২
এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুম থেকে ওঠায় ঋষি রুদ্রকে। ”ছুটির দিন বাবা”!
—এবার উঠে পড়ো।
—তুমি বেরোচ্ছ?
—হ্যাঁ, এবারে স্নান, খাওয়া, তারপর সারাদিন তো কুশলদের বাড়িতে হইচই।
—কমল কাকু যাবে না?
—কমল কাকু বাজার করবে। ঠাম্মাকে দেখবে। আর বিকেলে তোমাদের মেট্রোতে চাপিয়ে আইসক্রিম খাইয়ে আনবে। তোমরা যখন ফিরবে, ততক্ষণে আমি এসে গেছি।
—আমাকে পদান্বয়ী অব্যয় শিখিয়ে দেবে না?
—দেবো। সন্ধেবেলা।
—বাংলা মিসকে তো জানো না। রোজ আমার হোমটাস্ক ক্যাঁচকুচ করে কেটে দেয়।
—শিখিয়ে দেব।
—তুমি জানোই না।
—দেখই না।
ছেলের জন্যে ঋষিকে এখন উঁচু ক্লাসের বাংলা ব্যাকরণ নিয়ে বসতে হচ্ছে। বাংলা অব্যয় যে কি, কত যে তার ভাগ। সে সব ও ভুলে গিয়েছিল।
ছেলের জন্যে ওর কষ্টও হয়। এই বয়স। এত পড়ার চাপ, এত বইয়ের ভার!
এক সময়ে ওর খুব জেদ ছিল রুদ্র প্রতি বিষয়ে অনেক নম্বর পাক। তারপর ক্রমে ক্রমে সে জেদটা কেটে গেছে। পড়াশোনা করুক, যেমন হয় হবে। অসম্ভব বইসর্বস্ব পণ্ডিত হয়ে হবেটা কি? শেষে সব বিষয়ে প্রথম হতে পারলাম না বলে মন ভেঙে যাবে। কি না কি করে বসবে।
ঋষির ক্রমেই বিশ্বাস হচ্ছে, বর্তমান সময়টা একটা চক্রব্যুহ। স্কুলে না ঢুকতেই ছেলে মেয়েদের ওপর ভীষণ চাপ। ভয়ংকর রকম ভালো তোকে হতেই হবে। কেন না তোদের যৌবনকালে এ দুনিয়া দেখবি এক ভীষণ রণক্ষেত্র। জয়ীরা ছাড়া কেউ টিকতে পারবে না। জানার জন্য পড়িস না। রেজালটের জন্যে পড়বি। হিসেব করে পড়বি।
জিততে না পারলে দেখবে দুনিয়ার সব দরজা বন্ধ। ছাত্র ছাত্রীদের রোবট করে ফেলছে এই শিক্ষাব্যবস্থা।
না, ওই অসম্ভবের প্রতিযোগিতায় রুদ্রকে নামাবে না ঋষি। রুদ্র স্বাভাবিক সম্পূর্ণ মানুষ হোক। দারুণ রেজালট, বিরাট পণ্ডিত, কিংবা মস্ত বক্সওয়ালা, এদের সঙ্গে দেশ ও মানুষের কোনো যোগ থাকে না।
—বাবা।
—কি রুদ্র?
—তুমি তো নতুন আপিসে যাবে।
—যাব তো।
—আমাকে হোমটাস্ক কে করাবে?
—দেখা যাক। তুমি ভেবো না।
রুদ্র তৈরি হতে হতে নলিনী এসে দাঁড়ায়।
—বা বা। ছেলের সারাদিন নেমন্তন্ন। বাপও তো চললেন। সারাদিন হবেটা কি?
—কমল বাজার করে দেবে।
—রেশনও আসবে আজ।
—রানীদি আসবে না?
—আসবে।
—টাকা নাও।
—মাকে চান করাব না আজ। গা মুছে মাথা ধুয়ে দেব। কাল সর্দি হয়েছিল।
—ওষুধটা ঠিক মতো দিও।
—দেব, দেব।
—আমি কিন্তু বাড়িতে খাব।
—তোমাকে বিশ্বাস নেই দাদা। খাবার সময়ে এসে যাও তো নিমেষে ভাত করে দেব। যেদিন বলো ”খাব”, সেদিনই তো খাও না।
—টাটকা পাবদার ঝোল! শুনিয়েই গেলে।
—কি দাম! কি দাম!
—যাক গে। ভালমন্দ রেঁধে তোমরাই খাও।
—এখন এসো। বাপ ব্যাটা খেয়ে উদ্ধার করো। লুচি ভেজেছি। আলু ভেজেছি…
—নলিনী পিসি, গুড় দেবে না?
—নিশ্চই দেব। তোমায় দেব না তো কাকে দেব? তুমি হলে বাড়ির কর্তা। চলো তো, খেয়ে নেবে।
জীবনে ক্ষত যত, ক্ষতি তত, আবার ক্ষতিপূরণও হয় নানাভাবে। মা অসুস্থ, প্রেমজা চলে গেল। নলিনী, রানী, এরা যে স্নেহ যত্ন করে, বাড়ি দেখে, মাকে আর রুদ্রকে দেখে, এটা কি কম পাওয়া?
”ওখানে ওই টাকায় কাজ করছ? এখানে এসো। এত টাকা দেব”, এমন কথা বলার লোক এ পাড়াতেই আছে। সব পাড়াতেই থাকে ঝি—শিকারীর দল। একটি মেয়ে কাজ শিখে তৈরি হল তো আরেকজন তাকে ভাঙিয়ে নিল।
কাজের মেয়েদেরও বেশি টাকা দরকার। কাজ করতে গিয়ে তারা বিপদেও পড়ে!
নলিনী আর রানীকে ভাঙানো যায়নি।
—না বাবু! গিন্নি পড়ে থাকে। বাড়িতে মেয়েছেলে নেই। ইচ্ছে স্বাধীনমতো থাকি! দাদা তো সংসারটা আমাদের হাতেই ছেড়ে রেখেছে। মাইনে পোস্টাপিসে জমিয়ে দেয়। কিছু টাকা বেশি পাব বলে বেইমানি করব? মিহিন কাপড় পরি। সিনেমাও দেখি। পান দোক্তাও খাই, সব দেয়। অসুখে পড়লে পয়সা দিয়ে ওই অধীর ডাক্তারকেই দেখায়।
ঋষির মার আমলের লোক ওরা। ঋষির বিয়ে দেখেছে, প্রেমজার মৃত্যু দেখেছে, রুদ্রকে মানুষ করেছে। ওদের মধ্যে ব্যাঙ্গমা—বেঙ্গমীর মতো কথা হয়।
—দাদা যদি বিয়ে করত রানী!
—সংসার ভেসে যেত।
—কিসে?
—সে বউ সতীনপোকে যদি না দেখত?
—তা বটে। তবে বেটাছেলে, এই বয়স!
—বিয়ে করতে চায় না। নইলে বিয়ের কথা তো কম জনা বলেনি।
—ছেলেটা হেনস্তা হত।
—আমাদের হাতে কর্তাত্তি থাকত না। নতুন বউ গিন্নি হত। আমাদের দেখতে হত আর সইতে হত।
—হ্যাঁ। এখনকার মেয়েরা কি আর…
—সতীনপো আর সৎ—মা! দূয়ে মেলে না গো। আমার সৎ ছেলে যদ্দিন আশা করত, মা টাকা দেবে, আমি ভ্যানরিক্সা কিনব। তদ্দিন আসত। যখন বুঝল আমি হাত উপুড় করব না, সেই থেকে আর আসে না।
নলিনী বলে, তোরও কপাল! নিজের একটা হল না! আর আমি তো মহারানী। এক সোমবারে বিয়ে, আর সোমবারে বিধবা। মা বাপ বলত অলক্ষ্মী। শাশুড়ী বলত অলক্ষ্মী। না বাবু, খেটে যখন খাব, আর কারো ধার ধারি না।
—দাদার মতো মানুষ! এত দুঃখ কপালে ছিল। যেন সেদিনের কথা মনে হয়। বউদি এসে ওইখানে দুধআলতায় দাঁড়াল। আমাদের সব বুঝিয়ে দিয়ে ভাঁড়ারের চাবি দিয়ে নার্সিংহোমে গেল। যাবার কালেও পানটা মুখে দিল।
ঋষি বলে একটা টান পাড়াতেও আছে। তার কারণ এ পাড়াটায় এখনো বাইরের মানুষ ঢুকে পড়েনি। একটু জায়গাও নেই যেখানে বহুতল বাড়ি ওঠা সম্ভব। সাধারণ মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, দোকানী, বাস ড্রাইভার, গোয়ালা, এরাই থেকে গেছে। কোনোদিন কলকাতা আমূল বদলালে এ পাড়াটা হয়তো মিউজিয়াম পীস হয়ে থাকবে।
এ পাড়ার কেন্দ্রবিন্দু দুটি। একটি হল প্রাচীন শীতলাতলা। বারোমাস পুজো চলে। শীতলার গাধার চোখ দিয়ে জল পড়লে ভিড় বেড়ে যায়। চুনী কাহারের বউয়ের উপর শীতলা চৈত্রমাসে ভর করেন। তখন চুনী কাহারের বউ দেবীর অংশ হয়ে যায়।
আরেকটি কেন্দ্রবিন্দু এ পাড়ার প্রাচীন ক্লাব। ক্লাবটি চিরকাল ”তরুণ সংঘের” হাতে আছে। সব জায়গার মতো এখানেও ক্লাবটি দখলে আনার জন্য রাজনীতিক দলের মধ্যে লড়াই চলেছে। বর্তমানে ক্লাবের নীতি সহাবস্থানের।
সকলকেই তরুণ বলা চলে না। নৈশ বিদ্যালয়ে আসে প্রৌঢ়রাও, পড়ায় যুবকরা। প্রায়ই ধরে মেরে পোড়ো আনতে হয়।
ক্লাব প্রাঙ্গণে খেলাধুলার আসরে ছোট থেকে তরুণদের ভিড় এবং পাঠ্যপুস্তক পাঠাগারে ভিড় পোড়োদের। ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এ পাড়ার বড় বস্ত্র ব্যবসায়ী চাঁদমোহন বাবু। তাঁকে চটাতে চায় না কেউই। ব্যবসায়ী বললে হবে না। তাঁর পরিবারই পশ্চিমবাংলার ফুটবলে দুটি বড় খেলোয়াড় উপহার দিয়েছিল। যদিচ তারা বসে গেছে, তবু গৌরব কি যায়?
ঋষি ক্লাবের উৎসাহী সদস্য ছিল। দুর্গাপূজার স্মারণিক ওই সম্পাদনা করত। পাঠ্যপুস্তক পাঠাগারে একজন উদ্যোক্তাও ঋষি। এখন রুদ্র ক্লাবের মাঠে খেলতে যায়। রুদ্র মোহনবাগান সমর্থক। কুশল ইষ্টবেঙ্গলের। এবং বড় ম্যাচের দিন ওদের বচসা শোনার মতো।
ঋষি আজও সাধ্যমত পাড়ার সুখদুঃখে থাকে। কার রেশন কার্ড হচ্ছে না, কাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে, পাবলিক কলে কেন জল নেই, এসব নিয়ে সাধ্যমতো ছোটাছুটি করে।
মায়ের অসুস্থতা, প্রেমজার মৃত্যু, ছোট্ট রুদ্রকে মানুষ করা। কমলকে আশ্রয় দেওয়া। মাসিমাদের ভাড়া না বাড়ানো, এসব কারণে ঋষির ওপর পাড়ার সহানুভূতি একটা আছেই। ক্লাবের খাতায় ওর নাম পরামর্শদাতাদের মধ্যে। সেক্রেটারি ভোঁদা রুদ্রকে বলেছে, বারো বছর বয়স হলেই পুজোতে রুদ্র স্বেচ্ছাসেবকের ব্যাজ পাবে।
ভোঁদা এখনো কাজ পায়নি। চেষ্টা চালাচ্ছে। সম্প্রতি ও বিজ্ঞান—চেতনা আনার জন্য খুব ব্যস্ত। ব্যস্ত পাড়ার কুসংস্কার কাটাতেও।
—শীতলাতলায় যখন চুনী কাহারের বউয়ের ভর হয়, লোকের ভিড় দেখেছ?
—দেখেছি।
—এ সব কাটাতে হবে।
—কি করবি?
—প্রগতিশীল ফিলমোৎসব করব।
—ওরা ”দামুল”ও দেখবে, ওখানেও যাবে। যোগবিয়োগ হতে হতে একদিন হয়তো…
—আসলে পাড়াটা বেজায় আদ্যিকেলে।
—সেজন্যেই শান্তিতে আছ। বহুতল বাড়ি আর লাকসারি দোকানে ভরে গেলে কেউ চিনত না।
কয়েক বছরে কমলও পাড়ার লোক হয়ে গেছে। ঋষি ভাবতেও পারে না পাড়া ছেড়ে কোথাও থাকবে।
কমল বাজার বুঝে নেয়।
—সাত সকালে দৌড়চ্ছ?
—বসের টেলিফোন।
—বস তো হয়নি।
—ওর নামই হওয়া। টাকা দিচ্ছে।
—যাও। আমি আছি।
—মায়ের ঘরের ফ্যানটা দেখিস তো।
—ও আর চলে না। নতুন কেনো।
—কিনব। কিনব।
বি. বি. বা ব্রজেন বসু বা বসের বাড়ি কাছেই। এলগিন রোডে ওঁর বাড়িতে ঢোকার সময় ঘাসের করিডোর মাড়িয়ে যেতে হয়। যে সব বহুতল বাড়ি উনি করেছেন, তাতে উনি থাকেন না। যদিও ”হার্মিটেজ” বাড়ির দোতলাতেই ”নো” কাগজের অপিস।
ফ্ল্যাটে বাস করা যায় না। বসবাস করবে বাড়িতে। বি. বি.—র ব্যক্তিত্ব এমন বিশাল যে ওঁর জন্যে বড় বাড়িই যেন দরকার (এটাই ওঁর বক্তব্য)।
বাড়িটি পুরনো কেতার সাহেবী আমলের ঢঙের বাড়ি। গাড়ি—বারান্দা, বারান্দায় পেতলের টবে রবার গাছ। নীলামে কেনা পুরনো ঢঙের আসবাবে সাজানো বসার ঘর। কিছুরই অভাব নেই। ওপরে ওঠার সিঁড়ির মুখেও পেতলের টব, তাতে অবশ্যই মানিপ্ল্যান্ট।
ব্যাপারটি ঋষির চোখে খুব বিস্ময়কর। বস এই বাড়ি, বার্মিজ লুঙ্গি, চুরোট ইত্যাদি দ্বারা নিজেকে একটা ইতিহাস বা ঐতিহ্য দিচ্ছেন। যেন এই বনেদিয়ানা তাঁর বংশগত।
তা যে সত্যি নয় তা তো সবাই জানে।
টাকার গোড়াপত্তন ঠিকাদারিতে।
বাড়ি কেনা সেদিনের কথা।
আসবাব ইত্যাদি সবই এক ইনটেরিয়ার ডেকোরেটর ফার্মের সৌজন্যে।
উক্ত ফার্মের শিল্প উপদেষ্টা সুমিত্রে (সুমিত রে) চেহারায় দানবের মতো। লালচে ফর্সা রং। ভুরু ও চোখের পাতা নেই বললে হয়। লম্বায় যদি ছ’—ফিট চার ইঞ্চি হয়, চওড়ায় বোধহয় তিনফুট। চোখ লালচে, ফর্সা লোমশ কানে অনেক আঁচিল। মাথায় টাক, শরীর লোমশ, কথাবার্তায় অন্যকে তাচ্ছিল্য দেখায়। সকলেই সব হজম করে। কেন না নিজের লাইনে সুমিত্রে বাঘ সিংহ।
যে মক্কেল টাকা ঢালবে, তাকেও ও রেয়াত করে না। করবে কেন? বিপ্লবী অভিনেতার বাড়ি ও বই দিয়ে সাজিয়ে দেয়, নতুন শিল্পপতির বাড়ির ভেতরে তুলে আনে আসাম ও নাগাল্যান্ড। জনৈক অভিনেত্রীর বাড়ি গুজরাটের কাঠ ও গালার আসবাবে সাজাবার পর অভিনেত্রী, তার চতুর্থ স্বামী ও প্রথম স্বামী, স—আসবাব যদি পুড়ে মরে যায়, সে দোষ সুমিত্রের নয়।
বসকে ও কি ধমকটাই মেরেছিল।
কি চান? একবিংশ শতাব্দীর ফিউচারিস্টিক ব্যাপার? না উনিশ শতক, না অষ্টাদশ শতকের ডেকাডেন্ট লক্ষ্নৌ, না বাবু কালচার?
—আভিজাত্য।
—আভিজাত্য দেয় রক্ত।
—মানে, চল্লিশের দশকের বাড়ি। এ সব অঞ্চলের যেমন হত…
—তাই বলুন! ওটা ক্যালকাটা ক্লাব, মাহজং পার্টি, রেসকোর্সের আভিজাত্য।
ওটাও যে সুমিত্রের মতে আভিজাত্য নয় তা শুনে বস মুষড়ে পড়েন।
—বাড়ি সাজিয়ে দেওয়া যাবে।
—এস্টিমেট?
—পাঁচ লাখ ধরে রাখুন।
—বাড়বে?
—বাড়তে পারে।
—পাঁচ লাখ!
—তবে মেছো বাজারে যান।
—না না।
আপনি মশাই প্রগত। অর্থাৎ প্রগতিশীল উটকো ধনী। পাঁচ বা পঞ্চাশে আপনার কি এসে যায়?
—সব ঠিক মতো হবে তো?
—আপনি তো এ বিষয়ে অতি মূর্খ। তেমন দিনে তেমন বাড়িতে জীবনে ঢোকেননি। ঠিক হল না ভুল হল, বুঝবেন? ক্ষমতা আছে? বর্বর অসভ্য তো!
গাল খেয়ে বস চুপ। সুমিত্রে শেষ অবধি এগার লাখ খসায়! কিন্তু রান্না ঘর থেকে শোবার ঘর, সর্বত্র এনে দেয় ঔপনিবেশিক সাহেবী বাঙালীর শেষ চেহারা। বাড়ি দেখে বস অভিভূত হয়ে যান। সে জন্যেই তিনি বিশ্বাস করেছেন যে এই বাড়ি এবং তিনি একই রকম প্রাচীন আভিজাত্যের পরিচয়।
ঋষি ঢুকেই বুঝল কেস খারাপ। কেন না বস লাল চোখে চারটে টেলিফোনে কথা চালাচ্ছেন।
মিসেস বস বসে আছেন।
—কি হল?
মিসেস বস কেঁদে ফেলেন। একদা সর্বদাই শাড়ি পরতেন। চুড়িতে সেফটিফিন ঝুলত। কপালের টিপ ঘামে গলে নামত। যখন থাকতেন বেলেঘাটায় শ্বশুরবাড়িতে।
এখন ডায়েটিং ও ফেসিয়ালের কারণে অন্য চেহারা। চুল কেটে নকল চুলে রোল, পরনে হাউসকোট, পায়ে চম্বার ঘাসের চটি, গলায় রুদ্রাক্ষ এবং হারের লকেটে মায়ের ছবি। প্রগত পরিবারে স্বামী ও স্ত্রী মা ব্রহ্মশান্তিদায়িনীর ভক্ত। ছেলে ভক্ত বউয়ের, বউ ভক্ত তস্য পিতার। রূপা কখন কার ভক্ত হবে তা এখনও বলা কঠিন। তবে গোপা ছিল ঋষির ভক্ত। ”ঋষিদা!” বলে ও লাফিয়ে চলে আসত ঋষি এসেছে খবর পেলেই।
”গোপা” এ বাড়িতে কিছুকাল একটি নিষিদ্ধ নাম। রূপাও ওর নাম করে না।
অবাধ্য, দুর্বিনীত, জেদী রূপা!
—যতদিন এ বাড়িতে আছি, ততদিন বসের কথা মেনে চলব, কি বলো মা? তোমার তো একটি মেয়ে।
মিসেস বস ঠোঁট এঁটে শোনেন।
এখন উনি কাঁদছেন।
ঋষি ঘাবড়ে যায়।
—কি হল? গোপার কোনো খবর…?
বস টেলিফোন চারটেই নামিয়ে রাখেন।
—রূপা জোর দিয়ে বলছে লাইনের পাশের মৃতদেহটা গোপার।
আমাকে যেতে বলছে।
—কোথায়, কোন লাইনের পাশে?
—ঝাড়গ্রাম ছাড়িয়ে, কোন এক জায়গায়।
—রূপা কোথায়?
—সেখানেই।
—রূপা সেখানে?
মিসেস সুপ্তি বসু চোখ মোছেন।
—ও ভাবে বললে ঋষি কি বুঝবে? সব খুলে মেলে বলো। ঋষি ঘরের ছেলে। ও কারুকে বলবে না।
—ভাস্বর কোথায়?
বস যেন হঠাৎ চাবুক হয়ে যান। টান টান, হিংস্র, কাঁটাঅলা চাবুক। পথে এসো বস। তোমার এই চেহারা চেনা চেহারা। সাপের মত চাপা আক্রোশে হিসহিসিয়ে কথা বলো।
—ভাস্বর বম্বেতে, দিল্লী আর ব্যাঙ্গালোর হয়ে ফিরবে। ভাস্বরকে কিছু বলা চলবে না। দরকারী মিটিঙে গেছে। ওর কারখানার ব্যাপারে। এ সময়ে ওকে জানালে ও বিচলিত হবে, আর কাগজগুলো কেচ্ছা ছেপে দিলে…
সুপ্তি বলেন, সর্বনাশ হবে।
—আমার আজ পর পর মিটিং। রাতে যাচ্ছি দিল্লী আমার পক্ষে কোনো ভাবেই…
—যেতে পারবেন না।
—না। এবং ওটা গোপা নয়। হতে পারে না। হলে হাটে হাঁড়ি ভাঙবে। বুঝেছ?
—যদি গোপা হয়?
—না।
—সুজয়কে, মানে গোপার স্বামীকে…
—না। সুজয় আমার বিজনেস পার্টনার।
—হতে পারে…
—তুমি জানো না।
—আমাকে না বললে কি করে জানব?
—বলছি। সুপ্তি, কফি দিতে বলো।
—আর কিছু খাবে না?
—সামান্য কিছু।
সোফার সঙ্গে লাগানো বেল টেপেন সুপ্তি। এ বাড়িতে ঘর থেকে ঘরে বেল বাজে, ইনটারকমে কথা বলা যায়, কিচেনে নির্দেশ দেয়া যায় বিছানায় শুয়েই। বসের এন্টারটেইনমেন্ট অ্যাকাউন্ট আছে বিলডার্স অ্যানড কনস্ট্রাকটারস আপিসে। সেই অ্যাকাউন্ট খরচ দেয়।
বস নিয়মিত পার্টি দেন, আপ্যায়ন করেন। ঋষি শুনেছে সে সব পার্টির জন্যে হস্টেস আসে। সুপ্তি বসুকে দিয়ে সব কুলিয়ে ওঠা যায় না। এক বছর বাদে বাদে য়ুরোপ যান মহিলা, স্বামীর সঙ্গে। তবুও এখনও দূরদর্শনের বিজ্ঞাপনের মতো ঝলমলে হতে পারেননি।
রূপা এ সব তালেগোলে থাকে না।
গোপা তো একটি নিষিদ্ধ নাম।
বেল বাজে, বেল বাজে। কার তরে এ ঘণ্টা ধ্বনি? অবশ্যই মাঙ্গুরামের তরে। মাঙ্গুরাম পলিশ দুরন্ত, কেতা কায়দা জানা মানুষ। সর্বদা থাকে ঝকঝকে নীল উর্দিতে। বেল বাজাবার সঙ্গে সঙ্গে ট্রলি ঠেলে ঢুকে পড়ে ও।
এটা কোন মাস, কোন ঋতু, তা দিয়ে কি হবে? লনে রাধাচূড়া যখন ফুটেছে, হয়তো এটা কুসুমের মাস। কিন্তু ট্রলিতে সর্ব ঋতু সমারোহ। উজ্জ্বল কমলালেবু, রক্তাভ আপেল। সোনালি কলা, সবুজ আনারস। বেগুনি আঙুর,—
বহুকাল আগে নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের অনুবাদে গ্রাজিয়া দেলেদ্দার ”মা” পড়েছিল ঋষি। ”যার বাগানে এত ফল, পল তাকে ফল দেয় কেন?”
ট্রলিতে কয়েকরকম চীজ, মাখন, জ্যাম, মধু, ক্রীম, রুটি, ডিম, চা।
মাঙ্গুরাম যন্ত্রের মানুষের মতো সব সাজাতে থাকে, সাজাতে থাকে। ভিটামিনের শিশি। এরপরেও স্বামী স্ত্রীর ভিটামিন বড়ি লাগে।
—খাও ঋষি।
—আমি খেয়েই এসেছি।
—খেয়ে এসেছ?
—নইলে রুদ্র খায় না।
এখন সুপ্তি বসু যেন ককিয়ে ওঠেন।
—এখনো তুমি রুদ্রকে বাড়িতে রেখেছ? ওরকম একটা পাড়ায়?
—কোথায় রাখতাম?
—ঋষিভ্যালি, পঞ্চগনি, নিদেনপক্ষে নর্থ পয়েন্ট, নৈনিতালে শেরউড,—পাহাড়ী অঞ্চলে পাবলিক স্কুল। পরিবেশ, প্রকৃতি, কি নেই বলো? আর ডিসিপ্লিন বা লেখাপড়া ওখানেই হয়। মা নেই যার…
বস মৃদু ধমক দেন, ঋষি টাকা কোথায় পাবে? কাকে যে কি বলো।
—বিয়েও করলে না!
—আমরা কি ঋষির কথাই বলব?
—না…তুমি বলো, আমি ভাবতে পারছি না। ভাবতে গেলেই মাথা ঘুরে যাচ্ছে।
—তুমি শান্ত হও। এখন অনেক কাজ। রূপা যে কি করল। ওই মেয়ে চিরদিন…
হঠাৎ সুপ্তি বলেন, সত্যি যদি গোপা হয়?
বস কাঁধ নাচান। তারপর ঋষিকে বলেন, গোপা হতে পারে না।
কেন হতে পারে না, তা ঋষি জানে না। জানার কথাও নয় ওর।
তবু ও বলে, রূপা ভুল করবে?
—নিশ্চয় করেছে। ”করবে” নয়, করেছে। তোমাকে বলা হয়নি আগে—এখন…,
—বলুন।
—তোমার সাহায্য চাই বলেই বলছি।
—বলুন।
—বলছি।
বস মন দিয়ে একটি টোস্ট খান মাখন মধু দিয়ে। চায়ে চুমুক দেন। তারপর ঋষির দিকে তাকিয়ে মনে মনে কোনো হিসেব করেন।
—অন্তত মাসখানেক আগেই গোপা সুজয়কে ছেড়ে চলে গেছে। শুনছি একলা যায়নি।
—খোঁজ করেছিলেন?
—অবশ্যই। কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েই যাচ্ছি, বিবি, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করো—বাববাব, মামমাম। এই দেখ, তুমিও জানতে না যে ওর ডাক নাম বিবি, জানতে না, ছোটবেলা ও আমাদের বাববাব, মামমাম বলত।
—কিন্তু…ওরা তো…
—দেখ, মানুষ নিখুঁত হয় না। বিয়ের ব্যাপারে কতকটা দেখা যায়, কতকটা মানিয়ে নিতে হয়। যতদূর দেখা যায়, সবই দেখেছিলাম।
হয়তো! হয়তো! সে বিয়ের আগাগোড়া ফিলম তোলা হয়েছিল এবং ঋষি শুনেছে সে ফিলমে বিয়ের যৌতুক থেকে সম্মানিত অতিথিবর্গ সকলকেই বেশ পরিষ্কার দেখা যায়।
যতদূর দেখা যায়। কতদূর দেখা যায়?
গোপা এবং সুজয়ের বিয়ে তো দুটি যুবক যুবতীর বিয়ে নয়। অনেক টাকা, উচ্চাশা এবং দম্ভের সঙ্গে আরো টাকা, আরো উচ্চাশা, আরো দম্ভের বিয়ে।
সে বিয়েতে গোপার ইচ্ছে অনিচ্ছের কোনো দামই দেয়া হয়নি। কেননা তার আগে গোপা কার মেয়ে, কোন বংশের মেয়ে, কিছু না ভেবে অরূপের সঙ্গে চলে গিয়েছিল।
চলে গিয়েছিল বিয়ে করবে বলে, কিন্তু বস অতীব ক্ষিপ্রতায় ওদের ধরে ফেলেন।
হয়কে নয় করবার ক্ষমতা ওঁর সেদিনও ছিল। গোপার বয়স তখন উনিশ হলেও ওকে নাবালিকা প্রতিপন্ন করা গিয়েছিল।
কেচ্ছা জানাজানি হওয়া বন্ধ করা গিয়েছিল।
নাবালিকা গোপাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফুসলানোর অপরাধে অরূপকে জেলে দেয়া গিয়েছিল।
কাগজে সংবাদ অপ্রকাশিতই ছিল।
দু’বছর বাদে বেরিয়ে অরূপ কোথাও হারিয়ে গেল। ওরকম একটা কেসের কলঙ্ক মেখে কলকাতায় থাকল না।
জনৈক ওষুধ কোম্পানির সেলসম্যান অরূপ নাকি মধ্যপ্রদেশে থাকে। মাঝে মাঝে ভিলাই, বা হিন্দোয়ারা বা রাজনন্দগাঁও থেকে ঋষি ”শুভ নববর্ষ” বা ”শুভ বিজয়া” লেখা কার্ড পায়।
আর গোপা?
যে এরকম একটা কাজ করতে পারে তাকে বিশ্বাস করবে কোন বাপ—মা?
সেখানেই তো শেষ নয়। শেষ নয়।
গোপা চিরকাল শান্ত, হাসিখুশি, জেদ বলে কিছু ছিল না স্বভাবে। রূপার মতো ব্রিলিয়ান্ট নয়।
ভালোমানুষ মেয়ে।
রাজপুর থেকে ধরে আনার পর সেই গোপা কি বদলে গিয়েছিল ভাবা যায় না।
গোপার উনিশ, অরূপের পঁচিশ, ওদের যাবার জায়গাও তো বেশি ছিল না। রাজপুরে অরূপের এক দিদির বাড়িতেই গিয়েছিল ওরা, আর দিদি ওদের বিয়ের ব্যবস্থাও করছিল।
তারপর গোপার সে কি অবস্থা।
…আমাকে বাঁচাচ্ছ আর ওকে জেলে দেবে। কেন মিথ্যে কথা বলছ? শুনুন, আপনি তো পুলিশ। আমাকে ও ফুসলায়নি। আমি ওকে ভালবেসে স্বেচ্ছায় চলে যাই। আমার বয়স উনিশ, উনিশ, উনিশ।
অরূপকে জেলে দেবার পর গোপা তো আত্মহত্যা করার চেষ্টাও করেছিল।
বেচারা, বেচারা গোপা।
কোনো কাজটাই ও শেষ অবধি সফল করে উঠতে পারে না।
ঘুমের বড়ি পাম্প করে বের করে ফেলে ওকে তো বাঁচিয়েই তোলা হল।
অবশ্যই নার্সিংহোমে, হাসপাতালে নয়। হাসপাতালে গোপনতা থাকে না।
তারপর ও বাবা মার সঙ্গে কথা বলত না, ঘর থেকে বেরোত না, একেবারে যেন পাথর হয়ে গিয়েছিল।
সুপ্তি তখন ঘন ঘন ফোন করতেন।
—তুমি এলে ও তবু কথা বলে।
ঋষি আসত।
গোপা ওর সঙ্গেও সব সময়ে কথা বলত না। একদিন শুধু ম্লান হেসে বলেছিল, অরূপ আর আমি এক দেশেই থাকব, তবু দেখা হবে না।
—কি বলব বলো?
—আপনি আর কি বলবেন। শুধু মনে হয় অরূপ চিরকাল ভাববে গোপাটা কি যাচ্ছেতাই। ওকে কোনোদিন বলা যাবে না, গোপা চায়নি ও শাস্তি পাক।
—গোপা! একটু বেরোবে?
—না না। বেরোলে একবারই বেরোব।
—আমার সঙ্গেই যেতে?
—না না, কোথাও যাব না।
একবারই বেরোল গোপা চার বছর বাদে।
চার বছর অতীতকে ভোলার পক্ষে যথেষ্ট সময়, তাই ভেবেছিলেন বস। অল্প বয়সের হঠকারিতা ভুলতে কতদিন লাগে?
গোপা পড়ল না আর, গান ছেড়ে দিল। ঘরের বাইরেও যেত না।
তবে রূপাকে এড়াতে পারত না।
রূপা ওর চেয়ে সাত বছরের ছোট। রূপা বড় হবার সময়টা বসের জীবনে আরো বড়ো হবার সময়। সে জন্যে ওকে তাবে রাখা যায় নি।
রূপা বারো বছরেই জেদ করে ইংরিজি ইস্কুল ছেড়ে বাংলা ইস্কুলে ভর্তি হয়। বসকে ও জিগ্যেসই করেনি। শুধু বরাবরের প্রথম হওয়া ছাত্রী যখন সব বিষয়েই উনিশ কুড়ি পেতে থাকল, তখন কোন ভালো স্কুল ওকে রাখবে?
ওই ইস্কুল বদলেই ও গোপার কাছাকাছি পৌঁছে যায়।
ঋষি একদিন অবাক হয়ে দেখেছিল গোপা বোনের চুল বেঁধে দিচ্ছে।
তারপর শুনেছিল, রূপা দিদির ঘরে চলে এসেছে। ও দিদির ঘরেই থাকবে।
গোপা ম্লান হেসে ঋষিকে বলেছিল, রূপা কেন স্কুল বদলাল, কেন আমার ঘরে থাকছে, বোঝেন? ও কেন কি করে ভাবেন?
প্রথমত এ সব কথা ঋষির ভাবার কথা নয়। দ্বিতীয়ত রুদ্রকে সামলে, তখন যে কাজ করত তা সামলে রূপার কথা ভাববে কখন?
—তুমিই বলো।
গোপা শীতের পড়ন্ত বেলার মতো ম্লান, পলাতক চোখে বাইরের দিকে চেয়ে নিজের মনে বলেছিল, দেবদারু গাছটা কত ছোট ছিল তখন, কত বড় হয়ে গেছে। এত দেবদারু গাছ কেন জানেন তা? জানেন না?
—সত্যিই জানি না।
—কোনো পণ্ডিত বুঝিয়েছে দেবদারু গাছ অনেক থাকলে বাইরের শব্দ তেমন আসে না। এটা একটা দুর্গ তো! এটাকে বাইরের সব কিছু থেকে রক্ষা করে রাখতে হবে।
—ছবি আঁকছিল কে, রূপা?
—ভালো বলবেন না। ভালো বললেই ওর ছবির একজিবিশন হবে। দারুণ হইচই লাগবে। আর রূপা রেগে ছবি আঁকা ছেড়ে দেবে।
গোপাকে অবাক হয়ে দেখছিল ঋষি। যেন ও কত কত যুগ ধরে কত কিছু সইতে সইতে মূর্তির মতো প্রাচীন ও সুন্দর হয়ে গেছে।
অন্যমনস্ক গলায় গোপা বলেছিল, আমার আর অরূপের ব্যাপার! এটা তো সত্যি যে আমি বিদ্রোহ করতে পারলাম না। রূপার মনে লাগেনি, ও বোঝেনি, তা ভাববেন না। ইচ্ছে করে ও স্কুল ছেড়ে বাংলা স্কুলে এল। ওটাই ওর প্রতিবাদ বোঝাতে চাইল। দিদির মতো আমাকে ছেঁচতে পারবে না। আমি বিদ্রোহ করব।
—তাই?
—নয়তো কি? ওই করে আমাকেও বুঝতে দিল যে দিদি, তোর দুঃখ আমি বুঝি। ও রকম সাজানো ঘর ছেড়ে আমার ঘরে চলে এল, সেও তো বসকে চটাবে বলে।
—বস বলছ?
—বসই তো। একমাত্র বস।
—আর কি করছে রূপা?
—নো জন্মদিন। টেবিলে বসে খায় না এখানে আমার সঙ্গে খায়। স্কুলে যায় পাবলিক বাসে। বাড়িতে জিনস আর পাঞ্জাবি পরে ঘোরে। লেকে গিয়ে সাঁতার কাটে। দামী প্রেজেন্ট কিছু নেয় না।
—বাঃ!
গোপা সদুঃখে বলে, ওকেও তো ভেঙেচুরে দেবে একদিন। ওকে তো ওর ইচ্ছে মতো বড় হতে দেবে না।
বিয়ের প্রস্তাব আনতে গোপা কিছু বলেনি।
রূপা বলেছিল, ও রকম ঠিক বসের মতো হিসেবী ছেলে একটা, বিয়ে করছিস কেন?
গোপা বলেছিল, ওদের দেখতে হবে না।
—তুই আর আসবি না?
—দেখে নিস।