৪
বসের মধ্যে দুটো সত্তার টানাপোড়েন চলতে থাকে। পিতা ও বস। দড়ি টানাটানিতে কে জিতবে?
পিতা বলে (মনে মনে) হাসাতে চেষ্টা করেছ? কুলাঙ্গার। গোপা বিশ্বাস করত না। কিন্তু তুমি যে তোমার মাসতুত বউদির সঙ্গে থাকো, তা আমি জানতাম না। কানাঘুসো শুনেছি ভেবেছি বিয়ে করেনি। এত টাকা করে ফেলেছে, এরকম একটু আধটু খেয়াল হতেই পারে। বিয়ে করলে স্বভাব সেরে যাবে।
স্বভাব তো সারেনি তোমার। আমার মেয়েকে হাসাতে চেষ্টা করেছ? মিথ্যে কথা।
পিতা দড়ি ছেড়ে গড়িয়ে যান। বস শুকনো গলায় বলেন, ছেলেটা দেখতে বয়সেও ছোট। আর দেখতে অতি সাধারণ, কি করে গোপা …
—এই ছবিটা দেখুন। ময়দানে বসে দুজনে চা খাচ্ছে।
ছেলেটা কি বলছে, গোপা শুনছে।
—রিপোর্টে কি জেনেছ?
—ছেলেটার নাম বিক্রম শতপথী। মেদিনীপুরের কোনো গ্রামে বাড়ি। এখানে থাকে বেলগাছিয়ার একটা মেসে। পরীক্ষা দিয়ে কাজ পেয়েছে। বি কম পাশ। রং ময়লা।
জানতেন, বস জানতেন, ওই রকম অরূপ মার্কা একটা ছেলেকেই গোপার পছন্দ হবে। হঠাৎ মনে যেন কেমন অনুভূতি হয়। গোপার জন্যে নিদারুণ কষ্ট হয়। আশ্চর্য অনুভূতি।
—চলে যাবার তিন মাস এগারো দিন আগে ওরা প্রতিদিন দেখা করেছে, চলে যাবার দিন পর্যন্ত। প্রতিদিনের রিপোর্ট আছে।
এমন কি বসেরও মনে হয়, সুজয় নিজে লম্পট, এবং মানুষ হিসেবে অতি দুর্জন। নিজে কি, তা জানো। বউ যেদিন থেকে নিজের ইচ্ছেমতো চলাফেরা করতে থাকল, অমনি তার পেছনে গোয়েন্দা লাগালে?
—কেন লোক লাগিয়েছিলে?
—আশ্চর্য। জানতে চাইব না?
—এগুলো দেখিয়ে ডিভোর্স করতে?
—আপনি ভালোই জানেন যে ডিভোর্স ওকে আমি কোনদিন করতাম না।
—তবে?
—ওগুলো দেখিয়ে ওকে সাবধান করে দিতাম। এভাবে চলাফেরা করলে…
—বলেছিলে কিছু?
—বলার আগেই চলে গেল।
—ওই ছেলেটার খবর কি?
—গোপা চলে যাবার পরও ও অন্তত সাতদিন ব্যাঙ্কে এসেছে। তারপর আমি বললাম আর দরকার নেই। আশ্চর্য আটদিনের দিন থেকে ছেলেটাও উধাও। ব্যাঙ্ক বলছে, ছুটি নিয়ে গেছে।
—দাঁড়াও দাঁড়াও। ছেলেটি উধাও আটদিনের দিন থেকে? তুমি বলেছিলে দুজনেই একসঙ্গে… তা ছাড়া, এই গোয়েন্দা লাগাবার কথাটিও তো বলনি?
—আপনি বোধহয় ভুল করছেন। আমি কখনো বলিনি প্রথম থেকে… আর গোয়েন্দা লাগাব না তো কি আমার বউকে ফলো করে বেড়াব? এ আপনি কি বলছেন?
—একটু জল দাও।
—বিয়ার খাবেন?
—না ওষুধ খাব।
—কি ওষুধ?
—অ্যানালজেন। মাথাটা ধরছে।
—এখন বলছেন রূপা…বাহাদু।
—জী।
—পানি সাব কে লিয়ে।
—জী।
জল, ওষুধ, মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে, এখন মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে।
—রূপা বলছে ওটা গোপা।
—বিশ্বাস করি না।
—বিশ্বাস আমিও করি না। তবু সেটা ওখানে গিয়ে বলতে হবে। রূপাকে বুঝিয়ে নিয়ে আসতে হবে। নইলে, রূপা জোরাজোরি করলে…
—কেচ্ছা হবে।
—এখন এরকম খবর! অসত্য খবর বেরোলেও রিপোর্টাররা তোমাকে, আমাকে…
দুজনে দুজনের দিকে চেয়ে থাকেন।
—যেতেই হবে সুজয়। না গেলে সেটা আরো অস্বাভাবিক দেখাবে। আর রূপাকে আমি জানি। সব কেচ্ছা বেরোক, আমাদের নামে কালি পড়ুক। ও তাতে খুশিই হবে। ও—বড়ো ভীষণ মেয়ে।
—নকশাল না কি?
—না না, র্যাডিক্যাল, স্বাধীনচেতা, জেদী এবং আমি, আমার জীবন, সব কিছুর ভীষণ বিরোধী! গোপার মতো নয়।
—দাঁড়ান, সামন্তকে ফোন করি।
—সামন্তকে বলবে?
—ওখানকার পুলিশকে হাতে রাখতে হবে না? এটা অসম্ভব, ও গোপা নয়। কিন্তু রূপা যথেষ্ট কেচ্ছা বাড়াতে পারে।
—তুমি তা চাও?
—না চাই না।
—ঋষিকেও সঙ্গে নেব।
—কেন?
—রূপাকে ম্যানেজ করতে হলে ও পারলেও পারতে পারে।
সুজয় হঠাৎ বলে, গোপা মরে গেছে জানলে আমি তো হাঁপ ছেড়ে বাঁচতাম।
—এখানে বডি আনলে আমার সুবিধে হ’ত।
—যাঃ। আপনার বুদ্ধি নেই। বডি আনা হবে, তারপর বলবেন এ আমার মেয়ে নয়। তা কি হয়? রূপা যা বলছে সেটা সত্যি, এর ভিত্তিতে বডি আনা যায়। সামন্তকে জিজ্ঞেস করি।
—দেরি কোর না।
সুজয় খুব নাটকীয় ভাবে বলে, ও যদি গোপা হয়, তাহলে বিক্রমকে আমি ছেড়ে দেব না।
—ওরকম বেপট জায়গায় নিয়ে গোপাকে খুন করবে কে? কেমন করে?
—আমি কি করে জানব?
—বিক্রমের কথা ভুলে যাও সুজয়। নিজেদের কথা ভাবো। আমার কেন, কোনো ভদ্র পরিবারই এ রকম একটা কেচ্ছা এড়াতে পারে না। যে কোনো ভদ্র পরিবারই চাইবে মুখটা বাঁচুক।
সুজয়কে দুর্বোধ্য লাগে।
নিজেকে মনে হয় বৃদ্ধ ঔরংজেবের মতো অসহায়। দাক্ষিণাত্যে বসে বৃদ্ধ বাদশা মোগল সাম্রাজ্যের সূর্য অস্ত যেতে দেখতেন। ঠেকাতে পারেননি।
বসের মনে হয় ”নো” হবে না, ফার্মও নয়, যারা টাকা লগ্নী করেছে তারা হাত তুলে নেবে। তাছাড়া কেচ্ছা, কেচ্ছা কেলেংকারি।
গত কয়েক বছরে দেখা যাচ্ছে। মেয়েদের ব্যাপারে হোক, অন্য খুনের ব্যাপারে হোক, সন্দেহজনক মৃত্যুর ব্যাপারে হোক, যদি নামীদামী পরিবার যুক্ত থাকে, তাহলে কাগজগুলো মেতে ওঠে।
সুজয় কি মনের কথা পড়ে ফেলছে? ও হঠাৎ আদেশের সুরে কথা বলে কেন?
—ভয় পাবেন না। স্ক্যানডাল হলেই বা কি? কেচ্ছা হয়েছে বলে ধসে যায় যারা, তারা বোকা, শক্ত নয়। শক্ত থাকুন, ঠিক টিকে যাবেন।
—আমি…আমি হয়তো অত শক্ত নই।
—তা বললে কি এখন চলে? দাঁড়ান, সামন্তকে ফোন করি। ও আমার বন্ধু। সুপরামর্শ দেবে।
—আমি একটু চোখ বুজে বসি।
রূপার জন্যে কষ্টও হচ্ছে। আবার খুব অবাকও লাগছে। ওঁর তো চাপা পড়া কুকুর দেখলেও মাথা কেমন করে। কেউ মরে গেলে শ্মশানে যায় না। ওঁর মেয়ে হয়ে রূপা একটা পচ ধরা বডি নিয়ে ব্যস্ত ব্যাপৃত হয়ে আছে কেমন করে কে জানে।
সুজয়ও হঠাৎ যেন আত্মস্থ।
গোপার কথা বারবার মনে হচ্ছে কেন?
হঠাৎ কার গলা শুনে চমকে তাকান উনি।
জনৈকা মহিলা। পরনে ঢাকাই শাড়ি কপালে সিন্দূর নয়। পরনে ছাপা হালকারঙা শাড়ি। দু’চোখে যেন তীব্র জ্বালা হাতের ব্যাগ যথেষ্ট দামী।
ফোন নামায় সুজয়।
—আঃ। তুমি এ ঘরে এলে কেন?
—কেন তা জানো না?
—ইনি গোপার বাবা। ইনি আমার…
মহিলা বলেন। মাসতুত বউদি। আমি যাচ্ছি। এর পরের কথাবার্তা ভবেন বলবে।
—দুটোদিন বাদেই তো…
—ও নো। আমি আজকেই যাচ্চি কানপুর। কানপুর থেকে আর ফিরব না।
—হঠাৎ ভাইয়ের বাড়ি যাবে?
—হঠাৎই ভালো।
সুজয়ের ভাষায় ”অসহায়া” বিধবাটি বেরিয়ে যান। বসের দিকে কেমন যেন ইঙ্গিতভরা চোখে তাকিয়ে দেখে যান, অদ্ভুত।
সুজয় বলে। অদ্ভুত! মেয়েরা…
—এখন যাবে তো?
—চলুন।
—গোপার মা—র যে কি অবস্থা…
—যে মেয়ে তাঁর মুখ দেখত না, তার জন্যে হঠাৎ শোক করছেন না কি?
বস খুব আঘাত পান।
—মা তো।
—কি জানি। সম্ভবত উনিও অ্যাবনর্মাল। ওঁর জন্যে ভাববেন না। মেয়েরা আসলে খুব শক্ত হয়।
—চলো।
—বাড়ি যাবেন না তো?
—না না, সুপ্তি যেতে চাইবে।
—উনি চলুন। এটা তো সার্কাস। সবাই মিলেই যাওয়া যাক। ভাস্কর কোথায়?
—দিল্লীতে।
—সার্কাস মিস করল।
কালো চশমা পরে মুখের অর্ধেক ঢেকে সুজয় গাড়িতে ওঠে।
ঝাড়গ্রাম। ক’ঘণ্টা লাগবে কে জানে?
গাড়িতে উঠেই সুজয় ঘুমিয়ে পড়ে।
গাড়িতে সামনে বসে ঋষি। পেছনে বস ও সুজয়। ঋষি বুদ্ধি করে দু’বোতল খাবার জল এনেছে। সুজয় ঘুমোচ্ছে। বস চেয়ে আছেন বাইরের দিকে।
—আপনি খেয়েছেন?
—আমাকে বললে?
—হ্যাঁ।
—না, খাইনি।
—খড়্গপুরে টিফিন করে নিন।
—দেরি হয়ে যাবে।
—আধঘণ্টা দেরিতে এসে যাবে না কিছু।
হঠাৎ গাড়ি থেমে গেল।
—থামালে কেন মণ্ডল?
কথা না বলে ড্রাইভার নেমে যায়। পথের ধারে বসে। গাড়ি ও ড্রাইভার ঋষির অচেনা।
—একটা চেনা গ্যরাজ থেকে গাড়ি নিলাম। ভালো ড্রাইভার, গাড়ি নিয়ে হরদম এদিকে আসে।
খড়্গপুরে টিফিন করতে বস বেজায় বেগ পান। এমন সব দোকানে খেতে হবে তা কখনো ভাবেননি। মণ্ডল জানে না এরা কেন, কি কাজে যাচ্ছে।
ও যথেষ্ট মনোযোগে কষা মাংস, রুটি, পেঁয়াজ ও টক দই খায়। এ পথে ওর নিত্য আসা যাওয়া তা বেশ বোঝা যায়। কেন না হোটেল মালিক ওকে ওর স্পেশাল পান আনিয়ে দেয় এবং বলে, খড়্গপুরের ট্রিপ কবে?
—ও মাসে।
—এখানেই থেকো।
—তা তো থাকবই। খবর সব ভালো?
—চলছে।
—চলি।
—বাবুরা খেল না?
—কি জানি।
—মাংস কেমন লাগল?
—কেন, ভালো?
হোটেল মালিক গভীর সন্তোষে হাসে।
—কেশরী রেঁধেছে, কেশরী। বেটাকে কুক করে দিলাম। প্রোমোশান হয়ে গেল। মধুকে তো বিলাস ভাঙিয়ে নিল। নিক গে। আমাকে ল্যাং মারবে কে? কেশরী আছে, দয়াল আছে। এবার হোটেলে ভি. ডি. ও লাগিয়ে দেব। খাও, সিনেমা দেখো আরাম করো, সব হোটেল কানা করে দেব।
বেরিয়ে আসে ওরা। শেষ অবধি বসে কয়েকটি বিস্কুট ও চা খান। ঋষি চা সিঙাড়া খায়। সুজয় জেগে গেছে। তবু নামে না।
ঋষি বলে, বাথরুমে যাবেন না?
—এখানে বাথরুম?
—যাক, রাস্তায় যাব, সিগারেট?
—আমি খাই না।
—মদও খান না?
—না।
—মনের জোর আছে মশাই।
—ধরে ছাড়তাম, মনের জোর আছে বলতাম। আমি তো ধরিই নি।
—কেন? আপনিও অ্যাবনর্মাল?
—কত লোকই তো খায় না।
সুজয় হঠাৎ বলে, আগে খেতাম না। ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল বক্সার হব। যে কোনো স্পোর্টসে সিগারেট, মদ, না খেলেই ভালো। বক্সার হলাম না। কিন্তু এখনো ডান হাতটায় প্রচণ্ড জোর। দুহাতে চাপ দিলে হয়তো আপনার মাথা গুঁড়িয়ে দিতে পারি। সামনে একটা ভালো কেরিয়ায় ছিল। পাটনায় ওস্তাদ রেখেছিলাম।
ঋষি একটু অবাক হয়। না, ঝাড়গ্রাম কাছে আসছে যত, তত বিচলিত হচ্ছে সুজয়।
—এটা সার্কাস হচ্ছে, জানেন? মেয়েটা, গোপা নয়। সে তার ব্যাঙ্ক কেরানীর সঙ্গে ভেগে গেছে, অথচ গোপাকে সনাক্ত করতে যাচ্ছি, এ মাইরি কাফকা।
বস উঠে পড়েন। গাড়ি চলে।
—আমরা বাস রুটে এলাম না কেন?
—খড়্গপুরের পথেই ভালো।
—কোম্পানির গাড়ি পথে অ্যাকসিডেন্ট করল সেদিন মেচেদায়। এখন ক’দিন…
—তুমিই করলে?
—বাচ্চা ছেলে হঠাৎ এসে পড়ল পথে। ও রাস্তায় অ্যাকসিডেন্ট করলে…. আমি বেরিয়ে গেলাম অবশ্য।
বস ঘেমে ওঠেন।
—অ্যাকসিডেন্ট কোর না ভাই।
—পরপর তিন দিন তিন রাত গাড়ি চালালে…. কোম্পানি তো বোঝে না….
সুজয় চোখ বোজে।
কোথায় কোথায় ভুল হয়েছে? গোপার ভাবগতিক দেখে বুঝতে ওর কি বাকি ছিল? গোপা হঠাৎ অত স্বাধীন। অত নিজের মতো হয়ে যাচ্ছিল কেন?
সাবধান তো গোপা হতে চায় নি? খাতা টেবিলেই থাকত। ডিভোর্স করব? ডিভোর্সই ভালো। এমনি চলে যাব? কেন যাব? জানিয়ে যাব।
বিক্রম কেন এমন সব কথা বলে?
গোপা, যার অতীত এমন কলঙ্কিত, এই এক ছোকরার সঙ্গে ভাগছ, এই ঘুমের বড়ি খাচ্ছ—তারপরেও তোমায় বিয়ে করেছি, ধন্য হয়ে যাও, বিনত বিনম্র হয়ে থাকো। জানাচ্ছি যে আমাদের বিয়েটা সুবিধার্থে বিবাহ। তোমার সুবিধে নয় গোপা। আমার এবং তোমার বাবার সুবিধার্থে।
বসের সঙ্গে ব্যবসার ব্যাপারে একটা সম্পর্ক হওয়া আমার দরকার ছিল। তুমি জানো না। আমাদের পরিচয় এবং কাজের ব্যাপারে যোগাযোগ ছিলই। বুঝেছিলাম এ লোক একেবারে মাফিয়া। কারবার হস্তগত করে আমাকে বাতিল করা ওর কাছে নিমেষের খেলা।
তাই চেয়েছিলাম জামাই হতে। জামাই শ্বশুরের ওপর ওপরহাত নিতে পারে। নিয়েছি, নিয়েছি। এ দরকার সে দরকার বলে কয়েক বারে পাঁচ—দশ করে আশি হাজার টাকা নিয়েছি।
বাপকে তুমি দোষ দিতে পার না। বাড়ি বাড়ি পালানো, আত্মহত্যার চেষ্টা করা তোমার জন্যে বাপের মুখ পুড়েছে বারবার। তারপর সুযোগ্য আমির সঙ্গে বিয়ে দিয়ে উনিও তোমার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রত্যাশা করেছেন, যা স্বাভাবিক। মেয়েছেলের অত বাড়াবাড়ি কে সহ্য করবে?
আমাকেও তুমি দোষ দিতে পার না। তোমায় বিয়ে করেছি এটাই যথেষ্ট। মাসতুত বউদি রিমকির সঙ্গে আমার সম্পর্ক তুমি মেনে নেবে, কেন না তোমার অতীত কলঙ্কিত।
দিব্যি থেকে যেতে, যেমন ছিলে। চমৎকার চলছিল সব।
রিমকি, আমার মেয়ে মোম, আমি।
আমি এবং তোমার বাবা।
কিন্তু তুমি তো সব এলোমেলো করে দিলে। চুপ করে থাকতে, আমি ভাবতাম তুমি সব মেনে নিয়েছ। মদ খেতে পারতে, ড্রাগ ধরতে পারতে।
না, বসে বসে তুমি ব্যক্তিত্ব অর্জন করলে। হঠাৎ হয়ে গেলে স্বাধীন মুক্ত। কোথায় যাও। বেশ যাও, কার সঙ্গে ঘোরো, তা লুকোবার চেষ্টা করলে না। কোনোদিন দেখিনি পাপ ঢাকার চেষ্টা। ফিরছ, একা খেয়ে নিচ্ছ, দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ছ।
হাতে বই, টেবিলে ক্যাসেট বাজছে।
ভারতীয় মার্গ সঙ্গীত।
সার্ভিস রিপোর্টটা দেখাতে তোমার ব্যবহারটা কেমন হল?
—আশ্চর্য! এ জন্যে গোয়েন্দা কেন? আমি তোমায় যে কোনো দিন বলতাম।
—তোমার আর কোনো বক্তব্য নেই?
—বক্তব্য? হাসালে সুজয়। আমি কি তোমার কাছে ক্ষমা চাইব ভেবেছিলে?
—চাওয়া উচিত।
—আর কি কি উচিত?
—বেসনে ছাড়ো। ছেলেটাকে ছাড়ো।
—ছেলেটা। বেচারা বিক্রম। আমি ”হ্যাঁ” বললে ও তো এখনি রাজী।
—তার মানে?
—খাতাটা খুলে দেখ। প্রত্যেকদিন লিখি। ডিভোর্স করব। ডিভোর্সের চিঠি পাবে। কিন্তু সুজয়। আমি চাইনি যে বিক্রমের জন্যে তোমায় ডিভোর্স করি। আসলে তুমি আর বাবা। তোমাদের দাবার ঘুঁটি হয়ে থাকব না বলেই ডিভোর্স করব। নো বিক্রম, নাথিং।
—বিশ্বাস করি না।
—ডিভোর্সের পর, কোনোদিন মন চায় তো ওকে বিয়ে করব, নইলে করব না।
—এত জোর তুমি পাচ্ছ কোত্থেকে?
—নিজের মধ্যে থেকে। সেদিন যদি জোর পেতাম, তাহলে আজ আমার এ পরিণতি হয়?
—গোপা! যথেষ্ট হয়েছে।
—এবং রিমকির সঙ্গে তোমার সম্পর্কটাও এবার এসপার ওসপার করা দরকার।
—তার মানে?
গোপা তির্যক হেসে বলেছিল, বেচারা তুমি! দুটি মহিলার কাঁধে চেপে একবিংশ শতকের দিকে দৌড়চ্ছিলে। আমি তো আর পারছি না। রিমকিও তার ঘোর কাটিয়ে উঠেছে। অ্যাটর্নি ভবেন দত্তকেও বৈষয়িক ব্যাপারে পরামর্শদাতা ঠিক করেছে। ভবেনের কথা শোনার পর ও নিজের বিষয় বুঝে নেবার জন্যে তোমার সঙ্গে বোঝাপড়া করবে।
—তুমি জানলে কোত্থেকে?
—বলব না।
আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছিল গোপা। তারপরেই তুমি চলে গেলে।
পালাতে পারলে?
এক মাস তোমাকে খুঁজেছি জগৎকে জানিয়ে।
এক মাসে রিমকি চাবুক হাঁকড়াচ্ছে।
রিমকিকে তুমি চিঠি লিখতে গেলে কেন? কোন সততাবোধে? কি রকম নির্বোধ মেয়ে তুমি?
ওকে না লিখলে কে জানত তুমি কোথায় আছ। রিমকিকে লিখে আমার সর্বনাশ করলে কেন?
রিমকি যদি আজ ওর স্বামীর টাকা পয়সার হিসেব বুঝে নিতে চায়।
সো সরি গোপা! দাবার ঘুঁটি হয়ে বহু মেয়ে বেঁচে থাকে, মরে যায়। সেদিকেই পাল্লা ভারি।
”মানব না, সইব না, সমান অধিকার চাই।” ওদিকে পাল্লা খুবই হালকা।
কে শুনবে ও সব কথা? কে দেবে সমান অধিকার? পার্লামেন্টে বিল পাশ হল না। শাহবানু মামলা কি টিকল?
এ রকম চলছে, চলবে।
তুমি সহজ সত্যিটা দেখলে না?
হঠাৎ হয়ে উঠলে আলাদা মানুষ, রিমকিকেও তাই হতেই বললে। এ কথাও লিখলে, সুজয়কে জেরক্স কপি দেখিও, যদি দেখাতে চাও। আসল চিঠি গোপনে রেখো। বলা যায় না, কবে তোমারও দরকার হবে চিঠিটার।
রিমকি যদি চিঠিটার কপি না দেখাত।
ঝাড়গ্রাম শালবনী, পিঠাডিহা, বনকাপাসী, তিতাকুড়া, কত জনপদ, কত মানুষ।
গোপা, গোপা, এ কি করলে।
নিজের প্রতি করুণায় নিজের জন্যে চোখ দিয়ে জল নামে সুজয়ের।
বস ওকে বললেন, কেঁদো না।
—যদি….
—হতে পারে না।
ঋষি চুপ করে থাকে এবং লোডশেডিংয়ে নিষ্প্রদীপ ঝাড়গ্রামে গাড়ি ঢুকে যায়। মণ্ডল বলে কোথায় যাব?
সুজয় বলে থানা।
বস বলেন, রূপার খোঁজ আগে নিই।
—নিন। আমি থানায় থাকছি। সেখানে না পেলে এস.ডি.পি.ও—র বাড়ি যাবেন।
অরবিন্দ সেনের বাড়ির নাম ‘স্বাগতম’! বাড়ির নাম ”শালবীথি” বা ”কৃষ্ণচূড়া”ও দেওয়া যেত। বাড়ির প্রশস্ত হাতায় অনেক শাল, অনেক কৃষ্ণচূড়া। যে সব গাছের যত্ন করতে হয় সে সব গাছ এখানে নেই। বাড়িটি অনেক কালের। কবে কেনা, কে জানে।
বাড়িটি পেপার মিল ছাড়িয়ে। মণ্ডল বলে, আমি ঘুরে আসছি।
বস বলেন, না না।
—আমাদের যদি যেতে হয়…
—দেখুন।
এখানে হোটেল আছে?
—নিশ্চয়।
—ঋষি, দেখ তো।
বারান্দায় চেয়ারে চিনু। বেসনের ছেলে এবং রূপার বন্ধু।
—চিনু!
—ঋষিদা!
—রূপা কোথায়?
—আসছে। অনেক বলে কয়ে একটু শুইয়ে রেখেছি। আপনাদের জন্যেই বসে আছে ও।
—তোমাদের জীপ?
—রূপা অন্যদের কলকাতা পাঠিয়ে দিল। ওদের ব্যাপার নয়, আটকাতে চাইল না।
রূপা বেরিয়ে আসে। ভীষণ রুক্ষ, শুকনো চেহারা। মুখ চোখ যেন অন্যমানুষের।
—ঋষিদা, তুমি?
—এলাম।
—একলা?
—না, তোমার বাবা, সুজয় এসেছেন।
—ভালো, চলো।
—কোথায়?
রূপা নিশ্বাস ফেলে।
—মর্গে। এত দেরি হচ্ছে যখন, তখনি বুঝেছি যে কলকাতায় খেলা চলছে। চলো। নির্দেশ এসে গেছে। এঁরা আসার পরেই যেন ছবি তুলে রেখে লাশ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। লাশ রাখাও যাবে না। পচে ঢোল হয়ে উঠেছে।
—আগে ছবি তোলে নি?
—না।
রূপা চিনুর দিকে চায়।
—চিনু, রবি চলে গেছে?
—হ্যাঁ হ্যাঁ, স্টীলে গেল।
যেন খুব নিশ্চিন্ত হল রূপা। বাবাকে একবারও না চিনেই গাড়িতে উঠে বসল।
—চিনু, তুই থাক।
—তুই এখানেই ফিরবি তো?
—নিশ্চয়। ঋষিদাও থাকতে পারো।
গাড়িটি চলে মর্গের দিকে। সব মর্গের মতো এ মর্গও একটি নরক বিশেষ। কবে এ শহর শালপত্রমর্মরিত শান্ত সুন্দর ছিল, তা এখন জানা যায় না।
হ্যাজাক উজ্জ্বলিত একটি শবদেহের পায়ের বুড়ো আঙুলে ছোট কাগজ বাঁধা। অর্থাৎ শবচ্ছেদ হয়ে গেছে। শবদেহটি সামনে রেখে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে সুজয় সিগারেট খাচ্ছে। দারোগা বা এস. ডি. পি.ও বেশ সহজ গলায় বলছেন মিস বোস পোস্টমর্টেম করতে অত জোর না দিলেও আমরা করি। আজকাল জানেন তো। একটু সন্দেহজনক মৃত্যু হলেই ময়না তদন্ত করা হয়। এক ছেলে বুড়ো বাপকে পুড়িয়ে গেল, আরেক ছেলে কেস করল। মৃত্যু সন্দেহজনক। বিনা ময়নায় লাশ জ্বালানো হল কেন।
রূপা এগিয়ে আসে।
—ছবি তুলেছেন?
—নিশ্চয়।
—পোস্টমর্টেম রিপোর্ট?
—আগে এঁরা সনাক্ত করুন। আর নিয়ম মতে, মৃতের পার্টি, যে মৃতকে দাহ করছে তেমন কেউ কিছুদিন বাদে থানা থেকে রিপোর্ট নেবে।
রূপা ঋষির হাত শক্ত করে ধরে। রূপার হাত শুকনো, গরম, ঋষির গায়ে যেন ছ্যাঁকা লাগে।
—এঁদের দেখান।
এ সময়েই আলো জ্বলে ওঠে। রূপা, সুজয়, বস এগিয়ে যান। ঋষিও এগোয়।
ডোম ঢাকনা সরায়।
বসের চোখ বিস্ফারিত, নাকে মুখে রুমাল। সুজয়েরও তাই। যে লোক কুকুর চাপা পড়াও দেখতে পারেনা তার পক্ষে বড়ই ভয়ানক এ দৃশ্য।
ঋষি অনেকবার না হলেও বার কয়েক মর্গে গেছে। সেন্ট্রাল ক্যালকাটা মর্গে ভোর থেকে লাশ কাটা শুরু। কাঁটাপুকুর বা মোমিনপুরে দুপুর থেকে। শুনিলাম লাশকাটা ঘরে তারে … শুনলেই দৌড়াতে হয়। দিন পরে যায় দিন ….. পরশুর আগের দিন সকালে আবিষ্কার হয়েছিল কোনো এক রমণীর দেহ। মফঃস্বলের বার্তা কলকাতায় আসতে সময় যায়। কলকাতায় সবসময়ে তেমন গুরুত্বও পায় না।
কেননা সন্দেহজনক মৃত্যুর লাশ। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে একান্ত সুলভ। যেখানে চাও সেখানে পাবে। কত মানুষ কত জায়গায় কত জানা অজানা কারণে ”সন্দেহজনক মৃত্যু” হয়ে যায়।
কাঁটাপুকুর, কত সে দূর। কাঁটাপুকুর, মোমিনপুর। রোদেপোড়া বারান্দায় কাঁচের বয়ামে কত শবদেহের ভাইটাল অর্গানস পড়ে থাকে। পড়ে থাকে, এখানে কি হয়? ঋষি কলকাতায় পুলিশ রিপোর্টার ছিল।
—দেখুন।
মাথা থেকে চেরাই হয়েছিল। পেটেও। সর্বত্র দলাদলা রক্ত! মুখ কোনো মানুষীর নয়। মাথা অদ্ভুতভাবে হেলানো।
পুলিশের নৈর্ব্যক্তিক অদেহী গলা।
—দেখলে বোঝা কঠিন। কিন্তু উচ্চতা পাঁচফুট তিন ইঞ্চি, মানে মিটারে।…..
—থাক। বোঝা যাচ্ছে।
—আমাদের তো ঠিক ঠিক বলতে হবে সার। কাঁটাজুড়ি ঝাড়গ্রাম থানার আন্ডারে… পায়ের আঙুলে চুটকি ছিল…
রূপা বলে, কখন? আমি যখন আসি তখন ছিল না। হঠাৎ চুটকি আমদানি করল কেন?
রূপা কোনো আমল পায় না।
—সনাক্তের কোনো চিহ্ন বলতে পেটে অপারেশনের দাগ … আর …মুখের ডান দিক পরিষ্কার … বাঁ দিক অত্যন্ত জখম ছিল … রং ফর্সার দিকে …
প্রায় জোড়া ভুরু, চাপা কপাল, ঘন চুল, কিন্তু মৃতদেহ মৃতদেহের নিয়মে প্রথমে নরম থেকেছে, পরে শক্ত হয়েছে, তারপর আবার নরম হয়েছে, পেট ফুলেছে, সারা শরীরে পচ ধরেছে, চেনা বড় কঠিন।
চেনা বড় সোজা।
বস কোনো অভিনয় করেন না। এই বীভৎস, মুখের একপাশ থেঁতলানো। কাটা ছেঁড়া সেলাই করা রমণী তাঁর গোপা নয়। গোপা নয়। এমন বীভৎস পরিণতি তার হতে পারে না।
—না। গোপা নয়।
—বাবা!
—না, না, না! তুমি আমাকে কি দেখাতে ডেকেছ। কেন ভেবেছ, আমার গোপা, আমার গোপা…
বস বেরিয়ে আসেন। টলতে টলকে বসে পড়েন। ঋষি রূপার হাত ছাড়িয়ে ওঁকে ধরে।
সুজয় পরিষ্কার গলায় ঘোষণা জানায়।
—এ আমার স্ত্রী গোপা নয়।
রূপা আর সুজয় এ—ওর দিকে তাকায়।
রূপা আর ও. সি. পরস্পরের দিকে তাকান।
রূপার গলা শান্ত।
—এখন দেখে চেনা খুবই কঠিন। কিন্তু আমি যখন এসেছিলাম, তখন বডি অনেক অন্যরকম ছিল অফিসার?
—ছিল।
—আমি বলেছি, এটা আমার দিদি?
—বলেছিলেন, তবে যথেষ্ট বিচলিত ছিলেন।
—পোস্টমর্টেমে কি পেলেন আপনারা?
—মাপ করবেন। এ ভাবে…
—অলরাইট।
ও. সি. বলেন, আপনারা বলেছেন ইনি আপনার স্ত্রী, আপনার মেয়ে নন?
—না, গোপা নয়।
—না, গোপা নয়।
রূপা বলে, আমি বলছি ও দিদি। আমার কথাটাও নোট করে নেবেন। না কি, ভোটে হেরে গেলাম?
ও. সি.—তবে আপনারা যেমন বুঝবেন।
রূপা—রিপোর্ট?
ও.সি. ঈষৎ করুণার চোখে তাকান।
—এটা আপনার দিদির বডি হলে নিশ্চয় রিপোর্ট চাইতে পারতেন। এখন, যে লাশের কোনো দাবীদার নেই, তার ক্ষেত্রে লাশ দাহ হবে। নিয়মতো লাশের ছবি কাগজে ছাপা হবে।
—আপনাদের তোলা ছবি তো পচা লাশের।
—আমরা নিয়ম মেনে চলব ম্যাডাম।
—ধন্যবাদ।
বস গলা সাফ করে বলেন, রূপা! রূপা!
—কি আশ্চর্য। ও তো তোমার মেয়ে নয়। অজানা অচেনার জন্যে কাঁদছ কেন?
ঋষি ওকে বলে, চলো রূপা।
—কোথায় যাবে রূপা?
—আমি যেখানে ছিলাম সেখানেই যাব।
—আমাদের সঙ্গে হোটেলে চলো। সেখান থেকে কাল একসঙ্গে বাড়ি যাবে। তোমার মা অত্যন্ত বিচলিত, অত্যন্ত ভাবছেন!
রূপা আস্তে বলে, মা যদি আটাশ বছর আগে থেকে ভাবতে শুরু করতেন।
ঋষি দেখে রূপা চলে যাচ্ছে।
ও এগিয়ে যায়।
—রূপা!
—ঋষিদা!
—ওঁদের হোটেলে রেখে আসি, তারপর তোমার সঙ্গে যাব। তুমিও এসো।
—রূপা হোটেলে যাবে। বাড়ি ফিরবে।
—ধন্যবাদ সহ ”নো” বাবা! না ঋষিদা, আমি একটা রিকশা নিয়ে চলে যাচ্ছি। তুমি আসতে হলে এসো, যা মনে করো।
—একা যাবে?
—দুদিন তো তাই যাচ্ছি।
অন্ধকার বনচ্ছায়ে (এখানে শালবন) শুকনো পাতা মাড়িয়ে রূপা চলে যায়। এত শুকনো পাতা কে ছড়ায়, কারা ছড়ায়, পাতা পায়ে দলে রূপা যাবে বলে?
—রূপা!
বস ধমক দেন।
—দেখুন, ওর ওপর দিয়ে ভয়ানক ধকল গেছে। ওকে ধমকাধমকি করবেন না। যেতে দিন, আমি তো যাচ্ছি, কাছেই থাকব।
ও.সি. একটু সদুঃখ হাসেন।
—মিস বোস তো ”বেসনে”র কাজে ঝাড়গ্রাম হয়ে হরদম যাওয়া আসা করেন। খুব ফাইন লেডি। এবার একেবারে কি যে হল।
সুজয় বলে, চলেন।
—অগত্যা তাই হোক।
অনেক বৃদ্ধ, অনেক ভগ্ন একঘণ্টাতেই। ওঁদের হোটেলে পৌঁছে দিয়ে ঋষি দেখে, ঘরের কথা হোটেলে ও.সি. বলেছেন।
—আপনারা বিশ্রাম করুন।
—তোমাকে মণ্ডল পৌঁছে দিক।
—না, না, উনিও বিশ্রাম করুন। আপনি ভাই, থাকবেন কোথায় রাতে?
”ভাই” বললেও নরম হয় না মণ্ডল।
—ঝাড়গ্রামে আমার থাকার জায়গা আছে। গাড়ি নিয়ে কখন আসব সেটাই বলুন।
—ভোরে আসুক সুজয়?
—হ্যাঁ হ্যাঁ, যত তাড়াতাড়ি হয়।
মণ্ডল বলে, সাতটার আগে হবে না। টাকা দিন। খাব—টাব তো, আমরাও তো মানুষ।
—নিশ্চয় নিশ্চয়।
মণ্ডল ঋষিকে বলে, চলুন চেনা রিকশা ধরিয়ে দিই।
—বেরিয়ে এসে হাঁটতে হাঁটতে মণ্ডল বলে, উনি কে, লম্বাপানা?
—সুজয় মিত্র।
—অ। সবুজ অ্যামব্যাসাডর?
—তা হবে। কেন?
—এমনি। যাক গে। বড় ঘরের বড় ব্যাপার। এই রিকশাটা নিন। এই সাধন, বাবুকে নিয়ে যা।
—না, আমি লেশায় আছি।
—ধুর বাবু, তোর ঘর তো ওদিকে। ইনি মুরগা লড়াই বাড়ি যাবে।
—চলেন বাবু।
—বাঃ, আপনি তো চেনেন সব।
—তা চিনি।
—মুরগা লড়াই বাড়ি?
—সে বাবুর বাড়ির পিছনে মুরগা লড়াই হত। বাড়ির নাম হয়ে আছে মুরগা লড়াই বাড়ি। এই সাধন, গোকুল গ্যারাজে আছে?
—আছে। বুতল লিয়ে বসে আছে। যাও বাবু। লেশা কর, হরবকত টিপ মারছ, যাও!