মসজিদে আকসার বর্ণনা
পরিবেষ্টিত এলাকার দক্ষিণাংশে মসজিদে আকসার বর্তমান ভবন অবস্থিত। মসজিদে সাখরা, মসজিদে আকসা এবং অন্যান্য সেবা ভবনসহ চার দেয়ালের ভেতরের মোট জমির পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৯শ ‘ বর্গমিটার। মসজিদে আকসা মসজিদে সাখা থেকে ৫শ ‘ মিটার দক্ষিণে অবিস্থত। একই সীমানার ভেতর আরো রয়েছে মসজিদে উমার ও জামে নিসা। পশ্চিম দেয়াল থেকে মসজিদে আকসার উত্তর-পশ্চিম কোণের দূরত্ব হচ্ছে প্রায় ৭০ মিটার। মসজিদের সীমানার দেয়াল থেকে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে মসজিদে আকসার দূরত্ব সমান। মসজিদের উত্তর থেকে দক্ষিণে একটি সরল রেখা টানলে পূর্ব ও পশ্চিমে ২৮৫ মিটার সমান দূরত্ব পাওয়া যায়। উত্তর দিক থেকে মসজিদে প্রবেশ করলে সামনে একটি বিরাট বারান্দা পড়ে। সেখান থেকে মসজিদের ৭টি দরজায় যাওয়ার পথ আছে। এই ৭টি দরজা ছাড়াও মসজিদের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে আরো ২টি দরজা আছে। মসজিদের পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে রয়েছে মহিলাদের পৃথক প্রবেশ পথ। মসজিদে আকসার পূর্ব দিকে ‘জামে উমার ‘ নামে আরেকটি মসজিদ আছে। জেরুসালেম বিজয়ের সময় হযরত উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু সেখানে যে মসজিদ তৈরি করেছিলেন বর্তমান মসজিদ তারই অবশিষ্টাংশ। মসজিদে অনেকগুলো স্তম্ভ আছে। এগুলোতে খুবই সুন্দর নকশা অংকন করা হয়েছে। মসজিদের উত্তর-পশ্চিমে রয়েছে সুন্দর ও মনোরম নকশা খচিত, মেহরাবে যাকারিয়া। মসজিদে আকসায় অনেকগুলো গম্বুজ আছে। সেগুলো হচ্ছে, ১. সিলসিলাহ গম্বুজ ২ . সুলাইমান গম্বুজ ৩. নাহওইয়া গম্বুজ ৪ . শেখ খলীল ৫. খিদির গম্বুজ ৬. মেরাজ গম্বুজ ৭ . মূসা গম্বুজ ৮. ইউসূফ গম্বুজ ও ৯ . মেহরাবুন্নবী গম্বুজ। মসজিদে কয়েকটি মিনারা আছে। সেগুলো হচ্ছে ১. বাবুল আসবাত মিনারা ২ . বাবুল মাগারেবা মিনারা বা বাবুল গাওয়ানিমা মিনারা এবং ৩ . বাবু সিলসিলাহ মিনারা। মসজিদে আকসায় অজু ও পানি পান করার কয়েকটা জায়গা আছে। সেগুলোর মধ্যে সাবিল কায়েতবায়, সাবিল কাসেম পাশা, সাবিল বুদাইরী, সাবিল শালান এবং সাবিল বাবুল হাস অন্যতম।
মসজিদে আকসার দক্ষিণ দেয়াল খুবই মজবুত। ফলে মসজিদে আকসায় ইসরাইলীদের প্রসিদ্ধ অগ্নিকাণ্ডে এ দেয়ালের কোন ক্ষতি হয়নি। মসজিদে আকসার ১১টা দরজা আছে। সেগুলো হচ্ছে উত্তরদিকে ৭টি, পূর্বদিকে ১টি, পশ্চিমে ২টি এবং দক্ষিণে ১টি দরজা। সেগুলোর নাম হলো : ১ . বাবুল আসবাত ২ . বাবুল মাগারেবা ৩. বাবুল গাওয়ানিমা ৪. বাবুস সিলসিলা ৫. বাবুল হাবস ৬, বাবুন নাযির ৭ . বাবুল কাত্তান ৮ . বাবে হিত্তাহ ও ৯, বাবে শারফিল আম্বিয়া বা বাবে ফয়সল ইত্যাদি। দক্ষিণ দিকে জামে আন্ নিসা নামে মহিলাদের জন্য একটি মসজিদ আছে। উমাইয়া খলীফাহ আবদুল মালেক বিন মারওয়ান প্রথমে মসজিদে সাখরার সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করেন। তিনি মসজিদে আকসার নির্মাণ কাজ শুরু করলেও তা শেষ করতে পারেননি। ৭২ হিঃ মোতাবেক ৬৯০ খৃঃ তার ছেলে ওয়ালিদ বিন আবদুল মালেক মসজিদে আকসা নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করেন। মসজিদে আকসার দৈর্ঘ্য ৮০ মিটার ও প্রস্থ ৫ ৫ মিটার। এতে মারবেল পাথরের তৈরি মোট ৫৩টি স্তম্ভ আছে এবং পাথরের তৈরি ৪৯টি বর্গাকৃতির খুঁটি আছে। স্তম্ভ ও খুঁটিগুলোর উচ্চতা হচ্ছে ৫ মিটার। এগুলোর উপর ৯ মিটার চওড়া পাথরের ধনুক নির্মাণ করা হয়েছে এবং এর উপর নির্মিত হয়েছে ছাদ। স্তম্ভগুলোকে তামার তৈরি পাত দ্বারা মোড়ানো হয়েছে। মসজিদের মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে বিরাট গম্বুজ। শিশা দ্বারা গম্বুজের চারদিক ঢালাই করা হয়েছে। মসজিদের সামনের গম্বুজটি ১৭ মিটার উঁচু ও তাতে মোজাইক করা হয়েছে। এতে বহু কারুকার্য করা হয়েছে।
মসজিদে কিবলার দিকে মিম্বার নূরুদ্দিন ও মেহরাব সালাহউদ্দিন অবস্থিত। মসজিদে একটা বড় মেহরাব আছে যা মিম্বার থেকে পূর্বদিকে অবস্থিত। এর নামকরণ করা হয়েছে মেহরাবে দাউদ। তারপর লোকেরা এর নামকরণ করেছে মেহরাবে উমার। মসজিদের শুরুতে মিম্বার থেকে পশ্চিমে আরেকটি মেহবার আছে। একে মেহরাবে মুতাওইয়াহ বলা হয়। মসজিদে আকসার ভবন পূর্ব সীমানার দেয়াল পর্যন্ত পৌছেনি। কেননা, হযরত উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু লোকদেরকে পশ্চিম সীমানায় মসজিদ ভবন নির্মাণের নির্দেশ দেয়ায় তখন থেকে পূর্বাংশ খালি পড়ে আছে। মসজিদে আকসার সীমানার ভেতর কয়েকটি মাদ্রাসা তৈরি হয়েছে। সেগুলো হল, মাদ্রাসা নাহইয়া, মাদ্রাসা নাসরিয়া ও মাদ্রাসা ফারেসিয়া। মসজিদে আকসা ইসলামী জ্ঞান ও সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। এতে তাফসীর, হাদীস, ফিকহসহ বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষা দান করা হয়।
অনেক দিন পর্যন্ত মসজিদে আকসায় ৪ মাজহাবের ৪ জন ইমামের মাধ্যমে নামাযের ব্যবস্থা আঞ্জাম দেয়া হতো। এর ফলে তা বিরাট ইসলামী শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরবর্তীতে মাজহাব – ভিত্তিক ইমামতির পদ্ধতি বাতিল করা। হয়। মসজিদে আকসার চারপাশে অনেকগুলো গরীব বোর্ডিং আছে। যেয়ারতকারী গরীব মুসলমানদের জন্য বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তি বা সংস্থা তা কায়েম করেছেন। মসজিদে আকসার পশ্চিম দেয়ালকে ‘বোরাক শরীফ’ বলা হয়। এতে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) বোরাক বাঁধা হয়েছিল। ইহুদীরা এটাকে ‘আল – হায়েত আল মাবকী বলে। এই দেয়ালটি বিরাট পাথর দ্বারা নির্মিত। এর দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১৫৬ ফুট এবং উচ্চতা ৬৫ ফুট। ইহুদীদের দাবী হচ্ছে, এটি হাইকালে সুলাইমানীর অবশিষ্টাংশ। কিন্তু বর্তমানে তা মসজিদের আঙিনার অংশ ও মসজিদের ওয়াকফ বিভাগের মালিকানাধীন। মসজিদে আকসার দরজাগুলোতে অতি বেশী নকশা ও সুন্দর ডিজাইন করা হয়েছে। ১৯২২ খৃঃ মসজিদে আকসা সংস্কার সংক্রান্ত সর্বোচ্চ ফিলিস্তিনী। কমিটি মসজিদের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও মেরামতের জন্য মিসর ও তুরস্কের প্রকৌশলীদেরকে আহবান করে। কমিটি অনুসন্ধান চালিয়ে দেখে, মসজিদের বিভিন্ন খুঁটি ও স্তম্ভগুলোতে ফাটল ধরেছে এবং এগুলোর পক্ষে আর মসজিদের ছাদ বহন করা সম্ভব নয়। তারা মসজিদের নকশা ও ডিজাইন বহাল রেখে মেরামতের কাজ শেষ করেন। ১৯২৭ খৃঃ মোতাবেক ১৩৪৬ হিঃ মসজিদে আকসার গম্বুজ সংস্কার করা হয়। একই বছর ভূমিকম্পে মসজিদের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফাটল ধরে। ১৯৩৮ খৃঃ উক্ত ফাটল মেরামত করা হয়। বিভিন্ন সংস্কারের সময় মসজিদে আকসার নকশা ও কারুকার্য অক্ষুন্ন রাখা হয়। এটি পৃথিবীর একটি সুন্দর স্থাপত্য কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।
.