হ্যাঁ, প্রিয়তমা
বিয়ের পর ১৫টা বছর নিরুপদ্রবে কাটিয়ে, রিটায়ার করতে যখন তার আরও ১২ বছর বাকি এবং মেনাপজ হতে গীতির অন্তত আরও বছর ৪/৫—যখন রেকারিং-এ লাখখানেক ও প্রভিডেন্ট ফাণ্ডেও অমনি কিছু—একটি ইনসিওরেন্স ম্যাচিওর করেছে এবং আরও ৩টি আগামী ৩ বছরে করবে বলে পরপর সার বেঁধে দাঁড়িয়ে—সল্ট লেকের জমি কেনা শেষ—এবং ১০-তলা মাল্টি-স্টোরিডের পঞ্চমতলার ফ্ল্যাটে ফ্রিজ-টিভি-টেলিফোন-স্টিরিওফোন সবই, প্লাস ড্রয়িং রুমে চিরু চক্রবর্তীর অ্যালুমিনিয়াম মিউরাল ও দরজায় কোকিলকণ্ঠী বেল—সকাল ৯টায় অফিসের এক্সক্লুসিভ গাড়ি—মায় আলমারিতে আধা বোতল গোলকুণ্ডা যা থেকে কিছুটা প্রতি সেকেণ্ড ও ফোর্থ স্যাটার্ডেতে নৈশ-ভোজনের আগে গীতি তা নিজের গ্ল্যাসে ঢালে ও তার হুইস্কির গ্লাসের পাশে রাখে—এক কথায়, যাকে বলে, যখন ‘মেরে এনেছে’ সে—এমন সু-সময়ে অমিয়র জীবনে এক ঘোর বিপদ দেখা দিল। ১৫ বছরের ঘুম থেকে জেগে উঠে এক মেয়ে-কুম্ভকর্ণ একদিন মাঝরাতে ঘুম থেকে তুলে বিছানায় বসাল।
‘তুমি ডাক্তার দেখাও।’ গীতি বলল।
তার মানে? অমিয় ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। কেন? সে যেন জানতে চায়, কী আমার অসুখ?
পেটে-ব্যথা, বুকে-কষ্ট, দাঁতে যন্ত্রণা, ম্যালেরিয়া, অ্যাপেণ্ডিক্স-কাটানো মায় কফে-রক্ত (৬ মাসের প্লুরিসি)— চিকেন পক্স আর টাইফয়েড একবার করে কার না হয়—ইত্যাদি আধি-ব্যাধির প্রায় সব ঘাটই অমিয় পেরিয়ে এসেছে। এতগুলো ঘাটের জল খেয়ে, বয়স বলতে বাধ্য হলে অমিয় যে এদান্তি ‘৪৯’ না বলে ‘4/8’ বলে, তার কারণ একটাই। কারণ এই যে, শেষোক্ততে এখনও ‘ফরটি’ লেগে আছে এবং এ-রকম বলতে বলতে সে বোঝে বৈকি যে আসলে তার অসুখটা কী। শুধু একটিমাত্র চুল প্রকাশ্যে সাদা রেখে সে যে তার ফ্রেঞ্চ-কাট দাড়িতে এবং ভ্রূর ৫টি পাকা চুলে নিয়মিত কলপ লাগায়— অথচ, সিক্সটি পার্সেন্ট পেকে যাওয়া সত্বেও মাথার চুলে লাগায় না— এর মানেটা কী? এও তার ঐ আসল অসুখের স্ব-রচিত প্রেসক্রিপশান—কোনো ফার্মাকোলজিতে পাওয়া যাবে না অবশ্যই। চ্যালেঞ্জটা হল, মাথার চুল বেশ কিছু পাকলেও, হুঁহুঁব্বাওয়া, আমার ঐ বিলকুল-কালো জোড়া-ভ্রূ আর কুল-কাঁচ্চা এক-পাক্কা দাড়ি দেখে একবার ভাব দেখি যে আমার পিউবিক হেয়ারও টু-দ্যা-লাস্ট-স্ট্র কাঁচা নেই! বড় জোর একটি-দুটি পেকেছে, আর কত। স্টেটসম্যানের কাছে গাড়ি রেখে একদিন, কোনো একদিন, লিন-লন হুয়া থেকে জুতো কিনে পথে নেমে—সহসাই—যেন জীবনের পারে—উনুন থেকে সদ্য-নামানো ধোঁয়া-ওঠা কচি ভুট্টায় নুনসহ নোংরা লেবু মাখাতে দেখে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে, তৎক্ষণাৎ, ফের সেই যে চালু হয়ে গেল অমিয়, তারপর আর কখনো দাঁড়ায়নি। কেন? এ ত কিছু কাল-পরশুর ঘটনা না, গত বছর বর্ষাঋতুর ব্যাপার—আজো ভোলেনি। কেন? কারণ, পাবলিকে জানে না, এ শুধু অমিয় জানে যে, তাঁর কষে তিন-তিনটি দাঁত আর নেই এবং সামনের দিকে তার ক্যানাইন তথা কুকুর-দাঁতটিও বাঁধানো। গত বর্ষাতেই দাঁতটি মূল থেকে আলগা হয়ে আসছিল।
তো, নানান ঘাটের জল খেয়ে, অমিয়, সবে বুঝছে যে তার শিবের অসাধ্য আসল অসুখটা কী, সেই সময়, এহেন লোডশেডিঙের মধ্যরাতে, ফোর্থ স্যাটার্ডেতে, ৪ পেগ হুইস্কির ঘুম থেকে তুলে—নিজেরও নিদেনপক্ষে ২টো গোলকুণ্ডার ঘুম মাটি করে— গীতি বলে কিনা, ‘ডাক্তার দেখাও?’
বাইরে লোডশেডিং। তবে তাদের মাল্টি-স্টোরিডে, মে গড বী ব্লেসড, জেনারেটর। বেড-সুইচ টিপতে গিয়ে অমিয়, কী ভেবে, হাত সরিয়ে নেয়। ফ্ল্যাটের উলটোদিকে রাস্তায় সিগারেট কোম্পানির ‘মেড ফর ইচ আদার’-এর বিজ্ঞাপন নিবে থাকার পর, এই সময় ৫ সেকেন্ড ধরে জ্বলে থাকে ও তার এ্যাসিড-ব্লু নীলে সে গীতিকে বেশ দেখতে পায়। সার্টিনের কালো শায়া পরা আঁটো-সাঁটো নিম্নাঙ্গের ওপর গীতির ফর্শা বলশালী টোরসো সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। নারীর পক্ষে অতি-প্রশস্ত, তার আউট-সাউজ বক্ষপটে ফুলে-ফুলে ওটা ফর্সা স্তনদ্বয়ের ওপর দুখণ্ড রুবির মতো এখন-শক্ত বৃন্তদুটি ধ্বকধ্বকিয়ে জ্বলছে।
গীতা কি আজ চুল বেঁধে শুতে আসেনি? নাকি, কী ভেবে, সে স্লুইস খুলে হঠাৎ ছেড়ে দিয়েছে তার চুলের তোড়— শীতের এই প্রখর মধ্যরাতে সে যে কখন পাখা চালিয়ে দিয়েছে; পাখার ফুল স্পীড ও উত্তর দিকে থেকে আসা হূ-হু হাওয়ার সংঘর্ষে সব চুল তার মুখের ওপর উড়ে এসেছে…চুলে, হাওয়ায়, কান্নায়, ভেজা সিঁদুরে সারা মুখ তার মাখামাখি— দেখে, সভয়ে, যুগান্ত পেরিয়ে—সহসা—যেন জীবনের পারে— দেব সাহিত্য কুটির প্রকাশিত কাঞ্চনজঙ্ঘা সিরিজের ‘হানা বাড়ি’ বইয়ের কাভারে প্রতুল ব্যানার্জির আঁকা সাপ-হাতে পাগলিনী রমণীর ছবি ছাড়া অমিয়র আর-কিছু মনে পড়ে না। পিছনে দাউ-দাউ আগুন।
প্রগাঢ়, হাস্কি গলায় গীতি বলল, ‘তুমি আগে দেখাও। তারপর আমি দেখাব।’
এ-কিছু কফে-রক্ত, বুকে-কষ্ট বা গলা-খুচখুচের ব্যাপার না। ‘মেড-ফর-ইচ-আদার’ নিবে যেতেই, পরবর্তী ৫ সেকেণ্ডের প্রথম মুহূর্তের অন্ধকারে অমিয় বুঝতে পারল গীতি কী বলতে চাইছে।
সব মানুষই বোঝে যে তাকে, কারুকে, কোনো-কিছুকে, ভালোবাসতে হবে। যারা কোনো ‘কিছু’কে ভালোবাসে, যেমন, মেসিন কি সেক্স, ফুটবল বা কবিতা—দেশ, রাজনীতি, বা, ধরা যাক, পথের একটা নেড়িকে ভালোবাসে যারা—অথবা যারা ভালোবাসে বিশ্বপ্রকৃতিকে—মোট কথা, কোনো—’কিছু’কে ভালোবাসবে— ভালোবাসবে—ভালোবাসবে বলে, যারা এই পৃথিবীতে আসিতেছে চলে—তারা ভালোবাসে বটে, কিন্তু ভালোবাসা পায় না। অমিয় চেয়েছিল ভালোবাসতে এবং ভালোবাসা পেতে। ভালোবাসা পাবে বলে, সে তাই ‘কাউকে’ ভালোবেসেছিল।
সে বিশ্বস্ত সুত্রে জেনেছিল, মেয়েরা নাকি ভালোবেসে থাকে। প্রকৃতি বা নেড়ি কুকুরের মতো তারা অকৃতজ্ঞ নয়। তার প্রতিদান দেয়। বা, ভালোবাসে। বেলেঘাটার ধোবাপাড়ার প্রসিদ্ধ চাউল-বিক্রেতা হরিপদ ভৌমিকের বড়ো ছেলে ইকনমিক্সের অমিয়পদ ভৌমিক তাই অই উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য গড়চা ফার্স্ট লেনের ইংরেজি অনার্সের গীতি চক্রবর্তীর প্রেমে পড়েছিল এবং বাবা হরিপদ ভৌমিক ও তাঁর পরিবারের রক্তবেচা পয়সায় বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পড়াকালীন একদিন হঠাৎ অ্যালিয়াজ ফ্রাঁসের ফরাসি ভাষার ক্লাস থেকে ডেকে গীতিকে প্রেম-নিবেদনও করেছিল।
অ্যালিয়াজ-এর করিডরে একটা মস্ত শেড-দেওয়া ঝুলন্ত ২০০ পাওয়ারের আলোর বৃত্তাকার পরিধির মধ্যে, ক্লাস-ভাঙা ভিড়ের বিরুদ্ধে তারা তখন হাতে-হাত চেপে দাঁড়িয়ে। ‘উই মসিয়ো’, বলে পাতলা ঠোঁটে ভারি সপ্রতিভ হাসতে গিয়ে হঠাৎ, হঠাৎই থরথর করে কাঁপতে শুরু করেছিল গীতি। ‘আমি তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলুম’—তার প্রগাঢ় হাস্কি গলায় সে যে কতক্ষণ পরে সে বলতে পেরেছিল!
পাশ করেই বিখ্যাত মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানি ভাটচারিয়া অ্যাণ্ড ভোল্টে চাকরি। ছোটবোনের বিয়ে সিক্সটি সিক্সের আগে হল না, তারপর বছর ঘোরার আগেই অমিয় গীতিকে তাদের ধোবাপাড়ার ফ্ল্যাটে নিয়ে এল। অত গাড়ি এক বিয়েতে ধোবাপাড়ায় কেউ কখন দেখেনি। সবই গীতির আত্মীয়-স্বজন।
প্রশস্ত জলাভূমির প্রান্তে ধোবাপাড়ায় তাদের একহারা দোতলা বাড়িটা খুব খারাপ ছিল না। ‘ওমা, এত বক’— কৌমার্যহারা ঘুম থেকে জীবনে প্রথম জেগে উঠে জানালায় দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে বলে উঠেছিল গীতি। দিনকতক মনে হয়েছিল বুঝি বড়ো বেশ লাগচে তার। ছোট ভাই রবিকে চুল আঁচড়ে স্কুল পাঠাত, অমিয়র টাই বেঁধে দিত আর মার পায়ে পায়ে ঘুরঘুর করত, যেন পোষা বিড়ালীটি। মাস ছয়েক যেতে না-যেতেই তবু, গীতি যেন হয়ে গেল গল্পের সেই জেলেনি, সোনার মাছ জালে পেয়েও মাছের কাকুতি-মিনতিতে যে তাকে আবার সমুদ্রে ছেড়ে দিয়েছে এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে যে, নির্জন বেলাভূমি পেরিয়ে, পূর্ণিমা রাতে, জলের ধারে গিয়ে জেলেনি যতবার তাকে, ডাকবে, সোনার মাছ ততবার উঠে আসবে ও ‘তবে তাই হোক’ বলে তার প্রার্থনা পূরণ করবে।
‘সোনার মাছ। সোনাছ মাছ। মাত্র ৬ মাস যেতে না যেতেই সে জলের ধারে গিয়ে দাঁড়ায়।
তীরের কাছে এসে ঘাই মেরে অমিয় মুখ তোলে, ‘কী চাও, জেলেনি?’
‘আমি এখানে হাঁপিয়ে উঠেছি। আমার ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজন সব বালিগঞ্জে। সোনার মাছ, তুমি বালিগঞ্জে একটা ফ্ল্যাট দ্যাখো।’
গোড়াতেই খোদ বালিগঞ্জে যেতে না পারলেও, প্রথম চোটে অমিয় অন্তত সেলিমপুর যেতে পারল। লেভেল ক্রশিং-এর ধারে ছিমছাম ৩-কামরা নতুন ফ্ল্যাট। বেডরুমে অফফ-লিমন, বাকি দুটি ঘরে দুরকম রঙ, ইলেকট্রিক উয়্যারিং, দেওয়াল-আলমারি সব ইনসেট—বড়ো বড়ো গরাদহীন ফ্রেঞ্চ উইনডো। ফ্ল্যাটে একবার ঢুকলে কে বলবে সেলিমপুর! মা বলেছিলেন, ‘ওদিকে যাসনি রে অমি। আলাদা থাকবি তো এদিকেই থাক, সি আই টি রোডে কত সুন্দর সব ফ্ল্যাট হচ্ছে। ওখানকার ঠাক-ঠমক রাখতেই তোর সব রক্ত জল হয়ে যাবে বাবা।’
সেলিমপুরে সব ছিল, দরজা-জানালায় পেলমেট ছিল না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিস্ত্রি ডাকিয়ে এনে গীতি পেলমেট লাগাল, জানালায়-দরজায় ঝোলাল রাজস্থান এম্পোরিয়মের মোটা ক্যাসমেটের মেরুন পর্দা— মিস্ত্রি কিন্তু সহজে গেল না। সে। তারপর, ড্রয়িংরুমের তিনদিকের দেওয়ালে নিচু কিন্তু প্রশস্ত বেঞ্চ (পরে গদি দেওয়া হবে) এবং হেডরেস্টের জন্য দেওয়ালে ফ্রেম ফিট করতে লাগল (পরে মণিপুর মাদুর)।
এসব ১৯৬৭ সালের কথা। তখন বোন-ভগ্নিপোতরা আসত, রবি তো সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে রোজই চলে আসত। অমিয় তখন হাতে পায় মোটে ৮ কি সাড়ে-৮শ’, বাড়িতে তখনো কিছু কিছু দিত। বাবা মারা যেতে শ্রাদ্ধের সব খরচ অমিয়ই দিয়েছিল। হাজার হোক, গীতির বাপের বাড়ির লোকজনের উপস্থিতিতে তার শ্বশুরবাড়ির কাজ। সে ন্যাড়া হয়েছিল।
এবং চুলে চিরুনি চালাবার প্রয়োজন দেখা দেবার আগেই, একদিন অপিস থেকে ফিরে, মাই মাই, কাণ্ড দ্যাখো জেলেনির! ডাইনিং টেবিলের পাশে অমিতাভ বচ্চন সাইজের একখানা নীল গোদরেজ, ফ্রিজ একটি! পিসতুতো পিসিমার স্যাঁকরা অনন্তবাবুর কাছ থেকে মাত্র ৩০ টাকা সুদে ধার নিয়ে ১০০০ টাকা ক্যাশ ডাউন নিয়ে সার অধীপের ভাগ্নের দোকান থেকে (আত্মীয়) গীতি ঠেলার সঙ্গে সারা রাস্তা হেঁটে আজ দুপুরেই এটা এনেছে এবং নিজে মুটে ডেকে তুলিয়েছে। বাকি আড়াই হাজার কিস্তিতে দিলেই হবে।
৩০ টাকা? হ্যাঁ, মাসে মাসে না তো কি বছরে! অর্থাৎ ৩৬% হারে। দীর্ঘশ্বাস চাপলেই অমিয়র নাকের পাটা কাঁপতে থাকে। ঈষৎ হাঁ করে শ্বাসমোচন করবে বলে সে প্রস্তুত, গীতি হঠাৎ তার গলা ধরে ঝুলে পড়ে। আ, গীতি শুধু ফ্রিজই আনে নি, এক ফাঁকে ইভস পার্লার থেকে চুলও তৈরি করে এসেছে। এই অ-দেখা হেয়ার-ডু ও তার অনাঘ্রাত সুগন্ধ, আকাশে যেমন মেঘ তেমনি অমিয়র বুকে লেগে থাকা গীতির ফ্রেঞ্চ-জানা স্তনদ্বয়, এই বাহুল্যবর্জিত পেট—অমিয়র হাত এখন যেখানে—আর ঠোঁটের ওই সুশিক্ষিত পাউটিং—একে উপেক্ষা করার সাধ্য লেট হরিপদ ভৌমিকের চতুর্দশ পুরুষের নেই, অমিয় টের পায়।
‘ত্রে বিয়াঁ! নেস্পা?’
এর মানে কী অমিয় জানে : চমৎকার, নয় কী? প্রতিবার চুম্বনের পরেই গীতি তাকে এই প্রশ্ন করে থাকে এবং এর উত্তরও সে-ই তাকে শিখিয়েছে। সেদিন গোদরেজ না চুম্বন ঠিক কোন বিষয়ে সে জানতে চাইছে বুঝতে না চেয়েই মন্ত্রমুগ্ধের মতো, কৃতজ্ঞ পড়ুয়ার অস্ফুট স্বরে অমিয় যথারীথি বলে ওঠে : ‘উই মা শেরি!’ অর্থাৎ হ্যাঁ, প্রিয়তমা!
‘মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা ধারশোধ করতে তুমি পারবে না?’ উদ্ধত ঠোঁটে আমন্ত্রণ আধ-খোলা রেখে গীতি জানতে চায়। এমন মেয়ে কোথায় পাবে অমিয়, বিয়ের দুবছর পরেও যার ঠোঁট, চুমু খেলেই, অমন টকটকে লাল হয়, আর ফুলে ওঠে?
‘সোনার মাছ, তুমি না পুরুষ মানুষ?’ জেলেনি আরও বলেছিল।
১৯৭৫-এর শুরুতেই, কার্লেকার, চৌবে, সান্যাল, চৌধুরী সকলকে কাটিয়ে বিদেশ বোসের চেয়েও ভাল ড্রিবলিং করে, ভাগ্যিস কোম্পানির দুবাই প্রোজেক্টের অফারটা পেল অমিয়। ওখানে কাম ফতে করে, দুই বছর পরে ফিরে এল প্রাোজেক্ট প্রাোমোশনের ২নং হয়ে। ১নং হতে আরো ৩ বছর।
‘সোনার মাছ! সোনার মাছ!’ নির্জন বেলাভূমি পেরিয়ে, পূর্ণিমা রাত্রে, আবার একদিন জলের ধারে গিয়ে জেলেনি তাকে ডাকে।
তীর এবং জলের সীমারেখায় এসে, ঘাই মেরে মুখ তুলে অমিয় বলে, ‘আবার কী চাও, জেলেনি?’
বালিগঞ্জ সার্কুলার রেডের ওপর নির্মীয়মান এক মাল্টি-স্টোরিডে ৫-তলায় পূর্ব-দক্ষিণ খোলা একটি ৩-কামরা ফ্ল্যাট দেখে এসেছে গীতি। আপাতত মাত্র ৪০,০০০ টাকা ক্যাশ ডাউন দিয়ে অমিয়কে সেটা কিনতে হবে।
‘দেখুন, এইভাবেই আজ টিভি, কাল ফ্রিজ, পরশু ফ্ল্যাট— এ, ম্যা-মানে এইসব প্রসব করতে করতেই আপনি বলতে পারেন—কোথা দিয়ে যে ১৫টা বছর কেটে গেল! তারপর গত শনিবার…
অলিভ কর্ডুরয়ের আঁটো-সাঁটো প্যান্টটা একটু আগে নিজের হাতে টেনেটুনে হাঁটু পর্যন্ত নামিয়েছে অমিয়। সে তখনও ডাক্তারের ছ-তলায় চেম্বার সংলগ্ন বেডের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে। অঝোরে পাউডার-মাখানো ডান হতের গ্লাভস টেনে খুলতে খুলতে ডাঃ ব্যানার্জি যখন পেসেন্টের উন্মুক্ত পাছার দিকে চেয়ে জানতে চাইলেন, ‘বিয়ে তো পনের বছর করেছেন বলছেন, এতদিন কী করছিলেন’, তখন অমিয় গলাটলা ঝেড়ে ঐভাবে শুরু করল।
এতক্ষণ প্রস্টেট মাসাজ হচ্ছিল তার। এক সপ্তাহের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার তাকে স্পেশিমেন দিতে আসতে হয়েছে। প্যান্টুল খুলে তাকে উপুড় হয়ে শুতে হয়েছিল এ কারণেই। কেননা, গুহ্যদ্বারের বদলে গলা দিয়ে বাঁশ চালালেও কি এক ফোঁটা সীমেন পাওয়া যাবে!
প্রথম যেদিন আসে, সেদিন অবশ্য ঠিক প্রস্টেট মাসাজ হয়নি। হাতে দুটো স্লাইড ধরিয়ে ডাঃ ব্যানার্জি বাথরুম দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘যান, ওখানে মাস্টার্বেট করে এতে একটু স্পেসিমেন আনুন।’
‘জাস্ট ওয়ন ড্রপ উড ডু’ বলে কডাৎ করে খুলে-আসা দাঁত মাড়িতে ফিট করে নিয়ে, বলের ডাঁটির ওপর সস্নেহ চাপড় মেরেছিলেন একটি। অর্থাৎ নেকসট।’
আজ তো তবু ঢের সম্মানজনক! বন্ধ বাথরুমের মধ্যে একা-একা, নতমুখ নুঙ্কু হাতে, ও-হো, সেদিন সে কী চোখের-জলে বীর্যের-জলে অবস্থা তার। ৪৮+ এর সাদা বাঙলা এই আসলে ঊনপঞ্চাশ বায়ুতাড়িত বয়সে, সে একবার, ফাঁসির মঞ্চের ওপর শহীদ-সুলভভাবে মাথা তুলে জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিল।
নীচে শীতের পার্ক সার্কাস ময়দান। ধবধবে শেরোয়ানি ও ফেজপরা এক রোগা ও বৃদ্ধ মুসলমান লোহার গেট ঘুরিয়ে ছড়ি-হাতে পার্কে প্রবেশ করছেন, সে দ্যাখে। পার্কে কুয়াশা।
‘আপনি উঠে বসুন।’
ডাঃ বামনদেব ব্যানার্জি বেঁটে-খাটো মানুষ। গা থেকে অ্যাপ্রন খুলে তিনি ঘুরে দাঁড়াতে, অমিয়র মনে হল, অত প্রশস্ত আউটসাইজ বক্ষপট আর একটু দীর্ঘদেহীকেই মানাত যেন, প্রখ্যাত ভ্রূণতত্ববিদ আজ একটি ডাভ-গ্রে রংয়ের দামি স্যুট পরে আছেন, গলায় পোলকা-ডট টাই, গ্লাভস খোলার সময় চীজ কটন শাদা সার্টের কাফের বাইরে তাঁর একরাশ রোমরাজি সে আগেই দেখেছে। কৃতজ্ঞভাবে সে উঠে বসল।
‘হ্যাঁ, বলুন, কী বলছিলেন—
সুচিন্তিত কিছু বলার আগে অমিয়র কপালে ভাঁজ পড়ে। তার নাতিপ্রশস্ত কপাল ভাঁজে-ভাঁজে ছোট হয়ে এল।
‘দেখুন ডাক্তাবাবু’ বলে সে একবার থামল। তারপর বলে গেল, ‘হ্যাঁ, যা জানতে চাইছিলেন—১৫ বছর কী করছিলুম, তাই না। দেখুন, ঐ যা হয়, বিয়ের পর প্রথম ৫ বছর আমরা বাচ্চা চাইনি। তারপর বছর দুই এক্সপেকটেশনে কাটছে—এই হল বলে—কোম্পানি দুবছরের জন্যে দুবাই পাঠাল। ৯ বছর হয়ে গেল, তাই না? ফিরেই ১ নং হবার জন্যে র্যাট রেস তিন বছর—আমাদের এক্সিকিউটিভদের ক্ষেত্রে যা হয়ে থাকে আর কী—এ, ম্যা—আমরা এটাকে বলি বটল-নেক। তারপর ধরুন, ফ্ল্যাট-কেনাকিনি। তৈরি হতেই তো ১ বছর লেগে গেল। কত হল? লুকিয়ে কড় গুণে যাচ্ছিল, তাই সঙ্গে সঙ্গে বলতে পারল অমিয়, ‘প্রায় ১৩ বছর হয়ে গেল, তাই না? তারপর এই শেষের ২ বছর আমরা যখন মুখে না মানলেও, মনে মনে মেনে নিয়েছি যে আমাদের বাচ্চা তাহলে হল না, এমন সময়— ঐ যে সেই ২১ ঘণ্টা লোড শেডিংয়ের দিন…।
‘১৪ই ডিসেম্বর—’
খুব সীরিয়াসলি বলে যাচ্ছিল অমিয়। বাগ্মিতায় বাধা পেয়ে থতমতভাবে, ‘আ-হ্যাঁ, অ্যাঁজ্ঞে-হ্যাঁ, বলে সে ফের শুরু করল, ‘মাঝরাতে, বুঝলেন না, ঐ যাকে গর্ভ-উন্মাদনা না কী বলে না—অবিকল আপনার সেই ব্যাপার।’
‘বোধহয় হঠাৎ মনে পড়েছে ওর মেনাপজের আর খুব বেশি দেরি নেই, এত বলে বুক খালি করে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে, অমিয় মাথা নিচু করল।
প্যাড টেনে নিয়ে ডাঃ ব্যানার্জি এবার প্রেসক্রিপশান লিখতে বসলেন। হাতের কাফের বাইরে চওড়া রিস্টের অনেকটা বেরিয়ে পড়েছে, অমিয় আবারো সেখানে রোমরাশির ঘটা লক্ষ্য করল।
লিখতে লিখতে ডাঃ ব্যানার্জি বললেন, ‘আপনার লাস্ট উইকের সীমেন-রিপোর্ট ইজ পাহফেক্টলি নর্মাল। আমি সিওর হবার জন্যে আজ সোর্স থেকে স্পেশিমেন নিলাম, তবে রিপোর্ট সাধারণত একই হয়। আর, আপনাকে তো আগেই বলেছি, মিসেস ভাউমিকের প্যাথলজিকাল রিপোর্ট ইজ পাহফেক্টলি হেলথি। আপনার সন্তানের মা হতে ওঁর অন্তত রিজনেবল কোনো বাধা নেই।’
লিফট চলছিল। ৬ তলার চেম্বার থেকে অমিয় সিঁড়ি ভেঙে পথে নামল। একটা ট্যাক্সি ডাকতে গিয়ে, না ডেকে, সে ঠিক করল, বেকবাগান পেরিয়ে, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড পর্যন্ত হেঁটেই যাবে। সে ডান দিকের ফুটপাথ ধরে হাঁটতে লাগল, কুয়াশা কেটে শীতের ঝলমলে রোদ এখন রাস্তার এ-দিকেই।
ওষুধ মাত্র ৩টি হলেও ৬ পৃষ্ঠার একটি রচনা-বিশেষ এখন তার পকেটে। প্রায় মিনিট-পনের ধরে একটা ছকের ওপর মোট ২৮ দিনের ব্যাপার প্রাঞ্জলভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন ডাঃ ব্যানার্জি। সামনেই পীরিয়ড। পীরিয়ডের দ্বিতীয় দিন থেকে লিনোরিল (ট্যাব) ২-টো করে প্রথম ৫ দিন, মোট ১০টা। পরে ৫ দিন রোজ ২ টো করে ফার্টিল। এর পরে প্রোফাসি। এটা ইটালিয়ান ওষুধ, দাম ভালোই ও বলাবাহুল্য ইনজেকশান। ‘কলকাতায় পি জি-র কাছে ‘ভূপি’ বা দেজ মেডিকেল ছাড়া এ ওষুধ আর কোথাও পাবেন না।’ পীরিয়ডের ১১ এবং ১২ তারিখে প্রতি পীক পীরিয়ডে এই দুটি ইনজেকসন মিসেস ভাউমিককে নিয়ে যেতে হবে।
‘আসলে পীক পীরিয়ড বলে কিছু নেই’, ডাঃ ব্যানার্জি বুঝিয়ে দিয়েছেন। আসল কথা, বডি-টেম্পারেচার নাইনটি-এইট ডিগ্রি থাকা চাই— এই সময় মিসেস ভাউমিকের যেটা প্রায়ই থাকে না। ‘অ্যাণ্ড দাট ইজ দা হার্ট অফ দা মাটার!’
প্রোফাসি ২৮ দিনই ঐ টেম্পারেচার রাখবে, দরকার হলে আফটার দা ফোর-প্লে ইজ ওভার অ্যাণ্ড জাস্ট বিফোর এনটারিং মুখে থার্মোমিটার দিয়ে একবার দেখে নিতে পারে অমিয়।
‘কিন্তু ডাক্তারবাবু’, চোরাবালিতে ডুবন্ত লোকের মতো দু-হাত তুলে অমিয় বলেছিল, ‘সামনের মাসে আমার ৩ দিনের ট্যুর।’
‘স্ত্রীকে নিয়ে যাবেন।’
‘ওভার-নাইট ট্র্যাভেল…’
‘নো প্রবলেম। ট্রেনে যান।’ হুকে-টাঙানো আপ্রনের গভীর পকেটে কনুই ডুবিয়ে ফী-এর টাকা রাখতে রাখতে ডাঃ ব্যানার্জি বলেছিলেন, ‘ইউ ক্যান অলওয়েজ হায়ার আ কুপে, কাণ্ট ইউ?’
‘ইন সাম’, ডানহাতের আঙুলে বাম হস্তের অঙ্গুলি-সন্নিবেশ করে ডাঃ ব্যানার্জি বলেছিলেন, ‘ইউ-মাস্ট ওয়ার্ক আপন হার ডেয়লি অ্যাণ্ড উইদাউট ফেইল। অ্যাণ্ড আই ক্যান অ্যাসিওর ইউ দা মিরাকল টু হ্যাপেন উইদিন দা নেকসট সিক্স মানথস!’ বাম ও দক্ষিণের দ্বন্দ্বমূলক সিনথেসিস থেকে ডান হাত খুলে তারপর বেলের ডাঁটিতে সস্নেহ চাপড় মেরেছিলেন একটি। অর্থাৎ নেকস্ট।
বেকবাগানের মোড়ে বাস স্টপে এক অন্ধ বাদক হেঁটোর ওপর কাপড় তুলে উবু হয়ে বসে হার্মোনিয়মে ফোক সঙ বাজাচ্ছে। গায়ে ময়লা ফতুয়া, বন্ধ দরজার ওপর রিপিটের মতো তার মুখময় ফাটা বসন্তের দাগ। বেশ স্টাউট লোকটি, প্রায় তার সমবয়সীই হবে অমিয় লক্ষ্য করল। তাকে ঘিরে বর্তুল ভিড়। এক চক্ষুষ্মান মেয়ে-কাউন্টার বৃত্তের বাইরে আলুমিনিয়ামের তোবড়ানো গামলা হাতে ঘুরছে। বেশ বড়সড় গামলাটি, আর তাতে অন্তত মিনিটে গড়ে চারবার ‘ঠঙ’ ‘ঠঙ’ করে শব্দ হচ্ছে।
লয় ঈষৎ দ্রুততর করে দিয়ে, একদম জমিয়ে দিয়েছে লোকটা। সে বাজাচ্ছে :
বরলোকের বিটি লো
লম্বা লম্বা চুউ-উল
অমন মাথায় বেনধে দিব
লাল গেনদা ফুল…
প্রথম মিনিটে যারা পয়সা দিল (অমিয় লক্ষ করল) :
১। মসজিদে প্রার্থনা সেরে মুখের পর্দা তোলা এক প্রৌঢ়া সুখী বিধবা (বিধবাই মনে হল);
২। স্কুল-ড্রেসে লা মার্টিনেয়ারগামী দুজন বালক;
৩। সমাসন্ন বাস ও গানের টানাপোড়েনের ব্যতিব্যস্ত একজন অফিস-যাত্রী (শেষ পর্যন্ত বাসের হ্যাণ্ডেল পরাজিত হল);
৪। আরোহীবিহীন রিক্সার হ্যাণ্ডল মাটিতে নামিয়ে রেখে এক রিক্সাচালক; এবং
৫। স্টার্ট-দেওয়া ডাবল-ডেকারের দোতলা থেকে এক রাবীন্দ্রিক তরুণী (ছুঁড়ে দেওয়া পয়সা, অমিয়কে অবাক করে, ‘ঠঙ’ শব্দে গামলার ঠিক মধ্যিখানে পড়ে)।
গানটির গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীর উদ্দেশে তার অস্তিত্ব পাদস্পর্শের ভঙ্গিমায় বেঁকে যাচ্ছে দেখে, চমকে উঠে, অমিয়কে দেখবে বলে, সে, অমিয়, দুপা পিছিয়ে দাঁড়ায়।
সহসা, নাকের ডগা দিয়ে পলায়নপর একটি ট্যাক্সির উদ্দেশে ‘এই ট্যাক্সি’ না বলে সে আকাশমুখী গ্রীবা তুলে ‘হূ-উ-উ-উ’ বলে ডেকে ওঠে। গীয়ার-অ্যাক্সিলেটর-হাত-পা’র ব্রেক সবকিছু একসঙ্গে চেপে ট্যাক্সিটি মুহূর্তে নিশ্চল হয়ে যেতে দেখে সে একটুও অবাক হয় না। শান্ত পদক্ষেপ গুণে সে ট্যাক্সিতে ওঠে বটে, কিন্তু, এত বেহুঁশ জোরে দরজা বন্ধ করে যে ঠক ঠক করে খেঁপে ওঠে গাড়িটা। দাঁতে-দাঁত চেপে ‘ভূপি’ বলতে গিয়ে তার দুসার দন্তপঙক্তি বিকশিত হয়ে পড়ে, মুখ ছুঁচালো হতে থাকে, সূক্ষ্ম তারের মতো কয়েক গাছি লম্বা-লম্বা গোঁফও বেরিয়ে পড়ে ঠোঁটের চারপাশে। ‘ভূপ-পি!’ বলে সে ট্যাক্সিতে বসে হুঙ্কার দেয়।
এবং ঐ অমানবিক শব্দ-সংকেতের বিশদ ব্যাখ্যা বিনাই ট্যাক্সি তন্মুহূর্তে স্টার্ট নেয় ও এগিয়ে চলতে থাকে। কেননা, সেইসব শেয়ালেরা যারা জন্ম জন্ম শিকারের তরে দিনের বিশ্রুত আলো নিবে গেলে পাহাড়ের বনের ভিতরে নীরবে প্রবেশ করে—বার হয়—চেয়ে দ্যাখে বরফের রাশি জ্যোৎস্নায় পড়ে আছে…তাদের হৃদযন্ত্র আজ তার হৃদয়ে সংস্থাপিত হয়েছে, বেকবাগানের মোড়ে, সহসা নিজেকে দেখে জীবনের পারে, তাদের নিরভিসন্ধি তার স্নায়ু-আধারে অবশেষে কেঁপে উঠেছে।
তৃতীয় ওষুধটার নাম কী যেন? প্রোফাসি না প্রোফেসি? সে যাই হোক, ‘ভূপি’ থেকে দাঁত পর্যন্ত সশস্ত্র হয়ে আজ অমিয় বাড়ি ফিরবে। ভালোবাসা পাবে বলে, কোনো-‘কিছু’কে না ভালোবেসে সে ভালোবেসেছে ‘কাউ’কে। এ তারই পছন্দ। আগমী ৬ মাসে সে তাই উইদাউট ফেইল প্রতিরাতে গীতিকে ভালোবেসে যাবে।
ভালোবাসা কে না চায়?
১৯৮৩