ষাঁড়ের গোবর

ষাঁড়ের গোবর

সাধারণত গরুর গোবর আঙ্গিনা পরিষ্কার করা, মাটির ঘরদোর লেপা, ঘুঁটে বানানো বা জ্বালানির কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ষাঁড়ের গোবর প্রবাদের অর্থ হচ্ছে অকেজো বা অকর্মণ্য মানুষ। ষাঁড়ের গোবর সত্যিই কোনো কাজে লাগে না তা কিন্তু নয়। বিষয়টি ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। আমাদের জানামতে গরুর (গাভীই হোক আর ষাঁড় অথবা বলদই হোক) গোবর মাত্রই নানা কাজে ব্যবহৃত হয়। তাহলে কোন্ ষাঁড়ের গোবর কাজে লাগে না?

আমরা জানি যে, হিন্দুদের মৃত্যু হলে নির্দিষ্ট নিয়মে শ্রাদ্ধ করা হয় মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তির জন্য। শ্রাদ্ধের আবার নানা প্রকারভেদ হয় দান বা উৎসর্গের প্রকারান্তরে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান মৃতের শান্তিকামনায় শ্রাদ্ধ পরিচালনাকারী ব্রাহ্মণে উদ্দেশে দান করা) পরিমাণ অনুযায়ী। এর মধ্যে এক রকম শ্রাদ্ধ হচ্ছে বৃষোৎসর্গ বা ষাঁড় উৎসর্গ করা শ্রাদ্ধ। শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে বৃষোৎসর্গ করলে তার প্রেতরূপী আত্মা মুক্তিপ্রাপ্ত হয়। পতিপুত্রবতী মৃত নারীর উদ্দেশে আবার বৃষোৎসর্গ করা যায় না। শ্রাদ্ধে উৎসর্গীকৃত ষাঁড় কাউকে না দান করে ছেড়ে দিতে হয়। আজকাল অবশ্য এ ধরনের উৎসর্গ বাস্তবরূপে দেখা যায় না।

বৃষোৎসর্গ শ্রাদ্ধে শ্রাদ্ধকর্তা চারটি বকনা বাছুরসহ ষাঁড় উৎসর্গ করে ছেড়ে দেয়। এই উৎসর্গ করা ষাঁড়ের গোবর স্থানীয় লোকেরা কোনো মাঙ্গলিক কাজ, ঘরদোর লেপা কিংবা জ্বালানির কাজে ব্যবহার করে না। সে কারণে এ ধরনের ষাঁড়ের গোবর মূল্যহীন বা অকেজো হিসেবে বিবেচিত হয়। আবার অন্যান্য ষাঁড়ের গোবরও ধর্মীয় বা মাঙ্গলিক কাজে ব্যবহৃত হয় না। সেজন্য আমাদের দেশে অকর্মণ্য বা অকেজো, অথর্ব লোককে ষাঁড়ের গোবর নামে চিহ্নিত করা হয় ব্যঙ্গ করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *