১৯. ভেতরকার মানুষটি

১৯. ভেতরকার মানুষটি

১৯৭৭ সালের জানুয়ারি মাসের এক কনকনে শীতের সকাল। মেয়েটির তখন সদ্য বিয়ে হয়েছে। চিরকাল ভোরে ওঠা অভ্যাস। কাক ডাকার আগেই তার ঘুমটা ভেঙে গেল। নতুন শ্বশুরবাড়িতে প্রথম সকাল। সারা বাড়িটা অঘোর ঘুমে মগ্ন। হঠাৎ মনে হল রান্নাঘরের দিক থেকে একটা খুটখাট্ শব্দ আসছে। বিছানা থেকে মেয়েটি উঠে চলে যায় সোজা রান্নাঘরের দিকে। গিয়ে যা দেখল তাতে নিজের চোখকেই সে যেন বিশ্বাস করতে পারে না। রান্নাঘরে রয়েছেন তাঁর শ্বশুরমশাই, একটা কেটলিতে জল গরম করছেন। ঘুরে দাঁড়িয়ে মেয়েটিকে দেখে বললেন, ‘এই যে নাও, এই গরম জলটা নাও, নাহলে আবার ঠাণ্ডা লেগে যাবে’। বিয়ের ক’দিন আগে মেয়েটির জ্বর হয়েছিল ঠিকই তবে একথা তার শ্বশুরমশাই মনে রেখেছেন আর এত সকালে উঠে তার জন্যে জল গরম করে দিচ্ছেন এটা সে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। হাত মুখ ধুয়ে খাবার ঘরে পৌঁছতেই আবার অবাক হবার পালা। খাবার টেবিলের ওপর এক কাপ ধূমায়িত চা। চাটা খেয়ে নাও, ভাল লাগবে’, বললেন শ্বশুরমশাই, বোঝাই যাচ্ছে উনিই চাটা তৈরী করে এনেছেন। “ব্যাস, এইটুকুই, এই ব্যবহারটুকুতেই আমি যেন চিরদিনের কেনা হয়ে গেলাম।”—বললেন ডলি বসু, জ্যোতি বসুর পুত্রবধূ। কলকাতাবাসী পাঞ্জাবী পরিবারের মেয়ে। সুন্দরী, সপ্রতিভ, অভিনয়ে সুনাম আছে। “বাবাকে আমি দেখছি চব্বিশ বছর ধরে। আমার বিয়ের পাঁচ বছর আগেই বাবার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়”—জানালেন ডলি, “তখন আমার ষোল বছর বয়স, ১৯৭২ সাল, তখনও বাবা চীফ মিনিস্টার হননি, চন্দন আমাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল, বাবার সঙ্গে পরিচয় করাতে।” সেদিনটার কথা ডলি এখনও ভোলেন নি, “আমি খুবই নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম, আমার পরণে ছিল একটা হলুদ রঙের শার্ট আর সবুজ প্যান্ট। বাবাই দরজা খুলেছিলেন, পরেছিলেন সাদা ধবধবে ধুতি পাঞ্জাবী, আমার সঙ্গে ছিল চন্দন, ও বলল বাবা, এই ডলি; আমাকে বলল, ডলি, আমার বাবা—আমি তখনও বেশ নার্ভাস। যাই হোক, বাবা ‘এসো এসো ভেতরে এসো’ বলে আমাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলেন—মুহূর্তে আমার সব ভয় কোথায় উধাও হয়ে গেল। তারপর বিয়ের পর ওঁর উদার স্নেহপরায়ণ মনের পরিচয় প্রথম দিনই পেয়েছিলাম।

সারাজীবনই ডলি শ্বশুরমশাই-এর কোমল মনের পরিচয় পেয়েছেন। “যখন আমার দ্বিতীয় সন্তান হয়”, ডলি বললেন, “তখন আমার শরীর খুব খারাপ হয়েছিল। আমাকে যখন লেবার রুমে নিয়ে যাচ্ছে, তখন হঠাৎ শুনি বাবা আসছেন। বাবা গিয়েছিলেন জলপাইগুড়িতে। সেখান থেকে ফিরে সোজা নার্সিংহোমে চলে এসেছেন, বললেন ‘জেগে আছো, আমি ভাবলাম বোধহয় দেখা হবে না, যাই হোক, চিন্তার কিছু নেই, ছেলে মেয়ে যাই হোক সবই সমান। ভাল থাকো” বলেই যেরকম তাড়াতাড়ি এসেছিলেন, সেইরকমভাবেই চট করে বেরিয়ে গেলেন। আমার সেদিন খুব ভাল লেগেছিল। আমার প্রথম মেয়ের জন্ম ১৯৭৮ সালে, বাচ্চার মাথায় মোটে চুল ছিল না, বাবা প্রায়ই দুঃখ করতেন। তারপর আমার দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার আগে বাবা আমার খাওয়াদাওয়া নিয়ে বিশেষ উপদেশ দিতেন, এমন এমন খাদ্য খেতে বলতেন যাতে বাচ্চার মাথায় চুল হয়—ঠিক যেন মায়ের মত। যাই হোক আমার আর একটি মেয়ে হল। বাবার মনে কোনও ক্ষোভ নেই। প্রথমবারের মতই আনন্দ করলেন।

আসলে কেউই বিশ্বাস করবে না বাবা যেন বাবা মা দুজনেরই ভূমিকা পালন করতেন। অনেকদিন আগেকার কথা বলছি, তখন ৭০ সালের শেষ দিক, আমরা তখন হিন্দুস্তান পার্কের বাড়িতে থাকি। আমি আর চন্দন প্রায়ই প্রিয়া সিনেমায় রাতের শো-এ ফিল্ম দেখতে যেতাম। একদিন আমার মেয়েকে দেখাশোনা করার লোকটি আসেনি। বাবা নিজেই বললেন, আমিই নাতনিকে দেখাশোনা করব। বাবা আর আমাদের বাড়িতে সে সময় কাজ করত, নিমাই দুজনে মিলে দিব্যি আমার মেয়েকে দেখভাল করলেন। আমরা ফিরলাম মাঝরাতে, দেখি তখনও বাবার ঘরে আলো জ্বলছে, বাবা জেগে আছেন, ন্যাপিট্যাপি সবই পাল্টানো হয়েছে, নাতনি দাদুর তত্ত্বাবধানে দিব্যি রয়েছে।”

নাতনিরা বসুর নয়নের মণি। “আমার মা, নাতনিদের আদর করে খাইয়ে দিতেন”, বললেন ডলি, “সারা ঘরে দৌড়াদৌড়ি করে কোনওরকমে একগাল খাওয়াতেন। আমার তখন খুব রাগ ধরে যেত, আমি ভাবতাম এমন আদর দেওয়াটা তো ঠিক নয়। একদিন খাওয়ানোর সময় বাবা ছিলেন, আমি মাকে বললাম, ওর পেছনে একদম দৌড়িও না, খাবার টেবিলে রেখে দাও, খিদে পেলে আপনি খাবে। বাবা কথাটা শুনে মন্তব্য করলেন, “একটু আদর করে, ভাল করে খাওয়াতে পারো না? জান, আমি যখন ছোট ছিলাম আমার মা কত আদর করে খাওয়াতেন, আমার খেলার সাথী একটা জ্যান্ত আরশোলা সূতোয় বেঁধে আমার সামনে নাড়াত, আমার দেখে খুব মজা লাগত, ভাল করে খেয়েও নিতাম”।

প্রকাশ্যে আবেগ অনুভূতি ব্যক্ত করা বসুর স্বভাব নয় কিন্তু কোনও কোনও ঘটনায় তিনি ভেতরে ভেতরে এত বিচলিত হয়েছেন যে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেন নি এমনও হয়েছে। সোমনাথ লাহিড়ী যখন মৃত্যুশয্যায়, বসু তাঁকে দেখতে গিয়ে চোখের জল রাখতে পারেন নি। বন্ধু স্নেহাংশু আচার্য মারা যাবার পরও তাঁর খুব লেগেছিল। যখন সরোজ মুখোপাধ্যায় মারা যান তখনও বসুর চোখে জল দেখা দিয়েছিল। এমন কি রাজনৈতিক ধ্যানধারণায় বিপরীত মেরুর মানুষের বিপদেও তাঁকে কাতর হতে দেখা গেছে। ১৯৮৪ সালের ৩১শে অক্টোবর যখন ইন্দিরা গান্ধী আততায়ীদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বসু দিল্লী ছুটে গিয়েছিলেন এবং ইন্দিরার সেই বুলেটে ঝাঁঝরা শরীরটা দেখে যারপর নাই শোহাকত হয়েছিলেন। সেদিনই কলকাতায় ফিরেছিলেন তিনি। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা পার্ক স্ট্রীটের কুইন্‌স ম্যানসনে ছেলের বাড়িতে। সেই দিনটার কথা বলছিলেন ডলি, “আমি বাবাকে এত ভেঙে পড়তে এর আগে কখনও দেখিনি। আমাকে বললেন ‘সে এক ভয়াবহ অবস্থা, সারা শরীরটা বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে”…. বার বার বলতে থাকেন, আমার কথা শুনল না।’ সারা সন্ধ্যে চুপচাপ নিজের ঘরে একলা রইলেন, মন খুব খারাপ, খুব ভেঙে পড়েছিলেন। ইন্দিরার স্বামী ফিরোজ গান্ধী বসুর বন্ধু ছিলেন, এক্ষেত্রে তাই তাঁর দুঃখের অনুভতি একটা ‘নতুন মাত্রা পেয়েছিল। রাজীব গান্ধীর আকস্মিক প্রয়াণেও বসু কম মৰ্মাহত হননি।

১৯৮২ সালে বসু যখন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন উনি ছেলের বাড়িতেই ছিলেন। ডলিই দেখাশোনা করতেন, “বাবার মত রোগী বোধহয় হয় না, ডাক্তারের সব নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতেন। কোনও অভিযোগ ছিল না, কোনও চাহিদাও ছিল না। শারীরিক কষ্ট নীরবে সহ্য করার ক্ষমতাও ছিল।” “সেদিন রাতে বাড়ির লোকেদেরই খাওয়াদাওয়া ছিল। সবাই আমায় নিয়ে ঠাট্টা ইয়ার্কি করছিলেন, আমার হাতের রান্না খাওয়া যাবে কিনা—নাকি বাইরে গিয়ে শেষ পর্যন্ত খেতে হবে ইত্যাদি। যাইহোক সবাই মিলে ডিনার টেবিলে বসলেন। বাবার সেদিন বাইরে মিটিং ছিল, খুব ক্লান্ত ছিলেন। খেতে বসার পর দেখলাম বাবা একটু খেয়েই কি রকম যেন নাড়াচাড়া করছেন। বাবা অসম্ভব পরিষ্কার করে খান, খাবার একদম নষ্ট করেন না। আমি বললাম :

‘কি হল, খাবারটা ভাল লাগছে না?’

‘না’, গম্ভীরভাবে জবাব দিয়েই বাবা উঠে পড়লেন। গলার আওয়াজটা আমার অদ্ভুত ঠেকল। কয়েক পা এগোতেই মাথাটা টলে গেল। অসম্ভব পরিশ্রমের ফলেই এটা হয়েছিল, সারাদিন মিটিং করছিলেন আর খেয়েছিলেন মোটে এক কাপ চা। যাই হোক পরে বাবাকে এস এস কে এম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। ডাক্তাররা বললেন সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিতে। এক মাস মত বাড়িতে ছিলেন। আমি তখন সীতা ট্রাভেলস্-এ চাকরি করি”, বললেন ডলি, “একদিন চন্দনকে ডেকে বাবা বললেন, ‘দেখ ও তো ছুটি নেওয়ার জন্য মাইনে পাচ্ছে না, ওকে সেই টাকাটা তুই দিয়ে দিবি।”

নাতনীরাও দাদু সম্বন্ধে উচ্ছ্বসিত। বড় নাতনী পায়েলের মনে পড়ে দাদু একবার কি রকমভাবে তাদের দুই বোনকে খেলনার দোকানে নিয়ে গিয়েছিলেন—”আমি তখন লা মার্টিনিয়ের-এ ক্লাস ফোর-এ পড়ি। একবার প্রোগ্রেস প্রাইজ পেয়েছিলাম। দাদু সে কি খুশী! আমাকে আর কোয়েলকে নিয়ে চলে গেল সোজা পার্ক স্ট্রীটের এক খেলনার দোকানে। সাইরেন টাইরেন বাজিয়ে দাদুর কনভয় তখন সেই দোকানের সামনে, আমাদের তো খুব মজা! দাদু দোকানের ভেতরে গিয়ে আমাদের বলল, যা ভাল লাগে কেনো। আমরা তো আনন্দে আত্মহারা। আমি আর আমার দু’বছরের ছোট বোন কোয়েল একটা গোলাপী সার্টিনের বেড আর সুন্দর একটা পুতুল, ফ্রীল দেওয়া পোশাক পরা কিনলাম। দাদু আমায় বলেছিল ‘এটা তো প্রোগ্রেস প্রাইজ, এই প্রাইজ পেয়ে যাতে পরে আরও প্রোগ্রেস হয় তাই এসব দিলাম।”

“আসলে দাদু খুব প্রোগ্রেসিভ মাইন্ডেড, বন্ধুর মত বিহেভ করে আমাদের সঙ্গে। আমি একবার একটা বিউটি কনটেস্টে জিতেছিলাম। ব্যাপারটা খুব গোপনে রেখেছিলাম, আমি আর আমার মা শুধু জানতাম। যখন দাদু ব্যাপারটা জানলেন, তখন বেশ খুশী হলেন—অনেকদিন পর্যন্ত আমাকে ‘বিউটি কুইন, বিউটি কুইন’ বলে ডাকতেন।”

“আর দাদুর সঙ্গে ছুটি কাটানোর মজাই আলাদা”, বলল পায়েল, “আমরা যখন একটু ছোট ছিলাম তখন জলদাপাড়ায় আমরা খুব সুন্দর একটা ছুটি কাটিয়েছিলাম। আমি তখন সাত আর কোয়েলের বয়স পাঁচ। আমাদের এক দিদি ছিল—বণ্টি-দি, আমার এক পিসির মেয়ে, আমার থেকে বছরখানেকের বড়। আমরা একদিন ঠিক করলাম ভোরবেলা কাছেই একটা সুন্দর স্ত্রীম’ ছিল তাতে পা ডোবাবো। সকালে ছ’টা নাগাদ আমরা সবাই গেলাম, খুব সুন্দর সেই জায়গাটা। কুলকুল করে জল বয়ে যাচ্ছে, চারধারে পাথর নুড়ি পড়ে আছে, নিস্তব্ধ —হঠাৎ কোত্থেকে দুজন লোক উদয় হল। তারা আমাদের সঙ্গে খুব ভাব জমিয়ে ফেলল। আমরাও খুব বকবক করতে লাগলাম। কোয়েল তো কথা বলতে শুরু করলে আর থামতই না। বণ্টিদি প্রায়ই ফিসফিস্ করে বলছে, চলো চলো এবার ফিরে চলো’। কিন্তু তার কথা কে শোনে, আমরা দিব্যি গল্প চালিয়ে যাচ্ছি, আমাদের কেমন ছুটি কাটছে, আমরা কেমন গণ্ডার দেখেছি, বাঘ দেখেছি, কত অদ্ভুত নাম না জানা ফুল দেখেছি, আর দাদুর সম্বন্ধে কত কথাই না বললাম, দাদু কি করে সময় কাটাচ্ছে, কি খাচ্ছে, কি পরে আছে…স… ব কিছু! তারপরদিন সকালে কি বকুনি, কি বকুনি! খবরের কাগজে আমরা যা যা বলেছি সব ছেপে বেরিয়েছে আর খুব রং চড়ানোও হয়েছে তার ওপর। (বুম্বা) বাবা তো ভীষণ রেগে গেল, খুব বকল আমাদের, অচেনা লোকেদের সঙ্গে এত কথা বলার জন্য। কিন্তু কি আশ্চর্য দাদু কিন্তু একটুও বকল না আমাদের। আবার পরের দিন সেই দুজনের সঙ্গে আমাদের আবার দেখা। কোয়েল ‘আঙ্কল, আঙ্কল’ বলে ডাকল, কিন্তু তারা মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে কোনও কথার জবাব না দিয়ে প্রায় পালিয়ে গেল। আমাদের খুব অবাক লেগেছিল সেদিন।” পুত্রবধূ ডলি আবার বললেন, “বাবা আসলে খুব পরিবারমুখী মানুষ। যখনই লন্ডনে যেতেন, সে যত অসুবিধেই হোক একবার সেই আইরিন বৌদির সঙ্গে দেখা করবেনই করবেন। উনি সম্প্রতি মারা গেছেন, কিন্তু উনি বেঁচে থাকতে একবারও বাবা ওঁর সঙ্গে দেখা করেন নি এমন হয়নি।”

বিদেশে গেলে বসু এখানে যে স্বাধীনতাটুকু পান নি, সেই স্বাধীনতার পূর্ণ সদ্বব্যবহার করেন। দোকানবাজার করা, শপিং ব্যাগ বওয়া, রাস্তায় হেঁটে যাওয়া, আন্ডার গ্রাউন্ডে ভ্রমণ করা, এমন কি স্ট্রবেরি ক্ষেত থেকে স্ট্রবেরি তুলে খাওয়া আর মনের সাধে আইসক্রীম খাওয়ার মত নির্ভেজাল আনন্দও উপভোগ করেন। “বাবা মিষ্টি খাবেন না বা কোনও মিষ্টি ডিশ্ খাবেন না, কিন্তু ‘আইসক্রীম খাব না’ একথা কখনোই বলবেন না।”

আইসক্রীম প্রসঙ্গে বসু আমাকে একটা মজার ঘটনার কথা বললেন। সেবার বসু সোভিয়েত ইউনিয়নে গেছেন রাষ্ট্রের অতিথি হয়ে। এক সন্ধ্যায় বসু আর তাঁর অন্য দুজন সঙ্গীকে বিখ্যাত রাশিয়ান সার্কাস দেখতে নিয়ে যাওয়া হল। হঠাৎ কথার মাঝখানে তাঁর “সিলোনিজ্ সেই সঙ্গী মন্তব্য করলেন, আমেরিকান আইসক্রীম সোভিয়েত ইউনিয়নে তৈরি আইসক্রীমের থেকে অনেকগুণে ভাল। ওদের রাশিয়ান এসকর্ট এই কথার তীব্র প্রতিবাদ করে। আর তার নিজের মতটা যে কতটা সঠিক তা প্রমাণ করার জন্য বসুদের এমন এক ‘রেস্তোরায় নিয়ে গেলেন যেখানে আইসক্রীম আর শ্যাম্পেন দুটোই একসঙ্গে তাদের দেওয়া হল। বসু বললেন “তার এফেক্ট হল ভয়ংকর। আমার মনে হল সার্কাসের লোকগুলো ট্রামপোলিনে লাফিয়ে সেই যে উঁচুতে উঠে যাচ্ছে, আর নামছেই না। আমি আমার সঙ্গের অফিসারকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা ঐ পারফরমাররা আর নীচে থামছে না কেন? লোকটি খুব হেসে আমাকে জবাব দিল ‘ওরা কিন্তু সত্যিই নীচে নামছে।” “বাবার একটা অদ্ভুত গুণ হল”, পুত্রবধূ ডলি বললেন, “বাবা কারও ব্যক্তিগত বিশ্বাসে আঘাত বা হস্তক্ষেপ করেন না। প্রত্যেক ডিসেম্বর মাসে আমাদের বাড়িতে কালীপূজো হয়, বাবা আসেন, পূজার শেষে ভোগপ্রসাদও খান আর প্রায়ই যতক্ষণ থাকেন নানা রকম মজার মন্তব্য করতে থাকেন—তুমি কি সংস্কৃত জান? ঐ পুরুত যে ঠিক ঠিক মন্ত্ৰ পড়ছে তা কি করে বুঝবে? যদি ঐ দেবী রেগে যান?—তোমাদের এ সব মন্ত্রতন্ত্র করার দরকার হয়, কিন্তু আমার এ সব দরকার হয় না, উনি জানেন আমি কি চাই।” ডলির মতে বসুর এসব কথারই গভীর অর্থ আছে। বসু নিজে নাস্তিক কিন্তু কারও বিশ্বাসে তিনি আঘাত করতে চান না। তাঁর বাবার লোকনাথবাবার প্রতি একনিষ্ঠ ভক্তি নিয়েও তিনি কোনওদিন ব্যঙ্গ করেন নি।

নিজের জন্মদিনের হৈ চৈ বসুর একেবারে পছন্দ নয়। জন্মদিনে উপহার আর অভিনন্দনের ঢেউ দিনটাকে অন্যদিনের থেকে আলাদ করে দেয়। সত্তরের দশক থেকে বাইরের মানুষই তাঁকে জন্মদিনের কথাটা আর ভুলতে দেন না, ফোন বাজতে থাকে অবিরাম, অতিথিদের আনাগোনা চলে সারাদিন। ছোটবেলায় মা পায়েস করে দিতেন, কিন্তু বড় হয়ে ঐ ধরনের অনুষ্ঠান আর হয় না। জন্মদিন পালন করাটা কেন ভাল নয়?—এই প্রশ্নের উত্তরে বসু বললেন “জন্মদিন আবার কি? জন্ম ব্যাপারটা তো একটা অ্যাক্সিডেন্ট—সেটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করে কি লাভ?”

তবে দরকারি উপহার পেতে বসুর মন্দ লাগে না। ছেলে বাইরে কোথাও গেলেও ওঁর জন্য কি এনেছে সেটা জানার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে থাকেন, জানালেন ডলি, “ছোটখাটো জিনিসই পছন্দ, সে সাবানই হোক, আফটার শেভই হোক।” জুতো, সূতীর লুঙ্গি ওঁর খুব পছন্দ।

আবার বসু জন্মদিনের কথায় ফিরে গেলেন। “আমার জন্মদিনের তারিখ টারিখ মনে থাকে না, কতজনের মনে রাখব? আমি অনেকবার চন্দনেরই জন্মদিন ভুলে গেছি, সেইদিন বাইরে থেকেছি, ও দুঃখও প্রকাশ করেছে। একদিন পার্টিতে বেরোচ্ছি, দেখি অনেকে বসে আছেন উপহার নিয়ে, কি ব্যাপার কি? ওরা তখন বলল আজ (কমল) বৌদির জন্মদিন, ২২শে জুন। বসুর মনে হল ওঃ হো তাই তো, আমার মনে ছিল না”, নিজেকে একটু অপরাধীও মনে হল

“একবার রাজভবনে ওঁর জন্মদিনে”, স্ত্রী কমল বসু বললেন, “প্রচুর ফুল এসেছে। ফুলের মালা, সুন্দর সুন্দর তোড়া, চমৎকার বাস্কেট সব এক জায়গায় জড় করা রয়েছে—নানারঙের সমারোহে জায়গাটা এত সুন্দর লাগছে—আমাকে একজন ফোটোগ্রাফার বললেন ‘আপনাদের দুজনের একটা ছবি তুলব, ফুলের ব্যাকগ্রাউন্ডে, খুব ভাল লাগবে।’ আমি ওঁকে আসতে বললাম, উনি বললেন, ‘না, জন্মদিন বলে ছবি ওসব আবার কি, আমি ছবি তুলব না’। যাইহোক আমিও আর দ্বিতীয়বার অনুরোধ করলাম না, নিজে কাপড় বদলে ছবি তুলব বলে দাঁড়ালাম, তারপর হঠাৎ দেখি একটা শার্ট চড়িয়ে টুক্ করে আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন। ছবি উঠল।”

“তবে আমার নাতনীদের জন্মদিন পালন করায় আমার খুব উৎসাহ”– বসু তাঁর নিয়মের ব্যতিক্রমের কথা জানালেন। নাতনি পায়েল বলল, “১৯৯৬ সালে আমার ফাইনাল পরীক্ষা ছিল, জন্মদিন সেলিব্রেট করা যাতে না হয় আমি আগেই বলে দিয়েছিলাম, কিন্তু দাদুর উৎসাহে শেষ পর্যন্ত করতেই হল, আমার এইটিথ বার্থডে, দাদু বললেন কিছু একটা করতেই হবে। ১৪ই জানুয়ারি আমার জন্মদিনের সন্ধ্যায় উপহার দিয়ে আর্শীবাদ করে গেলেন।”

নিজের জন্মদিন পালন করেন না কেন?—এই প্রশ্নের উত্তরে বসু বললেন “মনে হয় ঐ দিনটা যেন জীবনের একটা বছর নিয়ে চলে গেল।”

মেজ নাতনি কোয়েলের মনে হয় দাদুর সময়ানুবর্তিতাটা দাদুর সবচেয়ে বড় গুণ। কোয়েল বলল, “১৯৯৫ সালের অক্টোবর মাসে কলকাতা ইনটারন্যাশনাল স্কুলের রজতজয়ন্তী ছিল। আমি চেয়েছিলাম দাদু প্রধান অতিথি হোক, দাদু রাজি হল। সাড়ে ছ’টার সময় আমাদের প্রোগ্রাম আরম্ভ হওয়ার কথা ছিল। দাদুর পৌঁছনোর কথা ছিল আধঘণ্টা আগে। আমি খুবই উত্তেজিত, বার বার জানলা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখছি দাদু আসছে কিনা, ঘড়ির কাঁটায় যখন ঠিক ছ’টা বাজতে ৫ মিনিট বাকী, দাদু এসে পৌঁছল। আনন্দে আমি চেঁচিয়ে উঠলাম ‘দাদু’…..!” দাদু একবার ওপর দিকে তাকিয়েই গট্ গট্ করে ভেতরে চলে গেল। আমি প্রোগ্রাম আরম্ভ হওয়ার আগে দাদুকে বললাম বেশিক্ষণ একঘেয়ে ভাষণ দিও না। আমার কথা শুনে দাদু একটু হাসল। তারপর উদ্বোধনী ভাষণ দেওয়ার সময় ‘আমার নাতনি যূথিকা’ বলেছে লম্বা স্পীচ না দিতে তাই খুব ছোট করে বলছি’–আমি তো এত ‘এমবারাড’ হয়েছিলাম”—হাসতে হাসতে বলে কোয়েল।

পায়েল বলে, ‘দাদু না অনেক সময় ঠাকুরমার মত ব্যবহারও করে। ‘ঠাণ্ডা লাগবে’, ‘এটা পরো না’, ‘ঐ ড্রেস না পরাই ভাল’, ‘চিংড়ি মাছ খেয়ো না, পেট খারাপ হবে’—এই সব কত উপদেশ। একবার আমি হলদিয়া যাবার জন্য কলকাতা থেকে ‘সিলভার’ জেট সারভিসে যাব দাদুর সঙ্গে, দাদু আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিতে এসেছে, আমি গরমকালের উপযুক্ত একটা পোশাক পরেছিলাম, দাদু বলল ‘না, এ কি! ঠাণ্ডা লাগবে, অন্য একটা জামা পরো’–’দাদু, এটা জুন মাস, প্রচণ্ড গরম, আমার যদি এখন ঠাণ্ডা লাগে তাহলে বুঝতে হবে আমার শরীরেই কোনও গোলমাল আছে, প্লীজ,’–দাদু জোর করতে থাকে, ‘না না, ওখানে বেশ জোরে হাওয়া দেবে’। অগত্যা। আবার উঠে এসে আর একটা জামা চড়িয়ে তবে বেরোতে হল।”

“তবে দাদু কেমন হঠাৎ করে ফোন রেখে দেয়”, কোয়েল বলে, ‘বাই’ খুব কমই বলে’। বকে না আমাদের তবে একবার আমাকে খুব বকেছিল। আমার বুড়ো আঙুল চোষবার বদভ্যাসের জন্য। বেশ জোরেই বকেছিল, আমরা সবাই বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।”

ছোট নাতনী দোয়েলের (ভাল নাম বীথিকা) সঙ্গে বসু তার মত করে মেশেন। প্রায়ই বলেন “ওর পড়াশোনায় খুব মন। একদিন আমাকে বলল ‘দাদু বলতো বাংলায় আমি কত পেয়েছি?’——কত’? আমি জিজ্ঞেস করলাম— ও বলল ‘জিরো’, আমি ভাবলাম “তাহলে দাদুর মতই হয়েছে বাংলায়’, তারপরেই আমাকে চমকে দিয়ে খাতা দেখিয়ে বলল ‘এই দেখো ‘এক্সেলেন্ট’!” বসু খুব খুশী। বললেন, “দোয়েল আমাকে এত সুন্দর একটা প্রশ্ন করেছে আজ, এত ভাল লেগেছে। আমাকে ও জিজ্ঞেস করল, ‘দাদু তুমি যে কনভয় নিয়ে ট্রাফিক থামিয়ে রাস্তা দিয়ে যাও যদি কোনও ‘সিক’ (অসুস্থ) লোক থাকে কোনও অ্যাম্বুল্যান্সে বা অন্য কোনও গাড়িতে তো তারা কি করে?”—বসু বললেন, “এই প্রশ্ন আমাকে কেউ কখনও করেনি— ও ছোট্ট মেয়ে হয়ে এত ইমপর্টেন্ট এই প্রশ্নটা আমাকে করল!”

একদিন আলিপুর চিড়িয়াখানায় গেল দোয়েল দাদুর সঙ্গে। “দাদু–এত তাড়াতাড়ি হাঁটছিল যে পুলিসমেনরা প্রায় পেছন পেছন দৌড়চ্ছিল। দাদু আমাকে একটা ২৫০ বছর বয়সের কচ্ছপ দেখিয়েছিল, তার শক্ত খোলটা লোকে ঢিল মেরে অনেক জায়গায় ফাটিয়ে দিয়েছিল”—দোয়েল বলে। ঐ ২৫০ বছরের কাছিম দেখে বসুর নিজেরও খুব অদ্ভুত লেগেছিল। পরে আমাকে বলেছিলেন “এই কচ্ছপটা কি কাজ করেছে যে এত দীর্ঘদিন বেঁচে আছে! ব্যাপারটা এত ডিমরালাইজিং।”

বসু নিজে শৃঙ্খলাপরায়ণ মানুষ। ভদ্রতা তাঁর মজ্জাগত। রুসি মোদি যে বলেছেন “ভারতের রাজনীতিতে একমাত্র ভদ্রলোক” কথাটা মোটেই অসত্য নয়। সময় মহার্ঘ এ কথাটা যেমন নিজে বোঝেন তেমনি অন্যের সময়েরও সমান মূল্য দেন। এই জীবনী লেখার সময় একটা দিনও আমি মনে করতে পারি না যখন উনি আমার সুবিধা অসুবিধা জিজ্ঞেস না করে নিজের অমূল্য সময় আমাকে দিয়েছেন।

তাঁর জীবনের একটা বিশেষ ঘটনা থেকে বোঝা যায় তাঁর ক্ষেত্রে ভদ্রতা ব্যাপারটা নিছক আচরণবিধির ব্যাপার নয়, আন্তরিক জীবনচর্যার নীতি। তাঁর প্রাক্তন সহকর্মী যতীন চক্রবর্তীর সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্য নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো অযথাই নানা কথা লিখেছে। কিন্তু বসুর মনে কোনও জ্বালা ছিল না, প্রত্যাশাও তিনি করতে চান নি। তিনি কখনও ভোলেন নি যে যতীনবাবুই একদিন চন্দনকে এক বিরাট দুর্ঘটনা থেকে বাঁচিয়েছিলেন। চন্দনের তখন বছর এগার বয়স। বসু হিন্দুস্তান পার্কের বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলেন, চন্দন রাস্তা পার হচ্ছে এমন সময় ওপার থেকে অতিবেগে একটা গাড়ি এসে পড়ে। সেই মুহূর্তে হেঁচকা টানে গাড়ির সামনে থেকে চন্দনকে সরিয়ে নেন যতীনবাবু। বসু বার বার একথা বলেন “কি করে ভুলব উনি একবার চন্দনের জীবন বাঁচিয়েছিলেন, কি করে একটা মানুষকে আমি আঘাত করব যাঁর মেয়ে নির্মমভাবে মারা গেছে?” যখন যতীনবাবুর মেয়ে দিল্লীতে নৃশংসভাবে খুন হয়, তখন অন্য কেউ নয়, জ্যোতিবাবুই তাঁর বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানিয়েছিলেন। এটা বোধহয় নিছক ভদ্রতা নয়, প্রকৃত সহমর্মিতা না থাকলে এটা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হত না।

“জামাইবাবুর মানবিক গুণগুলোর কথা অনেকেই জানেন না”—বললেন মঞ্জুলা রায়, বসুর একমাত্র শ্যালিকা; স্ত্রী কমলের থেকে চোদ্দ বছরের ছোট বোন ‘খুকু’। বসুর বিয়ের সময় ‘খুকু’ ছিল দশ বছরের একটি ফুটফুটে মেয়ে। মঞ্জুলা বললেন, “জামাইবাবু যখন বিয়ের আগে দিদিকে দেখতে এসেছিলেন, দিদি আমাকে খানিকক্ষণ বাদে ঘর ছেড়ে চলে যেতে বলেছিল। দিদি ছিল আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে সবচেয়ে বড়, আমাদের কাছে দিদির কথা ছিল বেদবাক্য। দিদিকে আমরা খুব মানতাম। আমি দিদির কথা শুনে অনিচ্ছাসত্ত্বেও উঠে দাঁড়াচ্ছি এমন সময় জামাইবাবু বললেন ‘থাক্ না, ও এখানে থাক্ না’। সেই মুহূর্তে আমার এত ভাল লেগেছিল যে মনে হয়েছিল উনি যেন অচেনা কোনও মানুষ নন, আমাদের পরিবারেরই একজন। যাই হোক, আমি অবশ্য দিদির কথামত ঘর থেকে বেরিয়েই গিয়েছিলাম।”

মঞ্জুলা রায়কে সকলে জানেন ‘জ্যোতিবাবুর শ্যালিকা’ হিসেবে, কিন্তু মঞ্জুলা রায়ের নিজস্ব পরিচয়ের দ্যুতি কিছু কম নয়। অসামান্য সুন্দরী এই মহিলা ইংরেজি সাহিত্যে এম. এ., সাহিত্যানুরাগী এবং বিশিষ্ট সমাজসেবিকাও বটে। বিবাহসূত্রে অভিজাত রাজপরিবারের বধূ, স্বামী শ্রীজয়ন্ত রায়ও সফল, কৃতবিদ্য পুরুষ। মাদার টেরিজার স্নেহধন্যা শ্রীমতী রায় নীরবে অনাথ আতুরের সেবা করে চলেছেন। আচার আচরণে সুরুচির সুস্পষ্ট ছাপ। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। জামাইবাবুকে সুখে দুঃখে, উত্থানে পতনে আলোয় আঁধারে দেখে চলেছেন আজ দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে। পুরোনো দিনের সেই সব কথা ভোলা যায় না। মনটাকে প্রায় চার দশক পিছিয়ে দিয়ে বললেন : “জামাইবাবুর সেই কঠোর সংগ্রামের দিনগুলোর প্রত্যক্ষ সাক্ষী আমিও ছিলাম। রাজনীতিটা জামাইবাবুর কাছে যেন একটা ব্রত, একটা সাধনার মত ছিল। মুখে রুপোর চামচ নিয়ে জন্মেছিলেন কিন্তু অনায়াসে সব আরাম বিলাস ত্যাগ করেছিলেন। সে কাঠফাটা রোদই হোক বা মুষলধারে বৃষ্টি—যাই হোক না কেন, একটা ছাতাও নিতেন না, রোজ বাড়ি থেকে হেঁটে গিয়ে ট্রাম ধরে পার্টি অফিসে যেতেন। অনেক পরে পার্টি একটা গাড়ি দিয়েছিল। তা সে এমনই গাড়ি লোকে ঠাট্টা করে বলত- ‘অক্সফোর্ড কার’।”

স্ত্রী কমলের তিন ভাইবোন—খুকু, বিমল আর মুকুলের চোখে জামাইবাবু ছিলেন ‘হিরো’। “আমরাও জামাইবাবুর আদর্শে স্বপ্ন দেখতাম, আমি এক সময় স্বাধীনতা পত্রিকা বিক্রি করতাম, অনেক পার্টি মিটিং-এ যেতাম, জামাইবাবু যেভাবে সব বোঝাতেন আমরা সব ভাইবোন মুগ্ধ হয়ে যেতাম।—সেই সময় কমিউনিস্ট চিন্তাভাবনায় বিশ্বাসী লোকজন খুব বেশি ছিল না কিন্তু আশ্চর্যের কথা আমাদের আশেপাশের সবাই জামাইবাবুকে খুবই মান্য করত। কোনও সমস্যা হলেই তারা ‘জ্যোতিবাবু’ ‘জ্যোতিবাবু’ করত। যখন তখন আমাদের বাড়িতে এসে ওঁর খোঁজ করত। এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই, সমস্যা সমাধানে উনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত।”

প্রসঙ্গক্রমে পুরোনো দিনের মজার ঘটনার কথা বললেন মঞ্জুলা রায়। মঞ্জুলা তখন যাদবপুরে এম. এ. পড়ছেন। ডাকসাইটে রূপসী, তাঁর দিকে কলেজের ছেলেদের নজর দেওয়া খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু একদিন একটা বিশেষ ঘটনা ঘটল। “ক্লাস শেষ হয়ে গেছে, ক্লাসরুম থেকে বেরোতে যাব”, বললেন মঞ্জুলা, “এমন সময় দেখি একটা ছেলে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে, আমি তাকে চিনিও না, বলছে ‘আমি তোমাকে ভালবাসি…ইত্যাদি’, আমার তখন জয়ন্তর সঙ্গে বিয়েও ঠিক হয়ে গেছে; সে ছেলেটি বোধহয় একটু ইমব্যালান্সড্’ ছিল; নড়েও না সেখান থেকে, তারপর তো হৈ চৈ কাণ্ড, তাকে তো খুব মারধোর করা হল, যারা তাকে পিটিয়েছিল তার মধ্যে পরে কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী হয়েছিলেন কে. পি. সিং দেও-ও ছিলেন। আমি তো সোজা বাড়ি এসে জামাইবাবুর কাছে ঘটনাটা বললাম। জামাইবাবু তখন তোলপাড় শুরু করলেন, বিধানসভায় ডাঃ বিধান রায়কে বললেন—এটা কি আইন শৃংখলা? একটা ইউনিভার্সিটিতে ‘আউটসাইডার’ এইভাবে ঢুকে পড়ে কি করে! তারপর রেজিস্ট্রার আমাকে ডেকে পাঠালেন, জামাইবাবুর কথায় তখনকার, ভাইস চ্যান্সেলর বি. মল্লিক ইউনিভার্সিটির গেট বন্ধ করার হুকুম দিলেন, ছেলেটির বাবা এসে ক্ষমা চাইলেন—কত কাণ্ড! জামাইবাবু ব্যাপারটা নিজে হাতে মিটিয়েছিলেন, আর গেট বন্ধ হওয়ার ফলে খুব উপকারও হয়েছিল।”

“ঝগড়াঝাঁটি মিটিয়ে দেওয়ায় জামাইবাবুর জুড়ি নেই”, বললেন মঞ্জুলা, “কত লোকের দাম্পত্য কলহ যে জামাইবাবু মিটিয়েছেন তার ঠিক নেই। পার্টির ভেতরেই শুধু নয়, পার্টির বাইরেও অনেকের বিয়ে প্রায় ভেঙে যায় এমন অবস্থা, জামাইবাবু মধ্যস্থতা করে কথাবার্তা বলে বিয়ে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।” “আমার বিয়েও জামাইবাবু ঘটিয়ে দিয়েছিলেন”, বললেন মঞ্জুলা, “ওদিক থেকে একটু আপত্তি ছিল প্রথমে। আমার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা কেউ কমিউনিস্টও ছিলেন না তার ওপর আবার বনেদী রক্ষণশীল পরিবার। জামাইবাবু একদিন গেলেন আমার ভাবী শ্বশুরবাড়িতে, গুরুজনদের সঙ্গে কথাবার্তা বললেন—আর কি আশ্চর্য, যেন ম্যাজিকের মত সবাইয়ের মত পাল্টে গেল। সবাই যেন জামাইবাবুর ‘ফ্যান’ হয়ে গেল। এত সুন্দর কথা বলতে পারতেন, আর এত ধৈর্য ছিল। বিয়ে হয়ে গেল।”

“জামাইবাবু ততদিনে যেন আমাদের পরিবারের একটা ‘ফাদার ফিগারের মত’ হয়ে গেছেন। পরিবারের প্রতি এই গভীর দায়িত্ববোধের কথা খুব কম লোকেই জানেন। তখন উত্তাল রাজনীতি করছেন অথচ প্রাণপণে পরিবারের প্রতি কর্তব্য করার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন। ১৯৫৯ সালের ২৯শে জুলাই বাবা মারা গেলেন। দিদি হিন্দুস্তান পার্কে চলে গেল চিঙ্কুকে নিয়ে, আমার ছোড়দা তখন ইংল্যান্ডে। জামাইবাবুই ছিলেন আমাদের ‘পিলার’, ওঁর আর্থিক অবস্থা ছিল না কিন্তু মানসিক সাহায্য সমর্থন যেভাবে করেছেন তা কখনও ভোলার নয়। আমার মনে আছে যেদিন বাবাকে মেডিক্যাল কলেজে দেখে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলেন, মুখটা কালো থম্‌থম করছে, একটাও কথা বললেন না, গম্ভীর, বুঝলাম শেষটা কত আসন্ন বুঝতে পেরেছেন। মুখে অত বলতে পারেন না, মুখে সান্ত্বনা ঐভাবে দিতে পারেন না, কিন্তু দুঃখটা ভেতরে চেপেই অন্যের দুঃখটা ভাগ করে নিতে জানেন। এই তো গত বছর আমার মা চলে গেলেন—জামাইবাবু এলেন, কিরণদার সেই পুরোনো কথাটা “ময়না পাখি (আমার মার ডাক নাম ছিল ময়না) উড়ে গেল আর এল না—এমনভাবে বললেন যে আমাদের চোখের জল আর বাধা মানল না। জামাইবাবু বললেন “খুকু, সেই কত বছর আগে, তোমাদের বাড়িতে তোমার দিদিকে দেখতে গিয়ে তোমার মাকে যখন দেখেছিলাম কি যে ভাল লেগেছিল আমার’বুঝলাম মা চলে যাওয়াতে জামাইবাবুর কতটা আঘাত লেগেছে। আবার তার কয়েক মাস বাদেই আমার বড়দা সুবিমল চলে গেলেন, জামাইবাবু ওর অসুখের সময় দায়িত্ব নিয়ে চিকিৎসার যতরকম ভাল ব্যবস্থা করা সবই করে দিয়েছিলেন। উনি উদাসীন মানুষ নয়, পরিবারের প্রতিটি মানুষের প্রতি উনি ভীষণভাবে দায়িত্ব আর কর্তব্য-সচেতন। বাবা মারা যাওয়ার পর প্রতিটি সিদ্ধান্তে জামাইবাবুর অপরিহার্য ভূমিকা ছিল। জ্যোতির্ময় বসুর বাড়িতে আমরা এক সময় ভাড়া ছিলাম। আমার বিয়ের বাজারের সময়ও জামাইবাবু যখনই পেরেছেন সঙ্গে গেছেন—কি করে মিতব্যয়ে অনুষ্ঠান হয়—সব দিকে নজর ছিল।

আমার বিয়ে হয়ে গেল ১৯৬১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। বছরের শেষের দিকে আমরা ইংল্যান্ড চলে গেলাম। তখন জামাইবাবুর সময়টা খুব গোলমেলে। পুরো ষাটের দশকটাই খুব খারাপ কেটেছিল। জামাইবাবুও কখন কোথায় থাকতেন কোনও ঠিক নেই। আমরা হাওড়া স্টেশনে গেছি, তখন তো অন্যভাবে যাওয়া ছিল, হঠাৎ দেখি জামাইবাবু এসে হাজির, আমাদের “সি অফ’ করতে এসেছেন, পরনে ধুতির ওপর কোট, রোগা চেহারা, নিজের ওপর কত আক্রমণ চলছে, কিন্তু মুখে হাসি নিয়ে চলে এসেছেন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে। কত ভাল যে লেগেছিল তা বলার নয়, একটা ছবিও তোলা হয়েছিল সেই মুহূর্তটা ধরে রাখার জন্য।”

“বিয়ের আগে দিদির সঙ্গে কতবার বিধানসভায় গেছি, পার্টির জনসভায় গেছি। প্রায়ই খেতে যেতাম নানকিং-এ, চাইনীজ ফ্রায়েড রাইস খুব খাওয়া হত। আর যাওয়া হত পার্টি অফিসের কাছে ‘সিরাজ’-এর উল্টোদিকে একটা মুসলিম রেস্তোরাঁয়, নামটা ঠিক মনে পড়ছে না, সেখানে খাওয়া হত মাংসের চাপ আর রুটি।”

বসুর বাবা ছিলেন ডাক্তার। বাড়িতে বেশীরভাগই ‘হেল্থ্ ফুড’ তৈরি হত তাঁর নির্দেশে—রুই বা মাগুর মাছের জলের মত পাতলা ঝোল আর গলা ভাত। বসু খেতেন কাঁটা চামচ দিয়ে। মাঝে মাঝে মুর্গী মেরে ঝুলিয়ে রাখা হত খানিকক্ষণ, তারপরে কাটাকুটি করে রান্না করা হত।

বসুর পছন্দ ছিল মাংস। খেতে ভালবাসতেন কিমার পুর দেওয়া আলুর পাতলা আস্তরণে মোড়া বড় চপ। “আমরা আর একটা জায়গাতেও যেতাম ‘ম্যাগনোলিয়া,’ সেখানে প্যাট্রিসিয়া বলে একটি মেয়ে গান করত, আমাদের বেশ লাগত। জামাইবাবু টম্যাটো স্যুপ খেতে খুব ভালবাসতেন। আর দেখতাম বেছে বেছে বেশ একটা নতুন কিছু বা অদ্ভুত জিনিস অর্ডার দিতেন—যেমন একদিন বললেন, এই ‘হ্যামবার্গারটা’ খাব—এখনকার মত দেশে তখন ‘হ্যামবার্গারের অত ছড়াছড়ি ছিল না। আমার কাছে জিনিসটা বেশ নতুন লেগেছিল।”

“জামাইবাবুর কাছে কত কি যে শিখেছি তার শেষ নেই” অকপটে স্বীকার করেন মঞ্জুলা। “যখন ছোট ছিলাম, তখন শেখাতেন ‘ম্যানার্স’, ভাল ইংরেজি এইসব। আমার বয়স অল্প ছিল, অনেক সময় হয়তো কিছু মুখের ওপর রেগে কট্‌ট্ করে বলেই দিলাম—জামাইবাবু কিন্তু কোনও উত্তর দিতেন না, চুপ করে থাকতেন, মুখটা কালো হয়ে যেত। দিদি আমার ওপর রাগ করত, ‘কেন এমন বলিস’। “আর একদিকে মানুষটা এত সরল শুনলে কেউ হয়তো বিশ্বাসই করবে না। রাজনীতির প্যাঁচ বোঝেন বটে কিন্তু ওঁর মধ্যে একটা অদ্ভুত মানবিক সারল্য আছে। তাছাড়া মনের মধ্যে কোনও রাগ বা ক্ষোভও জামাইবাবু পুষে রাখেন না”, জানালেন মঞ্জুলা, “যাঁরা হয়তো ওঁর সঙ্গে তেমন ভাল আচরণ করেনি, কিন্তু উনি তাদের প্রয়োজনে সাহায্য করতে দ্বিধা করেন নি।”

বিয়ের পর মঞ্জুলা এবং তাঁর স্বামী জয়ন্ত রায় দুজনেই বসু-দম্পতির সঙ্গে অনেক জায়গায় দেশে বিদেশে ছুটি কাটিয়েছেন। গেছেন কাশ্মীরে, থেকেছেন শেখ আবদুল্লার অতিথি হয়ে, গেছেন সোভিয়েত ইউনিয়নে, ভুটানে, বাংলাদেশে। “ছুটিতে থাকার সময় দেখেছি আমরা হয়তো কথাবার্তা বলছি, জামাইবাবু একটু তফাতে এক মনে বই পড়ে চলেছেন। ছুটিতে বইপড়াটা ওঁর নেশা।” ১৯৬৮ সালে হরকিষেণ সিং সুরজিতের জলন্ধরের খামারবাড়ির কথাও মঞ্জুলার বেশ ভাল মনে আছে, “দেখলাম পার্টির মানুষগুলো যেন সব অন্য মানুষ হয়ে গেল প্রকৃতির ঐ খোলামেলা পরিবেশে—খুব আনন্দ হয়েছিল। জামাইবাবুর আর একটা অভ্যাস, ছুটির সময় কাউকে কোনো ব্যাপারে মন ভারী করতে দেন না। নিজেও যেন বিস্ময়করভাবে পারেন মনটার ‘সুইচ-অন’ আর ‘সুইচ-অফ্’ করে দিতে। একবার আমরা কালিম্পঙে লাভা গেস্ট হাউসে ছিলাম। রাতের খাওয়া চলছে এমন সময় একটা ফোন এল কলকাতা থেকে—খারাপ খবর, কসবায় একজন পুলিস খুন হয়েছে। জামাইবাবুর মুখে চিন্তার ছাপ, বোঝা গেল খুবই উদ্বিগ্ন। সারা ঘরে তখন অখণ্ড নীরবতা। আমরা খাওয়া থামিয়ে দিয়েছি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই জামাইবাবু যেন কি রকম ‘সুইচ্ অফ’ করে দিলেন, হঠাৎ আমাদের পুরোনো কথা বলতে শুরু করলেন—জয়ন্ত আমাকে পরে বলল ‘দেখলে কেমন আস্তে আস্তে আমাদের মনটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন’।”

১৯৮২ সালের অসুস্থতার পর বেশ কিছুদিন বসু শ্যালিকার বাড়ি দুপুরের খাওয়াটা সারতেন। “দুপুরের খাওয়া সেরে, খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার কাঁটায় কাঁটায় তিনটেয় কাজে বেরোবার জন্য তৈরি। আমায় বলতেন ‘যদি না উঠি তো ঠিক সময়ে ডেকে দিও’—কিন্তু কোনওদিনই আমাকে ডাকতে হয়নি, নির্দিষ্ট সময়ের আগে জামাইবাবু নিজেই উঠে তৈরি হয়ে থাকতেন, ঠিক যেন মেশিন। একদিন ব্যতিক্রম হয়েছিল। প্রায় আড়াইটা নাগাদ আমার ফোন বাজল, পার্টি অফিস থেকে বলছে, ‘জ্যোতিবাবুকে চাই’, আমি বললাম, ‘উনি এখন একটু বিশ্রাম করছেন’, ওরা জোর করলেন, বললেন, ‘প্রমোদবাবু মারা গেছেন, ওঁকে এক্ষুনি আসতে হবে’। আমি তো তক্ষুণি জামাইবাবুকে ডেকে দিলাম, উনি এমন শক্ পেলেন, বার বার বলতে থাকেন, ‘খুকু, কি খারাপ খবরটাই না তুমি দিলে!’ বলতে বলতে তক্ষুণি বেরিয়ে গেলেন।

মঞ্জুলা বললেন “যারা জামাইবাবুকে খুব কাছ থেকে অনেকদিন দেখেছেন তাঁরা জানেন এমন হৃদয়বান কর্তব্যপরায়ণ মানুষ আর হয় না।” জামাইবাবুর জীবনচর্যার অনেক অমূল্য শিক্ষাই মঞ্জুলা রায় নিজের জীবনে সার্থকভাবে গ্রহণ করেছেন—তাঁর নিজের নিখুঁত সময় জ্ঞান, সুভদ্র, মার্জিত আচরণে আর দরদী মনে তাঁর জামাইবাবুরই সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

“সবচেয়ে বড় কথা”, মঞ্জুলা বলেন, “জামাইবাবু আকাশ ছুঁতে পারেন ঠিকই কিন্তু ওঁর পা দুটো থাকে মাটিতে।”

আরও বড় কথা হল বসু কিন্তু আদৌ ‘মেইল শভিনিস্টদের দলে পড়েন না। ছেলে- মেয়ের মধ্যে সীমারেখা টেনে ভাবনা চিন্তা করতে তিনি কোনওদিনই অভ্যস্ত নন। এ প্রসঙ্গে বসু বললেন “বাবা আমার মধ্যে একটা কড়া শৃঙ্খলার মনোভাব ডেভেলপ করিয়ে দিয়েছিলেন; বিশেষ করে, ইংল্যান্ড যাওয়ার আগে। একটা আটকোণা ছোট টেবিল ছিল আমাদের বাড়িতে, বিলেত যাবার আগে ঐ টেবিলে আমরা মুখোমুখি বসেছিলাম, সেখানে বসে বাবা আমাকে বার বার বলেছিলেন ‘দেখো, সাদা চামড়া দেখে যেন মেমসাহেব পছন্দ করে বসো না।’ আসলে পরিস্থিতিই আমার অনুভূতি গড়েছিল। ইংল্যান্ডে প্রথম কয়েক মাস তো দারুণ মন খারাপ ছিল, বাইরের জগতের দিকে তাকাব এরকম মনের ভাবই ছিল না। আর যখন চোখ মেলতে শুরু করলাম তখন চোখে লাগল সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন। বিশ্বাস কর আর নাই কর, সেটা একটা নেশার মত ছিল। এই দেশের ভাল, রাজনীতিই আমার তখন ধ্যানজ্ঞান হয়ে দাঁড়াল। আমার অনেক বন্ধুবান্ধবই ইংরেজ মেয়েদের সঙ্গে প্রেম করল, অনেকে তাদের বিয়েও করল। আমার মনটা

খোলামেলাই রেখেছিলাম কিন্তু সেখানে তখন রাজনীতিই পুরো জুড়ে বসেছে।”

মেয়েদের প্রতি বসুর দৃষ্টিভঙ্গি প্রগতিশীল। উনি বিশ্বাস করেন মেয়েদের মধ্যে সম্ভাবনা ও শক্তি ছেলেদের থেকে অনেক বেশি। মেয়েদের অধিকার সম্বন্ধে হিন্দু মুসলিম আইনের ভাল দিক মন্দ দিক স্বচ্ছভাবে বুঝিয়ে দিতে পারেন। বসুর মতে একজন আদর্শ মহিলার কি কি গুণ থাকা উচিত?

“সাহস, বুদ্ধি, উদ্যোগ এবং নিজের দেশ ও সমাজের প্রতি দায়বোধ”- জানালেন বসু।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *