মেঘদীপের গার্লফ্রেন্ডরা

মেঘদীপের গার্লফ্রেন্ডরা

আজকালকার দিদিমা-ঠাকুমারা তো আগেকার মতো সহজে পরের প্রজন্মকে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দিয়ে পুজোর ঘরে গিয়ে আশ্রয় নেন না? তারাও সেজেগুজে সন্ধেবেলায় পার্টি করতে বেরোন, রবীন্দ্রসদনে, নন্দনে, আইসিসিআর-এর মঞ্চে তাদের নৃত্য-গীত প্রদর্শন করতেও দেখা যায়। শুধু দর্শকদের আসনেই নয়। তা বলে তারা তো বয়স লুকোচ্ছেন না? একবার নাতি-নাতনির প্রসঙ্গ তুলেই দ্যাখো না? যে যাঁর অতুলনীয় নাতি-নাতনির গল্পের ঝুলি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন তক্ষুনি। আমি তো হিয়ামনের কথা মাঝে-মাঝেই যত্রতত্র বলে ফেলি। আমি একা নই, অনেকেই বলেন। তবে পুরুষমানুষেরা চেষ্টা করেন এসব তুচ্ছ সাংসারিক দুর্বলতা থেকে মুক্ত থাকতে। (নাতি? হ্যাঁ, আছে আছে। আহা, ভালো থাক। তাকে নিয়ে অত গল্প জোড়াব কী আছে? সব বাচ্চাই ছোটবেলায় সব মা-বাপের চোখে ওইরকম আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ)

সেদিন সন্ধেবেলায় দিব্বি মনের সুখে আড্ডা দিচ্ছিলুম। মনের সুখের কারণ এই যে, আজকাল আমি লক্ষ করেছি আমরা যারা দিদিমা-ঠাকুমা হয়েছি, তাদের আড্ডার মধ্যে নাতি-নাতনিদের গুণপনা সবার অজান্তে ঢুকে পড়বেই পড়বে, আর যাঁদের সে-সৌভাগ্য হয়নি অর্থাৎ যাঁরা নাতিসুখ পাননি, বেচারা তাদের নিদারুণ ভাবে বের করে দেবেই দেবে। আমার দিব্বি মনে আছে, আমিও একদা ওই শেষের দলেই ছিলুম। সেই সন্ধেটির বৈশিষ্ট্য এই যে, সেখানে বিমিশ্র উপস্থিতি নয়, অবিমিশ্র দাদু-ঠাকুমাদেরই জমজমাট আড্ডা বসেছিল।

সেদিন আমরা টুসির কাছে তার নাতির গপ্পো শুনছিলুম, টুসিরা সদ্য ফিরেছেন কিনা মেয়ের বাড়ি থেকে। আমাদের অনেক বন্ধুর বার্ষিক সফরসূচিতে একবার করে সাত সাগর পেরনো থাকে আজকাল। বিদেশ-দর্শনের জন্য নয়, নাতি-নাতনির টানে বিদেশযাত্রা। সুনীল-স্বাতী, টুসি-আশিস, সীমা-পি.কে. নন্দিতা-ড. বাগচী, উমা, টুনু, কত বলব? এঁদের কথা তো না-ভেবেই মনে এল, খুঁজলে আরও অনেক নাম পাব। আমি এখন বসেছি মেঘদীপের গল্প বলতে। টুসির নাতি মেঘু থাকে ইংল্যান্ডে, তার ব্যস্ত মা-বাবার কাছে।

সেবারে টুসি যেতে, একটু যেন অন্যরম লাগল মেঘদীপকে।

তাদের অতি আদরের নাতিবাবুটি দাদু-দিদুকে দেখলেই আহ্বাদেপনা শুরু করে, এইবারে সে যেন একটু গম্ভীর-গম্ভীর একটু দূর-দূর? বলি, ব্যাপারটা কী? শরীরটরির ঠিক আছে তো? ইশকুলের রেজাল্ট ঠিকঠাক? খেলাধুলোর ক্ষেত্রে হারজিত-এর আকস্মিক কিছু নয়? একটু কেমন-কেমন লাগছে যেন ছেলেটাকে? অনেকটা বেড়েছে মাথায়, কিন্তু বয়স তো সবে এগারো হল। ব্যাপার কী? হাবভাব তো ভালো ঠেকছে না?

মেয়ে বুলা বললে, হ্যাঁ, মেঘুর মনটা বড় খারাপ, মা।

কেন? কেন?

কেন আবার? ওর গার্লফ্রেন্ড হয়নি একটাও, এদিকে ওর বন্ধুদের গার্লফ্রেন্ড হয়ে গিয়েছে। এই নিয়ে ইকুলে সবাই খ্যাপার বোধহয়। সবটা তো খুলে বলে না।

গার্লফ্রেন্ড হয়নি বলে খ্যাপায়? সে কী রে। আমাদের সময়ে তো গার্লফ্রেন্ড হলেই বন্ধুরা ছেলেদের খ্যাপাত।

এখানে আলাদা হিসেব, মা। মুখ গুঁজে পড়লেই তো হবে না, ইশকুলেও তোমার সামাজিক সফলতা চাই, তাই গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড হওয়া না-হওয়াটা ছেলেমেয়েদের প্রেস্টিজের পক্ষে জরুরি। পিয়ার প্রেশার থাকে প্রচুর।

কিন্তু বুলা, ওর তো মোটে এগারো–প্রি-টিন—

তাতে কী? ওই বয়সেই ওসব হওয়ায় কথা এদেশে!

 এ নিয়ে মেঘুর সঙ্গে কথা বলা দরকার।

দিদিমা চেপে ধরলেন মেঘুকে।

কেন দাদাভাই তোমার মনখারাপ? গার্লফ্রেন্ড হয়নি বলে? সময় হলেই হবে।

সময় তো হয়েছে, দিদা।

তবে কেন তোমার গার্লফ্রেন্ড হচ্ছে না? কারণটা কী মনে হয় তোমার? সেটা বদলে ফেললেই হল? তুমি এমন টল, ডার্ক, হ্যান্ডসাম, এত সুন্দর চুল তোমার।

ওখানেই তো আমার দোষ, দিদা। আমার চশমার লেন্স খুব পুরু তো, বেজায় স্টুডিয়াস দেখায়। স্টুডিয়াস ছেলেদের মেয়েরা পছন্দ করে না। আর তা ছাড়া, আমি তো ম্যাথুস-এ বেস্ট বয়। সেটাও খারাপ

 দুর দুর চশমার পাওয়ার খুব হাই, পুরু কাঁচ, সেটা আবার একটা কারণ হতে পারে? আর অঙ্কে ক্লাসের বেস্ট বয়, সেটাও কারণ হতে পারে না। কক্ষনও না!

কিন্তু আমার যে বেস্ট ফ্রেন্ড, জুনিয়ার, সে খুব চালাক, আর সব কিছু জানে-বোঝে দিদা। জুনিয়ার আমাকে বলেছে, গার্লস হেট ম্যাথস অ্যান্ড দোজ হু আর গুড অ্যাট ইট। ও বলেছে, তুই একটু খারাপ করে দ্যাখ না অঙ্কে? দেখবি এফেক্ট হবে। চশমার তো কিছু করা যাবে না। পরে বাবাকে বলে চোখে কনট্যাক্ট লেন্স পরে নিস।

অঙ্কে খারাপ করতে বলে দিল? আচ্ছা, ছেলে তো। ওর সঙ্গে আর মিশতে হবে। না। মনে-মনে টুসি এই কথাগুলো বললেও মুখে বেরিয়ে এল স্কুল শিক্ষিকা-দিদিমার আকুল জিজ্ঞাসা, অঙ্কে খারাপ করো বললেই হল? কেমন করে খারাপ করবি?

নো প্রবলেম। খারাপ করা সহজ তো, দিদু। ইচ্ছে করে দুটো অঙ্ক ছেড়ে দিলেই রেজাল্ট খারাপ হয়ে যাবে। মেঘদীপের মুখে হাসি ফুটেছে। লেটস সি? দিদু স্তম্ভিত।

এই অবস্থায় দাদু-দিদু চলে গেলেন ইউরোপে। ফিরে এসেই প্রশ্ন, হ্যাঁ রে, মেঘুর অঙ্কের টেস্ট হয়েছে?

হয়েছে।

অঙ্ক-টঙ্ক ছাড়েনি তো?

হ্যাঁ, ভদ্দরলোকের এক কথা। দুটো অঙ্ক ছেড়েছে।

 সে কী রে বুলা। সাউথ পয়েন্টের দিদিমণিটির শ্বাস আটকে গেল।

 মেঘুদাদা ইচ্ছে করে দু-দুটো জানা অঙ্ক ছেড়ে এল?

এল তো।

তাতে গার্লফ্রেন্ড হল?

হল তো।

আরও আশ্চর্য এবারে দিদিমণি।

সত্যি? অঙ্কে খারাপ করলে প্রেমিকা হয়? আমরা তো জানি ব্রিলিয়ান্ট ছেলেদের পছন্দ করে মেয়েরা। অন্তত আমাদের সময়ে তো তাই ছিল। কণ্ঠস্বর কঠোর হচ্ছে।

আমাদের সময়েও দেশে তাই-ই ছিল, মা। ইংল্যান্ডে হয়তো অন্যরকম?

গার্লফ্রেন্ড কি ওরই ক্লাসে পড়ে? নাম কী তার?

একসঙ্গেই পড়ে, বাবা ইংরেজ, মা পাঞ্জাবি। ওর নাম মিনি।

তুই দেখেছিস?

 বেশ দেখতে, বাচ্চা প্রীতি জিন্টার মতো।

তো, গার্লফ্রেন্ড কী বলেন দাদুভাইকে?

বলেছেন তো এই ৫ নভেম্বর, গায় ফকস ডে-তে ময়দানে যেতে, সেখানে তিনি থাকবেন, দুজনে মিলে বাজি পোড়ানো দেখবেন।

সে তো পরশুদিন!

হ্যাঁ মা, পরশু সন্ধেবেলায় মেঘুকে নিয়ে যেতে হবে ওর প্রথম ডেট-এ।

বুলা মুখ টিপে হেসেই অস্থির। যেন খেলা-খেলা, পুতুলের বিয়ে দিচ্ছে।

কার সঙ্গে যাবে?

আমার সঙ্গে, আবার কার সঙ্গে? বাবার কি সময় আছে নাকি? ডাক্তার মানুষ।

দিদিমা একটু হতচকিত, মা নিজেই ছেলেকে নিয়ে যাচ্ছে তার জীবনের প্রথম ডেট-এ? কোথায় মা-বাবাকে লুকিয়ে ছেলেমেয়েরা গোপনে ডেটিং করবে, নিত্যিনতুন মিথ্যে কথা তৈরি করতে প্রাণান্ত হবে, তা নয়, এখানে দেখি উল্টো? বুলারও কি মাথা খারাপ হল? যাকগে, যে-দেশের যে-নিয়ম তাতেই তো চলতে হবে!মেঘুর বান্ধবী যখন বলেছে তাকে মিট করবে ওই ময়দানে, বাপ-মা সেখানে সময়মতো না নিয়ে গেলে ছেলেরই মানসম্মান নষ্ট।

৫ তারিখে সেজেগুজে মায়েতে-ছেলেতে রওনা হল, মেঘদীপ খুব খুশি, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আয়নার সামনে দিয়ে যাতায়াত করছে। সুন্দর পোশাকে স্মার্টলি সেজেছে মায়ের উপদেশ মতো। নাচতে-নাচতে বেরুল সে। বুলার মুখে তেমন টেনশন দেখতে পেল না টুসি। বা-ই!–সি-ইউ! হেসে-হেসে গাড়ি স্টার্ট দিল। এদিকে দিদিমা তো দাদুর সঙ্গে পাশাপাশি বসে নিবিষ্ট চিত্তে ভুরু কুঁচকে টিভি-তে গায় ফকস ডে উদযাপনের উৎসব দেখছেন। ভিড়ের মধ্যে মেঘু বা তার গার্লফ্রেন্ডের চিহ্ন যদি দেখা যায়? বাচ্চা প্রীতি জিন্টার মতো কেউ?

রাত হতে বুলা ফিরল সপুত্রক। ফিরেই যে যার নিজের ঘরে চলে গেল, দাদু-দিদিমাকে কেউ দেখতে পেল বলে মনে হল না। দিদিমা চেঁচিয়ে ফেললেন, কী রে? হল তোদের ডেট করা?

মা, একদম ওই নিয়ে কথা নয়! পরে বলব সব। ফিসফিস গলায় বুলা বলল তার মা-কে।

পরে, মানে মেঘু ঘুমিয়ে পড়তেই, বুলা জানাল, তারা গিয়ে দ্যাখে সেখানে লোকে-লোকে লোকারণ্য। তার মধ্যে কোথায় মেঘদীপ, কোথায় বা তার গার্লফ্রেন্ড! নিজের হাতটাই খুঁজে পাওয়া যায় না। মিনিকে মোটে খুঁজেই পাওয়া যায়নি, সে বেচারিও তার মায়ের হাত ধরে ভিড়ের মাঝখানে কোথায় যে দাঁড়িয়েছিল কে জানে? ওরা বাজি পোড়ানো দেখে চলে এসেছে। মেঘুর খুব মনখারাপ, তার মায়ের মেজাজ খারাপ তার চেয়ে বেশি। রাতে শুয়ে দিদিমা দাদুকে বললেন,

সত্যি বলতে কী, আমি তো মেঘুর ডেটিং চাইনি এত অল্প বয়সে, কিন্তু আমারও মনটা এমন খারাপ-খারাপ করছে কেন?

তা করবে না? আহা, বাচ্চাটা একটা আশা করে বেরিয়েছিল? দাদুর সোজা উত্তর।

কয়েকদিন আর এ-বিষয়ে কিছু শোনা গেল না। তারপরে ছেলে বাড়ি এসে জানান। দিল, আবার সে অঙ্কে ১০০-তে ১০০পাচ্ছে। আর একটাও অঙ্ক ছেড়ে আসে না। অংকের টিচার ধরে ফেলেছেন যে, মেঘু ইচ্ছে করে উত্তর দেয় না। দারুণ বকুনি দিয়েছেন, আর ওরকম করা চলবে না, তাতে গার্লফ্রেন্ড হোক আর না-হোক।

পরের বছরে দাদু-দিদিমা গিয়ে দ্যাখেন নাতির ইশকুল বদল হয়েছে, সে এখন দারুণ এক নাক-উঁচু ইশকুলের ছাত্র। সেখানে অনেক নিয়ম-কানুনের কড়াকড়ি। একদিন নাতি ইশকুল থেকে ফিরে ব্যাগ নামাতে নামাতেই মা-কে বললে,

মা, আমাদের কাল ইশকুলের পরে ডিটেন করবে বলেছে। দেরি হবে, ভাবনা কোরো না।

কেন? কেন? কেন তোকে ডিটেন করবে। অমন বললেই হল?

বাঃ, পানিশ করবে না? রুল ব্রেক করেছিলুম যে! মেঘদীপ মায়ের অজ্ঞতায় আশ্চর্য!

এবার মায়ের আরও বিস্ময়ের পালা। এবং ক্রোধের।

কেন? কোন রুল তুই ব্রেক করেছিলি? কেনই বা?

আমি এসএমএস করছিলুম।

ক্লাসের মধ্যে?

 এবারে মেঘু চুপ।

কী এসএমএস করছিলি? ক্লাসের মধ্যে?

এবারে দিদিমণি দিদার আধখানা বুজে-যাওয়া গলা শোনা গেল।

ক্লাসের মধ্যে তোদের মোবাইল ফোন নিয়ে ঢুকতে দিল কেন? বলেছিল না বারণ? লকারে রেখে যাওয়ার কথা নয়? মায়ের কিন্তু তীক্ষ্ণ-কণ্ঠ।

বারণই তো? আমি তো ভুলে-ভুলে নিয়ে ফেলেছিলম ভিতরে।

ভুলে-ভুলে? আর এসএমএস-টাও কি ভুলে-ভুলে করে ফেলেছিলি? দুষ্টুমি করবে শাস্তি তো পাবেই।

আশ্চর্য। আমি কি কমপ্লেন করেছি? আমি তো বলেইছি, রুল ব্রেক করেছি, পানিশমেন্ট হবে, তাই বলিনি? আর কোনও দিনও মোবাইল নিয়ে যাব না ক্লাসের মধ্যে। এসএমএস করার চান্সও থাকবে না তা হলে। ফোনটা থাকলেই লোভ হয়। শুধু একঘণ্টা কাল ডিটেল্ড হব স্কুলের পরে। তোমরা ভাবনা কোরো না, আইল বি ফাইন।

কত বড় হয়ে গিয়েছে এই কিছুদিনের মধ্যেই, মেঘুর এখন বারো পূর্ণ।

.

হপ্তা দুয়েক পরেই, আবার একদিন ইশকুল থেকে এসে মেঘু ঘোষণা করলে, আবার আমি কাল ডিটেল্ড হচ্ছি, মা। আমিও জেনি-ও।

এবারে তোমার অপরাধ কী?

আমরা দুজনের ক্লাসের মধ্যে কাগজের টুকরোয় কমেন্টস এক্সচেঞ্জ করছিলুম তো, তা-ই। টিচার ধরে ফেলেছেন।

ফোন নেই, তাও তোমাদের রক্ষে নেই? এবারে টুকরো কাগজ?

 আমি কী করব, আমি তো আগে লিখিনি, জেনি লিখেছিল।

কী লিখেছিল মেয়েটা তোকে?

আমাকে আই লাভ ইউ নোটিস পাঠাচ্ছিল। বারণ করলে শুনছিল না। আমি তার উত্তর দেব না?

টিচাররা সেসব দেখলেন?

 হ্যাঁ, দেখলেন তো।

বে-শ। মায়ের ক্ষোভ এবারে ফোঁস করে ওঠে।

তুমি কী লিখেছিলে দাদুভাই? খারাপ কিছু লেখখানি তো?

আমি? না, খারাপ কেন হবে? ওঃ, মেয়েটা আমাকে যা জ্বালায় না দিদা ভীষণ বিরক্ত করে। কিছুতেই আমার কথা শুনবে না, আমি ওকে ডেট করতে চাই না, ও ব্লন্ড, পাকাচুলের মতো দেখায়, কিন্তু ও আমাকে ডেট করবেই করবে। খালি-খালি আই লাভ ইউ ওই সমস্ত কথা লিখে নোট পাঠাচ্ছে ক্লাসের মধ্যে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে নয় কিছু না! তাই আমি একটাতে লিখেছিলাম, বাট আই ডোন্ট। তার পরেরটায় লিখলাম, জাস্ট ড্রপ ডেড। আর শেষেটাতে লিখেছিলাম, জাম্প ফ্রম তা ক্লিফ। এই তো কেবল? কী এমন খারাপ কথা? পিছনে লাগলে যে কেউই বলবে। জেনি বলত না, যদি আমি ওকে এইরকম ভাবে বিরক্ত করতাম?

পরের দিন বিকেল। দুজনকেই ডিটেন করেছে ইশকুলে। বিচারসভা বসছে হেডমাস্টারের ঘরে। ফিরতে দেরি হবে।

বাড়িতে সবাই প্রস্তুত : কী জানি কী হয়। কত রাতে ফেরে?

 ডোরবেল বাজল খানিক পরেই।

কী রে? ডিটেনশন পিছিয়ে দিল।

না। স্কুলব্যাগটা ছুঁড়ে ফেলতে ফেলতে শ্রীমান মেঘদীপের একগাল হাসি। ছেড়ে দিলেন।

.

আরাম করে সফটি আইসক্রিম আর চকোলেট কেক খেতে-খেতে মেঘু বললে, হেডমাস্টার বললেন, এক তো রুল ভেঙে ক্লাসের মধ্যে চিঠি চালাচালি করেছ। দুই, একটি মেয়েকে এত বিশ্রী বিশ্রী কথা কেন লিখেছ? জেনি বলছে সে তোমারে শুধু আই লাভ। ইউ লিখেছিল, তার উত্তরে তুমি আমি দেখি জেনি-র মুখ ভয়ে এতটুকু। কেমন করে যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তখন বললুম–

হা স্যর, কথাটা ঠাট্টা করেই বলেছিল ও, আমারই অতটা রেগে যাওয়া ঠিক হয়নি, সব দোষ আমার, জেনি-কে পানিশ করবেন না, ওকে আপনি ছেড়ে দিন, ও বেচারির কোনও দোষ নেই। আমাকে পানিশ করুন আমি রুল ভেঙেছি। হঠাৎ অত রেগে গিয়ে ক্লাসের মধ্যে বিশ্রী বিশ্রী করে চিঠি লেখালিখি আমার উচিত হয়নি। ওকে ছেড়ে দিন স্যর।

সব শুনে, দুজনেরই সব চিঠি পড়ে, আমাকে শিভালরাস জেন্টলম্যান বলে খুব আদর করে ছেড়ে দিলেন স্যার। জেনিসকেও একটু বকুনি দিয়ে ছেড়ে দিলেন। কী ভালো না দিদা, আমাদের হেডমাস্টার? অথচ সবাই তাকে ভয় পায় খুব।

সত্যি খুব চমৎকার মানুষ। কিন্তু তুমি তার মুখ রাখবে তো দাদুভাই? এই যে মোবাইলের পরে চিঠি চালাচালি, সব ক্ষমা করে দিলেন, আবার কিছু বাধিয়ে বোসো না যেন। এরপর আর ছেড়ে দিতে পারবেন না উনি।

ধ্যেৎ, তা কখনও হয়। আমি না শিভালরাস জেন্টিলম্যান হয়ে গেছি? আর নিয়ম ভাঙা মানায়।

দিদু তখন শিভালরাস জেন্টিলম্যানকে কোলে জড়িয়ে একটা চুমু খেলেন।

2 Comments
Arghadipa Chakraborty August 30, 2021 at 2:20 pm

স্মরণজিৎ চক্রবর্ত্তীর লেখা “জোনাকিদের বাড়ি” আর বিমল কর এর লেখা “খড়কুটো” পোস্ট করুন প্লিজ।

Beautiful story. I am looking for a translated book named “ Shonibarer golpo Shona ( শনিবারের গল্প শোন)”, could not find anywhere. If anyone knows where to get it please let me know.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *