॥ ৩৪ ॥
ঢেউয়ের সঙ্গে ভাব হয়ে গেল রেমির। ভয় ভেঙে গেল।
এর আগেও সে কয়েকবার পুরী এসেছে। কিন্তু সাঁতার জানে না বলে কোনোদিন সমুদ্রে নামেনি। কেউ তাকে জোর করে নামায়ওনি। ঢেউয়ের করাল চেহারা দেখে বুক দুরদুর করত। কোনোদিন ঢেউয়ের মুখোমুখি হবে না, ভেবে রেখেছিল। দৈত্যের মতো সেইসব অচেনা ঢেউয়ের সঙ্গে চেনা করিয়ে দিল ধ্রুব। ভয় ভাঙল। নেশা এসে গেল।
আকাশ আড়াল করা উঁচু, রেলগাড়ির মতো গতিময় ও পাহাড়ের মতো বিশাল এক একটা ঢেউ যখন আসে তখন মনে হয় তাকে বুঝি নিষ্পিষ্ট করে দিয়ে যাবে। বেলাভূমি ছাড়িয়ে ভাসিয়ে নেবে শহরের ঘরবাড়ি। লাফিয়ে বা ডুব দিয়ে ঢেউয়ের সঙ্গে খানিকটা বেলাভূমির দিকে ভেসে যাওয়ার পর পায়ের নীচে সর্ষেদানার মতো চলন্ত বালির ওপর দাঁড়িয়ে টালমাটাল রেমির এখন মনে হয়, সব দুঃখ শোক বুঝি ভেসে গেল। প্রথম প্রথম ধরে থাকত ধ্রুব, আজকাল ধরে না, তবে কাছাকাছি থাকে। ঢেউ কাটিয়ে দিয়ে দুজনে দুজনের দিকে চেয়ে হাসে।
স্কুল ম্যাগাজিনে রেমি এক সময়ে কয়েকটা কবিতা লিখেছিল। সমুদ্রের সঙ্গে এই চেনাজানার পর সে এক দুপুরে সংগোপনে বহুকাল বাদে আর একটা কবিতা লিখে ফেলল। নাম দিল ‘তুমি’। ঢেউ নিয়ে লেখা। অথটিা দাঁড়াল অনেকটা এরকম: তুমি ঠিক এক রাগী ও অভিমানী পুরুষের মতো। ধেয়ে আসা পাহাড়। কালো ও গভীর। মনে হয় বুঝি চুরমার করে দেবে আমাকে। কিন্তু যখন এলে, যখন ভাসিয়ে নিলে আমাকে দম বন্ধ করা উচ্ছ্বাস ও আবেগে, পায়ের তলা থেকে কেড়ে নিলে মাটি, তখন ঠিক ভয় করল না, রোমহর্ষ হল। এতকাল যা ঘটেছে আমার জীবনে, কিছুই ঠিক এরকম নয়। কত কোমল তুমি, ফের সযত্নে স্থাপন করলে আমায় চলন্ত বালির ওপর। ভাল করে ভারসাম্য ফিরে পাওয়ার আগেই আবার ভাসিয়ে নাও তুমি, আবার স্থাপন করো। আমি তোমাকে বুঝি না, একটুও না, সেই ভাল। ওরকমই রহস্যময় থাক তুমি আদিগন্তের ঢেউ। কত দেশ ছুঁয়ে আসা জল। বারবার দোলাও আমাকে, বারবার ভাসাও আমাকে। কে চায় স্থির মাটি, স্থায়ী ভিত, সংসারে সোনার বিগ্রহ হয়ে থাকা!
ছেলেমানুষীতে ভরা ও কাঁচা এই কবিতা পড়ে রেমি নিজেই লজ্জায় রাঙা হল, হাসল আপন মনে। বারকয়েক পড়ে তার মনে হল, এ ঠিক ঢেউকে নিয়ে লেখা নয়। এসব ঢেউয়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে একজন মানুষও।
রাত্রে সে খুব সংকোচের সঙ্গে ধ্রুবকে বলল, আমি একটা কবিতা লিখেছি, পড়বে?
ধ্রুব যথারীতি একখানা শক্ত বই পড়ছিল। এম এন রায়ের লেখা ‘দি রাশিয়ান রিভোলিউশন’। খাটের বাজুতে বালিশের ঠেকা দিয়ে খুব আয়েস করে আধশোয়া ধ্রুব বিস্মিত চোখে রেমির দিকে চেয়ে বলল, তুমি আবার কবিতাও লেখো নাকি! এত গুণ তো জানতাম না।
ইয়ার্কি কোরো না। একেই তো আমার মন খারাপ।
কেন, মন খারাপের কী?
কবিতাটা ভাল হয়নি।
ওঃ তাই বলো। দেখি—বলে হাত বাড়ায় ধ্রুব।
রেমি একসারসাইজ বুকটা আঁকড়ে ধরে থেকে বলে, হাসবে না বলো।
আরে না। কবিতা খুব সিরিয়াস জিনিস। ও নিয়ে হাসিঠাট্টা চলে!
এই তো ইয়ার্কি করছো।
মাইরি না। যে জিনিস বুঝি না তা নিয়ে ইয়ার্কি চলে না।
কবিতা তোমার ভাল লাগে না জানি।
ঠিকই জানো। আসলে বুঝি না বলেই তেমন করে ভালবাসি না।
সব কিছুই কি স্পষ্ট করে বোঝা যায়?
ধ্রুব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, তা বটে। তবে আমি যে সব বিষয় ভালবাসি অর্থনীতি রাজনীতি বা বিজ্ঞান তাদের মধ্যে কোনো অস্পষ্টতা নেই। সলিড যুক্তি এবং নির্ভুল অংকের ওপর দাঁড় করানো জিনিস। দাও দেখি আমার নীরেট মগজে তোমার কবিতার কোনো এফেক্ট হয় কিনা।
খুব কাঁচু-মাচু হয়ে খাতাটা এগিয়ে দিল রেমি। তারপর তার ভীষণ লজ্জা করতে লাগল। বুক কাঁপছে। আশ্চর্য, এই মানুষটার সঙ্গে তার শরীরের ব্যবধান নেই। লজ্জা নেই। সারা রাত প্রায় এর বুকের মধ্যে লেপটে সে শুয়ে থাকতে ভালবাসে। তবে একটা কবিতা দেখাতে এত লজ্জা কেন!
ধ্রুব তাচ্ছিল্যের সঙ্গেই কবিতাটা পড়ে গেল। মুখে একটু গা জ্বালানো হাসির ছিটে। চোখের পলকে পড়া হয়ে গেল। খাতাটা বিছানায় রেখে বলল, বেশ হয়েছে। চালিয়ে যাও।
একথায় রেমি একদম নিভে গেল। মনটা ভারী খারাপ লাগতে লাগল। অপমান বোধ করল সে।
অনেকক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে অন্ধকার সমুদ্রের দিকে চেয়ে রইল সে। অবিরল জল ভাঙার শব্দ কানে তালা ধরিয়ে দেয়। আশ্চর্য, ধ্রুব কি বুঝতে পারল না যে, ওই ঢেউয়ের বিবরণ আসলে সমুদ্রের ঢেউ নয়। ধ্রুব নিজেই!
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করল রেমি। আশা করল, সে যে রাগ করেছে তা ধ্রুব বুঝতে পারবে এবং রাগ ভাঙাতে আসবে। কিন্তু এই পুরুষটির কাছে কোনো কিছু আশা করাই অন্যায়। যাকে বলে আনপ্রেডিকটেবল ধ্রুব হচ্ছে তাই। রুশ বিপ্লব তার কাছে বউ বা বউয়ের ছেঁদো রাগের চেয়ে অনেক বেশী বাস্তব জিনিস।
খাওয়ার সময়েও দুজনেই চুপচাপ। ধ্রুব অন্যমনস্ক। রেমি অন্যমনস্কতার ভান বজায় রাখতে সতর্ক।
রাত্রে ঘরের দরজা বন্ধ করার পরই ধ্রুব তাকে বলল, রেমি, ওটার নাম বদলে দাও।
কোনটার?
কবিতাটার।
তার মানে?
ওই তুমিটা কে? ঢেউ?
তাছাড়া আবার কে?
ধ্রুব একটু হেসে বলল, তাহলে অবশ্য আলাদা কথা। আমি ভেবেছিলাম ঢেউটা বোধহয় বকলমে আমিই।
রেমি রাগ করে বলল, না, তুমি কেন হতে যাবে!
খুব রেগেছে ডারলিং। কবিরা খুব টাচি হয় শুনেছি।
আমি মোটেই কবি নই।
তা অবশ্য ঠিক। তবে এতদিন পরে আমি বুঝতে পারছি তোমার মধ্যে একটা কবিসুলভ ব্যাপার আছে। নইলে এত টাচি হবে কেন?
আমি মোটেই টাচি নই।
রাগছো কেন? টাচি হওয়া তো ভাল। আমার মতো গাছ হওয়াটা একদম কাজের কথা নয়।
রেমির গনগনে অভিমান আরও ফুঁসে উঠল এইসব ইন্ধন পেয়ে। সে জবাব দেওয়া বন্ধ করল।
ধ্রুব দিব্যি পাশে শুয়ে চটপট ঘুমিয়ে পড়ল।
পরদিন মেঘলা আকাশ নিয়ে ভোর হল। একটা ঝোড়ো হাওয়া বইছে। সমুদ্রকে দেখাচ্ছিল নিকষ কালো। ঢেউগুলো আগের দিনের তুলনায় দ্বিগুণ, তিনগুণ। একজনও সমুদ্রে নামেনি আজ। এমন কি বিস্তীর্ণ বেলাভূমিতেও লোক নেই। ঝোড়ো দামালো দিন। আজ বোধহয় আর ঢেউয়ের সঙ্গে ভাব ভালবাসা হবে না রেমির।
ধ্রুব বেলা অবধি ঘুমোচ্ছিল। রোজ তাকে রেমি ডেকে তোলে। কিন্তু কাল থেকে রাগ করে আছে বলে আজ আর রেমি ডাকেনি। খানিকক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে সমুদ্রের ভয়ংকর চেহারাটা দেখতে দেখতে কয়েকবার শিউরে উঠল সে। ঢেউ আজ অনেকটা ওপর অবধি ধেয়ে আসছে। উত্তাল কালো জল। রেমির একটু শীত করছিল। গায়ে আঁচলটা ভাল করে জড়িয়ে নিয়ে সে নীচে খাবার ঘরে এসে একা একা চা খেল। কারো সঙ্গেই কথা বলার নেই। কিছু করারও নেই আজ। কেমন যেন কলকাতার জন্য মন কেমন করছে। শ্বশুরমশাই নিশ্চয়ই তাদের কথা ভাবছেন। তার বাবার শরীরও ভাল ছিল না।
ঘণ্টা খানেক বাদে রেমি ঘরে এসে দেখল, ধ্রুব নেই।
নেই তো নেই-ই। বাথরুমে নেই, খাওয়ার ঘরে নেই। কোথাও নেই। এরকম মাঝে মাঝে বেপাত্তা হয়ে যায় বটে ধ্রুব। কোথাও এই এক বেলা কাটিয়ে ফিরে আসে। চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু আজ এই মেঘলা ঝোড়ো দামাল দিনে রেমির বড় একা লাগছে। মনটা বিস্বাদ। তেতো।
একসারসাইজ বুকটা বের করে সে কবিতাটা পড়ল। বাজে, অখাদ্য। কিন্তু তার আজ সকালে আর একটা কবিতা লিখতে ইচ্ছে করছে। একটা ডট পেন নিয়ে সে বসে গেল। কবিতার নাম দিল “একা”।
দুপুর হয়ে এল। সকাল থেকে কিছু খায়নি রেমি। চনচনে খিদে পেয়ে গেছে। ধ্রুবর জন্য বসে থেকে লাভ নেই। সে উঠল। বাথরুমে যাবে-যাবে করেও একটু থমকাল সে। বাথরুমে স্নান করতে ভাল লাগবে কি?
বন্ধ জানালার কাচের শার্শি দিয়ে সে সমুদ্রের দিকে তাকাল। কালো, বিশাল ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে বেলাভূমিতে। ভয়ংকর। একজনও লোক দেখা যাচ্ছে না কোথাও।
রেমি একবার ঢোক গিলল। তারপর দাঁতে দাঁত চাপল সে। ক্ষতি কি? সমুদ্র যদি তাকে নেয় তো নিক। সে সুখী না অসুখী তা আজও ভাল বুঝতে পারেনি সে। মরতেও কোনোদিন ইচ্ছে করেনি তার। কিন্তু বেঁচে থাকাটাও তো বড্ড আলুনী।
কবিতাটা সে আর একবার পড়ল। কবে থেকে আমি একা? ঠিক বুঝতে পারিনি হে আমার প্রিয়। আজ বুঝি, যেদিন তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমাকে সেদিন থেকেই তুমি আমার চারধারে তুলে দিয়েছে প্রতিরোধ। আমাকে কেড়ে নিলে পৃথিবীর সব কিছু থেকে, নিজেকেও দিলে না।
কবিতার পাতাটা বিছানার ওপর খুলে রাখল রেমি।
তারপর তোয়ালে নিয়ে নিঃশব্দে নেমে গেল নীচে।
সমদ্রের ধারে প্রবল বাতাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে সে অকপট ভয়ে এবং বিস্ময়ে ঢেউ দেখছিল। নামবে?
ক্ষণিক একটু দ্বিধা আর জড়তা। তারপর আচমকা গাছকোমর বেঁধে রেমি তরতর করে নেমে গেল। যেতে হল না বেশীদূর। মাঝপথেই আকাশ-পাতাল জোড়া একটা কালো ঢেউ কয়েক হাজার টন জল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল তার ওপর।
চেতনা হারানোর আগে রেমির মনে হল, সে একটা রেলগাড়ির চাকার তলায় নিষ্পেষিত হয়ে যাচ্ছে। প্রবল এক চোরাস্রোত তাকে টেনে নিচ্ছে গভীর সমুদ্রের দিকে।
আসলে তা নয়। রেমিকে কয়েকবার জলের কুম্ভীপাকে চক্কর দিয়ে মহাকায় ঢেউ তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল তীরে।
আর একটা ঢেউ নিশ্চিত নিয়ে যেত তাকে। কিন্তু তার আগেই একজন দুঃসাহসী ছুটে এসে রেমিকে হিড়হিড় করে টেনে অনেকটা ওপরে তুলে নিয়ে শুইয়ে দিল।
রেমি জল খায়নি, তেমন চোটও লাগেনি তার। কয়েক মুহূর্তের সংজ্ঞাহীনতা কাটিয়ে সে চোখ মেলে লোকটাকে দেখল।
লোক নয়। অল্পবয়সী একটা ছেলে।
ছেলেটা বলল, আপনার তো দারুণ সাহস! আজ কেউ নামে? উঠুন! উঠুন!
রেমি উঠল। একটা ঢেউ এইমাত্র তার কোমর অবধি ডুবিয়ে দিয়ে ফিরে গেল। পরেরটা হয়তো তাকে ভাসিয়ে নেবে।
ছেলেটা রেমির কনুই ধরে তুলে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে যেতে যেতে বলল, আমি দূর থেকে খুব চেচিয়ে আপনাকে সাবধান করছিলাম। শুনতে পাননি?
হতভম্ব রেমি মাথা নেড়ে বলল, না।
হাওয়ার জন্য।
রেমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
ছেলেটা বলল, পুরীর সমুদ্র এমনিতে সেফ, কিন্তু এসব দিনে ভীষণ ডেঞ্জারাস। আর স্নান করতে হবে না, হোটেলে ফিরে যান।
রেমির মাথার মধ্যে অদ্ভুত একটা বোবা ভাব। সব ভাবনা-চিন্তা থেমে গেছে। কথা খেলছে না।
সে উঠল এবং নীরবে হোটেলের দিকে হাঁটতে লাগল।
আশ্চর্যের বিষয়, দোতলার বারান্দার দিকে চেয়ে সে দেখতে পেল ধ্রুব নিস্পন্দ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাওয়ায় তার লম্বা চুল উড়ছে। সে দেখছে তাকে। কিন্তু অনুত্তেজিত, উদ্বেগশূন্য।
ধ্রুবকে দেখে একটু থমকাল রেমি। আজ হঠাৎ সন্দেহ হল তার। তাকে সমুদ্রে বিপন্ন হতে দেখেও ধ্রুবর উদ্বেগ নেই কেন! তবে কি ধ্রুবর কাছে তার মৃত্যু খুব একটা শোকের হবে না? ধ্রুব কি মনে মনে এই বন্ধন থেকে ছাড়া পেতে চায়?
ঘরে আসতে খুব শীত করছিল রেমির। খুব শীত। নিঃসঙ্গতা তো ভীষণ শীতল।
ধ্রুব তাকে ঘরে ঢুকতে দিয়ে নিজেও পিছু পিছু ঢুকল। দরজাটা ঠাস করে বন্ধ করে দিয়ে বলল, কী সিস্টার মরতে পারলে না?
রেমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, তুমি তাই চাও?
আমার চাওয়াটা কোনো ব্যাপার নয়। তুমি কি চেয়েছিলে?
রেমি বাথরুমে গিয়ে গা থেকে নোনাজল ধুয়ে কাপড় পাল্টে বেরিয়ে এল। শরীরটা দুর্বল। মনটা ফাঁকা।
ধ্রুব বিছানায় বসে বাথরুমের দরজার দিকেই চেয়েছিল। সে বেরিয়ে আসতেই বলল, ওই হীরোটি কে?
কোন হীরো?
যে তোমাকে মৃত্যুর কবল থেকে এইমাত্র বাঁচাল।
জানি না।
ধ্রুব মাথা নেড়ে বলল, নাম জেনে নাওনি? ঠিকানা?
কেন বলো তো?
এই রকম পরিস্থিতি হৃদয়চর্চার পক্ষে দারুণ ফেবারেবল।
তার মানে?
ঘরে এসে তোমার “একা” কবিতাটা আমি পড়ে ফেলেছি। তারপর বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখেছি তোমার সুইসাইডাল অ্যাটেমপট।
তবু এগিয়ে যাওনি?
স্পিডে পেরে উঠতাম না। তবে দু-একবার চেঁচিয়ে ছিলাম। বৃথা। এই ঝোড়ো বাতাসে সে ডাক তোমার শোনার কথা নয়। তাছাড়া হয়তো শুনলেও ফিরতে না।
তাই বুঝি?
তাই তো। তুমি যে বড় একা। হঠাৎ দেখলাম এক ছোকরা তোমাকে জল থেকে টেনে তুলছে। বেশ লালটু দেখতে।
হবে। আমি ভাল করে দেখিনি।
আমি দেখেছি। পাশের হোটেলটার দিক থেকে বেরোলো।
তাই নাকি?
চালিয়ে যাও।
তার মানে?
ছোকরা তোমাকে বাঁচিয়েছে, সুতরাং তোমার ওপর ওর খানিকটা হক বা দাবীও জন্মায়।
ইতরের মতো কথা বোলো না।
মাইরি সিস্টার, তোমার সঙ্গে ঠাট্টা করাও মুশকিল।
ঠাট্টা নয়। এটা তোমার মনের নোংরামি।
ধ্রুব মাথা নেড়ে বলল, মাইরি না। আমি কি রকম তা আমি জানি। আমি ঢেউ, আমি চেঙ্গিস খা। সব ঠিক। কিন্তু ভাই, আমি এও বলি, বি এ গুড গার্ল, গো অ্যানড লাভ সামওয়ান এগেন।
আমি তাতে খুব খুশি হবো।
ঠিক আছে। চেষ্টা করব।
এই পাত্রটা আমার বেশ পছন্দ। ছোকরা দারুণ লালটু।
রেমি রাগে ফেটে যাচ্ছিল। প্রাণপণে মুখ টিপে রইল শুধু।
খাওয়ার পর রেমি আজ একটু ঘুমোলো। রাত্রে ভাল ঘুম হয়নি।
বিকেলে ধ্রুব তাকে ডেকে তুলল, আরে দেখ, কাকে ধরে এনেছি।
রেমি অবাক হয়ে দেখল, সেই ছেলেটা।