ষষ্ঠাধ্যায়ে—প্রথমাহ্নিকম্
বুদ্ধিপূৰ্ব্বা বাক্যকৃতির্বেদে।। ১।।
অনুবাদ
বেদবাক্যরচনা বুদ্ধিপূৰ্ব্বক (হইয়াছে)।। ১।।
ব্যাখ্যা
প্রথমেই ধৰ্ম্ম-ব্যাখ্যা প্রতিজ্ঞাত হইয়াছে। ধৰ্ম্মতত্ত্ব-কথনই ধৰ্ম্ম-ব্যাখ্যা। ধৰ্ম্মতত্ত্ব বলিতে হইলে ধর্মের ফল, প্রমাণ, স্বরূপ, হেতু এবং বিরোধী সকলই বলিতে হয়। ধৰ্ম্মব্যাখ্যান-প্রসঙ্গে ফলের কথা বলা হইয়াছে। কেননা শিষ্যদিগের ফল-জিজ্ঞাসা বলবতী ছিল। তৎপ্রসঙ্গে অনেক কথাই বলা হইয়াছে। প্রসঙ্গাগত অবশিষ্ট অনেক কথা পশ্চাৎ বিবৃত হইবে। এক্ষণে প্রমাণাদির কথা যাহা বক্তব্য আছে তাহা কথিত হইতেছে। এই সূত্রের ভাবার্থ এই যে,–ধর্ম্ম বা তদ্বিরোধী অর্থাৎ অধর্ম্মের প্রমাণ বেদ। বেদ ঈশ্বরকৃত। ঈশ্বর যাহা বলিয়াছেন তাহা অভ্রান্ত। ঈশ্বর যখন বলিয়াছেন ‘স্বৰ্গকামো যজেত’—যাগ স্বৰ্গকামী পুরুষের ইষ্টসিদ্ধির কারণ,—তখন অবশ্যই ধৰ্ম্ম আছে। যাগ- কৰ্ম্ম অল্প সময়েই পরিসমাপ্ত হয়। স্বর্গ—মৃত্যুর পর হইয়া থাকে—সুতরাং যাগ হইবার পঞ্চাশ বৎসর পরেও স্বর্গ হইতে পারে। পরন্তু এই স্বর্গের অব্যবহিত পূৰ্ব্বক্ষণে যাগ সাক্ষাৎ সম্বন্ধে থাকে না, অথচ তাহা স্বর্গরূপ ইষ্টসিদ্ধির কারণ। সুতরাং কোন একটী পরম্পরা সম্বন্ধে যাগকে অব্যবহিত পূর্ব্বক্ষণে—রাখিতে হইবে, নতুবা কারণই হইবে না। সেই পরম্পরাসম্বন্ধ স্বজন্য ব্যাপার। অর্থাৎ যাগ-জন্য এমন একটা কিছু হয়—যাহা স্বর্গের অব্যবহিত পূর্ব্বক্ষণ পৰ্য্যন্ত থাকে। সেই যে কিছু অর্থাৎ বিহিত কর্ম্মের সেই যে ব্যাপার তাহাই ধর্ম্ম। পক্ষান্তরে যাহা নিষিদ্ধ অর্থাৎ ‘গাং মা বধিষ্ঠাঃ’ গোহত্যা করিও না—এই যে বেদের নিষেধ ইহা দ্বারা গোবধ যে অনিষ্টহেতু ইহা বুঝান হইয়াছে। কিন্তু কোন্ অনিষ্টের হেতু—মাংসভোজনাদিরূপ ইষ্টসাধক হইয়াও তাহা অনিষ্টের হেতু হইল কেন?—না তাহা নরকের কারণ। কিন্তু এই যে নরক ইহা তো মৃত্যুর পর হইবে, গোহত্যা নরকের হেতু হয় কিরূপে?—কেননা তাহা তো নরকের অব্যবহিত পূৰ্ব্বক্ষণে থাকিতেছে না। সুতরাং এখানেও গোহত্যা করিলে এমন একটা কিছু হয় যাহা নরকের অব্যবহিত পূর্ব্বক্ষণে থাকে। তাহাই অর্থাৎ নিষিদ্ধকৰ্ম্ম-জন্য যে ব্যাপার—তাহাই অধর্ম্ম। তবেই দেখ, এই বেদবাক্যই ধৰ্ম্মাধর্ম্মের প্রমাণ। কিন্তু বেদ যে অভ্রান্ত তাহা বুঝিতে হইলে বেদকে ঈশ্বরপ্রণীত স্থির করিতে হয়। বেদকে যাঁহারা নিত্য বলেন, তাঁহাদের মতে বেদকে প্রমাণরূপে সংস্থাপিত করা সহজ হয় না; কেননা—দেখিতে পাওয়া যায়, যে ব্যক্তি যে বিষয়ে অভ্রান্ত ও অপ্রতারক তাহার বাক্যই যোগ্য শ্রোতার প্রমা-জ্ঞান উৎপাদনে সমর্থ; অর্থাৎ সেই বাক্য প্রমাণবাক্যরূপে গণ্য হয়, নতুবা নহে; বেদবাক্য সেইরূপ হইলেই তাহাকে প্রমাণ বলিতে পারা যায়। বেদ নিত্য হইলে—তাহাকে প্রমাণ বলিয়া নিশ্চয় করিতে হইলে, তাহার প্রসিদ্ধ দৃষ্টান্ত মিলে না। সুতরাং তাহাকে প্রমাণ বলিয়া প্রতিপন্ন করা দুর্ঘট হইয়া উঠে। এইজন্য মহর্ষি বলিতেছেন—যেমন সকল সত্য বাক্য রচনাই বুদ্ধিপূর্ব্বক অর্থাৎ বাক্যার্থ-জ্ঞানপূর্ব্বক হইয়া থাকে—বেদবাক্যও সেইরূপ। বরিশালে স্বদেশী আন্দোলন প্রবল, যে ব্যক্তি এই বাক্য প্রথম প্রয়োগ করে, তাহার এই বাক্যার্থে জ্ঞান থাকা চাই। তেমনই ‘স্বর্গকামো যজেত’ ‘গাং মা বধিষ্ঠাঃ’ ইত্যাদি বেদবাক্যও বক্তার বাক্যার্থজ্ঞানপূর্ব্বক উচ্চারিত। সেই বাক্যার্থ—ধৰ্ম্ম-অধর্ম্ম-স্বর্গ ইত্যাদি সাধারণ বক্তার পরিজ্ঞাত নহে। সৃষ্টির প্রারম্ভেও উহা যাঁহার পরিজ্ঞাত, তিনি বেদবক্তা, তিনি ঈশ্বর। বেদ সেই ঈশ্বরের বাক্য—ধর্ম্মাধর্ম্ম তাহারই প্রতিপাদ্য। এতদপেক্ষা ধর্ম্মাধর্ম্মের প্রবল প্রমাণ আর কি হইতে পারে।। ১।।
উপস্কারঃ
সংসারমূলকারণয়োর্দ্ধর্ম্মাধর্ম্ময়োঃ পরীক্ষা ষষ্ঠাধ্যায়ার্থঃ। ধৰ্ম্মাধর্ম্মৌ চ “স্বর্গকামো যজেত” “ন কলঞ্জং ভক্ষয়েৎ” ইত্যাদিবিধিনিষেধবলকল্পনীয়ৌ। বিধিনিষেধবাক্যয়োঃ প্রামাণ্যে সতি স্যাতাং, তৎপ্রামাণ্যঞ্চ বক্তৃর্যথার্থবাক্যার্থজ্ঞানলক্ষণগুণপূর্ব্বকত্বাদুপপদ্যতে, স্বতঃ প্রামাণ্যস্য নিষেধাদতঃ প্রথমং বেদপ্রামাণ্য প্রযোজকগুণসাধনমুপক্রমতে।
বাক্যকৃতির্বাক্যরচনা সা বুদ্ধিপূর্ব্বা বক্তৃযথার্থবাক্যার্থজ্ঞানপূর্ব্বা বাক্যরচনাত্বাৎ নদীতীরে পঞ্চ ফলানি সন্তীত্যস্মদাদিবাক্যরচনাবৎ, বেদ ইতি বাক্যসমুদায় ইত্যর্থঃ। তত্র সমুদায়িনা বাক্যানাং কৃতিঃ পক্ষঃ, ন চাম্মদাদিবুদ্ধিপূৰ্ব্বকত্বেনান্যথাসিদ্ধিঃ, “স্বর্গকামো যজেত” ইত্যাদাবিষ্টসাধনতায়াঃ কাৰ্য্যতায়া বা অস্মদাদিবুদ্ধ্যগোচরত্বাৎ, তেন স্বতন্ত্রপুরুষপূর্ব্বকত্বং বেদে সিধ্যতি, বেদত্বঞ্চ শব্দতদুপজীবিপ্রমাণাতিরিক্ত প্রমাণজন্য প্রমিত্যবিষয়ার্থকত্বে সতি শব্দজন্য- বাক্যার্থজ্ঞানাজন্যপ্রমাণশব্দত্বম্।। ১।।
.
ব্রাহ্মণে সংজ্ঞাকৰ্ম্ম সিদ্ধিলিঙ্গম্।।২।।
অনুবাদ
ব্রাহ্মণ-সম্প্রদায়ে জাত্যুচিত কর্ম্ম (প্রামাণ্য) সিদ্ধির হেতু।।২।।
ব্যাখ্যা
সকল সম্প্রদায়ই আপন-আপন শাস্ত্রকে ঈশ্বরবাক্য বলে, অথচ সেই সকল শাস্ত্র পরস্পর বিরোধী। সুতরাং বেদকে যে ঈশ্বরবাক্য বলিয়া প্রমাণ স্বরূপ গ্রহণ করিব ইহা অসম্ভব। এইরূপ আপত্তির উত্তর প্রদত্ত হইতেছে। ব্রাহ্মণের নাম ও কর্তব্যের নিৰ্দ্দেশপ্রসঙ্গে মনু প্রভৃতি মহর্ষিগণ বেদের পুনঃপুন উল্লেখ করিয়াছেন, বেদের প্রতি যথেষ্ট সম্মান দেখাইয়াছেন, অতএব বেদ প্রমাণ। অর্থাৎ মহাপুরুষগণের আদৃত বলিয়া বেদ প্রমাণ শাস্ত্র। একথাও বলা যাইতে পারে, ব্রাহ্মণ নির্লোভ, নিষ্কাম, অবঞ্চক, ধনার্থী নহেন, মানার্থী নহেন; ব্রাহ্মণ ধৰ্ম্মার্থী, ব্রাহ্মণ মোক্ষার্থী। অথচ ব্রাহ্মণ মনে করিলে সৰ্ব্ববিধ ঐহিক ধন মান ঐশ্বর্য্য গ্রহণ করিতে সমর্থ। সেই ব্রাহ্মণ যখন আপনার নামানুরূপ কৰ্ম্ম—বেদজ্ঞানের উপযুক্ত কর্ম্ম—আচরণে রত, সকল ধনমানে উপেক্ষা করিয়া শরীরকে শরীর জ্ঞান না করিয়া বেদোক্ত আচার রক্ষা করিয়া আসিতেছেন, তখন বেদের প্রামাণ্য অবশ্যই সিদ্ধ হইতেছে। যাঁহারা আত্মভোগসুখে জলাঞ্জলি দিয়া জগতের কল্যাণ-সাধনে রত, সেই মহাপুরুষ ব্রাহ্মণগণ সহস্র সহস্র বৎসর যে বেদকে মানিয়া আসিতেছেন, তাহাকে অপ্রমাণ বিবেচনা করা ঔদ্ধত্য মাত্র। যখন জগতের সর্ব্বত্র অজ্ঞানের অন্ধকার প্রগাঢ়, তখন যে বেদ জ্ঞানরশ্মি বিতরণ দ্বারা এক ব্রাহ্মণ- জগৎকে আলোকিত করিয়া রাখিয়াছিলেন,—সেই আলোকের অল্প বিস্তর রশ্মি ইতস্ততো নিপতিত হইয়া অসম্পূর্ণ মানবের অসম্পূর্ণ ধর্ম্মশাস্ত্ররূপে বিরাজিত হইয়াছে। সেই সৰ্ব্বজ্ঞানের প্রথম জননী বেদসংহিতা—যদি প্রমাণ বাক্য না হয় তো জগতে কোন শাস্ত্রই প্রমাণ হইতে পারে না। ঈশ্বরবাক্য যদি কিছু থাকে তো এক বেদই সেই ঈশ্বরবাক্য, কেননা তাহা যুগযুগান্তর ধরিয়া মহাপুরুষ ব্রাহ্মণগণের আদৃত।
এই সূত্রের উপস্কারসম্মত অর্থ এই যে, ব্রাহ্মণ অর্থাৎ বেদের একাংশে যে বিবিধ নাম ব্যবহার আছে, তাহা নামকর্তার বস্তুজ্ঞানের পরিচায়ক; কেননা উহা বস্তুজ্ঞানসাপেক্ষ।। ২।।
উপস্কারঃ
প্রকারান্তরেণ বেদবাক্যানাং বুদ্ধিপূৰ্ব্বকত্বমাহ।
ব্রাহ্মণমিহ বেদভাগস্তত্র যৎ সংজ্ঞাকর্ম্ম নামকরণং তৎ ব্যুৎপাদস্য বুদ্ধিমাক্ষিপতি যথা লোকে লম্বকর্ণ-দীর্ঘনাস-লম্বগ্রীবাদিনামকরণম্।।২।।
.
বুদ্ধিপূর্ব্বো দদাতিঃ।।৩।।
অনুবাদ
দান বুদ্ধিপূৰ্ব্বক (হইয়া থাকে)।।৩।।
ব্যাখ্যা
ব্রাহ্মণোচিত কৰ্ম্ম ব্রাহ্মণেরা মহর্ষিগণের উপদেশে বেদশাস্ত্রানুসারে অনুষ্ঠান করেন, ইহা পূর্ব্বসূত্রে বুঝা গিয়াছে—এক্ষণে উদাহরণস্বরূপ—দুইটী সূত্র উল্লিখিত হইয়াছে। ধন কত ক্লেশে অর্জ্জন করিতে হয় এবং কিরূপ মমতার বস্তু তাহা সংসারী মাত্রেই জ্ঞাত আছেন। সে ধন যে অকাতরে প্রদত্ত হয়, তাহা বেদেরই শাসন-জ্ঞান – মূলক, সন্দেহ নাই। এইরূপ পরম্পরাগত ব্যবহার বেদের প্রামাণ্য জ্ঞাপক।।৩।।
উপস্কারঃ
প্রকারান্তরমাহ।
“স্বর্গকামো গাং দদ্যাৎ” ইত্যাদৌ যদ্দান প্রতিপাদনং তদ্দানেষ্টসাধনতাজ্ঞানজন্য দদাতিরিতি ধাতুনির্দেশো ধাত্বর্থং দানমুপলক্ষয়তি।।৩।।
.
তথা প্রতিগ্রহঃ।। ৪।
অনুবাদ
প্রতিগ্রহ(ও) সেইরূপ।। ৪।।
ব্যাখ্যা
দানবৎ প্রতিগ্রহেও বেদশাসন সম্মানিত। কতকগুলি বস্তু প্রতিগ্রহ করিতে আছে, কতকগুলি বস্তু প্রতিগ্রহ করিতে নাই। কোন জাতির বা ব্যক্তির নিকট প্রতিগ্রহ করিতে আছে, কোথাও বা নাই। এই সকল বিবেচনা করিয়া ধনার্থী যে প্রতিগ্রহ করিয়া থাকে, তাহাও বেদের শাসনজ্ঞানমূলক। অতএব মহাপুরুষ-নিষেবিত বলিয়া বেদকে প্রমাণ বলিতে হয়।।৪।।
উপস্কারঃ
প্রমাণাত্তরমাহ।
প্রতিগ্রহপ্রতিপাদিকা অপি শ্রুতয়ো বুদ্ধিপূর্ব্বিকাঃ; প্রতিগ্রহপদং স্ববিষয়াং শ্রুতি- মুপলক্ষয়তি তেন ভূম্যাদিপ্রতিগ্রহপ্রতিপাদিকাঃ শ্রুতয়ঃ প্রতিগ্রহীতুঃ শ্রেয়ঃসাধনতাপরাঃ কৃষ্ণসারচাদিপ্রতিগ্রহপ্রতিপাদিকাঃ শ্রুতয়ঃ প্রতিগ্রহীতুরনিষ্টসাধনতাবোধিকাঃ। নচেষ্টানিষ্ট- সাধনতে অর্বাচীনপুরুষবুদ্ধিগোচরৌ ভবিতুমহতঃ।।৪।।
.
আত্মান্তরগুণানামাত্মান্তরে কারণত্বাৎ।। ৫।।
অনুবাদ
যেহেতু আত্মান্তরের গুণ আত্মান্তরের (কার্য্যের) কারণ নহে, (অতএব শাস্ত্রপ্রামাণ্যজ্ঞানই হেতু বলিতে হইবে)।। ৫।।
ব্যাখ্যা
দান পরকীয় দুঃখমোচনের জন্য। পরের অভাব হইয়াছে তাহার জন্যই লোকে দান করে, শাস্ত্রের প্রামাণ্যজ্ঞান তাহার হেতু নহে; ইহাই আপত্তি। এই আপত্তির খণ্ডন এই যে—অন্য আত্মাতে যে দুঃখাদি হয়, তাহা পরকীয় প্রবৃত্তির হেতু হয় না। যে দানপ্রবৃত্ত—সেই আত্মায় এমন কোন জ্ঞান রাখিতে হইবে যাহা প্রবৃত্তির হেতু। সেই জ্ঞান ইষ্টসাধনতা-জ্ঞান, সেই যে ইষ্টসাধনতা-জ্ঞান তাহা বেদাদর-মূলক—অর্থাৎ দান করিলে স্বর্গ হয়, এই প্রকার যে নিশ্চয় তাহাই দানপ্রবৃত্তির হেতু। এই নিশ্চয় বেদ- বিশ্বাস হইতেই জন্মে। নতুবা একের দুঃখ হইল, আর অপরের দান করিতে প্রবৃত্তি হইল, এমনটী ঘটে না; সেই প্রবৃত্তির মূলে দাতার জ্ঞান আবশ্যক।। ৫।।
উপস্কারঃ
ইদানীং “শাস্ত্রদেশিতং ফলমনুষ্ঠাতরি” ইতি জৈমিনীয়ং সূত্রং সংবাদয়ন্নাহ। আত্মাত্তরগুণানাং যাগহিংসাদিপুণ্যপাপানাম্ আত্মান্তরে যৌ সুখদুঃখাত্মকৌ গুণৌ তয়োরকারণত্বাৎ এবঞ্চ প্রত্যাত্মনিষ্ঠাভ্যামেব ধৰ্ম্মাধর্ম্মাভ্যাং সুখদুঃখে, ন ব্যধিকরণাভ্যামন্যথা যেন যাগহিংসাদিকং ন কৃতং তস্য তৎ ফলং স্যাদিতি কৃতহানিরকৃতাভ্যাগমশ্চ প্রসজ্যেত। ননু নায়ং নিয়মঃ পুত্রেষ্টিপিতৃযজ্ঞাদৌ ব্যভিচারাৎ, তথাহি পুত্রেণ কৃতস্য শ্রাদ্ধাদেঃ পিতরি ফলশ্রবণাৎ পিত্রা চ কৃতায়াঃ পুত্রেষ্টেঃ পুত্রে ফলশ্রবণাৎ, ন চ স্বৰ্গভাগিপিতৃকত্বস্য তেজস্বিপুত্রকত্বস্য চ ফলস্য পুত্ৰ-পিতৃগামিতয়া সামানাধিকরণ্যমেবেতি বাচ্যং শ্রুতিবিরোধাৎ। পিতৃতৃপ্যাদেঃ পুত্রতেজস্বিতাদেরেব ফলস্য শ্রবণাৎ ফলান্তরস্য চ গৌরবপরাহতত্ত্বাৎ। অস্ত্র তহ্যপূর্ব্বং ফলং কর্ত্তরি, স্বর্গস্তু পিতরীতি চেন্ন ব্যাপারস্য ফলসামানাধিকরণ্যমিয়মাৎ অন্যথা শ্রাদ্ধানন্তরং মুক্তে পুত্রে পিতুঃ স্বর্গো ন স্যাৎ। ন স্যাদিতি চেন্ন মুক্তে পিতরি সাঙ্গাদপি শ্রাদ্ধাৎ ফলং ন স্যাদিতি তুল্যত্বাৎ মৈবং “শাস্ত্রদেশিতং ফলমনুষ্ঠাতরি” ইত্যস্যোৎসর্গত্বাৎ ক্বচিদ্ বলবতা বাধকেনাপোদ্যত্বাৎ প্রকৃতে চ পিতৃপুত্রগতফলশ্রবণস্যৈব বাধকত্বাৎ, তথা সত্যতিপ্রসঙ্গ ইতি চেন্ন, তাদৃশশ্রুতেরেবাতি প্রসঙ্গনিবারকত্বাৎ। যত্ত্ব মহাদানাদৌ স্বর্গমাত্রমেব ফলং তচ্চ যদুদ্দেশেন ক্রিয়তে তদ্গাতমপি ফলং জনয়তীতি যত্তুচ্ছং তত্রোৎসর্গে বাধকাভাবাৎ বাধকাভাবসহিতোৎসর্গস্য নিয়মত্বাৎ রাজাদীনামুপবাসাদ্যনুষ্ঠানানাপত্তেঃ, পরদ্বারৈব তত্তৎকৰ্ম্মণাং স্বগতফলমুদ্দিশ্যানুষ্ঠানসম্ভবাৎ, সম্যগ্ গৃহস্থাশ্রম পরিপালনস্য ব্রহ্মলোকাবাপ্তি- রূপে চ ফলে নিয়ম এব প্রাতিস্বিকফলাভিপ্রায়েণ তূৎসর্গাভিধানাৎ। বৃত্তিকারা
“শাস্ত্রদেশিতম্” ইত্যাদিনিয়ম এব পিত্রাদীনান্তু যৎ ফলং জচ্ছ্বাদ্ধাদৌ ভোজিতানাং ব্রাহ্মণানামাশীর্মন্দ্রানুভাবাৎ, “কৃতার্থাস্তে পিতরো ভূয়াসুঃ” ইতি পিতৃযজ্ঞে। পুত্রেষ্টৌ তু সন্তুষ্টানামৃতিজামাশীদানাৎ “তেজস্বী বচ্চস্বন্নাদস্তে পুত্রো ভূয়াৎ” ইত্যাদেঃ, জাঙ্গলিকমন্ত্র- পাঠাদিব সর্পদষ্টস্য বিষাপহরণমিত্যাহুঃ।। ৫।।
.
তদদুষ্টভোজনে ন বিদ্যতে।। ৬।।
অনুবাদ
দুষ্টভোজন স্থলে তো তাহা নাই।।৬।।
ব্যাখ্যা
যদি একের দুঃখে অপরের দান বা দানপ্রবৃত্তি হইত তাহা হইলে, দুষ্ট ব্যক্তির ভোজন-দানেও প্রবৃত্তি হইত, তাহা তো হয় না। কোন দস্যু হত্যাদি পরিশ্রমে ক্ষুধার্ত হইলে তাহাকে ভোজন করাইবার প্রবৃত্তি তো হয় ন।।।৬।।
উপস্কারঃ
অদুষ্টানাং যথাশাস্ত্রমনুবর্ত্তমানানাং ভোজনাতৃপ্তানামাশীৰ্দ্দানাৎ তৎ ফলং ন তু দুষ্টনাম্। পাত্রত্বেন নিষিদ্ধানামপি কুণ্ডগোলকপ্রভৃতীনামিত্যাহ
তদিত্যাশীৰ্দ্দানফলং পরামৃশতি দুষ্টা ব্রাহ্মণাঃ পাত্রানধিকারিণো যত্র শ্রাদ্ধে ভোজ্যন্তে তত্র পিতরি তৎফলং ন বিদ্যতে ন ভবতীত্যর্থঃ। শ্রাদ্ধফলমেব বা ন ভবতি পিতরীত্যর্থঃ।।৬।।
.
দুষ্টং হিংসায়াম্।। ৭।
অনুবাদ
হিংসা হইলে, দুষ্ট (বলিয়া জানিবে)।।৭।।
ব্যাখ্যা
যাহাকে ভোজন করাইলে পাপ হয়—সেই নরঘাতী প্রভৃতি হিংস্রই পূর্ব্বসূত্র বর্ণিত দুষ্টপদবাচ্য। কাক, কুক্কুর, চণ্ডালাদিকেও অন্নদানের ব্যবস্থা আছে। তাহারা একপ্রকার দুষ্ট হইলেও সে দুষ্ট পূৰ্ব্বসূত্রোল্লিখিত দুষ্ট নহে।।৭।।
উপস্কারঃ
কে তে দুষ্টা ইতি দুষ্টলক্ষণমাহ।
হিংসায়ামিতি নিষিদ্ধকৰ্ম্মমাত্রোপলক্ষণম্, তেন নিষিদ্ধে কৰ্ম্মণি প্রবৃত্তং পুরুষং দুষ্টং বিজানীয়াদিত্যর্থঃ।।৭।
.
তস্য সমভিব্যাহারতো দোষঃ।।৮।।
অনুবাদ
তাহার সমভিব্যাহারে দোষ হয়।। ৮।
ব্যাখ্যা
হিংস্রপুরুষের সংসর্গবশতঃ দাতা দুষ্ট অর্থাৎ দানপ্রবৃত্তিহীন হইয়া থাকে। ভোজনার্থী হিংস্র পুরুষ সমীপস্থ হইলে, তাহার সঙ্গেই দাতা দুষ্ট হইয়া পড়ে, এই জন্য তাহার দুঃখে দাতার দানপ্রবৃত্তি হয় না। অন্যত্র পরকীয় দুঃখই দাতার দান -প্রবৃত্তির হেতু, বেদ-বিশ্বাস নহে ইহাই আপত্তি।। ৮।।
উপস্কারঃ
ন কেবলং দুষ্টব্রাহ্মণস্য শ্রাদ্ধে নিমন্ত্রিতস্য ভোজনেন ফলাভাবঃ কিন্তু পাপমপি ভবতীত্যাহ।
তস্য নিষিদ্ধে কৰ্ম্মণি প্রবৃত্তস্য ব্রাহ্মণস্য সমভিব্যাহারাৎ একপক্তিভোজনসহশয়নসহা- ধ্যয়নাদিলক্ষণাৎ দোষঃ পাপমিত্যর্থঃ।।৮।।
তদদুষ্টে ন বিদ্যতে।।৯।।
অনুবাদ
অদুষ্ট ব্যক্তিতে তো তাহা হয় না।।৯।।
ব্যাখ্যা
যদি হিংস্রের উপস্থিতিরূপ ক্ষণিক সঙ্গ দাতার দানপ্রবৃত্তির ব্যাঘাতক হইত, তাহা হইলে তখন অদুষ্ট ভোজনার্থীও দাতার দানপার তইত না।।৯।।
উপস্কারঃ
তৎ কিমদুষ্টসমভিব্যাহারাদপি দোষ এব, নেত্যাহ।
তৎ পাপমদুষ্টে যথাশাস্ত্রং ব্যবহরমাণে ব্রাহ্মণে শ্রাদ্ধে ভোজিতে ন বিদ্যতে ন ভবতীত্যর্থঃ।।৯।।
.
পুনর্বিশিষ্টে প্রবৃত্তিঃ।। ১০।।
অনুবাদ
আবার বিশিষ্ট ব্যক্তির (গুণেই) প্রবৃত্তি (হয়)।। ১০।।
ব্যাখ্যা
পুনর্ব্বার বিশিষ্ট অর্থাৎ উৎকৃষ্ট ধার্ম্মিক ব্যক্তির সঙ্গ হইলে দাতার দোষ নষ্ট হইয়া সেই পাত্রে দানপ্রবৃত্তি হয়। অন্য আত্মার গুণ যে অপর আত্মার কার্য্যে হেতু হয় না তাহা নহে। ইহা আপত্তিকারীর কথা। ১০।।
উপস্কারঃ
ননু সৎপাত্রাপ্রতিলম্ভে যত্র শ্রাদ্ধদানাদৌ প্রথমং দুষ্টা এব নিমন্ত্রিতাঃ ক্রমেণ তু সৎপাত্রপ্রতিলম্ভে কিং বিধেয়মিত্যত্রাহ।
শ্রাদ্ধে প্রতিগ্রহে বা বিশিষ্টা যথাশাস্ত্রমনুবর্ত্তমানা যদি লভ্যন্তে তদা নিমন্ত্ৰিতানপি নিন্দ্যান্ পরিহৃত্য তানেব ভোজয়েৎ “ন নিমন্ত্রিতান্ প্রত্যাচক্ষীত” ইতি তু সৎপাত্রপরম্, নিন্দ্যাংস্ত নিমন্ত্রিতান্ দ্রবিণদানাদিনা সন্তোষয়েৎ।।১০।।
.
সমে হীনে বা প্রবৃত্তিঃ।। ১১।।
অনুবাদ
সম বা হীন ব্যক্তিতেও প্রবৃত্তি (হয়)।। ১১।।
ব্যাখ্যা
দাতা অপেক্ষা ধার্ম্মিকের সংসর্গে দানপ্রবৃত্তি উত্তেজিত হইতে পারে বটে; কিন্তু দাতার সমান বা তদপেক্ষা হীন ব্যক্তি অথচ অদুষ্ট—(যাহার ভোজন দান নিষিদ্ধ, এমন ব্যক্তি নহে) সে যদি ভোজনার্থী হইয়া উপস্থিত হয়, হিংস্র ভোজনার্থী উপস্থিত থাকিলে, সেই অদুষ্টকে ভোজন করাইতে প্রবৃত্তি হয় কেন? দুষ্টের সংসর্গে তখন তো দানপ্ৰবৃত্তি ব্যাহত, নতুবা দুষ্টকে ভোজন করাইতেও প্রবৃত্তি হইত; অথচ বিশিষ্টের উপস্থিতিও ঘটে নাই, দাতার সমান বা হীনের উপস্থিতিই ঘটিয়াছে—এরূপ উপস্থিতি যদি দানপ্রবৃত্তিকে উত্তেজিত করিতে সমর্থ হইত, তাহা হইলে সেই দাতার দানপ্রবৃত্তি দুষ্টসংসর্গেও মলিন হইতে পারিত না; ইহা তোমাকে অবশ্যই স্বীকার করিতে হইবে।। ১১।।
উপস্কারঃ
যত্র স্বাপেক্ষয়া বিশিষ্টা ন লভ্যন্তে শ্রাদ্ধদানাদৌ তত্রাহ।
সমে স্বদৃশে, হীনে স্বাপেক্ষয়া গুণাদিনা ন্যূনে, অদুষ্টে পাত্রে শ্রাদ্ধদানাদৌ প্রবৃত্তিস্তেষামেবাশীৰ্দ্দানাৎ পিতরি সুখমিত্যর্থঃ। নিষিদ্ধানাং পরং ত্যাগো ন ত্বদুষ্টানাং সমহীনানামপীতি ভাবঃ।।১১।।
.
এতেন হীনসমবিশিষ্টধার্ম্মিকেভ্যঃ পরস্বাদানং ব্যাখাতম্।। ১২।।
অনুবাদ
ইহা দ্বারা হীন, সমান এবং বিশিষ্ট ধার্ম্মিক হইতে প্রতিগ্রহও বিবৃত হইল।। ১২।।
ব্যাখ্যা
অভাববশতঃ প্রতিগ্রহপ্রবৃত্তি, তাহাতে হীনের নিকট প্রতিগ্রহ, সমানের নিকট প্রতিগ্রহ এবং উৎকৃষ্টের নিকট প্রতিগ্রহে যে বিচার ইহা বেদশাসনমূলক। বেদে যাহার নিকট প্রতিগ্রহ নিষিদ্ধ, অথবা যাহার নিকট আপদে প্রতিগ্রহ কর্ত্তব্য এবং যাহার নিকট প্রতিগ্রহ করিলে শুভাদৃষ্ট হয়—তাহারাই যথাক্রমে হীন, সমান এবং বিশিষ্ট ধাৰ্ম্মিক নামে কথিত। এই যে প্রতিগ্রহ-বিচার ইহা তো বেদাদরমূলক। নতুবা হীনের নিকট উপস্থিত হইলে যে প্রতিগ্রহপ্রবৃত্তি ব্যাহত হয় এবং ধার্ম্মিকের নিকট উপস্থিত হইলে প্রতিগ্রহপ্রবৃত্তি উত্তেজিত হয়, তাহা নহে। তাহা হইলে হীন ও সমান ব্যক্তি উপস্থিত থাকিলে, সমানের নিকটেও প্রতিগ্রহ করিতে প্রবৃত্তি হইত না। হীন-সন্নিধান হেতু প্রতিগ্রহপ্রবৃত্তি তখন তো ব্যাহতই হইয়াছে। অতএব প্রতিগ্রহবিচারও বেদাদর-মূলক অর্থাৎ বেদশাসন-নিশ্চয়মূলক।। ১২।।
উপস্কারঃ
শ্রাদ্ধে দানাদৌ চ সম্প্রদানসাদগুণ্যেন ধৰ্ম্মোৎপত্তিমভিধায় তাদৃশাদুপাদানাদপি ধর্ম্মোৎপত্তিমতিদিশতি।
যথোত্তরং ধর্ম্মোৎকর্ষঃ, হীনাদপি ভূম্যাদিপ্রতিগ্রহে সমাদপি, স্বাপেক্ষয়া বিশিষ্টাদপি, ধাৰ্ম্মিকাৎ ধৰ্ম্ম ইত্যর্থঃ। পরস্বাদানং পরস্মাৎ স্বস্য ধনস্যাদানং প্রতিগ্রহঃ। বৃত্তিকারৈস্তু পরস্বাদানং চৌর্য্যাদিনা পরস্বগ্রহণং ব্যাখ্যাতং, তথাচ শ্রুতিঃ “শূদ্রাৎ সপ্তমে বৈশ্যাদ্দশমে ক্ষত্রিয়াৎ পঞ্চদশে ব্রাহ্মণাৎ প্রাণসংশয়ে” ইতি ক্ষুধাপীড়িতমাত্মানং কুটুম্বং বা রক্ষিতুং সপ্ত দিনান্যাহারমপ্রাপ্য শূদভক্ষ্যাপহারঃ কার্য্যঃ, এবং দশ দিনান্যাহারমপ্রাপ্য বৈশ্যাৎ, পঞ্চদশ দিনান্যাহারমপ্রাপ্য ক্ষত্রিয়াৎ, প্রাণসংশয়ে ব্রাহ্মণাৎ ভক্ষ্যাপহরণং ন দোষায়েত্যাহুঃ।।১২।।
.
তথা বিরুদ্ধানাং ত্যাগঃ।। ১৩।।
অনুবাদ
বিরুদ্ধ-পরিত্যাগও তদ্রূপ অর্থাৎ বেদশাসনজ্ঞান-সাপেক্ষ।। ১৩।।
ব্যাখ্যা
বিরুদ্ধের সংসর্গ ত্যাগ করিতে হয়। অতি আত্মীয় হইলেও বিরুদ্ধাচারীকে ত্যাগ করিতে হয়। এই যে ত্যাগ, তাহা বেদবাক্যে বিশ্বাসবশতই হয়।। ১৩।।
উপস্কারঃ
ন কেবলং প্রাণসংশয়ে পরস্বাদানং ন নিষিদ্ধং কিন্তু তস্যাং দশায়ামপহর্ত্তুং যে ন প্রযচ্ছন্তি তেযাং বধোঽপি কাৰ্যো ন তাবতা ধর্ম্মহানিরধর্ম্মপ্রাদুর্ভাবো বেত্যাহ।
তস্যাং দশায়াং বিরুদ্ধানাং বিপরীতমাচরতাং ত্যাগো বধঃ কাৰ্য্য ইত্যর্থঃ। তদুক্তম্,—
“কৰ্ম্মণা যেন কেনাপি মৃদুনা দারুণেন বা
উদ্ধরেদ্দীনমাত্মানং সমর্থো ধৰ্ম্মমাচরেৎ” ইতি।। ১৩।।
.
হীনে পরে ত্যাগঃ।।১৪।।
অনুবাদ
অপর ব্যক্তি হীন হইলে (তাহাকে) ত্যাগ (করিতে হয়)।।১৪।।
ব্যাখ্যা
একপরিবারস্থ ব্যক্তির মধ্যে যে ব্যক্তি হীন, বিরুদ্ধ অর্থাৎ পতিত, তাহাকে ত্যাগ করিতে হয় অর্থাৎ বর্জ্জন করিয়া ‘অপপাত্র’ করিয়া দিতে হয়।। ১৪।।
উপস্কারঃ
ননু চাবিশেষেণৈব পরস্য বধঃ, নেত্যাহ।
যদি স্বস্মাদ্ধীনঃ পরো ভবতি যোহপহত্তুং ন দদাতি তস্য শূদ্রাদেস্ত্যাগো বধঃ।।১৪।।
.
সমে আত্মত্যাগঃ পরত্যাগো বা।। ১৫।।।
অনুবাদ
সমান বিরুদ্ধাচারী হইলে, আত্মত্যাগ বা পরত্যাগ (যথাসম্ভব করিতে হয়)।।১৫।।
ব্যাখ্যা
একপরিবারস্থ সকলেই কোন না কোনরূপে শাস্ত্রবিরুদ্ধ আচার-সম্পন্ন পতিত হইলে, হয় আপনি সেই সংসর্গ হইতে সরিয়া পড়িতে হয়, অথবা অপর সকলকে আত্মসংসর্গ হইতে বিচ্যুত করিতে হয়; ইহা প্রসিদ্ধ ব্যবহার। এই যে আত্মবিচ্ছেদ ইহা বেদ-বিশ্বাসমূলক।। ১৫।।
উপস্কারঃ
সমমধিকৃত্যাহ।
যদি স্বসদৃশো ব্রাহ্মণ এব বিরোধী ভবতি তদাত্মন এবোপবাসাদিনা ত্যাগোহবসাদঃ কৰ্ত্তব্যঃ, যদি স্বস্য কুটুম্বস্য বা রক্ষাপ্রকারো ন দৃশ্যতে বিরোধী চ সমো ভবতি তদা তস্যৈব ত্যাগো বধ ইত্যর্থঃ।।১৫।।
.
বিশিষ্টে আত্মত্যাগ ইতি।। ১৬।।
অনুবাদ
(অপর) বিশিষ্ট অর্থাৎ ধাৰ্ম্মিক হইলে, আত্মত্যাগই করা হয়।। ১৬।।
ব্যাখ্যা
পরিবারবর্গমধ্যে যে ব্যক্তি স্বয়ং শাস্ত্রবিরুদ্ধাচারী—পতিত, অপরে ধাৰ্ম্মিক, সে স্থলে সেই ধাৰ্ম্মিককে কলুষিত না করিয়া আত্মত্যাগ করা হয়, তাহাদিগকে আত্মসংসর্গচ্যুত করা হয়। অর্থাৎ পতিতপ্রায়শ্চিত্তের জন্য হয় চতুর্বিংশতিবার্ষিক ব্রতাচরণ, না হয় মরণান্ত প্রায়শ্চিত্ত কৰ্ত্তব্য। এই তিন সূত্রের প্রতিপাদ্য এই যে, ধাৰ্ম্মিক ও অধার্ম্মিক দুই শ্রেণীর জনসমবায়ে পরিবার গঠিত হইলে, একের পক্ষে তাহার ত্যাগ আবশ্যক ও অনুষ্ঠিত হয়। কেবল অধাৰ্ম্মিকসমবায়ে কোন পরিবার গঠিত হইলেও—তাহার পরস্পর সংসর্গ অধর্ম্মের মাত্রাবৃদ্ধির হেতু, এক ব্রহ্মঘাতী অপর সুরাপায়ী এই দুই প্রকার লোকের সম্মিলনে যে কার্য্য হইবে তাহা পরস্পরের অধিকতর অনিষ্টের হেতু। এ সম্মিলন সমাজে ধৰ্ম্মতঃ বাঞ্ছনীয় নহে। এই জন্য ত্যাগের নিয়ম আছে। ত্যাগ অর্থে প্রায়শ্চিত্তপূর্ব্বক তৎপাপাচরণ-ত্যাগ এবং পরস্পরের সম্বন্ধত্যাগ উভয় প্রকারেই হইয়া থাকে। এই আচার এক্ষণে লুপ্তপ্রায় হইলেও পূর্ব্বে অক্ষুণ্ণ ছিল। এইরূপে বিশুদ্ধ পরিবার প্রণালী দ্বারা সমাজশুদ্ধির পথ নির্দিষ্ট হইয়াছে। এই যে ত্যাগ ইহা বেদ-বিশ্বাসমূলক তাহা পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি। ইতি—এইখানেই আহ্নিকসমাপ্তি। তৃতীয় সূত্র হইতে এই আহ্নিকের শেষ পর্য্যন্ত উপস্কারাদিমতে ব্যাখ্যান্তর আছে তাহার সংক্ষিপ্ত ভাব এই—
দান ও প্রতিগ্রহবিধায়ক শ্রুতি শ্রুতিবক্তার প্রকৃত বাক্যার্থ-জ্ঞানমূলক। সেই বাক্যার্থ অদৃষ্ট বা অপূৰ্ব্বঘটিত। সেই অদৃষ্ট অস্মদাদির অপ্রত্যক্ষ; যাঁহার প্রত্যক্ষ—তিনি ঈশ্বর। সেই যে অদৃষ্ট তাহা একের এবং অদৃষ্ট-জন্য সুখ-দুঃখ অপরের—এরূপ হয় না, কেননা কার্য্যকারণভাবের সামানাধিকরণ্য আবশ্যক। অদৃষ্ট দ্বিবিধ, শুভাদৃষ্ট বা ধৰ্ম্ম, অশুভাদৃষ্ট বা অধৰ্ম্ম। সেই বিশেষ অদৃষ্টের উৎপত্তি কোথাও হয় এবং কোথাও হয় না। শ্রাদ্ধে দুষ্ট অর্থাৎ নিন্দিত ব্রাহ্মণ ভোজন করাইলে শুভাদৃষ্ট হয় না। হিংসাদিকার্যরত ব্যক্তিই দুষ্ট নামে অভিহিত। নিন্দিত ব্রাহ্মণ ভোজনে কেবল যে শুভাদৃষ্ট হয় না তাহা নহে, পরন্তু অশুভাদৃষ্টও হয়। অনিন্দিত ব্রাহ্মণ ভোজনে পাপ হয় না। অগ্রে যদি নিন্দিত ব্রাহ্মণ নিমন্ত্রিতও হইয়া থাকে, অথচ পরে অনিন্দিত ব্রাহ্মণ পাওয়া যায়, তাহা হইলে, নিন্দিতকে কোনরূপে সন্তুষ্ট করিয়া ঋষি বা ঋষিতুল্য বিদ্বান্ অনিন্দিত ব্রাহ্মণ ভোজন করাইবে। ঋষি বা ঋষিতুল্য না হইলেও শ্রাদ্ধকর্তার তুল্য বা তদপেক্ষায় হীন অথচ অনিন্দিত ব্রাহ্মণ হইলেও তাহাকে ভোজন করাইবে; তাহা হইলেই শুভাদৃষ্ট লাভ করিবে। হীন, সমান এবং উৎকৃষ্ট ব্যক্তির প্রতিগ্রহে পূৰ্ব্ব পূৰ্ব্ব অপেক্ষা উত্তর উত্তর শুভাদৃষ্টের উৎকর্ষ হয়; প্রাণসংশয়কালে হীনাদি ব্যক্তির দ্রব্যও কালবিশেষ অপেক্ষা করিয়া অপহরণ করিতে পারিবে। অপহরণের ব্যাঘাতকারী হীন জাতি হইলে নিঃসংশয়ে বধ্য, যদি সমজাতি হয় তো উপবাসাদি দ্বারা আত্মঘাত অথবা পরহত্যা করিবে। উৎকৃষ্ট ব্যক্তি বিঘ্নকারী হইলে আত্মবধই উচিত, ইহাতে অশুভাদৃষ্ট হয় না। পরন্তু প্রাণসংশয় সময়েও ব্রহ্মহত্যা কৰ্ত্তব্য নহে।। ১৬।।
ষষ্ঠ অধ্যায় প্রথম আহ্নিক সমাপ্ত।
উপস্কারঃ
তৎ কিং স্বাপেক্ষয়া যদি বিশিষ্টো ভবতি বিরোধী তদা তস্যাপি বধ এব কার্য্যঃ, নেত্যাহ স্বাপেক্ষয়া বিশিষ্টে বেদাধ্যয়নাদিনা উৎকৃষ্টে বিরোধিনি আত্মন এব ত্যাগো বিধেয়ঃ, প্রাণসংশয়ে সত্যপ্যাত্মমরণমেবাভিপ্রেয়াৎ ন তু ব্রাহ্মণং হন্যাদিত্যর্থঃ। ইতিরাহ্নিকপরিসমাপ্তৌ।। ১৬।।
ইতি শ্রীশাঙ্করে বৈশেষিকসূত্রোপস্কারে ষষ্ঠাধ্যায়স্যাদ্যমাহ্নিকম্।