ময়ূরাক্ষী ৮/৮

আমি রূপাকে কখনো চিঠি লিখিনি। একবার হঠাৎ একটা চিঠি লিখতে ইচ্ছা হলো। লিখতে বসে দেখি, কী লিখব ভেবে পাচ্ছি না। অনেকবার করে একটি লাইন লিখলাম—’রূপা তুমি কেমন আছ?’ সমস্ত পাতা জুড়ে একটিমাত্র বাক্য।

সেই চিঠির উত্তরে রূপা খুব রাগ করে লিখল—তুমি এত পাগল কেন? এতদিন পর একটা চিঠি লিখলে তার মধ্যেও পাগলামি। কেন এমন কর? তুমি কি ভাব এইসব পাগলামি দেখে আমি তোমাকে আরো বেশি ভালোবাসব? তোমার কাছে আমি হাতজোড় করছি—স্বাভাবিক মানুষের মতো আচরণ কর। ঐদিন দেখলাম দুপুরের কড়া রোদে কেমন পাগলের মতো হাঁটছ। বিড়বিড় করে আবার কী—সব যেন বলছ। দেখে আমার কান্না পেয়ে গেল। তোমার কী সমস্যা তুমি আমাকে বল।

আমার সমস্যার কথা রূপাকে কি আমি বলতে পারি? আমি কি বলতে পারি–আমার বাবার স্বপ্ন সফল করার জন্যে সারাদিন আমি পথে পথে ঘুরি। মহাপুরুষ হবার সাধনা করি। যখন খুব ক্লান্তি অনুভব করি তখন একটি নদীর স্বপ্ন দেখি। যে নদীর জল ছুঁয়ে ছুঁয়ে একজন তরুণী ছুটে চলে যায়। একবার শুধু থমকে দাঁড়িয়ে তাকায় আমার দিকে। তার চোখে গভীর মায়া ও গাঢ় বিষাদ। এই তরুণীটি আমার মা। আমার বাবা যাকে হত্যা করেছিলেন।

এইসব কথা রূপাকে বলার কোনোই অর্থ হয় না। বরং কোনো-কোনোদিন তরঙ্গিনী স্টোর থেকে তাকে টেলিফোন করে বলি—রূপা, তুমি কি এক্ষুনি নীল রঙের একটা শাড়ি পরে তোমাদের ছাদে উঠে কার্নিশ ধরে নিচের দিকে তাকাবে? তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। একটুখানি দাঁড়াও। আমি তোমাদের বাসার সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলে যাব।

আমি জানি, রূপা আমার কথা বিশ্বাস করে না, তবু যত্ন করে শাড়ি পরে। চুল বাঁধে। চোখে কাজলের ছোঁয়া লাগিয়ে ছাদের কার্নিশ ধরে দাঁড়ায়। সে অপেক্ষা করে। আমি কখনো যাই না।

আমাকে তো আর-দশটা সাধারণ ছেলের মতো হলে চলবে না। আমাকে হতে হবে অসাধারণ। আমি সারাদিন হাঁটি। আমার পথ শেষ হয় না। গন্তব্যহীন গন্তব্যে যে যাত্রা তার কোনো শেষ থাকার তো কথাও নয়।

Leave a Reply to সীমান্ত জয় Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *