অধ্যায় ৩৩
জেসন হোটেলের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে। “কেন?” সে খুব শান্ত কণ্ঠে জানতে চাইলো। “আমি ভেবেছিলাম আপনি বুঝতে পেরেছেন।”
“আমি চেষ্টা করেছিলাম, বন্ধু,” ভিলিয়ার্স বললো। তার কণ্ঠটা খুবই নির্বিকার। “ঈশ্বর জানে আমি চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু আমি আর পারলাম না। আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার একমাত্র ছেলের হত্যাকারী সেই নরপশুটার ঘনিষ্ঠ এক অনুচর। আমার খানকিটা আসলে অন্য আরেকজনের খানকি…জানোয়ারটার খানকি। আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না।” জেনারেল একটু থামলো। “সেও আমার চোখ দেখে সব বুঝতে পেরেছিলো। শেষে আমি তাকে সুযোগটা দিয়েছিলাম, যেটা আমি তোমাকেও বলেছিলাম।”
“আপনাকে খুন করতে?”
“হ্যা। এটা খুব কঠিন ছিলো। আমাদের বিছানার মাঝখানে একটা নাইটস্ট্যান্ড আছে, সেটার ড্রয়ারে একটা অস্ত্রও রাখা থাকে। সে বিছানায় শুয়ে ছিলো, গয়ার মাজা’র মতো। আমি ড্রয়রাটা খোলা রেখে একটা দেয়াশলাই দিয়ে চেয়ারে ফিরে পাইপ ধরিয়ে আমরা চুপচাপ ব’সে রইলাম। আমার মধ্যে টেনশন বাড়তে লাগলো। তারপর আমি তাকে খানকি ব’লে গাল দিলাম। আমার ছেলেকে খুন করেছে বলেও অভিযোগ করলাম। সে কিছুক্ষণ আমার দিকে চেয়ে রইলো। একবার আঁড় চোখে ড্রয়ারের পিস্তলটার দিকেও তাকালো…তারপর ফোনের দিকে। সে বিছানা থেকে লাফিয়ে ড্রয়ার থেকে পিস্তলটা হাতে নিয়ে নিলো। আমি তাকে থামাতে পারি নি। বরং আমাকে তার কথা শুনতে হয়েছে। আমি যা শুনেছি সেটা আমার সাথে আমার কবরে যাবে। তাতে ক’রে আমার ছেলে এবং আমার কিছুটা সম্মান রক্ষা পাবে।”
“জেনারেল…” বর্ন মাথা ঝাঁকিয়ে বললো। “তারপর? সে আমার নাম বলেছে। কিভাবে? আপনাকে সেটা বলতে হবে। প্লিজ।”
“সে বলেছে তুমি একজন তুচ্ছ অস্ত্রবাজ, যে কিনা একজন দৈত্যের জুতা পরবার ইচ্ছে পোষণ করছে। তুমি জুরিখ থেকে টাকা চুরি করেছো। তুমি এমন একজন লোক যাকে তার নিজের লোকজনই অস্বীকার করে।”
“সে কি বলেছে, ঐ সব লোক কারা?”
“যদি সে তা বলে থাকে তবে আমি সেটা শুনি নি। আমি রাগে ক্ষোভে অন্ধ আর কালা হয়ে গিয়েছিলাম। তবে আমার দিক থেকে তোমার কোনো ভয় নেই। এই অধ্যায়টা বন্ধ হয়ে গেছে। আমার জীবনটা একটা ফোন কলের সাথে শেষ হয়ে গেছে।”
“না!” জেসন চিৎকার ক’রে বললো। “আপনি এটা করবেন না! এখন তো নয়ই।”
“অবশ্যই করবো।”
“প্লিজ। কার্লোসের বেশ্যাটার কথায় বিশ্বাস করবেন না। কালোর্সকে ধরুন! তাকে ফাঁদে ফেলুন!”
“ঐ খানকিটার সাথে শুয়ে নিজের নামটাকে ঘৃণ্য করেছি। পশুটার মাগীর কব্জায় থেকেছি।”
“উফ্! এসব কি বলছেন? আপনার ছেলের ব্যাপারটা কি হবে? যাকে ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে!”
“তাকে শান্তিতে থাকতে দাও। আমাকেও শান্তিতে থাকতে দাও। সব শেষ হয়ে গেছে।”
“শেষ হয় নি! আমার কথা শুনুন! আমাকে কেবল একটু সময় দিন, এটাই কেবল আমার দাবি।” জেসন টের পেলো মেরি তার কাঁধে হাত রেখেছে। “গুলির শব্দটা কি অন্য কেউ শুনেছে?”
“কোনো গুলির শব্দ হয় নি। আমি আমার পবিত্র সামরিক অস্ত্রটাকে নোংরা করতে দেই নি। এটা কোনো খানকির উপর ব্যবহার করা হয় নি।”
“আপনি কি বোঝাতে চাইছেন? আপনি না বললেন তাকে আপনি খুন করেছেন।”
“আমি তাকে গলা টিপে হত্যা করেছি।”
“তার হাতে তো আপনার অস্ত্রটা ছিলো…”
“কারো চোখে যখন পাইপের গরম ছাই ছিটিয়ে দেয়া হয় তখন সে অকার্যকর হয়ে পড়ে। এটা এখন অপ্রাসঙ্গিক। সে জিতেও যেতে পারতো।”
“সে-ই জিতে গেছে। আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না? কার্লোস জিতে গেছে! মেয়েটা আপনাকে ধ্বংস ক’রে ফেলেছে! আর আপনার সেই ঘিলু নেই যে, তাকে মেরে ফেলা ছাড়া অন্য কিছু করতে পারতেন! আপনি অশ্রদ্ধা আর ঘৃণার কথা বলছেন? আপনিই সেটা অর্জন করেছেন। এখন আর অশ্রদ্ধা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই!”
“তুমি কেন লেগে আছো, মঁসিয়ে বর্ন?” ভিলিয়ার্স ক্লান্তভাবে জানতে চাইলো! “আমি তোমার কাছ থেকে, কিংবা কারোর কাছ থেকে কোনো রকম বদান্যতা আশা করি না। আমাকে খালি একটু একা থাকতে দাও। তুমি কিছুই করতে পারবে না।”
“পারবো, যদি আপনি আমার কথা শোনেন! কার্লোসকে ফাঁদে ফেলুন! কতো বার আমি এই কথাটা আপনাকে বলবো? তাকেই তো আপনি চান! তাকে আমিও চাই! তাকে ছাড়া আমি মৃত। আমরা মৃত। ঈশ্বরের দোহাই লাগে আমার কথা শুনুন!”
“আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই, কিন্তু এখন আর কোনো উপায় নেই।”
“আছে।” তার মনের পর্দায় কতোগুলো ছবি ভেসে উঠলো। “পাল্টা ফাঁদে ফেলুন। ওখান থেকে কোনো কিছু স্পর্শ না করেই চলে আসুন।
“আমি বুঝতে পারছি না। এটা কি ক’রে সম্ভব?”
“আপনি আপনার বউকে খুন করেন নি। খুন করেছি আমি!”
“জেসন!” মেরি পাশ থেকে চিৎকার ক’রে জেসনের হাতটা খামচে ধরলো।
“আমি জানি আমি কি করছি,” বর্ন বললো। “এই প্রথম আমি সত্যি জানি আমি কি করছি। এটা খুবই হাস্যকর শোনাবে, তবে আমার মনে হয় এটা আমার প্রথম থেকেই জানা উচিত ছিলো।”
.
পার্ক মশিউ এলাকাটি খুব শান্ত, রাস্তাঘাট ফাঁকা, ঘন কুয়াশার মধ্যে বাড়িগুলোর সামনের জ্বলে থাকা বাতির আলো দেখা যাচ্ছে। সবগুলো বাড়ির জানালা বন্ধ আর ভেতরটা অন্ধকার, কেবল সেন সায়ার আর নরম্যান্ডির বীর, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য, স্ত্রী ঘাতক আঁদ্রে ফ্রাসোঁয়া ভিলিয়ার্সের বাড়িটা বাদে। সামনের জানালাটা এই বাড়ির শোবার ঘরের, যেখানে বাড়ির মালিক তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে।
ভিলিয়ার্স কোনো কিছুতেই রাজি হয় নি। সে এতোটাই বিস্মিত হয়েছে যে, কোনো জবাব দিতে পারে নি। কিন্তু জেসন তাকে কিছুটা বোঝাতে পেরেছে। কালোর্সকে ধরতে হবে! তাকে ফাঁদে ফেলতে হবে! তার কাছে এটা খুবই পরিস্কার। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। শেষ দিকেই এটা শুরু হবে—আর শুরুটা তার কাছে উন্মোচিত হচ্ছে। বাঁচতে হলে গুপ্তঘাতককে পাড়াও করতে হবে। আর সে যদি ব্যর্থ হয় তবে সে মারা যাবে। সেন মেরিও রেহাই পাবে না। হয় জেলে যাবে সারা জীবনের জন্যে, নয়তো খুন হবে।
ভিলিয়ার্সকে অনেক কিছুই বুঝতে হবে। আর বুঝিয়ে বলার মতো সময়ও নেই। জেসন বুঝতে পারে জেনারেল সব কিছুর উপরে নিজের সম্মানকে স্থান দিচ্ছে। ভিলিয়ার্সের জন্যে সেটা করাটা হবে বিশাল এক সম্মানের ব্যাপার।
কার্লোর্সকে ধরো!
জেনারেলের বাড়িতে ঢোকার দ্বিতীয় একটি প্রবেশপথ আছে; মূল প্রবেশ পথের ডান দিকে সেটা, যেখান দিয়ে রান্নাঘরের মালপত্র আনা নেয়া হয়। বৰ্ন বৃদ্ধ সৈনিককে পরিকল্পনাটা বিস্তারিত বলতে দ্বিধা করে নি। কিন্তু ভিলিয়ার্সের বাড়িটা নজরদারি করা হচ্ছে ব’লে একটা ঝুকিও আছে। এরকমটি করা কার্লোসের পক্ষে অনেক কারণ আছে। আবার একইভাবে না করারও কারণ রয়েছে। সব কিছু বিবেচনা ক’রে খুনি হয়তো ভিলিয়ার্সের বাড়িটা থেকে দূরে থাকারই চেষ্টা করবে। তবে ফিলিপ দাঁজু! অবশ্যই সেখানে কেউ না কেউ লক্ষ্য রাখছে—দু’জন কিংবা দশ জনও হতে পারে! দাঁজু যদি ফ্রান্স ছেড়ে চলে যায় তবে কার্লোস অনুমাণ করতে পারবে কি হয়েছে। আর মেডুসার লোকটা যদি ফ্রান্স ছেড়ে না যায় তারপরে ও কার্লোস জেনে যাবে সব। কেইনের সাথে বলা প্রতিটি কথা সে কার্লোসকে জানিয়ে দেবে। কোথায়? কার্লোসের লোকেরা কোথায় আছে? জেসন ভাবলো। আজ রাতে যদি কার্লোসের কোনো লোক পার্ক মশিউ’তে না থাকে তবে তার পুরো কৌশলটা মূল্যহীন হয়ে পড়বে।
তা হবে না। তারা ওখানে আছে। একটা সিডানে-বারো ঘণ্টা আগে যে সিডানটা লুভর থেকে চলে গেছে। আর ঐ দু’জন লোকই আছে সেখানে—খুনিদের খুনিদের ব্যাআপে থাকা খুনিরা। গাড়িটা রাস্তা থেকে পঞ্চাশ ফিট দূরে বাম পাশে আছে। সেখান থেকে ভিলিয়ার্সের বাড়িটা পরিস্কার দেখা যায়। কিন্তু ভেতরে ব’সে থাকা দু’জন লোকের চোখ সজাগ আর সতর্ক আছে কিনা বর্ন সেই ব্যাপারে নিশ্চিত নয়। রাস্তার দু’পাশেই সারি সারি ক’রে গাড়ি রাখা আছে। একটা মার্সিডিজ, একটা লিমোজিন আর একটা বেন্টলি। জেসন থেমে থাকা সিডানটার পেছন দিক থেকে সতর্কভাবে নিচু হয়ে এগিয়ে গেলো। সে জানে তাকে কি করতে হবে। কিন্তু কিভাবে করবে সে ব্যাপারে সে নিশ্চিত নয়। তার দরকার কার্লোসের লোকগুলো যেনো কোনো কিছুতে আকৃষ্ট হয়। লুকিয়ে থাকা অবস্থা থেকে তারা যেনো একটু
বের হয়ে আসে।
আগুন। আচমকা আগুন। ভিলিয়ার্সের বাড়ি থেকে একটু দূরে। এই নিরিবিলি ফাঁকা রাস্তায় এটাই হবে মোক্ষম অস্ত্র। প্রচণ্ড একটা ঝাঁকুনি…সাইরেন; বিস্ফোরণ…বিস্ফোরণ। সেটা করা যেতে পারে।
বর্ন কোণার ভবনটার দিকে আবার ফিরে গেলো। কাছের একটা বাড়ির দরজার সামনে গিয়ে থামলো সে। পরনের জ্যাকেট, শার্ট খুলে ফেলে কলার থেকে টেনে ছিড়ে দলা পাকিয়ে ফেললো কাপড়গুলো। সেগুলো নিয়ে আশেপাশে পার্ক ক’রে রাখা গাড়িগুলোর দিকে তাকালো সে। কোনো না কোনো গাড়ির অয়েল ট্যাঙ্কের মুখ অরক্ষিত আছেই। প্যারিসে এরকমটি থাকে।
তার যা দরকার এবার সেটা দেখতে পেলো। সামনের একটা বাড়ির গেটের ভেতরে একটা মোটর সাইকেল রাখা আছে। সেটার ট্যাঙ্কের কোনো লক্ না থাকারই কথা।
জেসন বাইকটার দিকে এগোলো। রাস্তার আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বাইরে লোকজন খুব কমই বের হচ্ছে এখন। সে ট্যাঙ্কের মুখে লাগানো ক্যাপটা মোচর দিতেই সেটা খুলে গেলো। ট্যাঙ্কি ভর্তি পেট্রল আছে। সে মুখটা আবার লাগিয়ে রাখলো। এখন শার্টটা ভেঁজানো যাবে না। তার আরেকটা জিনিসের দরকার আছে।
কাছের একটা কোণায় সুয়ারেজ ড্রেনের পাশে সে ওটা খুঁজে পেলো : পিচ থেকে একটা পাথরের টুকরো কিছুটা বের হয়ে আছে। আর তার পাশেই আছে একটা ইটের টুকরো। সে ইটটা পকেটে নিয়ে পা দিয়ে কয়েকবার লাথি মেরে পাথরটা খুলে ফেলে সেটা নিয়ে বাইকের কাছে আবার ফিরে এলো। ইটের টুকরোটা হাতে নিয়ে ওজন ক’রে দেখলো। কাজ হবে। দুটো জিনিসেই কাজ হবে।
তিন মিনিট পরে সে তার শার্টটা পেট্রলে ভিজিয়ে নিলো। সেই ভেঁজা শার্টটা পাথরের টুকরোতে পেঁচিয়ে নিয়ে সে প্রস্তত হলো তার মিসাইলটা নিক্ষেপ করার জন্যে।
সিডানে ব’সে থাকা লোক দু’জন মনোযোগের সাথে ভিলিয়ার্সের বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে। সিডানটার পেছনে আরো তিনটি গাড়ি। জেসনের ঠিক সামনে একটা সাদা বাড়ি। প্রবেশদ্বারের দু’পাশে আছে দুটো জানালা। বাম দিকের জানালাটা অবশ্যই ডাইনিং রুমের। জানালার কাঁচ দিয়ে সে চেয়ার টেবিল দেখতে পাচ্ছে।
বর্ন পকেট থেকে পাথরের টুকরোটা বের ক’রে সিডানটার দিকে নিশানা ক’রে ছুড়ে মারলো সেটা। পাথরের টুকরোটা সিডানের ছাদে লেগে রাস্তায় গড়িয়ে পড়লে সুনসান এলাকায় বেশ ভালো শব্দই হলো। সিডানে ব’সে থাকা লোক দু’জন চমকে গেলো। ড্রাইভারের পাশে বসা লোকটা দরজা খুলে এক পা বের করলো, তার হাতে একটা অস্ত্র। ড্রাইভার তার জানালার কাঁচ নামিয়ে হেডলাইট জ্বালিয়ে দিলো। কিন্তু সামনের একটা বাড়ির গ্যারাজের ধাতব দরজায় প্রতিফলিত হয়ে ফিরে এলো। এই কাজটা একেবারেই বোকার মতো হয়ে গেলো। এতে ক’রে পার্ক মশিউ’তে ওঁৎ পেতে থাকা লোকদেরকেই চিহ্নিত ক’রে ফেলা হলো।
এবার জেসন রাস্তা দিয়ে দৌড় দিলো। তার মনোযোগ ঐ লোক দু’জনের উপর। যাদের হাত তাদের চোখ দুটো ঢেকে রেখেছে হেডলাইটের প্রতিফলিত আলোর জন্যে। সে বেন্টলি গাড়ির অয়েল ট্যাঙ্কটার কাছে চলে এলো। ইটের টুকরোটা তার বগলের নিচে, বাম হাতে একটা দেয়াশলাই। সে নিচু হয়ে দেয়াশলাইয়ের একটা কাঠি জ্বালালো। ইটটা মাটিতে রেখে শার্টের হাতায় সেটা বেঁধে নিলো। এবার জ্বলন্ত কাঠিটা পেট্রলে ভেঁজা কাপড়ে ধরিয়ে দিলে সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে গেলো তাতে। চট ক’রে উঠে কাপড়ে বাঁধা ইটটা দোলাতে লাগলো সে, ছুড়ে মারলো সাদা বাড়িটার জানালা বরাবর। ছুড়ে মেরেই দৌড়ে একটা ভবনের কোণে এসে লুকিয়ে পড়লো।
জানালার কাঁচ ভাঙার শব্দটা নিরব নিথর এলাকায় বিঘ্ন সৃষ্টি করলো।
বর্ন এক দৌড়ে ভিলিয়ার্সের বাড়ির কাছে একটা ভবনের আড়ালে চলে এলো। আগুনটা ছড়িয়ে পড়ছে। ভাঙা জানালা দিয়ে বের হওয়া বাতাসের কারণে আগুনটা আরো বেড় যাচ্ছে। ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে ঘরটা জ্বলন্ত চুলায় পরিণত হয়ে গেলো। চিৎকার চেঁচামেঁচি আর আশপাশের জানালা খোলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এক মিনিটের মধ্যে হৈহল্লাটা বেশ বেড়ে গেলো। আগুন লাগা বাড়িটার দরজা খুলে গেলে নাইট গাউন পরা একজন বৃদ্ধ আর বৃদ্ধা আতঙ্কে বের হয়ে এলো।
লোকজনের ভীড় বাড়লে জেসন দৌড়ে আবার আগের জায়গায় ফিরে এলো। কার্লোসের লোকদেরকে এখান থেকে দেখার চেষ্টা করলো সে। তার ধারণই ঠিক। পার্ক মশিউ’তে কেবল এই দু’জন লোকই পাহারা দিচ্ছে না। সব মিলিয়ে চারজন। সিডানটার সামনে এসে একে অন্যের সাথে কথা বলছে তারা। না, পাঁচজন। আরেকজন কোত্থেকে যেনো এসে তাদের সঙ্গে যোগ দিলো।
সাইরেনের শব্দ শুনতে পেলো জেসন। কাছেই তেড়ে আসছে সেটা। পাঁচজন লোক সতর্ক হয়ে উঠলো। সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারা যেখানে আছে সেখানে থাকতে পারে না। হয়তো গ্রেফতার করা হতে পারে। একমত হলো তারা। একজন লোক থাকবে। পঞ্চম জন। সে মাথা নেড়ে সায় দিয়ে ভিলিয়ার্সের বাড়ির দিকে হেটে গেলো। বাকিরা সিডানে উঠে বসতেই সিডানটা ছুটে চলে গেলো।
একটা বাঁধা রয়ে গেলো : পঞ্চম লোকটা। জেসন লোকটাকে ভিলিয়ার্সের বাড়ির দিকে যেতে দেখলো। এখন সময় হয়েছে তার আরেকটা কৌশল প্রয়োগ করার।
আগুনের দিকে যেভাবে লোকজন দৌড়ে যাচ্ছে জেসনও ঠিক সেইভাবে দৌড়ে গেলো কিন্তু চোখ দুটো থাকলো কর্নারের দিকে। হৈহট্টগোলের মাঝে সে ঐ লোকটাকে অতিক্রম ক’রে গেলেও সে খেয়ালই করলো না, কিন্তু জেসন যদি ভিলিয়ার্সের বাড়ির প্রবেশপথের সিঁড়ির দিকে যেতে থাকে এবং দরজাটা খোলে তবে খেয়াল করবে নিশ্চিত। লোকটা সামনে পেছনে তাকালো। সে খুব সতর্ক আর বিস্মিত। হয়তোবা এখন একা একা নজরদারি করছে বলেও একটু ভড়কে থাকতে পারে। সে পার্ক মশিউ’র আরেকটা বিলাসবহুল বাড়ির প্রবেশপথের সিঁড়ির রেলিংয়ের সামনে এসে দাঁড়ালো।
জেসন থেমে গেলো, লোকটার পাশে দুই পা এগিয়ে গিয়ে বাম পা’টা মাটিতে রেখে ডান পাটা ঘুরিয়ে লোকটার পেট বরাবর লাথি মারলো। লাথির আঘাতে লোকটা পেছন দিকে হুমরি খেয়ে রেলিংয়ের উপর প’ড়ে গেলো। লোকটা মেঝেতে পড়তেই চিৎকার দিলো। বর্ন রেলিং টপকে লোকটার বুকের উপর দু’পায়ের হাটু দিয়ে জোরে আঘাত করলে পাঁজরের হাড় ভাঙার শব্দ শোনা গেলো। দু’হাতে লোকটার গলা চেপে ধরলো সে। কার্লোসের সৈনিকটির দম বন্ধ হয়ে এলো। অনেকক্ষণ পর কেউ তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেই কেবল তার জ্ঞান ফিরে আসবে। জেসন লোকটার দেহ তল্লাশী ক’রে বগলের নীচ থেকে একটা অস্ত্র খুঁজে পেলো। অস্ত্রটা সে নিজের কোটের পকেটে রেখে দিলো। এটা সে ভিলিয়ার্সকে দেবে।
ভিলিয়ার্স। পথটা এখন পরিস্কার।
.
তৃতীয় তলার সিঁড়িটা দিয়ে উঠছে সে। সিঁড়ির উপরে থেকেই দরজার নীচ দিয়ে শোবার ঘরের বাতির আলোটা দেখতে পেলো। সেই দরজার ওপাশেই এক বৃদ্ধ আছে, তার একমাত্র আশা। এখন আর বহুরূপীর কোনো সুযোগ নেই। তার সব বিশ্বাসের ভিত্তি একটাই। কার্লোস তার পিছু নেবে। এটা সত্য। আর এটাই ফাঁদ।
সে শোবার ঘরের দিকে এগোলো। কয়েক মুহূর্তের জন্যে থামলো নিজের বুকের ধুপ ধুপ শব্দটা বন্ধ করার জন্যে। কিন্তু সেটা আরো বেড়ে গেলো।
একটা চুক্তি…একটা কন্ট্রাক্ট…একদল লোকের সাথে…সম্মানিত সব লোকজন—যারা কার্লোসের পেছনে লেগেছে। এটাই খালি ভিলিয়ার্সকে জানতে হবে। এটা সে মেনে নিয়েছে। সে বলবে না তার স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েছে। সেন সায়ার- এর বীর এটা মেনে নেবে না। এখন তো নয়ই।
ওহ্ ঈশ্বর! বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মাঝে যে পাথক্য, সেটা খুবই ক্ষীণ…স্মৃতিভ্রষ্ট একজনের নাম জেসন বর্ন নয়।
দরজাটা খুলে সে ভেতরে ঢুকলো। বৃদ্ধলোকের ব্যক্তিগত নরকে। বাইরে সাইরেন আর হৈহল্লার শব্দ শোনা যাচ্ছে। জেসন দরজাটা বন্ধ করে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো। বড়সড় ঘরটা অন্ধকারে ঢেকে আছে। একমাত্র আলো ছোট্ট একটা টেবিল ল্যাম্প। যে দৃশ্য সে দেখতে পেলো সেটা তার দেখার কথা নয়।
ভিলিয়ার্স একটা চেয়ার নিয়ে বিছানার পাশে বসে আছে। তাকিয়ে আছে বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে প’ড়ে থাকা তার বউয়ের দিকে। এনজেলিক ভিলিয়ার্সের চোখ দুটো খোলা, যেনো কোটর থেকে ঠিকরে বের হয়ে আসছে। শরীরের পোশাক আলুথালু। স্তন জোড়া অনেকটাই উন্মুক্ত। এমনকি মৃত হলেও সেগুলো বেশ ইন্দ্রিয়পরায়ণ।
বৃদ্ধ সৈনিকটি এবার বর্নের দিকে তাকালো। “বাইরে কি হয়েছে?” উদাস কণ্ঠে সে জানতে চাইলো।
“লোকজন আপনার বাড়ির দিকে নজর রাখছিলো। কার্লোসের পাঁচজন লোক। আমি ব্লকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছি। কেউ আহত হয় নি। সবাই চলে গেছে, কেবল একজন রয়ে গেছে। আমি তাকে ঘায়েল করেছি।”
“তুমি আসলেই কাজের লোক, মঁসিয়ে বর্ন।”
“আমি কাজের লোকই বটে,” জেসন একমত হয়ে বললো। “তবে তারা ফিরে আসবে। আগুনটা নিভে গেলেই তারা সবাই ফিরে আসবে। আর কার্লোস যদি বুঝতে পারে, আমার ধারণা সে বুঝতে পারবে, তাহলে এখানে অন্য কাউকে পাঠাবে। সে অবশ্য নিজে এখানে আসবে না। তার লোকজন আসবে। আর সেই লোক যখন আপনাকে, আপনার বউকে খুঁজে পাবে, সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে খুন করবে। কার্লোস তার প্রিয়তমাকে হারালেও সে-ই জিতে যাবে। সে দ্বিতীয়বারের মতো জিতে যাবে। সে এই মেয়েটাকে দিয়ে আপনাকে ব্যবহার করেছে, শেষে আপনাকে খুন করবে। পার পেয়ে যাবে সে। লোকজন অনেক কিছু ভাববে, তবে মনে হয় না ভালো কিছু ভাববে।”
“তুমি ঠিকই বলেছো। নিজের বিচারবুদ্ধির ব্যাপারে খুবই নিশ্চিত।”
“আমি জানি আমি কি বলছি। আমি যা বলতে যাচ্ছি সেটা বলতে পছন্দ করছি না, কিন্তু না বলেও পারছি না। আপনার অনুভূতি নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো সময় আমাদের হাতে নেই।”
“আমার অনুভূতি ব’লে কিছু আর বাকি নেই। বলো, কি বলবে।”
“আপনার বউ আপনাকে বলেছে সে একজন ফরাসি, তাই না?”
“হ্যা। দক্ষিণ ফ্রান্সের। তার পরিবার স্পেনের সীমান্তে লুরে বারুয়া এলাকার। কয়েক বছর আগে সে প্যারিসে এসেছে। তার এক চাচির সাথে থাকতো। তাতে কি হয়েছে?”
“আপনি কি তার পরিবারের কারোর সাথে কখনও দেখা করেছেন?”
“না।”
“আপনাদের বিয়েতেও তারা আসে নি?”
“সব দিক বিবেচনা ক’রে আমরা ঠিক করেছিলাম তাদেরকে না ডাকতে। আমাদের দু’জনের বয়সের পার্থক্য তাদেরকে বিব্রত করতো।”
“তার যে চাচি এখানে, এই প্যারিসে ছিলো, তার ব্যাপারটা কি?”
“এনজেলিকের সাথে আমার দেখা হওয়ার আগেই সে মরে গেছে। এসব বলার মানে কি?”
“আপনার বউ ফরাসি নয়। তার কোনো চাচি আছে বলেও আমি মনে করি না।”
“তুমি কি বলতে চাচ্ছো?”
“সে একজন ভেনেজুয়েলান। কার্লোসের চাচাতো বোন। চৌদ্দ বছর বয়স থেকে তার প্রেমিকা। আমাকে বলা হয়েছে সে হলো একমাত্র ব্যক্তি যাকে কার্লোস পরোয়া করে।”
“একটা খানকি।”
“গুপ্তঘাতকের একটি হাতিয়ার। না জানি কতো লোককে টার্গেট করার কাজটা সে করেছে কার্লোসের জন্যে। তার কারণে না জানি কতো লোক খুন হয়েছে।”
“আমি তো তাকে দু’বার খুন করতে পারবো না।”
“আপনি তাকে ব্যবহার করতে পারতেন। এখন তার মৃত্যুকে ব্যবহার করতে পারেন।”
“পাগলের মতো সব কথা বলছো।”
“একমাত্র পাগলের মতো কাজ হবে আপনি যদি আপনার জীবনটা শেষ ক’রে দেন। তাহলে কার্লোর্সই জিতে যাবে। সে আপনাকে খুন করবে, আমাকে খুন করবে। আরো অনেককে খুন করবে। এটা হবে পাগলামি।”
“আর তুমি হলে সুস্থ একজন? তুমি এমন একটি অপরাধের জন্যে নিজেকে দোষী মনে করছো যে অপরাধটি তুমি করো নি? এই বেশ্যাটাকে খুন করা? এমন একটা খুন দাবি করা যা তোমার নয়?”
“এটাই এটার অংশ। সত্যি বলতে কি, আসল অংশ।”
“আমার সাথে এইসব পাগলামি কথাবার্তা বলবে না। আমি তোমাকে অনুরোধ করছি, চলে যাও। তুমি যা বললে সেটা কেবল আমাকে পরম করুণাময়ের মুখোমুখি হতে সাহস যোগাবে। যদি কোনো খুনের দায় নিতে হয় তো সেটা আমিই নেবো।”
“তাহলে আপনি নিজেকে শেষ ক’রে দেবেন,” জেসন এই প্রথম বৃদ্ধের জ্যাকেটের পকেটে যে অস্ত্রটা আছে সেটা টের পেলো।
“আমি কোনো মামলার মুখোমুখি হবো না, যদি তুমি সেটা বুঝিয়ে থাকো।”
“ওহ্, এটা তো বেশ ভালো হয়, জেনারেল! কার্লোস নিজেও এতোটা ভালো ভাবতে পারবে না। তাকে তো নিজের অস্ত্রটাও ব্যবহার করতে হবে না।”
“খুনি আর চোরেরা কি বললো তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না।”
“আর আমি যদি সত্য কথাটা বলি? বলে দেই কেন আপনি তাকে খুন করেছেন?”
“কে শুনবে তোমার কথা? এসব বলার জন্যে কি তুমি বেঁচে থাকবে। আমি বোকা নই, মঁসিয়ে বর্ন। তুমি কার্লোসের চেয়েও বেশি দৌড়ের উপর আছো। তোমাকে অনেকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, একজন নয়। এটা তো তুমিই আমাকে বলেছো। তোমার দাবি, তুমি তোমার নাম আমাকে বলবে না… আমার নিজের নিরাপত্তার জন্যেই। আর এসব যখন শেষ হবে আমি আর তোমার সাথে দেখা করার ইচ্ছে পোষণ করবো না। এইসব কথা যে লোক বলে তার উপর তো আর বিশ্বাস রাখা যায় না।”
“আপনি আমাকে বিশ্বাস করেন।”
“হ্যা, করি। কেন করি বলছি,” তার মৃত বউয়ের দিকে তাকিয়ে বললো ভিলিয়ার্স। “সেটা তোমার চোখে আছে।”
“সত্যটা?”
“সত্যটা।”
“আমার দিকে তাকান। সত্যটা দেখা যাবে। নানতেয়ার-এর পথে আপনি আমাকে বলেছিলেন আপনি আমার কথা শুনবেন, কারণ কারণ আমি আপনার জীবন দিয়েছি। আমি আবারো সেটা দেবার চেষ্টা করছি। আপনি চলে যান। আপনি জিতে গেছেন!…আপনি বেঁচে থাকুন, এটাই একমাত্র পথ, আমি বেঁচে থাকবো।”
বৃদ্ধ সৈনিক চোখ তুলে তাকালো। “কেন?”
“আমি আপনাকে তো বলেছিই, আমি কার্লোর্সকে চাই, কারণ আমার কাছ থেকে কিছু একটা কেড়ে নেয়া হয়েছে—আমার জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় জিনিস কেড়ে নেয়া হয়েছে, আমার স্বাভাবিকত্ব –আর সেটা তার কারণেই। এটাই হলো সত্য—আমিও সেটা বিশ্বাস করি। আরো কিছু লোক এতে জড়িত আছে। কেউ হয়তো জঘন্য, কেউ হয়তো তা নয়। তাদের সাথে আমার চুক্তি ছিলো কার্লোসকে শেষ ক’রে দেয়া, তাকে ফাঁদে ফেলা। তারা যা চায় আপনিও তা চান। তবে এমন কিছু হয়েছে যা আমি ব্যাখ্যা করতে পারবো না—আমি সে চেষ্টাও করবো না—সেই সব লোক মনে করছে আমি তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। তারা মনে করে আমি কার্লোসের সঙ্গে আঁতাত করেছি, তাদের কাছ থেকে মিলিয়ন ডলার চুরি ক’রে আমার আর তাদের মাঝে যেসব লোক আছে তাদের অনেককে হত্যা করেছি। সবখানেই তাদের লোক আছে। তাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছে আমাকে দেখা মাত্রই হত্যা করতে। আপনার কথাই ঠিক। আমি কার্লোসের চেয়েও বেশি দৌড়ের উপরে আছি। আমাকে যারা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদেরকে আমি চিনিও না, চোখেও দেখছি না। তারা যা বলছে আমি তা করি নি। কিন্তু তারা আমার কোনো কথাই শুনছে না। কার্লোসের সাথে আমার কোনো আঁতাত নেই—আপনিও সেটা জানেন।”
“আমি তোমার কথা বিশ্বাস করছি। তোমার হয়ে একটা ফোন করা থেকে আমাকে কোনো কিছুই বিরত রাখতে পারবে না। আমি সেটা তোমার কাছ থেকে পাবার দাবি রাখি।”
“কিভাবে? আপনি কি বলতে চাচ্ছেন? জেসন বর্ন নামের যে লোককে আমি চিনি তার সাথে কার্লোসের কোনো আঁতাত নেই। আমি এটা জানি কারণ সে আমির কাছে কার্লোসের রক্ষিতাকে উন্মোচিত করেছে। তাকে আমি গলা টিপে হত্যা করেছি…ইত্যাদি ইত্যাদি। এটাই তো বলতে চাচ্ছেন, জেনারেল?”
বৃদ্ধ বর্নের দিকে ফ্যাল ফ্যাল ক’রে চেয়ে রইলো। বৈপরিত্যটা এখন তার কাছে পরিস্কার। “তাহলে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারছি না।”
“বেশ। চমৎকার। কার্লোর্সই তাহেল জিতে যাবে। আপনি হেরে যাবেন। আপনা ছেলে হেরে যাবে। করুন—পুলিশকে ফোন করুন। তারপর নিজের ঐ অস্ত্রটা দিয়ে নিজের মাথায় গুলি করুন! এটাই তো আপনি চান! আপনি একজন করুণার পাত্র! ঈশ্বর জানে আপনি কার্লোসের সঙ্গে পেরে উঠবেন না। যে লোক আপনার ছেলেকে বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছে, তার সঙ্গে আপনি পেরে উঠবেন না।”
ভিলিয়ার্স মাথা ঝাঁকাতে লাগলো। “এটা কোরো না। আমি বলছি, এটা কোরো না।”
“আমাকে বলছেন? আপনি আমাকে আদেশ করছেন? এক বৃদ্ধলোক আমাকে আদেশ করছে? ভুলে যান! আপনার মতো কোনো মানুষের কাছ থেকে আমি কোনো রকম অর্ডার মেনে নেবো না! আপনি একটা ধাপ্পাবাজ! আপনি আপনার শত্রুর চেয়েও খারাপ এক লোক। অন্ততপক্ষে তারা যা করতে চায় সেটা করার মতো বুকের পাটা তাদের আছে। আপনার সেটা নেই। যান, শুয়ে পড়ুন, মরে যান। কিন্তু আমাকে কোনো অর্ডার দেয়ার চেষ্টা করবেন না!”
ভিলিয়ার্স চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। তার সমস্ত শরীর কাপঁছে। “আমি তো তোমাকে বললামই। আর নয়!”
“আপনি কি বলেন আর না বলেন সেটা নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। আপনাকে প্রথম দেখেই আমার মনে হয়েছিলো আপনি কার্লোসের লোক। সেটাই আসলে ঠিক। আপনি তার চামচা। তার হাতেই এখন মরবেন।”
বুড়ো লোকটার চেহারায় তিক্ত একটা ভাব দেখা গেলো। সে নিজের অস্ত্রটা হাতে তুলে নিলো। “আমি জীবনে অনেক লোককে হত্যা করেছি। আমার পেশায় এটি অনিবার্য। প্রায়শই বিব্রতকরও। আমি এখন তোমাকে হত্যা করতে চাচ্ছি না। কিন্তু আমার কথা না শুনলে আমি গুলি করতে বাধ্য হবো। চলে যাও। এই বাড়ি থেকে এক্ষুণি চলে যাও।”
“এটা তো খুবই চমৎকার। নিশ্চয় কার্লোসের মাথার সাথে আপনার মাথায় একটা সংযোগ রয়েছে। আপনি আমাকে খুন করবেন, তার জন্যে কাজটা সহজ ক’রে দেবেন!” জেসন এক পা এগিয়ে এলো। সে দেখতে পেলো ভিলিয়ার্সের চোখ দুটো বড় হয়ে গেছে। তার হাতের অস্ত্রটা কাঁপছে। দেয়ালে সেটার ছায়া ও কাঁপছে। টুগারে একটু চাপ লাগলেই গুলি বের হয়ে যাবে। কিন্তু বৰ্নকে ঝুঁকিটা নিতেই হচ্ছে। ভিলিয়ার্স ছাড়া সবই জলে যাবে। বুড়োকে সেটা বুঝতে হবে। জেসন আচমকা চিৎকার ক’রে উঠলো : “চালান গুলি! খুন করুন আমাকে। কার্লোসের কাছ থেকে অর্ডার নিন! আপনি তো আবার সৈনিক। আদেশ অমান্য করা আপনার কাজ নয়। আদেশ পালন করুন!”
কাঁপতে থাকা হাতটা একটু উঁচুতে উঠলো। অস্ত্রটা এবার ঠিক জেসনের মাথার দিকে তাক্ করা হলো। এরপরই বর্ন বুড়োর ফিফিসইনটা শুনতে পেলো।
“‘ভু এত উ সোলদাত…আরেতেজ…আরেতেজ।’”
“কি?”
“আমি একজন সৈনিক। কেউ একজন আমাকে সেটা বলেছে, এই তো কয়েক দিন আগেই। সে তোমার খুব প্রিয় একজন।” ভিলিয়ার্স বেশ শান্ত কণ্ঠে কথা বলছে। “মেয়েটা এক বুড়ো সৈনিককে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে সে কি, আর কি ছিলো এক সময়। সে আমাকে বলেছে আমি এক দৈত্য ছিলাম, আর সে সেটা বিশ্বাস করে। তার কথা ঠিক ছিলো না— তবে তার কথা মোটেও ঠিক ছিলো না- আমার চেষ্টা করা উচিত।”
আদ্রে ভিলিয়ার্স অস্ত্রটা নামিয়ে ফেললো। তার মধ্যে সৈনিকের আত্মমর্যাদা বোধ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। “তুমি আমাকে কি করতে বলবে?”
জেসন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো আবার। “কার্লোসকে আমার পিছু নিতে বাধ্য করুন। তবে এখানে, এই প্যারিসে নয়। এমনকি ফ্রান্সেও নয়।”
“তাহলে কোথায়?”
“আপনি কি আমাকে এই দেশ থেকে বের হতে সাহায্য করতে পারবেন? আপনাকে বলা উচিত, আমি একজন ফেরারি। ইউরোপের সবগুলো সীমান্তে আর ইমিগ্রেশন ডেস্কে আমার নাম আর বর্ণনা দেয়া আছে।”
“মিথ্যে অভিযোগে?”
“মিথ্যে অভিযোগে।”
“আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি। উপায় অবশ্যই আছে। কনসিলার মিলেতেয়ার’র কাছে অনেক পথ আছে, আর আমি যা বলবো সে তা শুনবে।”
“একটা ভূয়া আইডেন্টিটি দিয়ে? তাদেরকে কারণটা না বলেই?”
“আমার মুখের কথাই যথেষ্ট। আমি সেটার যোগ্য।”
“আরেকটা প্রশ্ন। আপনি যে লোকটার কথা বলছেন, তাকে কি আপনি বিশ্বাস করেন—মানে, সে কি খুবই আস্থাভাজন?”
“খুব। সবার চেয়ে বেশি বিশ্বাস করি।”
“আরেকজন আছে। আপনি যাকে আমার খুব আপনজন ব’লে বললেন একটু আগে।”
“অবশ্যই। কেন? তুমি কি একা ভ্রমণ করবে?”
“একাই করতে হবে। সে আমাকে কখনও যেতে দেবে না।”
“তোমাকে তো তাকে কিছু বলতে হবে।”
“বলবো। বলবো, আমি এখানে, প্যারিসে, আমস্টারডামে অথবা ব্রাসেসের আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাচ্ছি। সেসব শহরে, যেখানে কার্লোস অপারেশন চালায়। কিন্তু তাকে চলে যেতে হবে। আমাদের গাড়িটা মতমার্ত্রে’তে পাওয়া যাবে। কার্লোসের লোকেরা প্রতিটি রাস্তা, ফ্ল্যাট আর হোটেলে তন্ন তন্ন ক’রে খুঁজে দেখবে। আপনি এখন আমার সাথে কাজ করছেন। আপনার সহযোগী মেরিকে দেশে নিয়ে যাবে—সে ওখানে নিরাপদে থাকবে। আমি তাকে সেটা বলবো।”
“আমি এখন তোমাকে একটা প্রশ্ন করবো। তুমি যদি না ফিরে আসো তবে কি হবে?”
বর্ন তার কণ্ঠটা দৃঢ় রাখার চেষ্টা করলো। “প্লেনে আমি অনেক সময় পাবো। যা ঘটবে সবই আমি লিখে রাখবো, আমার যা মনে আসবে…সবই। আমি সেটা আপনার কাছে পাঠাবো, তার সঙ্গে মিলে আপনিই সিদ্ধান্ত নেবেন। সে আপনাকে দৈত্য বলেছে। সিদ্ধান্তটি ঠিক মতো নেবেন। মেরিকে রক্ষা করেন।”
“‘ভু এত উ সোলদাত…আরেতেজ।’ তোমাকে আমি কথা দিলাম। তার কোনো ক্ষতি হবে না।”
“এটাই কেবল আমি আপনার কাছে চাইবো।”
ভিলিয়ার্স অস্ত্রটা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে দিলো। একটু কেশে সে বললো, “আমার তরুণ নেকড়ে বন্ধু, তোমার পরিকল্পনাটা কি?”
“আপনাকে দিয়ে শুরু করা, আপনি একেবারে বিধ্বস্ত আর বিপর্যস্ত। আপনি হতবুদ্ধিকর অবস্থায় পড়ে গেছেন। একটা নির্দেশ পালন করছেন কিন্তু সেটা মোটেও আপনার বোধগম্য নয়।”
“বাস্তবতার চেয়ে তো তেমন ভিন্ন কিছু নয়, তাই না?” ভিলিয়ার্স কথার মাঝখানে বললো। “কিন্তু এটা কিভাবে হলো? কেন হলো?”
“আপনি যা জানেন—আপনার যা মনে আছে, সেটা হলো, আগুন লাগার সময় এক লোক আপনার বাড়িতে ঢুকে আপনার মাথায় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে আপনি জ্ঞান হারান। জেগে উঠে দেখেন আপনার বউ খুন হয়ে পড়ে আছে, শ্বাসরোধ ক’রে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তার লাশের পাশে একটা চিরকুট। আর এই চিরকুটটা পড়েই আপনি হতবুদ্ধিকর অবস্থায় প’ড়ে গেছেন।”
“সেটা কি রকম?” সতর্কভাবেই বুড়ো সৈনিক জানতে চাইলো।
“সত্যটাই থাকবে,” জেসন বললো। “যে সত্যটা আপনি অন্য কাউকে জানতে দিতে চান না। কার্লোসের সাথে তার সম্পর্ক কি ছিলো সেটা। আপনার ছেলের হত্যাকাণ্ডের সাথে বেশ্যাটা জড়িত ছিলো, ইত্যাদি। খুনি একটা চিরকুট আর ফোন নাম্বার রেখে গেছে, আপনাকে বলছে সেটা কার্লোসের কাছে পৌঁছে দিতে।”
“কার্লোসের কাছে?”
“না। সে একজন রিলেকে পাঠাবে।”
“ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। আমি যদি জানি লোকটা কার্লোস তবে হয়তো নিজেকে ঠিক রাখতে পারবো না।”
“মেসেজটা তার কাছে পৌঁছে যাবে।”
“সেটা কি?”
“আমি সেটা আপনার জন্যে লিখে দেবো; আপনি সেটা তার পাঠানো লোকের কাছে দিয়ে দেবেন। একেবারে যথাযথভাবে হতে হবে সেটা।” বর্ন মৃত মেয়েটার দিকে তাকালে তার গলাটা শুকিয়ে এলো।
“আপনার কাছে কি এলকোহল আছে?”
“মদ?”
“না। পরিস্কার করার এলকোহল। পারফিউম হলেও চলবে।”
“আমি নিশ্চিত, মেডিসিন ক্যাবিনেটে এলকোহল আছে।”
“আপনি কি সেটা নিয়ে আসবেন, সেই সাথে একটা তোয়ালে?”
“তুমি করবেটা কি?”
“আপনার হাত যেখানে যেখানে রেখেছেন সেখানে আমার হাত রাখবো। যদি প্রয়োজন প’ড়ে সেজন্যে। অবশ্য আমি মনে করি না কেউ আপনার কথায় অবিশ্বাস করবে। আমি যখন এই কাজটা করবো তখন আমাকে এখান থেকে বের করার জন্যে যে লোকের সাথে কথা বলার দরকার তাকে ফোন করবেন আপনি। সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কার্লোসের রিলেকে ফোন করার আগেই আমাকে চলে যেতে হবে। পুলিশকে ডাকার অনেক আগে এটা করতে হবে। তা না হলে তারা এয়ারপোর্টে আমাকে ধরে ফেলবে।”
“আমি সকাল পর্যন্ত বিলম্ব করতে পারবো ব’লে মনে হয়। একজন বৃদ্ধলোক খুবই মুষড়ে পড়েছে। সুতরাং সেটা খুবই স্বাভাবিক। তুমি কোথায় যাবে?”
“নিউইয়র্কে। আপনি সেটা করতে পারবেন? আমার কাছে জর্জ ওয়াশবার্ন নামের এক লোকের একটা পাসপোর্ট আছে। এটাতে ভালো কাজই হবে।”
“আমার কাজটা আরো সহজ ক’রে দিলে। তুমি ডিপ্লোমেটিক স্ট্যাটাস পাবে। আটলান্টিকের উভয় পাশেই প্রি-ক্লিয়ারেন্স পাবে।”
“একজন ইংরেজ হিসেবে? পাসপোর্টটা কিন্তু বৃটিশ।”
“ন্যাটো’র ব্যবস্থায় তুমি হলে একজন অ্যাঙ্গলো-আমেরিকান টিমের সদস্য, একটি মিলিটারি নিগোশিয়েশনে জড়িত। আমরা তোমাকে দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গিয়ে আরো নির্দেশনা নেবার জন্যে সহযোগীতা করছি। এরকমটি প্রায়শই ঘটে। দুটো ইমিগ্রেশন পয়েন্টেই তুমি দ্রুত পার হতে পারবে।”
“ভালো। আমি শিডিউল চেক্ ক’রে দেখেছি। সকাল সাতটায় একটা ফ্লাইট রয়েছে, এয়ার ফ্রান্সের একটা বিমান কেনেডি এয়ারপোর্টে যাবে।”
“ওটাতে তোমার ব্যবস্থা করা হবে,” বৃদ্ধলোকটি থামলো। “নিউইয়র্কে কেন? তোমার কি ক’রে মনে হলো কার্লোস তোমাকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত অনুসরণ করবে?”
“দুটো প্রশ্ন, কিন্তু অনেকগুলো জবাব,” বর্ন বললো। “সে আমাকে যেখানে চারজন লোক আর একজন মহিলাকে হত্যার অপবাদ দিয়েছে, যাদেরকে আমি চিনি না, আমি সেখানেই তাকে ফঁসাবো…তাদের একজন আমার খুবই ঘনিষ্ঠ, আমার একেবারে নিকটজন।”
“আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি না।”
“আমি নিজেও বুঝতে পারছি কিনা জানি না। সময় নেই। প্লেনে আমি সব লিখে জানাবো আপনাকে। আমাকে প্রমাণ করতে হবে নিউইয়র্কের একটি ভবন সম্পর্কে কার্লোস জানতো। ওখানেই সব ঘটেছে। তাদেরকে বুঝতে হবে সে এটা জানতো। বিশ্বাস করুন আমাকে।”
“করছি। দ্বিতীয় প্রশ্ন। সে কেন তোমার পিছু নেবে?”
জেসন মৃত মেয়েটার দিকে তাকালো। “প্রবৃত্তি, হয়তো। আমি এমন একজনকে খুন করেছি যাকে সে এই পৃথিবীতে সবচাইতে বেশি ভালোবাসে। তার জায়গায় আমি হলে আমিও কার্লোর্সকে পৃথিবীর শেষপ্রান্ত পর্যন্ত খুঁজে বেড়াতাম।”
“সে হয়তো আরো বেশি বাস্তববাদী। আমার মনে হয় এটাই তোমার পয়েন্ট।”
“আরো কিছু আছে,” জেসন মৃত এনজেলিক ভিলিয়ার্সের উপর থেকে চোখ সরিয়ে বললো। “তার হারানোর কিছু নেই। সবই অর্জন করতে চায় সে। কেউ জানে না সে দেখতে কি রকম, তবে সে আমাকে চেনে। এখনও সে আমার মনের অবস্থা সম্পর্কে জানে না। সে আমাকে থামিয়ে দিয়েছে, আমাকে অন্য এক লোকে পরিণত করেছে। হয়তো সে খুব বেশি সফল, হয়তো আমি মানসিকভাবে অসুস্থ। আমার হুমকীগুলো অযৌক্তিক। আমি কতোটা অযৌক্তিক? একজন অযৌক্তিক লোক, একজন পাগল, একজন ভীত মানুষ।”
“তোমার হুমকীগুলো কি অযৌক্তিক? তুমি কি তাকে ধরতে পারবে?”
“আমি নিশ্চিত নই। আমি কেবল জানি আমার এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।”
.
মেরিকে ফোন ক’রে মিথ্যে কথাটা বলার পর দশ মিনিট অতিক্রম হয়ে গেছে। মেরি যে তার কথা বিশ্বাস করে নি সেটা তার নিরবতার মধ্য দিয়েই বোঝা গেছে। কিন্তু মেরি তাকে বিশ্বাস করে। তারও কোনো উপায় নেই। মেরির কষ্ট উপশম করার মতো সময় তার নেই। সব কিছু এখন দ্রুত ঘটে যাচ্ছে। ভিলিয়ার্স নিচে গিয়ে ফ্রান্সে একটা জরুরি ফোন করছে কনসিলার মিলিতেয়ার’র কাছে। একজন ভূয়া পাসপোর্টধারীকে কূটনৈতিক মর্যাদা দিয়ে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করার জন্যে। তিন ঘণ্টারও কম সময়ে এক লোক আটলান্টিকের উপর দিয়ে পাড়ি দেবে। নিজের মৃত্যুদণ্ডের বার্ষিকী পালন করার জন্যে এগিয়ে যাচ্ছে সে। এটাই হলো মূলচাবিকাঠি। এটাই হলো ফাঁদ। আর এটা হলো শেষ অযৌক্তিক কাজ। বন ডেস্কের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সে একটু আগে লেখাগুলো পড়ে দেখছে। এই ভাঙা ভাঙা শব্দগুলো একজন হতবাক হওয়া বৃদ্ধ ফোনে অজ্ঞাত এক রিলেকে জানাবে, যে কাগজটা কার্লোসকে দিয়ে দেবে।
আমি তোর কুত্তিটাকে খুন করেছি। তোর কাছেও আমি খুব জলদি আসবো। জঙ্গলে সেভেনটি-ওয়ান স্টুট আছে। ঠিক তাম কুয়ান-এর মতোই ঘন এক জঙ্গল। একটা পথ তুই মিস্ করেছিস। সেলে একটা সিন্দুক আছে যা তুই জানিস না- ঠিক যেমনটি এগারো বছর আগে আমাকে হত্যা করার সময় তুই আমার ব্যাপারে জানতি না। অন্য একজন জানতো, তুই তাকে হত্যা করেছিস। সেই সিন্দুকে কিছু ডকুমেন্ট আছে যা আমাকে মুক্তি দেবে। তুই কি মনে করিস আমি সেই চুড়ান্ত প্রটেকশন ছাড়া কেইন হতে পেরেছি? ওয়াশিংটন আমাকে স্পর্শ করার সাহস দেখাবে না! মনে হয় বর্নের মৃত্যুর দিবসে কেইন কাগজগুলো নিয়ে নেবে, এটা নিশ্চিত ক’রে বলা যায়। এতে ক’রে সে দীর্ঘ জীবন লাভ করবে। তুই কেইনকে মার্ক করেছিস। আমি তোকে মার্ক করছি। আমি ফিরে আসছি, তুইও ঐ মাগিটার সাথে যোগ দিবি।
— ডেল্টা
বর্ন ডেস্কের উপর নোটটা রেখে মৃত মহিলার পাশে চলে এলো। এলকোহল শুকিয়ে গেছে। সে উপুড় হয়ে লাশের শরীরে এমন জায়গায় আঙুলগুলো দিয়ে ছাপ দিলো যেখানে অন্য কারোর আঙুলের ছাপ ছিলো।
পাগলামী।