অধ্যায় ৩১
মেরি দরজা খুলতেই দেখে জেসন তার দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বড় বড় বাদামী চোখ দুটোতে রয়েছে ভয় আর কৌতুহল। মেরি জানে। একটা জবাব আছে। জেসন ফিরে এসেছে তাকে সেই কথাটা বলতে। ঘরের ভেতর ঢুকতেই মেরি দরজাটা বন্ধ ক’রে দিলো।
“এটা ঘটেছে,” বললো মেরি।
“ঘটেছে,” তার কাছে এলো বর্ন। একে অন্যেকে জড়িয়ে ধরলো তারা। তাদের দু’জনের মধ্যেকার নিরবতা অনেক কথা বলে দিলো। “তোমার কথাই ঠিক,” সে মেরির কানে কানে ফিফিস্ ক’রে বললো। “অনেক কিছুই আছে যা আমি জানি না–হয়তো কখনও জানবো না—তবে তোমার কথাই ঠিক। আমি কেইন নই, কারণ কেইন ব’লে কেউ নেই। কখনও ছিলোও না। যে কেইনের কথা তারা বলে। তার কখনও কোনো অস্তিত্ব ছিলো না। সে একটা কাল্পনিক চরিত্র, কার্লোসকে টেনে আনার জন্যে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আমি হলাম সেই সৃষ্টি। মেডুসার এক লোক যে ডেল্টা নামে পরিচিত, সে কেইন হতে রাজি হয়েছিলো। আমি সেই লোক।”
মেরি জড়িয়ে ধরে রাখলো তাকে। “‘কেইন হলো চার্লি…’ সে কথাটা আস্তে ক’রে বললো।
“আর ডেল্টা হলো কেইন, “ কথাটা শেষ করলো জেসন। “তুমি আমাকে এটা বলতে শুনেছো?”
মেরি মাথা নেড়ে সায় দিলো। “হ্যা। সুইজারল্যান্ডে একরাতে তুমি ঘুমের মধ্যে চিৎকার ক’রে বলেছিলে। তুমি কখনও কার্লোসের নাম বলো নি। কেবল কেইন…ডেল্টা। আমি পরের দিন সকালবেলা তোমাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেও তুমি কিছু বলো নি। কেবল জানালার বাইরে চেয়ে থাকলে।”
“কারণ আমি বুঝতে পারি নি। আমি এখনও বুঝতে পারছি না, তবে মেনে নিয়েছি। এটা অনেক কিছুই ব্যাখ্যা করে।”
সে আবারো মাথা নেড়ে সায় দিলো। “উস্কানীদাতা। যে কোডটা তুমি ব্যবহার করেছিলে, অদ্ভুত একটি পদবাচ্য। কিন্তু কেন? তুমি কেন?”
“কোথাও কোনো একজনকে খতম করতে। এটাই সে বলেছে।”
“কে বলেছে?”
“দাঁজু।”
“পার্ক মশিউ’র সিঁড়িতে যে লোকটা ছিলো, সে? সুইচবোর্ড অপারেটর?”
“মেডুসার লোক। আমি তাকে মেডুসায় থাকাকালীন সময় থেকেই চিনতাম।”
“সে কি বলেছে?”
বর্ন তাকে সব খুলে বললে মেরির চোখেমুখে একটা স্বস্তির ভাব দেখতে পেলো। তার মধ্যে একধরণের আনন্দের বর্হিপ্রকাশ টের পাওয়া গেলো।
“জেসন!” মেরি চিৎকার ক’রে বললো। দু’হাতে তার মুখটা ধরলো। “ডার্লিং! আমার বন্ধু আমার কাছে ফিরে এসেছে! এটাই আমরা জানতাম, এটাই আমরা অনুভব করতাম!”
“ঠিক সব বলা যাবে না,” সে বললো তার গাল স্পর্শ ক’রে। “আমি তোমার কাছে জেসন, আমার কাছে বর্ন, কারণ এই নামটাই আমাকে দেয়া হয়েছে। কারণ আমার আর কোনো নাম নেই তাই এটা ব্যবহার করতে হচ্ছে। তবে নামটা আমার নয়।”
“এটাও সৃষ্টি করা হয়েছে?”
“না, সে সত্যিকারের। তারা বলছে আমি তাকে তাম কুয়ানে হত্যা করেছি।”
“তার অবশ্যই কোনো কারণ ছিলো।”
“আমিও তাই আশা করি। আমি জানি না। হয়তো ওটাই ছিলো সেই জিনিস যা আমি খতম করার চেষ্টা করেছি।”
“এতে কিছুই যায় আসে না,” মেরি তাকে ছেড়ে দিয়ে বললো। “এটা অতীতের, দশ বছর আগের। এখন আসল কাজ হলো ট্রেডস্টোন-এ তোমাকে পৌঁছাতে হবে কারণ তারা তোমার নাগাল পাবার জন্যে চেষ্টা করছে।”
“দাঁজু বলেছে আমেরিকানরা মনে করছে আমি তাদের বিরুদ্ধে চলে গেছি। ছয় মাস ধরে আমার কাছ থেকে কোনো রকম সাড়া-শব্দ পায় নি তারা, জুরিখ থেকে মিলিয়ন ডলার তুলে নেয়া হয়েছে। তারা অবশ্যই ভাববে আমি হলাম তাদের কাছে সবচাইতে ব্যবহুল ভুল।”
“কি ঘটেছে সেটা তুমি ব্যাখ্যা করতে পারো। তুমি তো জানতে না যে, চুক্তি ভঙ্গ করছো; তা না হলে তুমি একটুও এগোতে পারবে না। এটা অসম্ভব। তুমি যে প্রশিক্ষণ নিয়েছো সবই অর্থহীন হয়ে যাবে।”
বর্ন তার কোটাট খুলে বেল্ট থেকে অস্ত্রটা বের করলো। সেটার দিকে তাকিয়ে সে অসুস্থ বোধ করলো। সে জিনিসটা ব্যুরোর ড্রয়ারে রেখে দিয়ে মেরির দিকে তাকিয়ে রইলো।
“তাদের কাছে আমি কি বলবো?” সে জানতে চাইলো। “জেসন বর্ন বলছি। যদিও আমি জানি এই নামের লোকটাকে আমি নিজেই খুন করেছি। কিন্তু এই নামটাই আপনারা আমাকে দিয়েছেন…আমি দুঃখিত জেন্টেলমেন, মার্সেই’তে যাবার পথে আমার কিছু একটা হয়েছিলো। আমি কিছু একটা হারিয়েছি—আমার স্মৃতি। এখন আমার মনে পড়েছে আমাদের মধ্যে একটা চুক্তি ছিলো, কিন্তু সেটা কি আমার তা মনে পড়ছে না। কেবল ‘কার্লোসকে ধরো,’ কার্লোসকে ফাঁদে ফেলো!’ কথাটা ছাড়া। এসব কথা শুনে আপনারা হয়তো মনে করছেন আমার সব মনে প’ড়ে যাচ্ছে। সুতরাং সে বিশাল এক বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে আপনাদেরকে ফেলে দেবে।” বর্ন আয়নার দিকে থেকে ফিরে মেরির দিকে তাকালো। “আমি ঠাট্টা করছি না। আমি কি বলবো, বলো?”
“সত্য কথাটা,” মেরি জবাব দিলো। “তারা এটা মেনে নেবে। তারা তোমার কাছে একটা মেসেজ পাঠিয়েছে। তারা তোমার নাগাল পাবার চেষ্টা করছে। ছয় মাসের ব্যাপারটার জন্যে ওয়াশবার্নকে পোর্ত নোয়ে’তে টেলিগ্রাম করো। সে সব কিছু রেকর্ড ক’রে রেখেছে—একেবারে বিস্তারিতভাবে।”
“সে হয়তো জবাব দেবে না। আমাদের মধ্যে একটা চুক্তি ছিলো। তার কাছে আমি এক মিলিয়ন আমেরিকান ডলার পাঠিয়েছিলাম। একেবারে ট্রেস্ করা যাবে না, এমনভাবে সেটা পাঠানো হয়েছিলো।”
“তুমি কি মনে করো এজন্যে সে তোমাকে সাহায্য করবে না?”
জেসন চুপ মেরে গেলো। “সে নিজে হয়তো সাহায্য করতে পারবে না। তার একটা সমস্যা আছে। সে একজন মাতাল; একেবারে বদ্ধ মাতাল। সে এটা জানে. পছন্দও করে। এক মিলিয়ন ডলার নিয়ে সে কতো দিন বেঁচে থাকতে পারবে? তার চেয়ে বড় কথা ওয়াটারফ্রন্টের ঐ সব দস্যুর দল তাকে খুঁজে পাবার পর তাকে কতো দিন বাঁচিয়ে রাখবে ব’লে তুমি মনে করো?”
“তারপরও তুমি প্রমাণ করতে পারবে কোথায় ছিলে এতোদিন। তুমি অসুস্থ আর বিচ্ছিন্ন ছিলে। তুমি কারো সাথেই যোগাযোগ করতে পারো নি।”
“ট্রেডস্টোন-এর লোকেরা কিভাবে নিশ্চিত হবে? তাদের দৃষ্টিতে আমি হলাম অফিশিয়াল গোপনীয়তার এক জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া। আমি যা করেছি তাই আমাকে করতে হবে। তারা কি ক’রে নিশ্চিত হবে যে, আমি ভুল কোনো লোকজনের সাথে কথা বলি নি?”
“তাদেরকে বলো পোর্ত নোয়ে’তে একটা দল পাঠাতে।”
“ওখানে তারা নিরব আর বিস্মিত কতোগুলো চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। আমি সেই দ্বীপটা মাঝরাতে ছেড়ে এসেছি, ওয়াটারফ্রন্টের অর্ধেক লোক তখন আমার পিছু নিয়েছিলো। যদি সেখানকার কেউ ওয়াশবার্নের কাছ থেকে টাকাগুলো করায়ত্ত করতে পারে তো সে কিছুই বলবে না, সোজা চলে যাবে।”
“জেসন, আমি জানি না, তোমার উদ্দেশ্যটা কি। তুমি তোমার জবাবটা পেয়ে গেছো। পোর্ত নোয়ে’তে জেগে ওঠার পর থেকেই যে জবাবের জন্যে তুমি হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছো। আর কি চাও তুমি?”
“আমি কেবল সতর্ক হতে চাই, এই যা,” বর্ন কর্কশভাবে বললো। “আমি চাচ্ছি ভেবেচিন্তে কাজ করতে। তাড়াহুড়ো ক’রে আগুনে ঝাঁপ দিতে চাচ্ছি না!” সে চিৎকার ক’রে বলেই থেমে গেলো।
মেরি তার সামনে এসে দাঁড়ালো। “খুব ভালো। কিন্তু এটাই একমাত্র কারণ নয়, তাই না? মানে, কেবলমাত্র সতর্ক থাকাটা।”
জেসন মাথা ঝাঁকালো। “না, এটা তা নয়। প্রতিটি পদক্ষেপেই আমি ভয় পাচ্ছি। ভয় পাচ্ছি যেসব জিনিস আমি জানতে পারছি সেগুলো নিয়ে। এখন এই শেষের দিকে এসে আমি আরো ভীত হয়ে পড়েছি। আমি যদি জেসন বর্ন না হই, তবে আমি আসলে কে? পেছনে আমি কি ফেলে এসেছি? এটা কি তোমার মনে হয় নি?”
“একদিক থেকে আমি তোমার চেয়েও বেশি ভীত। তবে আমি মনে করি না এটা আমাদেরকে থামাতে পারবে। আমি ঈশ্বরের কাছে কামনা করি তাই যেনো হয়। তবে আমি জানি এটা হবে না।”
আমেরিকান অ্যাম্বাসির অ্যাটাশি গ্যাব্রিয়েল এভিনুর অফিসে ঢুকে ফার্স্ট সেক্রেটারির রুমে প্রবেশ করেই দরজাটা বন্ধ ক’রে দিলে ডেস্কে বসা লোকটা তার দিকে মুখ তুলে তাকালো।
“তুমি নিশ্চিত, লোকটা আসলে সে-ই?”
“আমি কেবল নিশ্চিত সে কি-ওয়ার্ডটা ব্যবহার করেছে,” অ্যাটাশি কথাটা বলেই একটা লাল বর্ডারের ইনডেক্স কার্ড বাড়িয়ে দিলো। “এখানে এই ফ্ল্যাগটা আছে,” সে ফার্স্ট সেক্রেটারিকে কার্ডটা দিয়ে বললো। “আমি তার ব্যবহার করা কথাটা চেক্ ক’রে দেখেছি। আর সংকেতটা যদি যথার্থ হয় আমি বলবো, সে-ই আসল লোক।”
ডেস্কে বসা লোকটা কার্ডটা দেখে বললো, “কখন সে ট্রেডস্টোন নামটা ব্যবহার করেছে?”
“যখন আমি তাকে বোঝাতে সক্ষম হলাম যে, সে যদি আমাকে যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ না দেখাতে পারে তবে সে আমেরিকান ইন্টেলিজেন্সের কারো সাথে কথা বলতে পারবে না, তখনই। তারপর সে যখন বললো সে জেসন বর্ন তখন আমি দারুণ অবাক হয়েছি। আমি যখন বললাম তার জন্যে আমি কি করতে পারি তখন মনে হলো সে একটু সমস্যায় প’ড়ে গেছে।”
“সে কি বলে নি তার জন্যে একটা ফ্ল্যাগ, মানে সংকেত দেয়া হয়েছে?”
“আমি সেটার জন্যে অপেক্ষা করেছিলাম কখন সে এটা বলে, তবে সে আর বলে নি। আটটা শব্দের স্কেচটা অনুযায়ী—-অভিজ্ঞ ফিল্ড অফিসার। সম্ভাব্য বিশ্বাসঘাতকতা অথবা শত্রুদের হাতে বন্দী’–সে কেবল ‘ফ্ল্যাগ’ শব্দটা ব্যবহার করতে পারতো, তাহলেই আমরা মিলিয়ে নিতে পারতাম। সে তা করে নি।”
“তাহলে সে হয়তো আসল নয়।”
“বাকি সবই তো মিলে গেছে। সে বলেছে ডি.সি তাকে ছয় মাস ধরে খুঁজছে। তখনই সে ট্রেডস্টোন শব্দটা ব্যবহার করেছে। সে ট্রেডস্টোনের। এটা মনে হয় খুবই বিপজ্জনক হবে। সে আমাকে আরো বলেছে ডেল্টা, কেইন আর মেডুসা কোড শব্দগুলো রিলে করতে। প্রথম দুটো ফ্ল্যাগে আছে। আমি সেগুলো চেক্ ক’রে দেখেছি। আমি জানি না মেডুসা মানে কি।”
“আর আমি জানি না এসবের মানে কি,” ফার্স্ট সেক্রেটারি বললো। “কেবল আমার অর্ডারগুলো ছাড়া। ল্যাঙ্গলেই’তে যোগাযোগের ব্যাপারে সব ধরণের প্রতিবন্ধকতা দূর করা এবং সব ধরণের ভেজালমুক্ত পথে ককলিন নামের একজন ভূতের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা। তার ব্যাপারে আমি শুনেছি : একটা বানচোত যে দশ-বারো বছর আগে ভিয়েতনামে নিজের একটা পা হারিয়েছে। সে কোম্পানির উপরে অদ্ভুত সব বোতাম চেপে গেছে। সে নিধনযজ্ঞের হাত থেকেও বেঁচে গেছে, সেই থেকে আমি ভাবতে বাধ্য হচ্ছি, সে পথে পথে ঘুরে কাজ খুঁজে বেড়াক সেটা তারা চায় না। তার মুখ দিয়ে কিছু বের হোক সেটা তারা কোনোভাবেই চায় না।”
“এই বর্ন লোকটা আসলে কে ব’লে আপনি মনে করেন?” অ্যাটাশি জিজ্ঞেস করলো। “যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আট বছর ধরে আছি অথচ এরকম আকার-আকৃতিহীন ব্যক্তিকে শিকার করাটা আমি কক্ষনও দেখি নি।”
“কেউ এটা তীব্রভাবেই চাচ্ছে।” ফার্স্ট সেক্রেটারি উঠে দাঁড়ালো। “এসবের জন্যে ধন্যবাদ। আমি ডি.সি’কে বলবো কতো ভালোভাবে তুমি এটা সামলিয়েছো। আমার মনে হয় না সে তোমাকে কোনো ফোন নাম্বার দিয়েছে।”
“না, দেয় নি। সে পনেরো মিনিট পরে ফোন করতে চেয়েছিলো, তবে আমি তাড়াহুড়ার ভাব করেছি। আমি তাকে বলেছি আমাকে এক ঘণ্টা পরে ফোন করতে। তার মানে পাঁচটা বাজে, যাতে ক’রে আমরা ডিনার করার জন্যে এক দু’ ঘণ্টা সময় পাই।”
“তাকে হারানোর ঝুঁকি আমরা নিতে পারি না। আমি ককলিনকে গেম প্ল্যানটা করার সময় দেবো। সে এটা নিয়ন্ত্রন করে। তার অনুমতি ছাড়া কেউ বর্নের ব্যাপারে কোনো কিছু করতে পারবে না।”
.
আলেকজান্ডার ককলিন ভার্জিনিয়ায় অবস্থিত ল্যাঙ্গলের নিজের রুমের ডেস্কে ব’সে আছে। প্যারিসের অ্যাম্বাসির লোকটার ফোন শুনছে। বুঝতে পারছে এটা ডেল্টা। মেডুসার উল্লেখটাই হলো তার প্রমাণ। ডেল্টা ছাড়া আর কোনো লোক এই নামটা জানবে না। বানচোত! সে এক পরিত্যাক্ত এজেন্টের সাথে খেলছে। তার ট্রেডস্টোন ফোনটা যথার্থ কোড রেসপন্ড করছে না—তারা যেই হোক না কেন—কারণ মৃত ব্যক্তি কথা বলতে পারে না। বানচোতটার শক্তিশালী নার্ভ খুবই বিস্ময়কর। আসলেই একটা বানচোত!
কনট্রোলদের খুন করো, আর খুনগুলো ব্যবহার করো শিকার-পর্বটার সমাপ্তি টানার কাজে। এটা এর আগে কতো মানুষই না করেছে, ভাবলো আলেকজান্ডার ককলিন। সেও করেছে। হুয়োং খে’র পার্বত্য অঞ্চলে একজন সোর্স-কনট্রোল আছে। সেই ম্যানিয়াকটা উন্মাদগ্রস্তের মতো সব অর্ডার দিয়ে মেডুসার এক ডজন সদস্যকে খুন করিয়ে ছিলো। ককলিন তখন একজন তরুণ ইন্টেলিজেন্স অফিসার, একটা উত্তর ভিয়েতনামি রাইফেল দিয়ে বেজ-ক্যাম্প কিলো’তে ক্যাম্পে ফিরে এসে দুটো বুলেট ঢুকিয়ে দিয়েছিলো ম্যানিয়াকটার মাথায়। শিকার-পর্বটা বাতিল করা হয়েছিলো। বেজ ক্যাম্প কিলো’তে কোনো কাঁচের টুকরোও পাওয়া যায় নি।
কাঁচের টুকরোগুলোতে একটা তর্কাতীত আঙুলের ছাপ পাওয়া গিয়েছিলো, মেডুসার একজন অনিয়মিত রিক্রুটের। সেইরকম কাঁচের টুকরো পাওয়া গেছে সেভেনটি-ওয়ান স্টুটে, কিন্তু খুনি এটা জানে না—ডেল্টা এটা জানে না।
“একটা সময় আমরা সিরিয়াসভাবেই প্রশ্ন করতে শুরু করেছি, সে আসল কিনা,” ফার্স্ট সেক্রেটারি বললো। “একজন অভিজ্ঞ ফিল্ড অফিসার এটাাশিকে বলেছিলো একটা ফ্ল্যাগ চেক্ করতে, কিন্তু সে সেটা করে নি।”
“একটা ভুল,” ককলিন জবাবে বললো ডেল্টা-কেইনের হিংস্র অধ্যায়ে আবার তার মন ফিরে গেলো। “ব্যবস্থাগুলো কি?”
“শুরুতে বর্ন চাচ্ছিলো পনেরো মিনিটের মধ্যে ফোন করতে, তবে আমি বুথের নিচের লেভেলে নির্দেশ দিয়েছি। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, আমরা ডিনারের সময়টা ব্যবহার করতে পারি…” অ্যাম্বাসির লোকটা নিশ্চিত করতে চাইছে ওয়াশিংটনের একজন কোম্পানি এক্সিকিউটিভ যেনো বুঝতে পারে তার অবদানের যথার্থতা। ককলিন এর আগে অনেক ভিন্ন ভিন্ন কথা শুনেছে।
ডেল্টা। সে কেন চোখ পাল্টালো? এই মানসিক অসুস্থতা তার মাথাটা চিবিয়ে খাবে, কেবল তার বেঁচে থাকার প্রবৃত্তিটাই অবশিষ্ট রাখবে। সে অনেক দিন থেকেই এই কাজে জড়িত আছে। সে জানে আজ হোক কাল হোক তারা তাকে খুঁজে বের করবে, খুন করবে। আর কোনো বিকল্প নেই। যে মুহূর্তে সে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে—অথবা ভেঙে পড়েছে, কিংবা যাই হোক না কেন—সেই মুহূর্ত থেকেই সে এটা জানে। পালিয়ে থাকার আর কোনো জায়গা নেই। সারা পৃথিবী জুড়ে সে এখন একটা টার্গেট। সে কখনই জানতে পারবে না কোন্ লোকটা অন্ধকার থেকে বের হয়ে তার জীবন সংহার করবে। এসবের মধ্যেই তারা বাস করে। সুতরাং আরেকটা সমাধান খুঁজে নিতে হবে : বেঁচে থাকা। কল্পিত কেইন হলো প্রথম ব্যক্তি যে ভাতৃহত্যা করেছে। এই রূপকথার নামটা কি এরকম অশ্লীল সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করেছে, একটা কৌশল হিসেবে? এটা কি এরকমই সহজ-সরল? ঈশ্বর জানে এটাই হলো যথার্থ সমাধান। তাদের সবাইকে খুন করো, তোমার ভাইকে খুন করো।
ওয়েব গেছে। সন্ন্যাসী গেছে। ইয়াখটম্যান আর তার বউও…ডেল্টা যে নির্দেশ পেয়েছে সেটা কে অস্বীকার করতে পারে? সে মিলিয়ন ডলার সরিয়েছে, অর্ডার অনুযায়ী সেগুলো বণ্টন করেছে। ব্লাইন্ড গ্রাহক, সে অনুমাণ করতে পারে সেটা সন্ন্যাসীরই কৌশল ছিলো। সন্ন্যাসীকে প্রশ্ন করার ডেল্টা কে? মেডুসার সৃষ্টিকর্তা, প্রতিভাবান সেই লোকটাই তো তাকে নিয়োগ দিয়েছিলো, সৃষ্টি করেছিলো তাকে। কেইনকে।
যথার্থ সমাধান। একেবারেই বোধগম্য। কেবল তার ভায়ের মৃত্যুটারই প্রয়োজন ছিলো। কার্লোর্স ট্রেডস্টোনের ভেতরে অনুপ্রবেশ ক’রে সেটা ভেঙে ফেলেছে। গুপ্তঘাতক বিজয়ী হয়েছে। ট্রেডস্টোনকে পরিত্যাক্ত করা হয়েছে। বানচোত!
“…তো স্বাভাবিকভাবেই আমি মনে করি পরিকল্পনাটা তোমার কাছ থেকে আসবে,” ফার্স্ট সেক্রেটারি এই কথাটা বলেই শেষ করলো। সে একটা গর্দভ, কিন্তু তাকে ককলিনের দরকার আছে। একটা সুর যখন বাজবে তখন আরেকটা সুর শোনা যাবে।
“তুমি ঠিক কাজটাই করেছো,” ল্যাঙ্গলের এক্সিকিউটিভ বললো। “আমি আমাদের এখানকার লোকজনকে জানিয়ে দেবো তুমি কতোটা ভালোভাবে সব সামলিয়েছো। তোমার কথাই একদম ঠিক। আমাদের সময় দরকার। তবে বর্ন সেটা বুঝতে পারে নি। আমরা তাকে বলবো না, এতে ক’রে এটা খুব কঠিন হয়ে যাবে। আমরা একেবারে নিরাপদে আছি, আমি কি ঠিক বলছি?”
“অবশ্যই।”
“বর্ন খুব চাপের মধ্যে আছে। সে…দীর্ঘদিন…বন্দী ছিলো। আমি স্পষ্ট বোঝাতে পেরেছি?”
“সোভিয়েতদের হাতে?”
“লুবিয়াঙ্কায়। তার পালানোর অর্থ ছিলো ডাবল-এন্ট্রি। এই শব্দটার অর্থ কি তোমার কাছে পরিচিত?”
“হ্যা। মস্কো ভাবছে সে এখন তাদের হয়ে কাজ করছে।”
“এটাই তারা ভাবে,” ককলিন একটু থামলো। “তবে আমরা নিশ্চিত নই। লুবিয়াঙ্কায় অনেক ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গেছে।”
ফার্স্ট সেক্রেটারি মৃদু একটা শিস্ বাজালো। “এটাই হলো ফাঁদ। তুমি কিভাবে দৃঢ়প্রতীজ্ঞ হবে?”
“আপনার সাহায্যে। কিন্তু গোপনীয়তার অগ্রাধিকারটা অ্যাম্বাসিরও উপরে। এমনকি অ্যাম্বাসেডরদের স্তরেও। তুমি ঘটনাস্থলে আছো। তুমি দেখা করবে। তুমি শর্তটা গ্রহণ করতে পারো অথবা নাও পারো, সেটা তোমার উপরে নির্ভর করছে। যদি তুমি তা করো, আমার মনে হয় ওভাল অফিস থেকে একটা পুরস্কার পাবে।”
ককলিন প্যারিসের লোকটার আস্তে ক’রে দম নেয়ার শব্দটা শুনতে পেলো। “আমার যা করার তা আমি করবো। নামটা বলুন।”
“তুমি ইতিমধ্যেই সেটা বলেছো। আমরা তাকে ধরতে চাই। সে ফোন করলে তুমি নিজে কথা বোলো।”
“স্বাভাবিকভাবেই,” অ্যাম্বাসির লোকটা বাঁধা দিয়ে বললো।
“তাকে বোলো তুমি কোডগুলো রিলে ক’রে দিয়েছো। তাকে বলবে ওয়াশিংটন মিলিটারি ট্রান্সপোর্টের সাহায্যে একজন অফিসার অব রেকর্ড’কে ওখানে পাঠাবে। বলবে ডি.সি চাচ্ছে সে যেনো লোকচক্ষুর আড়ালে এবং অ্যাম্বাসি থেকে দূরে থাকে। সব রুটেই নজরদারী করা হবে। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করবে সে কোনো প্রটেকশান চায় কিনা; যদি চায় তবে তাকে কোত্থেকে তুলতে হবে। তবে কাউকে পাঠিয়ো না। তুমি যখন আমার সাথে আবার কথা বলবে তখন আমি কাউকে ওখানে পাঠাবো। আমি তোমাকে একটা নাম দেবো তারপর তাকে তুমি একটা আই-স্পট দেবে।”
“আই-স্পট?”
“দেখে চেনা যায় এমন কেউ।”
“আপনার কোনো লোক?”
“হ্যা, আমরা মনে করি এটাই সবচাইতে ভালো পথ। তুমি ছাড়া অ্যাম্বাসিকে কোনোভাবেই জড়ানো হবে না। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কথাই হোক না কেন সেটা রেকর্ড থাকবে না।”
“আমি সেটা দেখবো,” ফার্স্ট সেক্রটারি বললো। “সে একজন ডাবল-এন্ট্রি কিনা সেটা তার সাথে আমার একটা ফোনালাপ কিভাবে আপনাকে সাহায্য করবে?”
“কারণ একটা ফোনালাপ হবে না; এটা হবে দশের কাছাকাছি।”
“দশ?”
“ঠিক। আমাদের কথাগুলো তুমি বর্নকে জানাবে—সে যেনো তোমাকে প্ৰতি একঘণ্টা পর পর ফোন ক’রে নিশ্চিত করে সে নিরাপদ কোনো জায়গায় আছে। ট্রেডস্টোনের অফিসার প্যারিসে পৌঁছে তার সঙ্গে দেখা করার আগপর্যন্ত তাকে এই করতে বলবে।”
“তাতে কি হবে?” অ্যাম্বাসির লোকটা জানতে চাইলো।
“সে জায়গা বদলাতে থাকবে…যদি সে আমাদের না হয়ে থাকে। প্যারিসে আধ ডজন সোভিয়েত ডিপ-কভার এজেন্ট রয়েছে। সবাই ফোনে যোগাযোগ করে। সে যদি মস্কোর সাথে কাজ ক’রে থাকে তবে ওগুলোর একটাকেই ব্যবহার করার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা নজর রাখবো। আর সেটা যদি ঘটে, আমার মনে হয় তুমি তোমার বাকি জীবন অ্যাম্বাসিতে কাটানোর কথা স্মরণ করেই কাটাবে। প্রেসিডেন্টের স্বীকৃতি কোনো মানুষের ক্যারিয়ারকে খুব উঁচু স্তরে নিয়ে যায়। অবশ্য, তোমার জন্যে অতো বেশি উচ্চপদ আর নেইও…”
“আছে, মি: ককলিন,” ফার্স্ট সেক্রেটারি বললো।
আলাপ শেষ হয়ে গেলো। অ্যাম্বাসির লোকটা বর্নের কাছ থেকে কিছু শোনার পর আবার ফোন করবে। ককলিন উঠে ঘরের এককোণে রাখা একটি ধূসর রঙের ফাইলিং ক্যাবিনেটের কাছে গেলো। টপ প্যানেলটা খুললো সে। ভেতরে একটা বন্ধ করা খাম আছে যাতে কিছু মানুষের নাম আর ঠিকানা রয়েছে, যাদেরকে খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোন করার কথা। তারা এক সময় খুবই ভালো লোক ছিলো। কোনো এক কারণে তারা আর এখন ওয়াশিংটনের মাসোহারা পায় না। সব ক্ষেত্রে তাদেরকে অফিশিয়াল দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তাদেরকে অন্য পদ দেয়া হয়েছে নতুন পরিচয় দিয়ে—যারা অন্য ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারে তাদেরকে বন্ধুপ্রতিম সরকারের সাহায্যে নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে। তারা বলতে গেলে একেবারে অদৃশ্য হয়ে গেছে।
তারা সমাজচ্যুত মানুষ, যারা তাদের দেশের আইনের বাইরে চলে গিয়েছিলো, যারা প্রায়শই তাদের দেশের স্বার্থে খুনখারাবি করেছে। কিন্তু তাদের দেশ তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু স্বীকার করে না। তাদের ছদ্মবেশ প্রকাশিত হয়ে গেছে, তাদের কাজকর্ম সব ফাঁস হয়ে গেছে। এখনও তাদেরকে অনুরোধ করা যেতে পারে। কোনো রকম অফিশিয়াল নজরদারী ছাড়াই তাদের নির্দিষ্ট একাউন্টে টাকা পাঠানো হয়। এটা তাদের বেতন
ককলিন ডেস্কে এসে খামটা ছিঁড়ে ফেললো। এটা আবার বন্ধ ক’রে সিলগালা করা হবে। প্যারিসে এক লোক আছে। সে আর্মি ইন্টেলিজেন্সের অফিসার কর্পস্ থেকে এসেছে। পয়ত্রিশ বছর বয়সে সে একজন লেফটেনান্ট কর্নেল ছিলো। তার উপর নির্ভর করা যেতে পারে। সে জাতীয় অগ্রাধিকারগুলো বোঝে। বারো বছর আগে সে একজন বামপন্থী ক্যামেরাম্যানকে খুন করেছিলো।
তিন মিনিট পরেই সে লোকটাকে ফোনে পেয়ে গেলো। ফোনটা তালিকায় নেই, রেকর্ডেও নেই। সাবেক অফিসার তাকে একটা নাম আর তার সরে যাওয়ার সংক্ষিপ্ত একটা বর্ণনা দিলো।
“একজন ডাবল-এন্ট্রি?” প্যারিসের লোকটা জানতে চাইলো। “মস্কো?”
“না, সোভিয়েতদের নয়,” ককলিন জবাব দিলো। সচেতন আছে, যদি ডেল্টা প্রটেকশনের জন্যে অনুরোধ ক’রে থাকে তাহলে দু’জনের মধ্যে কথাবার্তা হয়ে থাকবে।
“এটা কালোর্সকে ফাঁদে ফেলার একটি দীর্ঘমেয়াদী ডিপ-কভার।”
“গুপ্তঘাতক?”
“ঠিক।”
“আপনি হয়তো বলবেন এটা মস্কোর নয়, তবে আপনি আমাকে মানাতে পারবেন না। কার্লোর্স প্রশিক্ষণ নিয়েছে নভগোরোদ থেকে, আর আমি যতোটুকু জানি সে এখনও কেজিবি’র একটি নোংরা অস্ত্র।”
“হতে পারে। ডিটেইলগুলো বৃফিংয়ের জন্যে নয়। তবে এটা বলা যায় আমাদের লোক বিক্রি হয়ে গেছে। সে কয়েক মিলিয়ন ডলার কামিয়ে একটা কাল্পনিক পাসপোর্ট চাচ্ছে।”
“তাহলে সে কনট্রোলগুলো নিয়ে নিয়েছে আর কার্লোসের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়েছে, যার কোনো অর্থই হয় না, কেবল তাকে আরেকটা খুনে প্ররোচিত করা ছাড়া।”
“সেটাই। আমরা এটা ব্যবহার করতে চাই, তাকে ভাবতে দাও, সে একেবারে মুক্ত। আমরা একটা নিয়োগ দিতে চাই, যে তথ্যই আমরা পাই না কেন, আমি ওখানে আসছি। তবে তাকে ঘায়েল করাটা প্রধান কাজ নয়। অনেক লোক অনেক জায়গায় আপোষ করেছে তাকে এ জায়গায় আনার জন্যে। তুমি কি সাহায্য করতে পারবে? করলে একটা বোনাস পাবে।”
“বেশ ভালো। বোনাসটা রেখে দিন, আমি তার মতো বানচোতকে ঘৃণা করি তারা পুরো নেটওয়ার্কটাকে ধ্বংস ক’রে দিয়েছে।”
“সে আমাদের সেরা একজন ছিলো। আমি সমর্থন দেবার কথা বলবো, কমপক্ষে একটি।
“সেন গার্ভেই’তে আমার এক লোক আছে। তাকে ভাড়া করা যাবে।”
“ভাড়া করো তাকে। এই যে, এখানে সব তথ্য আছে। প্যারিসের কনট্রোলটা একজন অ্যাম্বাসি ব্লাইন্ড। সে কিছুই জানে না, তবে বর্নের সাথে তার যোগাযোগ আছে। সে হয়তো তার জন্যে প্রটেকশন চাইতে অনুরোধ করবে।”
“আমি সেটা দেবো,” সাবেক ইন্টেলিজেন্স অফিসার বললো। “এগিয়ে যাও।”
“এ মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু আর নেই। আমি এন্ড্রুজ থেকে একটা জেট নিয়ে নেবো। প্যারিসে আমার ই.টি.এ তোমার সময়ে এগারোটা থেকে বারোটার মধ্যে হবে। আমি একঘণ্টার মধ্যেই বর্নকে চাই, যাতে তাকে আগামীকালের মধ্যে ওয়াশিংটনে নিয়ে আসতে পারি। খুবই কঠিন কাজ, কিন্তু এভাবেই এটা করতে হবে।”
“অ্যাম্বাসির ব্লাইন্ডটা হলো স্বয়ং ফার্স্ট সেক্রেটারি। তার নাম হলো…”
ককলিন বাকি তথ্যগুলো আর প্যারিসের দু’জন লোকের কনট্যাক্ট দিয়ে দিলো। কোডবদ্ধ শব্দগুলো সিআইএ’র লোকটাকে বলে দেবে কোনো সমস্যা থাকুক আর নাই থাকুক তারা কখন কথা বলবে। ককলিন ফোনটা রেখে দিলো। সব কিছুই এগোচ্ছে যেমনটি ডেল্টা আশা করছে সেভাবে। ট্রেডস্টোনের উত্তরাধিকারীরা তাদের নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী কাজ করবে। তাতে একেবারে নির্দিষ্ট ক’রে বলা আছে কোথায় কৌশলগুলো নস্যাৎ হয়ে যাবে। আর কৌশলগুলোই চিন্তার বিষয়। সেগুলো উধাও হয়ে যাবে। ঝেড়ে ফেলা হবে। কোনো অফিশিয়াল যোগাযোগ অথবা অনুমোদন থাকবে না। ব্যর্থ কৌশল আর কৌশল প্রণেতারা ওয়াশিংটনের জন্যে বিব্রতকর। ট্রেডস্টোন সেভেনটি-ওয়ান শুরু থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটি এবং কিছু বিদেশী সরকারকে ব্যবহার আর অপব্যবহার করেছে। ট্রেডস্টোনের কোনো বেঁচে যাওয়া লোক বিশাল একটা সমস্যা বয়ে আনবে।
ডেল্টা এসব কিছুই জানে, আর যেহেতু সে নিজে ট্রেডস্টোনকে ধ্বংস করেছে, সে পূর্ব সতর্কতাগুলো সাধুবাদ জানাবে। আলেকজান্ডার ককলিন সবই মনোযোগ দিয়ে শুনলো। চেষ্টা করলো যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যার রূপরেখাটা কিরকম হবে সেটা ভাবতে। কিন্তু সে জানে, সে কোনোটাই শুনবে না। তার সাথে মুখোমুখি হলে ডেল্টা ট্রেডস্টোন সেভেনটি-ফার্স্ট-এ ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যাপারে কিছু জানে না ব’লে ভান করবে। কিন্তু ওখানে পাওয়া ভাঙা কাঁচের টুকরোতে আঙুলের ছাপ আছে। এমনসব আঙুলের ছাপ যা ছবির চেয়েও বেশি অকাট্য। সেগুলো জাল করবার কোনো সুযোগ নেই।
ককলিন ডেল্টাকে দুই মিনিট সময় দেবে কথা বলার জন্যে। সে শুনবে, তারপর টুগার টিপে দেবে।