্ছে ছিল ওকে ধরে রাখার এবং টোবার মোরির মতো ওকেও একমাত্রা স্ট্রিকনিন খাইয়ে দেওয়ার। দুনিয়াকে উলটেপালটে দেবার তালে আছে ভবঘুরেটা।
তা স্ট্রিকনিনে মরাই বোধ হয় ভালো ছিল অ্যাপিনের। তা হলে হাতির পায়ের তলায় পিষে মরার কষ্ট তাকে সইতে হত না। গিয়েছিল লন্ডন পশুশালায়। কথা শেখাচ্ছিল সেখানকার এক হাতিকে। ইংরেজি সিনট্যাক্স যাঁহাতক শেখাতে যাওয়া, মাথা ঘুরে গেল বেচারা ছাত্রের। শুঁড়ের এক প্যাঁচ মেরে গুরুকে সে শূন্যে তুলে ফেলল এবং তার পরই—
গবেষক মহলে অ্যাপিনের শূন্যস্থান সেই থেকে শূন্যই রয়ে গিয়েছে।