ষষ্ঠাধ্যায়ে—দ্বিতীয়াহ্নিকম্
দৃষ্টাদৃষ্টপ্রয়োজনানাং দৃষ্টাভাবে প্রয়োজনমভ্যুদয়ায়।। ১।।
অনুবাদ
দৃষ্ট-প্রয়োজন এবং অদৃষ্ট-প্রয়োজনের মধ্যে যাহার দৃষ্ট ফল নাই এতাদৃশ প্রয়োজন, (অতীন্দ্রিয়) অভ্যুদয়ের হেতু অর্থাৎ অদৃষ্টপ্রয়োজন।।১।।
ব্যাখ্যা
যাহা স্বয়ং ইষ্ট বা ইষ্টসাধন তাহাই প্রয়োজন। তন্মধ্যে যাহা স্বয়ং ইষ্ট তাহাই মুখ্য প্রয়োজন, অপর গৌণ প্রয়োজন। মুখ্য, গৌণ দ্বিবিধ প্রয়োজনই দৃষ্ট ও অদৃষ্টভেদে দ্বিবিধ। আমাদের অনুভূয়মান সুখ, সুখভোগ ও দুঃখাভাব—দৃষ্ট মুখ্য প্রয়োজন। সুখ ও দুঃখাভাবের হেতু বলিয়া অর্থাৎ ইষ্টসাধন বলিয়া কৃষিবাণিজ্যাদি গৌণপ্রয়োজন। তবে ইহা দৃষ্ট, কেননা ইহার স্বরূপ এবং ফল উভয়ই মানবের প্রত্যক্ষগোচর। এইজন্য ইহা দৃষ্ট গৌণ প্রয়োজন। স্বর্গ বা চরমদুঃখনিবৃত্তি অস্মদাদির অপ্রত্যক্ষগোচর—অদৃষ্ট মুখ্য প্রয়োজন। আর তাহার সাধন যাগযজ্ঞাদি—অদৃষ্ট গৌণ প্রয়োজন। মুখ্য প্রয়োজন—স্বর্গ ও দুঃখনিবৃত্তি আছে বলিয়া এবং যাগযজ্ঞাদি তাহার সাধন বলিয়া যাগযজ্ঞাদি অদৃষ্টপ্রয়োজন নামে অভিহিত। যাগযজ্ঞাদি স্বরূপতঃ প্রত্যক্ষগোচর হইলেও তাহার ফল অপ্রত্যক্ষ বলিয়া তাহার নাম অদৃষ্ট প্রয়োজন। অপর যেটুকু বক্তব্য আছে, তাহা পর সূত্রের ব্যাখ্যায় বলিব।।১।।
উপস্কারঃ
এবং পূর্ব্বাহ্নিকে বৈদিকী প্রমা গুণজন্যেতি তদুৎপত্তৌ গুণাভিধানম্, “শাস্ত্রদেশিতং ফলমনুষ্ঠাতরি” ইতি বিবেচনম্, নিষিদ্ধাচরণেঽপি প্রত্যবায়ানুৎপত্তিঃ কস্যাঞ্চিদ্দশায়ামিত্যস্য বিবেচনঞ্চ বৃত্তমধুনা “যতোহভ্যুদয়নিঃশ্রেয়সসিদ্ধিঃ” ইতি দ্বিতীয়ং সূত্রং ব্যাচিখ্যাসুর্বিশেষতো ধর্ম্মোৎপত্তিপরীক্ষায়াং বৰ্ত্তিষ্যমাণায়ামাহ।
দৃষ্টপ্রয়োজনানি কৃষিবাণিজ্যরাজসেবাদীনি, অদৃষ্টপ্রয়োজনানি যাগদানব্ৰহ্মচর্য্যাদীনি, এতেষাং কৰ্ম্মণাং মধ্যে যত্র দৃষ্টং প্রয়োজনং নোপলভ্যতে তত্রাদৃষ্টং প্রয়োজনং কল্পনীয়ম্, তচ্চাভ্যুদয়ায় তত্ত্বজ্ঞানায়। যদ্বা অভ্যুদয়ায়েতি চতুর্থী প্রথমার্থে, তেন ফলমভ্যুদয় ইত্যর্থঃ। অদৃষ্টং ফলমপূৰ্ব্বমেব তদ্ যদি যোগজং তদাভ্যুদয় আত্মসাক্ষাৎকারঃ, যদি যাগদানাদিজং তদাহভ্যুদয়ঃ স্বর্গঃ। তত্রাপি যথা দোন্ধি পচতীত্যাদিক্রিয়া সদ্যঃফলিকা, বপতি কর্ষতীত্যাদিক্রিয়া চ বিলম্বভাবিফলা, তথা যজতি দদাতি ব্রহ্মচর্য্যং চরতীত্যাদিক্রিয়া তাবৎ সদ্যঃফলিকা ন ভবতি তাদৃশস্য ফলস্যানুপলব্ধেঃ। ন চ ধাৰ্ম্মিকতয়া জ্ঞানাল্লাভাদিকমেব ফলম্, প্রচ্ছন্নং ব্রহ্মচর্য্যাদি চরতাং তৎফলানুদ্দেশাৎ তস্মাচ্চিরভাবিস্বর্গাদিকমেব ফলং তচ্চাশুতরবিনাশিন্যাঃ ক্রিয়ায়া ন সাক্ষাদিত্যান্তরালিকং ক্রিয়াফলয়োঃ সমানাধিকরণমপূর্ব্বং পর্য্যবস্যতি।। ১गा
.
অভিষেচনোপবাসব্রহ্মচর্য্যগুরুকুলবাসবানপ্রস্থ্যজ্ঞদানপ্রোক্ষণদিক্ষত্রমন্ত্ৰকালনিয়মাশ্চাদৃষ্টায়।। ২।।
অনুবাদ
স্নান, উপবাস, ব্রহ্মচর্য্য, গুরুকুলবাস, বানপ্রস্থ, যজ্ঞ, দান, প্রোক্ষণ, দিক্-নিয়ম, নক্ষত্র-নিয়ম, মন্ত্রনিয়ম এবং কালনিয়ম—অদৃষ্ট হেতু (হইয়া থাকে)।।২।।
ব্যাখ্যা
গঙ্গাস্নানাদি ও একাদশী-উপবাসাদি করিলে ধর্ম্ম হয়। পূৰ্ব্বমুখ বা উত্তরমুখ হইয়া পূজাদি কৰ্ত্তব্য—এই যে দিক্নিয়ম, শতভিষানক্ষত্রযুক্ত চৈত্রকৃষ্ণত্রয়োদশীর নাম বারুণী, ইহাতে গঙ্গাস্নান করিলে বহুশত সূৰ্য্যগ্রহণকালীন গঙ্গাস্নানের তুল্য ফল হয়। এস্থলে এই যে নক্ষত্রনিয়ম, শিবপূজার এক মন্ত্র, বিষ্ণুপূজার অপর মন্ত্র—এই যে মন্ত্রনিয়ম এবং শরৎকালে দুর্গোৎসব কৰ্ত্তব্য—এই যে কালনিয়ম—এ সকলই অদৃষ্টের অর্থাৎ অপ্রত্যক্ষ ধর্ম্মের হেতু। সুতরাং অদৃষ্টপ্রয়োজন। কথা এই যে, মুখ্য ফল অস্মদাদির অপ্রত্যক্ষ হইলেই যে অদৃষ্টপ্রয়োজন হইবে, তাহা নয়। মুখ্য ফল দৃষ্ট হইলেও—অদৃষ্ট দ্বারা যদি সেই ফল লাভ করিতে হয়, তাহা হইলে সেই দৃষ্ট মুখ্য ফলসাধক কৰ্ম্মও অদৃষ্টপ্রয়োজন হইবে। যথা যজ্ঞের মধ্যে পুত্রেষ্টি প্রভৃতি; ইহার ফল পুত্রলাভ; পুত্রলাভ দৃষ্ট ফল হইলেও তাহা অদৃষ্ট অর্থাৎ ধর্ম্ম দ্বারা সিদ্ধ হয়, এজন্য তাহাকেও অদৃষ্ট-প্রয়োজনের মধ্যেই সন্নিবেশিত করা হয়। ফলে ইহাই স্থির হইল যে, যাহা ধৰ্ম্মসাধন তাহা গৌণ অদৃষ্টপ্রয়োজন। আর স্বর্গ এবং মোক্ষই মুখ্য অদৃষ্ট প্রয়োজন।। ২।
উপস্কারঃ
অদৃষ্টফলানি কৰ্ম্মাণি পরিসঞ্চষ্টে।
অদৃষ্টায়েত্যদৃষ্টলক্ষণায় ফলায় অদৃষ্টদ্বারা স্বর্গাপবৰ্গলক্ষণায় ফলায় বা এতেনাদৃষ্টফলকশ্রৌতস্মাত্তসকলকৰ্ম্মোপসংগ্রহঃ, তত্রাভিষেচনং স্নানং “গঙ্গায়াং স্নায়াৎ” ইত্যাদিবিধিবিধেয়ম্, উপবাসঃ “একাদশীমুপবসেৎ” ইত্যাদিবিধিবিধেয়ঃ, ব্রহ্মচর্য্যং সামান্যত এব ধৰ্ম্মসাধনম্, গুরুকুলবাসো ব্রহ্মচারিণাং বেদাধ্যয়নমহানাম্ন্যাদিব্রতার্থঃ, বানপ্রস্থং বয়ঃপরিণামে বনং প্রস্থিতানাং যৎ কর্ম্ম, যজ্ঞো “রাজসূয়বাজপেয়াদিঃ”, দানং ‘গাং দদ্যাৎ’ ইত্যাদিবিধিবিধেয়ম্, প্রোক্ষণং “ব্রীহীন্ প্রোক্ষতি” ইত্যাদিবিধিবিধেয়ম্, দিক্ “প্রাচীনপ্লবনে যজেত” “প্রাখোহন্নাদি ভুঞ্জীত” ইত্যাদিবিধিবিধেয়া, নক্ষত্রং শ্রাদ্ধাদৌ মঘাদি, মন্ত্রঃ আপোহিষ্ঠেত্যাদিঃ, কালঃ “মাসি মাসি বোহশনম্” “অমাবাস্যায়ামপরাহ্নে দদ্যাৎ” “গ্রীষ্মে পঞ্চতপাঃ” “বসন্তেহগ্নীনাদধীত” ইত্যাদিবিধিবিধেয়ঃ, নিয়মো বর্ণাশ্রমিণাং যথাশাস্ত্রমনুষ্ঠানম্, তদেবং ধৰ্ম্মস্য আত্মা সমবায়িকারণম্, আত্মমনঃসংযোগোঽসমবায়িকারণম্, শ্রদ্ধা স্বর্গাদিলক্ষণপ্রয়োজনজ্ঞানঞ্চ নিমিত্তকারণমনুসন্ধেয়ম্।।২।।
.
চাতুরাশ্রম্যমুপধা অনুপধাশ্চ।।৩।।
অনুবাদ
চতুরাশ্রমেই উপধা ও অনুপধা আছে।।৩।।
ব্যাখ্যা
ব্রহ্মচর্য্য, গার্হস্থ্য বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস,—চার আশ্রমই ধর্ম্মের সাধন। কিন্তু এই চার আশ্রমেই উপধা—অশুদ্ধি ও অনুপধা—শুদ্ধি আছে।।৩।।
উপস্কারঃ
এবং ধর্ম্মসাধনমভিধায় অধৰ্ম্মসাধনমপি সমুচ্চিন্নাহ।
চতুর্ণামাশ্রমাণাং সমানং যদ্ধৰ্ম্মসাধনং তত্তাবৎ পূৰ্ব্বসূত্রেণৈবোক্তমিতি শেষঃ। উপধাঃ ভাবস্য শ্রদ্ধায়া দোষা অনুপধাঃ শ্রদ্ধায়া ভাবস্যাদোষাঃ। তেঽপি ধৰ্ম্মাধর্ম্ময়োঃ সাধনানি যথাস্বমুহনীয়ানি উপধাপদেনাধৰ্ম্মসাধনানি সৰ্ব্বাণ্যুপসংগৃহীতানি।।৩।।
.
ভাবদোষ উপধাদোষোহনুপধা।। ৪।।
অনুবাদ
উপধা ভাবদোষ অর্থাৎ অবস্থাদোষ এবং অনুপধা দোষ নহে।। ৪।।
ব্যাখ্যা
যে আশ্ৰমধৰ্ম্ম যখন পালন করিবে, সেই আশ্রমোচিত বাহ্যশুদ্ধি এবং অন্তঃকরণশুদ্ধি আবশ্যক। সেই শুদ্ধ আশ্রমধর্ম্ম স্বর্গাদির হেতু, বাহ্য বা অন্তরের অশুদ্ধি থাকিলে তাহা অশুদ্ধ বা দুষ্ট আশ্ৰমধৰ্ম্ম।।৪।।
উপধানুপধে লক্ষণতো বিবেচয়ন্নাহ।
উপস্কারঃ
ভাবঃ ইচ্ছা রাগঃ প্রমাদোহ শ্রদ্ধামদমানাসূয়াপ্রভূতয়ো ভাবদোষা উপধাপদেনোচ্যন্তে, শ্রদ্ধা মনঃপ্রসাদো দেশিতকৰ্ম্মানুষ্ঠানাধ্যবসায় ইতিকর্তব্যতাপরিচ্ছেদশ্চানুপধা, তদেতয়োধৰ্ম্মা- ধর্ম্মনিমিত্তকারণত্বমুক্তম্।।৪।।
.
যদিষ্টরূপরসগন্ধস্পর্শং প্রোক্ষিতমভ্যুক্ষিতঞ্চ তচ্ছুচি।। ৫।।
অনুবাদ
শাস্ত্রোক্ত রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ বিশিষ্ট যে বস্তু প্রোক্ষিত, অভ্যুক্ষিত এবং ন্যায়ার্জিত তাহা শুদ্ধ।। ৫।।
ব্যাখ্যা
শাস্ত্রে হবিষ্যগণনায় শুক্লবর্ণ হৈমন্তিক ধান্যের উল্লেখ আছে। এখানে শুক্লবর্ণই শাস্ত্রোক্ত বর্ণ। স্বাদুনি মধুরাণি চ—এই শাস্ত্রে স্বাভাবিক মধুররসসস্পন্ন নারিকেলাদি শাস্ত্রোক্ত। সুতরাং যে বস্তু স্বভাবতঃ মধুর, তাহার বিকৃতিপ্রযুক্ত রসান্তর হইলে তাহা শুচি হয় না। মৃদুল গন্ধযুক্ত পুষ্প বিষ্ণুপূজায় শাস্ত্রবিহিত। সেই গন্ধযুক্ত পুষ্প শুচি। কোমলস্পর্শ শয্যা দান শাস্ত্রে বিহিত আছে। সেইরূপ স্পর্শই শুচি। উত্তান হস্ত দ্বারা জলবিন্দুক্ষেপ প্রোক্ষণ ও অনুত্তান হস্তে জলবিন্দুক্ষেপ অভ্যুক্ষণ। এইরূপে জলবিন্দুসিক্ত বস্তু শুচি। সূত্রস্থ চকারের অর্থ—ন্যায়াজ্জিত। এই অর্থ টীকাসম্মত। কেবল প্রোক্ষণ অভ্যুক্ষণের টীকাসম্মত অর্থ গ্রহণ করি নাই। অথবা যে বস্তুর যে প্রকার রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ মনঃপ্রীতিপ্রদ—সেই প্রকার রূপরসাদিযুক্ত (ধর্ম্মশাস্ত্রে অনিষিদ্ধ) সেই বস্তু যদি প্রোক্ষিত এবং অভ্যুক্ষিত হয়, তবে তাহা শুচি। যে সকল বস্তু ধৰ্ম্মশাস্ত্রে বিহিত বা অপ্রতিষিদ্ধ, সে সকল বস্তুও যদি রূপরসাদির বিকার প্রাপ্ত বা প্রোক্ষণাদিপূত না হয়, তাহা হইলে শুচি হইবে না। আর যে সকল বস্তু শাস্ত্রনিষিদ্ধ, যথা ম্লেচ্ছান্ন প্ৰভৃতি তাহা তো অশুচি আছেই—তাহা কোনরূপেই শুচি হয় না। ধৰ্ম্মশাস্ত্রোক্ত শুচি বস্তুরই শৌচাশৌচ নিৰ্দ্দেশক কতিপয় সূত্র এইস্থানে কথিত হইয়াছে। এই অর্থ এবং পরিষ্কার লিখিত অর্থান্তর আমার অভিপ্রেত।। ৫।।
উপস্কারঃ
শুচ্যশুচিনী চোপধানুপধে তত্র শুচ্যশুচিনী বিবেচয়তি।
ইষ্টং শ্রুত্যা স্মৃত্যা চ যদ্ৰূপাদিকং বিহিতং যস্য দ্রব্যস্য তত্তথা তত্র রূপম্ “অরুণয়া একহায়ন্যা পিঙ্গাক্ষ্যা গবা সোমং ক্ৰীণাতি” “শ্বেতং ছাগলমালভেত” ইত্যাদৌ, প্রোক্ষিত মন্ত্রেণোদকসিক্তম্, অভ্যুক্ষিতং বিনা মন্ত্রমুদকসিক্তং চকারান্ন্যায়তো লব্ধং তচ্চ “যাজনাধ্যাপন প্রতিগ্রহৈব্ৰাহ্মণো ধনমৰ্জ্জয়েৎ” ইত্যাদিনিয়মবিধিবোধিতম্।। ৫।।
.
অশুচীতি শুচিপ্রতিষেধঃ।।৬।।
অনুবাদ
অশুচি ইহা দ্বারা শুচি ভিন্নই বুঝায়।। ৬।।
ব্যাখ্যা
যাহা পূর্ব্বোক্ত রূপ শুচি—তদ্ভিন্ন হইলেই অশুচি হইবে।।৬।।
উপস্কারঃ
অশুচিলক্ষণমাহ।
যদ্রব্যং শুচি তদ্বিপরীতমশুচীত্যর্থঃ, অপ্রশস্তরূপরস গন্ধস্পর্শমমন্ত্রপ্রোক্ষিতমনভ্যুক্ষিতং নিষিদ্ধজলাভ্যুক্ষিতং বা অন্যায়াগতম্, কৃষিবাণিজ্যাগতং ব্রাহ্মণস্য দ্রব্যমশুচীত্যর্থঃ।।৬।।
.
অর্থান্তরঞ্চ।।৭।।
অনুবাদ
যাহা অর্থান্তর—তাহাও (অশুচি)।।৭।।
ব্যাখ্যা
প্রকৃতপক্ষে যাহা যে বস্তু—তাহা তদ্ভিন্ন বস্তুরূপে ব্যবহৃত হইবার যোগ্য হইলে অশুচি হয়। অথবা অর্থান্তর শব্দে অন্য বস্তু মিশ্রিত। যে অর্থই হউক উভয় পক্ষেই চলিত কথায় বলিতে হইলে, ‘ভেজাল’ বলিতে হয়। তৈলাদি মিশ্রিত ঘৃত ভেজাল ঘৃত; ভেজাল ঘৃত প্রকৃপক্ষে যাহা,—বাহিরে তদ্ভিন্ন বস্তু বলিয়াই ব্যবহৃত হয়। টীকাকার বলেন, অর্থান্তর-অর্থে বাগ্দুষ্ট, ভাবদুষ্ট ইত্যাদি।।৭।।
উপস্কারঃ
অশুচ্যন্তরমাহ।
প্রশস্তরূপরসগন্ধস্পর্শমপি প্রোক্ষিতমভ্যুক্ষিতং ন্যায়ার্জিতঞ্চ যত্তত্রাপি বাগ্দুষ্টং ভাবদুষ্টঞ্চ যত্তদপ্যশুচীত্যর্থঃ।।৭।
.
অযতস্য শুচিভোজনাদভ্যুদয়ো ন বিদ্যতে নিয়মাভাবাৎ বিদ্যতে বার্থান্তরত্বাদ্যমস্য।।৮।
অনুবাদ
অসংযত ব্যক্তি, শুচি ভোজন করিলেও (তাহার) অভ্যুদয় হয় না, কেননা তাহার নিয়ম নাই। কিম্বা (শুচিভোজন জনিত) অভ্যুদয় হয়ই, যেহেতু সংযম অভ্যুদয়ান্তরের সাধক।। ৮।।
ব্যাখ্যা
অসংযত অর্থে যমনিয়মশূন্য। অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য্য এবং অপ্রতিগ্রহ—যম নামে অভিহিত। শৌচ, সন্তোষ তপস্যা, শাস্ত্রাধ্যয়ন এবং ঈশ্বরে সৰ্ব্বকৰ্ম্মার্পণ নিয়ম নামে অভিহিত। শৌচ অর্থে বাহ্যমলশুদ্ধি এবং অন্তর্মলশুদ্ধি। এই যম, নিয়ম যাহার নাই, সে যদি কোন শুচি বস্তু ভোজন করে, সে কি কেবল শুচিভোজনপ্রভাবে অভ্যুদয় লাভ করিবে? মহর্ষি অভ্যুদয় শব্দের অর্থ ‘মোক্ষ বা সর্ব্বতোভাবে পারত্রিক মঙ্গল’ এই ভাবে গ্রহণ করিয়া বলিতেছেন, ‘না’–অসংযমই তাহার উন্নতির প্রতিবন্ধক। অভ্যুদয় শব্দে ‘পারত্রিক মঙ্গল’ এইমাত্র অর্থ হইলে মহর্ষি বলিতেছেন, অথবা সংযম একপ্রকার উন্নতির হেতু এবং শুচিভোজন অন্যবিধ উন্নতির হেতু। এক ব্যক্তিই যদি সংযত ও শুচিভোজী হয় তো তাহার সর্ব্বতোভাবে উন্নতি হইয়া থাকে। নতুবা অসংযত শুচিভোজীর শুচিভোজনমাত্র জনিত অভ্যুদয় বা উন্নতি হয়, অসংযম জনিত অনিষ্টও হইয়া থাকে। ঐ স্থানে ‘হয় না’ এবং ‘হয়ই’ এই দুইটী বাক্য দ্বারা সর্ব্বতোভাবে অভ্যুদয়ের অভাব ও আংশিক অভ্যুদয়ের সদ্ভাবই জ্ঞাপিত হইয়াছে।। ৮।।
উপস্কারঃ
ইদানীং ধৰ্ম্মাধর্ম্মেী প্রতি সহকার্য্যন্তরমাহ।
অযতস্য যমরহিতস্যাসংযতস্যেতি যাবৎ “হস্তৌ পাদৌ প্রক্ষাল্যাচম্য বাগ্যতো ভুঞ্জীত ভোক্ষ্যমাণঃ প্রয়তোঽপি দ্বিরাচামেৎ” ইত্যাদিবোধিত মরহিতস্য ভোজনং নাভ্যুদয়ায় কিন্তু পাপায়। কুত এবমিত্যত আহ নিয়মাভাবাৎ। নিয়মস্য সহকারিণোহভাবাৎ, নিয়মে সতি যত্তদাহ বিদ্যতে বা যথোক্তযমসাহিত্যেন ভোজনে ভবত্যেবাভ্যুদয়ঃ, কুত ইত্যত আহ অর্থান্তরত্বাদ্যমস্য ভোজনাদর্থান্তরং যতো যমঃ, তথা চ সহকারিকারণং বিনা ন ফলসিদ্ধিস্তস্মিন্ সতি ফলসিদ্ধিরিত্যর্থঃ।।৮।।
.
অসতি চাভাবাৎ।।৯।।
অনুবাদ
(শুচিভোজন) না থাকিলে (অভ্যুদয়ের) অভাব ঘটে বলিয়া (শুচি ভোজনকেও অভ্যুদয়-হেতু বলিতে হয়)।। ৯।।
ব্যাখ্যা
শুচি ভোজন ব্যতীত কেবল সংযমেও সৰ্ব্বতোভাবে অভ্যুদয় হয় না, সংযমজনিত আংশিক অভ্যুদয় হয় মাত্র। এই দুইটী সূত্র দ্বারা মহর্ষি বলিয়াছেন, শিষ্যগণ! সাবধান, অন্নবিষয়ে সতত দৃষ্ট রাখিবে, যম-নিয়মের প্রতিও তেমনই দৃষ্টি রাখিবে। নতুবা প্রকৃত শ্রেয়োলাভ ঘটিবে না। অশুচিভোজনফলে মনোবিকৃতি ঘটিবে, দেহবিকৃতি ঘটিবে, আলস্য, প্রমাদ আসিবে—সমাধি-পথে অগ্রসর হইতে পারিবে না। এজন্য শুচিভোজনে তৎপর হইবে। পরন্তু যম, নিয়ম না থাকিলে, কেবল শুচিভোজনে আংশিক উপকার হইলেও—অর্থাৎ আংশিক চিত্তশুদ্ধি হওয়ায় কিঞ্চিৎ কাল স্বৰ্গভোগ বা কোন না কোন জন্মে যমনিয়মের সাহায্য লাভ ঘটিলেও—সে জন্মে মুক্তি বা নরকভোগ-সম্পর্কশূন্য স্বর্গ- ভোগ হয় না।। ৯।।
উপস্কারঃ
ননু যমমাত্রমেব তন্ত্রং তর্হি ভোজনমতন্ত্রমেবেত্যত আহ।
যমে সত্যপি শুচিভোজনেঽসতি অভাবাদভ্যুদয়স্যেতি শেষঃ। তথাচ যমো ভোজনঞ্চ দ্বয়মেব পুণ্যকারণমিত্যর্থঃ। ভোজনমিত্যুপলক্ষণং যাগদানস্নানহোমাদীনামপি শ্রৌতস্মার্ত্তকৰ্ম্মণাং যমনিয়মৌ সহকারিণৌ।।৯।।
.
সুখাদ্রাগঃ।।১০।।
অনুবাদ
সুখহেতু রাগ অর্থাৎ ইচ্ছা (হইয়া থাকে)।।১০।।
ব্যাখ্যা
শুচিভোজন, যম ও নিয়ম—যদি সুখ বা সুখসাধনে ইচ্ছাসত্ত্বে ঘটে, তবে তাহা ধর্ম্মের হেতু হয়। বিষয়ভোগজনিত সুখজ্ঞান সুখেচ্ছার হেতু এবং সুখসাধন স্নান- ভোজনে যে ইচ্ছা হয়, তাহার হেতু সুখেচ্ছা। সুতরাং সুখের বিরোধী পদার্থে দ্বেষ জন্মে। সুখের বিরোধী দুঃখ। দুঃখে দ্বেষ হইয়া থাকে, দুঃখসাধনেও দ্বেষ হয়।। ১০।।
উপস্কারঃ
এবং ধর্ম্মাধর্ম্মপ্রাদুর্ভাবং প্রতি যমং সহকারিণমভিধায় দোষং সহকারিণমভিধাতু দোষনিদানমাহ।
স্রচন্দনবনিতাদিবিষয়সেবনজন্মনঃ সুখাদুত্তরোত্তরং তজ্জাতীয়ে সুখে তৎসাধনে বা রাগ ইচ্ছা বসংজায়তে অহিকন্টকাদিজন্মনো দুঃখাৎ তত্র তৎসাধনে বা দ্বেষ ইত্যপি দ্রষ্টব্যম্। রাগদ্বেষমোহাঃ প্রবর্তনত্বেন দোষা ইত্যভিধীয়ন্তে। তথাচ গৌতমীয়ং সূত্রম্ “প্ৰবৰ্ত্তনালক্ষণা দোষাঃ” (১ম অঃ ১ম আঃ ১৮ শ সূ) ইতি।। ১০।।
.
তন্ময়ত্বাচ্চ।।১১।।
অনুবাদ
তন্ময় ভাবও (ঐ ইচ্ছা ও দ্বেষের) হেতু।। ১১।।
ব্যাখ্যা
চিরন্তন বিষয়াভ্যাসে দৃঢ়তর সংস্কার উৎপন্ন হয়। সেই সংস্কারবশতঃ সুখস্মরণ হয়, তাহাতেই সুখাদির প্রতি ইচ্ছা জন্মে। দুঃখস্মরণহেতু দুঃখাদিতে বিদ্বেষ হইয়া থাকে। সুখের মনোহর স্বরূপ স্মরণ করিয়া সুখের জন্য মানব লালায়িত হয়। দুঃখের ঘোররূপ স্মরণ করিয়া তাহার প্রতি দ্বেষযুক্ত হয়। মনে হয় আমার সুখ হউক, দুঃখ যেন না হয়। যে কার্য্য দ্বারা সুখ হয় তাহার প্রতি অনুরাগ বা ইচ্ছা এবং যদ্দ্বারা দুঃখ হয় তাহার প্রতি দ্বেষ হইয়া থাকে।। ১১।।
উপস্কারঃ
অত্র সুখদুঃখে এব যদি রাগদ্বেষৌ জনয়তঃ তদা তয়োর্নাশে কথং তৌ স্যাতামত আহ।
রাগদ্বেষৌ ভবত ইতি শেষঃ। বিষয়াভ্যাসজনিতো দৃঢ়তরঃ সংস্কারবিশেষস্তন্ময়ত্বং যদ্বশাৎ কামাতুরস্য কামিনীমলভমানস্য সৰ্ব্বত্র কামিনীদর্শনম্, একদা ভুজঙ্গদষ্টস্য তত্র দৃঢ়তরসংস্কারতঃ সর্ব্বত্র ভুজঙ্গদর্শনম্। তদুক্তং “তন্ময়ত্বং তৎপ্রকাশো বাহ্যাভ্যন্তরতস্তথা” ইতি।। ১১।।
.
অদৃষ্টাচ্চ।।১২।। অনুবাদ
অদৃষ্টবশতও (হইয়া থাকে)।। ১২।।
ব্যাখ্যা
অদৃষ্টফলে জন্ম গ্রহণ হয়–সেই জন্মের দেহাদি অনুসারে ইচ্ছা, দ্বেষ হয়। বলিষ্ঠ ও দুর্ব্বলের, দীর্ঘকায় ও বামনের, সাহসী ও ভীরুর, ইচ্ছা-দ্বেষ বিভিন্ন বিষয়ে হইয়া থাকে। অর্থান্তর যথা—যে জন্মদরিদ্র সে ধন-জনিত সুখ ইহজন্মে ভোগ না করিলেও ধনাকাঙ্ক্ষা হইয়া থাকে। অকৃতদার সচ্চরিত্র যুবাপুরুষের বিবাহ-সঙ্কল্প না থাকিলেও সময়বিশেষে বিবাহেচ্ছা হয়। ব্যক্তিবিশেষের প্রতি ব্যক্তিবিশেষের অকারণ প্রীতি বা বিদ্বেষ বলিয়া যাহা বিবেচিত হয়—তাহা অদৃষ্টমূলক ও এই অর্থ টীকা-সম্মত। পরন্তু এই রাগদ্বেষ অদৃষ্ট অর্থাৎ পূর্ব্বজন্মের সংস্কারমূলক অর্থও হয়।। ১২।।
উপস্কারঃ
হেত্বন্তরং সমুচ্চিনোতি।
রাগদ্বেষাবিতি শেষঃ। যদ্যপ্যদৃষ্টং সাধারণকারণং তথাপি ক্বচিত্তৌ প্রতি অসাধারণতাম- প্যনুভজতি যথা তজ্জন্মাননুভূতকামিনীসুখস্যাপি যৌবনোদ্ভেদে কামিনীরাগঃ অননুভূত- ভুজঙ্গদংশদুঃখানামপি ভুজঙ্গেষু দ্বেষ ইত্যাদ্যুন্নেয়ম্। ন চ প্রাভবীয়ঃ সংস্কার এবাত্র নিবন্ধনম্, তৎকল্পনে তদুদ্বোধকল্পনে চ প্রমাণাভাবাৎ অদৃষ্টস্যাবশ্যকল্পনীয়ত্বাৎ।। ১২।।
.
জাতিবিশেষাচ্চ।।১৩।।
অনুবাদ
জাতিবিশেষবশতও (হয়)।। ১৩।।
ব্যাখ্যা
জাতি-অনুসারেও ইচ্ছা ও দ্বেষ হইয়া থাকে। যথা—মনুষ্যের অন্নাদি আহারের ইচ্ছা এবং ঘাস-বিচালি আহারে দ্বেষ হইয়া থাকে। ব্রাহ্মণের ঘৃত, দুগ্ধ ভোজনে ইচ্ছা এবং পলাণ্ডু প্রভৃতি ভোজনে বিদ্বেষ হয়।। ১৩।।
উপস্কারঃ
সহকার্য্যন্তরমাহ।
তথাহি মনুষ্যজাতীয়ানামন্নাদৌ রাগঃ, মৃগজাতীয়ানাং তৃণাদৌ, করভজাতীয়ানাং কন্টকাদৌ, তত্রাপি তত্তজ্জাতিনিষ্পাদকমদৃষ্টমেব তন্ত্রং দ্বারমাত্রন্তু জাতিৰ্জ্জন্মবিশেষঃ এবং পারাবতাদীনামুৎকরে রাগঃ। তথা মহিষজাতীয়ানাং তুরঙ্গমে দ্বেষঃ, সারমেয়াণাং শৃগালে, নকুলানাং ভুজঙ্গমে ইত্যাদ্যুন্নেয়ম্।।১৩।।
.
ইচ্ছাদ্বেষপূৰ্ব্বিকা ধৰ্ম্মাধর্ম্মপ্রবৃত্তিঃ।। ১৪।।
অনুবাদ
ধর্ম্মকার্য্য ও অধর্ম্মকার্য্যে প্রবৃত্তি ইচ্ছা ও বিদ্বেষমূলক।। ১৪।।
ব্যাখ্যা
প্রবৃত্তি শব্দে প্রযত্ন অর্থাৎ প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তি, দুইই। স্বর্গাদি সুখের ইচ্ছায় যাগযজ্ঞাদি ধৰ্ম্মকাৰ্য্যে প্রবৃত্তি হয়, ক্ষণিক সুখের ইচ্ছায় পাপকার্য্যে প্রবৃত্তি হয়। নরকদুঃখে বিদ্বেষবশতঃ অধর্ম্মকাৰ্য্য হইতে নিবৃত্তি হয় এবং সুখব্যাঘাতমূলক ঐহিক দুঃখে বিদ্বেষবশতঃ ধৰ্ম্মকাৰ্য্য নিত্য ব্রতোপবাস হইতে নিবৃত্তি হয়। টীকাকারেরা বলেন, প্রবৃত্তি শব্দের প্রবৃত্তিই অর্থ। “সুখের ইচ্ছায় ধর্ম্মকার্য্যে প্রবৃত্তি এবং বিদ্বেষবশতঃ হিংসাদি কাৰ্যে প্রবৃত্তি হয়।” ফলতঃ বিদ্বেষ প্রবৃত্তির কারণ নহে। তবে বিদ্বেষ থাকিলে বিদ্বেষপাত্রের হিংসা ইষ্টসিদ্ধির উপায়, এই জ্ঞান হয়, তাহা হইতেই হিংসাদি কাৰ্য্যে প্রবৃত্তি হইয়া থাকে।। ১৪।।
উপস্কারঃ
এবং ধর্ম্মাধর্ম্মনিমিত্ততয়া রাগদ্বেষনিমিত্তানি পরিসঙ্খ্যায় সম্প্রতি দোষাণাং ধৰ্ম্মাধর্ম্ম- কারণত্বং প্রবৃত্তিদ্বারেত্যাহ।
বিহিতে কর্ম্মণি রাগনিবন্ধনা নিষিদ্ধে কৰ্ম্মণি হিংসাদৌ দ্বেষনিবন্ধনা প্রবৃত্তিঃ, রাগনিবন্ধনা যাগাদৌ প্রবৃত্তিধৰ্ম্মং প্রসূতে, দ্বেষনিবন্ধনা হিংসাদৌ প্রবৃত্তিরধর্ম্মম্। তাবেতৌ রাগদ্বেষৌ সংসারমনুবর্ত্তয়তঃ তথাচ গৌতমীয়ং সূত্রম্ “প্রবৃত্তির্ধ্বাদ্ধিশরীরারম্ভঃ” (১ম অঃ, ১ম আঃ, ১৭ শ সূ) ইতি বাগারম্ভো বাচিকী প্রবৃত্তিঃ, সত্যং প্রিয়ং হিতমিতি পুণ্যা, অসত্যমপ্ৰিয়মহিতমিতি পাপা, বুদ্ধিঃ বুধ্যতে জ্ঞায়তেহনেনেতি মন উচ্যতে তেন মানসী প্রবৃত্তির্ভূতদয়াদিঃ, শারীরী প্রবৃত্তিদানং পরিচরণমিত্যাদিকা দশবিধা পাপা দশবিধা পুণ্যা চেতি।।১৪।।
.
তৎসংযোগো বিভাগঃ।।১৫।।
অনুবাদ
সেই ধৰ্ম্ম ও অধর্ম্ম হইতেই সংযোগ অর্থাৎ শরীরধারণ—জন্ম এবং বিভাগ অর্থাৎ মৃত্যু হইয়া থাকে।। ১৫।।
ব্যাখ্যা
ধর্ম্ম ও অধর্ম্ম হইতেই জন্ম, জীবন এবং ভোগ হইয়া থাকে। ফলারম্ভপ্রবৃত্ত অদৃষ্টের নাম প্রারদ্ধ, ভোগাধীন প্রারব্ধ ক্ষয় হয়। এই প্রারব্ধক্ষয় মৃত্যুর হেতু হইলেও যে প্রাণস্পন্দন বা মনঃস্পন্দন হওয়ায় শরীরের সহিত বিভাগ উৎপন্ন হইলে চিরতরে সংযোগধ্বংস হয়, সেই স্পন্দনের হেতু অদৃষ্টও অদৃষ্ট-বিশিষ্টাত্মসংযোগ। সুতরাং মৃত্যুর প্রতিও ধৰ্ম্মাধর্ম্ম অর্থাৎ অদৃষ্টও কারণ।। ১৫।।
উপস্কারঃ
ইদানীং ধৰ্ম্মাধর্ম্ময়োঃ প্রয়োজনং প্রত্যভাবমাহ
তাভ্যাং ধৰ্ম্মাধর্ম্মাভ্যাং সংযোগৌ জন্ম অপূৰ্ব্বাভিঃ শরীরেন্দ্রিয়বেদনাভিঃ সম্বন্ধঃ সংযোগ ইহোচ্যতে। বিভাগস্তু শরীরমনোবিভাগো মরণলক্ষণঃ, তথাচায়ং জন্মমরণপ্রবন্ধঃ সংসারঃ প্রেত্যভাবাপরনামা ধৰ্ম্মাধর্ম্মাভ্যামিত্যর্থঃ। অস্যৈব চ প্রেত্যভাবস্যাজরঞ্জরীভাব ইতি বৈদিকী সংজ্ঞা।। ১৫।।
.
আত্মকৰ্ম্মসু মোক্ষো ব্যাখ্যাতঃ।।১৬।।
অনুবাদ
আত্মকৰ্ম্ম হইলে মোক্ষ হয় ইহা কথিত হইয়াছে।। ১৬।।
ব্যাখ্যা
আত্মকৰ্ম্ম-অর্থে শ্রবণ, মনন, নিদিধ্যাসন প্রভৃতি। শাস্ত্রসম্মত আত্মা কি তাহা শাস্ত্র হইতে অবগত হওয়ার নাম শ্রবণ। বিচার দ্বারা শ্রুতবিষয়ের দৃঢ়তা সম্পাদন করিতে হয়; এই বিচারই অনুমানের উদ্ভাবক, এই অনুমান হইতে অনুমিতি হয়; দৃঢ়প্রমাণ জন্য অনুমিতি শ্রুতবিষয়ের দৃঢ়তাসম্পাদনে সক্ষম; এই দৃঢ়তাসম্পাদন হেতু অনুমিতিই মনন। তৎপরে নিদিধ্যাসন অর্থাৎ সমাধি। এই পথে অগ্রসর হইলে আত্মসাক্ষাৎকার হয়; তখন দেহাদির প্রতি অহং জ্ঞান থাকে না। তখন দেহে অহংজ্ঞানমূলক যে সুখাদির প্রতি ইচ্ছা ও দুঃখাদির প্রতি বিদ্বেষ তাহা আর হয় না। সুতরাং ধর্ম্মাধর্ম্ম আর উৎপন্ন হয় না। পূৰ্ব্বসঞ্চিত ধর্ম্মাধর্ম্মও দেহের অহংজ্ঞানের অভাবের সঙ্গে ভূষ্টবীজের ন্যায় বিফল হইয়া পড়ে। সুতরাং নূতন ধর্ম্মাধর্ম্মের অনুৎপত্তি এবং পূর্বতন ধর্ম্মাধর্ম্মের অকৰ্ম্মণ্যতা হেতু জন্ম হয় না; জন্ম না হওয়ায় মন ও শরীরসম্বন্ধের অভাবে দুঃখও হয় না। এই চরম দুঃখনিবৃত্তিই মুক্তি বা মোক্ষ। মননের উপযোগী বলিয়া দ্রব্যাদিপদার্থজ্ঞান প্রথম প্রয়োজনীয়। টীকাকার বলেন, আত্মসাক্ষাৎকার হইলে যোগপ্রভাবে কায়ব্যূহ করিয়া—এককালে সহস্র সহস্র দেহ নির্ম্মাণ করিয়া পূৰ্ব্বসঞ্চিত যাবতীয় অদৃষ্টফল অল্পক্ষণমধ্যেই ভোগ করিয়া লওয়া হয়। এইরূপে সঞ্চিত অদৃষ্টের ক্ষয় এবং নব অদৃষ্টের অনুৎপত্তি হওয়াতেই আর জন্ম হয় না।। ১৬।।
ষষ্ঠ অধ্যায় দ্বিতীয় আহ্নিক সমাপ্ত।
উপস্কারঃ
তদেতস্য প্রেত্যভাবস্য জন্মমরণপ্রবন্ধস্য যত্র চ পৰ্য্যবসানং তং মোক্ষং নিরূপয়িতুমাহ অয়মেব শরীরমনোবিভাগঃ আত্মকৰ্ম্মসু সৎসু মোক্ষো ভবতীত্যর্থঃ। তত্রাত্মকৰ্ম্মাণি তাবৎ শ্রবণং মননং যোগাভ্যাসো নিধিধ্যাসনমাসনং প্রাণায়ামঃ শমদমসম্পত্তিঃ আত্মপরাত্ম- সাক্ষাৎকারো দেহদেশান্তরোপভোগ্য পূর্ব্বোৎপন্নধর্মাধর্ম্মপরিজ্ঞানং তদ্ভোগানুরূপনানাদেহ- নিৰ্ম্মাণং তয়োর্ভোগেন প্রক্ষয়ো রাগদ্বেষলক্ষণদোষতুষারদমাদগ্নিমধর্ম্মাধর্ম্ময়োরনুৎপাদাৎ প্রবৃত্ত্যপায়ে জন্মাপায়াদ্দুঃখাপায়লক্ষণোহপবর্গস্তত্র ষট্পদার্থীয়তত্ত্বজ্ঞানমাদ্যমাত্মকৰ্ম্ম।। ১৬।।
ইতি শ্রীশাঙ্করে বৈশেষিকসূত্রোপস্কারে ষষ্ঠাধ্যায়স্য দ্বিতীয়াহ্নিকম্। সমাপ্তশ্চায়ং ষষ্ঠাধ্যায়ঃ।