তবু

সে অনেক রাজনীতি রুগ্ন নীতি মারী
মন্বন্তর যুদ্ধ ঋণ সময়ের থেকে
উঠে এসে এই পৃথিবীর পথে আড়াই হাজার
বছরে বয়সী আমি;
বুদ্ধকে স্বচক্ষে মহানির্বাণের আশ্চর্য শান্তিতে
চ’লে যেতে দেখে—তবু—অবিরল অশান্তির দীপ্তি ভিক্ষা ক’রে
এখানে তোমার কাছে দাঁড়ায়ে রয়েছি;
আজ ভোরে বাংলার তেরোশো চুয়ান্ন সাল এই
কোথাও নদীর জলে নিজেকে গণনা করে নিতে ভুলে গিয়ে
আগামী লোকের দিকে অগ্রসর হয়ে যায়; আমি
তবুও নিজেকে রোধ করে আজ থেমে যেতে চাই
তোমার জ্যোতির কাছে; আড়াই হাজার
বছর তা হলে আজ এই খানে শেষ হয়ে গেছে।

নদীর জলের পথে মাছরাঙা ডানা বাড়াতেই
আলো ঠিকরায়ে গেছে—যারা পথে চলে যায় তাদের হৃদয়ে;
সৃষ্টির প্রথম আলোর কাছে; আহা,
অন্তিম আভার কাছে; জীবনের যতিহীন প্রগতিশীলতা
নিখিলের স্মরণীয় সত্য বলে প্রমাণিত হয়ে গেছে; দেখ
পাখি চলে, তারা চলে, সূর্য মেঘে জ্বলে যায়, আমি
তবুও মধ্যম পথে দাঁড়ায়ে রয়েছি—তবু দাঁড়াতে বলো নি।
আমাকে দেখ নি তুমি; দেখবার মতো
অপব্যয়ী কল্পনায় ইন্দ্রত্বের আসনে আমাকে
বসালে চকিত হয়ে দেখে যেতে যদি—তবু, সে আসলে আমি
যুগে যুগে সাময়িক শত্রুদের বসিয়েছি, নারি,
ভালোবেসে ধ্বংস হয়ে গেছে তারা সব।
এ রকম অন্তহীন পটভূমিকায়—প্রেমে—
নতুন ঈশ্বরদের বারবার লুপ্ত হতে দেখে
আমারও হৃদয় থেকে তরুণতা হারায়ে গিয়েছে;
অথচ নবীন তুমি।

নারি, তুমি সকালের জল উজ্জ্বলতা ছাড়া পৃথিবীর কোনো নদীকেই
বিকেলে অপর ঢেউয়ে খরশান হতে
দিতে ভুলে গিয়েচিহ্লে; রাতের প্রখর জলে নিয়তির দিকে
বহে যেতে দিতে মনে ছিল কি তোমার?
এখনও কি মনে নেই?

আজ এই পৃথিবীর অন্ধকারে মানুষের হৃদয়ে বিশ্বাস
কেবলই শিথিল হয়ে যায়; তবু তুমি
সেই শিথিলতা নও, জানি, তবু ইতিহাসরীতিপ্রতিভার
মুখোমুখি আবছায়া দেয়ালের মতো নীল আকাশের দিকে
ঊর্ধ্বে উঠে যেতে চেয়ে তুমি
আমাদের দেশে কোণো বিশ্বাসের দীর্ঘ তরু নও।

তবু
কী যে উদয়ের সাগরের প্রতিবিম্ব জ্বলে ওঠে রোদে।
উদয় সমাপ্ত হয়ে গেছে নাকি সে অনেক আগে?
কোথাও বাতাস নেই, তবু
মর্মরিত হয়ে ওঠে উদয়ের সমুদ্রের পারে।
কোনো পাখি
কালের ফোকরে আজ নেই, তবু, নব সৃষ্টিমরালের মতো কলস্বরে
কেন কথা বলি; কোনো নারী
নেই, তবু আকাশহংসীর কণ্ঠে ভোরের সাগর উতরোল।

Leave a Reply to JAHIDUL ISLAM CHOWDHURY Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *