৬
স্টেশন নেহাৎ কাছে নয়।
সাইকেল রিক্সা ভিন্ন গতি নেই। কিন্তু সে গতির দিকে লক্ষ্য না রেখে মান্না কোম্পানীর বটেশ্বর হনহনিয়ে হেঁটে চলেছিল স্টেশনের দিকে।
রোদে খাঁ খাঁ রাস্তা, তবু বটেশ্বর হাঁটা পথই বা ধরেছে কেন?
কেন কে জানে!
ধরেছে তাই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
অবশ্য সাইকেল রিক্সা যে গ্রামে প্রচুর আছে তা নয়, যে ক’খানি আছে সে ক’খানিকে হয়তো আপাতত মল্লিক বাবুরাই দখল করে রেখেছেন।
বটেশ্বর বোধকরি ভেবেছে, এগোই তো, পথে পাই নিয়ে নেবো। কাউকে সে জানিয়ে বেরোয় নি তা বোঝা যাচ্ছে। বটেশ্বরের হাতে বেশ ভারী একটা সুটকেস, সেটা বওয়া বেশ সুখসাধ্য নয়!
হঠাৎ পিছন থেকে সুটকেসে একটা টান পড়লো।
চমকে উঠলো বটেশ্বর।
মান্নাবাবু কি গুণ্ডা পাঠিয়ে মাঝপথে সর্বস্ব লুঠ করিয়ে জব্দ করতে চান?
ফিরে তাকালো।
আর পাথর হয়ে গেল।
‘ওটা আমার হাতে থাক, ভারী আছে।’
বটেশ্বর কড়া গলায় বলে, ”চাকরী খেয়েও আশা মেটেনি? সুটকেসটাও দখল করতে চান?”
‘তা চাই। সুটকেসটাই নয়, তার মালিকটিকেও।’
‘নাটক নভেলের কথা রাখুন, পথ ছাড়ুন।’
‘পথ তো আগলাইনি, শুধু পায়ে পায়ে পথ চলতে এসেছি।’
বটেশ্বর দাঁড়িয়ে পড়ে বলে, ‘আচ্ছা আপনি কেন এতকাল পরে আমার শনি হয়ে এলেন?’
‘আমার ভাগ্য! বারে বারেই তোমার শনি হবো, রাহু হবো, এই কপাল আমার!’
‘সুধা, তোমার পায়ে পড়ছি, আমাকে আমার জীবনে চলতে দাও। আমাকে এভাবে জব্দ কোরো না।’
‘পুতুল!’
পুতুল উত্তর দেয় না, অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।
‘পুতুল, যে জীবনে এতোদিন ছিলে, সে জীবন তো পুরনো কাপড়ের মতো ফেলে চলে এসেছো—’
‘পৃথিবীতে তো একটা মাত্রই পথ নেই? আবার অন্য পথের চেষ্টা করবো, অন্য কোথাও দাঁড়িয়ে যাবো—’
‘এইটাই কি চিরকালের জীবন হতে পারে পুতুল? বেটাছেলে সেজে আসর মাৎ করে—’
‘মাৎ আর করতে পারলাম কই?’
এতোক্ষণে একটু হাসে পুতুল, ‘কাৎই তো হয়ে গেলাম।’
‘পুতুল, তুমি কি সেই অভিমানে—?’
‘আরে দূর!’
‘তবে তুমি হঠাৎ কেন এভাবে—’
‘আচ্ছা তুমি কি গোয়েন্দা? আমার ওপর চোখ রাখতে কেউ তোমায় লাগিয়েছে?’
পুতুল রেগে বলে, ‘নইলে তুমি জানলে কী করে যে একটা সহায় সম্বলহীন মেয়ে তার শেষ সহায় ছদ্মবেশ টুকুকে হঠাৎ হারিয়ে ফেলে ভয়ে পালাচ্ছে!’
‘তোমার এই পালানোটাই তো সারা উজিরপুরে রাষ্ট্র হয়ে গেছে পুতুল!’
‘কী? তার মানে?’
‘মানে এই—মান্নাবাবু গিয়ে রাখাল দাসকে এই মারে সেই মারে। তোমাকে উনি ওঁর দল থেকে ভাঙিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে নাকি আমায় দালাল পাঠিয়েছিলেন, আর তুমি ওর মুখের ওপর চাকরী ছেড়ে দিয়েছো।’
‘য্যাঃ!’
‘কথাটা অবিশ্বাসের, তবু সত্যি। তুমুল চেঁচামেচি। আমি সেই গোলমালের মধ্যে থেকে সরে এলাম।’
‘বেশ দেখা হয়েছে তো? এখন যেতে পারেন।’
‘আবার ‘আপনিই’ বলে রাগ করে।
সুধো তাতে কান দেয় না।
সুধো মৃদু হেসে বলে, ‘যাবার উপায় কোথা? তলপী বইতে হবে না?’
‘ওঃ বইতেই হবে? তলপী বইবার চাকরীটা কে দিলে শুনি?’
‘সব চাকরী কি দিতে হয়? কিছু কিছু চাকরী নিতেও হয়।’
‘আমার খুব রাগ হচ্ছে সুধা! তুমি কেন আবার ধূমকেতুর মতন আমার জীবনের মধ্যে এলে?’
‘ধূমকেতুর স্বধর্ম!’
পায়ে পায়ে এগোচেছ।
পুতুল যেন নিরুপায় হয়েই ওই সুটকেসটার ভারটা ছেড়ে দিয়ে চলতে চলতে বলে, ‘আচ্ছা তুমি যে আমার সঙ্গে যাচ্ছো, এর উদ্দেশ্য কী?’
উদ্দেশ্য? হয়তো প্রায়শ্চিত্ত।’
হুঁ! এসব মহৎ চিন্তা—টিন্তাগুলো বোধহয় আজকালই গজিয়েছে?’
‘অস্বীকার করবো না। সুধো বলে, ‘সত্যিই হঠাৎ তোমায় দেখে, যেন সারাজীবনের বোকামী আর লোকসানের ওজন দেখে প্রাণটা হায় হায় করে উঠলো।…মার কি খবর পুতুল?’
‘মা? ও বাবা! এ যে একেবারে অনুতাপের আগুনে ঝলসানো! মার কথা তোমার মনে আছে?’
‘আছে পুতুল। সবই আছে, সবই থাকে। কোনো কিছুই হারিয়ে যায় না, ফুরিয়ে যায় না। শুধু কুগ্রহরাই যা খুশী করায়। এখন মায়ের নাম মুখে আনা আমার ধাষ্টামো। তবু জানতে ইচ্ছে হচ্ছে—’
‘মা নেই সুধো।’
সুধো চমকালো না।
সুধো যেন এই কথাটাই শোনবার জন্যে প্রস্তুত হচ্ছিলো।
আস্তে বললো, ‘বুঝতে পারছিলাম। মা থাকলে কি আর তুমি—?’
‘দরকারও হতো না! মা যে কোথা থেকে কি করতেন!’
‘কিন্তু একটা কথা বলি,—জগৎ সংসারে এতো রকম কাজ থাকতে, হঠাৎ বেটাছেলে সেজে কবিগান করার ইচ্ছে হলো কেন?’
‘কেন?’
পুতুল একটু বিষণ্ণ হাসি হাসে।
‘সব ‘কেন’র মানে বলা যায় না।’
‘কাঁঠালতলার সেই পুকুরটা কেটে নিয়েছিলি পুতুল? যাতে কচি পুতুলকে চান করাবি বলেছিলি?’
‘নিয়েছিলাম বৈকি!’
পুতুল একটু হাসে, ‘সেই পুকুরে চান করতে করতেই তো কচি পুতুলটা এতো বড়ো হলো।’
‘মা আমায় কী বলতেন পুতুল?’
‘কী মনে হয়?’
‘মনে তো অনেক কিছুই হয়। মনে হয় বলেছেন—বেইমান নেমকহারাম অকৃতজ্ঞ ছোটলোক।’
‘ওইসব কথাগুলোর সঙ্গে মার মুখটা মিলোতে পেরেছো?’
‘না পুতুল, তা’ পারছি না। কিন্তু ওইগুলোই তো বলা উচিত।’
পুতুল চড়া গলায় বলে, ‘উচিত কাজটা মার হয়ে আমি করেছি। শুধু ওই নয়, আরো অনেক কিছু বলেছি। আজো বলি।’
‘বলেছিস? আজো বলিস? তুই আমায় বাঁচালি পুতুল! মনে হচ্ছে…কিন্তু, মা তা’হলে কী বলেছেন?’
পুতুল একটু দাঁড়িয়ে পড়ে আস্তে বলে, ‘মা বলতো, শিকলিকাটা পাখি।’ কেঁদে কেঁদে বলতো, ‘জানতাম। জানতাম ও খাঁচা ভেঙে পালাবে।’
‘কতোদিন হলো পুতুল?’
পুতুল প্রশ্নটা বুঝে নেয়।
বলে, ‘এই আশ্বিনে সাত বছর।’
‘সাত বছর! এই সাত বছর তুই একা আছিস পুতুল?’
‘একা কেন? ভগবান আছেন সঙ্গে সঙ্গে?’
কিছুক্ষণ আর কথা বললো না সুধো।
তারপর আবার স্তব্ধতা ভেঙে বললে, ‘কী হয়েছিল?’
‘জ্বর। শুধু জ্বর। সে জ্বর আর ছাড়লো না।’
‘আর মা আমায় ছেলের মতো করে—’
থেমে যায়, তারপর সামলে নিয়ে বলে, ‘কিন্তু তোর তো তখন বিয়ের বয়স হয়ে গিয়েছিল পুতুল! বিয়ে করিসনি কেন? তাহলেতো—’
পুতুলের গলা ধারালো শোনায়, ‘বিয়ের বয়স হলেই বিয়ে করতে হয়? তোমারও তো বিয়ের বয়েস হয়ে গেছে কোনকালে।’
‘আমার কথা বাদ দে। আমি একটা লক্ষ্মীছাড়া বাউণ্ডুলে। তাছাড়া বেটাছেলে।’
‘তাতেই মাথা কিনেছো?’
‘না’ মানে, বেটাছেলের তো অন্য ভয় নেই। মেয়েছেলের পদে পদে ভয়।’
‘সে জ্ঞান আছে তাহলে?’
‘ছিল না জ্ঞান পুতুল, ধীরে ধীরে হয়েছে। যতো নিজের ছোটলোকমীর কথা ভেবেছি ততোই জ্ঞান জন্মেছে। কিন্তু জানতাম না তো তুই কোথায় কী অবস্থায় আছিস। মনে ভাবতাম রূপের জোরে খুব একখানা বড়লোকে বাড়িতে বিয়ে হয়েছে, সোনার খাটে গা আর রূপোর খাটে পা মেলে শুয়ে আছিস—’
‘ভাবতে এইসব?’
‘ভাববো না? বড়লোকের বৌ হবার মতোই তো রূপখানা তোর!’
‘হুঁ। তাই মান্নাবাবুর দাসত্ব করছি।’
‘সে তোর সখের কাজল পরা পুতুল! আর মারও অন্যমনস্কতা। মা যদি সময়ে—’
‘দেখো সুধা, মার নামে কথা বলো না।’
‘না না ছিঃ। কথা বলবো কেন? মানে ইয়ে—’
‘জানি বুঝেছি। মা বলতেন, ‘যার হাতে মনে মনে তোকে সঁপে দিয়ে রেখেছিলাম তাকে ছাড়া আর কারুর হাতে দিতে মন সায় দেয়না পুতুল! আমি মরে গেলে তোর যা মনে হয় করিস।’
‘পুতুল!’
‘কী?’
‘কার হাতে?’
পুতুল কড়া গলায় বলে, ‘বুঝতে পারছো না? সে হচ্ছে আমার যম।’
দূর থেকে টিনের বেড়া দেওয়া এক ফোঁট্টা স্টেশনটা দেখা গেল।
সুধো সুটকেসটা হাত বদল করলো।
‘এখন গাড়ি আছে?’
‘পাঁচটার সময় আছে।’
‘কোন ট্রেন? কোথা থেকে আসে?’
‘জানিনা। একদিন আমাদের দলের নিতাই বলেছিল পাঁচটার গাড়িতে ওর শালা আসবে। দাও এবার আমার তলপীটা দাও।’
‘উঁহু, না তো। বরাবরের চাকরী নিলাম যে।’
‘সুধা, তুমি বুঝতে পারছো না—’
‘পারছি।’
‘ওরা তোমায় খুঁজবে না?’
‘তা খুঁজবে।’
‘তারপর? যখন দেখবে তুমি আমি দু’জনে একই সঙ্গে নিরুদ্দেশ, তখন কী বলবে?’
‘কি আবার বলবে? কিছুই বলবে না। দুটো ‘ছেলে’ই একসঙ্গে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল, শুধু এই বলবে।’
পুতুলের যেন নতুন করে খেয়াল হলো তার বহিরঙ্গে সাজটা কী? এতক্ষণ সে আস্তে আস্তে বটেশ্বর থেকে পুতুল হয়ে গিয়েছিল।
‘এই এই দাঁড়া—’
একখানা সাইকেল রিক্সা স্টেশনের শেডের নীচে থেকে আস্তে আস্তে বেরোচ্ছিল। সুধো তাকে দাঁড় করালো।
‘এখন এটা কী হবে?’
পুতুল অবাক হয়। ‘কোন কাজে লাগাবে এখন এটাকে?’
‘দেখোনা, ওঠো।’
‘তোমার মতলবটা কী?’
‘মতলব খারাপ। তোমায় নিয়ে ভেগে পড়া।’
‘তা সেটা তো হচ্ছিলই। এখন এই ট্রেন এসে পড়ার সময় কোথায় যাবে?’
‘ট্রেনে উঠবো না পুতুল! ট্রেন ছাড়বার আগেই পালাবো।’
‘কী ব্যাপারটা কী? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।’
‘বোঝবার আগে পালাই।’
‘এই রিক্সাওলা, এখানে কোথায় বিবিগঞ্জের হাট বসে? সেখানে নিয়ে চল।’
‘হাট তো বাবু পর্শু।’
‘ওঃ তাই নাকি?’
‘তা’ বিবিগঞ্জ তো আছে? সেখানেই চল।’
সুধো পুতুলকে প্রায় ঠেলে তুলে দিয়ে সুটকেশটা নিয়ে চড়ে বসে।
পুতুল উঠে বসে, কিন্তু ব্যাকুলভাবে ট্রেন আসার সম্ভাবিত দিকটার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘তোমার অভিসন্ধিটা দয়া করে খুলে বলবে আমায়?’
‘অভিসন্ধি তো খুলেই বললাম। আরো একটা কথা শুনে নাও। মনে করো না মান্নাবাবু আর রাখালদা নিজেদের জলজ্যান্ত মাল দুটোকে হারিয়ে যেতে দেবে। যেই টের পাবে পাখি হাওয়া, সেই রিক্সা করে ছুটে চলে আসবে ইষ্টিশানে। জানে তো—আমাদের শেষ গতি রেলগাড়ি। এসে হুল্লোড় তুলে গাড়িখানাকে চলে যাইয়ে ছাড়বে।
পুতুল এদিকটা ভেবে দেখেনি।
পুতুল ভাবছিলো কোনমতে একবার রেলগাড়িতে চড়ে বসে তারপর ভাববে কোন দিকে যাবে, কোথায় নেমে পড়বে, এরপর কী করবে।
হঠাৎ যেন নিশিতে পাওয়ার মতো ছুটে চলে আসছিলো, এখন সব অদ্ভুত অন্যরকম লাগছে।
যে শত্রুর ভয়ে দিশেহারা হয়ে পালিয়ে আসছিলো, তার সঙ্গে এক রিক্সা গাড়িতে এগিয়ে চলছে, নিজেকে প্রায় ছেড়ে দিয়ে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা আর ভাবছে না। এখন তো সব ভাবনা ওই শত্রুটার।
‘এখন আমরা বিবিগঞ্জে পৌঁছে কোথাও গা ঢাকা দিয়ে থাকবো। ওরা এদিকে নিশ্চয় আসবে না।’
‘আর তোমার জিনিসপত্র?’
‘দূর ভারী তো জিনিস! দ্বিতীয় একটা বস্ত্রের দরকার হতে পারে। তা’ তোমার কাছেই তো মিলবে।’
হঠাৎ দু’জনে হেসে ওঠে।
সম্পূর্ণ কৌতুকের হাসি।
যেন দু’জনে বরাবরই এমনি এক রিক্সায় গায়ে গা ঠেকিয়ে বেড়াতে যায়, এমনি হাসি গল্প করে।
‘যেতে যেতে একটা পানের দোকান পেলে পান খাবো।’
‘ওঃ একাই খাবে?’
‘তাই কি খায় কেউ?’
‘আচ্ছা তোমার খুব অদ্ভুত লাগছে না?’
‘লাগছে, আবার লাগছে না।’ পুতুল আস্তে বলে, ‘যেই মাত্র তোমায় দেখতে পেলাম, সঙ্গে সঙ্গে মনে হয়েছিলো, এইবার বুঝি সব ওলোট পালোট হয়ে যাবে। যা কিছু সাজানো, সব ভেঙে ছত্রখান হয়ে যাবে।’
‘তুমি আমায় দেখেই চিনতে পেরেছিলে?’
‘তোমায় দেখে? তোমার ছায়া দেখে।’
পুতুল এবার অভিযোগের গলায় বলে, ‘তুমি কিন্তু আমায় প্রথমে চিনতে পারনি।’
‘তা পারিনি, স্বীকার করেছি। তোমার যে সাজ অন্য। তবু জানো পুতুল, দেখামাত্র কী যে হতে লাগলো মনের মধ্যে! তাই না অমন করে রাগিয়ে দিয়ে দেখছিলাম, খোলসটা ভাঙুক, দেখি।’
ধান ক্ষেতের পাশ দিয়ে চলেছে রিক্সাখানা, অনেকক্ষণ আর কথা বলছে না ওরা। যেন কথা হারিয়ে ফেলেছে।
যেন উপলব্ধিতে আনছে, সত্যিই এখন ওরা একসঙ্গে চলছে কিনা।
কিন্তু সেই কানসোনাপুরে ওদের যা বয়েস ছিল সে কি প্রেমে পড়ার বয়েস?
নয় নিশ্চয়ই, তবু কোথায় যেন কী একটা বন্ধন দুজনকে অলক্ষ্যে বেঁধে রেখেছিল। হয়তো একজনের মাতৃহৃদয়ের একান্ত ইচ্ছার নির্দেশ, আর একজনের অপরাধ বোধের ব্যাকুলতা তিল তিল করে হয়ে উঠেছিলো ভালবাসা। তাই একমুহূর্তে দূরত্ব গেল ঘুচে। শৈশবের চেনা, সেও বুঝি এক আলাদা জিনিস।
একসময় সুধো বলে ওঠে, ‘মা থাকলে ফিরে গিয়ে বলতাম, ‘মা, তোমার শিকলি কাটা পাখি আবার এসে খাঁচায় ধরা দিলো।’
পুতুল একটুক্ষণ চুপ করে থেকে একটু বিষণ্ণ ধরনের হাসি হেসে বলে, ‘আর এক খাঁচার শিকল কাটলো!’
সুধো চুপ করে রইলো।
রাখাল দাসের মুখটা মনে পড়লো। সুধোর জন্যে উদ্বেগটা মনে পড়লো।
একটা নিঃশ্বাস ধানক্ষেতের মধ্যে মিলিয়ে গেল।
যবনিকা
হ্যাঁ, শেষ পর্যন্ত সেই রাত্রে অজিতা দেবীও একটা খুন করে বসলেন। যে রাত্রির প্রভাত ভয়ঙ্কর একটা উত্তেজনার স্নায়ু থরথরিয়ে অপেক্ষা করছিল, অজিতা দেবী কী করেন! অজিতা দেবী কী করবেন!
অজিতা দেবীই তো এই এতদিন ধরে ছিলেন সকলের লক্ষ্যবস্তু। শুধু যে সমগ্র পরিবারই তা’ নয়, আত্মীয়—অনাত্মীয়, বন্ধু, শত্রু, পরিচিত—অপরিচিত, বলতে গেলে দেশশুদ্ধ সবাই এ পর্যন্ত অজিতা দেবীর দিকেই তীব্র উৎকণ্ঠিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেছে, কী করেন উনি! কী করবেন!
কিন্তু কেন?
প্রৌঢ়া বিধবা অজিতা দেবী হঠাৎ এতখানি গুরুত্ব লাভ করলেন কী সূত্রে? দেশসুদ্ধ লোকই বা তাঁর নাম জানলো কী জন্যে? তিনি তো তাঁর দেব—দ্বিজ, আচার—নিষ্ঠা, ব্রত—পার্বণ নিয়ে প্রায় পূজোর ঘরের এলাকাতেই নির্বাসিত ছিলেন, অথবা স্বেচ্ছায় নিয়েছিলেন সে নির্বাসন। সে যাই হোক, সেই নির্বাসিতা অজিতা দেবী একেবারে মঞ্চের মধ্যস্থলে এসে অবতীর্ণ হলেন কেন?
যেন ভয়ঙ্কর যে নাটকখানার অভিনয় দেখবার জন্যে রোমাঞ্চিত কলেবর দর্শককুল অপেক্ষা করছে, তার নায়িকার ‘রোল’টা দেওয়া হয়েছে অজিতা দেবীকে।
কী এর কারণ?
কারণ সেই আগের খুনটা।
উদ্দাম একটা ঝড়ের রাতে অজিতা দেবীর বাড়িতেই যে খুনটা হয়ে গিয়েছিল। বিগত কয়েক মাস ধরে যার ‘কেস’ চলছিল নির্লজ্জ নগ্ন কঠোর একটা হিংস্রতার রূপ নিয়ে। অজিতা দেবীই হচ্ছেন সেই ‘কেস’—এর প্রধান সাক্ষী।
কারণ প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তিনি নাকি প্রধান। সম্পর্ক হিসেবেও।
তাই পরামর্শদাতা—আত্মীয় আর উকিল ব্যারিস্টারবর্গ তাঁকে প্রস্তুত করছিল সত্য সাক্ষ্য দেবার জন্যে। হ্যাঁ সত্য সাক্ষ্য দেবার জন্যেও ‘প্রস্তুত’ করতে হয় বৈকি। বলবার পদ্ধতির একটু এদিক—ওদিকেও যে ‘কেস’ একেবারে ঘুরে যেতে পারে।
আশ্চর্য!
অজিতা দেবীর বাড়িতে একটা খুনের ঘটনা ঘটলো! এত সাধাসিধে গেরস্থালী বাড়িতে এমন শান্ত—ছন্দ সংসারে এমন ঘটনা যে কী করে ঘটতে পারে, তাই ভেবে পায়নি অজিতা দেবী আর অজিতা দেবীর ছেলের পরিচিত সমাজ।
অজিতা দেবীর মেয়ের বাড়িটা অবশ্য বড়লোকের বাড়ি, মানে জামাই কলকাতার এক নামকরা বনেদী বাড়ির ছেলে, কিন্তু অজিতা দেবীর ছেলে তো সাধারণ একজন কেরাণীমাত্র।
বাপের তৈরি বাড়িটা রয়েছে, স্ত্রী গোছালো মেয়ে, মা প্রায় সংসার নির্লিপ্ত, কাজেই অজিতা দেবীর ছেলে পার্থসারথির জীবনছন্দে কোথাও কোনোখানে জটিলতা ছিল না।
পার্থসারথির স্ত্রী নন্দিতার বাপের বাড়িটাও ততোধিক গেরস্থ। মেয়ের বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত আছে, পূজোয় মেয়ে জামাইয়ের শাড়ি ধুতি, জামাইষষ্ঠীতে জামাইয়ের ধুতি চাদর এইটুকু করতেই তাদের সামর্থ্য ফুরোয়, মেয়েকে কদাচ নিয়ে যায়, এদানীং তো বহুকাল নিয়ে যায়ও নি। নন্দিতা মাঝে মাঝে মা বাপের সঙ্গে দেখা করে আসে রিষড়েয় গিয়ে, অজিতা দেবী হয়তো সেদিন পূজোর ঘর থেকে নেমে একটু বেশীক্ষণ সংসারচক্রে ঘোরেন, নন্দিতা ফিরলেই তাঁর ছুটি।
অজিতা দেবীর মেয়ে ভারতীও মা ভাইয়ের বাড়িতে মাঝে মাঝেই আসতে পায়, কারণ ওর বনেদী শ্বশুরবাড়ির নিয়ম নয় বৌরা বেশী বাপের বাড়ি যায় অথবা নিতান্ত প্রয়োজন ব্যতীত সেখানে রাত্রিবাস করে।
বড্ড মন—কেমন করে, যাও বেড়িয়ে এসো। তাই আসে ভারতী। তবে যখন আসে, মা ভাই ভাজ ভাই—ঝি সকলের জন্যে আলাদা আলাদা করে প্রচুর উপঢৌকন নিয়ে আসে। খাবার—দাবার খেলনা—পাতি কাপড়—চোপড়।
পার্থ বোনকে ‘এত বাড়াবাড়ি’ করার জন্যে অনুযোগ করলেও ভারতী শোনে না সে কথা। অমায়িক হেসে বলে, ‘এ আর কী দাদা, সামান্যই তো!’ বনেদী বাড়ির আবহাওয়ায় সে—ও ক্রমশঃ ওদের ছাঁচে হয়ে উঠেছে, ওদের মত ‘কারুকার্যময় বিনয়’ শিখেছে। যেমন আছে তার বর রাজেন্দ্রভূষণের।
কিন্তু ‘আছে’ শব্দটা কি এখনো ব্যবহার করা চলে?
কি জানি।
তবে ও শব্দটা মুলতুবী রেখে বলা যায় রাজেন্দ্রভূষণ ছেলে খারাপ নয়। স্বভাব চরিত্রের নিন্দে কোনোদিন শোনা যায় নি। বৌকে অযত্ন করে না, নিজে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে আসে, নিয়ে যায়। হয়তো একটু বোকা চালিয়াৎ, হয়তো একটু অহঙ্কারী, তা’ সে এমন কিছু নয়। বনেদী বড়লোকের বাড়িতে মেয়ের বিয়ে দিলে ওটুকু মেনেই নিতে হয়। অজিতা দেবীদের মত গেরস্থ বাড়ির মেয়েরতো ও—বাড়িতে পড়বারই কথা নয়, নেহাৎ ভারতীর রূপের জোরেই—
হ্যাঁ রূপের জোরেই ওদের বাড়িতে পড়েছিল ভারতী মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে। কোথায় কোন বিয়ে—বাড়িতে ফুটফুটে মেয়েটাকে দেখেই ওদের পছন্দ হয়ে গিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে তোড়জোড় করে নিয়ে গিয়ে নিজেদের হারেমে পুরে ফেলেছিল।
তখন অজিতা দেবীর স্বামী অভিলাষ সেন জীবিত ছিলেন। আর সত্যি বলতে, তিনি স্ত্রী পুত্রের আপত্তি অগ্রাহ্য করে প্রায় জোর করেই মেয়ের বিয়েটা দিয়ে ফেলেছিলেন। বড়লোকের ওপর মোহ ছিল তাঁর, মোহ ছিল ‘বনেদী’ শব্দটার ওপর। নইলে অজিতা দেবীর একান্ত অনিচ্ছে ছিল লেখাপড়ায় ইতি টেনে স্কুলের মেয়েটা ঘোমটা টেনে শ্বশুরবাড়ি যায়।
পার্থরও তো বটেই।
পার্থ বলেছি, ‘একজনের লোভের যূপকাষ্ঠে একটা কচি মেষ বলি হল!’
বলেছিল—
কিন্তু এ সব তো অতীত কথা। এ কথা তো এ কাহিনীতে অবান্তর।
ভারতী যে পড়তে পায়নি, সে আক্ষেপ ভারতীর মধ্যে তো এখন আর তিলমাত্রও অবশিষ্ট নেই। ভারতী তো ওর শ্বশুরবাড়ির মহিমায় বিগলিত। ভারতী কেরাণী—টেরাণীদের, ওর স্বামীর মতই ঈষৎ কৃপার দৃষ্টিতে দেখে থাকে।
অবশ্য ডিগ্রীধারী কেরাণীরাও আবার ওদের প্রতি সেই দৃষ্টি ফেলে। ওদের ওই সর্বদা পান—জর্দা গালে ভরে থাকা, ওঁদের ওই গহনা কাপড়, মোটর গাড়ির প্রসঙ্গ ব্যতীত গল্পের আর অন্য প্রসঙ্গ না থাকা, ওদের ওই ‘সদাই’ সুখী’ মুখ, আর ভারী—ভারী গড়ন, সবই এদের কাছে কৌতুকের।
কিন্তু তার বেশী কিছু নয়!
তা’ ছাড়া কিছু নয়।
মোটের মাথায় অজিতা দেবীর এই নিতান্ত সাধারণ পরিমণ্ডলটি একটা নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পটভূমিকা হবার উপযুক্ত নয়।
অথচ ঘটে গেছে সেই ঘটনা।
আবার নাকি শোনা যাচ্ছে—আকস্মিকও নয়। ইচ্ছাকৃত। আছে সে প্রমাণ। তাই তিন মাস ধরে হাজতে পড়ে আছে রাজেন্দ্রভূষণ রায়! আর ভারতী রায় কোমর বেঁধে লড়ছে তাকে উদ্ধার করবার জন্যে। তাছাড়া রাজেন্দ্রভূষণের দুই দাদা ব্রজেন্দ্রভূষণ আর তেজেন্দ্রভূষণ, যাদের সঙ্গে নাকি মুখ দেখাদেখি ছিল না রাজেন্দ্রর, তারাও বিরোধ ভুলে এই লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করে মরীয়া হয়ে লড়ছে।
কাগজে কাগজে এই তিন মাস ধরে এই লোমহর্ষক হত্যাকাহিনীর ইতিবৃত্ত ছাপা হচ্ছে, এবং সবাই অপেক্ষা করছে, কি হয়? কি হয়?
অনেকের সাক্ষ্য হয়ে গেছে, অনেকের হয়তো পরে হবে, সেগুলো নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না। সবাই উদগ্রীব হয়ে আছে অজিতা দেবী কী বলেন? নিহত হতভাগ্য হচ্ছে তাঁর একমাত্র পুত্র আর হত্যাকারী তাঁর একমাত্র কন্যার স্বামী—অজিতা দেবীর জামাতা।
অজিতা দেবী কি সেই জামাইকে ফাঁসিতে লটকে পুত্রহত্যার প্রতিশোধ নেবেন? পুত্রহত্যার রক্তে স্নান করে পুত্রশোকের জ্বালা জুড়োবেন? না কি তাঁর মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে, ন্যায় ধর্ম, সত্য ধর্ম, সব কিছুতে জলাঞ্জলি দিয়ে, ধর্মাধিকরণের সামনে ঈশ্বরের নামে শপথ করে মিথ্যা কথা উচ্চারণ করবেন?
এই প্রশ্নে—
এই প্রশ্নে আন্দোলিত হচ্ছে সবাই।
আর ভয়ানক ভাবে আন্দোলিত হচ্ছে এ নাটকের আর এক নায়িকা নন্দিতা। সে এ প্রশ্নে আন্দোলিত হচ্ছে, উত্তেজিত হচ্ছে বিদীর্ণ হচ্ছে, জর্জরিত হচ্ছে। কখনো বিশ্বাসে, কখনো সন্দেহে, শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে দেখছে সে।
বুঝতে পারছে না।
অজিতা দেবীর মুখ দেখে কিছু বোঝবার উপায়ও নেই। মুখটা যেন পাথর হয়ে গেছে সেদিন থেকে।
অজিতা দেবী যদি পুত্রশোকে আকুল হয়ে কাঁদতেন, নন্দিতা কিছুটা আশা রাখতে পারতো। হত্যাকারীর ‘উচিত শাস্তি’তে হয়তো তার জ্বলেপুড়ে যাওয়া প্রাণটা কিছুটা শান্তিলাভ করতো। কিন্তু অজিতা দেবী এক ফোঁটা চোখের জল ফেলেননি, একবার ডুকরে ওঠেননি। এমন কি সেই ঘটনাস্থলে একবার আছড়েও পড়েননি।
‘তার মানে তোর শাশুড়ীর তখনই সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাটার পরিণাম চিন্তা এসে গেছে—’ নন্দিতার দাদা বিশ্বনাথ ঘৃণার গলায় বলেছে, ‘তখনই মনে পড়েছে, সর্বনাশ। জামাইটা যে ফাঁসিতে ঝুলবে। তাই অত শক্ত আছেন। দেখো এখন জামাইয়ের বদলে আর কাউকে না ফাঁসান।’
নন্দিতার বাবা একবার বলেছিলেন, ‘তাই কি হয়, পুত্রশোকের জ্বালা বলে কথা। যতই হোক জামাই পরের ছেলে—’
কথা শেষ করতে পারেননি, নন্দিতার মা ডুকরে উঠেছিলেন, ‘ওগো পরের ছেলে যে নিজের ছেলের বাড়া হয় গো—’
তখন আবার নন্দিতার দাদা কটু গলায় বলেছিল, ‘সবাই হয় না মা। খুনে ডাকাত, শয়তান, এদেরও কি সেই পর্যায়ে ফেলবে তুমি?’
তা’ বটে!
তা’ ফেলা যায় না বটে।
সেই কথাই ভাবে সবাই।
সেই ঝড়ের রাত্তিরের আগের বেলাটা পর্যন্ত যে সেই পর্যায়েই ছিল লোকটা, তা কারুর মনে পড়ে না।
নন্দিতার দিদি বলে, ‘ওই জামাইকে উনি জামাই—আদর করতেন। আশ্চর্য!’
বাপের বাড়ির লোকেই এখন ঘিরে থাকছে নন্দিতাকে। মা আসছেন, বাপ ভাই আসছেন, দিদি জামাইবাবু আসছেন। মাসী পিসীও এসে গেছেন এক আধবার। আর হাজার হাজার কথার ঝড়ে নন্দিতার শোকের সমুদ্রটা যেন শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে উঠছে।
কথা, কথা, অজস্র কথা।
হবেই তো!
এ মৃত্যু তো স্বাভাবিক নিয়মে ভগবানের হাত থেকে আসেনি যে, শোক ওই অশ্রুজলে ধুয়ে যাবে, ‘ভগবানের মার মানুষের বার।’ কিন্তু এ মৃত্যু তো আকস্মিক একটা দৈব দুর্ঘটনারও ফল নয়, যাকে ‘অবধারিত নিয়তি’ বলে কপালে করাঘাত করে সান্ত্বনা পাওয়া যাবে।
এ যে মানুষের হিংস্রতা থেকে এসেছে।
এসেছে অকল্পিত ভয়ঙ্করতা থেকে।
এ শোক কি করে স্তব্ধতায় পবিত্র হবে? হবে নিঃশব্দে নম্র?
এ শোক কড়া মদের মত উগ্র উত্তেজনাময়। এ শোক আগুনে ঝলসে যাওয়া দাহের মত। এ শোক তাই পুড়িয়ে পুড়িয়ে খাক করছে নন্দিতাকে। পুড়িয়ে দিচ্ছে নন্দিতার সমস্ত মানবিকতা, সমস্ত চিত্তবৃত্তি। নন্দিতার চেহারাটা একটা ক্ষ্যাপা জন্তুর মত হয়ে গেছে, নন্দিতার ভিতরটা অহরহ ধকধক করে জ্বলছে।
আর নন্দিতার হিতৈষীরা মাঝেমাঝেই সেই আগুনে কাঠ জোগান দিচ্ছে।
প্রথমটা আছড়ে—পরা বিস্ময়।
এ কী!
এ কী অবিশ্বাস্য।
এ কী সাংঘাতিক!
এ কী করে সম্ভব হলো?
লোকে কি স্বপ্ন দেখছে? লোকে যে বুঝতে পারছে না? বিস্ময় প্রশ্নের যত রকম পদ্ধতি আছে, তার কোনোটাই হয়তো বাদ গেল না।
তারপর সুরু হলো—আর এক প্রশ্ন।
কারণটা কী?
কোন পরিস্থিতিতে হতে পারলো এমন অসম্ভব ঘটনা। এ কী আকস্মিক কোনো কলহের উত্তেজনার ফল? এ আগুন কি আগে থেকে ধোঁয়াচ্ছিল? এর পিছনে কি কোনো ‘নারী ঘটিত’ কাণ্ড আছে?
কিন্তু সেটাই বা কি করে হবে? ব্যাপারটা যদি উল্টো হতো, আজকের ওই হত্যাকারীই যদি নিহত হতো, অঙ্কটা একমিনিটে কষা হয়ে যেতো। স্ত্রী ঘটিত সন্দেহে কেরাণীর রক্তও টগবগিয়ে ফুটে উঠতে পারে, আর সেই ফুটন্ত রক্তের জ্ঞান থাকে না, তার ভাজ বিধবা হচ্ছে কি বোন বিধবা হচ্ছে। এটা একেবারে জলের মত সোজা।
কিন্তু এক্ষেত্রে সে—সন্দেহ সন্দেহ করা চলে না।