১০
ড্রইংরুমের ফ্লোরে বসে আছে নিশাত। বারান্দামুখো একটা দরজা আছে এই ঘরটায়। সেদিকেই মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে সে। বাহিরে অন্ধকার। তবে ঘুটঘুটে নয়। এই বাড়ি আর পাশের বাড়ির উঠোনে লাগানো লাইটগুলোতে বাহিরটা এতটাও অন্ধকার লাগে না। উঠোনের আবছা আলো দরজা পর্যন্ত এসে থেমে গেছে। ঘর পর্যন্ত আসছে না। নিশাত চাচ্ছেও না আলো ঘর পর্যন্ত আসুক। রান্নাঘরের আলোটাও নিভিয়ে এসেছে এখানে বসার আগে। রান্নাঘরের লাইটটা বেশ উজ্জ্বল। একদম ড্রইংরুম পর্যন্ত আবছা আলো এসে পৌঁছে। হঠাৎ করেই কিছুক্ষণ আগে থেকে আলো বড্ড বিরক্ত লাগছে। কিছু কিছু সময় অন্ধকারকে খুব আপন লাগে। মনে হয় খুব কাছের কেউ। কাছের মানুষগুলো যেমন স্পর্শকাতর কথাগুলো গোপন রাখে, তেমনি অন্ধকার মানুষের চোখের পানিগুলোকে খুব সুন্দর করে গোপন রাখে। নিশাত কাঁদছে। অজানা কোনো কারণবশত আবীরকে খুব মনে পড়ছে। আজ সারাদিনে তো তেমন কষ্ট হয়নি। তাহলে এই মাঝরাতে কেনো? আচ্ছা সে যদি এমন প্রতারণা করতো তাহলে আবীরও কি কষ্ট পেতো নাকি ভুলে যেতো? হয়তো ভুলে যেতো। এমন করে তো ভুলে সবাই যায়। পুরোপুরি না ভুলতে পারলেও, চারমাসে অন্তত কষ্ট কাটিয়ে উঠতে পারে। স্বাভাবিক একটা জীবনে ফিরতে পারে। তাহলে সে নিজে কেনো পারে না। এসব ভেবে আরও কান্না পাচ্ছে নিশাতের। নিজেকে নিয়ে আজকাল বড্ড দিশেহারা লাগে তার। নিজের মনের উপর লাগাম টানার মত সক্ষম কবে নাগাদ হবে সে?
–রাত বিরাতে এমন চুল খুলে ঘরের মাঝে ভূতের মত বসে আছো কেনো? নাহিদের কন্ঠস্বরে চমকে উঠলো নিশাত। ঘাড় ঘুরাতেই দেখতে পেলো পেছনে নাহিদ দাঁড়ানো। রান্নাঘরের আলো ড্রইংরুমে এসে আবছা হয়ে ছড়াচ্ছে। আলোটা তো ও নিভিয়ে এসেছিলো। এখন নাহিদ জ্বালিয়েছে নিশ্চয়ই। নিশাত কোনো উত্তর না দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে আবার দরজার দিকে তাকিয়ে রইলো। নিশাতের পাশে এসে বসলো নাহিদ। বললো,
— ঘুমাওনি কেনো?
কাঁপা কণ্ঠে নিশাত উত্তর দিলো,
— ঘুম আসছিলো না।
— কাঁদছো তুমি?
–……………..
আবার আবীরকে মনে পড়ছে?
–রাত হলে ওর কথা আমার খুব বেশি মনে পড়ে। কারনটা কি আমি বুঝি না।
–আগে রাত জেগে কথা বলতে?
–ও চাকরিতে জয়েন করার আগ পর্যন্ত। চাকরিতে জয়েন করার পর প্রথম মাসখানেক কথা হতো। এরপর থেকে আর হতো না। বলতো ওর নাকি সকালে অফিসে যেতে অসুবিধা হয়।
— সেই অভ্যাসটা এখনও রয়ে গেছে তোমার। একটা মানুষের সাথে ফোনে কথা বলে রাতের পর রাত কাটিয়েছো। এখন তার সাথে কথা না বলতে পারলে কষ্ট হবে এটা খুব স্বাভাবিক। তাছাড়া এই সময়টায় সবাই ঘুমিয়ে থাকে। একাকিত্ব তোমাকে আরো জেঁকে ধরে। রাতেরবেলা করার মত কোনো কাজটাজও থাকে না। কোনোকিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকলে আবার এতটা খারাপ লাগতো না।
— এতরাতে কি নিয়ে ব্যস্ত থাকবো?
— মাঝরাতে ব্যস্ত থাকা আসলেই ঝামেলার বিষয়।
— রান্নাঘরের আলোটা অহেতুক জ্বালিয়েছেন। আলো বিরক্ত লাগছে।
— চলো আমার সাথে।
— কোথায়?
— আলো দেখাতে নিয়ে যাবো।
— আমি বলেছি আমার আলো বিরক্ত লাগছে।
— ঐ আলো দেখলে মন ভালো হয়ে যাবে।
— যাবোটা কোথায়?
— পুকুরঘাটে।
–এত রাতে?
— তাতে কি?
— মানুষ দেখলে খারাপ ভাববে।
— পুকুর আমাদের সীমানার দেয়ালের ভিতর। কে দেখবে এখানে?
— সেটাও কথা।
–চলো, চলো।
.
ধীরপায়ে নাহিদের পিছু পিছু বেরিয়ে গেলো নিশাত। সামনের উঠোন পেরিয়ে বাড়ির পেছনে ধীরেধীরে এগিয়ে যাচ্ছে দুজন। নিশাত যত এগিয়ে যাচ্ছে ততই চাঁদের আলো স্পষ্ট হচ্ছে। এতক্ষন বাড়ির সামনে পিছনে লাগানো বেশ কয়েকটা লাইটের জন্য জোছনার আলো চোখেই পড়েনি। আস্তে আস্তে ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখা ফুটে উঠছে তার।
জোনাকি পোকা সামনাসামনি দেখেছো কখনো?
— উহুম।
— রাতের বেলা এদিকটাতে কখনো তোমাকে কেউ নিয়ে আসেনি তাই না?
— নাহ্।
— আওয়াজ শুনতে পাচ্ছো?
–হ্যাঁ। সাউন্ডবক্স নষ্ট হয়ে গেলে যেমন একটা শব্দ হয় ওরকম আওয়াজ।
নিচুস্বরে হাসলো নাহিদ। বললো,
–ভালোই বলেছো।
নাহিদের সাথে সাথে হাঁটতে হাঁটতে পুকুরের পূর্ব দিকের ঘাটে গিয়ে পৌঁছালো নিশাত। ঘাটের একপাশে ছোটোখাটো বাঁশঝাড়। বাঁশঝাড়ের ভেতর অনেকগুলো জোনাকি পোকা আলো জ্বালিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কয়েকটা জোনাকি পোকা বাঁশঝাড় ছেড়ে নিশাতকে ঘিরে উড়ে বেড়াচ্ছে। নিশাত চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে সেদিকে। জীবনে প্রথম! এই প্রথম জোনাকি পোকা এত কাছ থেকে দেখছে সে। এখানে ঠিক কতগুলো জোনাকিপোকা আছে সেটা জানা নেই নিশাতের। তবে তার কাছে মনে হচ্ছে এখানে সহস্রখানেক জোনাকি উড়ছে।
.
ঘাটের শুরুতে সিমেন্ট করা বসার জায়গাটাতে বসে নিশাতকে দেখছে নাহিদ। গভীর মনোযোগে জোনাকির আলোগুলো দেখছে নিশাত। বোধহয় আলো নিয়ে এখন আর বিরক্ত হচ্ছে না সে। বিরক্তের জায়গা হয়তো আনন্দ আর স্বস্তি দখল করে নিয়েছে।
— নিশাত?
–……………….
–এই নিশাত?
হাসিমাখা মুখে নাহিদের দিকে তাকালো সে। নাহিদের পাশে বসে পা দুলাতে দুলাতে বললো,
–আমার না খুব খুশি লাগছে। আমি কখনো জোনাকি দেখিনি। কি সুন্দর আলো জ্বলে!
— ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে না?
–নাহ! ধরবো কেনো? উড়ে বেড়াচ্ছে এটাই তো সুন্দর লাগছে। অহেতুক ওদের সৌন্দর্য্যে বাঁধা দিয়ে লাভ কি?
— অন্য কেউ হলে এতক্ষনে লাফালাফি শুরু করতো এগুলোকে মুঠোবন্দী করার জন্য। এবার ডানে ঘাড় ঘুরিয়ে পুকুরের দিকে তাকাও দেখি।
নাহিদের পুকুরের দিকে তাকাতেই নিশাত উঠে দাঁড়ালো। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সিঁড়ির দিকে। এতক্ষণ বাতাসের গতি একদম সামান্য থাকলেও আচমকাই বিকেলের মত দমকা বাতাস লাগছে গায়ে। বাতাসে আশপাশের গাছের ডালগুলো নড়ছে। পাতার শব্দ আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক একসাথে মিলেমিশে যাচ্ছে। পুরো পুকুর আর ঘাটের সিঁড়ি জুড়ে রূপালি আলোর বিচরন। পুকুরের ঠিক মাঝ বরাবর চাঁদের প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। রূপালি আলো ছড়িয়ে পড়েছে ঘাটের পাশে থাকা গাছের পাতাগুলোতেও। নিশাতের হাত আলতো করে চেপে ধরলো নাহিদ।
–রূপালি আলোমাখা পানিতে পা ভিজিয়েছো কখনো?
— উহুম।
–আজ আমার সাথে ভিজাবে চলো।
নাহিদের পিছু পিছু সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে নিশাত। সে কি এই মুহূর্তে স্বপ্নে বাস করছে নাকি বাস্তবেই আছে ভেবে পাচ্ছে না। মাতাল লাগছে নিজেকে। খুশিতে আত্মহারা হওয়ার মতো মাতাল। মনে হচ্ছে যেনো সে হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে। আচ্ছা সে কি অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে? অতি আনন্দে কি কেউ অজ্ঞান হয়? এসব ভাবনা ভাবতে ভাবতেই পানিতে পা রাখলো নিশাত। রূপালি আলো মাখা পানি। শিরদাঁড়া বেয়ে যেনো শীতল স্রোত নেমে গেলো। নাহিদের হাত ধরে চোখবন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে সে। অনুভব করে নিচ্ছে সবটা। শরীর জুড়ে মাখতে থাকা পাগলা হাওয়া, পায়ের নিচের শীতল পানি, রাতের গভীর নির্জনতার মাঝে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক আর শো শো শব্দ করা বাতাসে দুলতে থাকা পাতার আওয়াজ এবং একটি উষ্ণ হাতের স্পর্শ। অনুভূতিটা নতুন, সম্পূর্ণ নতুন। এই অনুভূতি কি কাউকে বুঝানো সম্ভব? উহুম। একদম না।
— চোখ বন্ধ করে রেখেছো যে!
–চোখ খুলতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
–বোকা মেয়ে! রূপালি রঙের পানির বড় বৃত্তের একটা কোনায় তুমি পায়ের পাতা ভিজিয়ে দাঁড়িয়ে আছো। সেটা একবার চোখ মেলে দেখবে না?
চোখ মেলে তাকালো নিশাত। পানির নিচে পা নেড়েচেড়ে পুকুরে ছোট ঢেউ তুলছে সে। ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা মুচকি হাসিটা ক্রমশ পুরো ঠোঁট জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। পানির নিচে আরো এক সিঁড়ি নেমে এলো নিশাত। তার সাথে নেমে এলো নাহিদও।
— আলো কি এখনও বিরক্ত লাগছে?
নিশাত সে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো,
— খুশিগুলো বোধহয় মাঝেমধ্যে খুব অদ্ভুত হয় তাই না?
— যেমন?
— এই যে এখন আমার মনে হচ্ছে আমি খুশিতে অজ্ঞান হয়ে যাবো।
–সরি নিশাত। এমন খুশির সাথে আমি পরিচিতি নই। থাকলে অবশ্যই তোমাকে বলতে পারতাম।
— আপনি খুব ভালো।
–…………..
— আর রুম্পা মেয়েটা বোকা।
–কেনো?
— ওর উচিত ছিলো যেভাবেই হোক আপনার সাথে পালিয়ে যাওয়া। আমি ওর জায়গায় থাকলে অবশ্যই আপনার সাথে যেভাবেই হোক পালিয়ে যেতাম। এমন মানুষ কেউ হাতছাড়া করে?
— মনে হচ্ছে থেরাপী ওভারডোজ হয়ে গিয়েছে। চলো, বাড়ি চলো।
না আরো কিছুক্ষণ।
— না, আরো কিছুক্ষন থাকলে তুমি খুশিতে অজ্ঞান হয়ে যাবে।
— তাহলে কি সত্যিই মানুষ খুশিতে অজ্ঞান হয়?
–হয় বোধহয়! তোমাকে দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। চলো। কাল সকালে আবার উঠে আমাদের একটা জায়গায় যেতে হবে।
— কোথায়?
নিশাতকে ধরে পুকুর থেকে সিঁড়িতে তুলে আনতে আনতে বললো,
— নানারবাড়ি যাবো সবাই। কেনো, ঈষিতা তোমাকে বলেনি?
— ওহ্! হ্যাঁ বলেছিলো তো। ভুলেই গিয়েছিলাম। কখন রওনা হবো?
–জানি না। আগে ঘুম থেকে উঠি সবাই, তারপর দেখা যাবে।
১১
এক নিঃশ্বাসে পুরো একগ্লাস শরবত খেয়ে নিলো নিশাত। এতক্ষন খুব হাঁপাচ্ছিলো সে। শরবত খেয়েই সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বসে পড়লো। ঈষিতার নানা শ্বশুরের বাড়ি এসে পৌঁছেছে সাত আট মিনিট হলো। এখানে এসে পানি চাইতেই ১৬-১৭ বছর বয়সী একটা মেয়ে ট্রেতে করে শরবত নিয়ে এলো সবার জন্য।
নিশাতের দিকে তাকিয়ে ঈষিতা জিজ্ঞেস করলো,
— তোরা এতখানি রাস্তা হেঁটে আসলি কেনো? রিকশা পাস নি?
–ভুল হয়ে গেছে। তোদের সাথে সিএনজি-তে করে চলে আসলেই ভালো হতো। নাহিদ ভাই আমাকে বোকা বানিয়েছে।
— কিভাবে?
–আমাকে বললো উনি রিকশা করে যাবে। আমি রিকশায় চড়ার লোভে উনার পেছন পেছন আসলাম। এরপর কিছু রাস্তা যাওয়ার পর রিকশা থেকে নেমে উনি বলে রিকশায় নাকি আর যাবেন না, হেঁটে যাবেন। কতদিন হয় এই রাস্তা ধরে হাঁটে না। তাই উনি নাকি হাঁটবে। এটা কোনো কথা হলো আপু? আমি কি এতটা পথ হেঁটে অভ্যস্ত তুইই বল? তাও এত রোদে!
–নাহিদ ভাই আপনি খুবই অন্যায় করেছেন এইটুক বাচ্চার সাথে। শাস্তিস্বরূপ আপনার শরবত এখন নিশু খাবে।
হাতে থাকা অর্ধেক গ্লাস শরবত নিশাতের দিকে এগিয়ে দিলো নাহিদ। নাক কুঁচকে নিশাত বললো,
— এ্যাহ, আপনার আধা খাওয়া শরবত আমি খাবো না।
— তুমি জানো আমার এঁটো খাবার খাওয়ার জন্য মেয়েরা লাইন ধরে অপেক্ষা করে?
–সত্যি!
— হ্যাঁ সত্যিই তো।
–ওরা সবাই আপনাকে ভালোবাসে তাই না?
–হ্যাঁ খুব! একদম মরে যায় অবস্থা।
–আসলে আপনি খুব ভালো তো তাই সবাই আপনার প্রেমে পড়ে যায়। আপনি একটা কাজ করলে পারেন কিন্তু। এই ধরেন সবাই চায় আপনাকে আপন করে নিতে। এখন সবাইকে তো প্রেমিকা বানানো সম্ভব না। কিন্তু ওদের একটু ইচ্ছা তো পূরন করতে পারেন। ওরা আপনার এঁটো খাবার খেতে চাইলে একটু খেতে দিবেন। অন্তত এতটুকু পেয়ে তো ওদের মনটা খুশি থাকবে।
মুখ চেপে হাসছে নাহিদ। ঈষিতার কানে ফিসফিসিয়ে বললো,
— এটা কেমন যুক্তি ছিলো ঈষিতা?
— ও এমনই। অদ্ভুত কথাবার্তা বলে।
— ওকে যা বলি তাই বিশ্বাস করে।
–শুধু আপনি না। ওকে যে যা বলে ও তার কথাই বিশ্বাস করে।
ঈষিতা আর নাহিদকে এভাবে কথা বলতে দেখে নিশাত উঁচু স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
— তোমরা ফিসফিস করে কি বলো?
ঈষিতা উত্তর দিলো,
— কিছু না তো।
— আমাকে নিয়ে হাসছো তাই না?
জবাবে নাহিদ বললো,
— তুমি হাসির মত কিছু করেছো?
–আমি তো কখনোই হাসির মত কিছু করিনা। তবুও লোকজন আমাকে নিয়ে হাসে আর বলে আমি বাচ্চা। কিছু বুঝি না নাকি।
— খুব গরম লাগছে তোমার?
–হ্যাঁ। গোসল করতে পারলে ভালো লাগতো।
— ঈষিতা ওর জন্য এক্সটা জামা এনেছো?
— হ্যাঁ। এক্সটা জামা তো আমরা সবাই এনেছি।
— নিঝুম আর নিম্মি কোথায়?
— আম্মার সাথে ছোট মামীর ঘরে গিয়েছে।
–দাঁড়াও ঐ দুটোকে নিয়ে আসি, একসাথে ক্ষেতে যাবো গোসল করতে।
— সেঁচের পানিতে?
— হ্যাঁ।
— না, আমি ওখানে যাবো না। ফাহাদ বলছিলো কাছের নদীতে আমাকে নিয়ে যাবে।
— আচ্ছা আচ্ছা! নদীর জলে ডুবে প্রেম করার ইচ্ছা!
প্রতিউত্তরে কিছু বললো না ঈশিতা। সামনের কয়েকটা দাঁত বের করে হাসি দিয়ে নাহিদের দিকে তাকিয়ে রইলো। নাহিদ ঘর থেকে বের হতেই নিশাত ঈষিতাকে বললো,
— জানিস আপু মানুষটা খুব ভালো।
— তোর পছন্দ?
— হ্যাঁ।
— খুব পছন্দ?
–হ্যাঁ। খুব।
—কতটুকু ভালো উনি? আবীরের চেয়েও বেশি?
— উমমমম….. আবীর আর উনি একরকম না। ভিন্ন ধাঁচের। তুলনা করে যাচাই করা সম্ভব না।
ছোট ভাইয়ের বউয়ের ঘরে বসে কথা বলছেন শালুক। পাশেই দুই মেয়ে বসে আছে। নিজেরা নিজেরা বসে কথা বলছে। হাসিখুশি চেহারা নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো নাহিদ।
—কেমন আছো মামী?
বিছানা ছেড়ে উঠে এসে নাহিদের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
— এতক্ষণ কেমন ছিলাম জানি না। এখন তোমাকে দেখে শান্তি লাগছে খুব। কত্তবছর পর দেখছি তোমাকে!
— তোমাকে দেখেও খুব শান্তি পাচ্ছি। সুন্দর হয়ে গেছো আগের চেয়ে। আরেকটা বিয়ে দেয়া যাবে।
— কথা তো আগের মতই সরস আছে।
–সুন্দরী মেয়ে মানুষ দেখলে আপনাআপনিই সরস কথা মুখ থেকে বেরিয়ে আসে।
— আমার তো ঘরে স্বামী আছে। একজন ফেলে আরেকজনকে কিভাবে বিয়ে করি! রূপ তো তোমারও বেড়েছে। আগের চেয়ে বেশি স্মার্ট হয়েছো দেখতে। সুন্দরী মেয়েরা তো সব হুমড়ি খেয়ে পড়ে নিশ্চয়ই। তো তুমি এখনও একা কেনো? বিয়ে শাদী করো একটা।
— তোমার মত সুন্দরী তো পাইনা। বিয়ে করি কিভাবে বলো তো?
–কেনো? কানাডা জুড়ে এত এত সুন্দরী মেম, একটাকে ধরে নিলেই তো হয়।
— ধুর! এ দেশের মেয়েদের কাছে ওরা কিছুই না। কেনো জানি না ওদের ইমোশনাল কথাবার্তা বরাবরই আমার কাছে মিথ্যা মনে হয়।
–তো এখানকার মেয়ে কি ওখানে নেই?
–আছে। ওগুলোকেও একই ধাঁচের মনে হয়।
— প্রস্তাবটস্তাব পাও নাকি?
— হুম পাই তো। আগে তো মাসে মাসে পেতাম। এখন বয়স হয়ে গেছে তো তাই বছরে বছরে পাই।
–তাহলে মেয়ে আমরা এই দেশে দেখবো নাকি? নিঝুমের সাথে সাথে তোমার বিয়েটাও সেরে দেই।
— তোমাদের মরুব্বিদের এই এক সমস্যা। হ্যাপি সিঙ্গেল ছেলেপুলে দেখলেই উঠেপড়ে লাগো তার বিয়ে দিয়ে শান্তি ভঙ্গ করতে। ঠিক না এসব। ভালো আছি, ভালো থাকতে দাও।
— বিয়ে করলে সুখ আরও বেড়ে যাবে।
–তোমার এখানে আর বসা যাবে না। এই নিঝু-নিম্মি চল আমার সাথে। গোসল করতে যাবি আমাদের সাথে।
শালুক জিজ্ঞেস করলেন,
— তুই এতক্ষণ কই ছিলি নাহিদ?
— হেঁটে এসেছি। তাই দেরী হয়েছে।
— তুই এতখানি রাস্তা নিশাতরে হাঁটায়া আনছিস?
— হ্যাঁ।
— বেচারীরে এত কষ্ট দিতে গেলি কেন?
–আমার হাঁটতে ইচ্ছা হচ্ছিলো।
— তো ওকে আমাদের সাথে দিয়া দিতি।
–আমি কি একা হাঁটবো নাকি? সাথে কাউকে দরকার ছিলো তাই ওকে নিয়েছি। ওকে এতটাও কষ্ট দেইনি আম্মা। রাস্তায় ও যা খেতে চেয়েছে তাই কিনে দিয়েছি। আইসক্রিম খেয়েছে তিনটা। চকলেট, চিপস তো আছেই।
তাদের কথার মাঝখানে নিম্মি জিজ্ঞেস করলো,
— ভাইয়া, আমরা কোথায় যাবো গোসল করতে?
–মামার ক্ষেতে। সেঁচের পানিতে গোসল করবো। কতবছর হয় সেঁচের পানিতে গা ভিজাই না। নিশাতও গরমে পাগলা অবস্থা। ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে ভালো লাগবে।
— দাঁড়াও, আমি এক্ষুনি কাপড় গুছাচ্ছি গিয়ে।
সোফা থেকে লাফ দিয়ে নামলো নিম্মি। দৌঁড়ে গেলো বড় মামার ঘরে ব্যাগ থেকে কাপড় বের করতে। নিশাত জিজ্ঞেস করলো,
— কে কে যাচ্ছি ওখানে?
–আমি, নিশাত, তুই আর নিম্মি।
–ভাইয়া, ভাবী যাবে না?
–না। ওরা নাকি নদীতে যাবে।
–আচ্ছা। আমি গিয়ে কাপড় নিয়ে আসি।
.
–এই দাঁড়া। তুই বস এখানে। কাজ আছে।
বাঁধ সাধলো শালুক। মায়ের দিকে কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কি কাজ?
–আছে একটা কাজ। তোর আর নিম্মির যাইতে হবে না। নাহিদ আর নিশাত যাক।
মায়ের চোখে অন্যকিছু দেখতে পাচ্ছে নিঝুম। কিছু একটা ইশারায় বুঝাতে চাচ্ছে মা। সেটা টের পেয়েই সোফায় বসে পড়লো নিঝুম।
নাহিদ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে আম্মা?
–আরে একটু কাজ আছে। তুই নিশাতকে নিয়ে যা।
— কি কাজ?
–মেয়েলোকের সব কথা জানার দরকার কি তোর?
— তাহলে থাক বাদ দেই। আমরা ফাহাদ ঈষিতার সাথে যাবো।
— তুই ওদের জামাই বউয়ের মাঝে যাবি কেন?
–ওহ তাও তো কথা।
— তুই যা তো নিশাতকে নিয়ে। মেয়েটা বোধহয় অপেক্ষা করতেছে। আর শোন নিম্মিকে পাঠায়ে দিস। বলবি জরুরী দরকার।
— আচ্ছা যাই। আর এ্যাই সুন্দরী শোনো, আমি ফিরে এসে তোমার সাথে গল্প করবো।
— — হুম হুম যাও। আমিও অপেক্ষায় থাকবো।
নাহিদ ঘর থেকে বের হয়ে যেতেই মাকে নিঝুম জিজ্ঞেস করলো,
— আম্মা তুমি যেতে না করলে কেনো?
— ওরা ওদের মত সময় কাটাক।
— মানে?
–আমি চাই ওরা আলাদা সময় কাটাক। নিজেদের মধ্যে ভালো একটা বোঝাপড়া হোক।
— আম্মা তুমি কি অন্যকিছু চিন্তা করছো?
— হ্যাঁ।
— নাহিদ ভাই বলেছে কিছু তোমাকে?
— না।
— তাহলে?
— এটা আমার ইচ্ছা।
–তোমার ইচ্ছাই তো সবকিছু না। এখানে দুজনেরই একটা অতীত আছে। সব ভুলে আগানোর একটা ব্যাপার আছে।
–আমার ছেলে তো খারাপ না। মেয়েও ভালো। দইজন দুইজনের জন্য মানানসই। পাশাপাশি দাঁড়াইলে কত ভালো লাগে।
–আমি তো কাউকে বলিনি খারাপ। কথা হচ্ছে ওরা দুজনই অন্য কাউকে ভালোবাসে।
— তারা তো ভালোবাসে না। একতরফায় কি আসে যায়। ঐ দুইজন যার যার গন্তব্য বাইছা নিছে। এখন কি এই দুইজন আজীবন একা থাকবে? দুজনের কষ্ট একই রকম। তারাই তাদেরটা বুঝে নিবে।
— তুমি মানানসই কই দেখলা আম্মা? বয়সে বিশাল পার্থক্য। এই পার্থক্য মিটাতেই তো জীবন চলে যাবে।
–বাজে অজুহাত দেখাইস না তো। মনের মিল আসল।
–আপার কথা কিন্তু সত্যি নিঝুম। মনের মিল থাকলেই যথেষ্ট।
–মামী বিষয়টা আমি বুঝাতে পারছি না। এটা হয় না। কিভাবে সম্ভব?
শালুক বললেন,
–ওরা দুইজন একসাথে যখন থাকে নিশাতের মুখটা দেখোস তুই? ওর চেহারায় আর কষ্ট দেখি না। ও আমার ছেলেরে পছন্দ করে।
— পছন্দ করে সেটা আমিও জানি। কিন্তু এটা তো ভালোবাসা না।
–ভালোবাসা হইয়া যাবে।
–আর নাহিদ ভাই?
–নিশাতরে দেখলে সবারই আদর লাগে। আমার ছেলে কি এত পাথর হইয়া গেছে যে ওর প্রতি ভালোবাসা তৈরী হবে না?
— অযৌক্তিক কথাবার্তা। অহেতুক মনে কোনো আশা বেঁধো না আম্মা। পরে কষ্ট পাবে। নিশাতের ফ্যামিলি মেনে নেয়ার একটা ব্যাপার আছে। ঈষিতা ভাবীর মতামতও দরকার।
— ঐ বাড়ির মানুষের সাথে আমি কথা বলবো।
— আম্মা যেই দুজনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছো ওদের মনে তো এমন কিছু নাও থাকতে পারে।
— আছে।
— কিভাবে বুঝেছো?
— মুখ দেখলেই বুঝা যায়। আমি আমার নাহিদরে দেখি নিশাতের কত খেয়াল রাখে। কতক্ষণ পরপরই ওরে খুঁজে।
— নিশাতের মানসিক অবস্থা ভালো না তাই ওকে সাপোর্ট দিচ্ছে এই যা। এটাকে নিয়ে এতকিছু ভাবা ঠিক না।
— তুই ওদেরকে ভালোমতো খেয়াল করছোস?
— কি খেয়াল করবো? আমি কল্পনায়ও এসব চিন্তা করি না।
–কল্পনায় চিন্তা আন্। ভালো মত খেয়াল কর। তাইলেই দেখবি সব আয়নার মত পরিষ্কার। এখানেই আমার ছেলের বিয়ে হবে দুইজনরে একটু সময় দে। দেখবি নিজেরাই বিয়ের কথা বলবে।
১৩
প্রখর রোদ। সময়টা মধ্যদুপুর। ক্ষেতের সরু আল ধরে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে ওরা দু’জন। মাটিতে ছায়া পড়ছে দুজনের। ছায়া দুটো মিশে প্রায় এক হয়ে গেছে। শরীর দুটো এক অথচ মাথা দুটোর ছায়া ভিন্ন দেখাচ্ছে। অতিরিক্ত গরমে চুলের গোঁড়ায় কুটকুট করছে নিশাতের। মাথা চুল্কাচ্ছে সে।
— এ্যাই মেয়ে, মাথায় উকুন হয়েছে নাকি?
— ছিঃ! এসব আমার মাথায় নেই।
— চুলকাচ্ছো কেনো?
–গরমে মাথা ঘেমে গেছে আমার।
–এসে পড়েছি আমরা। এখন আর গরম করবে না। পানি বেশ ঠান্ডা।
— এখানেই নেমে যাবো?
— নাহ্। এখনই পুরোপুরি গা ভিজানো যাবে না। আগে মাটিতে বসে পা দুটো পানিতে ডুবিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকো।
— কি স্বচ্ছ পানি! আমার তো এখনই গা ভিজাতে ইচ্ছে হচ্ছে।
— নিশাত! সবকিছুতে তাড়াহুড়ো করলে হয়না। কিছু অনুভূতি থাকে সময় নিয়ে অনুভব করতে হয়।
মুখ গোমড়া করে মাটিতে বসে পড়লো নিশাত। আলের একপাশে থাকা পানির পাম্প থেকে বেসামাল গতিতে পানি বের হচ্ছে। আল আর ধানক্ষেতের মাঝে তৈরী করা গর্তে পানিগুলো জমে ছড়িয়ে যাচ্ছে ধানক্ষেতের মাঝে। পা জোড়া সেই স্বচ্ছ পানিতে ভেজাতেই শীতল স্রোত বয়ে গেলো গা জুড়ে। পায়ের জুতোগুলো একপাশে রেখে নিশাতের পাশেই বসে পড়লো নাহিদ। পা জোড়া পানিতে ভিজিয়ে বললো,
–কতবছর পর পা ভিজালাম। শেষ কবে সেঁচের পানিতে পা ভিজিয়েছিলাম জানো?
— কবে?
— কানাডা যাওয়ার দেড়বছর আগে।
—তখন কাকে নিয়ে এসেছিলেন? নিঝুপু আর নিম্মিকে নিয়ে?
— নাহ্। অন্য কেউ ছিলো।
–কে ছিলো?
–রুম্পা।
— আমি তো জানি গ্রামে নাকি এভাবে মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়ানো যায় না। প্ৰেম নাকি করতে হয় ঝোঁপে জঙ্গলে। লোকে দেখলে নাকি ঝামেলা করে।
— কিভাবে জানলে?
আবীর বলেছিলো। একবার আবদার ধরেছিলাম ওর সাথে সরিষা ফুলের ক্ষেতে একটু ঘুরবো। বিকেলবেলা সরিষা ফুল দেখতে কত্ত সুন্দর লাগে তাই না! খুব শখ ছিলো, এমন সরু পথ ধরে ক্ষেতের মাঝে হাঁটবো আর কথা বলবো।
— তখন আবীর তোমাকে সেসব জ্ঞান দিয়েছে?
— হুম।
কথা যে খুব অমূলক তা না। শুধু তোমাদের দুজনকে হাত ধরে ঘুরাঘুরি করতে দেখলে ঝামেলা হতে পারতো। কিন্তু সাথে আরো চার পাঁচজন থাকলে ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো না। ও ইচ্ছে করলে আসতে পারতো।
— আসার ইচ্ছেটাই হয়তো ছিলো না।
–হয়তো!
–আপনি কি পাঁচ ছয়জন সাথে করে নিয়ে এসেছিলেন?
–না। শুধু আমি আর রুম্পাই ছিলাম।
–আপনাদের কেউ কিছু বলেনি?
–আমাদের ব্যাপারটা ছোট ফুফু জানতেন। জমিগুলো উনার হাজবেন্ডের ছিলো। ই কেউ কিছু বলার ছিলো না। বললে তো ফুফা আছেনই।
— ফুফাও জানতেন?
–হুম। উনাদের ঘরের সবাই জানতেন।
— আপনাদের বিয়ের ব্যাপারে তাহলে উনারা হেল্প করলেন না কেনো?
— বিয়ে হয়নি তো কি হয়েছে? রুম্পা তো ভালোই আছে।
–আপনি কিভাবে বুঝলেন? ভালো তো নাও তো থাকতে পারে। হতে পারে মুখ বুজে সংসার করে যাচ্ছে।
— মুখ বুজে ঘরের কাজ করা সম্ভব কিন্তু চার বাচ্চার মা হওয়া সম্ভব না।
–বিয়ে হয়েছে বাচ্চা হওয়া তো স্বাভাবিক তাই না?
–এতদিন জান প্রান দিয়ে একজনের সাথে প্রেম করে বিয়ে করার জন্য ঘর ছেড়ে পালিয়ে আসা তারপর আবার বাবা মায়ের কাছে ফিরে গিয়ে পরদিনই আরেক লোককে বিয়ে করে ফেলা। তারপরের মাসেই খবর আসা সেই মেয়ে প্রেগন্যান্ট। এগুলো সবই কি মুখ বুজে যাওয়ার ঘটনা? ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিভাবে একটা লোকের সাথে এত দ্রুত ইন্টিমেট হওয়া পসিবল? বিয়ে হয়েছে হাজবেন্ডের সাথে ইন্টিমেট হওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু বিয়ের রাতেই!
–আচ্ছা বিয়ের রাতেই সব হয়ে গেছে এতটা সিওর আপনি কিভাবে হলেন? রুম্পা আপনাকে এসব বলেছে?
— তুমি কি গাধা? ও আমাকে এসব কেনো বলবে? ওর বিয়ের একমাসের মাথায়ই খবর চলে এসেছে ও প্রেগন্যান্ট। কিছু না হলে এত দ্রুত মানুষ কনসিভ করে কিভাবে?
— আচ্ছা ঘটনা যে প্রথম রাতেই হয়েছে এমন তো কথা নেই তাই না? তিন চারদিন পরও তো হতে পারে।
নিশাতের দিকে বোকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নাহিদ। কি অদ্ভুত প্রশ্ন করে যাচ্ছে মেয়েটা!
— আচ্ছা নিশাত, ধরে নিলাম বাসর রাতে কিছু হয়নি। তিনচারদিন পরই হয়েছে। একটা ছেলেকে এত ভালোবাসার পর অন্য কাউকে বিয়ে করে মাত্র তিনদিনের মাথায় একটা মেয়ে কিভাবে অন্য লোকের সাথে এতটা গভীর সম্পর্ক শেয়ার করতে পারে?
–হতে পারে সে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি।
অট্টহাসি হেসে উঠলো নিশাত। চেহারায় রাগী ভাব জোর করে ধরে রাখার চেষ্টা করছে নাহিদ। ব্যর্থ হচ্ছে সে। ঠোঁটের কোণে হাসি রেখাটা বড্ড অবাধ্যতা করছে। মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা হাসিটা টেনে বের করছেই। হাত বাড়িয়ে পাম্প থেকে বেরিয়ে আসতে থাকা পানি হাতের তালুতে নিয়ে নাহিদের মুখ বরাবর ছিটিয়ে দিলো নিশাত।
–কি দেখাতে চান শুনি? আপনার ভীষন রাগ? না তো। আপনার হাসি আপনাকে মিথ্যা প্রমাণ করছে। মিথ্যা রাগটা ঝেড়ে একটু হাসুন তো।
মাথা নিচু করে হাসছে নাহিদ। পা দুটো পানিতে দুলাতে দুলাতে নিশাত বললো,
–একটা সিক্রেট বলি?
— হুম।
— এতকিছু হয়ে গেছে তবু কাউকে বলিনি। বলতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু আজ কেনো যেনো বলতে ইচ্ছে হচ্ছে।
–বলে ফেলো।
— আবীর আমাকে পুরোপুরি পেতে চাচ্ছিলো। মনের সবটুকু ওকে দিয়েছিলাম। কিন্তু এতে ওর পোষাচ্ছিলো না। মনের সম্পর্কটা ওর কাছে ভীষন একঘেয়ে লাগছিলো। ও চাচ্ছিলো নতুন কিছু।
— সেক্স?
— হুম।
–ব্রেকআপের কারন কি এটাই ছিলো?
— হ্যাঁ। আমি রাজি হচ্ছিলাম না। বিয়ের আগে আমি চাচ্ছিলাম না এমন কিছু হোক।
— বিয়ের কথা বলেছিলে ওকে?
— হুম, বলেছিলাম। বলেছে বিয়ে করবে না। আরো পরে করবে। বিয়ের আগে এসব সম্পর্ক আমার পছন্দ না তাই আমি ইমম্যাচিউরড। এখনকার এডাল্ট মেয়েরা খুব ইন্টারেস্টেড থাকে বয়ফ্রেন্ডের সাথে ইন্টিমেট হতে। অনেক তর্ক বিতর্কের পরও যখন রাজি হচ্ছিলাম না তখন কি বলেছিলো জানেন?
— কি?
— আমার নাকি আসলে চাহিদাই নেই। ওর ফিজিক্যাল নিড পূরণ করতে পারবো না। এসব মেয়ে মানুষ বিয়ে করলে ভবিষ্যত অন্ধকার। আরো কি কি সব কথা!
— তুমি এমন একটা ছেলের জন্য কাঁদো?
— কান্না পায় তো কি করবো?
বাসায় জানাওনি কেনো?
— কি জানাবো? ওকে শুধু আমি না আমার বাসার সবাই ভালোবাসতো। অনেক বেশিই ভালোবাসতো। ওর নামে এমন কথা শুনলে ওরা কষ্ট পেতো। আবীর চলে গেছে এটা নিয়ে সবাই কষ্ট পেয়েছে। এসব কথা শুনলে কষ্ট কতটা বাড়তো ভেবে দেখুন তো!
— নতুন প্রেমিকা জুটিয়েছে তাই না?
— হুম।
— এতদিনে তার ফিজিক্যাল নিড পূরণ হয়ে গেছে হয়তো।
— হয়তো!
অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো নিশাত। হঠাৎ কান্না পাচ্ছে তার। আবীর নামক যন্ত্রণাটা আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে। মাথায় শীতল পানির স্পর্শ লাগছে তার। ঘাড় ফিরিয়ে দেখে নাহিদ পানিতে নেমে গেছে। হাতের তালুতে পানি নিয়ে নিশাতের মাথায় দিচ্ছে সে।
— আসো। পানিতে নামো।
নিশাতের হাত ধরে ওকে নিচে নামালো নাহিদ। নিশাতের হাত ধরে নাহিদ বললো,
–পানিটা খুব ভালো তাই না?
— হ্যাঁ।
— আমিও খুব ভালো। আবীর আর ভার্জিন নেই। সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস হয়ে গেছে। আমি এখনো ভার্জিন। আমার সাথে প্রেম করো। ঠকবে না। প্রেমিক হিসেবেও আমি অত্যন্ত রোমান্টিক। এতবছর প্রেম করেছো আবীরের সাথে সে কখনও হাত ধরে তোমাকে সেঁচের পানিতে ভিজিয়েছে? অথচ আমাকে দেখো প্রেম করার আগেই হাত ধরে তোমাকে সেঁচের পানিতে ভিজাচ্ছি। প্রেম করার পর তোমাকে হাত ধরে সরিষা ক্ষেতেও নিয়ে যাবো। দরকার পড়লে পাটক্ষেতেও নিয়ে যাবো। প্রেম করবে আমার সাথে?
নাহিদের কথা শুনে মন খুলে হাসছে নিশাত। নাহিদ হাতজোড়া ধরে রেখেছে, আর নয়তো মাটিতে এতক্ষণে হয়তো শুয়ে পড়তো হাসতে হাসতে। হাসির শব্দ ছড়িয়ে পড়ছে দূর থেকে দূরে।
.
শালুকের পাশে বসে আছে তার ছোট ভাই। গায়ের শার্টের বোতাম খুলে হেলান দিয়ে আছে সে। বোনের সাথে কুশলাদী বিনিময়ের একপর্যায়ে সে বললো,
নাহিদের সাথের মেয়েটা কি ফাহাদের বউয়ের ছোট বোন না?
— হ্যাঁ।
–ওরা তো মানুষ ভালো। মেয়েও তো সুন্দরী। ও যেহেতু দেশে আসছে বিয়ে করায়া দাও।
— — নাহিদ তো এখনো কিছু জানায় নাই।
–আর জানানোর কি আছে? দুইজন যেহেতু প্রেম করে তো বিয়ে করায়া দেওয়াই ভালো আমার মনে হয়।
— প্রেম করে তোরে কে বললো?
— বলার কি আছে? আমি তো কতক্ষণ আগেই দূর থেকে দেখলাম। কে প্রেম করে আর কে করে না এইটা দেখলেই তো বুঝা যায়।
— তার মানে তোরও এমন মনে হইছে।
— হুম তাই তো মনে হইলো।
মনে মনে প্রচুর খুশি লাগছে শালুকের। নিঝুমের দিকে তাকিয়ে বললেন,
— তোর মামাও বুঝছে। আমি ভুল বুঝি নাই।
মায়ের প্রতিউত্তরে নিঝুম কিছুই বলছে না। আসলেই কি তার চোখের আড়ালে এমন কিছু চলছে? ঈষিতা কি জানে এসব?
১৪
রাতে খাওয়া শেষ করে ছাদে বসে আছে নিশাত। কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনছে সে। সামনেই রুম্পাদের বাড়ি। অজানা কোনো কারণে রুম্পাকে এক নজর দেখার বড্ড সাধ তার। কেমন দেখতে মেয়েটা? কেমন করে ভালোবাসতো নাহিদকে? ভালোবাসতো নাকি শুধু ভালোবাসার নাটক করতো? নাকি শুধুই আকর্ষণ ছিলো যেটাকে সে ভালোবাসা ভেবেছিলো। তবে নাটক হোক আর সত্যি হোক নাহিদকে আগলে তো ধরেছিলো। কিভাবে আগলে ধরেছিলো তাকে? নিশ্চয়ই সেই আগলে ধরায় মায়া ছিলো খুব! আর নয়তো এতগুলো বছর পরও একটা মানুষ কিভাবে মায়া কাটিয়ে উঠতে পারে না? রুম্পার বাড়ি গিয়ে খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হচ্ছে,
— এ্যাই মেয়ে, কি করেছো লোকটাকে বলো দেখি? এতবছরেও তোমাকে ভুলতে পারে না কেনো? আবীর তো আমাকে ভুলে গেলো! কিভাবে যুগ যুগ একটা মানুষকে আগলে রাখা যায় বলো তো।
পেছন থেকে ডানকানের ইয়ারফোনে টান লাগলো। ঘাড় ঘুরাতেই দেখতে পেলো নাহিদ দাঁড়িয়ে। হাতে একমগ গরম ধোঁয়া উঠা কফি। কোনোকিছু না বলেই চুপচাপ সামনের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো আবার। কানে ইয়ারফোন গুঁজে আবার গান শোনায় ব্যস্ত হয়ে গেলো। রুম্পাদের বাড়ির দিকে আবারো মনোযোগ দিলো সে। গভীর মনোযোগ দিয়ে রুম্পাদের বাড়িতে নিশাত কি দেখছে সেটা ভেবে পাচ্ছে না নাহিদ। কাউকে দেখছে ও? নিশাতের কান থেকে আবারো ইয়ারফোন টান দিয়ে খুলে ফেললো সে।
–এ্যাই নিশাত!
— কি?
— ঐদিকে কি দেখো এত মনোযোগ দিয়ে?
— রুম্পাকে খুঁজি।
–কেনো?
— খুব দেখতে ইচ্ছা হয় ওকে। যার জন্য এতগুলো বছর পার করে দিলেন সেই মেয়েটা দেখতে কেমন দেখার খুব শখ। আমি তো পারিনি আবীরকে বেঁধে রাখতে। হয়তো আমার মাঝে ঘাটতি ছিলো। ওকে দেখে নিজের মাঝের ঘাটতিগুলো বের করতে চাই।
লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো নাহিদ। কফির মগটা নিশাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–কফি খাবে?
–আমি খেলে আপনি কি খাবেন?
–পুরোটা খেতে দেইনি। একটু খেয়ে বাকিটা রেখে দাও।
–আমার খাওয়া জিনিস আপনি খাবেন?
–আমার এসবে বাছ বিচার নেই। আমি খেতে পারি।
–আমার ঘিনঘিন লাগে। কখনোই কারো খাওয়া খাবার আমি খাইনি।
–আবীরেরটাও না?
— হ্যাঁ, ওরটা খেতাম।
— ভালোবাসতে তাই?
–হুম।
— আমি সবারটাই খেতে পারি। ভালোবাসাবাসি লাগে না। তুমি খাও। বাকিটা আমার জন্য রেখে দাও।
কফির মগ হাতে নিয়ে থেমে থেমে একটু করে চুমুক দিচ্ছে নিশাত। বেশ কিছুটা সময় ধরে চুপ করে আছে দুজনই। নীরবতা ভেঙে নাহিদ বললো,
— রুম্পার খাওয়া কোনো জিনিস আমি প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে খেতাম।
–ওকে আপনি এত ভালোবাসেন কেনো?
— বাসতাম।
— এখনো তো বাসেন।
–মনের কোনো এককোণে এখনও সে রয়ে গেছে। কিন্তু ভালোবাসি বললে ভুল হবে। খুব ভালোবাসতাম তো! চিরতরে ভুলতে পারিনা। এখনও চোখ বন্ধ করলে দেখি কাঁধে কলেজ ব্যাগ নিয়ে বোরকা পরে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। খুব বিরক্ত হয়ে বলছে,
— বিয়ে করো না কেন আমারে? এমন কইরা লুকায়া দেখা করমু আর কতদিন!
–পুরা গল্পটা আমাকে বলবেন?
–বলতে ইচ্ছা হয় না। জীবনের খুব বাজে অধ্যায় ছিলো। অধ্যায়গুলো ফেলে এসেছি এটাই অনেক। ঐ এক ঘটনার জের ধরে অনেক কিছু ঘটে গেছে আমাদের সবার জীবনে। শুধুশুধু সেসব মনে করে লাভ কি?
— আপনি তো মনে রেখেছেনই।
নাহিদের ফোনে মেসেঞ্জারের টুংটাং শব্দ বাজতেই পকেট থেকে দ্রুত ফোন বের করে নিলো সে। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে নিশাতকে বললো,
— এ্যাই মেয়ে, আমার কফি আমাকে ফিরিয়ে দাও। আর খেতে হবে না।
–কে মেসেজ দিয়েছে?
ভ্রু কুঁচকে নিশাতের দিকে তাকালো নাহিদ। বললো,
— এটা খুবই বাজে স্বভাব। কে মেসেজ দিয়েছে এটা একটা ম্যানারলেস কোয়েশ্চেন।
চেহারা কুঁচকে এলো নিশাতের। কন্ঠে একরাশ অভিযোগ ঢেলে বললো,
–কেউ মোবাইলে কিছু দেখার সময় পেছনে দাঁড়িয়ে তার স্ক্রিন চেক করা কি ম্যানারলেস বিহেভিয়ার না?
— তুমি ফোন হাতে বসে কাঁদছিলে তাই দেখেছি। আর নয়তো কখনোই দেখতাম না।
— আপনি সিরিয়াস মুডে ছিলেন। হঠাৎ ফোনের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলেন তাই
জিজ্ঞেস করেছি। আর নয়তো কখনোই জিজ্ঞেস করতাম না।
–কত ঝগড়া করো! যাও নিচে যাও।
–আমি আগে এসেছি। আমি যাবো না। আপনি যান।
মেসেঞ্জারে কল এসেছে নাহিদের। তর্ক আর না বাড়িয়ে ছাদের অন্যপাশে চলে গেলো সে। নিশাত প্রচুর বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে নাহিদের দিকে।
.
পাশাপাশি শুয়ে টিভি দেখছে নিঝুম আর ঈষিতা। সকাল থেকে নিঝুমের মাথায় নাহিদ আর নিশাতের কথা ঘুরপাক খেয়ে যাচ্ছে। তখন থেকে ওদের দুজনকে গভীর মনোযোগ দিয়ে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছে সে। রাত নাগাদ বিশ্লেষণের ফলাফল দাঁড়িয়েছে দুজনের মধ্যে আসলেই কিছু চলছে। নিশাতের ব্যাপারটা এখনও একটু খটকা লাগছে। তবে নাহিদের ব্যাপারটা একদম স্বচ্ছ। এটা কিভাবে সম্ভব হলো সেটাই বুঝে পাচ্ছে না নিঝুম। এতগুলো বছর পর মানুষটা কাউকে পছন্দ করেছে। তাও বয়সে এত ছোট একটা মেয়েকে! এটা নিয়ে কোনো ঝামেলা না আবার লেগে যায়! ঈষিতা আর ওর বাবা মা মানবে তো? যদি না মানে তাহলে আরো একটা ধাক্কা নাহিদের জন্য অপেক্ষা করছে। চিন্তাটা বড্ড খোঁচাচ্ছে। খোঁচাখুঁচি সামলে উঠতে না পেরে ঈষিতাকে বললো,
–তোমার সাথে একটু কথা ছিলো।
–নাহিদ ভাই আর নিশাতের ব্যাপারে?
তড়িৎ গতিতে শোয়া থেকে উঠে বসলো নিঝুম। এলোমেলো চুলগুলো খোপা করতে করতে বললো,
— তুমি জানো কিভাবে?
–সেই দুপুর থেকে তুমি ওদের দুজনকে কিছুক্ষণ পরপরই দেখছো, মনে মনে অনেক কিছু বিশ্লেষণ করছো সেসব আমি খেয়াল করেছি।
–তার মানে তুমিও ওদের দুজনকে খেয়াল করেছো।
–গতকাল সকাল থেকেই। গতরাতে কনফার্ম হয়েছি।
— কিভাবে?
— নিশাত অন্ধকারে মন খারাপ করে বসে ছিলো। নাহিদ ভাই ওকে নিয়ে গতরাতে ঘুরতে বেরিয়ে ছিলো।
— কোথায়?
— পুকুরঘাটে। তখন রাত কয়টা বাজে জানো?
–কয়টা?
— আড়াইটা।
–এতরাতে?
— হুম। রাতে পুকুরঘাট এত সুন্দর হয়ে যায় এটা আমি জানতাম না। গতরাতে ওদের পিছুপিছু গিয়ে টের পেয়েছি।
— ওদের পেছন পেছনও গিয়েছো?
–যাবো না! আমার বোনকে একজন মানুষ এতরাতে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এটা অবশ্যই আমার জানা দরকার।
—বাঁধা দিলে না কেনো?
— ইচ্ছে করে দেইনি। ভালো একটা সম্পর্ক গড়ার যদি সুযোগ থাকে তাহলে সেটা গড়তে দেয়া উচিত। নাহিদ ভাই আমার বোনের কোনো ক্ষতি করবে না এতটুকু আমি জানি। তাই বাঁধাও দেইনি।
— তার মানে তুমি রাজি?
–যেহেতু সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না সেহেতু আপত্তি করার প্রয়োজন দেখছি না।
–তোমার কথায় মনে হচ্ছে তোমার আপত্তি আছে।
— ঠিক আপত্তি না। ওদের বয়সের পার্থক্য নিয়ে খটকা লাগছে।
— এটা অবশ্য সবারই খটকা লাগবে। তবে আমার লাগছে না। এখানে আমি
নিশাতের সুখ দেখতে পাচ্ছি যেটার কাছে বয়সের সমস্যা কিছু না।
–ভবিষ্যতে সমস্যা হতেও তো পারে।
–আবীর তো ওর কাছাকাছি বয়সেরই ছিলো। ওখানে কি সমস্যা হয়নি? তা হয়েছিলো।
— এত ভেবো না। নিশাতের ব্যাপারটা এখনও আমার কাছে ঘোলাটে। মনে হয়না ওর তরফ থেকে কিছু চলছে। ও একটু পাগলাটে স্বভাবের। কোনো কিছু চিন্তা ভাবনা না করেই কাজ করে বসে। নাহিদ ভাইয়ের সাথে এভাবে ঘুরাফেরা করছে এটা কি এমনিতেই ঘুরছে নাকি একটু আধটু উনাকে মনে ধরার জন্য ঘুরছে সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না।
— নিশাতকে নিয়ে আমিও কনফিউজড। ওকে কি সরাসরি জিজ্ঞেস করবো?
— নাহ্। যাক আরো কিছুদিন। আরো একটু লক্ষ্য করি। এরপরও না বুঝলে সরাসরি জিজ্ঞেস করবো।
.
সেই কখন থেকে নাহিদ কথা বলেই চলেছে। হঠাৎ হঠাৎ আবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে। সিমিন নামের কারো সাথে কথা বলছে সে। নাহিদের কিছু কিছু কথা নিশাতের কান পর্যন্ত ভেসে আসছে। তখনই শুনেছে ওপাশে থাকা মেয়েটার নাম। রুম্পাকে মাথা থেকে সরাতে পারছে না নিশাত। রুম্পার গল্প শুনতে হবে। অবশ্যই শুনতে হবে। এই লোকের হাবভাবে মনে হচ্ছে বলবে না। এখন উপায় হচ্ছে নিঝুমকে জিজ্ঞেস করা। বেঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো নিশাত। বেশ তাড়াহুড়ো করে নিচে নামছে সে। নিঝুমের কাছ থেকে আজ এখুনি গল্প শুনবে সে।