বাদামি চোখ

বাদামি চোখ

মাথাটা আজ সকাল থেকেই ভীষণ রকম গরম হয়ে আছে মহিম সেনের৷ একটা

সামান্য কাজ যদি দিনের পর দিন না হয়, তাহলে মেজাজ তো গরম হবেই৷ এমনিতেও মহিমবাবু যে খুব একটা মাথা ঠান্ডা মানুষ তা মোটেই নয়৷ তার ওপর আবার ভয়ানক জেদি৷ কিছু একটা যদি মনে করেছেন করবেন তো সেটা করেই ছাড়বেন৷ কেউ যদি ভালো-মন্দ কিছু বোঝায়ও তাহলেও তাতে কান দেবেন না মোটেই৷ মহিমবাবুর ছেলে-মেয়েরা এজন্য রীতিমতো তটস্থ থাকে৷ গিন্নিও তাঁর মেজাজকে ভয় পান তবে মাঝে-সাঝে বিরক্ত হয়ে চার-কথা শুনিয়েও দেন৷ কিন্তু মুশকিল হচ্ছে এই মুকুটপুরের লোকজন তো আর তাঁর রাগ-ঝালের সঙ্গে পরিচিত নয়৷ তাই তারা ভয় পাচ্ছে না মোটেই৷ আর তাতেই রাগটা আরও বেড়ে যাচ্ছে মহিম সেনের৷

অবশ্য মুকুটপুরের লোকজনরা যেমন তাঁকে চেনে না, তেমনি মহিমবাবু যে মুকুটপুর জায়গাটা খুব ভালো চেনেন তেমনটা নয়৷ চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর, তাঁর মামা যতীন গুপ্ত জমি কিনে বাড়ি করেছিলেন মুকুটপুরে৷ মহিমবাবুর বাবা ছিলেন বর্ধমানের কাছে একটি গ্রামের স্কুলের হেডমাস্টার৷ মামা সরকারি দফতরে ভালো চাকরি করতেন আর থাকতেনও বর্ধমান শহরে৷ শালা-ভগ্নিপতিতে ভারী ভাব-সাব ছিল৷ বিশেষ করে সন্তানহীন মামা-মামি মহিমকে খুবই স্নেহ করতেন৷ মহিমবাবু সেটা জানতেনও ভালোমতোই৷ ছোটবেলা থেকেই তাঁর বুদ্ধিশুদ্ধি ছিল বেশ পাকা৷ মায়ের চোখ এড়িয়ে ভালোমানুষ মামিকে বোকা বানিয়ে প্রায়ই টাকা-পয়সা আদায় করে নিতেন৷ এমনকি মামার পকেট থেকেও যে দু-দশ টাকা সরাননি তাও নয়৷ সেসময় স্কুলে ছুটি-ছাটা থাকলেই মহিমবাবু এসে মামার বাড়িতে থাকতেন৷

তবে পড়াশোনায় তাঁর কোনওদিনই তেমন মতি ছিল না৷ স্কুল পাশ করে কলেজে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরেই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কলকাতায় চলে আসেন৷ প্রথমে এক বন্ধুর বাবার ব্যবসায় খাটা-খাটনি করতেন৷ তারপর অল্প টাকা-পয়সা জোগাড় করে সিমেন্ট-বালি সাপ্লাইয়ের কারবার শুরু করেন৷ পড়াশোনায় ভালো না হলেও তাঁর ব্যবসাবুদ্ধি চিরকালই পরিষ্কার৷ তাই সাপ্লায়ার থেকে কন্ট্রাক্টর হয়ে যেতে খুব বেশি দেরি হয়নি৷ এখন মহিমবাবুর বড় কোম্পানি৷ অন্তত পঞ্চাশ-ষাট জন লোক তাঁর কাছে কাজ করে৷ কলকাতা এবং তার আশপাশে বড় বড় বাড়ি-আবাসন তৈরি করেন তিনি৷

তবে কলকাতায় আসার পর বর্ধমানের বাড়ির সঙ্গে আর বিশেষ যোগাযোগ রাখেননি তিনি৷ ইস্কুল মাস্টার বাবার শাসন তাঁর পছন্দ হত না মোটেই৷ স্বাভাবিকভাবেই সেই সময় থেকেই মামার সঙ্গেও যোগাযোগ কমে গেছিল৷ তারপর তো মা-বাবা দুজনে মারা যাওয়ার পর যোগাযোগের আর প্রশ্নও ওঠেনি৷ মামা যে রিটায়ার করে মুকুটপুরে বাড়ি করেছেন, সেটা তিনি জানতেন৷ তাঁর ঢাকুরিয়ার বাড়ি থেকে মুকুটপুর আসতে একঘণ্টার বেশি সময়ও লাগে না৷ তবু কাজের জন্য হিল্লি-দিল্লি ঘুরে বেড়ালেও মামার কাছে আসা হয়নি কোনওদিন৷

কিন্তু মহিমবাবু মামা-মামিকে ভুলে গেলেও তাঁরা যে আদরের ভাগ্নেটিকে ভোলেননি, তার প্রমাণ পাওয়া গেল সপ্তাহখানেক আগে৷ মহিমবাবু তখন অফিসের কাজে ব্যস্ত৷ একজন অচেনা লোক এলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে৷ কাজের সময় অপরিচিত লোকের হুটহাট আসা তিনি খুব একটা পছন্দ করেন না৷ কিন্তু ভদ্রলোক জরুরি দরকার বলাতে ঘরে এনে বসিয়েছিলেন৷ দু-চারটে কথা বলার পরে তো মহিমবাবুর চক্ষুস্থির৷ জানা গেল এই ভদ্রলোক হলেন তাঁর মামা যতীন গুপ্তের উকিল৷ মামি মারা গেছেন বছরখানেক আগে৷ মামাও মারা গেছেন সপ্তাহখানেক আগে৷ এই ভদ্রলোক মহিমবাবুকে জানাতে এসেছেন যে যতীন গুপ্ত তাঁর মুকুটপুরের বাড়িটি ভাগ্নে মহিম সেনগুপ্তের নামে লিখে দিয়ে গেছেন৷ মামা মারা গেছেন শুনে মহিমবাবু প্রথমটায় ভেবেছিলেন, নিশ্চয় শ্রাদ্ধ-শান্তির ব্যবস্থা তাঁকেই করতে হবে৷ এমন একটা উটকো ঝামেলা ঘাড়ে চাপল ভেবে বিরক্তও হচ্ছিলেন৷ কিন্তু সম্পত্তি প্রাপ্তি হবে জেনে মনে মনে একটু খুশিই হয়ে উঠলেন৷ যদিও মুখে সেটা প্রকাশ করলেন না৷ বরং মামার মৃত্যুসংবাদ শুনে যেন তিনি যারপরনাই শোকাহত হয়েছেন তেমনটাই হাবে-ভাবে বোঝাতে চাইলেন৷ উকিল ভদ্রলোক অবশ্য ঝানু-পেশাদার মানুষ৷ তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন শ্রাদ্ধ-শান্তির কোনও দায়িত্ব মহিমবাবুকে নিতে হবে না৷ যতীনবাবু বেঁচে থাকতেই সে বিষয়ে সব ব্যবস্থা কাছের একটি মঠের সঙ্গে করে রেখেছিলেন৷ তারাই যা করার করেছে৷

মামার জমানো টাকা-পয়সাও তো কিছু ছিল নিশ্চয়৷ ভালো চাকরি করতেন, মোটা পেনশনও ছিল…..

টাকা-পয়সা উনি বাসন্তীর অনাথ আশ্রমে দান করে গেছেন৷ আপনার জন্য শুধু বাড়িটাই আছে৷ আমি কাগজ-পত্র বুঝিয়ে, চাবি দিয়ে চলে যাচ্ছি৷ আপনি যে কোনও দিন গিয়ে বাড়ির দখল নিতে পারেন৷

উকিলের কথা শুনে আপশোশ হল মহিমবাবুর৷ মামা মুকুটপুরে আসার পর যদি একটু খেয়াল করে যোগাযোগ রাখতেন, তাহলে টাকাগুলো এমন পাঁচ ভূতে লুটেপুটে খেতে পারত না৷ রিটায়ার করার পর বানিয়েছেন৷ বাড়ি আর কত বড় হবে! নির্ঘাত একতলা, সামনে-পিছনে বড়জোর একচিলতে বাগান৷

তবু সম্পত্তি বলে কথা৷ বিশেষ করে মহিমবাবুর মতো ব্যবসায়ী মানুষের কাছে সম্পত্তি মানে তো লক্ষ্মী৷ তাই পরের সপ্তাহেই একদিন সকাল বেলা গাড়ি নিয়ে, ঠিকানা খুঁজে তিনি হাজির হলেন মুকুটপুরে৷ কিন্তু বাড়ি দেখে তো মহিমবাবুর চক্ষুস্থির৷ অন্তত দশ-বারো কাঠা জমির মাঝখানে দোতলা বাড়ি৷ চারপাশে বিশাল বাগান৷ আম-জাম-জামরুল থেকে শুরু করে হরেক রকম ফলের গাছে ভর্তি৷ বাড়ির ঠিক গায়েই একখানা মস্ত আমগাছ৷ এই চৈত্রের শেষে সেই গাছ কুশি কুশি আমে ভর্তি৷

কলকাতার কাছে এতখানি জমি বিনা পয়সায় পাওয়া গেছে ভেবেই মহিমবাবুর প্রাণ একেবারে আনন্দে নেচে উঠল৷ তিনি মনে মনে হিসেব করে দেখলেন দুটো টাওয়ার করে অন্তত বত্রিশটা ফ্ল্যাটের আবাসন অনায়াসে তৈরি করা যাবে৷ তার থেকে যে কত টাকা তাঁর লাভ হবে সেটাও হিসেব করেও রীতিমতো পুলকিত হলেন৷

মামার বাড়ির একতলার ঘরে বসে মহিমবাবু যখন এসব হিসেবপত্র করছেন, সেই সময় পার্বতী এসে তাঁর জন্য একগ্লাস ডাবের জল দিয়ে গেল৷

খুব মিষ্টি জল বাবু৷ আমাদের বাগানের ডাবের জল৷ কাকাবাবু নিজে হাতে গাছ লাগায়ছিলেন…..

পার্বতী হল কানাইয়ের বউ৷ বাড়িতে ঢোকার সময়ই এদের দুজনের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে মহিমবাবুর৷ কথাবার্তায় বুঝে গেছেন কানাই ছিল মামার ম্যান-ফ্রাইডে৷ নামে মালি হলেও বাগান এবং বাইরের সব কাজই সে করত৷ আর ঘরের কাজ করত তার বউ পার্বতী৷ মামা মারা যাওয়ার পরও বাড়িটাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখে এরা দুজনেই৷ ডাবের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে মহিমবাবু ভাবলেন কনস্ট্রাকশনের কাজ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তো তাঁর নিজের লোকজন চলে আসবে৷ তার আগে এ-দুটোকে কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে ভাগিয়ে দিতে হবে৷ মনের ভাব অবশ্য মুখে প্রকাশ পেল না৷ বরং হে হে করে হেসে বললেন, মামার বাগানে তো মেলা ফলের গাছ দেখছি৷ শিয়ালদা মার্কেটে ফল সাপ্লাই যেত নাকি?

কথাটা শুনেই একহাত জিভ কাটল পার্বতী, না না, সেকী কথা! ফল বিক্কিরির কথা কাকাবাবুকে কে বইলবে গো৷ সারা পাড়ার লোককে ঝুড়ি ভরে ভরে ফল পাঠাতেন৷ বাড়িতে কেউ এল এক বুঁচকি ফল সাথে নিয়ে গেল৷ আর ফলের কি কোনও কমতি আছে! আম, জাম, জামরুল, পেয়ারা, কীসের গাছ নেই বলেন দিকিনি৷ পাড়ার ছেলেপুলেরা খায়৷ পাখি আর বাদুড়েও কত খেয়ে লষ্ট করে৷ ওসবে কাকাবাবু ভুরুক্ষেপ করতেন না৷ দেবতার মতো মানুষ কিনা৷

এসব হল গিয়ে প্রথম দিনের কথা৷ তারপর আরও বেশ কয়েকবার মহিমবাবু এসেছেন৷ সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়ে এসেছেন৷ মাপ-জোক সব করা হয়েছে৷ কী যে হচ্ছে সেটা কানাই কিংবা পার্বতী বোঝেনি কিছুই৷ মহিমবাবুও ওদের কিছু বলেননি৷ কিন্তু কথাটা শেষ পর্যন্ত খোলসা করতে হল দিন পাঁচেক আগে৷ প্ল্যান হয়ে গেছে৷ কাজ শুরু হবে এবার৷ তার আগে গাছগুলো কেটে জমিটা পরিষ্কার করা দরকার৷ তাই কানাইকে বলেছিলেন একটা লোক ডেকে আনতে৷ গাছগুলো কেটে ফেলবে৷ তারপর লরিতে চাপিয়ে ডালা পালা দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা নিয়ে যাবেন৷ কথাটা শুনেই ভয়ানক চমকে উঠল কানাই, সে কী গো! গাছ কাটবেন কী গো! ফলন্ত গাছ৷ কাটলে পাপ লাগবে যে গো….

আর্তনাদ করে উঠল পার্বতীও, ছেলেপুলে নিয়ে ঘর করি বাবু৷ এ যে বড় অলক্ষণে কাণ্ড….ফলন্ত গাছে হাত দিতে নাই….

পাপ লাগলে আমার লাগবে৷ তোমাদের ও নিয়ে ভাবার দরকার নেই৷ যা করতে বলেছি করবে৷ গাছ কাটার জন্য লোক ধরে নিয়ে আসবে৷ কাল সকালে আমি আসব৷ টাকা-পয়সা কী লাগবে কথা বলে ঠিক করে নেব৷ ওসব তোমার বলার দরকার নেই৷

কানাই তখনও গাঁইগুঁই করছে দেখে এবার আসল রূপ বেরোয় মহিমবাবুর৷ কড়া গলায় বলেন, মামার জমানা কিন্তু আর নেই৷ এখন যদি এখানে কাজ করতে হয়, তাহলে আমার কথা শুনেই কাজ করতে হবে আর নাহলে নিজের পথ দেখতে হবে৷

গরিব মানুষ৷ কাজ চলে গেলে খাবে কী৷ কানাইয়ের তাই সাহস হয়নি মহিমবাবুর কথা অমান্য করার৷ হবে না, জানতেন মহিমবাবু৷ পরদিন সকালে এসে দেখলেন গাছ কাটার জন্য বিশ্বনাথ নামে একটা শক্তপোক্ত লোককে ধরে এনেছে কানাই৷ বিশ্বনাথের সঙ্গে কথাবার্তা হল৷ মহিমবাবু ভেবে দেখলেন, পাঁচিলের গায়ে যেসব গাছ, সেগুলো এখনই কাটার দরকার নেই৷ পুরোদমে কাজ শুরু হলে যখন যেরকম দরকার কাটলেই হবে৷ আজকাল আবার লোকজন আবাসনের ভিতর দু-চারটে গাছ থাকলে খুশি হয়৷ তাই তখন ভেবে-চিন্তে কয়েকখানা রেখে দিলেও হবে৷ কিন্তু বাড়ির আশপাশটা আগে পরিষ্কার করা দরকার৷ কাজ শুরু করতে হলে প্রথমেই বাড়িখানা ভেঙে ফেলতে হবে৷ ভাঙা বাড়ির রাবিশ জমা থাকবে৷ তা ছাড়া ইট, বালি, স্টোন চিপস নামবে৷ তারজন্যও জায়গা দরকার৷ মহিমবাবু বিশ্বনাথকে হুকুম দিলেন, বাড়ির পাশের মস্ত আমগাছটা আগে কেটে ফেলতে৷ তারপর তার চারধারের গাছগুলোও কেটে জায়গাটা পরিষ্কার করতে৷ পয়সা-কড়ি ঠিকঠাক করে চলে আসছেন, দেখেন গেটের মুখে হাতজোড় করে কানাই দাঁড়িয়ে, বাবু, ওই গাছটা এখনই কাটবেন না৷ গাছ ভরে আম এসেছে৷ ফল শেষ হোক তারপর নাহয় কেটে ফ্যালেন৷

ফল শেষ হওয়া মানে তো মে মাসের শেষ৷ অতদিন আমার কাজ আটকে থাকবে? তুমি কি পাগল নাকি?

কিন্তু কানাই ছাড়বার পাত্র নয়৷ ফের কাঁদুনি গাইতে লাগল, ও গাছখানা আপনের মামা-মামি দুজনেরই বড় আদরের ছেলে৷ পরথম আমখানা দেবতাকে উচ্ছুগ্গ করে তবে মুখে দিতেন ওনারা৷ কাকাবাবুর কাছে শুনেছি, এবাড়ি যার থেকে কিনেছিলেন, তেনার মায়ের নিজের হাতের লাগানো আমগাছ৷ গাছ ভরে মিষ্টি আম হয়৷ পাড়ার সব ছেলে-পুলেরা আসে…..

পাড়ার ছেলেপুলেদের আম খাওয়ানোর জন্য আমার প্রজেক্ট আটকে থাকবে না কানাই৷ অন্যায় আবদার কোরো না৷ নিজের কাজে যাও৷ কাল সকালে গাছ কাটার কাজ শুরু হবে৷ আমি একটু বেলায় আসব৷

কিন্তু বেলায় আসব বললেও পরদিন সকাল নটা নাগাদ কানাইয়ের জরুরি ফোন পেয়ে হুড়মুড় করে আসতে হল মহিমবাবুকে৷ এসে দেখেন কেলেঙ্কারি কাণ্ড৷ গাছ কাটবে বলে সঙ্গে আর গোটা দু-এক লোক নিয়ে বিশ্বনাথ ঠিক সময়েই এসে হাজির হয়েছিল৷ কিন্তু গাছের গুঁড়িতে কুড়ুলের এক ঘা বসাতেই, সেই কুড়ুল ছিটকে এসে লেগেছে তার পায়ে৷ রক্তারক্তি কাণ্ড৷ সবাই মিলে ধরাধরি করে কোনওরকমে বিশ্বনাথকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে৷

এরকম আনাড়ি লোককে গাছ কাটার জন্য ধরে এনেছে বলে মনে মনে কানাইয়ের ওপর সাংঘাতিক চটলেন মহিমবাবু৷ কিন্তু তাঁর বাড়ির কাজ করতে গিয়েই আহত হয়েছে লোকটা৷ তাই বাধ্য হয়েই বিশ্বনাথকে দেখতে গেলেন হাসপাতালে৷ পায়ে একখানা মস্ত ব্যান্ডেজ বেঁধে সে শুয়ে আছে বেডে৷ মহিমবাবু হালকা ধমকের সুরেই বললেন, কীরকম অমনোযোগী লোক হে তুমি৷ একটু সাবধানে কাজ করবে তো৷ আর একটু হলেই তো পা-খানা গেছিল৷

বিশ্বনাথ কাঁদো কাঁদো হয়ে হাতজোড় করে বলল, বাবু আমরা কাঠুরের বংশ৷ বিশ বচ্ছর ধরে গাছ কাটছি৷ কোনওদিন আমার হাত থেকে কুডুল ফস্কায়নি৷ কিন্তু আজ আমার মনে হল কে যেন আমার হাত-দুখান ধরে ঠেলে দিল৷ দ্যাখ না দ্যাখ কুড়ুল ছিটকে এসে পায়ে লাগল….

যত্ত সব আজেবাজে কথা৷ কাজ না করে পয়সা আদায়ের মতলব৷ মনে মনে ভাবলেন মহিমবাবু৷ বিশ্বনাথকে দু-চারটে শুকনো সান্ত্বনাবাক্য বলে বাগানবাড়িতে ফিরেই কানাইকে হুকুম দিলেন গাছ কাটার অন্য লোক ডেকে আনতে৷

কানাই চলে গেছে লোক ডাকতে৷ পার্বতী নিজের ঘরে কাজে ব্যস্ত৷ একতলার বারান্দায় চেয়ারে বসে হিসেবের নোটবুকটা উল্টেপাল্টে দেখছেন মহিমবাবু৷ হঠাৎ মনে হল কে যেন তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে৷ সোজা হয়ে বসে চারপাশটা দেখলেন ভালো করে৷ কোথাও কেউ নেই৷ বারান্দা থেকে আমগাছের গুঁড়িটা দেখা যাচ্ছে৷ বিশ্বনাথের কুড়ুলের ঘায়ে এক জায়গায় একটুখানি চোকলা উঠে গেছে৷ তার নীচে লাল লাল দাগ৷ রক্তের ছিটে লেগেছিল বোধহয়৷ কিন্তু ওপরের দিকে চোখের মতো ওটা কী? চমকে উঠেই নিজের মনে হেসে ফেললেন মহিমবাবু৷ পুরোনো গাছ৷ গুঁড়ির গায়ে এমনভাবে দাগ পড়েছে যেন মনে হচ্ছে দুখানা চোখ তাঁর দিকে চেয়ে রয়েছে৷

হিসেবের খাতাটা আবার খুলে বসতে যাচ্ছেন এমন সময় কানাই এল লোক নিয়ে৷ বছর চল্লিশ বয়স৷ নাম বলল হাসেম আলি৷ এবার সতর্ক হয়েছেন মহিমবাবু৷ ভালো করে জেনে নিলেন গাছ কাটার অভ্যাস আছে কিনা৷ হাসেম অবশ্য জানাল যে গাছ কাটাই তার পেশা৷ গত কুড়ি-বাইশ বছর ধরে এই কাজই সে করে আসছে৷ খানিকটা নিশ্চিন্ত হয়ে তাকে সব বুঝিয়ে পরদিন আসতে বললেন মহিমবাবু৷ কানাইকে বলে দিলেন ঠিকঠাক দেখাশোনা করতে৷ কারণ পরের দিন তিনি নিজে আসতে পারবেন না৷ যাদবপুরের যে ফ্ল্যাটবাড়িটা তৈরি হচ্ছে সেখানে ছাদ ঢালাই আছে৷

ঢালাই মানেই ঘড়ঘড় করে মিক্সার চলছে৷ চারদিকে কুলি-কামিনদের ছোটাছুটি৷ কানাইয়ের ফোনটা তাই শুনতেই পাননি মহিমবাবু৷ একটু পরে পরপর চারখানা মিসড কল দেখে ফোন করতেই কপালে গভীর ভাঁজ পড়ল তাঁর৷ হাসেম আলির অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে৷ ভারী অদ্ভুত অ্যাক্সিডেন্ট৷ সকালে গাছ কাটতে শুরু করতেই নাকি ওপর থেকে একখানা মোটা ডাল হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছে তার কাঁধের ওপর৷ কাঁধের হাড় ভেঙে গেছে৷ ডাক্তার বলেছে হাতখানাও অকেজো হয়ে যেতে পারে৷ হাসেমের বাড়ির লোক কান্নাকাটি করছে৷

কথাগুলো শুনতে শুনতে চোয়াল শক্ত হয়ে গেল মহিমবাবুর৷ কানাইকে বলে দিলেন বিকেলে যাবেন মুকুটপুর৷ এরমধ্যে কানাই যেন গাছ কাটার জন্য নতুন লোক জোগাড় করে রাখে৷

বিকেলে অবশ্য যাওয়া হল না৷ ঢালাই শেষ হওয়ার পর মহিমবাবু যখন মুকুপুরে পৌঁছলেন, তখন বিকেল সন্ধের দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে৷ পার্বতীকে চা দিতে বলে বারান্দায় বসলেন মহিমবাবু৷ কানাই গেল লোক ডাকতে৷ একলা হতে আপনা থেকেই মহিমবাবুর চোখ চলে গেল গাছের গায়ে সেই চোখদুটোর দিকে৷ আশ্চর্য ব্যাপার, চোখের মাঝখানে আজ মনে হচ্ছে যেন মণির মতো একটা কালো ছোপ রয়েছে৷ সেটা কি কাল ছিল? মনে করতে পারছিলেন না মহিমবাবু৷ একবার মনে হল উঠে গিয়ে দেখেন ওই কালো দাগটা কীসের৷ কিন্তু কেমন যেন সাহস হল না৷ বিশ্বনাথের কথাগুলো মাথার মধ্যে কাজ করছে বুঝতে পারছিলেন মহিমবাবু৷ বুঝতে পারছিলেন এবং বুঝে নিজের ওপরেই বিরক্ত হচ্ছিলেন৷

পার্বতী চা দিয়ে যাওয়ার পরেই ফিরে এল কানাই৷ একা৷

জগাইকে গাছ কাটার জন্য বলেছিলাম বাবু৷ রাজিও হয়েছিল৷ কিন্তু এখন বলল আসবেনি৷

কেন, আসবে না কেন?

ওর মেয়েটার খুব জ্বর৷ কাল ডাক্তারের কাছে নে যেতে হবে৷ জগাইয়ের ইস্ত্রি বলে দিল মেয়ের বাপ যেতে পারবেনি৷

একদমে কথাগুলো বলে একটু থামল কানাই৷ তারপর খানিকটা যেন সাহস সঞ্চয় করেই বলল, আসলে ওরা ভয় পেয়েছে বাবু৷ পরপর দুখানা অ্যাক্সিডেন হল তো৷ গাছ কাটতে আসতে কেউ রাজি হচ্ছে না৷ ফলন্ত গাছ৷ ছেলে-পুলে নিয়ে ঘর করে তো সবাই….

কানাইয়ের মতলবটা এবার পরিষ্কার হয়ে গেল মহিমবাবুর কাছে৷ দুটো নেহাত ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাকে ক্যাশ করে সাবোটাজ করতে চাইছে৷ মহিম সেনকে ও চেনে না৷ বহু বাঘা বাঘা লোককে তিনি ঘোল খাইয়ে ছেড়েছেন আর এ তো কোথাকার কে কানাই মালি৷ এমাসের শেষে এদেরকে ঘাড় ধরে বিদেয় করে দেবেন ঠিক করে নিয়ে মহিমবাবু খুব শান্ত গলায় বললেন, ঠিক আছে৷ এখানে যখন কেউ গাছ কাটতে চাইছে না, তখন জোর করার দরকার নেই৷ আমি আমার লোকজন ডেকে নিচ্ছি৷ কালই ইলেকট্রিক করাত নিয়ে আসবে৷ একসঙ্গে যতগুলো দরকার গাছ কেটে ফেলা হবে৷

কথাগুলো যে তাঁর ফাঁকাবুলি নয় মোটেই সেটা বোঝাতে কানাইয়ের সামনেই তাঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট কমল তপাদারের সঙ্গে কথা বললেন৷ আরও বেশ কয়েকটা জায়গায় ফোনাফুনি করতে হল৷ তবে অসুবিধা কিছু হল না৷ ইলেকট্রিক করাত সমেত গাছ কাটার লোক পরদিন সকাল নটা নাগাদ মুকুটপুরে হাজির হবে সেটা নিশ্চিত করা গেল৷ পয়সা অবশ্য অনেকটাই বেশি লাগবে৷ কিন্তু তা নিয়ে মহিমবাবু আর মাথা ঘামাতে রাজি নন৷ কাজটা হওয়া তাঁর কাছে বেশি জরুরি৷

এইসব কথাবার্তার মধ্যেই সন্ধে নেমে গেছিল৷ আমগাছের ঝুপসি ছায়ায় ঢাকা বারান্দায় বসে মহিমবাবু কিংবা কানাই কেউই বুঝতে পারেননি আকাশে কখন ঘন কালো হয়ে মেঘ জমেছে৷ হুঁশ হল যখন নীলচে আলোয় আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত চিরে দিয়ে কড়কড় শব্দে বাজ পড়ল৷ তাড়াতাড়ি করে বেরোতে যাচ্ছিলেন মহিমবাবু৷ কিন্তু তার আগেই শুরু হয়ে গেল প্রবল ঝড়৷ প্রবল হাওয়া গাছের মাথাগুলোকে ঝুঁটির মতো মুঠোয় ধরে ঝাঁকাতে লাগল ইচ্ছেমতো৷ আর তার হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগল গাছগুলো৷ কিছুক্ষণ ঝড় চলার পর শুরু হল মুষলধারে বৃষ্টি৷

ফোনে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কথা বলে মহিমবাবু জানতে পারলেন ঝড়ে বেশ কয়েক জায়গায় গাছ আর ইলেকট্রিকের খুঁটি পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে৷ বৃষ্টি থামলে যদি বেরোন, কখন বাড়ি পৌঁছতে পারবেন তার কোনও নিশ্চয়তা নেই৷ কানাই আর পার্বতী দুজনেই বলল রাতটা মামার বাড়িতেই থেকে যেতে৷ তা ছাড়া পরদিন সকালেই তো তাঁর আবার আসার কথা৷ সবদিক বিবেচনা করে রাজি হলেন মহিমবাবু৷

দোতলায় মামার ঘরেই বিছানা করে মশারি টাঙিয়ে দিল কানাই৷ বেশ বড় খোলামেলা ঘর৷ আমগাছটা ঘরের যেদিকে সেদিকে দুখানা বড় জানলা তো আছেই৷ রুজুরুজু জানলা আছে আরও দুখানা৷ তাই ঘরে হাওয়া খেলে দিব্যি৷ ঝড়-বৃষ্টিতে সন্ধে থেকেই কারেন্ট নেই৷ কিন্তু তাতেও অসুবিধা হবে না৷ পার্বতী রান্না করে ভালো৷ ভাত, ডাল, আলুসেদ্ধ আর ডিমের ডালনা দিব্যি তৃপ্তি করেই খেলেন মহিমবাবু৷ তারপর ঘরের ভিতর থেকে ছিটকিনি আটকে শুয়ে পড়লেন৷ কানাই একটা হারিকেন সলতে কমিয়ে দিয়ে গেছে৷ সেটা রাখলেন ঘরের কোণে৷ ততক্ষণে অবশ্য ঝড়-বৃষ্টি থেমে আকাশ পরিষ্কার হয়েছে৷ চাঁদের আলো আসছে ঘরে৷ চমৎকার ঠান্ডা হাওয়াও দিচ্ছে৷

ঘুমিয়ে পড়েছিলেন মহিমবাবু৷ হঠাৎ মাঝরাত্তিরে কেমন একটা অস্বস্তিতে তাঁর ঘুম ভেঙে গেল৷ চোখ খুলেই তাঁর মনে হল ঘরটা যেন বড্ড বেশি অন্ধকার৷ যেমন ঝলমলে চাঁদের আলোয় তিনি শুতে গেছিলেন সেটা নেই৷ তাহলে কি আবার মেঘ করল? মাথার কাছের জানলার দিকে তাকিয়ে মহিমবাবু দেখলেন আকাশ দেখা যাচ্ছে না মোটেই৷ গোটা জানলাটাই যেন কেমন একটা ছায়া ছায়া অন্ধকারে ঢাকা৷ ভালো করে তাকিয়ে মহিমবাবু বুঝলেন জানলাটা আসলে ঢেকে গেছে আমগাছের ডালপালায়৷ কিন্তু আমগাছটা তো বাড়ির একেবারে গায়ে নয় মোটেই৷ ডালপালাগুলো জানলার এত কাছে এল কী করে? ভাবতেই ভাবতেই মহিমবাবুর মনে হল আমগাছের ডালপালার ফাঁক দিয়ে গাছের গুঁড়িটা দেখা যাচ্ছে৷ আর গুঁড়ির গায়ের সেই চোখদুটো স্থির দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে৷ এখন আর সেগুলোকে কালো দাগ বলে মনে হচ্ছে না মোটেই৷ বরং সেই স্থির চাউনিতে ফুটে উঠছে ভীষণ একটা তীব্র হিংস্র ভাব৷

মহিমবাবুর মনে হল এক্ষুনি এখান থেকে পালানো দরকার৷ কিন্তু তাঁর পা দুটো কেউ যেন স্ক্রু দিয়ে বিছানার সঙ্গে এঁটে দিয়েছে৷ নড়বার ক্ষমতা নেই৷ এদিকে আমগাছের ডালপালাগুলো ক্রমশ জানলার ভিতর দিয়ে ঢুকে তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে৷ পাতার খসখস শব্দ শুনতে পাচ্ছেন তিনি৷ সরু একটা ডাল সপাং করে এসে জড়িয়ে গেল তাঁর বাঁ হাতে৷ ডান হাত দিয়ে সেটাকে সরানোর চেষ্টা করতেই অন্য হাতটাও আটকে দিল আর একটা ডাল৷ গাছের গুঁড়িটা এখন তাঁর প্রায় মাথার কাছে৷ ডালের চাপে বিছানার সঙ্গে লেপ্টে গেছেন মহিমবাবু৷ চোখদুটো ধীরে ধীরে নেমে আসছে তাঁর মুখের দিকে৷ সরু একটা ডাল আড়াই প্যাঁচ দিয়ে চেপে বসেছে তাঁর গলায়৷ ক্রমশ চাপ বাড়ছে সেটার৷ নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে মহিমবাবুর৷

জ্ঞান ফিরলে মহিমবাবু দেখলেন একজন অচেনা ভদ্রলোক তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে আছেন৷ গলায় স্টেথো ঝুলছে৷ তার মানে নিশ্চয় ডাক্তার৷ পাশে উদ্বিগ্ন মুখে কানাই আর পার্বতী দাঁড়িয়ে৷ দু-চোখের পাতা ভারী, সারা শরীরে অসম্ভব ব্যথা৷ তাও অতিকষ্টে উঠে বসার চেষ্টা করতেই বাধা দিলেন ডাক্তার ভদ্রলোক, উঠবেন না, উঠবেন না৷ শুয়ে থাকুন চুপচাপ৷ পার্বতী একটু দুধ গরম করে এনে অল্প অল্প করে খাইয়ে দাও৷ জ্ঞান যখন ফিরেছে তখন আর ভয়ের কিছু নেই৷

কী হয়েছে আমার? ক্ষীণ গলায় জানতে চাইলেন মহিমবাবু৷

সে তো আপনিই জানেন মশাই৷ আজ সকালে অনেক ডাকাডাকির পরও আপনি দরজা খুলছেন না দেখে কানাই বাইরে থেকে শিক ঢুকিয়ে ছিটকিনি খুলে ভিতরে এসে দেখে খাটের ওপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন৷ আমি থাকি দুটো বাড়ি পরেই৷ তাই আমাকেই ডেকে এনেছিল৷ আপাতভাবে মনে হচ্ছে কোনও কারণে শক থেকে হয়েছে৷ এখন বিশ্রাম নিন৷ পরে এসে সব শুনব৷ তবে কতগুলো চেক-আপ করিয়ে নিতে হবে মশাই৷ বয়সটা তো ভালো নয়৷ এবার না হয় অল্পের ওপর দিয়ে গেছে, সাবধান হওয়া কিন্তু দরকার৷

পার্বতী দুধ আনতে গেছে৷ ডাক্তারবাবুকে নিয়ে কানাই বেরিয়ে যেতে খাটের ওপর উঠে বসলেন মহিমবাবু৷ ঘরময় আমপাতা পড়ে আছে৷ খাটের পাশে রাখা আয়নার দিকে তাকালেন মহিমবাবু৷ গলার ওপর স্পষ্ট দুটো লাল দাগ….

বাবু, করাত নিয়ে লোক এসে গেছে৷ গাছকাটা কি তাহলে শুরু করে দিতে বলব?

মুখের ওপর ঝুঁকে পড়েছে দুটো তীব্র চোখ৷ ধকধক করছে খয়েরি-বাদামি মণি৷ শিউরে উঠলেন মহিমবাবু৷ কোনওরকমে গলা স্বাভাবিক রেখে বললেন, না, আজ কাটার দরকার নেই৷ ওদের চলে যেতে বলো৷ পরে দরকার মতো আমি খবর পাঠাব৷

পার্বতী গরম দুধ দিয়ে গেছে৷ গলাটায় বেশ ব্যথা৷ সাবধানে দুধে চুমুক দিতে দিতে মহিমবাবু ভাবলেন, আবাসনে দরকার নেই৷ বাড়িটাকে বরং একটা রিসর্ট বানিয়ে ফেলা যাক৷ মামার দোতলা বাড়িতে এমনিতেই বেশ কয়েকটা ঘর আছে৷ সাজিয়ে-গুছিয়ে নিলেই চলবে৷ কানাই আর পার্বতীই গেস্টদের দেখাশোনা আর রান্নাবান্না করতে পারবে৷ শুধু কাছাকাছি কোনও ছোটখাটো নদী আছে কিনা আর মেলা বসে কিনা খোঁজ নিতে হবে৷ এ-দুটো হলেই একেবারে ট্যুরিস্ট স্পট জমজমাট৷

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *