হত্যা-শাস্ত্র
উপক্রম:
কুয়াশার চাদরে ঢাকা মগধের রাজধানী পাটলিপুত্র। কালো আকাশে ফুটে থাকা তারার অবস্থান জানিয়ে দিচ্ছে, সময় রাত দ্বিতীয় প্রহর। স্থান নগরের মধ্যে অবস্থিত একটি পতিতাপল্লি। আলো-আঁধারিতে ঢাকা সড়কে দাঁড়িয়ে আছে কিছু নারী। অপেক্ষায়, কখন কোনো পুরুষ তাদের একটা রাত কিনে নেবে অর্থর বিনিময়ে। দূর থেকে ঘোড়ার খুরের আওয়াজ আসছে। অভাবী এই রমণীরা আশায় বুক বাঁধে। খিদে আর অভাবের সামনে লজ্জা, সম্মান এই কথাগুলো বড়ো ঠুনকো। মুখ ঢাকা এক ঘোড়সওয়ার বেরিয়ে আসে কুয়াশা সরিয়ে। মেয়েদের কাছে এসে গতি ধীর করে সে। একে একে সব মেয়েদের সামনে ঘোড়া দাঁড় করিয়ে জরিপ করে। পছন্দমতো একজনের দিকে আঙুল নির্দেশ করে। সেই মেয়েটা মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে এগিয়ে আসে। নিজের কাপড়ের ফাঁক থেকে একটা রৌপ্য মুদ্রা মেয়েটার সামনে ধরে। কিন্তু সেটা দেয় না। আবার সেটা নিজের কাপড়ের ভাঁজে ঢুকিয়ে রাখে। এটা একধরনের আশ্বাসন, যে, তাকে ন্যায্য মূল্য দেয়ার ক্ষমতা তার আছে। মেয়েটাকে ঘোড়ায় তুলে নিয়ে লোকটা আবার ঘোড়া ছুটিয়ে দেয়। ঘন কুয়াশার মধ্যে মিলিয়ে যায় ঘোড়া আর তার দুই সওয়ার।
কিছুক্ষণ চলার পর একটা নির্জন জায়গায় এসে ঘোড়া থামাল ঘোড়সওয়ার। পথে মেয়েটার সঙ্গে একবারও কথা বলেনি পুরুষটা। একটু অবাক হয় মেয়েটা। এক জায়গায় ঘোড়া থামিয়ে মেয়েটাকে নামতে ইশারা করে পুরুষটা। মেয়েটা নামলে লোকটাও নেমে আসে ঘোড়া থেকে। একটা গলিপথে এগিয়ে গেল লোকটা এবং মেয়েটাকে তার সঙ্গে আসতে ইশারা করল। মেয়েটা তার পিছু নিল। লোকটা এখনও মুখ ঢেকে রেখেছে। বোধ হয় সম্মানিত কুলের কেউ।
লোকটা বেশ খানিকটা অন্ধকারে ঢুকে গেল। মেয়েটা কাছে আসতেই লোকটা তাকে একটা দেয়ালের সঙ্গে ঠেসে ধরল। এক ধরনের বর্বরতা ছিল লোকটার আচরণে। মেয়েটা তার ভাগ্যকে দোষ দিল এবং দাঁতে দাঁত চেপে পরবর্তী ঘটনার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হল। এক্ষুনি তার শরীর ছিঁড়ে খাবে এই পশুটা। চোখ বন্ধ করে প্রমাদ গণল। কিন্তু পরক্ষণেই বুঝল যে কিছু একটা ভুল হচ্ছে। কারণ লোকটার একটা হাত তার মুখ চেপে ধরেছে। চোখ খুলতেই মেয়েটা দেখতে পেল লোকটার হাতে কিছু একটা চকচক করছে। একী!!! এটা তো একটা বড়ো ছুরি!!
তীব্র আতঙ্ক গ্রাস করল মেয়েটাকে। পুরুষটার হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল। ফল হল না। বাহুবলে সে একজন শক্তিশালী পুরুষের সঙ্গে পেরে উঠবে কেন? ছটফট করতেই লোকটা একটা হাঁটু দিয়ে আঘাত করল মেয়েটার পেটে। অস্ফুট যন্ত্রণার কাতরানি বেরোয় শুধু তার চেপে ধরে থাকা মুখ থেকে। মেয়েটা শেষ মুহূর্তে তার আততায়ীর মুখ দেখতে পেল। তার চোখের তীব্র আক্রোশ যেন ঝলসে দিতে চায় মেয়েটার শরীর। অনুভব করল তার পেটের ভেতর ঠান্ডা লোহার ফলা ঢুকে যাচ্ছে। তীব্র একটা যন্ত্রণা হচ্ছে পেটে।