শবসাধনা

শবসাধনা

অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে করতে একটু মনে হয় ঝিমিয়েই পড়েছিলেন বিপদভঞ্জন৷ বড় রাস্তার পাশে একটা বেঞ্চে বসেছিলেন তিনি৷ যেখানে বসে বাসের জন্য অপেক্ষা করে যাত্রীরা৷ এক ঘণ্টা আগে এ জায়গাতেই বাস থেকে নেমেছিলেন তিনি৷ রাত্রিজাগরণের ক্লান্তিতে আর শীতের মিঠে রোদ পিঠে পড়াতে তন্দ্রা এসে গেছিল তাঁর৷ আর সেটা ভাঙল একটা বাসের হর্নের প্রচণ্ড শব্দে৷ বাসটা যেন তাঁর ঘাড়ের ওপর দিয়েই বেরিয়ে গেল৷ তন্দ্রামুক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন বিপদভঞ্জন৷ না, তাঁর চারপাশে কেউ নেই৷ বাসরাস্তার দু-পাশে শুধু ধানের খেত৷ অনেক দূরে একটা গ্রাম মতো যেন দেখা যাচ্ছে৷ ভৈরব তান্ত্রিক কি তবে তাঁর আসার কথা ভুলে গেছেন? তিনি তো বলেছিলেন তাঁকে নিতে তিনি লোক পাঠাবেন৷ তিনি তো গতকাল সকালে নিজেই টেলিফোনে বললেন, ‘কাল বিকালেই চলে আসুন৷ অমাবস্যার রাত৷ ব্যবস্থা হয়ে যাবে৷ বাসস্ট্যান্ডে আমি বা আমার লোক অপেক্ষা করবে৷’ ‘ওই গ্রামটাতে পৌঁছাতে পারলে নিশ্চই এখানকার শ্মশানে ভৈরব তান্ত্রিকের ডেরাটা গ্রামের লোকেরা বাতলে দিতে পারবে৷ শীতের বেলা, আর একটু পরই রোদ মরে যাবে৷ সন্ধ্যা নামার আগে ভৈরব তান্ত্রিকের ডেরাতে পৌঁছানো চাই৷’ —এই ভেবে বড় রাস্তা ছেড়ে মাঠের আলপথ ধরে বিপদভঞ্জন রওনা হলেন যেদিকে গ্রাম দেখা যাচ্ছে সেদিকে৷

মাস ছয়েক আগে ভৈরব তান্ত্রিকের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় বিপদভঞ্জনের৷ আসলে বিপদভঞ্জন নিজেও কিছুটা তন্ত্রমন্ত্র নিয়ে চর্চা করেন৷ এ সব ব্যাপারে তার প্রবল আগ্রহ৷ আর এ সবের সন্ধানেই তিনি কখনও ছুটে বেড়ান কামাখ্যা-কালীঘাটের মতো নানা শক্তিপীঠ, নানা শ্মশান-মশানে তন্ত্র-সাধকদের সঙ্গলাভের জন্য, এ বিদ্যা করায়ত্ত করার জন্য৷ তবে তিনি ইতিমধ্যে যে সব তন্ত্রসাধকের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন তারা হয় মিথ্যাচারী ভণ্ড অথবা বিপদভঞ্জনকে তন্ত্রসাধনার গুপ্ত বিদ্যা শেখাতে রাজি হননি৷ তবে ব্যতিক্রম ছিলেন একজন৷ তাঁর নাম ছিল অঘোর তান্ত্রিক৷ মণিকর্ণিকার শ্মশানঘাটে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল বিপদভঞ্জনের৷ তিনি তাঁকে বলেছিলেন ‘বড় দেরি করে এলি তুই৷ আমি যে একটু পরই এ দেহ ছেড়ে চলে যাব৷ তবে এভাবে সাধু-সন্ন্যাসীদের পিছনে ঘুরে তোর কিছু হবে না৷ তোর কানে একটা মন্ত্র দিচ্ছি৷ এই বীজমন্ত্র জপ করে তুই শবসাধনা করিস৷ দেখ যদি কিছু দর্শন লাভ হয়? আদ্যাশক্তির দর্শন না হলেও যদি প্রেত দর্শন হয়? সেটাও কিন্তু একটা শক্তি৷’ —এ কথা বলার পর অঘোর সন্ন্যাসী তাঁর কানে কানে মন্ত্রটা বলে দিয়েছিলেন৷ মন্ত্র গ্রহণের পর বিপদভঞ্জন তাঁকে বলেছিলেন, ‘এজন্য আপনাকে কী প্রণামী দেব?’

অঘোর তান্ত্রিক বলেছিলেন, ‘বললাম না আমার খোলস ছাড়ার সময় হয়েছে৷ এবার তুই যা৷’

বিপদভঞ্জন ভাবলেন তান্ত্রিক তো টাকা-পয়সা নিচ্ছেন না৷ যদি তাঁকে কিছু ফলাহার কিনে দেওয়া যায়? সে কথা ভেবে বিপদভঞ্জন আধঘণ্টা পর আবার শ্মশানঘাটে ফিরেছিলেন তখন সেই সাধুর দেহ ঘিরে জনতার ছোটখাটো ভিড়৷ সত্যিই তখন দেহ ছেড়ে গেছে তার আত্মা! এই একটা ক্ষেত্রেই শুধু বিপদভঞ্জনের মনে হয়েছিল সেই অঘোর তান্ত্রিক সত্যিই কোনো বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন! নইলে তিনি তাঁর মৃত্যুর ব্যাপারটা জানলেন কীভাবে? হয়তো তিনি বিপদভঞ্জনকে যা বলে গেলেন সেটাও সত্যি হতে পারে৷ শবসাধনা করলে কোনো শক্তির দর্শন হতে পারে৷ আর ঠিক এই কারণেই কলকাতার কালীঘাট মন্দিরের বাইরে এক চায়ের দোকানে ভৈরব তান্ত্রিকের সঙ্গে হঠাৎই চা খেতে গিয়ে পরিচিত হয়ে বিপদভঞ্জন তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনি তো আপনার নাম বলছেন ভৈরব তান্ত্রিক! আপনি কোনো দিন শবসাধনা করেছেন?’

ভৈরব তান্ত্রিক জবাব দিয়েছিলেন, ‘হ্যাঁ, অনেকবার শবের ওপর বসেছিলাম৷’

কথাটা শুনে বিপদভঞ্জন আগ্রহভরে জানতে চেয়েছিলেন, কোনো শক্তিদর্শন হয়েছিল আপনার?’

ভৈরব তান্ত্রিক জবাব দিয়েছিলেন, ‘না, তেমন কোনো শক্তিদর্শন বা শক্তিলাভ হয়নি আমার৷ হয়তো আমার মন্ত্রের জোর ছিল না, অথবা সেই শুভ বা অশুভ শক্তি দর্শনের উপযুক্ত নই আমি৷ তাই দর্শন হয়নি আমার৷ এমন কী অশুভ শক্তি অর্থাৎ প্রেতযোনি দর্শনের জন্যও তো মন্ত্রের জোর থাকা চাই৷’

এ কথা বলার পর তিনি বিপদভঞ্জনকে পালটা প্রশ্ন করেছিলেন, ‘কেন? আপনার এ ধরনের কোনো অভিজ্ঞতা আছে নাকি?’

প্রশ্নটা শুনে বিপদভঞ্জন আপশোশ করে বলেছিলেন, ‘সে সুযোগ আর হল কই? শবসাধনা, শব পাওয়া কী মুখের কথা?’—এ কথা বলার পরই তিনি সেই অঘোর বাবার কথা খুলে বলেছিলেন ভৈরব তান্ত্রিককে৷ কথাটা শুনে ভৈরব তান্ত্রিক আশ্চর্য হয়ে বলেছিলেন, ‘তাই নাকি? আমার এমন মাঝে মাঝে মনে হয় এ সব শবসাধনাটাধনার মধ্যে কোনো সত্যি নেই৷ শক্তি লাভ বা শক্তি দর্শন হয় না এতে৷ হয়তো আমার নিজের এ ব্যাপারে ব্যর্থতার কারণেই আমার এমন মনে হয়৷ তবে আপনার কথা শুনে ব্যাপারটা সম্বন্ধে আমার আগ্রহ বাড়ল৷’

কথাটা শুনে বিপদভঞ্জন চাপা স্বরে বললেন, ‘পারবেন? পারবেন মশাই আমাকে একটা মড়া জোগাড় করে দিতে৷ সেই অঘোর সাধুর বলা মন্ত্রটা আমার মাথার মধ্যে এখনও ঘুরপাক খায়৷ সত্যি মিথ্যা ব্যাপারটা একবার পরখ করে দেখতাম৷’

বিপভঞ্জনের কথা শুনে ভৈরব তান্ত্রিক একটু ভেবে নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি তো শ্মশানে থাকি৷ তেমন হলে একবার চেষ্টা করে দেখব শব জোগাড় করা যায় কিনা৷ আমি প্রতি মাসের শেষ শনিবার এই কালীঘাটে মায়ের মন্দিরে আসি বীরভূম থেকে৷ আপনার কথাটা আমি মাথায় রাখলাম৷’

সেদিনের সেই প্রথম সাক্ষাতের পর কালীঘাটেই বিপদভঞ্জনের সঙ্গে বেশ কয়েকবার সাক্ষাত হয়েছে ভৈরব তান্ত্রিকের৷ তাঁর নিজের ফোন না থাকলেও পাবলিক বুথ থেকে তিনি বেশ কয়েকবার ফোনও করেছেন বিপদভঞ্জনকে৷ দু-জনের মধ্যে একটা সর্খ্যর্ত্ত গড়ে উঠেছে৷ ভৈরব তান্ত্রিককে বিশ্বাসযোগ্য লোক বলেই মনে হয়েছে বিপদভঞ্জনের৷ অবশেষে গতকাল বিপদভঞ্জন তাঁর আকাঙ্ক্ষিত বার্তাটা টেলিফোন মারফত পেয়েছিলেন৷ তার জন্য শবসাধনার ব্যবস্থা করতে চলেছেন ভৈরব তান্ত্রিক৷ তিনি নিজে শবসাধনায় সফল না হলেও দেখতে চান যে বিপদভঞ্জন সফল হন কিনা৷

৷৷ ২৷৷

আলপথ ধরে বেশিক্ষণ একলা হাঁটতে হল না বিপদভঞ্জনকে৷ কিছুটা এগোবার পরই তিনি দেখতে পেলেন উলটোদিক থেকে আলপথ ধরে ব্যস্তসমস্ত হয়ে তার দিকেই আসছেন লাল আলখাল্লা আর জটাজুটধারী ভৈরব তান্ত্রিক৷ আর তার সঙ্গে ধুতি-চাদর পরা ছোকরা গোছের একজন লোক৷ বিপদভঞ্জনের কাছে এসে ভৈরব তান্ত্রিক বললেন, ‘কিছু মনে করবেন না৷ আপনার কাজের জন্য জিনিসপত্র কিনতে একটু দেরি হয়ে গেল৷ এবার চলুন৷’

বিপদভঞ্জন খেয়াল করলেন, ভৈরব তান্ত্রিকের সঙ্গীর হাতে একটা ব্যাগ থেকে উঁকি দিচ্ছে মাটির সরা, নতুন কাপড় ইত্যাদি জিনিসপত্র৷ বিপদভঞ্জন বললেন, ‘আপনার জন্য অপেক্ষা করার পর আমি নিজেই আপনার ডেরা খুঁজতে যাচ্ছিলাম৷ চলুন৷’

তবে সাধনার জিনিসপত্র ব্যাগের মধ্যে দেখতে পেলেও আসল জিনিসটা, অর্থাৎ ‘শব’ জোগাড় হয়েছে কিনা তা ভৈরব তান্ত্রিকের সঙ্গী সেই অপরিচিত লোকটার সামনে জিজ্ঞেস করা সমীচীন বোধ করলেন না বিপদভঞ্জন৷ হয়তো তার সঙ্গীকে আসল কথাটা জানাননি ভৈরব তান্ত্রিক৷ তিনি এগোলেন তাঁদের সঙ্গে৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রামটার কাছে পৌঁছে গেলেন তারা৷ ভৈরব তান্ত্রিক, তার সঙ্গীর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে তাকে বললেন, ‘বটেশ্বর, তুই কাশীনাথবাবুর বাড়ি যা৷ এতক্ষণে মনে হয় যা ঘটার ঘটে গেছে৷ এখন সবে বিকাল পাঁচটা৷ অনেক সময় আছে হাতে৷ কিছু যদি নাও ঘটে থাকে তবে ঘটে যাবে৷ সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে শ্মশানে চলে আসবি৷ বাড়ির লোককে সব বলা হয়েছে৷ তারা দিয়ে যাবে৷’

ভৈরব তান্ত্রিকের কথা শুনে ‘আচ্ছা’ বলে লোকটা পা বাড়াল গ্রামের দিকে৷ আর ভৈরব তান্ত্রিক গ্রামে না ঢুকে বিপদভঞ্জনকে নিয়ে গ্রামটাকে বেড় দিয়ে এগোলেন শ্মশানের দিকে৷

তারা যখন জায়গাটাতে পৌঁছোলেন তখনও সূর্যের আলো আছে৷ তবে জায়গাটা বড় নির্জন৷ বড় বড় গাছের ছায়া ঘেরা জায়গা৷ প্রাচীন সব গাছ৷ একটা গাছ থেকে বিরাট বিরাট সব বাদুড় ঝুলছে৷ আর এই গাছে ঘেরা জায়গার ঠিক পিছনেই একটা শুষ্ক নদীতট৷ পোড়া কাঠ, ভাঙা মেটে হাঁড়ি ইত্যাদি ছড়িয়ে আছে সেখানে৷ ও জায়গাতেই দাহকার্য হয়৷

বড় একটা গাছের নীচে, ভৈরব তান্ত্রিকের শনে ছাওয়া কুটির৷ তার সামনে একটা বাঁশের মাচা৷ বিপদভঞ্জনকে নিয়ে সেই মাচায় বসলেন ভৈরব তান্ত্রিক৷ মাচার ওপর হাতের ব্যাগটা নামিয়ে রেখে বললেন, ‘এই হল আমার ডেরা৷ প্রায় দশ বছর আমি আছি এখানে৷ ওই যে ওই মরা নদীর পাড়ে বহুবার শবসাধনা করেছি৷’

বিপদভঞ্জন তাকে প্রশ্ন করলেন ‘আপনার সঙ্গের লোকটা কে ছিল?’

ভৈরব তান্ত্রিক বললেন, ‘বটেশ্বরকে আমার চেনা বলতে পারেন৷ আমার সঙ্গে এখানেই থাকে৷ ওর ধারণা আমি মস্তবড় তান্ত্রিক৷ আমার অনেক ক্ষমতা আছে৷ কতবার আমি তাকে বলেছি—আমার কোনো ক্ষমতা নেই৷ তুই চলে যা৷ ও বিশ্বাসই করে না৷ আমার থেকে তন্ত্রের ক্ষমতা লাভের আশায় এখানে পড়ে আছে৷ অবশ্য যাবেই বা কোথায়? ওর সাতকুলে কেউ নেই৷ পড়াশোনা কিছুই জানে না, আবার চাষবাসও জানে না৷ আমার সঙ্গে থাকলে তবু দুটো খেতে পায়৷ শ্মশানযাত্রীরা আর গ্রামের লোকরা নানা সময় নানা কিছু দিয়ে যায় আমাকে৷ আমিও খাই আর বটেশ্বরও খায়৷’

বিপদভঞ্জন জানতে চাইলেন, ‘ওকে কোথায় পাঠালেন?’

ভৈরব তান্ত্রিক বললেন, ‘আসল জিনিসটা আনতে৷ অর্থাৎ লাশ আনতে৷ হয়তো সে এতক্ষণে লাশ হয়ে গেছে অথবা হব হব করছে৷’

বিপদভঞ্জন বললেন, ‘আপনার শেষ কথাটা বুঝলাম না৷’

ভৈরব তান্ত্রিক বললেন, ‘ব্যাপারটা আপনাকে খুলে বলি৷ গ্রামের কাশীনাথ মালাকারের মেজো ছেলে বিশ্বনাথের এখন-তখন অবস্থা৷ গতকালই অবনী কবরেজ বলে গেছে যে খুব বেশি হলে আজ বিকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত টিকবে ছেলেটা৷ সে মরলেই তার লাশটা বাড়ির লোকেরা দিয়ে যাবে৷ তার লাশের ওপরই বসবেন আপনি৷’

কথাটা শুনে বিপদভঞ্জন বিস্মিতভাবে প্রশ্ন করলেন, ‘দাহকার্য না করে তারা সে লাশ আমাদের দেবে কেন?’

ভৈরব তান্ত্রিক আস্থাভরে প্রথমে বললেন, ‘দেবে দেবে৷’

তারপর বললেন, ‘এর পিছনে একটা গল্প আছে৷ একবার খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল কাশীনাথের স্ত্রী৷ তার চোখ বন্ধ৷ শ্বাস পড়ছে না৷ দেখে এক হাতুড়ে ডাক্তার বলল যে কাশীনাথের স্ত্রী গত হয়েছেন৷ তাঁকে শ্মশানে আনা হল৷ কিন্তু তাঁকে দেখে আমার কেন জানি মনে হল যে মুমূর্ষ% হলেও তখনও তার ধড়ে প্রাণ আছে৷ নানা জায়গাতে সাধুসঙ্গ, ঘুরে বেড়াবার ফলে আমি কিছু টোটকা-জড়িবুটির ব্যবহার জানি৷ যদিও তার সঙ্গে তন্ত্র বা মন্ত্রের সম্পর্ক নেই৷ আমার জানাটা আমি প্রয়োগ করলাম তথাকথিত সেই মরদেহের ওপর৷ আর তার ফলে কিছুক্ষণের মধ্যে ধীরে ধীরে চোখ মেলল সেই মহিলা৷ সেবারের মতো সে যাত্রায় বেঁচে গেল সে৷ এ ঘটনার ফলে তুমুল শোরগোল শুরু হল আমাকে নিয়ে৷ তারপর থেকে মালাকার পরিবারের বদ্ধ ধারণা আমি একজন সিদ্ধপুরুষ৷ আমি মড়া বাঁচাতে পারি৷ অবনী কবরেজের নিদান মিথ্যা হয় না৷ কাল কবরেজ নিদান হাঁকার পরই কাশীনাথ ছুটতে ছুটতে এসেছিল আমার কাছে৷ সে আমার কাছে করজোড়ে বলল, ‘যদি তেমন কিছু হয় তবে তুমি আমার ছেলের প্রাণ ফিরিয়ো বাবা৷ যেমন আমার বউয়ের প্রাণ ফিরিয়েছিলে৷’

আমি তাকে বলেছি, আমি কথা দিতে পারছি না তবে চেষ্টা করে দেখব৷ ছেলেটা মারা গেছে মনে হলে এক রাতের জন্য লাশটা এখানে এনে রাখতে হবে৷ যদি তার আয়ু থাকে তবে তা আমি তাকে ফিরিয়ে দেব৷’

বিপদভঞ্জন এবার আরও বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘আমার জন্য আপনি মিথ্যা বললেন?’

ভৈরব তান্ত্রিক বললেন, ‘হ্যাঁ, বাধ্য হয়ে বললাম৷ আসলে আমি শেষ একবার দেখে নিতে চাই এসবের কোনো সারবত্তা আছে কিনা? আপনি যদি সফল হন তবে আমি আবার নতুন করে সাধনা শুরু করব৷ নইলে এ সাধনা ছেড়ে দেব৷ এ ব্যাপারে আপনার যতটা আগ্রহ তার চেয়ে আমার আগ্রহ কোনো অংশে কম নয়, বরং বেশি হতে পারে৷’

বিপদভঞ্জন বললেন, ‘আমিও তো অনেক আশা নিয়ে এসেছি৷ দেখা যাক কী হয়৷’

ভৈরব তান্ত্রিক হেসে বললেন, ‘হ্যাঁ, দেখা যাক কী হয়৷ তবে শক্তির দর্শন না করলেও কিন্তু একটা জিনিস আপনি অবশ্যই লাভ করবেন৷ সেটা অবশ্য আমিও করেছি৷’

বিপদভঞ্জন জানতে চাইলেন, ‘সেটা কি?’

ভৈরব তান্ত্রিক জবাব দিলেন, ‘সাহস৷ সারারাত একলা মড়ার ওপর বসে থাকা কম সাহসের কথা নয়! দেখবেন এরপর থেকে আপনার কোনো কিছুতেই তেমন ভয় করবে না৷’

বিপদভঞ্জন বললেন, ‘হ্যাঁ, তা বটে৷’

ভৈরব তান্ত্রিক এরপর ব্যাগটা দেখিয়ে বললেন, ‘ওর মধ্যে সব জিনিসপত্র আছে৷ নতুন কাপড়, চালভাজা, মাটির ভাঁড়, দেশি মদ, বড় মাটির সরা, ছোট সরা ইত্যাদি সব কিছু৷ বড় সরাটা চাপা দেওয়া থাকে শবের মুখে৷ ছোট সরাতে থাকে চালভাজা আর ভাঁড়ে থাকে মদ৷ মড়া যদি জেগে ওঠে তবে তার মুখে চাপা দেওয়া সরা খসে পড়বে৷

তখন তার মুখে চালভাজা আর মদ ঢেলে দিতে হয়,—এ সব সাধারণ বিষয়গুলো জানেন নিশ্চই?’

বিপদভঞ্জন বললেন, ‘হ্যাঁ, জানি৷’

কথা বলতে বলতেই ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে গেল৷ তার চালাটার সামনে একটা ধুনি জ্বেলে তার পাশে বিপদভঞ্জনকে নিয়ে বসলেন ভৈরব তান্ত্রিক৷

৷৷ ৩ ৷৷

অমাবস্যার রাত৷ চাঁদ ওঠার কোনো বালাই নেই৷ আর চাঁদ উঠলেও বড় বড় গাছগুলোর জন্য চাঁদের আলো ও অন্ধকার কতটা দূর হত সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে৷ ধুনির পাশে বাসে লাশটা আসার প্রতীক্ষা করতে করতে তন্ত্রসাধনা সম্পর্কে নানা কথা আলোচনা করতে লাগলেন দুজনে৷ ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর মাঝে মাঝে বাদুড়ের ডানা ঝাপটানোর শব্দ ছাড়া কোথাও কোনো শব্দ নেই৷ মাঝে মাঝে অবশ্য অন্ধকারের মধ্যে কখনও কখনও আলোক বিন্দু দেখা দিয়েই মিলিয়ে যাচ্ছে৷ শিয়ালের চোখ৷ অন্ধকার নামতেই বেরিয়ে পড়েছে তারা৷ সন্ধ্যা রাত এগোতে থাকল মধ্য রাতের দিকে৷ প্রতীক্ষা করতে করতে একসময় বেশ উৎকণ্ঠিত হয়ে উঠলেন তাঁরা দুজনেই৷ কোথায় লাশ? একসময় বিপদভঞ্জন বলে উঠলেন, ‘তারা এখনও লাশ নিয়ে এল না কেন?’

ভৈরব তান্ত্রিক বললেন, ‘আমিও ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না ৷ অবনী কবিরাজের নিদান তো মিথ্যা হয় না! তা ছাড়া আমি দুপুরবেলা ওখানে গেছিলাম৷ নিজের চোখে দেখে এসেছি খাবি খাচ্ছে ছেলেটা!’ এই বলে চুপ করে গেলেন তিনি৷

আরও বেশ অনেকটা সময় কেটে গেল৷ লাশের দেখা নেই৷ ভিতরে ভিতরে উত্তেজিত হয়ে উঠলেন বিপদভঞ্জন৷ আরও বেশ কয়েকঘণ্টা কেটে যাবার পর তিনি একটু ক্ষুব্ধভাবেই বললেন, ‘আমারই ভুল হয়েছে৷ আপনার লাশ জোগাড় হয়েছে কিনা তা না জেনে আমার এখানে আসা উচিত হয়নি৷’

ধুনির আলোতে স্পষ্ট অস্বস্তি ফুটে উঠেছে ভৈরব তান্ত্রিকের মুখে৷ তিনি বললেন ‘হয়তো চলে আসবে৷ আর একটু অপেক্ষা করুন৷’

আবারও বেশ অনেকটা সময় অপেক্ষা৷ বিপদভঞ্জন একসময় দেখলেন তাঁর হাতঘড়িতে রাত দশটা বাজে৷ এবার তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বেশ কড়াভাবে বললেন, ‘আমি যা বোঝার বুঝেছি৷ ও লাশ আর আসবে না৷ আপনার ওপর ভরসা করে আমার এখানে আসাই ভুল হয়েছে৷’

ভৈরব তান্ত্রিক উঠে দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করে বললেন, ‘আপনাকে কিন্তু আমি প্রতারিত করতে চাইনি৷’

বিপদভঞ্জন বললেন ‘কী করতে চেয়েছেন তা আপনিই জানেন৷ তবে এ লাইনের অন্য অধিকাংশ লোকের মতো আপনার কথারও যে কোনো দাম নেই তা বুঝতে পারলাম৷’

শবসাধনাতে বসবেন বলে সারাদিন নিরম্বু উপবাস করে আছেন বিপদভঞ্জন৷ জলটুকুও স্পর্শ করেননি৷ বায়ু চড়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন তিনি৷

বিপদভঞ্জনের কথা শুনে হঠাৎই কঠিন হয়ে উঠল ভৈরব তান্ত্রিকের মুখ৷ তিনি প্রথমে বললেন, ‘আজ অব্দি কেউ আমাকে এমন অপবাদ দিতে পারেনি৷’

তারপর তিনি বললেন, ‘ঠিক আছে আপনি আমাকে আর একটু সময়-সুযোগ দিন৷ আসি দেখে আসি ব্যাপারটা কী হল?’ —এ কথা বলার পর তিনি বিপদভঞ্জনকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে মড়া খুঁজতে অন্ধকারের মধ্যে মিলিয়ে গেলেন৷ সেই অচেনা-অজানা শ্মশানে একলা দাঁড়িয়ে বিপদভঞ্জন মনে মনে নিজেকে নির্বোধ ভেবে তিরস্কার করতে লাগলেন৷ তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন ভৈরব তান্ত্রিক যদি নাও ফেরেন তবে ভোরের আলো ফুটলেই তিনি রওনা হবেন বাসরাস্তার দিকে৷ সময় এগোতে লাগল৷ কোথায় যেন একপাল শিয়াল ডাকতে শুরু করল৷ বিপদভঞ্জনের মনে হল ওই শিয়ালের ডাক যেন বিদ্রুপ করছে তাঁকে! তারা বিপদভঞ্জনকে দেখে হাসছে!

বিপদভঞ্জন ধরেই নিয়েছিলেন ভৈরব তান্ত্রিক আর ফিরবেন না৷ আর ফিরলেও তিনি লাশ জোগাড় করতে পারবেন না৷ কিন্তু প্রায় একঘণ্টা পর যখন তিনি ফিরে এসে বিপদভঞ্জনের সামনে দাঁড়ালেন তখন ভৈরব তান্ত্রিকের ঠোঁটের কোণে হাসি৷ তিনি বিপদভঞ্জনকে বললেন, ‘লাশ এসে গেছে৷ আমি সিদ্ধপুরুষ না হলেও আমার কথার দাম আছে৷ এবার দেখব আপনার শবসাধনার মন্ত্রের কত জোর৷’

তার কথা শুনে বিপদভঞ্জন বিস্মিতভাবে বললেন, ‘এসে গেছে? কীভাবে এল?’

ভৈরব তান্ত্রিক বললেন, ‘এ সব আলোচনা করে এখন সময় নষ্ট করা যাবে না৷ পরে জানবেন সব কথা৷ রাত বয়ে যাচ্ছে৷ আপনি জামাকাপড় খুলে নতুন কাপড় পরে ফেলুন৷ ওই যে ওখানে গাছের আড়ালে নদীতটে লাশটা রাখা৷ আমি ওখানে গিয়ে সব উপাচার সাজিয়ে রাখছি৷ আপনি ঠিক আধঘণ্টা পর ওখানে যাবেন৷ তবে উপাচারগুলো ওখানে সাজিয়ে রাখার পর আমি ওখান থেকেই এ স্থান ত্যাগ করব৷ আপনি জানেন নিশ্চই এক সাধকের শবসাধনার সময় অন্য কোনো সাধকের কাছাকাছি থাকতে নেই? তবে আধঘণ্টার আগে ওখানে যাবেন না৷ যারা লাশটা দিতে এসেছিল তারা ততক্ষণে বাড়ি ফিরে যাবে৷ ওই যে দরজার বাইরে জলের জালা রাখা৷ ওতে স্নান সেরে কাপড় পরবেন৷’

বিপদভঞ্জন বললেন, ‘আচ্ছা, তাই হবে৷’

ভৈরব তান্ত্রিক এরপর ব্যাগ থেকে কাপড় বের করে বিপদভঞ্জনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে অন্য জিনিসগুলো নিয়ে গাছের আড়ালে নদীতটের দিকে চলে গেলেন৷

৷৷ ৪৷৷

ভৈরব তান্ত্রিকের ঘরের বাইরে রাখা জালার জলে স্নান সেরে নতুন রক্তবস্ত্র পরে ঠিক আধঘণ্টা পর গাছের আড়ালে নদীতটের দিকে এগোলেন তিনি৷ সেখানে পৌঁছে তিনি দেখলেন তার কিছুটা তফাতে একটা মোমবাতির শিখা বাতাসে কাঁপছে৷ আর তার কাছেই শোয়ানো আছে একটা উলঙ্গ শব৷ তার মুখের ওপর মাটির সরা চাপা দেওয়া৷ সেই দেহটার দু-পাশে সাজানো আছে শবসাধনার উপাচার৷ কথামতো সব সাজিয়েগুছিয়ে চলে গেছেন ভৈরব তান্ত্রিক৷ বিপদভঞ্জন লাশটার সামনে উপস্থিত হতেই বাতাসে মোমের শিখাটা নিভে গেল৷ অবশ্য বাতিটা তাকে এমনিতেও নেভাতে হত৷

মহামায়ার নাম নিয়ে বিপদভঞ্জন চড়ে বসলেন শবের ওপর৷ তিনি অনুভব করলেন দেহটা তখনও বেশ গরম! অর্থাৎ বেশি আগে মৃত্যু হয়নি ছেলেটার৷ সেজন্যই হয়তো দেহটা আসতে দেরি হল৷

শবের ওপর বসে ঘাড় সোজা করে সামনে তাকিয়ে অঘোর সন্ন্যাসীর বলে দেওয়া সেই মন্ত্র জপ করতে শুরু করলেন বিপদভঞ্জন৷ শিয়ালের দল আবারও ডেকে উঠল৷ এবার তাদের ডাকের মধ্যে কেমন যেন একটা খুশির ধ্বনি! সামনে তাকিয়ে একমনে মন্ত্র জপে যেতে লাগলেন বিপদভঞ্জন৷ রাত এগিয়ে চলল৷ না, বিপদভঞ্জন যে শবের ওপর বসে আছেন সেটা নড়ে উঠে মুখের মালসাটা খসিয়ে ফেলল না৷ রাত শেষ হয়ে আকাশে শুকতারা ফুটে উঠতে চললেও শিয়ালের কয়েকটা জ্বলন্ত চোখ ছাড়া শুভ বা অশুভ কোনো শক্তিই দৃশ্যমান হল না বিপদভঞ্জনের চোখে৷

শুকতারা তখন ফুটব ফুটব করছে, ঠিক সেই সময় বিপদভঞ্জন দেখলেন তাঁর সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন ভৈরব তান্ত্রিক! ভোর হতে চলেছে দেখেই নিশ্চই হাজির হয়েছেন তিনি৷ তাঁকে দেখে মন্ত্র থামালেন বিপদভঞ্জন৷ তারপর শব ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হতাশভাবে তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘না, কিছু হল না! শুভ বা অশুভ কোনো শক্তির দর্শনই পেলাম না আমি! সেই অঘোর তান্ত্রিকের মন্ত্রও মিথ্যা৷’

অন্ধকার এখন অনেকটা পাতলা৷ ভৈরব তান্ত্রিকের মুখটা মোটামুটি দেখা যাচ্ছে৷ বিপদভঞ্জনের মনে হল ভৈরব তান্ত্রিক যেন হাসলেন তাঁর কথা শুনে!

কয়েক মুহূর্তের নিস্তব্ধতা৷ তারপর ভৈরব তান্ত্রিক বললেন, ‘না, মিথ্যা নয়৷ অঘোর তান্ত্রিকের মন্ত্রে জোর ছিল৷ দর্শন তো পেয়েছেন আপনি৷’

বিপদভঞ্জন বললেন, ‘দূর মশাই! সব মিথ্যা৷ কোথায় পেলাম? সারারাত শিয়ালের চোখ ছাড়া কিছুই দেখলাম না৷ তবে আপনি মশাই আমার জন্য অনেক করলেন৷ আপনাকে আর কষ্ট দেব না৷ আলো ফুটলেই বাস ধরার জন্য রওনা দেব৷’

ভৈরব তান্ত্রিক এবার বললেন, ‘হ্যাঁ, পেয়েছেন, পেয়েছেন৷ শক্তির দেখা পেয়েছেন৷ শবসাধনা সফল হয়েছে আপনার৷ তবে এখানে আর কোনোদিন ফিরে আসবেন না৷ শুভ না হোক অশুভ শক্তির দর্শন পেয়েছেন৷ আবার এখানে এলে সে আপনার ক্ষতি করতে পারে৷ আলো ফুটছে, এবার আমি যাচ্ছি৷’

বিপদভঞ্জন বললেন, ‘ও মশাই, কোথায় যাচ্ছেন?’

কিন্তু বিপদভঞ্জনের কথার জবাব মিলল না৷ ভৈরব তান্ত্রিক হঠাৎই যেন তাঁর চোখের সামনে থেকে মিলিয়ে গেলেন৷ শুকতারা ফুটে উঠল আকাশে৷ ভৈরব তান্ত্রিকের কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারলেন না বিপদভঞ্জন৷ তিনি সেখান থেকে ভৈরব তান্ত্রিকের কুটিরের সামনে ফিরে এসে ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষা করতে লাগলেন৷

ভোরের আলো ফুটল একসময়৷ পোশাক পরে নিলেন বিপদভঞ্জন৷ ভৈরব তান্ত্রিক সেখানে ফেরেননি৷ বিপদভঞ্জনের মনে হল তাঁর ফেরার জন্য আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করা উচিত৷ শবসাধনার উপকরণ কেনার টাকা ভৈরব তান্ত্রিককে দেওয়া উচিত তাঁর৷ অপেক্ষা করতে লাগলেন তিনি৷ ভোরের আলো ভালো করে ফোটার পরও ভৈরব তান্ত্রিক এলেন না৷ কিন্তু সেখানে এসে হাজির হল তাঁর সঙ্গী বটেশ্বর৷ বিপদভঞ্জনকে দেখে সে বলল, ‘বুঝলেন, রাখে হরি, মারে কে! অবনী কবরেজের নিদান মিথ্যা হল৷ কলকাতা থেকে আরও বড় ডাক্তার এসে সুস্থ করে তুলেছে ছেলেটাকে৷ খাবি খেতে খেতেও এ যাত্রায় মনে হয় বেঁচে গেল সে৷ তা আমার গুরুদেব কই?’

বটেশ্বরের কথা শুনে বিপদভঞ্জন বললেন, ‘তবে আমি কার শবে বসে সারারাত সাধনা করলাম? তোমার গুরুদেব কাল রাতে একটা লাশ জোগাড় করে আনলেন৷ ওই তো ওই নদীর পাড়ে ওটা আছে৷ হয়তো তোমার গুরুদেবও ওখানে আছেন৷’

কথাটা শুনে বটেশ্বর বলল, ‘লাশ! কার লাশ! চলুন তো দেখি?’ বিস্মিত বটেশ্বর৷

তারা দুজনে গিয়ে হাজির হল লাশের সামনে৷ বটেশ্বর লাশটার মুখের সরাটা উঠিয়েই আর্তনাদ করে উঠল! বিপদভঞ্জনের সামনে পড়ে আছে ভৈরব তান্ত্রিকের লাশ৷ কালচে ফেনা গড়িয়ে পড়ছে তার ঠোঁটের দু-পাশ বেয়ে! চোখের কোনের থেকে মণি দুটো বাইরে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে৷ সম্ভবত তীব্র বিষপানে মৃত্যু হয়েছে ভৈরব তান্ত্রিকের৷ সেই মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ভৈরব তান্ত্রিকের শেষ কথাগুলো স্পষ্ট হয়ে গেল বিপদভঞ্জনের কাছে৷ হ্যাঁ, অঘোর সন্ন্যাসীর মন্ত্র কাজ করেছে৷ ভৈরব তান্ত্রিক আত্মহত্যা করে সাধনার জন্য লাশের ব্যবস্থা করেছিলেন৷ মন্ত্রের জোরে তাঁর আত্মাই আবার হাজির হয়েছিল বিপদভঞ্জনের সামনে! শবসাধনা সফল৷ শুভ শক্তি না হলেও অশুভ শক্তির দর্শন পেয়েছেন বিপদভঞ্জন৷ তাঁর সামনে রাত্রির শেষ মুহূর্তে দর্শন দিয়েছিল ভৈরব তান্ত্রিকের প্রেতাত্মা!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *