৫০
গুলির শব্দ বন্ধ হল কিছুক্ষণ পর। আশরফ তুষারকে ফোন করলেন। তুষার ধরতেই বললেন, “স্যার, এনি আপডেট?”
তুষার বললেন, “আমার কাছে এখনও কোন খবর আসে নি। অপেক্ষা কর।”
আশরফ বললেন, “ঠিক আছে স্যার।”
আশরফ ফোন রাখলেন।
মিনিট পাঁচেক পরে তুষার ফোন করলেন, “হ্যাঁ। গো এহেড। তারেককে ফোন দাও।”
আশরফ তারেককে ফোন দিলেন। তুষার বললেন, “আমিন শেখ আছেন ওখানে। র্যাবের অফিসার। চেনো?”
তারেক বললেন, “হ্যাঁ স্যার। চিনি।”
তুষার বললেন, “ওদের নিয়ে এদেশে চলে এসো। ওরা সেফ প্যাসেজ দিয়ে দেবে। বাংলাদেশ এখন তোমাদের জন্য একবারেই সেফ নয়। পরের প্ল্যান আমি পরে ভাবব। আপাতত তোমরা কলকাতায় চলে যাও।”
তারেক বললেন, “স্যার, আমি ওদের পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারি। আমার এখানে ঘর সংসার আছে। ওদের রেখে আমি কী করে যাবো?”
তুষার বললেন, “ওদের নিরাপত্তার জন্য আমি কথা বলছি। তুমি কলকাতায় চলে এসো। পরে ওদের না হয় কলকাতায় নিয়ে যাবে।”
তারেক বললেন, “স্যার আমার বউ কোনদিন ঢাকার বাইরে গেলে পরের দিন চলে আসে। ও কী করে কলকাতায় গিয়ে থাকবে? আমি থাকব স্যার। আমি বুঝে নেবো সবটা।”
তুষার বললেন, “ঠিক আছে। তুমি পরে ঢাকায় ফিরবে তবে। কিন্তু এখন কলকাতায় যাবে।”
তারেক বললেন, “ক’দিনের জন্য স্যার?”
তুষার বললেন, “সেটা আমি জানাবো। কলকাতা অফিসে গিয়ে আমাকে রিপোর্ট করবে। ওকে?”
তারেক বললেন, “ঠিক আছে স্যার।”
ফোন কেটে দিলেন তুষার। ওরা জমিদার বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করলেন।
তারেক বললেন, “ভালোই ছিলাম। এই রফিকের বাচ্চার জন্য সব গেলো। তুমি জানো আশরফ, আমার বউ আমাকে খুব সন্দেহ করে। এই যে বাইরে থাকতে হবে, কত যে জবাব দিতে হবে কে জানে! তুষার স্যারই বলেছিলেন বিয়ে করতে, এখন এসব করলে হয়? আমার সমস্যাটা বুঝতে হবে না?”
আশরফ তারেকের কাঁধে হাত রাখলেন, “চিন্তা কোর না। স্যার তোমার সিকিউরিটির দিকটা দেখেই তোমাকে কলকাতায় যেতে বলেছেন।”
আশরফের সান্ত্বনাবাণীতে কোন লাভ হল না। তারেক মুখ গোমড়া করে রইলেন।
ভোরের আলো ফুটছে। জমিদার বাড়ির দখল নিয়েছে র্যাব। হামলাকারীদের মধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের লাশ গাড়িতে তোলা হচ্ছে। র্যাবের একজনের গায়ে গুলি লেগেছে। তাকে সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।
আমিন শেখ তারেককে দেখে এগিয়ে এলেন, “আরে মিয়াঁ, আপনি তো বিরাট মানুষ! আমি তো সব শুনে পুরাই আকাশ থেকে পড়লাম।”
তারেক বললেন, “কিছু বিরাট মানুষ না। আপনি না এলে এই বিরাট মানুষ আর বাঁচত না আজকে। থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ। এই মালেদের অ্যাড্রেস ট্রেস করতে পারবেন?”
আমিন বললেন, “হ্যাঁ। এক একটা দাগী তো। রসুল, কাটা পাপ্পু, সব ছিল। তবে ওদের এসবের অভিজ্ঞতা নেই, ফলে আমাদের খুব একটা কষ্ট করতে হয় নি। ভাড়াটে সৈন্য পাঠিয়েছিল।”
তারেক চোখ ছোট ছোট করে বললেন, “রসুল? জোনাকি সিনেমা হলে টিকেট ব্ল্যাক করত?”
আমিন বললেন, “হ্যাঁ। চেনেন নাকি?”
তারেক বললেন, “কোথায় রেখেছেন? কোন ভ্যানে? নিয়ে আসা যাবে?”
আমিন বললেন, “শিওর।”
আমিন রসুলকে নিয়ে আসতে বললেন। আশরফ তারেককে বললেন, “কী ব্যাপার?”
তারেক বললেন, “এই অ্যাটাকারদের সোর্সের খোঁজ করছি। দেখা যাক।”
রসুলকে বেশ ভাল মারধোর করা হয়েছে। মুখ ফেটে রক্ত পড়ছে। কাঁদতে কাঁদতে এল। তারেক বললেন, “কীরে, চিনতে পারছিস?”
রসুল তারেকের পা ধরে হাউ মাউ করে উঠল, “স্যার, আমাকে বাঁচান স্যার। আমাকে জোর করে এখানে নিয়ে এসেছিল অ্যালেক্স। ও নিজে মরল, আমাকে এবার র্যাব মারবে।”
তারেক বললেন, “কোথা থেকে পাঠিয়েছিল তোদের? বল। আমি র্যাবের সঙ্গে কথা বলে তোকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।”
রসুল শিউরে উঠল, “ওরা মেরে ফেলবে স্যার।”
তারেক বললেন, “আমরা কি তোদের ছেড়ে দেব?”
রসুল বলল, “জিয়া টেক্সটাইল কারখানায় আছে ওরা।”
তারেক বললেন, “ঠিকানা বলতে পারবি?”
রসুল বলল, “জি জনাব।”
তারেক আশরফের দিকে তাকালেন, “সোর্স পাওয়া গেছে। এবার কী করবে বল?
দেশে ফিরবে, না রাজাকার ধরবে? এই সব কুকুরের ভয়ে পালিয়ে যেতে হবে?”
আশরফ বললেন, “তুষার স্যারের পারমিশন ছাড়া আমি কিছু করতে পারব না।”
তারেক বললেন, “বেশ তো, তোমাদের কিছু করতে হবে না। আমি আমিন সাহেবের সঙ্গে যাবো।”
আশরফ আবার তুষারকে ফোন করলেন। তুষার বললেন, “বেরিয়েছো?”
আশরফ বললেন, “স্যার। এ বাড়িতে যারা পাঠিয়েছিল, তাদের একটা সোর্স পেয়েছি। তারেক যেতে চাইছে। কী করব? ধরতে পারলে আমাদের অ্যাডভান্টেজ আছে।”
তুষার বললেন, “দেশটা ভারতবর্ষ হলে আমি কিছুই ভাবতাম না আশরফ। বাংলাদেশ বলেই চিন্তা হচ্ছে। তোমরা কন্ট্রোল রুমে থাকো। বাংলাদেশের টেরোরিস্ট কন্ট্রোল ইউনিট ইজ কোয়াইট গুড। আমি ওদের বলছি। ওরা দেখুক। তোমাদের তো স্পটে যেতেও সময় লাগবে। ততক্ষণে পাখি পালাবে।”
আশরফ বললেন, “আমরা তাহলে ঢাকা ফিরব?”
তুষার একটু থমকে বললেন, “হ্যাঁ। ফেরো। আমি ঢাকার সঙ্গে কথা বলছি। ওই টেক্সটাইল কোম্পানিতে রেড করে যদি কাউকে পাওয়া যায়, ওরা আমাদের হাতে আন অফিসিয়ালি তুলে দেবে। দেখা যাক, ওরা রাজি হয় নাকি।”
আশরফ বললেন, “ওকে স্যার।”
ফোন রেখে আশরফ তারেককে বললেন, “ঢাকায় ফেরার পারমিশন পাওয়া গেছে”
তারেক একটা স্বস্তির শ্বাস ফেলেই আমিনকে বললেন, রসুল একটা ঠিকানা দেবে। ওর থেকে ঠিকানাটা নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।”
আমিন বললেন, “নিশ্চয়ই।”
তারেক আশরফের দিকে তাকালেন, “লেটস হোপ ফর দ্য বেস্ট।”
#
এক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকার টেরোরিস্ট কন্ট্রোল ইউনিট জিয়া টেক্সটাইল থেকে আতরকে আটক করল।
৫১
প্রেসিডেন্ট নিয়াজি তৈরি হচ্ছিলেন। আক্রম এসে বলল, “জনাব, প্রেস এসে গেছে।”
নিয়াজি জিজ্ঞেস করলেন, “ইন্টারন্যাশনাল প্রেস এসেছে?”
আক্রম বলল, “জি জনাব। ইন্টারন্যাশনাল প্রেসও এসেছে।”
নিয়াজি বললেন, “শাকিল, রজ্জাক, আমিনা?”
আক্রম বলল, “এসেছেন জনাব।”
নিয়াজি বললেন, “ঠিক আছে। চল।”
ঘর থেকে বেরোলেন নিয়াজি। প্রেস রুমে ভিড় গিজগিজ করছে।
নিয়াজি তার জায়গায় বসে সামনেটা দেখে নিয়ে শুরু করলেন, “আমি এই প্রেস কনফারেন্স ডেকেছি আমাদের দেশের জন্য এক নতুন সকালের লক্ষ্য নিয়ে। এই মুহূর্তে আমাদের দেশ একটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমি জানি, সামরিক শাসন বেশিদিন থাকলে দেশের গণতন্ত্রের প্রতি প্রশ্ন উঠে যায়। এবার পাকিস্তানে আবার গণতন্ত্রের উৎসব শুরু হবে। ভোট হবে আজ থেকে ঠিক পনেরো দিন পর। বারোই অগাস্ট। নব নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার আগে অবধি আমার দায়িত্ব আমি পালন করে যাব। স্বাধীনতা দিবসে শপথ নেবে এ দেশের নতুন সরকার। দেশের জন্য নতুন সরকারের কাছে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ থাকবে। আশা করব, নব নির্বাচিত সরকার তাদের কাজ ঠিক ভাবে চালাতে পারবেন।”
সামনের সিট থেকে একজন ব্রিটিশ সাংবাদিক বলল, “স্যার, সম্প্রতি রাওয়ালপিণ্ডির রাজা মার্কেটের মসজিদে যে বিস্ফোরণ হল, সেটা কি এই ভোটের জন্যই কোন ষড়যন্ত্র থেকে করা হয়েছে?”
নিয়াজি বললেন, “আমরা সন্দেহভাজনের একটা ছবি পেয়েছি। হতে পারে এটা ইন্ডিয়া করিয়েছে। আমাদের দেশে ভোটে ঝামেলা করাটা ইন্ডিয়ার অন্যতম কাজের মধ্যে পড়ে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই নাশকতাকারীকে সনাক্ত করার কাজ চলছে।”
“জনাব, মৌলানা হজরতউল্লাহর ব্যাপারে আপনি কী বলতে চান?”
ফ্ল্যাশ লাইটের আলোর ঝলকানিতে প্রশ্নকর্তাকে দেখা গেল না। পাকিস্তানি সাংবাদিক। নিয়াজি বললেন, “মৌলানা এই প্রেস কনফারেন্সে কীভাবে প্রাসঙ্গিক?”
“জনাব, মৌলানা আপনাকে একজন দুর্বল শাসক বলেছেন। আজ সকালেই আমাদের কাছে ওর সাম্প্রতিক ভিডিওটি এসেছে।”
নিয়াজি বললেন, “আমি জানি না মৌলানা কোন প্রসঙ্গে এই কথা বলেছেন। আমি ওর কথা না শুনে এই ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে চাই না।”
ব্রিটিশ সাংবাদিক বলল, “জনাব, ইন্ডিয়া অনেকবারই মৌলানা হজরতউল্লাহর ব্যাপারে রাষ্ট্রপুঞ্জে নালিশ জানিয়েছে। পাকিস্তান কি ইন্ডিয়ার দাবীকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে?”
নিয়াজি বললেন, “এই ব্যাপারে ইন্ডিয়ার সঙ্গে আমরা একমত নই। আর প্লিজ, এই প্রেস কনফারেন্সটা মৌলানার ব্যাপারে ডাকা হয় নি। আমার আরো কিছু বলার আছে।”
সবাই চুপ করে গেল
নিয়াজি বললেন, “পাকিস্তানের জনগণ একটা শক্তিশালী সরকার চায়। এমন সরকার, যা দেশকে অর্থনৈতিক এবং সামরিক, দুভাবেই শক্তিশালী করবে। এই প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে আমি জানাতে চাই, পাকিস্তানের নতুন ভবিষ্যতকে আরো উজ্জ্বল করার জন্য আমি একটি দল গঠন করেছি। আমার দলের নাম পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি।”
এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মিডিয়ার সবাই একসঙ্গে প্রশ্ন করতে শুরু করল, “জনাব, জনাব, আপনি নিজেও কি ইলেকশনে কমপিট করবেন?”
নিয়াজি বললেন, “এই মুহূর্তে আমার সেরকম কোন ইচ্ছে নেই। দেশের স্বার্থে দেশের একটা প্রজন্মকে আমি দুর্নীতিমুক্ত পাকিস্তান উপহার দিতে চাইছি। তাদের জন্য আমার এই সিদ্ধান্ত।”
“জনাব, এই সিদ্ধান্ত নিতে আপনাকে চিন বা আমেরিকা কোন রকম সাহায্য করেছে?”
নিয়াজি মাথা নাড়লেন, “আমাকে কেউ কোন রকম সাহায্য বা প্রস্তাব দেয় নি। আমার দেশের স্বার্থে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বার বার বলছি, এর মধ্যে আর কারো কোন ইন্ধন নেই। সমস্ত সিদ্ধান্ত আমার, সবটাই আমার দেশের জন্য। দলের মুখপাত্র হচ্ছেন শাকিল সিদ্দিকি।”
শাকিল সিদ্দিকি প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করলেন। নিয়াজি তাকে তার পাশের চেয়ারে বসতে নিৰ্দেশ দিলেন। শাকিলকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন আসতে শুরু করল। নিয়াজি স্বস্তির শ্বাস ছাড়লেন। অনেকদিন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এতদিন পরে একটা সিদ্ধান্তে আসা গেল। এবার আসল লড়াই। প্রেসিডেন্টের খাস খানসামা জাকির এসে জানালো জনগণের ভিড় হয়েছে হাউজের সামনে। তারা তাদের প্রেসিডেন্টকে দেখতে চায়। গোটাটাই নিয়াজির মস্তিষ্কপ্রসূত। তিনি চেয়েছিলেন একই দিনে মিডিয়াকে দেখাতে দেশের মানুষ তাকে কতটা ভালোবাসে।
হাউজের দোতলার ব্যালকনিতে প্রেসিডেন্ট দাঁড়ালেন। জনগণ তাকে দেখে হাত তালি দিয়ে উঠল। নিয়াজির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে একটা বুলেট এসে তার দু চোখের মাঝখানে এসে লাগল। স্নাইপারের নিখুঁত লক্ষ্যভেদ।
প্রেসিডেন্ট নিয়াজি ভূপতিত হলেন।
৫২
বীরেন শুয়ে ছিল। সায়ক খাবার নিয়ে এসে বলল, “ব্রেকিং নিউজ। নিয়াজি ইজ নো মোর।”
বীরেন অবাক হয়ে উঠে বসে সায়কের দিকে তাকিয়ে বলল, “মানে?”
সায়ক বলল, “টার্গেটে ছিলেন। এবার বিদ্ধ হলেন। এর আগেও ওর উপর মার্ডার অ্যাটেম্পট হয়েছিল, তবে এবারে আর ওরা মিস করে নি। দেশটার আরো বারোটা বাজানোর ক্ষেত্রে ওরা একশো ভাগ সফল।”
বীরেন বলল, “কারা মারতে পারে?”
সায়ক বলল, “সবাই। সবার স্বার্থ আছে। কিছুটা হলেও নিয়াজি এ দেশে আইসিসের প্রবেশ আটকানোর চেষ্টা করছিলেন। তারা হতে পারে। মৌলানা হতে পারে। এমন কী যে পদের বলে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, সেই পাকিস্তানি আর্মির কেউও হতে পারে। আমাদের এখন কে হতে পারে সেটা নিয়ে না ভেবে চিন্তা করা উচিত অন্য ব্যাপার নিয়ে। এখন এ দেশে একটা ডামাডোল তৈরি হবে, সব কিছু এদিক ওদিক হবে, এই সুযোগে আমাদের খাঁচা ছেড়ে বেরোতে হবে। চল। খেয়ে নিয়ে তোমাকে ভাল করে সাজিয়ে দিই। বেরনো যাক।”
দুজনেই তাড়াতাড়ি খেয়ে নিল। সায়ক সামান্য টাচ আপ করে বীরেনের বয়সটা খানিকটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “পা টেনে হাঁটবে। পারবে তো?”
বীরেন বলল, “হ্যাঁ।”
সায়ক বলল, “চল এবার।”
দুজনে বেরোল। রাস্তাঘাট এমন কিছু অস্বাভাবিক না। মানুষ জানে এ দেশে এগুলো কোন কিছুই আলাদা নয়। বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে সায়ক ইসলামাবাদের বাসে উঠল। দুজনে বাসের মাঝামাঝি সিট পেল। বাসযাত্রীরা সবাই প্রেসিডেন্টের খুনের ব্যাপারেই কথা বলছিল। সায়কও সমান উৎসাহে কথা বলতে লাগল। বীরেন চুপ করে বসে রইল। একটা দেশ, যেখানে কথায় কথায় ব্লাস্ট হচ্ছে, রাজনীতিবিদরা খুন হচ্ছে, দেশের অর্থনীতিড় ক্রমাবনতি হচ্ছে, সে দেশের মূল কাজই হল প্রতিবেশী দেশের ক্ষতি করা। কী অদ্ভুত একটা দর্শন এদের
ইসলামাবাদ ঢোকার আগে বাস দাঁড়িয়ে গেল। রাস্তায় মিছিল নেমেছে। প্রেসিডেন্টের সমর্থকেরা রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। সায়ক ফিসফিস করে বলল, “দিস ইজ দ্য ডিজায়ারড ডামাডোল।”
কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে লাঠি চার্জ করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে বাস খানিকটা এগোনোর পর আবার আটকালো। আবার খানিকটা এগিয়ে আবার আটকালো। প্রতিবার কারণ একই। সন্ধ্যে নামছে। এক ঘণ্টার রাস্তা তিন ঘণ্টা লাগল। তারা যখন বাস স্ট্যান্ডে নামল, তখন রাস্তায় রাস্তায় প্রতিবাদ তুঙ্গে উঠেছে। সায়ক বাস স্ট্যান্ডে নেমে অটোতে উঠে বলল, “সেক্টর থ্রি, শাহবাজ অ্যাপার্টমেন্ট।”
অটো চালক বলল, “মিয়াঁ, অটো চলছে অসুবিধা নেই, কিন্তু একবার থেমে গেলে, কোথাও অবরোধ হলে কিন্তু কিচ্ছু করার নেই।”
সায়ক করুণ গলা করে বলল, “ভাইজান, আমাদের চাচা খুব অসুস্থ, যে কোন সময় আল্লাহর কাছে চলে যাবেন, আপনি দয়া করে আমাদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন।”
অটোচালক সামান্য নরম হয়ে বলল, “কী করবেন ভাইজান, এই তো দেখছেন কী হাল, আমি দেখছি কোন শর্টকাট দিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় নাকি।”
পাকিস্তানের অন্যান্য বড় শহরের মত ইসলামাবাদ ঘিঞ্জি নয়, প্ল্যানড শহর। রাস্তা আটকানো হলেও বেশি সময় লাগল না। অটো চালক তাদের চাচাজানের কথা শুনে আর বেশি অধৈর্য হল না। রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ তারা শাহবাজ অ্যাপার্টমেন্টের গেটে নামতে পারল।
অটোচালককে একটু বেশি রূপী দিলে সে রুপী নিয়ে খুশি হয়ে চলে গেল। সায়ক অ্যাপার্টমেন্টের গেটে গিয়ে সিকিউরিটিকে বলল, “জনাব, সাতশো ন’ নাম্বারে যাবো। উসমান আলী।”
সিকিউরিটি উসমান আলীর সঙ্গে কথা বলে তাদের এন্ট্রি করিয়ে তবে ছাড়ল। লিফটে উঠে বীরেন বলল, “উসমান আলী কে?”
সায়ক বলল, “তুমি সেদিন জিজ্ঞেস করছিলে ইসলামাবাদে আমাদের কেউ আছে নাকি?”
বীরেন বলল, “আপনিও তো এরকম অ্যাপার্টমেন্ট কিনে থাকতে পারতেন এখানে?”
সায়ক হেসে ফেলল, “একেক জনের একেক রকম কাজ পছন্দ। তুমি পারবে এখানে সারাজীবনের জন্য থেকে যেতে? দেশে যেতে ইচ্ছে করবে না? তাহলে স্যারকে বলতেই পারো।”
বীরেনের তার মফঃস্বলের কথা মনে পড়ে গেল। বাবার কথা মনে পড়তে ফিরতেও ইচ্ছে করে না, অথচ জন্মভূমির কথা ভাবলে মন খারাপ হয়ে যায়।
সায়ক তার কাঁধে হাত রাখল, “ভেবো না। একদিন সবাই বাড়ি যাবে। অতো চিন্তার কিছু নেই।”
সাতশো ন নম্বর ফ্ল্যাটের কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে গেল। তারা ফ্ল্যাটের ভেতরে ঢুকতেই উসমান দরজা বন্ধ করে বলল, “সুখবর আছে। রাতটা থাকতে পারবে। আমার বউ ওর বন্ধুর বাড়ি গিয়ে আটকে গেছে। রাতে ফিরবে না।”
ফ্ল্যাটটা ছোট। তবে গোছানো।
সায়ক বলল, “ঠিক আছে। কিন্তু এই রাতের মধ্যেই তোমাকে আমার শুধু একটা কাজ করে দিতে হবে।”
উসমান বলল, “বস। বস। বসে বল।”
সায়ক বসল। বীরেনকে বসতে বলল।
উসমান বলল, “বল কী করতে হবে?”
সায়ক তার ছোট ফোনটা বের করে ফোনের ইনবক্স থেকে একটা কোড বের করে উসমানকে বলল, “কোড
আছে। সিসিটিভি এক্সেসের ইউজার আইডি। আমাকে এই ইউজার আইডির পাসওয়ার্ড হ্যাক করে লাস্ট উইকের ক্লিপ দেখাতে হবে।”
উসমান হেসে ফেলল, “একটা সোজা কাজ যদি নিয়ে আসো। কোথাকার সিসিটিভি?”
সায়ক বলল, “রাজা মার্কেট, ইমান শেখের দোকানের।”
বীরেন চমকে সায়কের দিকে তাকাল।
৫৩
অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের অফিসে আতরকে ইন্টারোগেশন চেম্বারে বসিয়ে রাখা হয়েছে। আমিন তারেককে বললেন, “আমরা আতরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাই। আপনারা এ ঘর থেকেই সব শুনতে পারবেন।”
তারেক বললেন, “ঠিক আছে। তাই হোক। ওকে নিয়ে যাবার ব্যাপারে কোন নির্দেশ এসেছে?”
আমিন বললেন, “উপর থেকে ইন্সট্রাকশান না এলে আমরা কিচ্ছু করতে পারব না। আমরা ইন্টারোগেশন শুরু করি। তারপর না হয় দেখা যাবে।”
মাথুর বললেন, “ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা করা যায়? খুব খিদে পেয়েছে।”
আমিন লজ্জিত হলেন, “ছি ছি, এটা আমার মাথায় রাখা দরকার ছিল। আপনারা বসুন, আমি এখনই ব্যবস্থা করছি।”
আশরফ বললেন, “এই ছেলেটার ব্যাকগ্রাউন্ড চাই অফিসার। কোথায় বাড়ি, কী করে, কোথায় কোথায় গেছিল, সব জানতে হবে।”
আমিন বললেন, “খোঁজ লাগানো হয়েছে। আপাতত ইন্টারোগেশনটা শুরু হোক।”
আশরফ বললেন, “ঠিক আছে। দেখে নিন কিছু জানতে পারা যায় নাকি।”
তারা কন্ট্রোল রুমেই বসলেন। একজন সিনিয়র অফিসার ইন্টারোগেশন চেম্বারে আতরের মুখোমুখি হলেন। আতরের সামনে বসে অফিসার বললেন, “নাম?”
আতর বলল, “আতর আলী।”
অফিসার বললেন, “জিয়া টেক্সটাইলের ঘরটা পেলি কী করে?”
আতর কেঁদে ফেলল। বলল, “স্যার, আমি কিছু জানি না স্যার। আমাকে ছেড়ে দিন।”
অফিসার উঠে আতরকে জোরে চড় কষালেন। আতর হাউমাউ করে উঠল।
অফিসার আবার শান্ত মুখে চেয়ারে বসে বললেন, “সত্যি কথা না বললে তোর কপালে যে কী দুঃখ আছে, সে সম্পর্কে তোর কোন ধারণা নেই।”
আতর বলল, “স্যার কেন সত্যি বলব না? আমার কোথাও থাকার জায়গা নেই স্যার। ওই কারখানাটা বন্ধ হয়ে আছে, আমি ওখানে ঘুমোতে যেতাম।”
অফিসার ইন্টারোগেশন চেম্বার থেকে বেরিয়ে এসে বললেন, “রসুল বলে ছেলেটাকে ভেতরে পাঠাতে হবে। আতর কিছুই স্বীকার করছে না।”
আমিন রসুলকে ইন্টারোগেশন চেম্বারের ভেতরে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন।
আশরফ বললেন, “এ কিছুই বলছে না, তাই না?”
আমিন বললেন, “হ্যাঁ।”
আশরফ বললেন, “এদের ট্রেনিং এভাবেই হয়। এত সহজে এরা কিছু বলবে না।”
আমিন বললেন, “ট্রেনিং যেভাবেই হোক, জমিদার বাড়িতে এরা ওই অ্যামেচার দলটাকে পাঠাল কেন?”
আশরফ বললেন, “এটাই তো প্যাটার্ন। আসল মাথা কোন দিন যাবে না। এরা ভেবেছিল আমরা সংখ্যায় কম, সহজেই মেরে আসতে পারবে। লোকাল ক্রিমিনালদের টাকা দিয়ে পাঠালেই কাজ হয়ে যাবে ভেবেছিল। যে ক’টা ধরে পড়েছে, কেউ কিছুই জানবে না। এই আতর জানবে। তাও পুরোটা জানবে না। যেটুকু জানবে, আমাদের সেটুকু জানলেই কাজ হয়ে যাবে।”
আমিন চিন্তিত মুখে বললেন, “ঠিক আছে। রসুলকে নিয়ে আসা হচ্ছে। দেখা যাক।”
রসুলকে প্রাথমিক ফার্স্ট এইড দিয়ে নিয়ে আসা হল। ইন্টারোগেশন চেম্বারের বাইরে ওকে দাঁড় করানো হল। আতরকে দেখা মাত্র রসুল বলল, “এই তো। এই ছিল। এই আমাদের পাঠিয়েছিল।”
আমিন বললেন, “একে আগে চিনতিস?”
রসুল বলল, “না স্যার, আগে এলাকায় দেখি নি। গত কাল সকালে আমাকে একজন ফোন করে বলল অনেক টাকা পাওয়া যাবে একটা কাজ করে দিলে। তারপর ওই কারখানায় দেখা করতে বলল। আমি কি অতো কিছু বুঝেছিলাম স্যার?”
আমিন বললেন, “ঠিক আছে। আমি একবার দেখছি। তুই আয় আমার সঙ্গে।”
রসুলকে নিয়ে আমিন চেম্বারে প্রবেশ করলেন। রসুল আতরের সামনে বসে বলল, “কেমন আছেন ভাইজান?”
আতর আকাশ থেকে পড়ার ভাব করে বলল, “কে আপনি? আপনাকে তো আমি চিনি না।”
তারেক মনিটরে বসে ছিলেন। বললেন, “উঁহু, আশরফ ঠিক ধরেছো, এই ছেলে পাকা ঘুঘু। রসুল রেকগনাইজ করার পরেও সটান অস্বীকার করা শুরু করেছে। এর থার্ড ডিগ্রি দরকার।”
আশরফ বললেন, “ঠিক আছে। ওকে আমরা নিয়ে যাই। এখানে থাকলে আমাদের মত করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবো না।”
তারেক বললেন, “তুষার স্যারকে ফোন কর। যে কোন প্রেসের কাছে এই ব্যাপারে খবর গেলে প্রচুর ঝামেলা হবে। আতরের এগেইন্সটে রসুলের সাক্ষ্য ছাড়া কোন সলিড প্রমাণ নেই। এদের কনভিন্স করে নিয়ে যাওয়ার থেকে ব্যাপারটা হাই লেভেল থেকে হোক।”
আশরফ তুষারকে ফোন করলেন। তুষার ধরলেন, “বল।”
আশরফ বললেন, “স্যার, উপর মহলে কথা হল? এই ছেলেটাকে আমাদের চাই।”
তুষার বললেন, “হ্যাঁ, কথা হয়েছে। নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনেকগুলো সমস্যা আছে। ওকে তোমরা আলাদা করে ইন্টারোগেট যাতে করতে পারো তার ব্যবস্থা করছি।”
আশরফ বললেন, “ঠিক আছে স্যার। তাহলেও হবে। সেটা দেখুন।”
আশরফ ফোন রাখতে দেখলেন, আমিন আতরকে মারতে শুরু করলেন। আতর জোরে চিৎকার করছে। আশরফ চিন্তিত মুখে আতরের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, “আমরা কিছু একটা মিস করে যাচ্ছি কি?”
৫৪
রাত আড়াইটা। মন দিয়ে ইমান শেখের দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ দেখছে সায়ক। দোকানের সিসিটিভি লগ ইন হ্যাক করে উসমান ঘুমিয়ে পড়েছে। সায়কের সঙ্গে বীরেনও জেগে আছে।
ব্যস্ত বাজার। সর্বক্ষণ মানুষের ভিড় লেগে আছে। সায়ক ফাস্ট ফরোয়ার্ড করে দেখছিল।
বড় কালো গাড়িটা দোকানের সামনে দাঁড়ানো দেখে পজ করে বলল, “ওকে, তাহলে জামিল আজকেই এসেছিল।”
বীরেন বলল, “এই গাড়িটা এর আগেও বাজারে দেখেছি।”
সায়ক বলল, “রোয়াব দেখেছো এর? অন্য কোন গাড়ি এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখার ক্ষমতা আছে কারো? জামিলের আছে।”
বীরেন বলল, “জামিলের এত ক্ষমতা কী করে হল?”
সায়ক বলল, “পলিটিকাল পাওয়ার আছে। তা সত্ত্বেও এর ইমানকে দরকার ছিল। এখন যেমন রজ্জাককে দরকার। ব্যক্তিগত দরকার যে নয়, তা বোঝাই যাচ্ছে। দেশের বাইরে থেকে আসা টেরোরিজম ফান্ডের ডলার জামিলের মাধ্যমে পাকিস্তানে সারকুলেট হয়। আর রাওয়ালপিণ্ডি থেকে কাশ্মীরের নেটওয়ার্ক ছিল ইমান শেখের কাছে। এখন ভয়ে হোক, ভক্তিতে হোক, রজ্জাককে সেটা করতে হচ্ছে। কিংবা রজ্জাকই দাদাকে খুন করিয়েছে। আমাদের কপাল মন্দ বীরেন, সব কিছু বড্ড তাড়াতাড়ি হয়ে গেল। অন্তত আর পনেরোটা দিন পরে ব্লাস্টটা হলে তুমি রজ্জাকের গুডবুকে ঢুকে যেতে। ওর থেকে কাশ্মীর লিঙ্কের ব্যাপারে অনেক কিছু জানার ছিল। ইমানের খুনের পর জামিল অন্য নেটওয়ার্ক ইউজ করছে। রজ্জাকও তাই করছে। এই নতুন নেটওয়ার্কটা বের না করলে এ দেশ থেকে কাশ্মীরে টেরর ফান্ডিং বন্ধ করা যাবে না।”
বীরেন বলল, “জামিল এসেছিল কেন?”
সায়ক বলল, “নতুন কনসাইনমেন্টের বুকিং করতে, আবার কী? রজ্জাক এই জন্যই তো তোমাকে রেখেছিল। ও দোকানের হিসেবের কাজ করত। হিসেবের কাজের কেউ না থাকায় কাশ্মীর যেতে পারছিল না। এবার ওর যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। আমার হিসেব বলছে রজ্জাক কাল ভোরে রওনা দেবে এর আগেও তাই করেছিল। ও পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যায়। আমাদেরও যেতে হবে।”
বীরেন বিস্মিত হয়ে বলল, “কাশ্মীর?”
সায়ক বলল, “আপাতত আজাদ কাশ্মীর। তারপর কোথায় যাবে দেখতে হবে। আমাকে আরেকটা খবরও নিতে হত। ঠিক আছে, একটু ঘুমিয়ে নাও তুমি। আমরা ভোর পাঁচটায় বেরোব। আমার আরো কিছু কাজ আছে। জেগে থাকবে না। ঘুমনোর চেষ্টা কর। তোমার ঘুমের দরকার আছে।”
বীরেন বলল, “ঠিক আছে।”
বীরেন সোফাতেই চোখ বুজল। আগের দিনের থেকে সামান্য উন্নতি হল উসমানের ফ্ল্যাটে এসে। মেঝে থেকে সোফা।
ভোর সাড়ে চারটেয় তুলে দিল সায়ক। উসমান উঠে পড়েছিল। সায়ককে বলল, “টেক কেয়ার। তোমার জন্য আবার অ্যাপার্টমেন্টের সিসিটিভি সার্ভার হ্যাক করতে হবে আমায়।”
সায়ক বলল, “সিকিউরিটি এন্ট্রি খাতাটা ভুলো না।”
উসমান হাসল, “একবারেই না। চিন্তা কোর না বীরেন, আবার দেখা হবে। তখন ভাল করে খাওয়া দাওয়া করা যাবে। সায়ক আমায় এত খাটালো এবার, তোমাদের ঠিক করে খাওয়াতেই পারলাম না।”
বীরেন বলল, “না না ঠিক আছে।”
সায়ক বলল, “রাস্তায় দেখা হলে চিনবে না। কোথায় খাওয়াবে হে?”
উসমান বলল, “নিশ্চয়ই খাওয়াবো। দেখা যাক সেটা কবে হয়।”
বীরেনের আরেকবার টাচ আপ করে দিল সায়ক।
দুজনে লিফটে নিচে নামল যখন তখন ভোর পাঁচটা। অবশ্য ভোর বলা ভুল। সূর্য ওঠে নি।
বেসমেন্টের পার্কিং-এ একটা বাইক প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা ছিল। প্লাস্টিক সরিয়ে বাইকটা স্টার্ট দিয়ে সায়ক
বলল, “বসে পড়।”
বীরেন সায়কের পেছনে বসে বলল, “এটা কি উসমানের বাইক?”
সায়ক বলল, “চোরাই বাইক।”
বীরেন অবাক হয়ে বলল, “মানে?”
সায়ক বলল, “চোর বাজার থেকে কিনে উসমানের কাছে রেখেছিলাম। আজকের মত কোন দিনের জন্যই।”
বীরেন বলল, “এরকম আরো বাইক আছে আপনার?”
সায়ক বলল, “আপাতত নেই। লাগবে হয়ত পরে।”
বীরেন চাপে পড়ে গেল। ধরা পড়লে তো মেরে ফাটিয়ে দেবে লোকজন। নাকি এদেশে এসব বাইক চুরি স্বাভাবিক ব্যাপার? কে জানে!
যে রাস্তা দিয়ে রাওয়ালপিণ্ডি থেকে তারা বাসে ইসলামাবাদে এসেছিল, সেই একই রাস্তা দিয়ে রাওয়ালপিন্ডি এল। ভোরে অবরোধ হয় না। তবে গত রাতের বিক্ষোভের নিদর্শন রাস্তায় পড়ে ছিল। ছেঁড়া পতাকা, টায়ার পোড়া, কোন কিছুই বাদ নেই।
রাজা মার্কেট এখন একবারে ফাঁকা। সবে কয়েকটা দোকান খুলেছে। সায়ক একটা দূরত্বে বাইক দাঁড় করিয়ে রাস্তার কোণের চায়ের দোকানে বসল। এখান থেকে ইমান শেখের দোকান বেশ খানিকটা দূরে, আবার লক্ষ্যও রাখা যায়।
সকাল সকাল গরম চা খেতে বেশ ভাল লাগছিল বীরেনের। তাদের মফঃস্বলের চায়ের দোকানের কথা মনে পড়ে গেল। বন্ধুরা মিলে তারা দোকানে বসে আড্ডা মারত।
পাঁচটা পঁয়ত্রিশ নাগাদ একটা টয়োটা গাড়ি দাঁড়াল ইমান শেখের দোকানের সামনে। রজ্জাক গাড়িটায় ওঠা মাত্র সায়ক চায়ের দোকানের টাকা মিটিয়ে বাইকে উঠল। বীরেন বাইকে উঠলে সায়ক বলল, “অদ্ভুত ব্যাপার। এখান থেকে চায়ের দোকান বেশি দূরে ছিল না। ইমান তো হেঁটে চলে যেত। এ গাড়ি করল যে?”
গাড়িটা বাস স্ট্যান্ডের দিকে গেল না। ইসলামাবাদের দিকে চলতে শুরু করল। একটা দূরত্ব রেখে সায়ক বাইক চালাতে লাগল। বীরেন বলল, “রজ্জাক মুজফফরাবাদ যাচ্ছে না? তাহলে কোথায় যাচ্ছে?”
সায়ক বলল, “সেটাই তো দেখতে যাচ্ছি হে।”
বীরেন বলল, “যদি গাড়িতেই মুজফফরাবাদ যায়, তাহলে আমরা কি বাইকেই যাব?”
সায়ক হেসে ফেলল, “দেখাই যাক না।”
গাড়ি মুজফফরাবাদের দিকে না ঘিরে ইসলামাবাদ শহরের রাস্তায় ঢুকল। সেক্টর ওয়ানের সেন্ট্রাল পার্কের পাশে একটা বড় বাড়ির সামনে দাঁড়াল।
সায়ক বাইক দাঁড় করাল না। গতি কম করল।
বীরেন দেখল বাড়িটা থেকে একজন চারজন লোক পরিবৃত হয়ে একজন বয়স্ক মানুষ বেরোলেন। সায়ক হঠাৎ করেই বাইকের গতি বাড়িয়ে রজ্জাকের গাড়িটা পেরিয়ে পরের চার মাথার মোড়ের পাশে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল, “তোমার সকালে ওঠা সার্থক বীরেন। কাকে দেখলে জানো?”
বীরেন বলল, “কাকে?”
সায়ক বলল, “দ্য ওয়ান এন্ড ওনলি মৌলানা হজরতউল্লাহ।”
বীরেন চমকে উঠল।
৫৫
“বল আতর। কেমন আছো?” আতরের সামনে বসে বললেন তারেক।
একটা গোপন বাড়িতে আতরকে নিয়ে আসা হয়েছে। আতরকে দেখে বিন্দুমাত্র মনে হওয়া সম্ভব নয় তার মনের মধ্যে কী চলছে। তারেকের প্রশ্নের উত্তরে আতর সেই একই বাধা বুলি বলল, “ভাল আছি স্যার। আমাকে ছেড়ে দিন না স্যার। আমি কিচ্ছু জানি না।”
তারেক বললেন, “দেখ ভাই, আমরা তো মানুষ। মানুষ মানে কী?”
আতর অবাক হয়ে বলল, “কী স্যার?”
তারেক বললেন, “মানুষ মানে হল হি ইজ মরটাল। মরতে হবেই। তাই না?”
আতর চোখ মুখ শক্ত করে বলল, “জি।”
তারেক বললেন, “এবার তোকে আই এস আই যে কোন ক্যাম্পে গিয়ে যত খুশি ট্রেনিংই দিক না কেন, আমি ঠিক করেছি, মরার আগে তোকে এমনভাবে বাঁচিয়ে রাখব যে তোর জীবনের উপর সমস্ত রকম ভক্তি শ্রদ্ধাই চলে যাবে। বুঝলি?”
আতর বলল, “স্যার আমি কিছু জানি না। বলছি তো বার বার।”
তারেক সোহানকে দেখিয়ে বললেন, “এই ছেলেটা কে জানিস? সোহান রশিদ। ইন্ডিয়ান আর্মি গেরিলা বাহিনী। নিজেরা যেমন অত্যাচার সহ্য করতে পারে, তেমনি তোদের মত ক্রিমিনালদের অত্যাচার করার এক লক্ষ উপায় ধরণের বই লিখে ফেলতে পারে। সোহান, ওকে একটা ডেমো দাও।”
সোহান একটা চামচ নিয়ে আতরের ডান চোখে ঢুকিয়ে দিল। আতর আর্তনাদ করে উঠল। তারেক বললেন, “দেখ আতর, তুই তো মরবিই। কিন্তু তুই আমাদের চিনিস না। নদীর পাশে কিংবা গোপন কোন ট্রেনিং ক্যাম্পের প্রোডাক্টদের পেট থেকে কীভাবে পেট থেকে কথা বের করতে হয়, আমরা জানি। তোর উপর আমার বিন্দুমাত্র মায়া নেই। তোকে মরতেই হবে। তার আগে তুইই আমাদের বলে যাবি, তুই টেক্সটাইল কারখানায় বসে কী করতিস।”
আতরের মুখ রক্তে ভরে যাচ্ছিল। আর্তনাদ করতে করতে আতর বলল, “পাকিস্তান থেকে দুজন এসেছে। ওদের কথাতেই হচ্ছে। আমি আর কিছু জানি না স্যার। বিশ্বাস করুন।”
তারেক বললেন, “কোথায় গেছে তারা?”
আতর বলল, “জানি না স্যার।”
তারেক ইশারা করলেন। সোহান একটা বড় কাঁচি দিয়ে আতরের ডান কান কেটে দিল। আতর হড় হড় করে বমি করে ফেলল। তারেক বললেন, “সবে শুরু। বল কোথায় গেছে।”
আতর বলল, “সুমাইমাকে নিয়ে গেছে ওরা। মেরে দেবে। মেরে দেবে। সুমাইমার উপর ওদের খুব রাগ। ওদের বসকে মেরেছে সুমাইমা। মেরে দেবে ওরা সুমাইমাকে। আমাকে এবার ছেড়ে দিন স্যার। মেরে ফেলুন। মারুন।”
তারেক বললেন, “কোথায় আছে? ওরা। ক’জন? বল, নইলে তোকে জ্যান্ত অবস্থায় কাটতে শুরু করব।”
আতর বলল, “মগবাজারে আছে। রুম নাম্বার একশো তেরো। দুজন। সেভেন স্টার মুনলাইট হোটেলে। ওমানের পাসপোর্ট স্যার। আমাকে মেরে দিন একবারে স্যার। মারুন।”
তারেক বললেন, “তুই মরবি কেন? তোকে এত তাড়াতাড়ি আমরা মারতে পারি? প্রথমেই বলে দিলে কিছু হত না। এবার যেটা হচ্ছে, সেটা তোর নিজের দোষেই হচ্ছে।”
আতর কাঁদতে থাকল। তারেক আশরফকে বললেন, “দুটো আই এস আইয়ের পাখি মগবাজারে আছে। ও বলছে ওরা নাকি সুমাইমাকে নিয়ে গেছে। সুমাইমা কে?”
আশরফ বললেন, “রুকসার হতে পারে। অন্য কেউ হতে পারে। কী করব, শুভকে দেখতে বলব?”
তারেক বললেন, “শুভ কি পারবে? ওরা অলরেডি ওকে চেনে। শুভকে দেখলে সাবধান হয়ে যেতে পারে। এই অপারেশনে আমি যাবো।”
আশরফ বললেন, “আর যদি এটা ট্র্যাপ হয়?”
তারেক বললেন, “এর পরেও মিথ্যে বলবে?”
আশরফ বললেন, “এদের পক্ষে সব সম্ভব। আমার মনে হয় আমিন সাহেবকে বলা দরকার। এই কেসগুলো ওরা ঠিক ঠাক সামলাতে পারে।”
তারেক বললেন, “আই এস আইয়ের ব্যাপারে আমি কী করে আমিনকে বিশ্বাস করব খান?”
মাথুর বললেন, “না। তারেক ঠিক বলেছে। যদি বিশ্বাস করাও যায়, তাহলেও অনেকগুলো ঝামেলা আছে। তারেকের সঙ্গে আমরাও যাবো। গুরপ্রীত আর সোহান চলুক। দুজনের জন্য আমরা চারজন।”
আশরফ বললেন, “ধরলেও নিয়ে আসবে কী করে?”
মাথুর বললেন, “আগে দেখা যাক আতর সত্যি বলছে নাকি।”
তারেক বললেন, “একটা রিস্ক আমাকে নিতেই হবে। আমি ওই হোটেলে চেক ইন করছি। তারপর দেখছি একশো তেরোতে কেউ থাকে নাকি। ব্যাক আপ হিসেবে তোমরা হোটেলের কাছে থাকবে। ডান?”
আশরফ বললেন, “ডান। তাই হোক।”
৫৬
তুষার সবে ঘুম থেকে উঠেছিলেন, তার ফোন বেজে উঠল। ধরলেন, “হ্যালো।”
“কদম কদম বড়ায়ে যা, খুশি কে গীত গায়ে যা।”
সায়ক। তুষার বললেন, “আপডেট দাও।”
সায়ক বলল, কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়েছে স্যার।”
তুষার ভ্রূ কুঁচকালেন, “মানে?”
সায়ক বলল, “রজ্জাক কনসাইনমেন্ট নিয়ে কাশ্মীর যাবে ভেবেছিলাম, দেখা গেল মৌলানাকে নিয়ে এয়ারপোর্টে গেল। সম্ভবত, মৌলানাকে রজ্জাকের কোন রিলেটিভের কভারে যাচ্ছে।”
তুষার বললেন, “কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কখন জানা যাবে?”
সায়ক বলল, “উসমানকে বলেছি। দেখা যাক।”
তুষার বললেন, “মৌলানা অন্য নামে যাবে, তবে রজ্জাকের নাম সম্ভবত পালটাবে না। বের করা সহজ হওয়া উচিত। নিয়াজির অ্যাসাসিনেসনের পরের দিন মৌলানা দেশ ছাড়ছে। সিমস ইন্টারেস্টিং।”
সায়ক বলল, “মৌলানার হিট লিস্টে নিয়াজি ছিল।”
তুষার বললেন, “কোন ফটো তোলা গেছে?”
সায়ক বলল, “হ্যাঁ স্যার। পীযূষকে পাঠিয়ে দিয়েছি”
তুষার বললেন, “গুড। বীরেনকে নিয়ে আমি চিন্তায় আছি সায়ক। মাঝে মাঝেই মনে হচ্ছে ওকে এখনই পাঠানো ঠিক হয় নি।”
সায়ক বলল, “বীরেন ইজ গুড স্যার। ভেরি গুড। ও পারবে। ওকে কয়েক দিন লুকিয়ে রাখতে হবে। আমি সে ব্যবস্থা করছি। আপনি ভাববেন না। অনেক দিন পর আজ আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারলাম”
তুষার বললেন, “ওকে। টেক কেয়ার।”
ফোন রেখে তুষার রাইটিং প্যাড বের করে বড় বড় করে লিখলেন, “মৌলানা হজরতউল্লাহ দেশ ছাড়ল। কেন? ও যদি নিয়াজিকে মারার নির্দেশও দেয়, তাহলেও ওর দেশ ছাড়ার দরকার ছিল না। তাহলে ওর অন্য কোন প্ল্যান আছে? কী সেই প্ল্যান?”
তুষারের ফোন আবার বেজে উঠল। মুম্বই থেকে শ্রীবাস্তব ফোন করছেন। ধরলেন তুষার, “বল শ্রীবাস্তব সুনয়না দাভের আপডেট দাও।”
শ্রীবাস্তব বললেন, “অলমোস্ট সেম রুটিন স্যার। ভদ্রমহিলা একা থাকেন। সকালে উঠে মর্নিং ওয়াকে যান। ফিরে ন’টার সময় কলেজের জন্য বেরিয়ে যান। কলেজ থেকে ফেরার সময় দয়াসাগর আশ্রমে গিয়ে দর্শন করে রাত আটটায় বাড়ি ফেরেন।”
তুষার বললেন, “ওকে। আর কিছু নেই?”
শ্রীবাস্তব বললেন, “আর রাতে ফুড ডেলিভারি অ্যাপ থেকে খাবার আনান।”
তুষার বললেন, “কোন রেস্তোরাঁ থেকে আনান?”
শ্রীবাস্তব বললেন, “সেটা তো দেখি নি স্যার। খোঁজ নিচ্ছি।”
তুষার বললেন, “কী খাবার আনান সেটাও দেখবে।”
শ্রীবাস্তব একটু থমকে গিয়ে বললেন, “ঠিক আছে স্যার।”
তুষার ফোন রেখে লিখলেন, “দয়াসাগর আশ্রম। সুনয়না দাভে দয়াসাগর আশ্রম। দয়াসাগর বাবা… প্রচুর ফলোয়ার। গোটা দেশে। অরিজিন কী? লোকটা কোথাকার?”
তুষার পীযূষকে ফোন করলেন। পীযূষ ফোন ধরেই বললেন, “হ্যাঁ স্যার, মৌলানার ছবি পেয়ে গেছি।”
তুষার বললেন, “আমাকে পাঠাও। আরেকটা ব্যাপারে খোঁজ নিতে হবে। দয়াসাগর আশ্রম। এই দয়াসাগরবাবার অরিজিন কী? কোথাকার লোক? কী করে? এত বাবা হয়ে গেছে চারদিকে, কে যে ঠিক আর কে যে ভণ্ড, কিছুই তো বোঝার উপায় নেই হে!”
পীযূষ বললেন, “দশ মিনিট সময় দিন স্যার।”
তুষার বললেন, “ঠিক আছে।”
দশ মিনিট লাগল না, পাঁচ মিনিটের মাথায় ফোন করে পীযূষ বললেন, “স্যার, দয়াসাগরের ডিটেলস তো বের করা চলছে, তার আগে আপনাকে আরেকটা কথা জানিয়ে রাখি। কিছুদিন আগে লখনউতে ইন্সপেক্টর তরুণ শর্মা আর কনস্টেবল বিজয় প্রধান দয়াসাগরের ডিউটি করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। এদের এখনও কোন ট্রেস পাওয়া যায় নি।”
তুষার সোজা হয়ে বসে বললেন, “ইনভেস্টিগেশন হয় নি?”
পীযূষ বললেন, “ইনভেস্টিগেশন চলছে বলা হচ্ছে। কী চলছে, শুধুই কাগজে কলমে চলছে কি না, এ সব বের করছি। নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার কোন কারণও তো নেই।”
তুষার বললেন, “কটা আশ্রম আছে এর?”
পীযূষ বললেন, “দেশের সর্বত্র। যেখানে পাচ্ছে, সেখানেই আশ্রম খুলে ফেলছে। একবারে ফ্রাঞ্চাইজি ব্যবসার মত।”
তুষার বললেন, “মুম্বই আশ্রমটাই এর মেইন ব্রাঞ্চ?”
পীযূষ বললেন, “হ্যাঁ।”
তুষার বললেন, “ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ডিটেলস, কে কে এখানে টাকা দেয়, ফান্ডিং ডিটেলস, সব বের কর তো। আজকে পারবে?”
পীযূষ বললেন, “চেষ্টা করছি স্যার।”
তুষার ফোন রাখলেন। রাইটিং প্যাডে “দয়াসাগর”
লিখে নামটা বড় করে গোল করলেন।
৫৭
রাত আটটা।
ঢাকা, মগবাজার।
সুমাইমা বিছানায় নগ্ন হয়ে পড়ে আছে। তার ঠোঁটের কোণ বেয়ে রক্ত পড়ছে।
আতরের খবরটা এসেছে। দুজনে তাড়াতাড়ি তৈরি হচ্ছিল।
বিলাল বলল, “এটাকে কী করবি?”
ইউসুফ বলল, “পড়ে থাক। ওদের পুলিশ যা পারে করুক।”
বিলাল হেসে উঠল, “কী আর করবে? পাকিস্তানিদের মত আনন্দ তো আর দিতে পারবে না।”
বিলালও হেসে উঠল। দুজনে হোটেলের রুম থেকে বেরিয়ে দরজা বন্ধ করে নিচে নামতে রিসেপশনে গিয়ে বলল, “আমরা ঘুরে আসছি। চাবি নিয়ে গেলাম।”
রিসেপশনের ছেলেটা বলল, “ঠিক আছে।”
হোটেল থেকে বেরিয়ে বিলাল চাবিটা ড্রেনে ফেলে হেসে উঠল, “আমরা আর ঘুরে আসব না। তোরা পাগলের মত খুঁজে মর।”
ইউসুফও হেসে উঠল।
দুজনে ট্যাক্সিতে উঠে বসল।
#
রাত দশটা। সেভেন স্টার মুনলাইট হোটেলের রিসেপশনে গিয়ে তারেক বললেন, “রুম হবে?”
“হ্যাঁ হবে।”
“ফার্স্ট ফ্লোরে হলে সুবিধা। হাঁটুতে ব্যথা আছে।”
“জি জনাব। দিচ্ছি’।
একশো এক নাম্বার রুমের চাবি নিয়ে ঘরে ঢুকে তারেক আশরফকে ফোন করলেন, “হ্যাঁ খান, আমি হোটেলে চেক ইন করেছি।”
আশরফ বললেন, “একশো তেরোতে কেউ আছে?”
তারেক তার রুম থেকে বেরোলেন। একশো তেরোর সামনে গিয়ে দেখলেন তালা ঝুলছে। বললেন, “তালা দেওয়া।”
আশরফ বললেন, “শিট। তাহলে কী হবে?”
তারেক বললেন, “আমার তালা খুলতে দু মিনিট লাগবে। খুলব?”
আশরফ বললেন, “খোল।”
তারেক চারদিকে দেখলেন। করিডরে কেউ নেই। হোটেল করিডোরে কোন সিসিটিভি নেই। পকেট থেকে একটা তার বের করে তালা খুলতে চেষ্টা করলেন। দুবার হল না। তৃতীয়বার তালা খুলে গেল। ঘরে ঢুকে দেখলেন সুমাইমা কাতরাচ্ছে। তারেক বাথরুমের দরজা খুললেন। কেউ নেই। সুমাইমার কাতরানি বাড়ছিল। তাড়াতাড়ি একটা চাদর দিয়ে সুমাইমাকে ঢেকে জলের বোতল নিয়ে সুমাইমার চোখে মুখে জলের ছিটে দিয়ে বললেন, “শুনতে পাচ্ছো?”
সুমাইমা কোন সাড়া দিল না। তারেক বললেন, “আশরফ। মেয়েটাকে সম্ভবত রেপ করে ফেলে রেখে গেছে। রক্তে ভাসছে বিছানা। আমি আমিনকে ডাকছি। আমার হাতে আর কোন উপায় নেই।”
আশরফ বললেন, “হু। ডাকতে হবে। ইনহিউমান শোনাচ্ছে, তবু বলব মেয়েটার একটা ছবি পাঠাও। নিডস আইডেন্টিফিকেশন।”
তারেক সুমাইমার ছবি তুলে আশরফকে পাঠালেন।
আশরফ ছবি দেখে বললেন, “গুড গড! এই মেয়েটাই রুকসার! একে বাঁচাতে হবে তারেক। অ্যাট এনি কস্ট। নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা কর। এখনই। আমরা আসছি।”
তারেক বললেন, “আমি দেখছি।”
তারেক দৌড়তে দৌড়তে রিসেপশনে দিয়ে হোটেল তোলপাড় করে দিলেন কয়েক মিনিটের মধ্যে। প্রায় একই সময়ে অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে আমিনও এসে উপস্থিত হলেন। হোটেলের বাইরের ভিড়কে সরিয়ে সুমাইমাকে নার্সিং হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হল।
রিসেপশনের ছেলেটাকে আমিন ধমক দিলেন, “আইডি চেক করে হোটেল দিস নি?”
ছেলেটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল, “আই ডি দিয়েছিল স্যার।”
আমিন বললেন, “দেখা।”
আই কার্ডের ফটো কপি খুঁজে বের করল ছেলেটা। আমিনের হাতে দিল। আমিন ভাল করে খুঁটিয়ে দেখে বললেন, “এগুলো জাল। মেয়েটাকে নিয়ে ঢুকেছিল আর তোরা মেয়েটার আই কার্ড নিস নি? এসব চলে এই হোটেলে?”
ছেলেটা মাথা নিচু করল। আমিন বললেন, “মালিককে ডেকে পাঠা। হোটেল সিজ করার ব্যবস্থা করছি।”
তারেক মাথুর এবং আশরফের কাছে এসে বললেন, “রফিক শেরাটনে উঠেছিল আর এই দুজন যদি আই এস আইয়ের লোক হয়, তাহলে এরকম হোটেলে কেন উঠেছে?”
আশরফ বললেন, “লুকিয়ে থাকার জন্য। এসব জায়গায় লুকোনো সহজ।”
তারেক বললেন, “শুধু কি তাই? অন্য কোন মতলব নেই তো?”
মাথুর বললেন, “পাখি তো পালিয়েছে। ঘরটা আরেকবার ভাল করে খুঁজে দেখাই যায়।”
তারেক বললেন, “চল।”
আমিনকে বলে তারা একশো তেরো রুমে ঢুকলেন। বিছানার চাদরের মধ্যে রক্ত, একটা বাজে গন্ধ আসছে ঘরটা থেকে। তিন জনই নাকে রুমাল চাপা দিলেন। আশরফ ওয়ার্ডরোব খুললেন। ওয়ার্ডরোবে কিছু নেই। তন্ন তন্ন করে ঘরের প্রতিটি কোণ খুঁজে ডাস্টবিন থেকে একটা ট্রেনের টিকেট পাওয়া গেল। দুজনের চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার টিকিট।
আশরফ বললেন, “চট্টগ্রাম থেকে এসেছিল। চট্টগ্রামে কী থাকতে পারে?”
তারেক বললেন, “অনেক কিছুই থাকতে পারে। ক্যাম্প তো থাকতেই পারে। ক্যাম্প থাকা অদ্ভুত কিছুই নয়। দুর্গম জায়গুলোতে, যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামে ওদের ক্যাম্পের খবর আমার কাছে আছে। অবাক হবার কিছু নেই।”
আশরফ বললেন, “আমাদের দেরী হয়ে গেল মাথুর। আতরের খবরটা পেয়েই ওরা পালিয়েছে।”
৫৮
রশিদ আর শাহিদ তাদের ঘরে বসে টিভি দেখছিল।
বাশার দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে বলল, “চাচাজান ফোন করেছেন। কথা বলবেন।”
রশিদ টিভি বন্ধ করে দিল। বাশার দরজা বন্ধ করে ফোন স্পিকারে দিল।
ওপাশ থেকে মৌলানার গলা ভেসে এল, “আমরা খুব কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের মানুষেরা কষ্টের মধ্যে আছে। এই সময় যদি আমরা আমাদের মানুষের পাশে না দাঁড়াতে পারি, তাহলে আর কী লাভ হল? পাকিস্তানের তখতে কে বসবে, তার সিদ্ধান্তও আমরাই নিতে পারবো ইনশাল্লাহ, যদি এই অপারেশনটা সফল হয়।”
রশিদ বলল, “চাচাজান, আপনি শুধু সময় আর জায়গা বলুন। বাকিটা আমি দেখছি।”
মৌলানা বলল, “মুম্বই।”
রশিদ বলল, “মুম্বইয়ে কোথায় করতে হবে?”
মৌলানা বলল, “আমি জায়গা বলব না। তোরা জায়গা ঠিক কর। যেখানে প্রচুর লোক থাকবে, সেখানে তোরা দিওয়ালী খেলবি। যত বেশি জোরে শব্দ হবে, তত তাড়াতাড়ি সবাই শুনতে পাবে।”
রশিদ বলল, “কবে?”
মৌলানা বলল, “পরশু সোমবার। সব থেকে বেশি লোক বেরোবে। ওই দিন।”
রশিদ বলল, “ঠিক আছে চাচাজান। আমরা তৈরি।”
মৌলানা বলল, “একটা কনট্যাক্ট পাঠাচ্ছি। শুধু জামা পরলেই তো হবে না, জামায় গয়নাও পরতে হবে। গয়নার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
মৌলানা ফোন কেটে দিল।
বাশার বলল, “একটা ছেলে পাওয়া গেছে। এখানের বস্তিতে থাকে। ওকে পাঠানো যেতে পারে।”
রশিদ বলল, “ছেলে ঠিক হয়ে গেছে। আমি আর অন্য কাউকে নেবোই না।”
শাহিদ বলল, “কী রে বাশার, সত্যি করে বল তো, ওটা কি তোর ছেলে?”
বাশার রাগী চোখে শাহিদের দিকে তাকাল।
শাহিদ এগিয়ে এসে বাশারের পেটে লাথি মারল, “কাকে চোখ দেখাচ্ছিস তুই?”
বাশার খানিকটা দূরে ছিটকে পড়ল।
শাহিদ বলল, “আমরা যা বলব, তাই মুখ বুজে সহ্য করবি। নইলে তোর সব নাম আমরা খারাপ করে দিয়ে যাবো।”
বাশার কাতরাচ্ছিল। রশিদ বলল, “আগেও তোকে বলেছি, এবার শেষ বারের মত বললাম, আমাদের কাজে বাধা দিতে এলে এর ফল ভাল হবে না। কাল রাতে ছেলেটাকে আমাদের কাছে দিয়ে যাবি। গয়না কোথায়?”
বাশার বলল, “আজ চলে আসবে। কাজটা কিন্তু তোমরা ঠিক করছো না। যখনই বাচ্চাটাকে পাওয়া যাবে না, আমাকে মিসিং রিপোর্ট করতেই হবে আশ্রমের তরফ থেকে। পুলিশের র্যাডারে আমি চলে যাবো।”
রশিদ বলল, “বাচ্চা অনেক কারণে হারাতে পারে। তুইই যে সেটা করেছিস, তার কোন প্রমাণ যাতে না থাকে, সেভাবে ব্যবস্থা করবি। গয়নার কনট্যাক্ট এসেছে?”
বাশার তার ফোন দেখল। বলল, “হ্যাঁ। এসেছে।”
রশিদ বলল, “ব্যবস্থা কর। যা।”
বাশার খোঁড়াতে খোঁড়াতে বেরিয়ে গেল। রশিদ দরজা বন্ধ করল। শাহিদ বলল, “চাচাজান কিন্তু এখনই লোকেশন বলল না। আমরা ঠিক করব মানে?”
রশিদ বলল, “মানে এমন কোন লোকেশনে করতে হবে যেখানে কেউ সিকিউরিটির কথা ভাববেই না। ব্লাস্ট হওয়া নিয়ে কথা। এদেশে তো লোকের অভাব নেই, যেখানেই ব্লাস্ট হবে সেখানেই লোক মরবে।”
শাহিদ বলল, “চাচাজান জানত, বাশার কিছুতেই পারবে না। তাই আমাদের পাঠিয়েছে।”
রশিদ বলল, “আমার তো ইচ্ছা করছে বাশারের গায়েই জ্যাকেটটা পরিয়ে দিয়ে রিমোট অন করে দি। জেনানা কোথাকার।”
শাহিদ হেসে উঠল, “যা বলেছো, জেনানাই বটে।”
রশিদের ফোন বেজে উঠল, রশিদ দেখল প্রাইভেট নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। সে ধরল, “হ্যালো।”
“রাত আটটায় ফাস্টেস্ট ফুড অ্যাপে গ্রেট ফুড শপ থেকে তিনশো ছিয়াত্তর টাকার পাওভাজি অর্ডার করতে হবে। গয়না চলে যাবে। আর কাউকে কিছু বলতে হবে না।”
এক মহিলা কণ্ঠ কথাটা বলে ফোন কেটে দিল।
রশিদ অবাক হয়ে শাহিদের দিকে তাকাল, “গয়নার কন্ট্যাক্ট চাচাজান বাশারকে পাঠিয়েছিল। কিন্তু এ তো আমাকেই ফোন করল!”
শাহিদ বলল, “চাচাজান যা চাইবে, তাই হবে। আমরাই শুধু শুধু অধৈর্য হচ্ছিলাম।
রশিদের চোয়াল শক্ত হল, “এবার শুধু অকাল দিওয়ালির অপেক্ষা।”
৫৯
“এই মুহূর্তের সব থেকে বড় খবর হল, মৌলানা হজরউল্লাহকে পাকিস্তান ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। জিয়া ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দর সূত্রে খবর, মৌলানাকে নাম ভাঁড়িয়ে পাকিস্তান থেকে পালাতে সাহায্য করা হয়েছে। গোটা পৃথিবী যখন প্রেসিডেন্ট নিয়াজির খুনের খবর হতচকিত হয়ে গেছে, ঠিক তখনই এই ছবিগুলো আমাদের নড়ে চড়ে বসতে বাধ্য করে। ঠিক কী কারণে প্রেসিডেন্টের হত্যার পরের দিনই মৌলানাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হল? পাকিস্তান বরাবর দাবী করে এসেছে মৌলানা তাদের দেশে নেই, অথচ এই ছবিগুলো তার প্রমাণ দিচ্ছে না। ইন্ডিয়া এই ছবিগুলো দেখে দাবী করছে, প্রেসিডেন্ট নিয়াজির খুনের পেছনে মৌলানা হজরতউল্লাহই দায়ী। অন্যদিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোর দাবী, পাকিস্তানের টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি করতে ইন্ডিয়া এই কাজটা করেছে।”
সি এন এনে বার বার খবরটা দেখাচ্ছে। সামশের খবরটা দেখে আকবরকে ডাকল। আকবর এসে বলল, “খবরটা দেখেছি জনাব। কী করে মৌলানার ছবি বেরিয়ে গেল, আমরা এখনও ব্লু লেস।”
সামশের আকবরের দিকে তাকিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলল, “এরপর নিশ্চয়ই কারা মৌলানাকে মাসকটে পাঠিয়েছে, মিডিয়া সে খবরও পেয়ে যাবে?”
আকবর বলল, “জনাব, এটা তো আর আগের সময় নয় যে আমরা যেভাবে খুশি অপারেট করতে পারবো। এটা মোবাইল ফোনের যুগ। এই সময়ে আমাদের কিচ্ছু করার নেই। আমরা না চাইলেও খবরগুলো এভাবেই সারকুলেট হয়ে যাবে। মৌলানাকে বার বার বলা হয়েছিল আমরা তার চেহারা পাল্টে দেব। উনি কিছুতেই শোনেন নি। কারো সন্দেহ হলে সেটা কী করে আপনি আটকাতে পারবেন?”
সামশের বলল, “উনি চেহারা পালটাবেন না, আর এবার নতুন জেনারেল আমার মাথা টার্গেট করবেন”
আকবর বলল, “ভোট হবে না জনাব?”
সামশের বলল, “আর হয়? এবার জেনারেল সিদ্দিকি প্রেসিডেন্ট হবেন। উনি বিকেলে মিটিং ডেকেছেন। আমাকেই টার্গেট করবেন।”
আকবর বলল, “মিডিয়ায় লিকের ব্যাপারটা বাদ দিলে আমার মনে হয় জেনারেল সিদ্দিকি খুশি হবেন আমাদের সামনের অপারেশনের ব্যাপারে শুনলে। মৌলানা ওঁকে পছন্দও করেন। জেনারেল সিদ্দিকির সঙ্গে মৌলানার সম্পর্ক ভাল।”
সামশের বলল, “সেটা ঠিক। আচ্ছা, মৌলানা আবার মুম্বইকেই টার্গেট করছেন কেন? এবার নতুন কোন শহর হলে কী অসুবিধা হত?”
আকবর বললেন, “স্যার, আমার মনে হয় মুম্বই হল এই চেইন অফ ব্লাস্টের ফার্স্ট শহর। ছাব্বিশ এগারোর পর ইন্ডিয়া মুম্বইতে অনেক বেশি সিকিউরিটি বাড়িয়ে দিয়েছিল। ইনক্রিসড সিকিউরিটি ওদের অনেক বেশি কমফোর্ট জোনে নিয়ে যাচ্ছে। মৌলানা যদি মুম্বইতেই সেটা আবার রিপিট করে, ওরা হতচকিত হয়ে যাবে।”
সামশেরের মুখে হাসি ফুটল, “দ্যাটস ট্রু। মুম্বই সেল একটিভেট হয়েছে?”
আকবর বলল, “জি জনাব।”
সামশের বলল, “নিয়াজির ব্যাপারে মৌলানাই ঠিক। নিয়াজি ইন্ডিয়াকে সেভাবে সিরিয়াসলি নেনই নি। উল্টে আমাদের পার্টনারদের ক্ষতি করেছেন। পাকিস্তানের অনেক আগে সিদ্দিকিকে প্রয়োজন ছিল। আচ্ছা, রাওয়ালপিণ্ডি ব্লাস্টের কোন আপডেট আছে?”
আকবর বলল, “পি আর পি করেছে জনাব। পাক্কা খবর। ইলেকশন ঘোষণা হবার আগেই পি আর পিকে ব্যান করে দিয়েছিলেন নিয়াজি। ওরাই করেছে।”
সামশের ভ্রূ কুঁচকে বলল, “তাহলে রজ্জাকের দোকানের ছেলেটা পি আর পির ছিল?”
আকবর বলল, “না জনাব। ওর ব্যাপারে কোন খবর নেই।”
সামশের রেগে গেল, “এভাবে বললে কী করে হয়? খবর নেই মানে কী? খোঁজ নাও। রজ্জাকের দোকানে কাজ করার আগে ছেলেটা সুলেমানের দোকানে কাজ করল। ব্লাস্টের দিন মরল না ওখানে থাকা সত্ত্বেও। পরের দিন রজ্জাকের দোকানে কাজ করতে এল। যেই মুহূর্তে আমরা বাজার ঘিরে দিলাম, ছেলেটা বেপাত্তা হয়ে গেল। পি আর পির ব্লাস্টের সঙ্গে যদি এই ছেলেটার কোন যোগাযোগ না থাকে তাহলে সামথিং ইজ মোর ফিসি। দুপুরে আমাদের ছেলেদের ডাকো। আমাকে এই ছেলেটা যে কোন প্রকারে হাজির করতে দিতে হবে। অ্যাট এনি কস্ট।”
আকবর বলল, “জি জনাব।”