১. বরাদ্দ সময়

থ্রি এএম
মূল :
নিক পিরোগ
অনুবাদ : সালমান হক

.

প্রকাশকের কথা

নভেলার প্রতি আমার নিজের একটা ঝোঁক আছে। বহু আগেই লটারি নামের একটা নভেলা লিখেছিলাম, তবে সেটা একক বই আকারে প্রকাশ করিনি, খৃলার গল্পসঙ্কলনের প্রথমটায় জুড়ে দিয়েছিলাম। এরপর পরিকল্পনা করেছিলাম, ভবিষ্যতে এক মলাটে নভেলা প্রকাশ করবো।

সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এ বছর বইমেলায় একটি নভেলা প্রকাশের ইচ্ছে ছিলো তবে সেটা যে নিক পিরোগের থ্রি এ এম দিয়ে হবে ভাবিনি। তাই সালমান হকের অনুবাদটি হাতে পাওয়ামাত্রই প্রকাশ করতে আর দেরি করলাম না। আমার নিজের কাছে এটি যেমন ভালো লেগেছে তেমনি পাঠকের কাছেও দুর্দান্ত এই থৃলার-নভেলাটি ভালো লাগলে সার্থক মনে করবো।

ভবিষ্যতে বাতিঘর প্রকাশনী থেকে মৌলিক গ্লার নভেলা প্রকাশের ইচ্ছে আছে। পাঠকের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এরকম উদ্যোগ অবশ্যই সফল হবে।

মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
লেখক, অনুবাদক এবং প্রকাশক
১৪/০২/২০০১৬

.

অনুবাদকের উৎসর্গ : বাবা ও মাকে

.

১.

এক ঘন্টা।

ষাট মিনিট।

তিন হাজার ছয়শ সেকেন্ড।

প্রতিদিন আমার জন্যে কেবল এটুকু সময়ই বরাদ্দ থাকে। এই এক ঘন্টাই আমি জেগে থাকি পুরো চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে। কিন্তু এই ঘটনার পেছনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখা দিয়ে আমি আপনাদের বিরক্ত করতে চাই না, বরং সরাসরি গল্পে চলে যাওয়া যাক। আর সেই গল্পও একখান! এক ঘন্টার মধ্যেই আমাকে সেটা আপনাদের শোনাতে হবে। কিন্তু তা-ও আপনাদের এটুকু জানিয়ে রাখি, এমন কোন ডাক্তার নেই যাকে আমি দেখাইনি, আর যত প্রকারের ওষুধ কারো পক্ষে খাওয়া সম্ভব আমি খেয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আমি প্রতিদিন রাত তিনটায় ঘুম থেকে উঠি আর এর এক ঘন্টার মধ্যেই আবার ঘুমিয়ে পড়ি। এরপর টানা তেইশ ঘণ্টা ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেই। পরের দিন আবার রাত তিনটায় জেগে উঠি। এভাবেই চলছে আমার জীবন। জানি, এরকম জীবনে হয়ত বেশি কিছু করা যায় না, কিন্তু এটাই আমাকে মেনে নিতে হয়েছে।

আমার বয়শ এখন ছত্রিশ।

এই বয়সে অন্যরা প্রায় ২০০০০০ ঘন্টা জেগে কাটিয়েছে। কিন্তু আমি এই সময়ে জেগে ছিলাম ১৪,০০০ ঘন্টারও কম। একটা তিন বছরের বাচ্চার চেয়েও কম। ডাক্তারদের মতে, পুরো পৃথিবীতে মাত্র তিনজন মানুষ আছে যারা কিনা আমার মত এরকম একই মেডিকেল কন্ডিশনের ভুক্তভোগি। হ্যাঁ, মেডিক্যাল কন্ডিশন-এইটাই বলে তারা। কোন রোগ না, কোন অসুস্থতা না, শুধু একটা মেডিক্যাল কন্ডিশন। তাইওয়ানের একটা বাচ্চা মেয়ের আছে এই কন্ডিশন আর আইসল্যান্ডে একটা ছেলের। কিন্তু এই কন্ডিশনের নামকরণ করা হয়েছে আমার নাম অনুযায়ি। কারণ আমার ব্যাপারটাই প্রথম নজরে এসেছিল সবার। হেনরি বিনস-এটাই বলা হয় এই কন্ডিশনকে। আমি হেনরি বিনস আর আমার হেনরি বিনস আছে-বাহ!

যা-ই হোক, আপনারা হয়ত এতক্ষনে ভেবে অবাক হচ্ছেন, আমি আপনাদের এই গল্পটা কিভাবে শোনাচ্ছি যেখানে আমার একটা বাক্যই ঠিকভাবে গুছিয়ে বলতে পারার কথা নয়। যেহেতু আমি খুব কম সময়ই জেগে কাটিয়েছি। আসলে, কিভাবে আর নিজের সম্পর্কে বলব-আমি একজন প্রডিজি, সাধারণ মানুষের তুলনায় আমার মগজ একটু বেশিই কাজ করে। হয়ত স্রষ্টা আমাকে এভাবেই পুষিয়ে দিয়েছেন-হেনরি বিনসের যেহেতু হেনরি বিনস আছে তার মগজটা না-হয় একটু বেশিই চলুক!

এখন বাজে রাত ৩টা ২। চলুন, শুরু করা যাক।

*

হঠাৎ করে আমার চোখ খুলে গেল। আজকে ১৮ই এপ্রিল। আমি এটা জানি কারণ কালকে ছিল ১৭ই এপ্রিল। আর আমার বেডসাইড টেবিলের ডিজিটাল ঘড়িটাও এই কথাই বলছে। সেটার সবুজ মনিটরে এটাও দেখাচ্ছে, এখন সময় ৩: ০১।

এক মিনিট এরইমধ্যে চলে গেছে।

আমি তাড়াতাড়ি গায়ের উপর থেকে কম্বলটা সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে গেলাম। জামা কাপড় সব পরাই আছে। একটা ছাই রঙের প্যান্ট আর একটা মেরুন হুডি। তাড়াতাড়ি আমার রান্নাঘরে চলে গেলাম। সেখানে টেবিলে আমার ল্যাপটপটা রাখা আছে। মাউসটা একটু নাড়া দিতেই খ্রিনে একটা দুর্গের ছবি ভেসে উঠলো। আমি প্রতিদিন দশ মিনিট করে গেম অব থ্রোন্স দেখি। স্পেসবারে চাপ দিতেই শুরু হয়ে গেল। পর্দার দিক থেকে চোখ না সরিয়ে ফ্রিজ খুলে একটা বিফ স্যান্ডউইচ আর একটা পিনাট বাটার প্রোটিন শেক বের করলাম। এ দুটোই আগে থেকে আমার জন্যে ইসাবেল বানিয়ে রেখেছিল। ইসাবেল হলো এক মেক্সিকান মহিলা, শুধু খাবার বানানোই নয়, ঘর ঝাড় দেয়া, মোছা থেকে শুরু করে আমার এমন সব কাজই করে দেয় সে যেসব কাজের জন্যে আমি কোন সময় পাই না-তার সাথে আমার এমনই চুক্তি।

মোবাইল ফোনটা হাতে নিলাম। কোন কল আসেনি গত তেইশ ঘণ্টায়, শুধু তিনটা মেসেজ। তিনটাই আমার বাবা পাঠিয়েছে। এরমধ্যে দুইটাই তার কুকুরের ছবি। তার মেসেজের জবাবে লিখলাম-এই কুকুর বাদেও তার একজন সত্যিকারের জীবনসঙ্গি খুঁজে নেয়া উচিত এখন। এরপর গপাগপ স্যন্ডউইচ আর প্রোটিন শেইকটা পেটে চালান করে দিয়ে ল্যাপটপে নতুন একটা উইন্ডো খুলে আমার ই-ট্রেড অ্যাকাউন্টে লগইন করলাম। একসাথে অনেকগুলো কাজই আমাকে এভাবে সমন্বয় করে করতে হয়। সেই সাথে স্ক্রিনের নিচের দিকে ঘড়িটাতে একবার চোখ না বুলিয়ে পারলাম না।

৩:০৪।

ইতিমধ্যেই চার মিনিট চলে গেছে।

শেয়ার বাজারে আমার স্টকগুলো চেক করলাম, দেখে ভালোই মনে হল। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় আট হাজার কামাই হয়েছে। এরপর এখানে সেখানে কিছু হিসাব নিকাশ মিলিয়ে দেখে উইন্ডোটা ক্লোজ করে দিলাম। এরপর লগইন করলাম কিউপিড নামে একটা ওয়েবসাইটে। এটা একটা অনলাইন ডেটিং সাইট। কিছু মেসেজ এসে জমা হয়ে ছিল, সেগুলো দেখলাম। আমার ইউজার নেম হল : NGHTOWL3AM। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কিছু ফাজিল টাইপের লোকজন ছাড়া আমাকে এখানে খুব কমই নক করে কেউ। আপনারা বুঝতেই পারছেন, একজন মেয়ের সাথে মেলামেশা স্বাভাবিকভাবেই আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। তারপরেও যে আমি কোন চেষ্টা করিনি তা নয়। ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে এরকম বেশ কয়েক জায়গায় ঘুরে দেখেছি আমি-বইয়ের দোকান, কফিশপ কিংবা রেস্টুরেন্ট, এরকম জায়গা। কিন্তু তিনবার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঘুরে আসার পর আর একবার এক মহিলার আমাকে মৃত ভেবে, তার ভাইকে ডেকে আমাকে প্রায় কবর দিয়ে দেয়ার মত অবস্থার পর আমার শিক্ষা হয়ে গেছে।

এই উইন্ডোটাও বন্ধ করে দিয়ে তিন মিনিট গভীর মনোযোগে গেম অব থ্রোন্স দেখলাম। এই শোটা আমার আসলেও ভালো লাগে। তিনটা দশের সময় পজ বাটনে চাপ দিয়ে আইফোনটা হাতে নিয়ে কানে হেডফোন গুঁজে সোজা দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলাম।

এখন বসন্তের শুরু। আর এখানে, আলেক্সান্দ্রিয়ায় বেশ ঠাণ্ডা। একটা সোয়েটার পরে বের হলে ভালো হত। কিন্তু এখন আর ফিরে যাবার মত সময় নেই হাতে। চারিদিকে সব চুপচাপ। কোন সাড়াশব্দ নেই। আমার মনে হয়, সারাদিনের মধ্যে রাত তিনটাই সবচেয়ে নিস্তব্ধ সময়। আসলে আমার পক্ষে এটা অনুমান করা ছাড়া আর কোন উপায়ও নেই। সারাদিনের মধ্যে যে আধঘন্টা আমি বাইরের দুনিয়ায় কাটাই তাতে এটুকুই জানা সম্ভব। স্ট্রিটলাইটের আলোর নিচ দিয়ে আমি দৌড়াতে থাকি। আসল সূর্যের আলোর মত নয় হয়ত এটা, কিন্তু এটাই আমাকে মেনে নিতে হয়েছে।

আমি না আসলে সবসময় বর্তমানে থাকতেই পছন্দ করি। অতীত নিয়ে ভাবি না কিংবা ভবিষ্যৎ নিয়েও দুশ্চিন্তা করি না। আগে মাঝে মাঝেই ভাবতাম, ইশ আমার যদি একটা সাধারণ জীবন থাকতো! আমি কি বিয়ে করতাম? কয়টা বাচ্চা-কাচ্চা হত? তাদের নাম কি দিতাম? কিন্তু দেখা যেত, এভাবেই এসব ফালতু জিনিস, যেগুলো কোনদিনই ঘটা সম্ভব নয় তার পেছনে তিরিশ থেকে চল্লিশটা অতি মূল্যবান মিনিট পার হয়ে গেছে, যেটা কোন অবস্থাতেই আমার পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়।

আমার নতুন ফেভারিট ব্যান্ড ইমাজিন ড্রাগনস-এর তিনটা গান শুনলাম। এরপর লোকাল এফএম স্টেশনে পাঁচমিনিটের জন্যে টিউন-ইন করলাম আমি।

এখন পটোম্যাকে একটা ব্রিজের উপর-নিচ দিয়ে একটা ট্রলারকে কালো পানির বুক চিড়ে ছুটে যেতে দেখলাম। মাঝে মাঝে ভাবি, দিনের আলোতে এই দৃশ্যটা দেখতে কেমন লাগবে! কিন্তু আমার জীবনে দিন বলে কিছু নেই। শুধু রাত-শুধু অন্ধকার।

ফেরার পথে মোড়ে একটা গাড়িকে যেতে দেখলাম। গত ছয় দিনের মধ্যে এটাই আমার দেখা প্রথম গাড়ি। একটা ফোর্ড ফোকাস। ফোর্ড কোম্পানি কিন্তু দেউলিয়া হয়ে গেছে-না, মানে, এমনি একটু বিদ্যা জাহির করলাম আর কি!

আটাশ মিনিটের মধ্যে চার মাইল দৌড়ানোর পরে আমি যখন আমার বিল্ডিংয়ের সিঁড়িতে পৌঁছলাম, তখন সময় তিনটা আটত্রিশ।

আর বাইশ মিনিট আছে। এরপরের পাঁচ মিনিটে একটু ব্যায়াম করে নিলাম।

চার মিনিট ধরে গোসল করলাম।

ধোয়া জামাকাপড় পরে আমি যখন আবার রান্নাঘরে ঢুকলাম তখন বাজে তিনটা আটচল্লিশ। আর বারো মিনিট।

ফ্রিজ থেকে একটা সালাদের প্লেট বের করলাম। নানারকম সজি আর একটু মুরগির মাংস দিয়ে বানানো। স্বাস্থ্যকর জিনিস। সাথে একটা আপেল, একটা চকলেট চিপসের প্যাকেট আর বড় এক গ্লাস দুধ নিয়ে টেবিলে বসলাম। আমার কিন্ডলের স্ক্রিনে একবার চাপ দিতেই যে পেজটা পড়ছিলাম সেটা অন হয়ে গেল। জেমস প্যাটারসনের একটা মার্ডার মিস্ট্রি। চরম জিনিস।

আস্তে আস্তে খাবারগুলো পেটে চালান করতে করতে বইয়ের প্রতিটা শব্দ উপভোগ করতে থাকলাম। চকোলেট চিপসের শেষটা যখন মুখে দিলাম তখন সময় তিনটা আটান্ন।

কিন্ডলটা অফ করে উঠে দাঁড়িয়ে আমার বেডরুমের দিকে রওনা দিলাম। তিনটা উনষাটের সময় বিছানায় উঠে পড়লাম।

আর ঠিক তখনই নিস্তব্ধতার বুক চিড়ে এক মেয়ের তীক্ষ্ণ চিৎকারটা ভেসে এলো।

তড়াক করে দাঁড়িয়ে সোজা জানালার দিকে দৌড় দিলাম। আমার বাসার উলটা দিকে একটা পুরনো ধাঁচের একতলা বাড়ি। একটু আগে যে ফোর্ড ফোকাস গাড়িটা দেখেছিলাম বাড়িটার সামনে সেটাই পার্ক করে রাখা আছে। ঐ বাড়িটায় কে থাকে সে-সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। আমি কখনও ওদের চেহারা দেখিনি। আসলে আমার সব প্রতিবেশির ক্ষেত্রেই এই কথাটা প্রযোজ্য।

আমি জানি, আমার এখন বিছানায় থাকা উচিত, কারণ যেকোন সময়ই আমি গভীর ঘুমে তলিয়ে যাব আর ঠিক সেই জায়গাটাতেই পড়ে যাব। কিন্তু কেউ যেন আমাকে আঠা দিয়ে একেবারে জানালার সাথে লাগিয়ে দিয়েছে। বাড়ির গেটটা হঠাৎ খুলে গেল, এক লোক হেঁটে বের হয়ে আসলো সেটা দিয়ে।

স্ট্রিটলাইটের আলোয় ফোর্ড গাড়িটার দরজা খুলতে খুলতে লোকটা যেন আমার উপস্থিতির কথা বুঝতে পেরেই ঠিক জানালার দিকে তাকালো। একবার আমাদের চোখাচোখি হল। এরপর গাড়িতে উঠে চলে গেল লোকটা।

ঘুমে ঢলে পড়তে পড়তে আমার দেখা শেষ দৃশ্যটা ছিল আমার দিকে তাকিয়ে থাকা অন্তর্ভেদি একজোড়া চোখ।

লোকটা আর কেউ নয়, স্বয়ং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট!!

*

২.

ঘুম থেকে উঠেই ঘাড়ে তীব্র ব্যথা অনুভব করলাম। অমন বেকায়দা জায়গায় ঘুমানোর ফলেই এটা হয়েছে। তা-ও ভালো যে মাথায় কোন ব্যথা লাগেনি। আশেপাশে কোনও রক্তও দেখলাম না। এরইমধ্যে আজকের জন্যে বরাদ্দ সময় থেকে এক মিনিট চলে গেছে।

ঘাড়ে হাত বোলাতে বোলাতে কালকে রাতে কি দেখেছিলাম তা আবার মনে করার চেষ্টা করলাম। ওটা কি আসলেও প্রেসিডেন্ট ছিল? নাহ, কোন সন্দেহ নেই প্রেসিডেন্টই ছিলেন ওটা। আমেরিকার ৪৪তম প্রেসিডেন্ট কনর সুলিভান। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।

রান্নাঘরে গিয়ে ল্যাপটপের সামনে বসে পড়লাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই কনর সুলিভান সম্পর্কে উইকিপিডিয়াতে যা যা লেখা আছে পড়া শুরু করে দিলাম।

তিনবার নির্বাচিত ভার্জিনিয়ার প্রাক্তন এই গভর্নরের চুল বাদামি, বামদিকে সিঁথি করা, আমার মতই তার চোখের রঙ সবুজাভ। কিন্তু আমার সাথে উনার মিল এখানেই শেষ হয়ে গেছে। সুলিভান হচ্ছেন এযাবৎ কালের সবচেয়ে লম্বা প্রেসিডেন্ট, লিঙ্কনের চেয়েও প্রায় তিন ইঞ্চি বেশি।

মনে হল, উনার উইকিপিডিয়ার পেজে আরো একটা তথ্য যোগ করে দেই :১৮ই এপ্রিল আলেক্সান্দ্রিয়ায় এক মহিলাকে খুন করেছেন।

এরপরেই এখানকার লোকাল নিউজ পোর্টালগুলোতে একবার ঢু মেরে আসলাম। না, এ-ব্যাপারে কোন খবর আসেনি এখনও।

আমার মোবাইল ফোনের মেসেজ টিউন শুনে খুলে দেখি বাবার মেসেজ “তুমি কি বেচে আছো?” উনার মেসেজের রিপ্লাই দিয়ে এটা নিশ্চিত করলাম যে, আমি এখনো বহাল তবিয়তে আছি যাতে উনি একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন।

আমার বয়স যখন ছয় তখনই আমার মা আমাদের ছেড়ে চলে যান আমার এই অদ্ভুত অসুখটাকে আর সহ্য করতে না পেরে, আর তখন থেকেই আমার সব দায়িত্ব এসে পড়ে বাবার কাঁধে। উনি দিনে দুইটা চাকরি করতেন, প্রায় ষোল ঘন্টা। তবুও প্রতিদিন রাত তিনটার সময় যখন চোখ খুলতাম তখনই মানুষটাকে পাশে পেতাম। উনি যতটা পেরেছেন আমার জীবনটাকে স্বাভাবিকভাবে গড়ে তলার চেষ্টা করেছেন। ঘুম থেকে ওঠার পর প্রতিদিন আমাকে বিশ মিনিট উনার সাথে পড়াশোনা নিয়ে বসতে হত। অঙ্ক, বিজ্ঞান, বানান করা সবকিছুই আমরা শিখতাম। আমি যাতে সামাজিকভাবে সবার সাথে মেলামেশা করতে পারি এই ব্যাপারেও উনি নজর রাখতেন। এমনকি মাঝে মাঝে উনিই অন্য বাচ্চাদের বাবা-মাকে টাকা দিতেন যাতে ওদের ছেলেমেয়েরা ঐ একঘন্টা এসে আমার সাথে ভিডিও গেমস কিংবা টেবিল টেনিস খেলে (এখনো ওদের কয়েকজনের সাথে আমার ফেসবুকে যোগাযোগ হয়)। আমার জন্যে কিছু করার জন্যে তিনি কখনোই কার্পণ্য করতেন না। আমার দশম জন্মদিনের দিন চোখ খুলে আমি নিজেকে একটা অ্যামিউজমেন্ট পার্কে আবিষ্কার করি। পুরো একটা ঘন্টা আমি আর বাবা পার্কের এমাথা থেকে ওমাথা ঘুরে বেড়িয়েছিলাম। আমার আঠারতম জন্মদিনের সময় উনি আমার জন্যে একটা প্ৰম-পার্টিরও আয়োজন করেছিলেন। আর উনার এক কলিগের মেয়েকে আমার ডেট হিসেবে ঠিক করেছিলেন। আমার স্যাট পরীক্ষার সময় উনি স্টপওয়াচ নিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেন। টানা দশ দিন ধরে পরীক্ষা দিতে হয়েছিল আমাকে (সর্বোচ্চ নম্বরই পেয়েছিলাম আমি)।

আমার একবার মনে হল উনাকে ফোন করে জানিয়ে দেই, উনার পছন্দের প্রেসিডেন্ট কি কান্ড করেছে! কিন্তু তাতে আমাকে হাজারটা প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হবে আর আমার একঘন্টাও চোখের নিমিষে শেষ হয়ে যাবে।

আমি ফ্রিজ থেকে একটা স্যান্ডউইচ বের করতে করতে গত রাতটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করতে লাগলাম। গতকালের রাতটা এখন অতীত। আর অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে আমার ভালো লাগে না। আমি বর্তমান নিয়ে থাকতে পছন্দ করি, আর সেই বর্তমানে আমি এরইমধ্যে আঠার মিনিট সময় নষ্ট করে ফেলেছি।

গেম অব থ্রোন্স চালু করে দিলাম। আমার একটা পছন্দের একটা ক্যারেকটারকে কে যেন মেরে ফেলেছে। পর্দায় জন স্নোকে দেখা যাচ্ছে।

এরপর মোবাইল হাতে নিয়ে, জুতো পরে বাসা থেকে দৌড়ে বের হয়ে গেলাম।

এখন বাজে তিনটা ছাব্বিশ। আজকে বেশিক্ষন জগিং করতে পারব না। তের মিনিটের মত দৌড়ে আবার যখন আমার বাসার স্ট্রিটলাইটটার নিচে দাঁড়ালাম তখন বাজে তিনটা উনচল্লিশ। এই লাইটটার নিচেই গতকাল কনর সুলিভান তার গাড়ি পার্ক করে রেখেছিল।

আর একুশ মিনিট বাকি।

ঘুরে বাড়িটার দিকে তাকালাম। একদম নিস্তব্ধ, কোন সাড়াশব্দ নেই। বাইরের লোহার গেটটা দেখে মনে হল যেন সেটা সবকিছুকে বাধা দেয়ার জন্যে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, এমনকি কোন শব্দও সেটাকে পেরিয়ে ভেতরে যেতে পারবে না। আমি আমার হাতটা শার্টের ভেতর ঢুকিয়ে নিয়ে সেভাবেই গেটের উপরের আঙটাটা সরিয়ে দিলাম। একটু চাপ দিতেই দরজাটা খুলে গেল। আমি জানি, আমি যা করতে চলেছি তা বেআইনি, কিন্তু ভেতরে যে আছে তার যদি সাহায্যের দরকার হয়? মহিলার চিৎকার আমি শুনতে পাই প্রায় ২৪ ঘন্টা আগে। এখনও হয়ত তার বেঁচে থাকার ক্ষীণ সম্ভাবনা আছে, তাই না? যা-ই হোক, আপনাদের হয়ত এটা মনে হতে পারে, আমি পুলিশকে ডাকছি না কেন?

উত্তরটা একদম সোজা। আমার ছত্রিশ বছরের জীবনে এর থেকে উত্তেজনাময় কখনও কিছু ঘটেছে বলে মনে পড়ে না। ঠিকভাবে বললে আমি যে ১৪০০০ ঘন্টা জেগে আছি তাতে এরকম কোন কিছুর মুখোমুখি হইনি এর আগে।

লোহার দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকে গেলাম। দেখতে পেলাম একটা সিঁড়ি উপরে উঠে গেছে। পা টিপে টিপে সেই সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলাম উপরে। অন্ধকার, কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মোবাইল ফোনটা বের করে টর্চ জ্বালালাম। সামনের জায়গাটুকু আলোকিত হয়ে উঠলো। বাইরে থেকে দেখে যা বুঝেছি, গ্যারেজটা এই বাড়ির বামদিকে আর রান্নাঘর, লিভিংরুম, বেডরুম, এগুলো ডানদিকে।

আস্তে করে বললাম, “কেউ আছেন?”

কোন জবাব এলো না।

আমি ঘুরেফিরে বাসার ভেতরটা দেখতে থাকলাম। সবকিছু একদম ঝকঝকে তকতকে। রান্নাঘরটাও পরিষ্কার, খালি সিঙ্কের উপর দুটো অধধায়া প্লেট রাখা। ফ্রিজ ভর্তি খাবার। লিভিংরুমটাও গোছানো। একটা বিশাল ফ্ল্যাটঞ্জিন টিভি, পাশে আবার থ্রিডি গগল্স রাখা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সবচেয়ে নতুন মডেলের টিভি। তিনটা বেডরুম। এরমধ্যে একটা বিশাল। একমাত্র এটাতেই কেউ থাকে বলে মনে হয়। বিছানাটা সুন্দরভাবে গুছিয়ে রাখা এখন। নাহ, বাসাটাকে বাইরে থেকে দেখে যতটা মনে হয় তার চেয়ে অনেক বেশি বড়।

আমার ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠলে খুলে দেখলাম, ৩টা ৫০-এর অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছিলাম। আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম, এ বাড়িতে না ঢুকে পারব না।

চারপাশে আরেকবার চোখ বুলিয়ে সামনের দরজাটার দিকে ফিরে যেতে শুরু করলাম। এটা হয়ত আমি যার চিৎকার শুনতে পেয়েছি তার বাড়ি হতেও পারে আবার না-ও পারে। আবার কনর সুলিভান ফিরে এসে হয়ত তার সব কীর্তিকলাপ সাফ-সুতরো করে রেখে গেছে। ঐ মহিলা এখানে নেই এখন।

হঠাৎ একটা ছায়া দেখে জমে গেলাম। ঘুরে ঠিকমত তাকানোর চেষ্টা করতেই ঘাড়ের ব্যথাটা টনটন করে উঠলো। নাহ, শালার অ্যাডভিল খেয়ে কাজ হয়নি মনে হচ্ছে, অন্য কোন পেইনকিলার খেতে হবে। দেখি একটা বিড়াল। আমার দিকেই তাকিয়ে আছে ব্যাটা।

“কি খবর বিল্লিমিয়া?” সাদা-কালো বিড়ালটা কোন প্রতিক্রিয়াই দেখাল না। নিচু হয়ে ওটাকে আদর করতে যেতেই ব্যাটা ঘুরে হাটা দিল। আমিও ওটার পেছনে আলো ফেলে ফেলে যেতে লাগলাম। হলওয়ে পার হয়ে একটা দরজার সামনে গিয়ে ওটা মিয়াঁও-মিয়াঁও করে ডাকা শুরু করল। আমি দরজাটার সামনে গিয়ে টান দিয়ে খুলে ফেললাম।

ধক্ করে একটা দুর্গন্ধ এসে ঠেকল নাকে।

মেয়েটা পড়ে আছে একটা গাড়ির হুডের উপর, পরনে নীল রঙের একটা জামা আর পায়জামা। গলার কাছটা নীল হয়ে ফুলে আছে। সে এখন যেকোন পেইনকিলারের উর্ধ্বে।

বিড়ালটা মহিলার গায়ে নাক ঘষে ডাকতে লাগল। মহিলার গলার নিচ থেকে পুরো সাদা হয়ে গেছে।

আমি দুই পা সামনে এগিয়ে গেলাম। আমার মনে হয়, মেয়েটার বয়স বিশ থেকে পঁচিশ বছরের মধ্যে হবে। সোনালি চুল, ফিগারও বেশ ভালো। নীলরঙের চোখজোড়া সিলিংয়ের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বেঁচে থাকতে নিঃসন্দেহে অনেক পুরুষের স্বপ্নের খোরাক ছিল মেয়েটা।

একটা ফোন বিপ্ করে উঠলো। আমারটা না, হয়ত এই মেয়েটার মোবাইল হবে।

ধুর!

এখানে আমি প্রায় সাত মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি। ঘুরে দৌড় দেয়ার সময় মহিলার মোবাইলটা দেখার কথা মাথায় এলো। কিন্তু কোথায় ওটা? শব্দটা গাড়ির নিচ থেকে আসছে বলে মনে হল, আবার কোন কল এসেছে। আমি উপুড় হয়ে গাড়ির নিচে ঢুকে গেলাম। ঐ তো ফোনটা! অনেক কসরত করে হাতে নিলাম ওটা। ততক্ষনে কলটা কেটে গেছে। হাঁপাতে হাঁপাতে উঠে দাঁড়ালাম। একটা গোলাপি স্যামসাং গ্যালাক্সি এস-ফোর মোবাইলফোন। ঘড়িতে সময় দেখাচ্ছে তিনটা উনষাট।

দৌড়ে গ্যারেজ থেকে বের হয়ে গেলাম। সময়মত বাসায় পৌঁছাতে পারব তো?

আমার বাড়ি আরো প্রায় একশো গজ সামনে, তারপর আবার তিনতলা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হবে। যদি রাস্তার মাঝখানেই পড়ে যাই কিংবা এই বাড়িটার উঠোনেও তো পড়ে যেতে পারি। তখন তো আরো ঝামেলা হবে। কেউ যদি আমাকে দেখে ভেতরে ঢুকে মহিলার লাশ আবিষ্কার করে বসে? এরপরের বার ঘুম ভাঙবে সোজা হাজতে।

নাহ, কোনভাবেই বাসায় পৌঁছাতে পারব না। এখানেই কোথাও লুকাতে হবে।

ছোট বেডরুমগুলোর একটায় উঁকে গেলাম। কাপড় রাখার ক্লোজেটটা খুলে ভেতরে ঢুকেই শুয়ে পড়লাম আমি। পা-দুটো একটু ছড়িয়ে রাখতে রাখতেই রাজ্যের ঘুম নেমে এলো আমার দুচোখে।

*

৩.

বিড়ালটা আমার পেটের উপর।

“ঐ ব্যাটা!”

বিড়ালটা ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে দেখে আবার আমার বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। কাল রাতের কথা মনে পড়ে গেল। মেয়েটার লাশ, গাড়ির নিচে মোবাইলটা-সবকিছু।

একটু উঠে বসার চেষ্টা করতেই পিঠে তীব্র ব্যথা অনুভব করলাম। হাত দিয়ে দেখি একটা হ্যাঁঙ্গারের উপরই শুয়ে পড়েছিলাম কাল রাতে। ভালোই তো, কালকে ঘাড়ে আর আজকে পিঠে। না জানি সামনে আর কোথায় কোথায় ব্যথা পাব।

দাঁড়িয়ে মোবাইলটা হাতে নিলাম। তিনটা দুই বাজে।

আরেকটা পকেট হাতড়ে অন্য মোবাইলটা বের করলাম। গোলাপি রঙের স্যামসাং গ্যালাক্সি এস-ফোর। এটার পর্দায় ওয়াশিংটন মনুমেন্ট স্ক্রিন সেভার হিসেবে সেট করা। মেয়েটা মারা গেছে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা হতে চলল। আমি ভেবেছিলাম এতক্ষনে মেসেজ আর কল এসে ভরে যাবে ফোনটায়। কিন্তু ঐ তিনটাই মিসকল-কাল রাতেরগুলোই। মেয়েটার কি কোন বন্ধু-বান্ধব নাই, কিংবা অফিসের কোন সহকর্মি কাল রাতে কে কল দিয়েছিল এটা দেখার কথা মনে হল, কিন্তু মনে হয় না দেখতে পারব। ফোনটা লক করা থাকতে পারে। স্ক্রিনটা টাচ করতেই আমার ধারণার সত্যতা পেলাম। পাসওয়ার্ড ইনপুট করার চারঘরের বক্স ভেসে উঠলো। ১২৩৪ চাপলাম, কাজ করল না। করবে যে সেটা আশাও করিনি অবশ্য। মোবাইলটা পরে আবার গাড়িটার নিচে ঢুকিয়ে দিতে হবে। শার্টের হাতা দিয়ে সেটটা মুছে দিলাম যাতে আমার হাতের ছাপ লেগে না থাকে। প্যান্টের পকেটে চালান করে দিলাম ওটা।

পুলিশ এখনো কিছু জানে না। কারণ এখানে পুলিশ এলে আমি এতক্ষনে নিশ্চয়ই জেলের ভেতরে থাকতাম-আমাকে এখানে খুঁজে না পাওয়ার কোনই কারন নেই।

মেয়েটার মৃতদেহ ঠিক আগের জায়গাটাতেই পড়ে থাকতে দেখে তাই অবাক হলাম না। কিন্তু কালকের থেকে আজকে মৃতদেহটার অবস্থা আরো বেশি সঙ্গিন। পচা গন্ধটা বেড়ে গেছে বহুগুণে, কতগুলো মাছি ভনভন করছে আশেপাশে। আমার বমি বমি লাগলো। ঘুরে মূল বাড়িটার দিকে পা বাড়ালাম।

এখন বাজে তিনটা চার।

রান্নাঘরটা খুঁজে বের করে ফ্রিজ খুললাম। হাতটা এখনো শার্টের হাতার ভেতরে ঢুকিয়ে রেখেছি যাতে কোন ছাপ না পড়ে যায়। দুটো পনিরের টুকরো বের করে মুখের ভেতর চলান করে দিয়ে আশেপাশের ড্রয়ারগুলো হাতরাতে শুরু করলাম সাবধানে। কিন্তু মেয়েটার পরিচয় জানা যাবে এমন কিছু খুঁজে পেলাম না। না কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স, না কোন ইলেকট্রিক বিল–কোন কিছুই নেই যাতে তার নাম লেখা থাকতে পারে। হোয়াইট হাউজে ঢোকার কোন পাসও পেলাম না। কনর সুলিভানের কাছ থেকে আসা কোন রোমান্টিক চিঠিও নেই।

আরো পাঁচ মিনিট এদিক সেদিক দেখে বুঝতে পারলাম আমার পক্ষে আর কিছুই করার নেই। ভাগ্য ভালো, এরইমধ্যে আমাকে কেউ খুঁজে পায়নি। তাই বের হয়ে যাওয়ার রাস্তার দিকে হাটা দিলাম আমি। আশেপাশের দিকে শেষবারের মত দেখে পেছনের দরজাটা বন্ধ করে দিলাম।

বিড়ালটা এখনো আমার দিকে কাঁচের দরজার ভেতর দিয়ে তাকিয়ে আছে।

মিয়াও।

“কি?”

মিয়াও।

“আমার কাছে বিড়াল ভালো লাগে না।”

মিয়াও।

“আরে, আমি কিভাবে বলব, তুই পানি কোথা থেকে খাবি? বাথরুমে যা, ওখানে পাবি।”

মিয়াও।

“ফ্রিজেও অনেক খাবার রাখা আছে।”

মিয়াও।

“আচ্ছা বাবা, ঠিক আছে।”

দরজাটা খুলে দিতেই ব্যাটা এসে আমার কোলে উঠে পড়ল।

আমি যখন ওটাকে নিয়ে আমার নিজের বাসায় ঢুকলাম তখন তিনটা তের বেজে গেছে।

বিড়ালটার মত আমারো অনেক তেষ্টা পেয়েছে। ঢকঢক করে দুই গ্লাস পানি খেয়ে ফেললাম। নিজের জন্যে একটা স্যান্ডউইচ আর একটা প্রোটিন শেক বের করে বিড়ালটার জন্যে একটা মাছের ক্যান খুলে দিলাম। একটা বাটিতে পানি ঢেলে নিচে রেখে দিলাম। চুকচুক করে পানি খেয়ে বিড়ালটা মাছের ক্যানটার সামনে গিয়ে বসে পড়ল।

“তোকে তো আর সবসময় খালি বিড়াল বিড়াল বলে ডাকতে পারব না, তাই না?” একটু ভাবলাম আমি। যদিও সামান্য বিড়ালের নাম নিয়ে ভাবার মত সময় খরচ করাটা আমার জন্য বিলাসিতাই বটে। “আচ্ছা, ল্যাসি নামটা কেমন হয়?”

উত্তরে ব্যাটা আমার দিকে একবার তাকাল, যেন বলতে চাইছে “চলবে।”

“ঠিক আছে, ল্যাসি। আমি জানি, তোর খারাপ লাগবে খবরটা শুনে, কিন্তু তোর মালিককে স্বয়ং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট খুন করে ফেলেছে। রিপাবলিকানদের ভোট দিলে তো এমনই হবে রে, ব্যাটা।”

উত্তরে ল্যাসি আরো আগ্রহ নিয়ে খেতে লাগলো।

সোজা শাওয়ারে ঢুকে গেলাম আমি। দু-মিনিট পর বের হয়ে থোয়া জামা কাপড় গায়ে চড়ালাম। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি তিনটা বাইশ বাজে এখন। বাকি আটত্রিশ মিনিট সময়ে অনেক কাজ করতে হবে আমাকে।

পনের মিনিট পরে আমি একটা ফোন বুথের ভেতরে দাঁড়িয়ে আছি। আশেপাশে কয়েক ব্লকের মধ্যে এটাই একমাত্র ফোনবুথ যেটা আমি চিনি। এমন না যে, এখানে কেউ আমাকে দেখলে কিছু মনে করবে, তারপরও হুডটা মুখের উপর আরো টেনে দিলাম যাতে কেউ আমার চেহারা ভালোমত দেখতে না পায়।

৯১১-এ করা আমার কলটা ছিল একদম সংক্ষিপ্ত। “১৫৬১, সিকামোর স্ট্রিটের বাড়িতে একটা মেয়ের লাশ পড়ে আছে।”

বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই দেখি একটা পুলিশের গাড়ি ঐ বাড়িটার সামনে পার্ক করে রাখা। কিছুক্ষনের মধ্যেই আরো তিনটি গাড়ি এসে গেল। আরো একটু পরে আলেক্সান্দ্রিয়া ক্রাইম-সিনের বড়সড় একটা ভ্যান সাইরেন বাজাতে বাজাতে এসে বাড়িটার সামনে দাঁড়ালো। আমি আমার জানালা দিয়ে পর্দার আড়াল থেকে সবকিছু দেখছি, আমার কোলে ল্যাসি।

এক মিনিট বাকি থাকতে থাকতেই আমি বিছানায় উঠে গেলাম। ল্যাসিও আমার পাশে এসে শুয়ে পড়ল। গত দু-রাত মাটিতে শুয়ে কাটানোর পরে এখন বিছানায় উঠতেই মনটা ভালো হয়ে গেল। কিন্তু ঘুমিয়ে পড়তে পড়তে আমার মনে হতে লাগলো যেন কিছু একটা ভুলে গেছি।

জরুরি কিছু একটা।

*

তেইশ ঘন্টা পর যখন ঘুম থেকে উঠলাম, তখনও দেখি ল্যাসি আমার পাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। বেশ অবাকই হলাম। ওকেও কেমন জানি ক্লান্ত লাগছে, আমার মতোই। আমার মনে হয়, আমরা তেইশ ঘন্টা একটানা ঘুমাতেও ব্যাটার কোন সমস্যা হবে না।

কিন্তু তখনই মনে হল, ওরও তো প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হবে। উঠে আমার তিনতলার ছোট বারান্দাটায় চলে গেলাম। ওখানে একটা টব আছে, কিন্তু গাছটা বহু আগেই মরে শুকিয়ে গেছে। তাই ঐ টবটা থেকে বালি আর মাটি নিয়ে বারান্দার এক কোনে ছড়িয়ে দিলাম।

ল্যাসি এখনো আমার বিছানায় শুয়ে আছে। “যা, তোর যাবতীয় কাজ ওখানেই সেরে আয়।” আমাকে অবাক করে দিয়ে ব্যাটা উঠে বারান্দায় চলে গেল একদম বাধ্য কুকুরের মত। এ বেড়ালটার সব স্বভাবই দেখি কুকুরের মত!

আমি উল্টো দিকের জানালা দিয়ে বাইরে উঁকি দিলাম। বাইরে এখনো দুটো পুলিশের গাড়ি অপেক্ষা করছে। আর বাড়িটার চারপাশে প্রবেশ নিষেধ লেখা পুলিশ-টেপ দিয়ে ঘেরা।

আমার ল্যাপটপের সামনে বসে লোকাল নিউজ পোর্টালগুলো দেখতে লাগলাম। নিজ বাসা থেকে অজ্ঞাত তরুণীর লাশ উদ্ধার’-বেশ কয়েকটা জায়গায় খবর বেরিয়েছে। আলেক্সান্দ্রিয়া, হোয়াইট হাউস থেকে মাত্র ১৫ মিনিটের দূরত্বে। আশেপাশে অনেক হোমরা-চোমড়াদের বাসা, তাই আমি আশা করেছিলাম, খবরটা হয়ত আরো বেশি হাইলাইটেড হবে। কিন্তু দেখে মনে হল, সাংবাদিকেরা একরকম দায়সারাভাবেই কাজ সেরেছে।

‘অজ্ঞাত এক তরুনীকে তার বাসার গ্যারেজে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন সন্দেহভাজন গ্রেফতার হয়নি’–এটুকুই।

আমি আর ল্যাসি খাওয়া-দাওয়া করে নিলাম। এরপর বাবাকে একটা ফোন দেয়ার কথা মনে হল। আর দু-রাত পরেই তার আসার কথা, একসাথে বসে তাস পিটাব আমরা।

তার সাথে দু-মিনিট এ-ব্যাপার সে-ব্যাপারে আলাপ করলাম। আমি ভেবেছিলাম, খুনটার কথা জিজ্ঞেস করবেন তিনি। কিন্তু ঐ প্রসঙ্গ তুললেনই না। ভালোই হল, সামনাসামনি বলব তাকে। চেহারাটা যা হবে না বাবার!

খুনটার ব্যাপারে পুলিশ কি এখনও দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালি মানুষটার সংশ্লিষ্টতার কথা জানতে পেরেছে? আচ্ছা, মেয়েটা কি হোয়াইট হাউজের কোন সেক্রেটারি? নাকি ইন্টানঃ

প্রেসিডেন্টের ব্যাপারটা নিয়ে আমার কি করা উচিত? আমি কি একটা বেনামী চিঠি পাঠিয়ে দিব আলেক্সান্দ্রিয়া পুলিশ ডিপার্টমেন্টে। কিন্তু ব্যাপারটা পুরোই হেসে উড়িয়ে দিবে ওরা। আসলেই তো, কে বিশ্বাস করবে এই কথা–যে সময়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের তার নিজের বিছানায় থাকার কথা সেই সময়ে সে কিনা ব্যস্ত ছিল এক তরুনীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করতে! তার সিক্রেট সার্ভিস কোথায় ছিল? আশেপাশের লোকজনের কথা না-হয় বাদই দিলাম।

ইমেইলটা টাইপ করব করব, ঠিক এমন সময়ে আমার দরজার কাছে একটা চারকোণা লাল রঙের কার্ড দেখতে পেলাম।

“কার্ডটা নিয়ে আয় তো,” ল্যাসিকে বললাম।

ব্যাটা আমার কোল থেকে নেমে কার্ডটার সামনে গেল ঠিকই কিন্তু সুন্দরমত ওটা চেটে দিয়ে আবার চলে এলো।

আমি ওর দিকে তাকিয়ে আক্ষেপে মাথা নেড়ে নিজেই উঠে গিয়ে কার্ডটা নিয়ে এলাম।

.

ইনিগ্রিড রে
আলেক্সান্দ্রিয়া হোমিসাইড ডিপার্টমেনট

পুলিশ বোধহয় কালকে বাসাটা খুঁজে দেখার কোন এক পর্যায়ে আমার বাসায় নক করেছিল। কিন্তু কোন জবাব না পেয়ে মহিলা তার কার্ড আমার দরজার নিচ দিয়ে ঠেলে দিয়েছে। ফোন বের করে কার্ডে লেখা নম্বরে ডায়াল করলাম। ভেবেছিলাম যে কেউ ধরবে না, একটা মেসেজ রেখে দেব, ঐ রাতে একটা চিৎকার শুনেছিলাম কিন্তু কিছু দেখিনি।

কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে মহিলা ফোনটা ধরল।

“আলেক্সান্দ্রিয়া হোমিসাইড ডিপার্টমেন্ট থেকে রে বলছি।”

“ইয়ে, না মানে, আমার নাম হেনরি বিনস। আপনি বোধহয় আপনার কার্ডটা আমার দরজার কাছে রেখে গিয়েছিলেন।”

“আপনি কোথায় থাকেন?”

বললাম তাকে।

“আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি।”

ল্যাসির দিকে তাকিয়ে বললাম, “এটা কিন্তু আশা করিনি।”

*

সাত মিনিট পরে সে আমার দরজায় নক করল।

ঘড়িতে তখন তিনটা তেত্রিশ বাজে।

মহিলার চুল পনিটেইল করে বাধা, পরনে একটা স্কিনটাইট জিন্স আর একটা ওয়াশিংটন রেডস্কিসের জার্সি। চেহারায় মেকআপের কোন ছোঁয়া নেই। তার কোন দরকারও নেই অবশ্য। আকর্ষণীয় চেহারা, বাদামি চোখ। পুলিশে জয়েন করার পক্ষে আসলে একটু বেশিই সুন্দরি।

“তো, আপনি প্রতিদিনই এই সময়ে জেগে থাকেন নাকি?” রান্নাঘরে টেবিলের পাশে একটা চেয়ারে বসতে বসতে সে জিজ্ঞেস করল। বসেই ল্যাসির পিঠে হাত বুলাতে লাগলো রে।

আমি সংক্ষেপে উত্তর দিলাম, “হ্যাঁ।”

“কেন, রাত জেগে লেখালেখি করেন নাকি?”

“না, স্টক মার্কেটের কাজ করি।”

“এত রাতে?”

“পৃথিবীর কোথাও না কোথাও তো এখন সকাল।” আমি হেসে জবাব দিলাম।

“তা ঠিক। কোথাকার স্টক মার্কেটে কাজ করেন? টোকিও? লন্ডন?”

“হুম, ওরকমই।” আমি কথা না বাড়িয়ে জবাব দিলাম।

“তা, আপনি কি এই সময়ে কাজ শেষ করেন? নাকি শুরু করবেন?”

“শেষ করব।” কথাটা একেবারে মিথ্যেও নয়। আজকে আমার দিন শেষ হতে আর পনের মিনিট বাকি আছে।

জবাবে একটা হাসি দিল মেয়েটি। কিন্তু দেখেই বোঝা গেল জোর করে হাসছে। “আপনি যখন কাজ করছিলেন তখন আপনার বাসার উল্টোদিকে যে একটা মেয়ে খুন হয়ে গেল সে-ব্যাপারে কিছু জানেন?”

“হ্যাঁ, আমি শুনেছি।”

“কোত্থেকে?”

“কোত্থেকে মানে?”

“কোত্থেকে শুনেছেন আপনি এই ব্যাপারে?”

“ইন্টারনেটে।”

“ওহ, আপনি তো সবসময় ওখানেই বসে থাকেন বোধহয়…আপনার কাজের জন্যে?”

জোর করে মুখে একটা হাসি ফোটালাম।

এখন বাজে ৩ : ৪৯।

নাহ, যেভাবেই হোক আমাকে এগার মিনিটের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে, নইলে এই মহিলার সামনেই ঘুমিয়ে পড়ে যাব। আর এই মিথ্যাগুলো বলতেও ইচ্ছে করছে না। যদিও আমি নিজেও জানি না কেন এই মিথ্যাগুলো বলছি!

“আশেপাশে কাউকে দেখেছিলেন বা কিছু শুনেছিলেন?”

আমি মাথা নাড়লাম। “না, দু-রাত আগে আমি কাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ত ছিলাম।”

“দু-রাত আগের কথা কে বলল?” ভ্রূ উঁচু করে আমার দিকে তাকাল মেয়েটি।

“ইয়ে, আমার মনে হয়, ইন্টারনেটে কোথাও পড়েছিলাম এ-ব্যাপারে, মেয়েটা দু-রাত আগে খুন হয়েছে। নাকি দু-রাত আগে হয়নি?” পাল্টা প্রশ্ন করলাম।

দুই সেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে থেকে জবাব দিল সে, “ব্যাপারটা নিয়ে এখনো আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি।”

“গত রাতেও আমি কিছু দেখিনি।”

“তিন রাত আগে কিছু দেখেছিলেন বা শুনেছিলেন?”

আমি আবার মাথা নাড়লাম।

“তাকে চিনতেন?”

“কাকে?”

“আপনার বাসার উল্টোদিকে যে মেয়েটা থাকতো। তার বাসায় গিয়েছিলেন কখনও এর আগে?”

“নাহ, আগে কখনও দেখা হয়নি।”

আস্তে করে মাথা ঝাঁকিয়ে উঠে দাঁড়াল সে। “ঠিক আছে। যদি কিছু শোনেন বা কিছু মনে পড়ে তাহলে আমার নম্বরে একটা কল দেবেন।”

“আচ্ছা, দেব।”

আমার ফোনটা বেজে উঠলো। না। আমার ফোন নয় ওটা। অন্য কোন ফোন। রিংটোনটা অপরিচিত।

“কলটা ধরবেন না?” বলল সে।

“না, কোন জরুরি কল বলে মনে হচ্ছে না।”

“রাত চারটার সময় এরকম অপ্রয়োজনীয় কল প্রায়ই আসে নাকি?”

মনে আছে, বলেছিলাম কাল ঘুমানোর আগে আমার মনে হচ্ছিল জরুরি কিছু একটা ভুলে গেছি? আসলেই ভুলে গেছিলাম। কিন্তু মুখটা স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করলাম।

যে ফোনটা বাজছে সেটা ঐ মৃত মেয়েটার ফোন। আমার অন্য প্যান্টের পকেটেই রয়ে গেছে ওটা। অথচ ওটার এখন থাকার কথা ঐ গাড়িটার নিচে। আমি আসলেই একটা গাধা।

“মাঝে মাঝেই আসে,” জবাব দিলাম।

“কয়টা ফোন ব্যবহার করেন আপনি?”

“একটাই।”

সে দরজাটা খুলে তার প্যান্টের পকেট থেকে নিজের মোবাইলফোনটা বের করে একটা নম্বরে ডায়াল করল। এ সময় আমার প্যন্টের পকেটে আমার মোবাইলটা চেঁচিয়ে উঠলো আবার।

রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে কলটা কেটে দিল সে। “আশা করি খুব জলদি আবার দেখা হবে, মি. বিনস।” এরপর চলে গেল মেয়েটি।

আমি ল্যাসির দিকে তাকালাম একবার।

“কেমন হল ব্যাপারটা?”

ওর কাছেও কোন জবাব নেই।

*

৪.

ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি সোফায়। কালকে রাতে ফোনটা হাতে নিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুমানোর আগে মনে হয় ঘড়িতে দেখার চেষ্টা করছিলাম কয়টা বাজে। বিছানা পর্যন্ত যেতে পারিনি আর ভাগ্য ভালো যে, সোফাটা কাছাকাছি ছিল। তা-ও পুরোপুরি উঠতে পারিনি, মাথা নিচে আর পা উপরে রেখেই ঘুমিয়ে গেছিলাম। পকেট থেকে সব কিছু বের হয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

ল্যাসি কালকে রাতে কই ঘুমিয়েছিল কে জানে, কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই তাকে আমার বুকের উপর আবিষ্কার করলাম। আমার মুখটা চেটে দিচ্ছে আলতোভাবে। “থাক, আর আদর করা লাগবে না,” বললাম, যদিও ভালোই লাগছিল ব্যাপারটা।

ল্যাসিকে সরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। দাঁড়ালাম না বলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম বলাই ভালো হবে। অমন বেকায়দা ভঙ্গিতে শোবার কারণে মনে হচ্ছে যে আমার মেরুদন্ডটাই বাঁকা হয়ে গেছে।

পাঁচমিনিট ধরে গোসল করলাম, সাধারণত আমি এত সময় নেই না। দুমিনিটেই হয়ে যায়। কিন্তু গত কয়েকদিনের ঘটনাগুলোও ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করলাম। এখন একটু সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছি। ফ্রিজ খুললাম, কিন্তু আজকে আর স্যান্ডউইচ খেতে ইচ্ছে করছে না। একটা দইয়ের বক্স আর কয়েকটা ফ্রেঞ্চ ব্রেড বের করে নিলাম। ল্যাসি দুটো জিনিসই আমার সাথে ভাগাভাগি করে খেল।

বাবাকে মেসেজ দেয়ার জন্যে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি তিনটা মিসকল। তিনটাই একজনের নম্বর থেকে ডিটেক্টিভ রে।

কাল রাতের ঘটনা থেকে যা বুঝতে পারছি, আমি মনে হয় না তাদের সন্দেহভাজন তালিকায় আছি। কিন্তু হতে কতক্ষন?

গোলাপি রঙের স্যামসাংটার দিকে তাকালাম। এরকম একটা গাধামি কিভাবে করলাম আমি? আরেকবার নিজেকে গালাগালি দিলাম মনে মনে। ফোনটা তখনই গাড়ির নিচে রেখে দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু তখন যদি দৌড় না দিতাম তাহলে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ে যেতাম। সেক্ষেত্রে ওখান থেকে আমার ছাপ কিছুতেই মোছা যেত না।

কি করব আসলেই বুঝতে পারছি না! যদি পুলিশের হাতে স্যামসাংটা না তুলে দেই তাহলে কিছুতেই তারা ধরতে পারবে না, এই খুনটার সাথে কনর সুলিভান কোনভাবে জড়িত।

একটা বেনামি চিঠি পাঠিয়ে দেই। এটা ছাড়া অন্য কোন রাস্তাও নেই মনে হয়। সাথে ফোনটাও দিয়ে দেব একই প্যাকেজে।

কিন্তু তার আগে একটু দৌড়ে আসা যাক। এখন বাজে তিনটা বাইশ।

ল্যাসি সামনের দরজায় গিয়ে আঁচড় কাটছে। একটা হুডি গায়ে চাপিয়ে মুখ পর্যন্ত টেনে দিলাম।

“কিরে, তুইও বাইরে যেতে চাস নাকি?”

মিয়াও।

“ফিরে আসতে হবে কিন্তু।”

মিয়াও।

দরজাটা খুলে দিতেই ব্যাটা দৌড়ে বের হয়ে গেল।

দৌড়ানোর সময় আমার মনে বারবার মেয়েটার মৃতদেহের ছবি ভেসে উঠতে লাগলো। কিন্তু প্রতিবারই জোর করে চোখটা বন্ধ করে ছবিটা মন থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করলাম। মেয়েটার সময় শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আমার সময় এখনো বাকি আছে।

প্রায় দুই মাইল দৌড়ানোর পর আমার পিঠের মাংসপেশিগুলো একটু শিথিল হয়ে এলো। এখন আর প্রতিবার নিঃশ্বাস নেয়ার সময় ব্যথা লাগছে না। ফেরার পথ ধরলাম। হঠাৎ করে একটা গাছের পেছন থেকে কী যেন লাফ দিয়ে আমার সামনে এসে পড়ল।

“ওরে বাবা!” জোরে চেঁচিয়ে উঠলাম।

স্ট্রিটলাইটের আলোয় ব্যাটাকে দেখে মনে হল যেন খুব মজা পেয়েছে।

একটু ধাতস্থ হওয়ার পর জিজ্ঞেস করলাম “এতক্ষন ধরে এখানেই ঘাপটি মেরে ছিলি নাকি, আমাকে ভয় দেখানোর জন্যে?”

মিয়াও।

হাত তুলে থাপ্পড় মারা দেখালাম ব্যাটাকে। জবাবে সে-ও একটা পা তুলে আমাকে নখগুলো দেখিয়ে দিল। বজ্জাত কোথাকার!

“চল, বাসায় যাই।”

বাসার সামনে এসে অবাক হয়ে গেলাম। আমার দরজার সামনে থেকে দু-জনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। একজন ডিটেক্টিভ রে। আজকে তার পরনে একটা খয়েরি রঙের জ্যাকেট। কালকে দেখে বুঝতে পারিনি তার চুল এত লম্বা। প্রায় পিঠ ছাড়িয়ে নিচে নেমে গেছে। তার সঙ্গের ভদ্রলোককে দেখে মনে হল বয়সে রে থেকে দ্বিগুন বড় হবে। আর সাইজে তার তিনগুণ। মাথা কামানো, থুতনিতে সুন্দরভাবে ছাটা ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি। পেটানো শরীর, পেশিগুলো কিলবিল করছে। পরনে একটা জ্যাকেট।

“ও কি সবসময়ই তোমার সাথে দৌড়াতে যায় নাকি?” ল্যাসিকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল রে।

“মাঝে মাঝে।”

আস্তে করে মাথা ঝাঁকিয়ে তার পাশের লোকটার দিকে ইঙ্গিত করল মেয়েটা। “এ হচ্ছে আমার পার্টনার, ক্যাল।”

আমি তাদের পাশ কাটিয়ে নিজের দরজার দিকে রওনা দিলাম।

“আপনাকে আমাদের কিছু প্রশ্ন করার আছে,” পেছন থেকে ক্যাল বলে উঠলো।

“তাহলে তো আমার সেগুলোর জবাব দেয়া উচিৎ হবে বলেই মনে হয়, বললাম তাকে। “আর এ সপ্তাহের শেষের দিকে আমি ব্যস্তও থাকবো না।”

“এখন হলে কেমন হয়?”

আমি আমার মোবাইলের দিকে তাকালাম। তিনটা আটচল্লিশ বাজে। আর বারো মিনিট।

“আপনি একটু পরপর খালি ঘড়ি দেখেন কেন?”

আমি ভ্রূ উচিয়ে রে’র দিকে তাকালাম।

“কালকেও কথা বলার সময় অন্তত আট থেকে নয় বার আপনি আপনার মোবাইলে ঘড়ি দেখেছেন।”

আমি কিছুই বললাম না। ও কি আমার ঘড়ির দিকে তাকানোটা গুণেছিলো নাকি?

“এই রাত তিনটার সময় এতবার ঘড়ি দেখার মানে কি? এক মিনিটের সাথে এর পরের মিনিটের পার্থক্য তো নেই কোন!”

এই এক একটা মিনিটই জীবন, মনে হল চিৎকার করে বলি এটা ওদের মুখের সামনে। তোমাদের কাছে এই মিনিটগুলো হয়ত সেরকম কোন কিছুই মনে হয় না, কারন হাজার হাজার মিনিট আছে তোমাদের। কিন্তু আমার জীবনটা একটা বালুঘড়ির মত। আস্তে আস্তে মিনিটগুলো শেষ হয়ে যায় এক এক করে।

রেগে গেলে আমার চেহারা লাল হয়ে যায়। জোরে একটা নিশ্বাস নিয়ে, কোনমতে নিজেকে সামলে নিলাম। একবার মনে হল, বলে দেই আমি হেনরি বিনস আর আমার হেনরি বিনস আছে। কিন্তু বললাম না।

ঘুরে দরজায় চাবি ঢুকালাম। খুলতেই ল্যাসি দৌড়ে ভেতরে ঢুকে গেল। “এখন কোনভাবেই সম্ভব না। কালকে তিনটা পনেরর দিকে কেমন হয়?”

কোন উত্তরের জন্য অপেক্ষা করলাম না। যদিও আমার ভয় হচ্ছে উত্তরটা হয়ত হবে-”আমাদের কাছে সার্চ ওয়ারেন্ট আছে।”

কিন্তু সেটা না বললেও একটা উত্তর ঠিকই এলো-”ক্যালি ফ্রেইগ।”

মাথাটা কেমন যেন ঘুরে উঠলো। এমন না যে নামটা শুনে কিছু মনে পড়ে গেছে আমার। একদমই সাধারন একটা নাম। তবুও।

আমার এই নীরবতার সুযোগে ডিটেক্টিভ দু-জন ভেতরে ঢুকে গেল। এখন আর ওদের থামানোর কোন উপায় নেই, তাই হাল ছেড়ে দিলাম।

ঠিক এই সময় মনে হল, মোবাইলটা-ক্যালি ফ্রেইগের মোবাইলটা তো আমার রান্নাঘরে টেবিলের উপর রাখা! ল্যাপটপটার পাশে। ধুর!

“জুতোগুলো অন্তত বাইরে রেখে আসতে পারতেন!” আমি বললাম। কোন অযৌক্তিক অনুরোধ নয় কিন্তু। “শুধু বাইরের ম্যাটটার পাশে রেখে দিলেই হবে।” এটাতে একটু খটকা লাগতে পারে ওদের। কিন্তু ঝুঁকিটুকু নিতেই হবে। দু-জনেই নিচে ঝুঁকে জুতা খুলতে লাগলো। আমিও কোনমতে আমার জুতাটা খুলে ভেতরে ঢুকে গেলাম।

টেবিলটা আরো দশ কদম সামনে। ওটার কাছে যাওয়ার সময় নেই। আমি ওখান থেকেই আমার হুডিটা খুলে টেবিলের উপর ছুঁড়ে মারলাম। একদম ল্যাপটপটার পাশে গিয়ে পড়ল। বিংগো!

“এত হাসির কি আছে?” রে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল।

“না-না, কিছু না, মাথা নেড়ে বললাম। “তা, এই ক্যালি ফ্রেইগটা আবার কে?”

*

৫.

“ক্যালি ফ্রেইগ হচ্ছে সেই মেয়েটার নাম যার উপর তুমি তিন মাস ধরে তোমার জানালা দিয়ে নজর রাখছিলে–আর সে এখন মৃত, ক্যাল জবাব দিল। তার ভাবগতিক সুবিধার ঠেকছে না আমার কাছে।

“আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, আমি ঐ মেয়েকে আগে কখনও দেখিনি,” মাথা নেড়ে বললাম। আসলে একবার দেখেছি আমি। কিন্তু জীবিত অবস্থায় কখনও দেখিনি।

“তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন, গত তিনমাস ধরে আপনার বাসার ঠিক উল্টোদিকে থাকে এমন একটা মেয়েকে আপনি চেনেন না, তাই তো?” রে জিজ্ঞেস করল।

“সে এই এলাকায় মাত্র তিনমাস ধরে থাকে?”

রে আর ক্যাল দু-জনেই আমার প্রশ্ন শুনে বিভ্রান্ত হয়ে গেল, একে অন্যের দিকে একবার তাকাল ওরা। আসলে ওদের দোষ দিয়েও কোন লাভ নেই, কারন মেয়েটা যদি ওখানে ছয় বছর ধরেও থাকতো তা-ও আমার পক্ষে সেটা জানা সম্ভব হত বলে মনে হয় না।

“আমি কখনও তাকে দেখিনি,” আবার বললাম তাদেরকে।

“আর ক্লেমেনদের?”ক্যাল বলল। “ওদের দেখেছ?”

“এই ক্লেমেনরা আবার কারা?”

“ঐ বাড়িটা যাদের…গত দশ বছর ধরে তারা ওখানে ছিল।”

“নাহ, কোন ক্লেমেনকেই আমি চিনি না,” একটু থেমে উত্তর দিলাম।

“আপনি এই বাসায় কত দিন ধরে আছেন?”

“সাত বছর।”

রে চোখ পাকিয়ে আমার দিকে তাকালো। আর এই সাত বছরে আপনি আপনার বাসার ঠিক উল্টোদিকে যারা থাকে তাদের একবারের জন্যেও দেখেননি?”

“আমি দিনের বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়েই কাটাই। বুঝতেই তো পারছেন নইলে আপনাদের সাথে তো আমার আর এই রাত চারটায় কথা হত না, তাই না?”

আসলে তিনটা চুয়ান্ন বাজে এখন। যদি আসলেই রাত চারটা বাজত তাহলে ওনাদেরকে হয়ত একটা ঘুমন্ত পুতুলের সাথে কথা বলতে হত।

“তা, এই ক্যালি ফ্রেইগ সম্পর্কে কি কি জানলেন আপনারা?” জিজ্ঞেস করলাম তাদের।

ক্যালকে দেখে মনে হল না সে খুশি হয়েছে আমার প্রশ্নটা শুনে।

রে উত্তর দিল, “মেয়েটার বয়স চব্বিশ। গত প্রায় তিন মাস ধরে ঐ বাসাটায় ছিল সে। ক্লেমেনদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছিল। মাসে পনের শ’ ডলার। ভাড়াটা একটু বেশিই, কিন্তু বিনিময়ে ক্লেমেনরাও কোন কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনবোধ করেনি। না আছে কোন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, না কোন ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট। এমনকি মেয়েটার বাবা-মা সম্পর্কেও কিছু জানে না তারা। ক্রেডিট কার্ড কোম্পানির কাছ থেকেও তেমন কিছু জানা যায়নি।”

আমি তথ্যগুলো হজম করার চেষ্টা করলাম। তাহলে মেয়েটার সাথে প্রেসিডেন্টের দেখা হল কিভাবে নিজে নিজেই ভাবছিলাম, এ সময় রে আমার কাছে এক গ্লাস পানি চাইল।

মাথা নেড়ে ওকে নিজেই নিয়ে নিতে বললাম। “কোথা থেকে নেব?” রান্নাঘর থেকে রে জানতে চাইলো। অগত্যা আমি উঠে রান্নাঘরের দিকে গেলাম তাকে পানি দেয়ার জন্যে।

“মজার ব্যাপার কি জানো?” পেছন থেকে ক্যাল বলতে লাগলো, “ক্যালি ফ্রেইগের বাসা থেকে তার ফোনটা উদ্ধার করতে পারিনি আমরা। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমার সঙ্গি কালকে তোমার বাসায় দুটো ফোনের আওয়াজ শুনেছে। কিন্তু তুমি নাকি বলেছ তুমি একটা ফোন ব্যবহার কর।”

আমি ফ্রিজ থেকে পানির বোতলটা বের করে একটা গ্লাসে ঢেলে রে’র দিকে এগিয়ে দিলাম।

“আর আপনাদের ধারণা আমি সেই ফোনটা চুরি করেছি?”

জবাবে ক্যাল একটা হাসি দিল।

“দাঁড়ান, এখনই আসছি আমি,” বলে বেডরুমের দিকে পা বাড়ালাম।

রুম থেকে যখন ফিরে এলাম তখন বাজে তিনটা সাতান্ন। আর তিন মিনিট আছে ওদের এখান থেকে বিদায় করার জন্যে। এই তিন মিনিট সময়ে প্রমাণ করতে হবে, আমি খুনটা করিনি।

হাতের আইফোনটা রে’র দিকে বাড়িয়ে দিলাম। “আমি এখনো এটা অ্যালার্মের জন্যে ব্যবহার করি।”

সে আমার কাছ থেকে আইফোনটা নিয়ে অ্যালার্ম অপশনে ঢুকলো। ওখানে তিনটা পঞ্চান্নর সময় অ্যালার্ম দেয়া আছে। চাপ দিতেই অ্যালার্ম টোনটা বেজে উঠলো। কালকে যে আওয়জটা হয়েছিল সেটার সাথে অবশ্য এটার কোন মিল নেই, কিন্তু কাছাকাছি হবে হয়তো।

“এই রাতের বেলা প্রায় চারটার সময় অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছ কেন তুমি?” ক্যালের প্রশ্ন শুনে মনে হল সে বুঝি আমাকে ধমকাচ্ছে।

“টোকিও স্টক মার্কেট চারটার সময় বন্ধ হয়ে যায়। অ্যালার্মটা দিয়ে রেখেছি যাতে করে শেষ মুহূর্তে কিছু বেচাকেনা করতে পারি।” আসলে টোকিও মার্কেট নিয়ে আমার কোন ধারণা নেই। কিন্তু ওটা যেহেতু পৃথিবীর ঐ প্রান্তে, মনে হয় না ওরা কিছু সন্দেহ করবে।

“নতুন ফোনটায় অ্যালার্ম ব্যবহার করেন না কেন?” রে জিজ্ঞেস করল।

“আসলে ঐ ফোনটা আমার জন্যে লাকি,” আমি বললাম। “মানে, ঐ ফোনটা যখন ব্যবহার করতাম তখন বেশ কয়েকবার বড় ধরনের লাভ হয়েছিল।”

তিনটা আটান্ন বাজে।

“আমাকে এখন আবার শেয়ার মার্কেটে একটু ঢুকতে হবে। ঠিক আছে। তাহলে?” দরজার দিকে মাথা নাড়লাম।

তারা দুজন উঠে অনিচ্ছাসত্ত্বেও দরজার দিকে রওনা দিল।

“ওহ্, আরেকটা জিনিস,” রে বলল।

“ওই বাড়িতে আমরা অনেক বিড়ালের খাবার পেয়েছি, কিন্তু কোন বিড়াল খুঁজে পাইনি।”

আমি ল্যাসির দিকে তাকালাম। একটা চেয়ারের উপর গুটলি পাকিয়ে শুয়ে আছে ব্যাটা।

“আর, আপনার বাসা-ভাড়ার চুক্তিনামায় কিন্তু কোন বিড়ালের কথা উল্লেখ নেই, আমি পড়ে দেখেছি ওটা,” রে বলল আবার।

“না, মানে…প্রতি মাসে বাড়তি পঞ্চাশ ডলার বাঁচানোর চেষ্টা করছিলাম আর কি,” দায়সারাভাবে বললাম।

“তাই নাকি?” ক্যাল বলল। “ফোন দিয়েই যখন এত ডলার কামাও তুমি, এই সামান্য পঞ্চাশ ডলার এত বেশি হয়ে গেল কেন তোমার কাছে?”

চোখ বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম আমি। কিন্তু কিছু বললাম না। সাথে সাথে।

“ল্যাসি।”

ব্যাটা লাফ দিয়ে এসে আমার পায়ের কাছে বসে পড়ল। আশা করি এটা যেন কাজ করে।

“শুয়ে পড়।”

ল্যাসি পেটের উপর ভর দিয়ে শুয়ে পড়ে লেজ নাড়তে লাগলো।

“এবার উঠে বস।”

উঠে বসল।

“এবার একটু গড়াগড়ি খা।”

ঠিকই পিঠের উপর একটা গড়ান দিল ব্যাটা। সাব্বাশ!

“এবার জোরে একটা লাফ দে।” আমি জানি এটা একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে।

কিছুই করল না ল্যাসি। ডিটেক্টিভদের দিকে মুখ তুলে তাকালাম আমি। “এটা কিছুতেই করানো যাচ্ছে না ওকে দিয়ে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, হে হে।”

দরজাটা খুলে ধরলাম। দু-জন বের হয়ে জুতা পরে চলে গেল।

শেষ পর্যন্ত আমি আর ল্যাসি যখন বিছানায় শুলাম ঠিক তখনি আমার ভুলটা ধরতে পারলাম। লাফিয়ে উঠে রান্নাঘরে গিয়ে দেখি ডিটেক্টিভ রে যে গ্লাসে করে পানি খাচ্ছিল সেটা নেই।

উধাও হয়ে গেছে!

সাথে করে নিয়ে গেছে আমার আঙুলের ছাপটাও।

Leave a Reply to Yeasin Hossain(athiest) Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *