১১. জানুয়ারির ৯ তারিখ

দ্রুত বিচার আইনে হু-সির তিন সহযোগীর প্রত্যেকের ফাঁসির হুকুম হলো। অল্প বয়স এবং মেয়ে হবার কারণে হু-সির হলো যাবজীবন।

জেল হাজতে একদিন তাকে দেখতে গেলাম। আশ্চৰ্য, তার চেহারা কীভাবে জানি বাঙালি মেয়েদের মতো হয়ে গেছে। দেখে মনেই হয় না মেয়েটা বিদেশীনি। গায়ের রঙ সামান্য ময়লা হয়েছে, কিন্তু চোখ আগের মতোই উজ্বল।

আমি বললাম, কেমন আছ হু-সি?

সে মাথা নিচু করে বলল, ভালো আছি।

নিজের দেশের জন্যে মন কাঁদে।

না।

প্রিয়জনদের দেখতে ইচ্ছা করে? বাবা-মা, ভাই-বোন?

না।

কোনো কিছু খেতে ইচ্ছা করে?

না।

চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকো না। কিছু বলো।

হু-সি মাথা নিচু করে বলল, আপনি প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের ৯ তারিখ জেলখানায় আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন।

জানুয়ারির ৯ তারিখ কেন?

হু-সি চাপা গলায় বলল, ঐ দিনটা আমার জন্যে বিশেষ একটা দিন। ঐ দিন আপনার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা। আপনি আসবেন তো?

অবশ্যই।

আপনার বড়খালাকে বলবেন যে, আমি তাঁকে মু কিন ডেকেছি। মু কিন হলো মা। আমরা চাইনিজরা কখনো নিজের মা ছাড়া কাউকে মু কিন ডাকি না।

বলব।

হু-সির চোখে এক বিন্দু অশ্রু টলমল করছে।

আমি বুঝতে পারছি, সে প্রাণপণ চেষ্টা করছে যেন এই চোখের পানি গড়িয়ে না পড়ে। সে চাইনিজ ভাষায় আমাকে কী যেন বলল। আমি বললাম, কী বললে বুঝতে পারি নি।

সে বলল, আপনার বোঝার দরকার নেই।

হু-সি চোখের পানি আটকে রাখতে পারে নি। অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়েছে গালে। সূর্যের আলো পড়ে ঝলমল করে উঠেছে হীরের দানার মতো। প্রকৃতি কত বিচিত্ৰভাবেই না তার সৌন্দর্য ছড়িয়ে রেখেছে!

Leave a Reply to SHAMIM Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *