সংকেতস্থান
শুনেছিনু প্রেমের কুঞ্জে অনেক বাঁকা গলি ঘুঁজি—একথা রবীন্দ্রনাথ যা মনে করেই লিখুন না কেন কথাটা এত সত্যি যে বৃদ্ধরা সহ্য করতে পারেন না। সহৃদয়তা ছাড়া, কথা বোঝাও সম্ভব নয়; প্রেমের জন্য আড়াল চাই-ই—চাই এমন একটা গোপন জায়গা, যা সাধারণত পূর্বালোচিত অথবা পূর্বনির্দিষ্ট। প্রাচীনদের ভাষায় এই পূর্বনির্দিষ্ট জায়গাটার নামই সংকেতস্থান। বৃদ্ধরা আশ্বস্ত হবেন প্রাচীন যুগের রীতিনীতি জেনে আর তাঁদের একান্ত কর্তব্য ঋষিকবি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন : বুড়ো থাকুন ঘরের কোণে/পয়সাকড়ি করুন জমা/দেখুন বসে বিষয়পত্র/চালান মামলা-মোকদ্দমা/ফাগুন মাসে লগ্ন দেখে/যুবারা যাক বনের পথে,—/রাত্রি জেগে সাধ্যসাধন/থাকুক রত কঠিন ব্রতে। কঠিন ব্রত তো বটেই। গুরুজনের চোখ এড়ানো মানেই গুরুজনকে শ্রদ্ধা করা। তাছাড়া রসশাস্ত্রে বলে গুরুজনের নিষেধ প্রেমকে আরও চেতিয়ে দেয়।
অভিজ্ঞানশকুন্তলে নায়িকা যেখানে রাজার সঙ্গে প্রথম মিলনের আকাঙ্ক্ষায় মৃতপ্রায়, অনসূয়া তখন ভীষণ চিন্তিত কী করে খুব তাড়াতাড়ি এবং নিভৃতে সখীর মনোরথ সিদ্ধ করা যায়। প্রিয়ংবদা যথেষ্ট বাস্তববুদ্ধিসম্পন্না, বললেন তাড়াতাড়ির ব্যাপারে অসুবিধে হবে না, কিন্তু নিভৃতে কি করে হয় সেটা চিন্তার বিষয়। কাজেই নিভৃতস্থান নিয়েই যত গণ্ডগোল।
রামায়ণের পূর্ববর্তী প্রাচীন সাহিত্যে সরাসরি সংকেতস্থানের উল্লেখ পাই না তবে ঋগবেদের মধ্যে কতকগুলো উপমায় সংকেতস্থানের আভাস মেলে। প্রণয়ী যেরকম প্রণয়িনীর কাছে যায় তুমি সেরকম করে আসছ; যুবাপুরুষ যেরকম প্রেমের সঙ্গে প্রেমপূর্ণা যুবতীদের দিকে গমন করে এইসব উপমা থেকে মনে হয় সংকেতস্থানের ব্যাপারটা তখনও ছিল।
প্রাচীন সাহিত্যের মধ্যে প্রথম সংকেতস্থানের উল্লেখ পাই আদি কবির লেখায়। আকাশমার্গে সঞ্চারিণী রম্ভাকে দেখে বিহ্বল হলেন রাবণ, আসঙ্গলিপ্সা জানালেন তাঁকে। রম্ভা উত্তর করলেন তিনি ‘কৃতসঙ্কেতা’। কুবেরপুত্র নলকুবর সংকেতস্থানে অপেক্ষা করবেন তার জন্য। তখন রাবণের কাজ রাবণ করলেন; কিন্তু সংকেতস্থানে নলকুবরের অপেক্ষা করার কথা আমরা জানতে পারলাম।
সমাজকে সম্পূর্ণ শৃঙ্খলাবদ্ধ করার কঠিন ব্রত নিয়েছিলেন যিনি সেই মনুমহারাজ কিন্তু এই সংকেতস্থানগুলোর দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়েছেন। অবশ্য পরস্ত্রীর সঙ্গে নির্জনস্থানে আলাপই তাঁর রাগের উদ্রেক করেছে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে সংকেতের জায়গাগুলো তিনি বলে দিয়েছেন। তাঁর মতে পুকুর থেকে জল আনবার পথে, ঘাটে, জনবিরল গুল্মলতাবৃত স্থানে, বনে, নদীসঙ্গমে যদি কেউ পরস্ত্রীর সঙ্গে রসালাপ করে তবে তাঁকে দণ্ড দেওয়া হবে।
মৎস্যপুরাণে শর্মিষ্ঠাকে দেখতে পাই রাজা যযাতির সঙ্গে গোপন মিলনের অপেক্ষায়। শেষ পর্যন্ত অশোককুঞ্জের কাছে শর্মিষ্ঠার অভিলাষ সিদ্ধ হল।
পদ্মপুরাণ এবং ভাগবত পুরাণের মধ্যে বহু জায়গায় সংকেতস্থানের কথা রয়েছে। গোচারণের অছিলায় বনে চলে যেতেন কৃষ্ণ, সেখানেই তাঁর সঙ্গে মিলন হত গোপরমণীদের। তাছাড়া কাত্যায়নী মন্দিরে পূজার ছলে আসতেন গোপীরা, সেখানে কৃষ্ণের সঙ্গে মিলন হত তাঁদের। বিখ্যাত রাসলীলার সংকেত স্থান ছিল বন—সময়টা ছিল শরৎকালের রাত্রি।
সংকেতস্থানের এত ছড়াছড়ি দেখে আলংকারিকেরা কয়েকটা নির্জনস্থানের কথা উল্লেখ করেছেন যেমন খেত, বাগানবাড়ি, ভাঙা মন্দির, দূতীর বাড়ি, উপবন, শ্মশান, নদীতীর, আর যে সমস্ত জায়গায় আড়াল একটু বেশি অথবা অন্ধকার একটু বেশি।
আসলে নিভৃতস্থান নিয়ে কথা, প্রেমিক-প্রেমিকার আসল প্রয়োজন সেটাই। নিভৃত যে কত নিভৃত হতে পারে তার নমুনা প্রাচীন সাহিত্য থেকে দেওয়া যেতে পারে। প্রেমিক প্রেমিকাকে দূরে কোথাও পদ্মপুকুরের ধারে আসতে বলেছে। প্রেমিক আসেনি। প্রেমিকার মনের ভাব—আহা কি সুযোগই না ছিল। পদ্মপাতার ওপরে বকপংক্তি নিশ্চল, নিস্পন্দ হয়ে আছে, যেন নির্মল মরকত ভাজনের ওপর শঙ্খশুক্তি। কতখানি নির্জন হলে বকপংক্তির তুলনা আসে। আমাদের ধারণা সংকেতের সময়টা ছিল দুপুরবেলা—যেটা কবি স্বকণ্ঠে বলেননি।
আর এক প্রেমিকা সহচরকে নিয়ে গেছে এক পুরোনো বাড়িতে। সেখানে দাঁড়িয়ে প্রেমিকা বলছে—বাড়িটার ছাদের ওপর থেকে মাকড়সার জাল নেমেছে; জালটি ঘন এবং সুবিন্যস্ত, মাঝখানে মাকড়সাটি রয়েছে যেন দুর্লক্ষ্যসূত্রে গ্রথিত একটি বকুল ফুল। বক্তব্য হল তাড়াতাড়ির কোনো প্রয়োজন নেই, বহুকাল এদিকে কোনও মানুষ আসেনি। দুর্লক্ষ্যসূত্রে গ্রথিত বকুল ফুল—এই তুলনাটিতে বোঝা যায় মাকড়সার জালটির সূক্ষ্ম তন্তুগুলোও ছেঁড়েনি অর্থাৎ জনপ্রাণীর সমাগম নেই এখানে।
আর এক যুগল গেছেন এক ভাঙা মন্দিরে। প্রেমিকা বলছে—মন্দিরের ওপর দিকে কার্নিসটা দেখতে পাচ্ছ। ওখানে বসে আছে কত পায়রা, ওদের বকম বকম শব্দে কষ্ট পাচ্ছে শুধু এই ভাঙা দেউলের দেবতা। মনুষ্যেতর দুটি শব্দ—একটি তির্যক প্রাণী পায়রা, অপরটি অতিমানব দেবতা—এতে বোঝা যায় মানুষের কোনো যাতায়াত নেই এখানে।
সংকেতস্থানের নৈঃশব্দ্যের পরিমাপ ছেড়ে এবার সংকেতের কৌশলের কথায় আসি। প্রাচীনকালে সংকেতস্থানে যাওয়া হত দু-রকমে। এক, প্রেমিক-প্রেমিকার অজান্তেই সমানহৃদয় বন্ধুবান্ধবেরা দুজনের পূর্বরাগ লক্ষ্য করে তাদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে জুটিয়ে দিত। উপলক্ষ হিসেবে থাকত কোনো উৎসব, যেখানে প্রেমিক-প্রেমিকার একত্র হওয়াটা আলাদা করে লোকের চোখে পড়ত না। ভবভূতির মালতীমাধবে অবলোকিতা জানতেন মালতী বসন্তোৎসবে মদনোদ্যানে যাবেন। সেখানে মাধবকে কী করে পাঠানো যায় তারই উদ্যোগ করতে লাগলেন অবলোকিতা। উৎসব কিংবা পূজাপার্বণ উপলক্ষ করে প্রেমের সুযোগ সদব্যবহার করা এখনও যেমন আছে, তখনও তেমনি ছিল। রৈবতক পর্বতে অন্ধক এবং যদুবংশীয়রা যখন উৎসব করছিলেন, সেই সময়েই কৃষ্ণ অর্জুনকে নিয়ে সুভদ্রাকে দেখান, ফল সুভদ্রাহরণ। কালিদাসের মালবিকাগ্নিমিত্রে প্রধানত বিদূষক এবং সখী বকুলবালিকার চেষ্টায় রাজা অগ্নিমিত্র প্রমোদ উদ্যানে মালবিকার সঙ্গ লাভ করেন। উপলক্ষ মদনমহোৎসব।
আরেক ধরনের সংকেতস্থানের কথা আমরা জানি যা প্রেমিক-প্রেমিকারা নিজেরাই ঠিক করত। এঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন অত্যন্ত বিদগ্ধ অথবা বিদগ্ধা। তাঁদের কথাবার্তার ধরনও তাই অত্যন্ত বক্রোক্তিবিশিষ্ট। অন্য সমক্ষেও তাঁরা সংকেতস্থানের কথা বলে দিতে পারতেন, প্রেমিক বা প্রেমিকা কারও বুঝতে অসুবিধে হত না। বুঝতে না পারলে অবশ্য অন্য কেউ বুঝিয়ে দিতে পারত। এ ব্যাপারে শ্রেষ্ঠ উদাহরণ বোধহয় কথাসরিৎসাগরের দেবদত্ত। একদা তিনি রাজা সুশর্মার কন্যাকে বাতায়নপথে দেখতে পেলেন। রাজকন্যা তাকে কাছে আসতে বলে দন্তদ্বারা একটি পুষ্প গ্রহণ করে তার দিকেই নিক্ষেপ করলেন। দেবদত্ত ইঙ্গিত না বুঝে উপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করলেন। বিদগ্ধ উপাধ্যায় বললেন, ‘দন্তদ্বারা পুষ্প নিক্ষেপ করে রাজকন্যা এই কথা বলেছে যে, পুষ্পদন্ত নামে এখানে যে কুসুমৈশ্বর্যময় দেবমন্দির আছে তুমি সেখানে গিয়ে আমার প্রতীক্ষা করো। জানি না আজকের দিনে এইরকম সংকেত করবার মতো এবং বুঝবার মতো প্রেমিক-প্রেমিকা আছে কিনা। রূপগোস্বামীর ললিতমাধব নাটকে নন্দ-যশোদার প্রায় সামনেই কৃষ্ণের কানে কানে কুন্দলতা বলছে : তারাধীশ, তৃষ্ণাকুলা চকোরী নিরন্তর দগ্ধ হচ্ছে, তাড়াতাড়ি অশোককুঞ্জে চল। তারাধীশ বলতে যেমন চাঁদ বোঝায় তেমনি তারা রাধার আরেক নাম। কবিপ্রসিদ্ধি আছে চকোর-চকোরী চাঁদের জ্যোৎস্না পান করে বেঁচে থাকে, এক্ষেত্রে চকোরী রাধা।
সংকেতের কৌশল সবচেয়ে সুন্দর বোধহয় প্রাকৃত কাব্য গাহাসত্তসঈতে। অবশ্য প্রেমিকা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরকীয়া। এক প্রেমিকা পাশের বাড়ির এক মহিলাকে বলছে—হ্যাঁগো, আমার বাড়িটার ওপরে একটু নজর রেখো। এই ছেলেটার বাপ বিস্বাদ বলে কুয়োর জল খেতে পারে না, তাই তাড়াতাড়ি তমালবীথির কাছে জল আনতে একলাই যাচ্ছি। (‘একলা’, এই শব্দটির অর্থ লক্ষণীয়) ছেলেটার দিকেও একটু নজর রেখো। ছেলের বাপের বায়নারও অন্ত নেই, ঘন নলখাগড়ার বন, সেখান থেকে জল আনতে হবে, তা কাটাছেঁড়া একটু হবে তা আর কি করব। অর্থাৎ প্রেমিকের উপভোগ চিহ্ন দেখে যাতে কোন সন্দেহ না হয় তার ব্যবস্থা আগে থেকেই পাকা।
প্রেমিকের আসার কথা ছিল নদীর ধারে কোথাও। কলসী কাঁখে জল আনার ছলে সেখানে গিয়ে প্রেমিকা দেখল প্রেমিকপ্রবর আসেনি। অগত্যা জল নিয়ে ঘরের দিকে। এদিকে ঘরের দুয়োরে এসে প্রেমিকা দেখতে পেল প্রেমিক চলেছে নির্দিষ্ট স্থানে। তখন এক অন্তরঙ্গা সখী বাঁচিয়ে দিল। সে বলল—আহা হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে, কলসীটাও তো ভেঙে গেল দেখছি, যাও অন্য কলসী নিয়ে আবার জল নিয়ে এসো।
সবচেয়ে মজা লাগে শাশুড়ি এবং বউ—দুজনের পারস্পরিক অভিলাপে। শাশুড়ি, বউকে সন্দেহ করে বলছে—বউ নিশ্চয় সেই বংশকুঞ্জে গিয়েছিল—না হলে মাথার মধ্যে বাঁশপাতা এল কি করে? প্রত্যুত্তরে বউ বলছে—আমার মাথায় নয় বাঁশপাতা, কিন্তু আপনি! আপনার পিঠ যে ধুলোয় সাদা হয়ে গেছে।
অনেকে আবার দূরে না গিয়ে ঘরেই এনে তুলেছে প্রেমিককে। সংকেতস্থান মধুকবন। সুবিধে না দেখে প্রেমিক কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে। দূতী তখন আরেকজনকে বলছে, রাত করে ঘরের বউ মধুকফুল তুলবে কি! ওর স্বামী নিজেই ফুল তুলতে গেছে। অর্থাৎ হে প্রেমিক তুমি ওই ঘরেই চলে যাও।
এখনকার সংকেতস্থানে যেমন চানাচুরওয়ালা, বেকার ছেলে—প্যাস্ট্রিওয়ালার উপদ্রব—এ জিনিস তখনও ছিল। গোদাবরীর তীরবর্তী এক কুঞ্জে প্রেমিকার আসার কথা। সময়ের আগে পৌঁছে প্রেমিক দেখল মহা উপদ্রব, এক ধার্মিক খুব মন দিয়ে ফুল তুলছে। তাকে তাড়ানোর জন্য প্রেমিক বলল ‘আপনি এবার নির্ঝঞ্ঝাটে ফুল তুলতে পারেন কেননা যে কুকুরটা আপনাকে খুব জ্বালাত সেটাকে একটা সিংহ মেরে ফেলেছে, সিংহটা ওই কাছেই থাকে কিনা। কুকুরের জায়গায় সিংহের কথা শুনে ধার্মিক তখন পালাতে পারলে বাঁচে।
কখনও বা গুরুজনের উপস্থিতি সংকেতস্থানে যেতে না পারার বেদনা ডেকে আনে, কখনও বা তাড়াতাড়িতে ঠিক করার ফলে বেতসকুঞ্জ না রেবানদীর তীর—এ সম্বন্ধে ভ্রান্তি হয়ে যায়। এই ভ্রান্তির ফলে কখনও একের অন্যের ওপর ক্রোধাগ্নি জ্বলে ওঠে। যেমন প্রেমিকা বলছে—অকৃতজ্ঞ কোথাকার, মেঘের মতো শ্যামবর্ণ সেই বেতসকুঞ্জ, সূর্যকিরণ পর্যন্ত ঘন পাতার আস্তরণে ঢাকা—এমন বেতসকুঞ্জ যদি স্মরণ করতে না পার তো রেবা নদীর জলও কি কাছে ছিল না? অর্থাৎ ডুবে মরলেই হত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর প্রেমিক না এলে এইরকমই রাগ হয় বটে।
ত্রিভুজ প্রেমের ক্ষেত্রে অনভিলষিত প্রেমিকের হত্যার জন্যও ব্যবহার হত এই সংকেতস্থান। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ মহাভারতের বিরাটপর্বে। ভীমের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে দ্রৌপদী কীচককে বললেন, ‘বিরাটরাজার নবনির্মিত নৃত্যশালায় রাত্রিতে তোমার সঙ্গে মিলন হবে, একা এসো’। সংকেতটি ভীমকে জানিয়ে দিলেন দ্রৌপদী। আর ঠিক সেই রাত্রেই কীচক বধ।
সংকেতস্থানে হত্যা, সংকেতস্থানের ভুল বোঝাবুঝি, অনভীষ্ট ব্যক্তির উপদ্রব, সময়মতো না যেতে পারার দুঃখ—এসব সত্ত্বেও সংকেতস্থানগুলির স্মৃতি পরবর্তীকালে সুখের ব্যথার মতো বুকে বাজে। প্রেমিক-প্রেমিকার পূর্বরাগ তাদের সংকেতস্থানে নিয়ে যায়, কিন্তু বিবাহোত্তর কালেও সেইসব স্মৃতি উদবেলিত করে, মথিত করে প্রেমিক হৃদয়কে। এ ব্যাপারে শ্রেষ্ঠ উদাহরণ বোধহয় শিলাভট্টারিকার একটি শ্লোক। রাধাভাবাতুর চৈতন্যদেব রথারূঢ় জগন্নাথকে শ্যামলকিশোর ভেবে এই শ্লোকটি স্মরণ করেছেন। নায়িকা বলছে—
যিনি আমার কুমারীত্ব হরণ করেছেন সেই বর উপস্থিত, সেই চৈতী রাতের চাঁদনী আজও রয়েছে। প্রস্ফুটিত মালতীর গন্ধভরা বাতাস আজও আমাদের স্পর্শ করছে, আমি নিজেও সেই আমিই রয়েছি, তবুও বিচিত্র নর্মসুরতে রেবার তীরে বেতসী তরুর জন্য আমার প্রাণমন আকুল হয়ে উঠছে।