সাগর উত্থিতা (সবুজ সমুদ্রে ওঠে অগণন ঢেউ)

সাগর উত্থিতা

সবুজ সমুদ্রে ওঠে অগণন ঢেউ
অগণন শ্বেত অশ্বারোহী—
বালুকাবেলাকে দেয় চূর্ণ চূর্ণ চুম্বনের ফেনা—
বিরাট বালুকাবেলা চলে যায় স্ফটিক-আকাশে
স্থিরদৃষ্টি, মৌন, উদাসীন।

আমি একা চলি লঘুগতি,
সমুদ্রের শ্বাস টেনে বাক্যহীন চলেছি একেলা।

নির্মেঘ পৌষের প্রখর রৌদ্রের
মুঠি মুঠি হীরক কণায়
অন্তহীন বেলাভূমি কেঁপে চলে যায়
উদাসীন রহস্যের শেষ কিনারায়।
সবুজ সমুদ্র আর স্ফটিক আকাশ
ঢেউদের উল্লাসের মত্ত অট্টহাস—
বৈরাগিণী বালুকার বুকে শুধু
একমাত্র আমার নিঃশ্বাস।

ছায়া চলে প্রতি পদক্ষেপে
চলেছি একেলা
সমুদ্রের শ্বাস টেনে বাক্যহীন চলে যাই একা।
বালিয়াড়ি কেঁপে ওঠে নির্নিমেষ নয়নে রৌদ্রের,
সমুদ্র আকাশ মেশে আবেশের ফিরোজা রেখায়,
শাণিত বাতাসে পাই নিঃশ্বাসের প্রবল বিস্তার,
লবণাক্ত স্বাদ মুখে—বলিষ্ঠতা নিঃসঙ্গ চলার!

বালিয়াড়ি পার হয়ে অকস্মাৎ আবির্ভূত চোখে
রৌদ্রে ও সুবর্ণে মেশা পরিপূর্ণ তনু বলীয়ান্!
উলঙ্গ শরীরে ঝরে সমুদ্রের লবণাক্ত জল
রৌদ্রের হীরকচূর্ণ সর্বঅঙ্গে স্ফুলিঙ্গ ছড়ায়,
চোখের কালোতে স্নিগ্ধ জলতৃপ্ত দীর্ঘ কালো চুল
দুলিছে সুঠাম তার নিতম্বের তটদেশ বেয়ে,
ধরে আছে আলো
কঠিন উদ্ধত শ্যাম স্তনাগ্রচূড়ায়।

নীলাভ সমুদ্র’পরে শুভ্র মূর্তি দেখি দুই চোখে
স্ফটিক আকাশতলে সীমাহীন বালুকাবেলায়
লবণাক্ত বায়ুস্নিগ্ধ খররৌদ্রালোকে
নিভৃতির তপোভঙ্গ ক’রে
সুদীর্ঘ সুঠাম নগ্ন তনু বলীয়ান
শুনি তার প্রাণের স্পন্দন,
আদিম ও অন্তহীন সংগীতের
চেয়ে দেখি উচ্ছল ইঙ্গিত।

অগুণ্ঠিত নারী—
শরতের সূর্য সে যে—সে তো নয় কোজাগরী শশী,
কুণ্ঠাহীন দৃষ্টি তার আমাকে সে দিলে দৃষ্টি ভরে,
আমি তাই একা তটে বসি,
আর ভাবি রৌদ্রময়
ভাষা তার কী-বা বলে—ডায়ানা? উর্বশী?

১৯২৯

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *