১৬. বন্ধু, বৈরী, কমরেড, পত্রকার

১৬. বন্ধু, বৈরী, কমরেড, পত্রকার

“না, আমার তেমন কোনও ঘনিষ্ঠ বন্ধু নেই”, বসুর এই অকপট উক্তির মধ্যে ক্ষোভের লেশমাত্র ছিল না। “সফল হওয়ার জন্য বন্ধুর প্রয়োজন হয়, আর অধিক সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজন শত্রুর”—বসুর রাজনৈতিক জীবন এই বহুপ্রচলিত প্রবাদবাক্যের জীবন্ত দৃষ্টান্ত। বসু বললেন, “আমি সাধারণ মানুষের সঙ্গে, সাধারণ মানুষের মধ্যে কাজকর্ম করেছি, কিন্তু সেই অর্থে প্রকৃত ঘনিষ্ঠতা বা বন্ধুত্ব আমার তেমন কারো সঙ্গে হয়ে ওঠেনি। আমি যখন স্কুলে পড়তাম, মা আমাকে খুব বকাবকি করতেন, আমি কারো সঙ্গে মিশি না বলে, বাড়িতে কেউ এলে হয়ত ঘরের মধ্যেই থাকতাম, বেরোতে চাইতাম না, মা বকতেন।” বড় পরিবারে বসু ছোটদের কাছে ছিলেন ‘দাদামণি’—শান্ত, বুদ্ধিমান, চুপচাপ, ভালমানুষ এক দাদা। খেলাধূলা, গল্পগুজব সবই চলত তবে বসু যেন সব ভাই বোনদের মধ্যে থেকেও ছিলেন অন্তর্মুখী স্বভাবের। বেশির ভাগ সময়েই বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকতেন।

কলেজজীবনে স্বভাবের তেমন কোনও পরিবর্তন হল না। বন্ধুবান্ধব হল, বাড়িতে বন্ধুদের অনেককেই নিয়ে আসতেন, কখনও কখনও বাবার চেম্বারেও নিয়ে যেতেন। কিন্তু বিতর্কসভায় যোগ দেওয়া অথবা পত্রপত্রিকায় লেখা দেওয়া অথবা দল বেঁধে কোথাও যাওয়া বা আড্ডামারা তাঁর স্বভাবে ছিল না। বরং ফুটপাথের বইয়ের দোকানে ঘোরা বা শ্মশানে গিয়ে একা চুপচাপ বসে থাকাটাই বেশি পছন্দ ছিল। “কলেজজীবনে জ্যোতি ছিল খুব শান্ত আর ইনট্রোভার্ট প্রকৃতির”—বললেন বসুর প্রেসিডেন্সী কলেজের ইংরেজি অনার্স ক্লাসের সহপাঠী জাস্টিস শিশির মুখার্জি। “তবে সব রকম খেলায় তার খুব উৎসাহ ছিল আর নিজের মত করে সামাজিকতা রক্ষা করত, ভদ্রতাবোধ খুবই ছিল।” বসুর সে সময় ব্যাডমিন্টন, ফুটবল, টেনিস সব খেলাই খেলার অভ্যাস ছিল। সাঁতার কাটারও অভ্যাসও ছিল। “আমাদের ছেলেবেলায় পাড়ার ছেলেদের ক্লাবে ভাল খেলাটেলা হত” বসু বললেন। বসুকে যাঁরা খুব কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে দেখেছেন তাঁরা জানেন বসু কত উষ্ণ আর কত সামাজিক মানুষ। স্ত্রী কমল বসুর কথায় “গল্প করতে ভালবাসেন, মনের মত লোকের সঙ্গে গল্পও করেন, ভদ্র রুচিবান মানুষের আড্ডা পছন্দ করেন। পছন্দ না হলে একদম চুপচাপ। সাধারণত ৫/৭ মিনিটের বেশি কথাও বলবেন না, পছন্দ হলে কিন্তু বেশ কথা বলবেন।”

লন্ডনের খোলা জানলা দিয়ে যেন এক ঝলক তাজা বাতাস এল। কত বিচিত্ৰ মানুষের সঙ্গে চেনাশোনা হতে শুরু করল। দেশে বাবা মা পরিবারের ভাইবোনকে ছেড়ে কখনও থাকেন নি। ধীরে ধীরে মন বসে যাওয়ার পর মানুষজনই দেখতে শুরু করলেন। তারপর আলাপ পরিচয় এবং অবশেষে বন্ধুত্ব। বসুর বন্ধুত্বের নিজস্ব সংজ্ঞা যাই হোক না কেন, যাঁরা তখন তাঁর বন্ধু হয়েছিলেন তাঁদের সকলেরই সে সময় একটা অভিন্ন আদর্শের বন্ধন ছিল। “আসলে সেটা ছিল সমাজতান্ত্রিক আদর্শের বন্ধুত্ব” বসু বললেন। গ্রীষ্মের ছুটিতে বন্ধুদের সঙ্গে যেতেন ইংল্যান্ডের বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে, কখনও বা ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে প্যারিস শহরে। এখন আর বসুর সেই সব বন্ধুদের সকলের নাম মনে পড়ে না, মনে আছে সতীজীবন দাসের কথা, বীরেন গুপ্তর কথা, কলেজজীবনের শৈলজা আর শিশিরের কথা। কলেজে যে মুসলমান সহপাঠীর পাশে বসতেন সেই রহমানকেও মনে আছে। ইংল্যান্ডে দুজনের সঙ্গে আলাপ পরিচয় পরিণতি পেয়েছিল আজীবন বন্ধুত্বে—এই বিশেষ দুজন হলেন স্নেহাংশু আচার্য এবং ভূপেশ গুপ্ত। স্নেহাংশু আচার্য ছিলেন খোলামেলা দরাজ মনের হাস্যরসিক মানুষ, তাঁর জীবনের শেষদিন পর্যন্ত দুজনের বন্ধুত্ব অটুট ছিল। তিনি মারা যাওয়ার পর বসুর বন্ধুত্বের ছোট্ট দুনিয়াটা একেবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল।

এখন বসু নিজে বন্ধুত্ব সম্বন্ধে যথেষ্ট ‘সিনিক্যাল’। তাঁর মনে হয় ‘বন্ধু’ কথাটা এখন যথেষ্ট শিথিলভাবে ব্যবহার করা হয়। প্রকৃত বন্ধুত্ব বলতে তিনি বোঝেন স্বার্থ সম্পর্করহিত আন্তরিক দায়িত্বশীল এবং সহৃদয় এক সম্পর্ক। এখনকার যুগে এটা “ডাইনোসরের মতই এক্সটিংকট”। আর ‘শত্রু’? রাজনীতিতে তো বন্ধুত্ব স্থায়ী হয় না, শত্রুই বেশি—এর জবাবে বসু বললেন “আমি ঠিক শত্ৰু’ কথাটা ব্যবহার করতে চাই না, বরং তাদের ‘ডিসিডেন্ট’ বা ‘বিক্ষুব্ধ’ বলা যেতে পারে, আমার ব্যক্তিগত শত্রুতা কারো সঙ্গে নেই, তবে সেই অর্থে ধনতন্ত্রের বাহকরা আমার শত্রু বই কি!”

আসলে বসুর অভিধানে ‘বন্ধু’ ও ‘বৈরী’র মধ্যে সীমারেখাটা খুবই ক্ষীণ। বসুর কাছে রাজনীতিই মুখ্য বিবেচ্য, জনস্বার্থই তাঁর প্রথম ‘প্রায়রিটি’। যদি অন্যায় না হয় এবং জনস্বার্থ বিঘ্নিত হবার সম্ভাবনা থাকে তাহলে ‘বৈরী’র দিকে ‘বন্ধু’র হাত বাড়ানোর মত নমনীয়তা বসু রাখেন। “আমাদের পার্টিতে কতবার কত ক্রাইসিস হয়েছে, কত বিদ্রোহী, কত বিক্ষুব্ধ দেখেছি, কিন্তু আমি সব সময়ই চেষ্টা করেছি ব্যাপারটা মিটিয়ে দিতে। কাউকে না কাউকে তো ঝগড়া মেটাতে হবে। ক্ষমা করতেও শেখা উচিত।” রাজনৈতিক পার্থক্য প্রভেদ সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে স্বাভাবিক বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করতেও বসুর জুড়ি নেই। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের সঙ্গে বসুর এই রকম সম্পর্কই ছিল। বাংলাদেশে মুক্তি-যুদ্ধের সময় ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে জরুরী সাক্ষাৎকারের সময় সিদ্ধার্থশংকর রায়ই তাঁকে গাড়ি করে গভীর রাতে দিল্লীতে ইন্দিরা গান্ধীর বাড়ি পৌঁছে দেন। উপকার বসু মনে রাখেন কিন্তু মিথ্যা বা অন্যায় কথার প্রতিবাদ করতে ছাড়েন না। নির্বাচনী প্রচারের সময় সিদ্ধার্থশংকর রায় বসুকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে শুরু করেন, কিন্তু প্রকাশ্যে প্রত্যাঘাত করাটা বসুর রুচিবিরুদ্ধ, দুঃখিত বোধ করলেও বসু অপপ্রচারের রাস্তা নেন না।

“শত্রুকে জিনে নাও—যদি রাজনৈতিক সুবিধা হয়”—বসুর রাজনৈতিক জীবনে একাধিকবার তিনি এই নীতি বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছেন। ১৯৬৭ সালে প্রথম যখন পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস দল জোর ধাক্কা খেল তখন, সেই ১৯৪৬ সাল থেকে বসুর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হুমায়ুন কবীর বসুকে টেলিফোন করে কংগ্রেসবিরোধী একটা ফ্রন্ট করার অনুরোধ জানান। বসু সেই প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে বসু বললেন, “সেটাকে কমপ্রোমাইজ বা মানিয়ে নেওয়া যাই বলা হোক না কেন, আমার সেদিন আর অন্য কোনও উপায় ছিল না, কারণ তা না হলে অ্যান্টি-কংগ্রেস জোট ভেঙে যেত।”

রাজনৈতিক বিরোধী শিবিরের মানুষের প্রতিও বসুর ব্যক্তিগত বৈরী মনোভাব নেই। ইন্দিরা গান্ধীর রাজনীতির তীব্র সমালোচনা করলেও ইন্দিরা যখন মর্মান্তিকভাবে নিহত হন, বসু গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছিলেন। আসলে তিনি যে কোনও মানুষকেই দু’ভাবে বিচার করার ক্ষমতা রাখেন, তাঁর ব্যক্তিগত মূল্যায়নে রাজনীতির প্রভাব পড়তে দেন না।

বসুর চরিত্রের একটা বৈশিষ্ট্য হল তিনি প্রতিশোধের রাজনীতিতে একেবারেই বিশ্বাসী নন। বসুর বন্ধু, শত্রু, কমরেড এ বিষয়ে সকলেই একমত। ন্যায়বিচার আর প্রতিশোধ তাঁর কাছে সমার্থক নয়। তিনি অন্যায়, অবিচার, অসম্মান কোনটাই ভোলেন না কিন্তু হিসাবনিকাশ চুকিয়ে নেবার কোনও প্রবণতাও তাঁর মধ্যে নেই। বর্তমান ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের মত ‘সহবৎ শেখানো’র কূট ইচ্ছা তিনি কখনই পোষণ করেন নি। তবে ক্ষমা করে দিলেও, আঘাত ভুলতে তিনি রাজি নন।

“জ্যোতিবাবুর ছিল অসীম সাহস। যখন বিরোধী নেতা ছিলেন তখন সে সাহসের নমুনা আমরা অনেকবার দেখেছি, অনেক কমরেডই ছিলেন কিন্তু কংগ্রেসের দুর্গ তিনি একাই ভাঙার চেষ্টা করেছেন বললে ভুল বলা হয় না”, বললেন, অশীতিপর কমিউনিস্ট নেতা এবং দীর্ঘদিন বসুর সহকর্মী, পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গের ভূমি ও ভূমিসংস্কারমন্ত্রী বিনয় চৌধুরী। তিনি বললেন, “জ্যোতিবাবুর প্রধান গুণ হল ‘হর্স সেন্স’, প্রখর বাস্তববুদ্ধি। উনি ই. এম. এস. বা রণদিভের মত তাত্ত্বিক নেতা নন। তাঁর বাস্তব জ্ঞানই তাঁকে এতদূর এগিয়ে দিতে সাহায্য করেছে।”

একই কথা জানালেন শৈলেন দাশগুপ্ত, সি. পি. আই. (এম)-এর রাজ্য কমিটির রাজ্য সম্পাদক। শৈলেনবাবু ১৯৪৮ থেকে বসুর সঙ্গে আছেন। তিনিও বসুর সাহসের কথা বললেন, আরও বললেন আরাম বিলাসের প্রতি বসুর ঔদাসিন্যের কথা। “সে অনেকদিন আগেকার কথা; তখন জ্যোতিবাবু ঢাকুরিয়া ব্রীজের কাছে, ঐ সি. আই. টি-র কাছে ওঁর শ্বশুরবাড়িতে কখনও কখনও থাকতেন। অনেক সময় আমি সেখানে যেতাম, পার্টির কাজকর্ম থাকত। আমরা প্রায়ই গড়িয়াহাট রোড পর্যন্ত হেঁটে এসে ট্রাম ধরতাম পার্টি অফিসে যাব বলে। কোনও কোনও দিন কমল বৌদিও আমাদের সঙ্গে ট্রাম স্টপ পর্যন্ত হেঁটে আসতেন। আমার মনে আছে একদিন বৌদি ফুটপাতে এক ফেরিওয়ালার কাছে একটা সামান্য জিনিস দর করছিলেন— জ্যোতিবাবু বললেন, ‘গরীব মানুষ, সামান্য জিনিস বেচছে, কি আবার দর করছ ওর সঙ্গে?’ বসুর সঙ্গী আর একজন কমরেড জানালেন “অনেকে এখন বলেন জ্যোতিবাবু বদলে গেছেন। কথাটার সত্যি কোনও মানে হয় না, আমরা সকলে কি বদলাইনি? সেই তিন দশক আগে আমরা যা ছিলাম, আমরা কি এখনও তাই আছি?”

“আমি জ্যোতিবাবুকে কোনও কঠিন মুহূর্তে কখনও অস্থির হতে দেখিনি, ওঁর অসাধারণ উপস্থিত বুদ্ধি আছে”,—বললেন বিমান বসু, সি. পি. আই. (এম) কেন্দ্রীয় কমিটির এক প্রবীণ সদস্য। ষাটের দশকের মধ্যভাগে যখন বিমানবাবু ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তখন জ্যোতিবাবুর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। প্রথমে দেখেছিলেন বক্তা হিসেবে, পরে দেখা করেছিলেন ছাত্র-রাজনীতির নানা বাস্তব সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার জন্য, তখন জ্যোতিবাবু ছিলেন মনোযোগী শ্রোতা। পরবর্তীকালে বহু জায়গায় একসঙ্গে গেছেন, একসঙ্গে থেকেছেন, সেই সময় বিমান বসু আবিষ্কার করেছেন অন্য জ্যোতি বসুকে, নিসর্গ সৌন্দর্যের পূজারী জ্যোতি বসুকে। “আমার একটা বিশেষ দৃশ্য এখনও মনে আছে,” বললেন বিমান বসু, “আমরা বাঁকুড়ায় এক বাংলোয় ছিলাম। সূর্যাস্তের পর জ্যোতিবাবু বাংলোর বাইরে বসতেন, মনে হত প্রকৃতির দৃশ্য যেন চোখ দিয়ে নয়, মন প্রাণ দিয়ে ভেতরে নিচ্ছেন। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়েও দেখেছি জ্যোতিবাবু সারকিট হাউসের বাইরে অসীম নৈঃশব্দের মধ্যে চুপচাপ বসে আছেন। অনেক সময় বেশ রাত পর্যন্ত, বাইরে হিম পড়ছে, বসে আদিবাসীদের নাচ দেখছেন। আর ছোট শিশু যে এত ভালবাসেন তা না দেখলে বোধহয় কেউ বিশ্বাস করবে না। গ্রামের লোকের সঙ্গে কথা নিজের মত করে বলছেন, ছোট বাচ্চাদের আদর করছেন—সেও কতবার দেখেছি। আর একটা ঘটনা মনে পড়ছে। সেটা বোধহয় ১৯৭৭ সাল, নির্বাচনের প্রচার চলছে, আমরা পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে একটা ছোট বাড়িতে আছি। প্ৰাক্তন ডেপুটি চীফ মিনিস্টার হিসেবে উনি অনায়াসেই সারকিট হাউসে থাকতে পারতেন, কিন্তু থাকেন নি। আর যেখানে তিনি ছিলেন সেখানে থাকাটা রীতিমত কষ্টকর ছিল। কিন্তু উনি কোনওভাবেই সেটা জানতে দেন নি। তখন সাংঘাতিক গরম। তার ওপর বাড়িটায় জলের খুব টানাটানি। জ্যোতিবাবু গরমে রোদের মধ্যে বালতি করে জল টেনে এনে স্নান করলেন, দেখলাম রোদে মুখ লাল হয়ে গেছে, ওঁর অবশ্য কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই, দিব্যি স্নানটান সেরে নিলেন।”

“কমরেডদের ব্যাপারে জ্যোতিবাবু বরাবর খুবই ‘প্রটেকটিভ্’—”মন্তব্য করলেন অনিল বিশ্বাস, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং পার্টির মুখপত্র ‘গণশক্তি’র সম্পাদক। শ্রীবিশ্বাস বললেন, “আমি জ্যোতিবাবুকে প্রথম দেখি ১৯৬৩ সালে পার্টি অফিসে। কিন্তু আমার সঙ্গে ওঁর প্রকৃত পরিচয় হয় প্রেসিডেন্সি জেলে। আমি অ্যারেস্ট হয়েছিলাম, আমাকে রাখা হয়েছিল ‘ছোকরা ফাইল-এ’, পুলিসী ভাষায় জেলের ‘ছোকরা ফাইল’ হল যত পকেটমার আর খুচরো অপরাধীদের রাখার জায়গা। আমি তখন খুব রোগা, প্রায় ছোট্ট ছেলের মত দেখতে তাই আমাকে ওরা ঐ সেলে চালান করে দিয়েছিল। আমি তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে এম. এ. পড়ি। জ্যোতিবাবুও তখন ঐ জেলে। ডিফেন্স অব্ ইন্ডিয়া অ্যাক্টে অ্যারেস্ট হয়ে উনি ছিলেন জেলের ১১নং ঘরে। যখন বসু আমার দুরবস্থার কথা জানতে পারলেন তক্ষুণি উনি জেল সুপারিনটেণ্ডে-এর অফিসে গিয়ে বেশ রাগারাগি করেই বললেন, “একটা এম. এ. ক্লাসের ছাত্রকে আপনি ঐ ছোকরা ফাইলে রেখেছেন! ওকে সাধারণ রাজনৈতিক বন্দীদের মত ভাববেন না!” তারপর আমার দিকে ফিরে বললেন “এবার তোমার মুস্কিল হল! সামনে পরীক্ষা, আর পরীক্ষাও তো দিতে হবে। যাও এখন স্নানটান করে মাছের ঝোল ভাত খেয়ে একটা ঘুম দাও।” আবার জেল সুপারকে বললেন, “দেখবেন, ওর বইটই আনানোর ব্যবস্থা করে দেবেন, ওকে পরীক্ষা দিতে হবে।” এখানেই শেষ নয়। একদিন আমি ওপেনহাইমারের আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ক বইটা পেলাম, দেখি বইটা সরকারের স্পেশাল অফিসার ভাল করে সেন্সর করেছে। আসলে সেই অফিসার বইটা পড়ে কিছুই বুঝতে পারেনি, একটা ডিকশনারি নিয়ে মানেটানে দেখেও বোঝেনি, অতি সাবধানী হয়ে ‘পাইরেসির’ ওপর একটা অধ্যায় পুরো কেটে দিয়েছে। জ্যোতিবাবু একথা শুনে খুব রেগে গিয়েছিলেন, রীতিমত চেঁচামেচি করে ওদের ইংরেজিতে বলেছিলেন ‘আর কতদিন তোমরা এই সব চালাবে, যত অজ্ঞ নির্বোধের দল।’ “জ্যোতিবাবু মানুষের সঙ্গে খুব ভাল যোগাযোগ করতে পারেন আর তাদের সমস্যাটা কোথায় সেটাও চট্ করে ধরে ফেলেন”—বললেন শ্রীঅনিল বিশ্বাস। “১৯৬৬ সালে জেল থেকে বেরিয়েই জ্যোতিবাবু পার্টির কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। উনি সব সময় বিষয়টার একেবারে ভেতরে যেতেন। আমার এখনও ঠিক স্পষ্ট মনে আছে সেই সময় সে নির্বাচনই হোক বা গণআন্দোলনই হোক, বসু যেখানে কাজ করতেন, বা যে জায়গার দায়িত্ব নিতেন সেখানকার প্রতিটি থানায়, প্রতিটি জেলায় নিজে ব্যক্তিগতভাবে যেতেন। আর সব সময় পার্টি কমরেডের বাড়িতে থাকতেন যাতে সঠিক খবরাখবর পান। করিমপুরে একবার অনেকেই তাঁকে বলল যে আমাদের পার্টি দশ হাজার ভোটে জিতে যাবে। কিন্তু জ্যোতিবাবুর মনে সংশয় দেখা দিল। উনি আমার বাড়িতে রইলেন আর এ ব্যাপারে আমার দাদার মতটা জানতে চাইলেন। আমার দাদা ছিলেন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক মানুষ, তাঁর মতটাকেও তিনি খুব গুরুত্ব দিলেন। দাদা জ্যোতিবাবুকে বলল, ‘এখানে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নলিনাক্ষ সান্যাল একটা কলেজ ওখানে করে দিয়েছে, তার জেতার খুবই সম্ভাবনা, আমাদের পার্টি সম্ভবত হেরেই যাবে তবে মার্জিনটা কম হবে।’ এই অভিমত সঠিক প্রমাণিত হল—আমরা দু’হাজার ভোটে হারলাম। জ্যোতিবাবু স্থানীয় লোকদের কাছে, অরাজনৈতিক মানুষের কাছে শুনতে চাইতেন, ওঁর মতে সত্য যাচাই করার সেটাই হল সঠিক উপায়” বলেন শ্রীবিশ্বাস।

“ওঁর সবচেয়ে বড় গুণ হল কমরেডদের ভালমন্দের খেয়াল রাখা” বললেন অনিলবাবু, “কারো অসুখ শুনলে হাজারবার জিজ্ঞেস করবেন কেমন আছে, আমি কোনওদিন তাঁকে ‘বড়’ কমরেড আর ‘ছোট’ কমরেডদের মধ্যে এতটুকু পার্থক্য করতে দেখিনি। জেলে দেখেছি আমাদের মন ভাল করার জন্য ক্রিকেট টীম করতে। মাঠে নিয়মিত ক্রিকেট খেলা হত, উনি হতেন ক্যাপটেন। সারাদিন বই পড়তেন, খুব দ্রুত বই পড়তে পারেন জ্যোতিবাবু। একবার আমাদের এক কমরেড কানাই পালকে শারীরিক কারণে ডাক্তার টাটকা মাছ খাবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তার ভাগে একদিন পড়ল পচা মাছ। জ্যোতিবাবু সঙ্গে সঙ্গে বললেন “চলো, আমরা জেলের পুকুরে মাছ ধরি, টাটকা মাছ রাঁধা যাবে, আমরা তো আর জেলের আইন ভাঙছি না?—”

অনিলবাবু বসুর সঙ্গে বিদেশে গেছেন বেশ কয়েকবার—চীন, থাইল্যান্ড, উত্তর কোরিয়া—এই সব দেশে। “সেখানে জ্যোতিবাবু একেবারে অন্য মানুষ। ঠাণ্ডা লাগিও না’, ‘এটা খাও, খেয়ে দেখো,’ ‘চলো ঐ জায়গাটা দেখে আসি’ ‘এই জামাটা মেয়ের জন্য কেনো না’, ‘তোমার স্ত্রীর জন্য এটা কিনলে কেমন হয়’—আসলে ভেতরে ভেতরে উনি অত্যন্ত স্নেহপরায়ণ একজন মানুষ।”

বসুর বন্ধু, কিংবা সমালোচক কমরেডদের অনেকের সঙ্গেই অনেক কথা বলতে হয়েছে। বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে এই জীবনীকারের। সাক্ষাৎকারের পর একটা কথা বার বার মনে হয়েছে—এঁদের প্রত্যেকের সম্পর্কে বসুর নিজের মূল্যায়ন যে কতটা সঠিক তা এঁদের সঙ্গে কথা না বললে কখনই বোঝা যেত না। “এত ঠিক ঠিক বিচার করেন কিভাবে, কিভাবে প্রতিটি মানুষকে এত স্বচ্ছভাবে দেখতে পান?” –বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করেছিলাম।

“এই অন্তর্দৃষ্টির জন্য দরকার ষাট বছরের রাজনীতির অভিজ্ঞতা।”—চলদি জবাব দেন বসু।

সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে বসুর সম্পর্কটা আস্থা-অনাস্থার। রাজ্যের বাইরের গণমাধ্যমে বসুর যতটা অগাধ আস্থা ঠিক ততটা গভীর অনাস্থা তাঁর নিজের রাজ্যের ভেতরকার সংবাদমাধ্যমের প্রতি। ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত ঠেকে হয়তো অনেক সময়, কিন্তু এটাই সত্যি ঘটনা। বসু নিজেই বলেন “আমাদের রাজ্যে এক শ্রেণীর সংবাদপত্র অর্ধসত্য, মিথ্যা আর বিকৃত তথ্য পরিবেশন করে চলে। এটা এক ধরনের কমিউনিস্টবিরোধী প্রচার এবং এটা খুবই দুঃখের কথা যে আজকে কিছু খবরের কাগজ এই চাঞ্চল্যকর মিথ্যা সংবাদের ওপরই ব্যবসা চালায়।” বসু বললেন, “আমরা কখনই বলি না আমরা সমালোচনার ঊর্ধ্বে, সমালোচনা গ্রহণ করার মত মানসিকতা আমাদের আছে কিন্তু মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করার অধিকারও তো কারও নেই। এরা সব অফিসের টেবিলে বসে গল্প তৈরি করে। একবার একটা বাংলা খবরের কাগজ লিখল যে আমি নাকি ইন্দিরাকে বলেছি, আমাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা যেন তিনি না নেন আর আমরাও ওঁর বিরুদ্ধে কোনও কথা বলব না। আচ্ছা, একজন তৃতীয় ব্যক্তি আমার আর ইন্দিরার মধ্যে কি কথাবার্তা হয়েছে তা জানল কি করে? ১৯৮০ সালে কাগজে একবার লেখা হল যে আমি না কি অন্যায্যভাবে শম্ভু ঘোষের দপ্তর কেড়ে নিয়েছি, কানাই ভট্টাচার্যের দপ্তরও নাকি আমার হাতে। খবরের সত্যতা যাচাই করে দেখার প্রয়োজন আছে বলে এরা মনে করে না। শম্ভুবাবু ১৫ দিনের জন্য লণ্ডন গিয়েছিলেন আর কানাইবাবুর একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল। আমি কেন তাদের দপ্তর নিয়ে নেব? ফরওয়ার্ড ব্লকের- নেতা অশোক ঘোষ আমাকে বলেছিলেন, এই অসত্য খবরের প্রতিবাদ করতে।”

“আরও আছে”, বসু বললেন “আমি হচ্ছি এই রাজ্যের সবচেয়ে বেশি ‘মিসকোটেড’ ব্যক্তি—আমার উদ্ধৃতি সব সময়ই ভুল দেওয়া হয় আর ভুলভাবে ছাপা হয়। নিত্য নতুন উদ্ধৃতি ওরা বানিয়ে লিখে দেয়। একবার এসপ্লানেড ইস্টে এক নির্বাচনী সভায় আমি বলেছিলাম, কংগ্রেস দলে বেশ কিছু সমাজবিরোধী আছে কাগজগুলো লিখে দিল জ্যোতিবাবু বলেছেন ‘কংগ্রেস সমাজবিরোধীদের দল। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে এই কথাটা আমার আর একবার মনে পড়ে গেল। কারণ তখন ওদের এক নেত্রী মমতা ব্যানার্জি নাটকীয়ভাবে ঘোষণা করলেন, তিনি তাঁর ‘নমিনেশন উইথড্র’ করবেন যদি না তাদের দলের সমাজবিরোধীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করা হয়। তখন ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ হাস্যকর মনে হয়েছিল।”

বসু বলেন, “শুধু ভুল উদ্ধৃতিই নয়, কিছু খবরের কাগজ আছে যারা একটা ‘স্ট্র্যাটেজিক’ জায়গায় একটা কথা আমার মুখে এমনভাবে বসিয়ে দেয় আর বার বার ছাপতে থাকে যে শেষ পর্যন্ত মনে হয় সত্যিই বুঝি আমি ওটা বলেছি।” এ প্রসঙ্গে বসু বাণতলার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করলেন। দুষ্কৃতীদের আক্রমণে অনিতা দেওয়ান নামে এক মহিলা অফিসার নিহত হয়েছিলেন এবং রেণু ঘোষ নামে আর এক মহিলা গুরুতর আহত হয়েছিলেন। বসু জানালেন, “সে সময় আমাকে এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন “আপনার কি মনে হয় রাজ্যে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে?” আমি উত্তরে বলেছিলাম “একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা তা প্রমাণ করে না। দুষ্কৃতীরা এ কাজ করেছে। আমি বলছি এটা একটা অত্যন্ত জঘন্য ও নির্মম ঘটনা, আমি অপরাধীদের শস্তি দেওয়ার জন্য পুলিসকে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি।”—”পরের দিন সকালের বাংলা খবরের কাগজ খুলে তো আমি অবাক, আমি নাকি বলেছি, এটা একটা সামান্য ঘটনা, এ তো কতই ঘটে—আর তারপর দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ প্রতিটি কাগজ সেই একই বুলি আমার মুখে বসিয়ে ছাপাতে লাগল। মানুষ ধরে নিল সত্যিই বুঝি আমি ঐ কথাটা বলেছি”-

“এরকম আরও কত যে ঘটনা আছে তা বলার নয়।” বসু বলেন “বাইরের সংবাদমাধ্যমগুলো কিন্তু এ রকম নয়, অন্তত সত্যি কথাটা ছাপে, যাচাই করে নেয়, আর গল্পের রং চড়ায় না। এখানে আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই বোধহয় মিথ্যা সমালোচনা বেশি হয়।” বসুর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও মিথ্যা বাড়াবাড়ির শেষ নেই। আবার অন্যদিকে গণমাধ্যমগুলো বসুর জীবন থেকে বড় একটা ভাবমূর্তিও তৈরি করায় তৎপর হয়। বসু বলেন, “আমি সাধারণ মানুষে আস্থা রাখি। তারাই তো এতদিন আমাদের সঙ্গে রয়েছে, তারাই আমাদের উৎসাহ, আমাদের প্রেরণা যোগায়। মানুষই ইতিহাস তৈরি করে। সাধারণ মানুষই ইন্দিরা গান্ধীকে ফেলে দিয়েছিল, ফেলে দিয়েছিল রাজীব গান্ধীকে। তারাই তাদের নেতা নির্বাচন করে—কিন্তু মানুষ যদি ভুল করে তো তাদের ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের।”

“বিশ বছর একটা সরকারে থাকার যাদু-রহস্যটা কি?”, “একটা কমিউনিস্ট সরকার একভাবে এতদিন কি করে রাজত্ব করছে?”—গত চার পাঁচ বছর ধরে দেশে বিদেশে বসু এই ধরনের বহু প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। “আমাদের এই দীর্ঘস্থায়ী সরকারের সাফল্যের চাবিকাঠি হল জনগণ”—বসু উত্তর দেন। সেই ১৯৭৭ সালে যখন থেকে নতুন যুগের শুরু তখনই প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে প্রথম প্রশ্ন ছিল “আপনি কি মনে করেন এই সরকার স্থায়ী হবে?”-

“জনগণের বিপুল সমর্থন আর আমাদের নিজেদের শক্তিবলেই আমরা পুরো মেয়াদ থাকব, এ সরকার স্থায়ী হবেই—” পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উত্তর দিয়েছিলেন বসু। “আর সত্যিই”, বসু বললেন, “আমাদের সীমিত ক্ষমতা আর কেন্দ্রের এক- চোখোমি সত্ত্বেও আমরা এতদিন সফলভাবে চালিয়ে যাচ্ছি।”

সকালবেলা ব্রেকফাস্ট করার সময় একরাশ কাগজে চোখ বুলিয়ে নেওয়া বসুর চিরকালের অভ্যাস। ভাল রিপোর্টিং হলে তিনি লেখার প্রশংসাও করেন আর ভাল প্রশ্ন করলে সে প্রশ্নও তাঁর বেশ মনে থাকে। যদি বিশেষ কোনও লেখা তাঁর কখনও নজর এড়িয়ে যায়, আর পরে ওঁকে জানানো হয়, তাহলে সে যত পুরোনোই হোক সেই তারিখের কাগজ আনিয়ে অনুপুঙ্খভাবে পড়ে নিজের মতটা জানান। বসু পড়েন দ্রুত, কাগজ পড়তে তাঁর সময় বেশি লাগে না, কিন্তু অল্প সময়ে সবটাই দেখে নিতে পারেন।

ছেলে চন্দন বসুও সংবাদমাধ্যম সম্বন্ধে একই মত পোষণ করেন। বললেন, “আমি শুনেছি আমাদের নিয়ে নানান মিথ্যা খবর যেদিন ছাপা হয় সেদিন কাগজগুলো বেশি বিক্রি হয়। তা অসত্য বিক্রি করে ওরা ব্যবসা করে, করুক।” ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর কয়েকটা বাংলা কাগজ লিখল, ‘চন্দনই বলেছে বসুকে প্রধানমন্ত্রী হতে’। কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ প্রসঙ্গে বসু বললেন, “সত্যি কথাটা হল চন্দন আমাকে বার বার বারণ করল যাতে আমি এই দায়িত্ব না নিই। আমার পরিবার মনে করল ওদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। আর কাগজগুলো লিখে দিল অন্য রকম। আমি বরং চন্দনকে বলেছিলাম, এটা রাজনীতির ব্যাপার, যা ঠিক করার পার্টিই ঠিক করবে।”

“আমার ব্যবসা নিয়ে কাগজগুলো যে কত গল্পই বানায়—আমি জ্যোতি বসুর ছেলে এ কথাটা তো আমি অস্বীকার করতে পারি না। কিন্তু বাবা তাঁর নিজের নীতিতে অনড়, তিনি আমার ব্যবসার জন্য কোথাও সুপারিশ করতে পারবেন না এই কথাটা আমাকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন।” বললেন চন্দন বসু।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *