০৮. প্রবল ঘোরের ভেতর মুহিবের সময় কাটছে

প্রবল ঘোরের ভেতর মুহিবের সময় কাটছে। ব্যথা-বোধহীন জগৎ। কখনো শরীর হালকা হয়ে যাচ্ছে, সামান্য বাতাস এলেই সে উড়ে চলে যাবে। আবার কখনো শরীর ভারি হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সে ক্রমেই নিচে নামছে। ক্রমেই নিচে নামছে। সে নেমে যাচ্ছে অতল কোনো গহ্বরে।

মুহিব সারাক্ষণ তার মাথায় বৃষ্টির শব্দ শোনে। ঘোরের মধ্যেই সে অস্থির বোধ করে। তার মনে হয় ঝুম বৃষ্টিতে তাকে কোথায় যেন যেতে হবে। কেউ একজন তাকে বলেছিল, ঝুম বৃষ্টিতে আমার কাছে আসবে। সেই একজনের ছবি কখনো তার মাথায় স্পষ্ট হয় না।

নানান ধরনের ছবি তার চোখের সামনে ভাসে। কখনো সে দেখে সে তার বাবার সঙ্গে রিকশা করে যাচ্ছে। মাথার উপর বৃষ্টি পড়ছে। তারা দুজন হাঁ করে বৃষ্টির পানি খাচ্ছে।

কখনো দেখে কমুদ স্যার এসেছেন তার কাছে। স্যারের গায়ে কোনো কাপড় নেই। স্যার দুঃখিত গলায় বললেন, কই বাবা তুমি তো সেন্টটা দিলে না? সেন্ট ছাড়া চলতে পারি না বলে গায়ে আজেবাজে সেন্ট মাখি। ফিনাইলের মতো গন্ধ। তখন মুহিব তীব্র ফিনাইলের গন্ধ পায়, তার সমস্ত শরীর ঝিমঝিম করে

মুহিব বুঝতে পারে এইসব ছবি সে ঘোরের মধ্যে দেখছে। বাস্তবে এমন কিছু ঘটছে না। তার চারপাশের জগতের কোনো ছবি কোনো শব্দই তাকে স্পর্শ করছে না।

সামান্যতম চেতনা যদি তার থাকত তাহলে তার ভালো লাগত। সে দেখত তার জীবন নিতান্তই বৃথা যায় নি। তার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে নোরা মেয়েটা যতটা ব্যাকুল হয়ে কাদছে ততটাই ব্যাকুল হয়ে কাদছে যূথী।

হাসপাতালের বাইরে অনেক লোক। মুহিবের বাবা শামসুদ্দিন সাহেবও তাদের মধ্যে আছেন। তার শরীর খুবই দুর্বল। তিনি মেঝেতে বসে আছেন।

তাঁর পাশেই তাঁর পিঠে হাত দিয়ে বসে আছেন হোমিওপ্যাথ ডাক্তার রহমতউল্লাহ। এক সময় শামসুদ্দিন সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। জড়ানো গলায় বললেন, আমার ছেলে যদি আপনাদের কারো সঙ্গে কোনো অন্যায় আচরণ করে থাকে, দোষ করে থাকে তাহলে আপনারা ক্ষমা করবেন। আমি তার বাবা হিসেবে সবার কাছে ক্ষমা চাই। আমার বাবা তার জীবনে কিছুই পায় নাই। সবার ক্ষমাটা যেন পায়।

Leave a Reply to Hamidul Islam Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *