১০৮
একরকম বিধ্বস্ত চেহারা ও বিধ্বস্ত মন নিয়ে অমরাবতী থেকে পাটালিপুত্রে ফিরে এলেন চন্দ্রগুপ্ত। শেষবারের মতো হেলেনের মুখ দেখলেন। কেমন যেন মুগ্ধতার হাসি। আমাকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে মুগ্ধ তুমি! মনে মনে বললেন তিনি। প্রথম দেখা তাঁর মুগ্ধ স্মৃতির কথাও মনে হলো। এত বিশাল এক সাম্রাজ্যের অধিপতি, কিন্তু কত অসহায় তিনি নিয়তির কাছে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, কেন ছেড়ে গেলে আমায়। কত শান্ত হয়ে শুয়ে আছ। এ দৃশ্যই কী দেখার ছিল আমার?
নিজেকে বহু কষ্টে নিয়ন্ত্রণ করলেন। হেলেনদের পরিবারের কিছু চেনা-অচেনা মানুষের চেহারার দিকে দৃষ্টি গেল তাঁর। ভাবলেন, সংবাদ পেয়েই এঁরা এসেছেন। সম্রাট সেলুকাসের কুশল জিজ্ঞেস করতেই সব সংবাদ জানা গেল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি।
পরে সবাইকে নিয়ে বসলেন। যুবরাজের সব আয়োজন অনুমোদন করে বললেন, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান হবে সম্পূর্ণ গ্রিক রীতিতে। কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দিয়ে তিনি আবার অন্তঃপুরে প্রবেশ করলেন। সবাইকে বললেন, তিনি একান্তে হেলেনের সঙ্গে কিছু সময় কাটাতে চান।
সবাই চলে গেলে হাঁটু গেড়ে বসলেন হেলেনের কফিনের পাশে। হেলেনের দিকে তাকিয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্রাট অঝোরে কাঁদলেন। এ জীবনে কত কিছু হারিয়েছেন, হেলেনকে হারিয়ে যেন সব হারিয়ে ফেলেছেন। অর্থহীন হয়ে গেছে তাঁর জীবন।
তিনি হেলেনের মুখমণ্ডল স্পর্শ করলেন। ঠান্ডা হয়ে গেছে দেহ। কত উত্তাপ ছিল। কত কত জেদ! কত কত ভালোবাসা! প্রেম! কত সহজে জয় করে নিয়েছেন সবাইকে। ভালোবাসায় তুমি জয়ী, হেলেন, আমি পরাজিত। কেন আমি বুঝতে পারি নি এভাবে তুমি আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে। এটাই আমার পরাজয়। কেন তোমাকে সঙ্গে নিয়ে যাই নি। যুদ্ধশিবিরে তোমার আবাস তৈরি করাই ছিল। তোমরা আমাকে সতর্ক করে দিয়েছিলে। বিন্দুসারের কথা তুমি সমর্থন করেছিলে। আমি বুঝতে পারি নি। কত বড় ভুল হয়ে গেছে, তুমি তা জানো না। এত এত নিরীহ মানুষের মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী। ওদের অকালমৃত্যুর জন্যই তোমাকে হারালাম। আমি কোন প্রায়শ্চিত্ত করলে আবার তোমাকে ফিরে পাব, হেলেন? জানি আমার কোনো ক্ষমা নেই। আমার কোনো সান্ত্বনাও নেই। কে আমাকে সান্ত্বনা দেবে? আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। স্বপ্ন আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল।
জানি আত্মার মৃত্যু নেই। এ নশ্বর দেহেরই দেহান্তর ঘটে। আবার যদি আমাদের জন্ম হয়, যেন সে জন্মেও তোমাকে কাছে পাই। কিন্তু কী করে পাব? আমার কি এত পুণ্য জমা আছে? না, নেই। মানুষ হিসেবে আমার জন্মানোর সম্ভাবনা নেই। জন্মালেও অন্য কোনো ইতর প্রাণী হয়ে জন্মাতে হবে।
এ জন্মের সাফল্য অনেক। অভাবিত। বিশাল মৌর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা। তার চেয়েও বড় অর্জন তুমি। তোমাকে প্রথম দেখে পাগল হয়ে গেছিলাম আমি। যদি কেউ বলত তোমার জন্য আমাকে মৌর্য সাম্রাজ্যের সিংহাসন ছেড়ে দিতে হবে, দিতাম আমি। ছেড়ে দিতাম। এখনো তোমার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি। সবকিছু। তুমি দেখো, কী করতে পারি আমি। বিদায় হেলেন। বিদায়!
কক্ষ থেকে বের হয়ে আসছেন চন্দ্রগুপ্ত। স্পষ্ট শুনতে পেলেন, হেলেন তাঁর নাম ধরে ডাকছেন, চন্দ্ৰ!
চন্দ্রগুপ্ত ফিরে তাকালেন। দৌড়ে গেলেন আবার হেলেনের কাছে। তুমি আমাকে ডেকেছ, হেলেন?
আগের মতোই সব চুপচাপ। চন্দ্রগুপ্তের মনে হলো, হেলেনের ঠোঁট দুটো এখনই আবার কেঁপে উঠবে। মায়াবী ঠোঁট দুটো আবার উচ্চারণ করবে, ‘চন্দ্র’। পদ্মের মতো ঠোঁট পাণ্ডুর হয়ে গেছে। চন্দ্রগুপ্ত বললেন, আবার ডাকো হেলেন। গোটা মৌর্য সাম্রাজ্যকে তুমি জানিয়ে দাও তুমি ঘুমোচ্ছিলে, এইমাত্র জেগে উঠেছ।
.
স্ট্রেটোনিস মরদেহ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত করছেন। দেহটা ভালোভাবে ধুয়ে দেওয়া হলো। সুগন্ধিজাতীয় নানা দ্রব্য মাখানো হলো তাতে। লাউডিস ও ফাওলিন সাহায্য করছে তাঁকে। স্ট্রেটোনিস বললেন, একটা কথা বলি। কথাটা বলেছেন শর্মি। হেলেন নিজের ইচ্ছেতে বিয়ের পোশাক তৈরি করিয়েছিল। লাউডিস বললেন, তা আমরা জানি।
পোশাকটা তাঁর খুব পছন্দ ছিল।
তাও জানি, বলল ফাওলিন।
আমি প্রথমে এ পোশাকটা হেলেনকে পরাতে চাই। তার ওপর কালো বস্ত্রে পেঁচিয়ে হাত, পা, মাথাবিহীন মানুষে পরিণত করতে চাই।
লাউডিস বললেন, তা কি গোপন থাকবে?
আমরা তো এখানে তিনজনই। তার প্রিয় জিনিস সঙ্গে দিতে আমাদের আগ্রহী হওয়া উচিত।
কী বলো, ফাওলিন?
দিদি, আমার মনে হয় চমৎকার হবে।
বেশ, তাই করো মা।
এরা দেবীর বস্ত্রতুল্য বিয়ের পোশাকটি পরিয়ে দিলেন। শর্মিলা তাদের সহযোগিতা করলেন। স্ট্রেটোনিস এবং ফাওলিন বিয়ের সবগুলো গয়না পরিয়ে দিলেন। শর্মিলা এ দৃশ্য দেখে চোখ মুছলেন। সবার মধ্যে সে আবেগ ছড়িয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ এরা স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। পরে আবেগ বুকে চাপা রেখে দিদাইমেইয়ার দেওয়া স্বর্ণমুদ্রাটি হেলেনের দুঠোটের মাঝখানে ভেতরে স্থাপন করলেন। তারপর কালো কাপড় জড়িয়ে শবদেহটিকে তিনজনে মিলে ভালোভাবে কালো রশি দিয়ে পেঁচিয়ে হাত, পা ও মাথাবিহীন মানবশরীরে রূপান্তরিত করলেন। এখন এটিকে মমি বলে মনে হলো। মমিপ্রতিম দেহটি এক দিনের জন্য নির্জন কক্ষে রেখে বের হয়ে এলেন এঁরা দরজা ভালোভাবে বন্ধ করে।
যুবরাজ নিজের তত্ত্বাবধানে বড় একটি স্বর্ণপাতে দিদাইমেইয়ার তৈরি করে দেওয়া একটি স্মারকলিপি উৎকীর্ণ করালেন। তাতে লেখা আছে—
‘হে গোর দেবতা হেইডেস, এখানে যে নারী শুয়ে আছেন, তিনি পুণ্যবতী। এই জগতের কোনো পাপ তাঁকে স্পর্শ করে নি। জগতের কোনো লোভ তাঁকে পঙ্কিলতার মধ্যে ডুবিয়ে দেয় নি। তিনি শ্রেণিমতো সবার ভালোবাসা পেয়েছেন, সবার মন জয় করেছেন। হেইডেস, তুমিও নিশ্চয়ই তাঁকে ভালোবাসবে। কবরজগতে তাঁকে সুরক্ষা করবে। জগতের মানুষ যা দিতে পারে নি, তুমি তাঁকে সে সমৃদ্ধ পরকাল উপহার দেবে। তোমার জন্য আমরা তাঁর সঙ্গে যে উপহারসামগ্রী পাঠাব কিংবা তোমার উদ্দেশে উৎসর্গ করব, তাতে তোমার সন্তুষ্টির কারণ থাকবে। পার্সিফেনিকে যেভাবে তুমি অপহরণ করেছিলে এবং যে কারণে পার্সিফেনি প্রেতলোকের রানি, তাঁকেও ভক্তি করি আমরা, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাও আমাদের কম নয়। মৃতের সঙ্গে দেওয়া উপহারসামগ্রীতে তাঁরও সন্তুষ্টি থাকবে। হে অন্ধকার জগতের শাসনকর্তা, হেলেন সেখানে তোমার আনুকূল্য পাবে, এ প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি। হে পরকালের রানি পার্সিফেনি, আমাদের দেবতা অ্যাপোলোও পছন্দ করত তোমায়, তার বংশধর হেলেন এখন তোমার সাম্রাজ্যে। জানি তুমি অ্যাপোলোকে ফিরিয়ে দিয়েছ, হেলেনকে ফেরাবে না। তোমাকে না পাওয়ার বেদনা কাব্য হয়ে গেছে, সংগীতের সুরে তুমি অ্যাপোলোর বেদনা হয়ে আছ, সে প্রত্যাখ্যাত ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়ার সময় হয়েছে তোমার। দেবতা হেইডেসকেও নিয়ন্ত্রণ করো তুমি। এ নিয়ন্ত্রণের পরিধি হেলেনের প্রতি ভালোবাসা পর্যন্ত বিস্তৃতি পাক। সুখে রেখো তাঁকে।
ইতি
হেলেনের নিকটজন।
যুবরাজের তত্ত্বাবধানে স্টেলেস শোটি তৈরি করেছে ভবদানব। উপাদান ও থিম সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন দিদাইমেইয়ারা। এখন বিদায়ী করমর্দনটা বেশি চলছে, বললেন ফাওলিনের বাবা। এখানেও একটা চেয়ারে বসে বিদায়ী করমর্দন করছেন হেলেন ও চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। হেইডেস ও পার্সিফেনি আড়াল থেকে দেখছেন। মূর্তির স্মৃতিফলক। কিন্তু তাতেও শৈল্পিক একটি দিক আছে। আর তা হলো দেবতাদের ভালোবাসায় জবরদস্তি। চন্দ্রগুপ্ত তা অনুমোদন করে দিলেন।
সরোজ পটুয়া মৃৎপাত্র, তাম্রপাত্র এবং স্বর্ণপাত্রে কতগুলো পটচিত্র এঁকেছে। ধারণাগুলো দিয়েছেন কিউকেকাস। এমফোরা পিলহট, ডেকর, মিশুয়ান ও ডিসঝেকটা মেমরা কোনোটাই বাদ যায় নি। দেবতা হেইডেস ও পার্সিফেনির খুশি হওয়ার মতো চিত্রও রয়েছে। চিত্রগুলোর জাত বা প্রকরণ যা-ই হোক না কেন, ফিগার এবং কবরজগতের আবহ সৃষ্টি অনন্যসাধারণ হয়েছে। ইকফোরা জ্যামিতিক ছবিতে রয়েছে অনেকগুলো ফিগার এবং দেবতাদের নানা দেহভঙ্গি। একটি পটচিত্রে পার্সিফেনিকে নিয়ে হেইডেসের পালিয়ে যাওয়ার চিত্র আছে। কেন যেন সরোজ কিউকেকাসের পরামর্শের বাইরে হেলেন ও চন্দ্রগুপ্তের একটি রোমান্টিক ছবি এঁকে দিয়েছে। এ চিত্রটার দিকে চন্দ্রগুপ্ত অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। সবার দৃষ্টি তাঁর ওপর গিয়ে যেন আটকে গেছে।
কিউকেকাস এ নিবিষ্টতা ভঙ্গ করে বললেন, সম্রাটকেই ফিউনেরাল ভাষণ দিতে হবে। আমরা ভাষণটি তৈরি করে রেখেছি। ভারতীয় ভাষায় তা অনুবাদ করতে হবে। আর সম্রাট যদি চান গ্রিক ভাষায়ও দিতে পারেন। ভাষণটি সম্রাটের হাতে তুলে দেওয়া হলো।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার শোভাযাত্রা (শবযাত্রা) এবং প্রোথেসিসের স্তবগানের বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত হলো যে প্রোথেসিসে গ্রিক আঙ্গিকে স্তব বা শোকগান করা হবে। শবযাত্রায় একই গানের সুর বাজবে নিখিলের বাঁশিতে। আর বিউগলের বিহ্বলের সুর ধ্বনিত হবে শুধু মরদেহকে সামরিক সম্মান জানানোর সময়। এ জন্য নিখিলকে স্তবগানটি গেয়ে শোনানো হলো। চীনা শিল্পী তা দেখে মহড়ায় নিজেও অংশ নিলেন। হাতে তাঁর বারো ছিদ্রের ঐতিহ্যবাহী হাড়ের বাঁশি। রাবণহাথার সংগীতগুরু স্তবসংগীত পরিচালনা করতে চান। তাঁদের তিনজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হলো।
সমাধিসৌধটা এখনই নির্মাণ করা যাচ্ছে না, সময়ের ব্যাপার। তবে এর নকশা করা হয়ে গেছে। কবরটা খোদাই করা হয়েছে বেশ বড় আকারে। ট্রয়ের যুদ্ধের এক নায়ক আগামেমননের সমাধিসৌধে অনেকের সঙ্গে তাঁরও স্বর্ণ মুখোশ, তরবারি এবং ব্যবহৃত অন্যান্য জিনিসপত্র পাওয়া গেছে। পটারিও ছিল। ফাওলিনের পিতা বললেন, কবরটা ওই রকম আয়তনের হয়েছে, যাতে উৎসর্গ করা দ্রব্যগুলো সহজে সাজিয়ে রাখা যায়।
নকশাটা দেখালেন কিউকেকাস। অনেকটাই রাজা ফিলিপ দুইয়ের সমাধিসৌধের মতো। বললেন, ফিলিপের সমাধিতে অ্যাপোলোর একটি মূর্তি পাওয়া গেছে। এই দেবতার প্রতি তাঁর বিশেষ ভক্তি ছিল। মনে করার সংগত কারণ আছে যে এন্টিওকাস (সেলুকাসের পিতা) তাঁকে প্রভাবিত করেছিলেন। দিদাইমেইয়া বললেন, অ্যাপোলোর মূর্তি এখন আমরা কোথায় পাব? মুদ্রায় অবশ্য তাঁর চিত্র আছে। ফিলিপের স্বর্ণমুদ্রায়। স্ট্রেটোনিস বললেন, তাঁর কাছে সে মুদ্রা আছে। পিতা দিমিত্রিয়াস এক জন্মদিনে উপহারস্বরূপ দিয়েছিলেন তাঁকে।
পটের মধ্যে প্রতিটিতে আলাদা আলাদাভাবে উৎসর্গ-উপচার সংরক্ষণ করা হলো। কোনোটিতে রাখা হলো দুধ, কোনোটিতে মধু, কোনোটিতে প্রিয়জনের রক্ত, কোনোটিতে এসবের মিশ্রণ, একটিতে মৌসুমের প্রথম ফল, একটিতে শুকনো ফল, একটিতে মদ, আরেকটিতে জল এবং সবশেষটিতে রাখা হলো শাকপাতা। বড় একটি পটে রাখা হলো অনেকগুলো সুবর্ণ মুদ্ৰা।
.
প্রাসাদের একটি কক্ষে শোকজ্ঞাপন শুরু করেছেন গ্রিক নারীরা। স্ট্রেটোনিস তাঁর চুল কেটে ফেলেছেন। কারণ, তিনি প্রধান শোকপালনকারী। ছিন্ন কালো পোশাক। অন্যান্যদেরও তাই। রীতিসিদ্ধ। এ শোকজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে মৃতদেহকে ঘিরে স্ট্রেটোনিস ছাড়া আরও শোক করছেন দিদাইমেইয়া, লাউডিস, ফাওলিন ও হারমিজ। কণ্ঠে তাঁদের শোকের স্তবসংগীত। ছিন্নবস্ত্রে তাদের বক্ষদেশ প্রকাশিত। দেহ ঘর্মাক্ত। চুল সিক্ত। ঘামে ভিজে কারও কারও বস্ত্র শরীরে লেপ্টে গেছে। স্তবসংগীতের সুরের সঙ্গে অশ্রু ঝরছে সবার চোখ থেকে। সব সময় এ রকম হয় না। শোকটা থাকে কালো বস্ত্রে, স্তবসংগীত ও গাম্ভীর্যের আনুষ্ঠানিকতায়। এবার এমন হওয়ার কারণ আছে। এঁরা এখানে এসেছেন নিজেদের দেশ ছেড়ে। যাঁর কাছে এলেন, তিনিই সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁর প্রতি আলাদা মায়া ও ভালোবাসা ছিল এ দূরদেশে। শোকে তাই অন্তর তাঁদের পাথর হয়ে যায় নি, গলে ঘাম আর অশ্রু হয়ে ঝরছে। প্রোথেসিস বলে খ্যাত এ শোকজ্ঞাপন অনুষ্ঠান যেন শেষ হওয়ার নয়। এঁরা এমন এক স্তরে উঠে গেছেন, যেখানে ঐকান্তিক নিয়মাচার প্রাত্যহিক জগৎ থেকে মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। মানবসত্তার এ এক নতুন রূপ। মমির মতো মরদেহটাকে ঘিরে বৃত্তাকারে এমনভাবে ঘুরছেন এঁরা, মনে হচ্ছে নিজেদের ওপর তাঁদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
ইলিয়াডে হোমার লিখেছেন, প্রোথেসিস বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতা হচ্ছে মানবজাতির জন্য সম্মান, আর না করা অসম্মান। যাঁর জন্য এ অনুষ্ঠান, তাঁর কিছু এসে যায় না, তিনি তখন সবকিছুর ঊর্ধ্বে। যারা তাঁকে সম্মান জানাল, এরা যেন নিজেদেরই সম্মানিত করল।
.
সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য তাঁর কারাগারে যত নারী বন্দী আছে, সবাইকে মুক্ত করে দিলেন। পরকালে হেলেনের মঙ্গলার্থে প্রচুর দানও করলেন। সাম্রাজ্যের সর্বত্র শোক ঘোষণা করলেন। প্রতিদিন সম্রাটের প্রাসাদের সামনে অসংখ্য মানুষের সমাগম হতে শুরু করল। প্রজাসাধারণের বিশ্বাস, সম্রাজ্ঞীর অকালমৃত্যু তাঁদের জন্য ভয়াবহ দুর্যোগের আগাম বার্তা। তাই এ মৃত্যুতে তাঁদের উৎকণ্ঠার শেষ নেই
উৎকণ্ঠায় আছেন মহামন্ত্রী চাণক্যও। তাঁর উৎকণ্ঠা অন্য কারণে। অমরাবতী থেকে ফেরার পথে সম্রাটের সঙ্গে অনভিপ্রেত ব্যবহারের জন্য তাঁর উদ্বেগ বাড়ছে। এ ছাড়া মৌর্য সাম্রাজ্য এখন সবচেয়ে বড় সংকটে। তিনি সংকট মোকাবিলার পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। আচার্য ভদ্রবাহুর সঙ্গে সব সময়ই সাম্রাজ্যের শুভ-অশুভ বিষয় এবং নিজের ব্যক্তিগত ব্যাপারেও মতবিনিময় করেছেন। এখন তিনি চলে যাচ্ছেন। সাম্রাজ্যের সামনে অনেক বড় দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি। মহামন্ত্রী সত্যিই দিশেহারা। সম্রাজ্ঞীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার চেয়ে সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি চিন্তিত। তাই তিনি গেছেন আচার্য ভদ্রবাহুর কাছে। উদ্দেশ্য আচার্যের দাক্ষিণাত্যে গমন ঠেকানো এবং দুর্ভিক্ষের বিষয়ে আলোচনা। আরেকটি ব্যাপারও আছে। সম্রাটের মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা এবং সাম্রাজ্যের কাজে মনোযোগ দেওয়া এ মুহূর্তে চিন্তার অতীত। কাউন্সেলিং প্রয়োজন। একমাত্র আচার্যই পারেন বুঝিয়ে-শুনিয়ে সম্রাটকে মানসিক বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করতে এবং সাম্রাজ্যের কাজে মনোযোগী করে তুলতে। মহামন্ত্রীর আরেকটা সমস্যা আছে। বরাহ মিহিরের প্রেতকে ভয়। আচার্য চলে গেলে তাঁকে কে রক্ষা করবেন?
আচার্য ভদ্রবাহু চাণক্যের আগমনে খুশি। দীর্ঘদিন পর পেয়েছেন। এদিকে সম্রাজ্ঞীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পাশাপাশি দক্ষিণে যাত্রার প্রস্তুতি চলছে। এ সময়ে চাণক্যকে কাছে পাওয়া অতিশয় আনন্দের বিষয়। আপনি না এলে আমিই যেতাম, আচার্য। আমার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তেমন ভূমিকা নেই, ব্যস্ততাও নেই। ব্যস্ততা আছে গুছিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে।
আপনি যাবেনই?
সিদ্ধান্তটা এ রকমই হয়েছে।
স্থুলভদ্র যেতে পারত, যদি যেতেই হয়। নাকি আপনি নিজেই পালাচ্ছেন, বলে হাসলেন চাণক্য।
স্থুলভদ্রকে পাঠাব ভেবেছিলাম। সে যেতে চাচ্ছে না। আচ্ছা, যুদ্ধজয়ের সংবাদ পেয়েছি, কোনো উৎসব হলো না কেন? ভেবেছিলাম সম্রাজ্ঞী যুবরাজসহ সবাই যাব অমরাবতীর বিজয় উৎসবে।
সমস্যা হয়েছে। লোকটি মিথ্যে তথ্য দিয়েছিল। সে খুব খারাপ প্রকৃতির মানুষ। অন্ধ্রের আদিবাসী রাজা খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর নিয়মিত সেনাবাহিনী ছিল না, তার প্রয়োজনও নেই। কারণ, প্রজারা খুবই শান্তিপ্রিয় এবং নিজেরাই নিজেদের রাজ্য রক্ষা করে। তাদের প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে আমাদের সৈন্যরা। সম্রাট এতে অসম্ভব ক্ষুব্ধ। আমার ওপর তাঁর যত ক্ষোভ।
তার অর্থ আবার দূরত্ব তৈরি হয়েছে।
তা একসময় দূর হয়ে যাবে। কিন্তু এখন তিনি রাজকার্যে মনোযোগ দেবেন বলে মনে হয় না। আপনার সাহায্য প্রয়োজন। এখন আপনি ছাড়া আমি কিছুই ভাবতে পারছি না। আপনি চলে গেলে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হবে।
কারও জন্য কিছু থেমে থাকে না, আচার্য। সব ঠিক হয়ে যাবে।
তবু বিষয়টা আপনাকে বিবেচনা করতে বলব। অথবা যাওয়ার সময়টা পিছিয়ে দিতে আপনাকে অনুরোধ করব।
সম্রাটকে স্বপ্ন ব্যাখ্যায় উত্তেজিত করে দেওয়া বোধ হয় ঠিক হয় নি। কিন্তু স্বপ্ন তো সে কথাই বলছিল। তিনি হয়তো এ বিষয়েও কিছু একটা ভাবছেন, যা অনুকূল নয়।
মহামন্ত্রী বললেন, বারো মাথার সর্প তো ঠিকই আসছে। ঠেকানো যায় কীভাবে?
যুবরাজ ভালো কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আমি অভিভূত হয়েছি তার চিন্তাশক্তি দেখে। কিন্তু ফসল কম হয়েছে। সরবরাহ কম। দুর্গম এলাকায় খাদ্য পৌঁছাতে সময় ক্ষেপণ হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা খাদ্য মজুত করে রাখছে। এ ব্যাপারে আপনাকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে, ও ছেলেমানুষ। আপনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগান। এ ছাড়া বারো মাথার সর্প বারো হাজার মানুষের খাদ্য সমস্যা। এরা চলে গেলে সমস্যা থাকার কথা নয়।
ঠিক এ সময়ই সম্রাজ্ঞী বিদায় নিলেন। সম্রাট ও যুবরাজ দুজনই খুব ভেঙে পড়েছেন।
যুবরাজ সম্রাজ্ঞীকে মা হিসেবে অন্তর থেকে গ্রহণ করেছিল। সম্রাজ্ঞীর পরামর্শমতো কাজ করেছে। ভেঙে পড়ার কারণ এটাই।
কাল অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়ে যাওয়ার পর আপনাকে সঙ্গে নিয়ে সম্রাটের কাছে যেতে চাই। কাল নয়।
এসব কথাবার্তা আরও পরে বলুন।
তা ঠিক, আসলেই আমি খুব চিন্তিত।
.
বিন্দুসার গেছেন বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। খুব ভেঙে পড়েছেন তিনি। বললেন, বাবা, আমি খুব লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী, মাকে বাঁচাতে পারলাম না।
সম্রাট বিন্দুসারের মাথায় হাত রেখে বললেন, তোমাদের কথা না শুনে বড় ভুল হয়ে গেছে, বিন্দু। ক্ষমাহীন সে ভুল। হেলেনকে বোধ হয় সে জন্যই হারিয়ে ফেলেছি।
বাবা, জন্মের পর আমি আমার মাকে দেখি নি, মাকে আমি সত্যিই পেয়েছিলাম, ধরে রাখতে পারলাম না। এক দুর্ভাগা আমি। আমি যদি তাঁর কাছ থেকে দূরে থাকতাম, আপন মায়ের মতো করে না পেতাম, তিনি আমাদেরকে ছেড়ে যেতেন না। আমার দুর্ভাগ্যই মাতৃবিয়োগের কারণ।
চন্দ্রগুপ্ত পুত্রকে বুকে টেনে নিলেন। ছোটবেলায় যেভাবে আদর করতেন, সেভাবে মাথা ও শরীরে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, সবকিছু বিধাতার ইচ্ছা, বিন্দু, সেখানে মানুষের হাত নেই মানুষ ভুল করে, পরিণামে সবাইকে তার শাস্তি ভোগ করতে হয়। আমার ভুলের শাস্তি আমি পাচ্ছি, এতে ক্ষতি নেই, কিন্তু কষ্ট হচ্ছে তোমার জন্য। তুমি জানো না, হেলেন যখন তোমার হয়ে কথা বলত, আমার মনটা শান্তিতে ভরে যেত। আজ চারদিকে শুধু শূন্যতা। বাবার কাজ বাবা করেন, মায়ের কাজ মা, বাবা কখনো মায়ের কাজ করতে পারেন না। তোমাকে আবার মা- হারা করে দিলাম আমি। একটু থেমে চন্দ্রগুপ্ত আবার বললেন, তুমি তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার যে আয়োজন করেছ, আমি তাতে খুব খুশি হয়েছি। আমার অবর্তমানে তুমি সাম্রাজ্য ভালোভাবেই চালাবে। হেলেন সে কথাই বারবার বলেছে। আমি তখন মুগ্ধ হয়ে তার কথা শুনতাম। বুদ্ধি ছাড়াও তার একধরনের অন্তর্দৃষ্টি ছিল। তাই সবকিছু ভালোভাবে বুঝত।
আমিও তা-ই মনে করি, বাবা। দুর্ভিক্ষের আগমনবার্তা শুনে তাঁর পরামর্শে আমি প্রজাদের ডাকাই, এরা উল্টো পায়ের মানুষদের পুনর্বাসনে হইচই শুরু করে এবং বলতে থাকে, এদের লোকালয়ে নিয়ে আসাই দুর্ভিক্ষের কারণ। এ রকম একটা স্পর্শকাতর বিষয়কেও তিনি দারুণভাবে মোকাবিলা করলেন এবং প্রজাদের বুঝিয়ে দিলেন যে এটা কুসংস্কার, বাস্তব ঘটনা হচ্ছে, এবার অতিখরার কারণে ফসল কম হয়েছে। সরবরাহে ঘাটতির জন্য এ খাদ্যসংকট, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, সব ঠিক হয়ে যাবে। প্রজারা শান্ত হয়ে চলে গেল। তাঁকে এরা বিশ্বাস করত, শ্রদ্ধা করত, তারা জানে, সম্রাজ্ঞী মিথ্যে আশ্বাস দেওয়ার মানুষ নন।
এ রকম আস্থা অর্জনে সময় লাগে বাবা, নানা পরীক্ষা দিতে হয়। সেসব পরীক্ষায় তোমার মা উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, আমি চাই তুমি তার পথ অনুসরণ করো। প্রজাদের আস্থা বড় জিনিস, তা অর্জন যেমন শক্ত, রক্ষা করাও তেমনি কঠিন
বাবা, একটি কথা। মার আত্মীয়স্বজনরা এসেছেন। এদের বড় দুঃসময়। সব সময় মন খারাপ করে থাকেন। আপনি কি আলাদাভাবে এঁদের সঙ্গে কথা বলবেন? এঁরা অবশ্য এখন শোকজ্ঞাপন করছেন আনুষ্ঠানিকভাবে।
আজ রাতে আনুষ্ঠানিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রস্তুতি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলব। সে সময় বলব তাঁরা যেন এ সাম্রাজ্যেই থেকে যান। যদি একান্ত না থাকতে চান, এঁরা যেখানে যেতে চান, সসম্মানে সেখানে পৌঁছে দিতে হবে। আলোচনাকালে তুমি থাকবে।
.
বিন্দুসার চলে যাওয়ার পর মন্দাকিনীকে ডাকলেন চন্দ্রগুপ্ত। মন্দাকিনীর হাতে কিউকেকাসের দেওয়া খসড়া ভাষণটা দিয়ে বললেন, দেখো এটা, আমি কিছু পরিবর্তন করতে চাই তাতে। মন্দাকিনী ভাষণটা পড়ে নিজের অজান্তেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। পরে বলল, কী পরিবর্তন করতে চান, বলুন সম্রাট।
তুমি তো সবই জানো, আমাদের সম্পর্কের শুরু থেকে। চিঠিগুলো দেখে উল্লেখযোগ্য অংশগুলো উদ্ধৃত করো। বাকিটা আমি দেখছি।
এ সময় মেগাস্থিনিস এসে উপস্থিত হলেন। তাঁকেও ডেকে পাঠিয়েছিলেন চন্দ্রগুপ্ত। চন্দ্রগুপ্ত খসড়াটা মেগাস্থিনিসের দিকে এগিয়ে দিতে গেলে মেগাস্থিনিস বললেন, এটা আমি দেখেছি। আমি তাদের বলেছিলাম, ইলিয়াডে হোমার যে দুটো ফিউরেনাল অরেশনের অবতারণা করেছেন, সেগুলো একবার দেখে নিতে। অবসর নেওয়া দুই জেনারেল বললেন, ওটা তো যুদ্ধ মহাকাব্য, এখানে তা প্রাসঙ্গিক নয়। ওরা জানে না। মহাকাব্যটা আমার সঙ্গে ছিল। আমি বের করে নিয়ে এসেছি। পেট্রোক্লাসের ব্যাপারটা প্রাসঙ্গিক নয় মানছি, কিন্তু হেক্টর পত্নীর অরেশনটা খুবই প্রাসঙ্গিক। মহামান্য সম্রাট, আপনি তা দেখে নিতে পারেন। বলে মহাকাব্যটা এগিয়ে দিলেন। এতে হেক্টর পত্নী বলেছেন, ও ও হেক্টর, কিছু ব্যাপার আছে তোমার উদ্দেশ্যে বলবার। আমরা তো একই অবস্থায় জন্মেছি, তুমি ট্রয়ে প্রায়ামের প্রাসাদে, আমি থিবিসের কাষ্টপর্বতে। ইশান আমার জন্মদাতা নন। রোগাভোগা দেখে আমাকে নিয়ে আসেন। তুমি এখন (গোরদেবতা) হেইডেসের গৃহে যাচ্ছ, যা পৃথিবীর সবচেয়ে গোপন জায়গা। আর তুমি আমাকে দুঃখী বিধবা করে রেখে গেলে তোমার ঘরে। আমাদের অসুখী একটি শিশুসন্তান আছে, তার জন্য তুমি কিছু করতে পারলে না, না সে পারবে তোমার জন্য কিছু করতে।
এ সময় আচার্য ভদ্ৰবাহু এলেন। অমরাবতী থেকে ফেরার পর তাদের সাক্ষাৎ হয় নি। তিনি বললেন, এ সময়ে এসে আলোচনায় বিঘ্ন ঘটাই নি তো?
সম্রাট বললেন, না না। ভালোই হলো আচার্য, এসে গেছেন, না হয় আমিই যেতাম। মেগাস্থিনিস অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বিষয়ে মহাকবি হোমারের ইলিয়াডে কী আছে, তা দেখাতে এনেছে
আচার্য তা শুনে বললেন, ভালো জিনিস। তবে আমাদের রামায়ণেও আছে মেঘনাদের শেষ যাত্রায় রাবণ কী বলেছিলেন। মেঘনাদ পত্নী প্রমিলার কথাও আছে সেখানে।
চন্দ্রগুপ্ত মন্দাকিনীকে বললেন, রামায়ণ নিয়ে তুমি একটু পরে এসো। আমি তাদের সঙ্গে কথা সেরে নিই।
মেগাস্থিনিস বললেন, সম্রাট সেলুকাস নেই, সম্রাজ্ঞীও নেই, এখন আমার অবস্থান ও ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে কথা বলা দরকার।
তা আজকেই কেন? অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর এ নিয়ে কথা বলব। এ সময়ে সেলুসিড সাম্রাজ্যের নতুন সম্রাটের মনোভাবটা জেনে নিন।
তা ঠিক বলেছেন আপনি। শুনলাম আচার্য দাক্ষিণাত্যে চলে যাচ্ছেন। তাঁকে আমি এখানে থাকতে অনুরোধ করেছি।
চন্দ্রগুপ্ত অবাক হয়ে বললেন, আচার্য?
হ্যাঁ চন্দ্র, দূতপ্রবর ঠিক বলেছেন। বারো হাজার জৈনের একটি দল নিয়ে দাক্ষিণাত্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
চন্দ্রগুপ্ত বললেন, এ নিয়ে এখনই আমি কিছু বলতে চাই না। হেলেনের বিদায়ের পর কথা বলব।