শুন বরনারী – ৭

পাটনা যেতে হবে। আবার জগদীশপুর…মধুপুর… যশিডি—ট্রেনটা যেন দু’পাশের মত ছোট ছোট স্বপ্নলোকের কলরব কুড়িয়ে নিয়ে হুহু করে ছুটে চলে যাবে। ট্রেনের কামরার অচেনা ভিড়ের মুখরতা যেন একটা নীরবতা; চুপ করে বসে শুধু নিজের মনের কথাগুলিকে বুকের ভিতরে শুনতে পাওয়া যায়। অচেনা ভিড়টাও যেন একটা নির্জনতা; মনের কথা মুখ খুলে বলে ফেলতে একটুও অসুবিধা নেই, কোন বাধাও নেই; কেউ শুনতেই পায় না বোধহয়। ট্রেনের ঘুম একটা জাগার স্বপ্ন, আর জেগে থাকাও একটা ঘুম-ঘুম আবেশ।

উদাসীনের বাগানে সকালবেলার আলো ছড়িয়ে পড়তেই উদাসীনের মেয়ে যূথিকা ঘোষের মনের ভিতরেও যেন আলো ছড়িয়ে পড়ে। যূথিকা ঘোষের জীবনের গন্তব্যটা পাটনা বটে; সেই পাটনা; যে পাটনাকে বেশ ভাল লাগে। কিন্তু পাটনা যাওয়ার ঝঞ্ঝাটও যে একটা উৎসবের আনন্দ হয়ে যূথিকা ঘোষের কল্পনায় দুলতে শুরু করে দিয়েছে। সকাল দশটা হতে আর বেশি দেরি নেই; তৈরী হয় যূথিকা ঘোষ।

তৈরী হওয়াও এমন কিছু ঝঞ্ঝাটের ব্যাপার নয়। এবং তৈরী হবার ব্যাপারটাও সকাল ন’টা হতে না হতেই চুকে যায়। চামড়ার বড় একটা কেস, ছোট একটা বেডিং, খাবারের বাস্কেট, জলের ফ্লাস্ক আর ছোট হাত-ব্যাগটা। উপরতলার ঘরে থেকে নামিয়ে নিয়ে এসে নীচের তলার বারান্দায় রেখে দেয় চাকর জানকীরাম।

সাজ করবারও বিশেষ কোন ঝঞ্ঝাট নেই। নেকলেসটা গলা থেকে খুলে পড়ে যাবার ভয় আছে; না পরাই ভাল।

নেকলেসটাকে হাত-ব্যাগের ভিতরে রেখে দিয়েছে যূথিকা। আর,…হ্যাঁ…ভেলভেটের সান্ডেল পায়ে না দেওয়াই ভাল; ট্রেনে ওঠা-নামা করবার হুড়োহুড়ির মধ্যে স্যান্ডেলটা পা থেকে খসে পড়ে যায়; আর বেচারা হিমাদ্রি সেই স্যান্ডেল আনতে গিয়ে…। ছিঃ, এক পাটি জুতো কুড়িয়ে আনবার জন্য মানুষও এমন বিপদের ঝুকি নেয়? চলন্ত ট্রেন থেকে নেমে পড়ে, আর…।

না, লাল ভেলভেটের স্যাণ্ডেল নয়; সবুজ রঙের চামড়ার সেই মেয়েলী শু জোড়া পায়ে দিয়ে তৈরী হয় যূথিকা। ড্রাইভারও গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে।

যাত্রালগ্নের এই ব্যস্ততার মধ্যেই এক ফাঁকে উপরতলার ঘরের ভিতরে গিয়ে একটু একলা হয়ে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখের ছবিটার দিকে শেষবারের মত তাকিয়ে যেন নিজেকেই একটু মায়া করে নেয় যূথিকা। তারপরেই তরতর করে হেঁটে নীচে নেমে আসে। বাইরের বারান্দার উপর দাড়ায়।

চারুবাবু বলেন—দশটা বাজতে আর পনর মিনিট বাকি।

কুসুম ঘোষ বলেন—চল, যূথি।

কিন্তু চলতে গিয়েই হঠাৎ থমকে দাড়ায় যূথিকা। উদাসীনের মেয়ের একটা আশার স্বপ্ন যেন হঠাৎ অন্ধ হয়ে থেমে গিয়েছে।

গাড়ির কাছে দাড়িয়ে আছেন বুড়ো বলাইবাবু। বলাইবাবুর এক হাতে তাঁর সেই লাল কম্বলটি, আর এক হাতে সেই ছোট ঝোলাটি; এবং ঝোলার মুখ ঠেলে সেই ছোট থেলো হুঁকোটার নলের মুখ উঁকি দিয়ে রয়েছে।

চারুবাবু বলেন—হিমু নামে সেই ইয়ে…সেই রাফ স্বভাবের লোকটাকে আর ডাকবার দরকার হলো না। মধুপুর থেকে বলাইবাবু হঠাৎ আজ সকালে এসে গিয়েছেন। কাজেই…।

যূথিকার মুখের হাসি যেন মরা গোলাপের পাপড়ির মত একটা শুকনো বাতাসের আঘাত লেগে ঝরে পড়ে গিয়েছে। বিড় বিড় করে যূথিকা—তাহলে…তাহলে বলাইবাবু আমার সঙ্গে যাচ্ছেন?

কুসুম ঘোষ—হ্যাঁ।

চারুবাবু খুশি হয়ে হাসেন—বলাইবাবুর কোমরের বাত যে এত শিগ্‌গির সেরে যাবে, আমিও আশা করতে পারিনি।

হ্যাঁ, দেখতে পায় যূথিকা, গাড়ির কাছে বেশ সোজা হয়ে আর কোমর টান করে দাঁড়িয়ে আছেন বলাইবাবু।

আর দেরী করে লাভ কি? দেরী করবার কোন অর্থও হয় না। আস্তে আস্তে হেঁটে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায় যূথিকা।

তারপর আর কোন ঘটনারই কোন দেরি সইতে হয় না। উদাসীনের গাড়ি একটানা ছুটে এসে স্টেশনের কাছে থামে। টিকিট কিনতে দেরি করেন না বলাইবাবু। মধুপুর যাবার ট্রেনের ইঞ্জিনটাও রওনা হবার উল্লাসের শিস বাজাতে আর গুমরে উঠতে দেরি করে না।

চারুবাবু বলেন—ট্রেলিগ্রাম করে কণিকাকে জানিয়ে দিয়েছি।

কুসুম ঘোষ বলেন—তুমিও পাটনা পৌঁছেই একটা চিঠি দিতে ভুলে যেও না যেন।

মাথা নেড়ে একটা সাড়া দিতেও ভুলে যায় যূথিকা। এক-জোড়া উদাস চোখ নিয়ে আর নীরব হয়ে, ট্রেনের কামরার ভিতর ঢুকে অলস মূর্তির মত বসে থাকে। ছেড়ে যায় ট্রেন।

জগদীশপুরের নার্সারি পার হয়ে ট্রেনের ইঞ্জিন তীব্র একটা শিস বাজিয়ে দু’পাশের মাঠের বাতাস শিউরে দিতেই যূথিকা ঘোষের এতক্ষণের নীরবতা যেন হঠাৎ একটা চমক লেগে ভেঙ্গে যায়। বলাইবাবুর দিকে তাকিয়ে প্রায় চেঁচিয়ে ওঠে যূথিকা।—আপনার কোমরে বাত হঠাৎ সেরে গেল যে?

বলাইবাবুও চমকে ওঠেন, এবং আস্তে আস্তে হাসেন—হ্যাঁ দিদি, ঠাকুরের কৃপা। ওঃ, এই ক’টা মাস কি যে কষ্ট পেয়েছি, সে আর বলবার নয় দিদি।

যূথিকা—অসুখ হঠাৎ সেরে গেল, ভালই হলো; কিন্তু আজ হঠাৎ আপনার গিরিডিতে যাবার এত দরকার হয়ে পড়লো কেন?

বলাইবাবু—দরকার বিশেষ কিছুর নয় দিদি। বাবুর সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয়নি, তাই…।

যূথিকা—তাই, আর সময় পেলেন না? আজই হঠাৎ…।

বলাইবাবু—কি বললে দিদি?

যূথিকা—দু’দিন পরেও তো আসতে পারতেন।

বলাইবাবু—তা পারতুম…কিন্তু আজ হঠাৎ গিরিড়িতে এসে পড়েছিলুম বলেই না তোমাকে পাটনাতে পৌঁছে দেবার…।

যূথিকা—আমাকে পাটনা পৌঁছে দেবার মানুষ ছিল। আপনি না এলে কোন অসুবিধেই হতো না।

বলাইবাবু—অসুবিধে কেন হবে দিদি? বাবুর কি চাকর-বাকরের কোন অভাব আছে? কত মানুষ আছে।

যূথিকার গলার স্বর তপ্ত হয়ে ওঠে—আজ্ঞে না। আপনি না বুঝে-সুঝে এসব কথা বলবেন না।

বলাইবাবু হাসেন—বুড়ো মানুষের কথার এত ভুল ধরতে নেই দিদি।

যূথিকা—সেই জন্যেই তো বলছি।

বলাইবাবু—কি?

যূথিকা—আপনি বুড়োমানুষ; ট্রেনে যাওয়া-আসা করবার সামর্থ্যই বা আপনার কতটুকু? মিছিমিছি নিজে কষ্ট পান, আর আমাকেও অসুবিধায় ফেলেন।

বলাইবাবু ভীতভাবে বলেন—না না, আমার কষ্টের কথা ছেড়ে দাও। তোমার যদি কোন অসুবিধেয় পড়তে হয়, তবে আমাকে বললেই আমি তখুনি…।

যূথিকা—বলতে হবে কেন?

বলাইবাবু—অ্যা! না বললে কেমন করে…।

যূথিকা—হ্যাঁ, না বললেও মানুষের অসুবিধে মানুষ বুঝতে পারে।

বলাইবাবু—আমিও কি পারি না? এতবার তোমাকে পাটনা নিয়ে গেলাম, বলতে পার দিদি, তোমার কোন অসুবিধে হতে দিয়েছি?

বুড়ো বলাইবাবুর প্রশ্নের একটা স্পষ্ট উত্তর হয় তো ঝোঁকের মাথায় শুনিয়েই দিত যূথিকা; কিন্তু বলাইবাবু হঠাৎ ব্যস্তভাবে চেঁচিয়ে একটা প্রশ্ন করে ওঠেন।—তোমার হাত-ঘড়িটা দেখে একটু বল তো দিদি, ক’টা বাজলো? এগারটা বেজে গিয়েছে?

যূথিকা হাত-ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে—হ্যাঁ।

—ওঃ, বড় ভুল হয়ে গেল। বলতে বলতে আরও ব্যস্ত হয়ে ঝোলা হাতরে থার্মোমিটার বের করেন বলাইবাবু; আর বগলে চেপে বসে থাকেন।

একটু পরেই প্রশ্ন করেন—দেড় মিনিট হলো কি দিদি?

যূথিকা—হ্যাঁ।

থার্মোমিটারকে যূথিকারই হাতের কাছে এগিয়ে দিয়ে বলাইবাবু বলেন—দেখে একটু বলে দাও তো দিদি, সাতানব্বই না আটানব্বই?

থার্মোমিটার হাতে তুলে নিয়ে যূথিকা বলে—সাতানব্বই।

যূথিকার হাত থেকে আবার থার্মোমিটার তুলে নিয়ে ঝোলার ভিতরে ভরতে ভরতে বলাইবাবু বলেন—তা হলে ভালই আছি বলতে হবে দিদি। নয় কি?

যূথিকা—হ্যাঁ।

নীরব হয় যূথিকা। এবং বোধহয় চুপ করে বসে শুধু নিজের মনের সঙ্গে নীরবে কথা বলতে চায়। জানালা দিয়ে বাইরের মাঠের শোভা আর সাঁওতালী গাঁ-এর কুটিরগুলির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ দুটো আনমনা মানুষের চোখের মত অপলক হয়ে থাকে।

কিন্তু আবার বলাইবাবুর একটা প্রশ্নের শব্দ যূথিকার এই আনমনা নীরবতার শাস্তিটাকেও চমকে দিয়ে নষ্ট করে দেয়।

—শুনছো দিদি?

যূথিকা বিরক্ত হয়ে বলে—কি?

—সাড়ে এগারটা বেজে গিয়েছে কি?

যূথিকা—হ্যাঁ।

—তা হলে আমার এখন কিছু আহারাদি দরকার দিদি।

যূথিকা আশ্চর্য হয়।—এখুনি খাবেন?

—হ্যাঁ, নিয়মভঙ্গ করতে চাই না দিদি। ডাক্তার বলেছেন, দিবাভাগের আহার সারতে যেন কোনমতেই বেলা বারটার বেশি না হয়ে যায়।

যূথিকা—মধুপুরে পৌঁছে তারপর খেলেইতো পারতেন।

—না দিদি, মধুপুরে পৌঁছতে ট্রেনটা আজ বড় লেট করবে বলে মনে হচ্ছে।

খাবারের বাস্কেট হাতের কাছে টেনে নিয়ে, অয়েল পেপারের ঠোঙ্গার মধ্যে দশটা লুচি, আলুভাজা, আর পাঁচটা সন্দেশ ভরে দিয়ে বলাইবাবুর হাতের কাছে এগিয়ে দেয় যূথিকা।

বলাইবাবু বলেন—জল?

বাস্কেটের ভিতর থেকে গেলাস বের করে নিয়ে ফ্লাস্কের জল ঢালে যূথিকা।

বলাইবাবু লুচি-আলুভাজা মুখে দিয়ে চিবোতে চিবোতে বলেন—গিরিডির কুয়োর জল আমার শরীরের পক্ষে একেবারে মেডিসিন। ও জল খেতে পেলে আমি আধ সের মাংসের কারিকেও ডরাই না।

আহারাদি সমাপ্ত হবার পর, ঝোলার হুঁকোর দিকে যখন হাতটাকে মাত্র বাড়িয়ে দিয়েছেন বলাইবাবু, ঠিক তখন ট্রেনের গতি হঠাৎ মৃদু হয়ে যায়। জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে যূথিকা বলে—মধুপুর এসে গিয়েছে। এখন আর হুঁকো-টুকো…

বলাইবাবু বলেন—তাতে কি হয়েছে? স্টেশন আসতে আসতে আমি টিকে ধরিয়ে ফেলবো।

ঝোলা থেকে হুঁকো, কলকে, তামাক আর টিকে বের করেন বলাইবাবু। এবং দেশলাই জ্বেলে টিকে তাতাতে শুরু করে দেন।

বলাইবাবুর ফুঁ খেয়ে খেয়ে টিকের জ্বলন্ত কোনা থেকে যখন ছোট ছোট স্ফুলিঙ্গ উড়তে থাকে, তখন ট্রেনটা থেমেই যায়। আর, প্ল্যাটফর্মের ভিড়ের কলরব ট্রেনের কামরার ভিতরে এসে লুটিয়ে পড়ে। হুড়োহুড়ি করে কুলির দলও ছুটে আসে।

একটা কুলি কামরার ভিতরে ঢুকে যূথিকা ঘোষের বাক্স বিছানা বাস্কেট আর ফ্লাস্ক নিয়ে প্ল্যাটফর্মে নেমে পড়ে। শুধু ছোট হাত-ব্যাগটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায় যূথিকা।

হুঁকোর নলের মুখে কলকে চেপে দিয়ে বলাইবাবু বলেন—আমার কম্বলটা আর ঝোলাটাকে ভুলে যেও না দিদি।

একহাতে হুঁকো নিয়ে, আর-এক হাতে দরজার রড ধরে আস্তে আস্তে নেমে যান বলাইবাবু। বলাইবাবুর প্রকাণ্ড কম্বল আর ঝোলাটাকে একহাতে কোনমতে জড়িয়ে ধরে যূথিকাও প্ল্যাটফর্মে নামে।

বলাইবাবু হাঁফ ছাড়েন—আঃ, পাটনা এক্সপ্রেস আসতে এখন অনেক দেরি আছে দিদি।

হ্যাঁ, অনেক দেরি আছে। এখনও আধঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে, তারপর পাটনা যাবার ট্রেন ছুটে এসে প্ল্যাটফর্মের ওপারে দাঁড়াবে। হৈ-হৈ করে বেজে উঠবে সংসারের একটা ছুটন্ত ভিরের কর্কশ মুখরতা। এবং সেই মুখরতার একটা প্রকোষ্ঠের মধ্যে ঢুকে চুপ করে বসে থাকতে হবে। বিকেল পার হয়ে যাবে, সন্ধ্যাটা আস্তে আস্তে মরে যাবে, আর রাত গভীর হয়ে যাবে। তারপর, মাঝরাতেরও পরে একটি মূহূর্তে পাটনা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে নেমে শুধু দেখতে হবে মামীর ড্রাইভার দাড়িয়ে আছে।

পাটনা যাবার ট্রেন একটা ট্রেন মাত্র। এমন ট্রেনযাত্রা একটা যন্ত্রণার অভিযান মাত্র। ভাবতে একটুও ভাল লাগে না। যূথিকার কল্পনার ছবিটাকে মিথ্যে করে দিয়ে এ কি অদ্ভুত একটা অমধুর আর অকরুণ ট্রেনযাত্রা দেখা দিল?

হঠাৎ ছটফট করে শঙ্কিতের মত চেঁচিয়ে ওঠে যূথিকা—বলাইবাবু।

—কি দিদি?

যূথিকা—আমার বড় অসুবিধে হচ্ছে। আমি পাটনা যেতে পারবো না।

চমকে ওঠেন বলাইবাবু—অসুবিধে? কিসের অসুবিধে? আমি তো সর্ব্বক্ষণ তোমার সুবিধের জন্য ব্যস্ত হয়ে রয়েছি দিদি।

যূথিকা—তবু আমার অসুবিধে হচ্ছে।

বলাইবাবু—কিন্তু, আমি তো……।

যূথিকা—আপনাকে দোষ দিচ্ছি না। মোট কথা, আমার এখন পাটনা যেতে খুবই খারাপ লাগছে।

চোখ বড় করে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে থাকেন বলাইবাবু—তাহলে… সত্যিই কি গিরিডি ফিরে যেতে চাও?

যূথিকা—হ্যাঁ।

বলাইবাবু—কিন্তু বাবু যে আমার উপর ভয়ানক রাগ করবেন দিদি।

যূথিকা—আপনার ওপর রাগ করবেন কেন? আপনার দোষ কি?

বলাইবাবু—হ্যাঁ, সেটা বুঝে দেখ দিদি। আর সেটা বাবুকে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে ভুলে যেও না।

যূথিকা—আপনি ভাবছেন কেন? আমি বলবো, আমিই ইচ্ছে করে ফিরে এসেছি।

যূথিকাই ব্যস্ত হয়ে এদিকে-ওদিকে তাকিয়ে কুলিটাকে ডাকে। এবং কুলিটাও একটু আশ্চর্য হয়ে বাক্স বেডিং তুলে নিয়ে গিরিডি যাবার ট্রেনের কামরায় তুলে দিয়ে সেলাম জানায়—কুছ বকশিস ভি দিজিয়ে দিদি।

হাত-ব্যাগ থেকে টাকা বের করে কুলির হাতে ফেলে দিয়ে আর বলাইবাবুর দিকে তাকিয়ে হেসে ওঠে যূথিকা।—চা খাওয়ার ইচ্ছে থাকে তো খেয়ে নিন বলাইবাবু। এই ট্রেন ছাড়তেও আর বেশি দেরি নেই।

বলাইবাবু বলেন—নিশ্চয় নিশ্চয়। একটা চা-ওয়ালাকে ডাক দাও দিদি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *