১০. মনটাকে শক্ত করুন

রাত প্ৰায় দশটা।

জহির রান্না বসিয়েছে।

তেলটা খারাপ। প্রচুর ধোঁয়া হচ্ছে। জহিরকে বার-বার চোখ মুছতে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সে বুঝি খুব কাঁদছে। আসলেই তাই। ধোঁয়া ছাড়াই জহিরের চোখ বারবার ভিজে উঠছে।

অরুর শরীরটা খুব খারাপ। আজ তৃতীয় দিন। সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিল। ক্রমাগত ব্লিডিং হচ্ছে। ছব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। আরও দিতে হবে। আজ সন্ধ্যায়, ডাক্তাররা বলেছেন অবস্থা ভালো না।

জহির সারাদিন পাশে বসে ছিল। একসময় অরু বলল, এত মন খারাপ করে আমার পাশে বসে থাকবেন না। আমার পাশে বসতে হলে হাসিমুখে বসতে হবে।

জহির বলল, আমি তোমার মতো কথায়-কথায় হাসতে পারি না।

ইচ্ছা করেন না তাই পারেন না। ইচ্ছা করলেই পারবেন।

জহির বলল, সত্যি করে বল তো তোমার কি খারাপ লাগছে না?

অরু ক্লান্ত গলায় বলল, নিজের জন্য লাগছে না, বাচ্চাটার জন্য লাগছে। এত সুন্দর পৃথিবীর কিছুই সে দেখবে না? না দেখেই মরে যাবে?

চুপ করে শুয়ে থাক অরু। বেশি কথা বলা বারণ।

জহির ভাই, আসমানী কি তার স্বামীর সঙ্গে চলে যাবার আগে আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল?

হ্যাঁ।

কিছু বলেছিল?

না। অরু বলল, আপনি খুব ভাগ্যবান মানুষ জহির ভাই।

কেন বল তো?

এই মেয়েটি জনম জনম আপনার জন্য কাঁদবে। এত বড় সৌভাগ্য কজন পুরুষের হয় বলুন?

 

বড্ড ধোঁয়া হচ্ছে। জহির রান্নাঘর থেকে বারান্দায় চলে এল। অবাক হয়ে দেখল বারান্দার রেলিং ধরে আজহার সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। খুব আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন। আকাশের দিকে।

জহিরকে দেখেই বললেন, অরুর খুব শখ ছিল তার মেয়ের নাম রাখবে রাত্রি কেন জানেন? কারণ রাত্রি কখনো সূর্যকে পায় না। অবশ্য তাতে তার কোনো ক্ষতি নেই, কেননা তার আছে অনন্ত নক্ষত্ৰবীথি।

আজহার সাহেব চাদরে চোখ মুছতে-মুছতে বললেন, ভাই আপনাকে একটা খারাপ খবর দিতে এসেছি। আপনি মনটাকে শক্ত করুন।

Leave a Reply to মিজান Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *