বিদেশী গুপ্তচর – ১.৯

নয়

জেটিতে ভিড়ছে ভ্যাপোরেটো। সান যাকারিয়া জেটি।

রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে লম্বা একহারা চেহারার এক ঈজিশিয়ান ট্যুরিস্ট। গাঢ় নীল রঙের আধ-পুরানো স্যুট, মাথায় কালো ডেনহাম হ্যাট, গাল ভর্তি সুন্দর করে ছাঁটা দাড়ি, পিঠে বাঁধা একটা ক্যানভাসের রাকস্যাক। অবাক চোখে দেখছে সে ভেনিস নগরীর অপরূপ সান্ধ্য-সৌন্দর্য।

জনা ছয়েক আমেরিকান ট্যুরিস্টের পেছন পেছন নেমে এল রানা। এ বেশে ওর ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবও চিনতে পারবে না ওকে। এখন ও পদব্রজে পৃথিবী পর্যটনরত এক ঈজিপশিয়ান যুবক।

ধীর পায়ে হাঁটতে শুরু করল রানা। সান মার্কো পেরিয়ে হাঁটছে সে সান মারিয়া ফরমোজার দিকে।

হঠাৎ আঁৎকে উঠল রানা ডানপাশের একটা গলি দিয়ে সাদা হ্যাট, সাদা স্যুট পরা লম্বা লোকটাকে বেরিয়ে আসতে দেখে। রানার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার নিরুৎসুক দৃষ্টি বুলিয়ে নিয়ে হাঁটতে শুরু করল লোকটা। চিনতে পারেনি।

হাঁপ ছাড়ল রানা। সামান্য একটু কমিয়ে দিল চলার গতি, হাঁটতে থাকল লোকটার পিছু পিছু। মোড়ের কাছে একটা মদের দোকানে ঢুকল লোকটা। দরজার কাছাকাছি বসল একটা টেবিলে। রানা এসে দাঁড়াল দোকানের সামনে, ট্যুরিস্টসুলভ ইতস্তত করল একটু, তারপর ঢুকে পড়ল দোকানের ভিতর।

সাদা হ্যাট পরা লোকটা মুখ তুলে দেখল রানাকে, তারপর কাউন্টারে দাঁড়ানো মেয়েটাকে ইশারা করল কাছে আসার জন্য। কাছাকাছিই একটা টেবিলে বসল রানা।

মেয়েটা কাছে আসতেই অস্বাভাবিক জোরে বলে উঠল রানা, ‘ভিনো রোজ। আন্ডারস্ট্যান্ড?’

ভুরু জোড়া একটু কুঁচকে গেল মেয়েটার, বিদেশী বলে মাফ করে দিল, মাথাটা সামান্য ঝাঁকিয়ে এগিয়ে গেল সামনের লোকটার কাছে। এক বোতল হোয়াইট শিয়ান্টি চাইল লোকটা।

একটা সিগারেট ধরিয়ে দরজা দিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে রইল রানা।

রানার টেবিলে একটা বোতল আর গ্লাস নামিয়ে দিয়ে এগিয়ে গেল মেয়েটা সাদা হ্যাট পরা লোকটার টেবিলের দিকে।

‘ইল সিনর গীয়ান এসেছিল আজ?’ জিজ্ঞেস করল লোকটা। ‘আসার কথা ছিল।

‘না তো। আসেননি আজ।’

একটা সিগারেট ধরাল লোকটা। গ্লাসে একটা চুমুক দিয়ে ভ্রূ কুঁচকে চেয়ে রইল বোতলটার দিকে।

রাকস্যাক থেকে আল আহরামের একটা কপি বের করে চোখের সামনে মেলে ধরল রানা। মনোনিবেশ করল পড়ায়। গীয়ান কে? মোটা লোকটা?

বোতলটা আধাআধি খরচ হওয়ার আগেই একটা ছায়া পড়ল দরজার কাছে, ভেতরে ঢুকল কালো হ্যাট ও স্যুট পরা বেঁটে মোটা লোকটা। তাহলে এই ব্যাটাই গীয়ান। চট করে সরে এল রানার দৃষ্টি আবার কাগজের ওপর।

‘দেরি হয়ে গেল, ওড্ডি।’ একটা চেয়ার টেনে নিল গীয়ান, বসে পড়ল ধপাস করে। ‘ঘাড়টা এখনও যা টনটন করছে না! নড়াতে পারছি না।’

‘গুলি মারো তোমার ঘাড়। ঘাড়ের নিকুচি করেছি আমি। আমার চোয়ালটা তোমার ঘাড়ের চেয়ে কম ব্যথা পায়নি, সেই চোয়াল নিয়ে পনেরো মিনিট ধরে অপেক্ষা করছি আমি তোমার জন্যে।’

‘তুমি মার খেয়েছ তোমার নিজের দোষে।’

‘আর তুমি খেয়েছ পরের দোষে, নাকি?’

চোখমুখ বিকৃত হয়ে গেল গীয়ানের, হিংস্র একটা ভাব ফুটে উঠল চোখের দৃষ্টিতে। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, ‘পেয়ে নিই শালাকে! আর একটাবার!’

‘তোমার জন্যে ঘাড় পেতে বসে আছে তোমার শালা। খোঁজ খবর রাখো না কিছু? দুপুরে চলে গেছে ব্যাটা প্যারিসে।’

‘আসবে তো আবার। ঠক খেয়ে ফিরবে না? তখন…’ দাঁতে দাঁত চাপল মোটা। ফুলে উঠল চোয়ালের শক্ত পেশী।

‘তোমার আর শোধ নেয়া হবে না, চাঁদ। ও ফিরতে ফিরতে আমরা আমাদের কাজ শেষ করে ফিরে যাব দেশে। হঠাৎ সচকিত হয়ে উঠল ওড্ডি। ‘চলো ওঠা যাক। কাজ পড়ে রয়েছে।’

ঘাড়টাকে কষ্ট না দিয়ে কোমর থেকে ওপরের অংশটা ঘুরিয়ে রানার দিকে চাইল গীয়ান। পত্রিকার গায়ে আরবী আঁকিঝুঁকি দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে সোজা হয়ে বসল। ‘দাঁড়াও, কয়েক ঢোক খেয়ে যাই।’

‘উঁহুঁ, উঠে পড়ো। সময় নেই।’

উঠে পড়ল দুজন, বাঁ দিকে চলে গেল ওরা হাঁটতে হাঁটতে। ওরা চোখের আড়াল হতেই বিল চুকিয়ে দিয়ে উঠে পড়ল রানা। চারপাশে চাইতে চাইতে এগোল সে ওদের পিছু পিছু। সামনের মোড়ে পৌঁছে দেখতে পেল রানা ওদের। একটা দোতলা বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তালায় চাবি লাগিয়েছে লম্বা লোকটা, অর্থাৎ ওড্ডি।

একটু আড়ালে সরে গেল রানা। সবুজ পেইন্ট করা একটা দরজা খুলে গেল। ভিতরে অদৃশ্য হয়ে গেল দু’জন। বাড়ির নম্বরটা পড়ল রানা-২২/এ, ক্যাম্পো ডি সালিযো। কাছাকাছি গিয়ে বাড়িটা ভাল করে পরীক্ষা করবার ইচ্ছেটা দমন করল সে। দোতলার কোন দরজা দিয়ে কেউ ওকে দেখে ফেললে ছদ্মবেশ ধরার উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে।

ওটিভিয়ানি রেস্তোরাঁর দিকে হাঁটতে শুরু করল রানা গিলটি মিঞার নির্দেশিত পথে।

রিও ডি প্যানাডা খুঁজে বের করতে অসুবিধে হলো না। জমজমাট ওটিভিয়ানি রেস্তোরাঁ পেরিয়ে এগিয়ে গেল রানা দুপাশের বাড়ির নম্বরগুলো পড়তে পড়তে।

.

একটা হুইল চেয়ারে খাড়া হয়ে বসে আছে কুরিযো মাযিনি। ঘরের চারপাশে একনজর চোখ বুলিয়েই বুঝল রানা, নেহাত গরীবি চালে সংসার চালাতে হত জুলিকে। পাসেল্লী গ্লাস ফ্যাক্টরিতে নিশ্চয়ই তেমন কিছু বেতন পেত না মেয়েটা। কোনমতে কায়ক্লেশে চলত সংসার। ঘরে আসবাবের মধ্যে খটখটে দুটো চেয়ার, আর একটা পুরানো আমলের ডবল-বেড় খাট।

পাথরের মত বসে আছে কুরিযো মাযিনি। কঠোর একটা ভাব ফুটে রয়েছে ভাঁজ পড়া হলুদ মুখে, কপালে। সব আশা ভরসা নির্মূল হয়ে গেলে মানুষ যেমন বীতশ্রদ্ধ হয়ে যায় দুনিয়ার সব কিছুর ওপর, তেমনি একটা ভাব বৃদ্ধের চোখের স্থির দৃষ্টিতে।

রানার মুখের দিকে নিশ্চলক চেয়ে রইল বৃদ্ধ কয়েক সেকেন্ড। তারপর বলল, ‘আজ আমাকে মাফ করতে হবে, সিনর। কোন অভ্যর্থনা করতে পারব না আমি আজ আর। মেয়েটা মারা গেছে। আপনারা কি একটু নিরিবিলিতে থাকবারও সুযোগ দেবেন না আমাকে?’

কঠোর তিরস্কার শুনে একটু হকচকিয়ে গেল রানা প্রথমটায়। তারপর আমতা আমতা করে বলল, ‘আপনার মেয়ের মৃত্যুর ব্যাপারেই এসেছি আমি। কিভাবে মারা গেল জুলি সে ব্যাপারে কিছুটা জানি আমি। আপনাকে জানানো দরকার বলে মনে করলাম।’

‘কে আপনি? পুলিসের লোক?’

‘না, আমি পুলিসের লোক নই। আমার নাম মাসুদ রানা। আমার নাম হয়তো আপনার মেয়ের মুখে শুনে থাকবেন…’

‘মিথ্যে কথা!’ প্রায় গর্জন করে উঠল একজন পাশের ঘর থেকে। পর্দা সরিয়ে ঢুকল এঘরে। ‘মিথ্যে কথা বলছে লোকটা, বাবা। আমি চিনি ইল সিনর মাসুদ রানাকে। এ লোক সে লোক নয়।’

রানা দেখল ঘরে ঢুকল ঝাড়া সোয়া ছ’ফুট লম্বা গনডোলার সেই বডি-বিল্ডার ছোকরা মাঝি। আধ হাত লম্বা একটা ছোরা ওর হাতে। ঘরের ঠিক এমন জায়গায় এসে দাঁড়াল যেখান থেকে এক লাফে রানার ঘাড়ে পড়া যাবে যদি ও পালাবার মতলব করে।

‘আমি কিন্তু তোমাকে চিনতে পারছি, বাস্তিতা।’ হাসল রানা। ‘সকালে অবশ্য জানতাম না যে তুমিই জুলির ভাই। আমার গলা শুনে চিনতে পারছ না এখনও?’

কটমট করে চেয়ে রইল ছেলেটা রানার মুখের দিকে।

‘না। চিনতে পারছি না!’ সন্দেহ ফুটে উঠল ওর চোখে।

‘বেশ তো, আমার দু’চারটে কথা শুনলেই চিনতে অসুবিধে হবে না। কিন্তু তার আগে বসতে পারি?’

‘বসুন।’ সতর্ক প্রহরায় রইল বাতিস্তা।

বৃদ্ধের দিকে ফিরল রানা। ‘আচ্ছা, অনিল চ্যাটার্জীকে চেনেন তো?’

সচকিত হয়ে ছেলের দিকে চাইল একবার বৃদ্ধ।

‘নামটা পরিচিত বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তাতে কি?’

‘অনিল আমার বন্ধু। এই ভেনিসে নিখোঁজ হয়েছে সে। গতকাল আমি এসেছি এখানে ওর খোঁজে। অনিলের মা আমাকে বলেছিলেন গিয়াকোমো পাসেল্লীর দোকানে কাজ করে জুলি মাযিনি বলে এক মেয়ে, তার কাছে অনিলের খোঁজ পাওয়া সম্ভব। কাল সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম ওই দোকানে। আপনার মেয়ে আমাকে চিনতে পেরে অনিলের নাম দিয়ে একটা কাঁচের ডিজাইন তৈরি করে ধরল আমার চোখের সামনে এমন ভাবে, যেন আর কেউ দেখতে না পায়। আমি বুঝতে পারলাম ও ওই দোকানে আমার সঙ্গে কথা বলতে চায় না। রাত সাড়ে এগারোটার দিকে ফ্লোরিয়ানের সামনে দেখা হলো আমাদের। কিন্তু ততক্ষণে আমার পেছনে গীয়ান আর ওড্ডি নামে দুই জন লোক লেগে গেছে, আমি টের পাইনি। আমাকে একটা গলিতে নিয়ে গেল জুলি, আমি আমার পরিচয় দিতেই ৩৭ নম্বর মনডোলো লেনে যেতে বলল। আর বেশি কিছু বলবার আগেই গীয়ান এসে হাজির হলো, অপ্রস্তুত অবস্থায় মেরে অজ্ঞান করে ফেলল আমাকে। জ্ঞান ফিরে পেয়ে আমি ওই ঠিকানায় গিয়ে হাজির হলাম। অনিলকে পেলাম না, আপনার মেয়েকে পেলাম হাত-পা বাঁধা, মৃত।’

হাত দুটো মুঠি পাকিয়ে চোখ বুজল বৃদ্ধ। ক্ষোভে দুঃখে ফ্যাকাসে হয়ে গেল বাতিস্তার মুখের চেহারা। এই ভয়ঙ্কর দুঃখের খবরটা সহ্য করে নেয়ার জন্যে কিছুক্ষণ সময় দিল রানা ওদের। সিগারেট বের করে ধরাল। আধমিনিট পর চোখ খুলল বৃদ্ধ।

‘থামলেন কেন। বলুন। আরও কিছু বলবেন, সিনর?’

‘আর বিশেষ কিছুই বলবার নেই। সেই থেকে আমার গতিবিধির ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখা হয়েছে। আজ সকালে স্ট্যাচু দেখতে যাচ্ছিলাম, জুটে গেল একটা মেয়ে। আমাকে ভেনিস থেকে অন্যখানে সরাবার জন্যে পাঠানো হয়েছিল মেয়েটাকে। ও আমাকে মিথ্যে সংবাদ দেয় যে তিনদিন আগে অনিলকে প্যারিসের পথে ট্রেনে তুলে দিয়েছে। যে হোটেলের ঠিকানা বলল সে হোটেলে ফোন করে কথা বললাম আমি অনিলের সঙ্গে ‘

‘অনিল চ্যাটার্জীর সঙ্গে?’ নিজের অজান্তেই জিজ্ঞেস করে বসল বাতিস্তা।

‘নকল অনিলের সাথে। আমি ওদের বুঝতে দিলাম না যে টের পেয়ে গেছি ব্যাপারটা। অনিলের আহ্বানে আজ দুটোর সময় রওনা দিলাম আমি প্যারিসে, এয়ার-ট্যাক্সি চার্টার করে উঠলাম তাতে। পড়ুয়ায় নেমে ফিরে এসেছি আমি আবার। আমার তথ্য দরকার। শুধু যে অনিলকে উদ্ধার করতে চাই তা নয়, জুলির নির্মম হত্যার প্রতিশোধও নিতে চাই আমি। কিছু তথ্য দিয়ে সাহায্য করবেন আমাকে?’

লম্বা দুই পা ফেলে এগিয়ে এল বাতিস্তা, নিচু হয়ে ঝুঁকে পরীক্ষা করল রানার মুখ, তারপর বলল, ‘মনে হচ্ছে চিনতে পারছি এবার। ছদ্মবেশ নিয়েছেন আপনি, সিনর ছুরিটা কোমরে গুঁজে রাখল সে কথাটা বলতে বলতে।’

‘নিতে বাধ্য হয়েছি। বসো, বাতিস্তা। আজ সকালে গনডোলায় কি যেন বলতে চেয়েছিলে তুমি আমাকে। কি সেটা?’

‘যা বলতে চেয়েছিলাম তা আপনি নিজেই বের করে নিয়েছেন। বলতে চেয়েছিলাম, হয় মিথ্যে নয় ভুল কথা বলছেন ভদ্রমহিলা।’

‘বলোনি কেন?’

‘ভরসা পাইনি। সিনোরিনার সাথে আপনার যে রকম মাখামাখি দেখলাম, তাতে আর…’

‘বুঝতে পেরেছি। বৃদ্ধের দিকে ফিরল রানা। ‘আপনার সাহায্য দরকার আমার, সিনর মাযিনি।

‘আমি কি করে সাহায্য করব আপনাকে? খোঁড়া মানুষ। নড়তে পারি না। যদি পারতাম, আমার কাছে সাহায্য চাইতে হত না আপনার।’

‘আমি সাহায্য করব আপনাকে,’ বলল বাতিস্তা। ‘জুলির হত্যাকারীকে নিজ হাতে খুন করতে না পারলে ঘুম আসবে না আমার চোখে।’

‘মেয়েটা গেছে, ছেলেটাও যাবে,’ উদাস কণ্ঠে বলল বৃদ্ধ। ‘সবই শেষ হয়ে যাবে আমার। কিন্তু তাই বলে ওকে বারণ করবার উপায় আমার নেই। ওর বোনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতেই হবে ওকে, সিনর মাসুদ রানা। আমি সক্ষম হলে আমাকেও আটকাতে পারত না কেউ। কি করব, পোড়া কপাল, ল্যাংড়া হয়ে গেছি। বুড়ো বয়সে ভিক্ষে করে বেড়াতে হবে এ বাড়ি ও বাড়ি।

‘মরব না, বাবা। এখনও সেই ছোটটি আছি মনে করো কেন তুমি?’ রানার দিকে ফিরল। ‘জানেন সিনর, জুলিও তাই মনে করত। কিছুতেই কাজে লাগতে দেয়নি আমাকে। জোর করে ভর্তি করে দিয়েছে ইউনিভার্সিটিতে। কি কষ্টই না করত বেচারী! কোনরকমে কায়ক্লেশে চালাত সংসার, কিন্তু জানেন, আজ পর্যন্ত এক মাসের বেতনও বাকি পড়েনি আমার। গলাটা কেঁপে গেল বাতিস্তার। ‘বলত, লক্ষ্মী ভাইয়া আমার, জেদ করে না, বাবার মত বিরাট পণ্ডিত হতে হবে তোমাকে। ও নিশ্চয়ই দেখতে পেয়েছে ওর দুষ্টু ভাইয়া নাম লিখিয়েছে আজ গনডোলা স্টেশনে। ওর আত্মাটা নিশ্চয়ই কেঁদে কেঁদে…’

ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল বাতিস্তা। মুখ ঢাকল দুহাতে। ওর বাহুতে হাত রাখল রানা। দেখতে দেখতে রানারও দুচোখ বেয়ে নামল ঢল। আটকাতে পারল না কিছুতেই। অবাক হয়ে চেয়ে রইল বৃদ্ধ রানার মুখের দিকে। ধীরে ধীরে লাল হয়ে উঠল ওর শুকনো, কঠোর চোখ দুটো। তারপর তীক্ষ্ণ একটা চিৎকার করে মুখ ঢাকল সে-ও। সারাদিন এক ফোঁটা কাঁদতে পারেনি বৃদ্ধ, পাথরের মত জমে গিয়েছিল, বিদেশী এক যুবকের সমবেদনায় পাথর গলে নামল ঝর্ণা। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে বাচ্চা ছেলের মত।

.

‘কি সাহায্য চাও তুমি, সিনর?’

‘কিছু তথ্য। আপনি জানতেন আপনার মেয়ের সাথে পরিচয় ছিল অনিল চ্যাটার্জীর?’

‘জানতাম। ওরা ভালবাসত পরস্পরকে।’

‘অনিল কি এখন ভেনিসে?’

‘খুব সম্ভব,’ বলল বৃদ্ধ। পালিয়েও গিয়ে থাকতে পারে। তবে আমার মনে হয় সেটা সম্ভব হয়নি ওর পক্ষে।’

‘কেন? ও কি জখম হয়েছিল?’

‘হ্যাঁ। গুলি খেয়েছিল। বাঁ কাঁধে। শরীরের মধ্যে রয়ে গেছে গুলিটা।’

‘গুলি খেয়ে সাহায্যের জন্যে এসেছিল?’

‘হ্যাঁ। সতেরো দিন আগে। আমরা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ। বাতিস্তা এক্সকারশনে গিয়েছিল, বাড়িতে আমি আর জুলি ছাড়া কেউ নেই। এঘরে এল জুলি, ওকে বারণ করলাম দরজা খুলতে। ততক্ষণে আর টোকার শব্দ নেই, মনে হচ্ছে কে যেন আঁচড়াচ্ছে দরজার গায়ে নখ দিয়ে। হয়তো মনটা আগাম দিয়েছিল, বারণ শুনল না জুলি, খুলল দরজা। হাতের কাছে কোন অস্ত্র পাওয়া যায় কিনা খোঁজ করছি, এমন সময় দেখলাম অনিলকে ধরে নিয়ে আসছে জুলি ঘরের ভেতর। ক্লান্তির শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল অনিল, প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে একেবারে দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়ার আগে কোন মতে বলল, ওর পিছু ধাওয়া করে লোক আসছে, ওকে এ বাড়িতে ঢুকতে দেখেও থাকতে পারে। ছুটে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল জুলি, কোনমতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেল ওকে পাশের ঘরে, শুইয়ে দিল ওর বিছানায়। সাত-আট দিনের ক্ষত, ইনফেকশন মত হয়ে গেছে। ক্ষতটা ড্রেসিং করতে শুরু করল জ্বলি, আমি জানালা দিয়ে বাইরে চোখ রেখে বসে রইলাম। দুজন লোককে দেখতে পেলাম এইদিকেই আসছে। এক জন লম্বা, অপরজন খাটো। এ বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেল লোকদুটো, বেশ কিছুক্ষণ পরে আবার ফিরে গেল যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকে।’

‘ওদের একজনের মাথায় সাদা হ্যাট ছিল?’

‘ছিল।’ মাথা ঝাঁকাল বৃদ্ধ।

‘ওরা দুজনই খুব সম্ভব খুন করেছে আপনার মেয়েকে,’ শান্ত কণ্ঠে বলল রানা।

‘জানি। আঁচ করতে পারছি। শাস্তি হবে না ওদের, সিনর?’

‘হবে। এ নিয়ে ভাববেন না আপনি।’ রানার মুখে দৃঢ় সংকল্প দেখতে পেল বৃদ্ধ। উঠে দাঁড়িয়ে পায়চারি করল রানা কিছুক্ষণ, তারপর আবার জিজ্ঞেস করল, ‘কতদিন ছিল ও এখানে?’

‘একদিন। তাও কি থাকতে চায়? জখমটা ধুয়ে ড্রেসিং করে খানিকটা গরম দুধ খাওয়াতেই কিছুটা শক্তি ফিরে পেল অনিল। একটু সুস্থির হয়ে যখন বুঝতে পারল কতবড় বিপদের মধ্যে ফেলতে যাচ্ছে ও আমাদের, তখুনি চলে যাওয়ার জন্যে জেদ ধরল। পরদিন রোববার ছিল। অনেক বলে কয়ে সেদিনটা এখানে থাকতে রাজি করাল ওকে জুলি। সারাদিন খুঁজে পেতে কিছুদিন লুকিয়ে থাকার মত একটা জায়গা বের করে ফেলল, রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে গেল ওরা।’

‘কেন পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলেনি ও আপনাদের?’

‘জুলিকে বলেছিল কিনা আমি জানি না। আমি জিজ্ঞেস করিনি। যেটুকু এমনিই জানতে পেরেছিলাম তা হচ্ছে, মস্ত বিপদে পড়েছে ও, একটা সংঘবদ্ধ দল রোম থেকে তেড়ে এখান পর্যন্ত এসেছে। পর পর তিনবার ওর প্রাণের ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। গুলি করেও ধরতে পারেনি ওরা ওকে। শেষ মুহূর্তে, যখন ধরা পড়ে পড়ে, তখন কোনমতে পৌঁছেছিল ও এ বাড়িতে।’

‘কারা ওর পেছনে লেগেছিল সে ব্যাপারে কিছু জানতে পারেননি?’

‘না। জিজ্ঞেসও করেনি। কারণ আমি জানি, এসব কথা না জানাই ভাল। নির্যাতনের মুখে কোন কথাই শেষ পর্যন্ত গোপন রাখা যায় না। আগে হোক পরে হোক, সত্যি কথাটা বেরোবেই।’

ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। যাই হোক, রোববার সারাদিন ছিল ও এখানে, তারপর কি হলো?’

‘সন্ধের পর নিয়ে গেল জুলি ওকে মনডোলোর একটা নির্জন পরিত্যক্ত বাড়িতে। অনিলের ইচ্ছে ছিল, কিছুটা সুস্থ বোধ করলেই ভারতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করবে।’

‘ভারতে?’ অবাক হলো রানা। ‘ভারতে ফিরে যেতে চেয়েছিল ও?’

‘হ্যাঁ। ও বলেছিল যত শীঘ্রি সম্ভব দেশে ফিরে যাওয়া দরকার ওর।’

তাই যদি হবে তাহলে ওকে বিশ্বাসঘাতক, দেশদ্রোহী হিসেবে চিত্রায়িত করবে কেন রঞ্জন চৌধুরী? কেমন যেন বেখাপ্পা ঠেকছে ব্যাপারটা রানার কাছে। অবশ্য মিথ্যে কথাও বলে থাকতে পারে অনিল। সত্য-মিথ্যা যাচাই করবার কোন উপায় নেই এখন। যাচাই ঠিকই করে নেবে রানা-সময় আসুক।

‘তারপর কি হলো? কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠল?’

‘না, সিনর। বরং খারাপের দিকেই যাচ্ছিল ধীরে ধীরে। অনিল যে গুলি খেয়েছে সেটা জানা ছিল ওদের, ডাক্তার ডাকতে গেলেই ধরে ফেলবে, তাই ডাক্তারের সাহায্য নেয়া সম্ভব হয়নি। গুলিটা রয়ে গিয়েছিল শরীরের মধ্যে, পুঁজ হতে আরম্ভ করল ক্ষতস্থানে। গায়ে জ্বর। আমি দর্শন শাস্ত্রের লোক, যতটা পারি ডাক্তারী বই ঘেঁটে গ্যাংগ্রিন ঠেকাবার ওষুধ বাতলে দিই জুলিকে, ও গিয়ে যেমন ভাবে পারে প্রয়োগ করে সে ওষুধ অনিলের ওপর। কিন্তু কদিন পর সেটাও প্রায় বন্ধ হয়ে এল। তিনদিন পর সাদা হ্যাট পরা লোকটা গিয়ে হাজির হলো পাসেল্লীর দোকানে। আমার বর্ণনার সাথে মিলিয়ে চিনতে পারল জুলি ওকে। জুলির সাথে যে অনিলের আলাপ ছিল সেটা জানা ছিল পাসেল্লীর। ওরা বুঝে নিল এ বাড়ির কাছাকাছি এসে অনিলের হারিয়ে যাওয়ার রহস্য। আমাদের বাড়ির চারপাশে পাহারার ব্যবস্থা করা হলো, জুলিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো, লোক লেগে গেল ওর পছনে। বহু কষ্টে ওদের চোখ ফাঁকি দিয়ে যেতে হত জুলিকে অনিলের কাছে। কখনও দুদিন কখনও বা চারদিন সম্ভব হত না যাওয়া। এমনি সময় ভিয়েনায় ইন্টারপোলের একটা কনফারেন্সের কথা কাগজে দেখে আশার আলো জ্বলে উঠল অনিলের মনে। জুলিকে বলল, বাংলাদেশের এক দুর্ধর্ষ যুবক আসবে এই করফারেন্সে। ওর নাম মাসুদ রানা। শুনেছে সে, বিপদে পড়ে সাহায্য চাইলে শুধু হাতে ফিরিয়ে দেয়নি সে আজ পর্যন্ত কাউকে। যেমন সৎ, সাহসী, দেশপ্রেমিক, তেমনি বিরাট মহৎ হৃদয় আছে ছেলেটার মধ্যে। যদি কারও সাধ্য থাকে ওকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করার…’

খুক খুক করে কাশল রানা। আসলে লজ্জা পেয়েছে ও। চট করে জিজ্ঞেস করল, ‘মামা বাড়ির ঠিকানায় একটা পোস্ট কার্ড ছেড়ে দিল, এই তো?’

‘হ্যাঁ। তোমার হাতে পৌঁছেছিল সেটা তাহলে? সরাসরি মায়ের ঠিকানায় পাঠাতে সাহস পায়নি অনিল, পাছে ওটা পোস্ট করতে গিয়ে জুলি ধরা পড়ে যায় ওড্ডি বা গীয়ানের হাতে। যাই হোক এরপর তোমার জন্যে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় রইল না জুলির। যতই দিন যাচ্ছে ততই পাগলা কুকুর হয়ে উঠছে ওরা। এদিকে দিন দিন দুর্বল হতে হতে এমন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে কারও সাহায্য ছাড়া নড়াচড়া করাও মুশকিল হয়ে পড়েছে অনিলের পক্ষে। হঠাৎ একরাতে গীয়ান এসে ঢুকল এ বাড়িতে। জুলি তখনও ফেরেনি। সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজল লোকটা, কিছু না পেয়ে চলে গেল। একটি কথাও বলার প্রয়োজন মনে করল না আমার সঙ্গে। একা ছিলাম, পঙ্গু, কিছুই করতে পারলাম না। কিন্তু বুঝলাম, অবস্থা চরমে গিয়ে পৌঁছেছে। জুলিকে বললাম সব, সাবধান করলাম, কিন্তু লাভ হলো না। গতকাল সকালে কাজে চলে গেল মেয়েটা, আজ ভোর রাতে পুলিস এসে জানাল মারা গেছে।’

‘আপনার কথা শুনে যতদূর মনে হচ্ছে, পালাতে পারেনি অনিল। ধরা পড়েছে ওদের হাতে।’

‘আমারও তাই মনে হয়।’

‘কেন ওকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল ওরা সে সম্পর্কে কোন রকম ধারণাই হয়নি আপনার?’

‘না, সিনর। কারণটা আমি জানি না।’

‘অসংখ্য ধন্যবাদ, সিনর।’ উঠে দাঁড়াল রানা। ‘এবার চলি আমি।’

রানার সাথে সাথে উঠে দাঁড়াল বাতিস্তা পাহাড়ের মত দরজা আড়াল করে।

‘বাবার সাহায্য নিয়েই উঠে পড়ছেন যে? আমার কি করতে হবে বলে যান।

পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখল রানা ছেলেটাকে। বয়স কম, উনিশ কি বিশ, কিন্তু ওর পেশীর মধ্যেকার অন্তর্নিহিত শক্তি চিনতে ভুল করল না রানার অভিজ্ঞ চোখ। ঘাড় ফিরিয়ে বৃদ্ধের দিকে চাইল সে। কুরিযো মাযিনির ঠোঁটে অদ্ভুত একটুকরো হাসি।

‘ওকে আনডার-এস্টিমেট করো না, সিনর মাসুদ রানা। জুলির হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্মগত অধিকার আছে ওর। দয়া করে বঞ্চিত করো না ওকে।’

বাতিস্তার দিকে ফিরল রানা। ‘সবচেয়ে ভাল পার কোন্ কাজ তুমি, বাতিস্তা?’

‘মারামারি,’ গম্ভীর কণ্ঠে বলল বাতিস্তা।

মৃদু হাসল রানা। ‘ভাল। তোমাকে যদি বলি কোন লোক বা বাড়ির ওপর নজর রাখতে হবে…’

‘একশোবার পারব। কোন লোক?’

‘২২/এ ক্যাম্পো ডি সালিযোতে ওড্ডি আর গীয়ানকে ঢুকতে দেখেছি আমি কিছুক্ষণ আগে। জানি না, হয়তো ওরা ওই বাড়িতেই থাকে, কিংবা ঢুকেছে অন্য কাজে। যাই হোক, আগামী তিনটে ঘণ্টা নজর রাখতে হবে বাড়িটার ওপর। বিশেষ অসুবিধে হবে বলে মনে হয় না, ওটার ঠিক সামনেই একটা কাফে দেখেছি। সেখান থেকে নজর রাখা যাবে অনায়াসে। আমি জানতে চাই এই তিন ঘণ্টায় কে ওই বাড়িতে ঢুকছে কিংবা ওখান থেকে বেরোচ্ছে। পারবে রিপোর্ট তৈরি করতে?’

‘পারব না কেন? কঠিন কিছুই দেখছি না এর মধ্যে।’

‘কঠিন ব্যাপারও আছে। সেটা হচ্ছে আত্মসংবরণ করা। ওড্ডি বা গীয়ানকে দেখলেই তাদের পিছু ধাওয়া করবার ইচ্ছেটা দমন করতে হবে তোমাকে কঠোর ভাবে। পারবে সেটা?’

‘পারব।’

‘গুড। ছদ্মবেশ নেয়ার দরকার আছে তোমার?’

‘কি দরকার? আমাকে চেনে না ওরা কেউ। গতকাল সন্ধ্যায় ফিরেছি আমি এক্সকারশন থেকে।

‘ঠিক আছে। সেক্ষেত্রে আপাতত ছদ্মবেশের কোন দরকার নেই। কিন্তু খেয়াল রেখো, কোন রকম আবেগ-প্রবণতা বা কৌতূহলের আতিশয্যকে প্রশ্রয় দিলেই ভণ্ডুল হয়ে যাবে সব। ভুলেও কাউকে অনুসরণ করবে না তুমি, ভুলেও ঢুকবে না ওই বাড়ির ভিতর। কারও গায়ে হাত তুলবে না। রাজি?’

‘রাজি।’

‘বেশ। ঠিক তিনঘণ্টা পর আমার সঙ্গে দেখা করবে সারাগাত হোটেলের ক্যাসিনোতে। অলরাইট?’

‘অলরাইট। কিন্তু এতসব কন্ডিশন দিয়ে আমার হাত-পা বেঁধে একেবারে অথর্ব করে দিচ্ছেন আপনি।

‘ঠিক সময় মত তোমার হাত-পা খুলে দেব আমি, দেখব তখন কত জোরে চালাতে পারো ওগুলো। কিন্তু সে সময়টা নির্ধারণ করবার অধিকার আমাকে দিতে হবে। আমি সিদ্ধান্ত নেব কখন আমরা আক্রমণ করব, কখন পালাব। এর অন্যথা হলে বিপদে পড়ব দুজনই।’

‘জানি। এই কাজে নানা মুণির নানা মত চলে না। একজনের নেতৃত্ব মানতে হয়। আপনাকে নেতা হিসেবে মেনে নিতে আমার কোন আপত্তি নেই। আপনার সব কথা মানতে আমি রাজি।’

‘ভেরি গুড বয়। তুমিই তাহলে আগে বেরোও। আশেপাশে যদি সন্দেহজনক কাউকে দেখো ফিরে আসবে পাঁচ মিনিটের মধ্যে। তুমি ফিরে না এলে আমি বেরোব নিশ্চিন্ত হয়ে।’

মাথা ঝাঁকিয়ে বেরিয়ে গেল বাতিস্তা।

পাঁচ মিনিট ধরে বৃদ্ধের সঙ্গে কি কথা হলো রানার জানতে পারল না সে।

ঠিক পাঁচ মিনিট পর বেরিয়ে এল রানা।

পঙ্গু বৃদ্ধের কঠোর দুচোখ থেকে ঝরছে তখন আশীর্বাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *