সন্ধ্যা (বামদিকে গিরিশৃঙ্গ আকাশকে করেছে আহত)

সন্ধ্যা

বামদিকে গিরিশৃঙ্গ আকাশকে করেছে আহত,
শ্যামাঙ্গী দিতিকে যেন মুষ্টি তোলে ক্ষিপ্ত দৈত্যশিশু।
দুরন্ত পর্বতচূড়া চোখকে সে এড়াতে চায় যে
মানুষের মাঠ ফেলে—আমারই এ হৃদয়ের মতো!

অন্যদিকে বেয়ে চলে অন্তহীন ঘন অরণ্যানী,
মানুষেরও দেখিনি তো অন্তহীন এত ঘন ভিড়।
মানুষের ভিড় কভু নয় এত অজ্ঞাত নিবিড়।
কোন্ লোকে এসেছি যে, জানি নাকো বনানীর বাণী।

পশ্চাতে রয়েছে পড়ে পাথরের একখানি হাড়,
শিরে শিরে রিনিঝিনি রক্তধারা স্পর্শ তার পায়।
পাথরের কী যে ভাষা! রক্তধারা হিম হয়ে যায়।
অজ্ঞাত ধমনী কার স্পর্শে করে আমাকে নিঃসাড়।

রক্তের ফোয়ারা সূর্য অকস্মাৎ পর্বতের মাঝে
ডুবে গেল দ্রুতগতি, ঘূর্ণাবর্তে কুমিরের মতো।
গোধূলির ছায়া নামে আর ওঠে কারা শত শত
বনানীতে, প্রান্তরে ও কৃষ্ণ ক্রূর পর্বতের মাঝে।

সমুৎকর্ণ অরণ্যানী, ঊর্ধ্বগ্রীব পর্বতের মালা
বিধাতার মনে আসে বাসনার বিবর্ণ আবেশ,
জলেস্থলে কম্পমান সৃজনের রূঢ় প্রেমাবেগ,
আমার নিঃশ্বাস স্তব্ধ, কী বিস্ময় দুই চোখে জ্বালা।

মনে হয় মৃত আমি, দেহ আর নয়কো আমার।
ম্যামথেরা আসে বুঝি? প্রেম জাগে পৃথিবীর বুকে?
মাটি কাঁপে, ছোটে যত মদমত্ত নেআগুরতাল্;
দেহ হিম, মন কাঁপে, জাতিস্মর ওঠে অন্ধকার।

১৯৩১

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *